আপনি কেন বাইবেলকে বিশ্বাস করতে পারেন
আপনি কেন বাইবেলকে বিশ্বাস করতে পারেন
কিছু লোকে বলে যে বাইবেল নির্ভরযোগ্য নয় এবং তাদের এই মতবাদ এক ব্যাপক স্বীকৃতি লাভ করেছে। তাই অনেকে আজ বাইবেল যা বলে তা অবিশ্বাস্য বলে প্রত্যাখ্যান করে।
অন্যদিকে আবার ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রার্থনায় যীশু খ্রীষ্ট যা বলেছিলেন তা বিশ্বাসকে বাড়িয়ে তোলে: “তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ।” আর বাইবেল দাবি করে যে এটি হল ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত।—যোহন ১৭:১৭; ২ তীমথিয় ৩:১৬.
আপনি এই সম্বন্ধে কী মনে করেন? বাইবেলকে বিশ্বাস করার কি কোন দৃঢ় ভিত্তি আছে? নাকি প্রকৃতই কোন প্রমাণ আছে যে বাইবেল নির্ভরযোগ্য নয়, এটি পরস্পর বিরোধী ও অসংগত?
এটি কি পরস্পর বিরোধী?
যদিও অনেকে দাবি করে যে বাইবেল পরস্পরবিরোধী, কিন্তু কেউ কি আপনাকে কখনও কোন প্রকৃত দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে? আমরা এমন একটাও দেখিনি যা পরীক্ষা করার অবকাশ রাখে। এটি সত্য যে, বাইবেলের কিছু ঘটনার মধ্যে হয়তো বা কিছু অনৈক্যতা প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সেই সময়কার বিস্তারিত ঘটনা ও পরিবেশ সম্বন্ধে জ্ঞানের অভাবই এই সমস্যার মূল কারণ।
উদাহরণস্বরূপ, ‘কয়িন কোথা থেকে তার স্ত্রী পেল?’ এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে কিছু ব্যক্তি বাইবেলের এমন কোন ঘটনার উপর দৃষ্টি দেওয়ার চেষ্টা করবে যা তারা মনে করে পরস্পরবিরোধী। সাধারণ ধারণা হল এই যে আদিপুস্তক ৫:৪) সুতরাং কয়িন তার কোন এক বোনকে বা সম্ভবত ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করে।
কেবল মাত্র কয়িন এবং হেবলই হল আদম ও হবার সন্তান। কিন্তু এই ধারণা বাইবেল যা বলে তা ভুল বোঝার উপর ভিত্তি করেই সৃষ্টি হয়েছে। বাইবেল ব্যাখ্যা করে যে আদম “পুত্ত্রকন্যার জন্ম দিলেন।” (অনেক সময় সমালোচকেরা শুধুমাত্র অনৈক্যতা খুঁজে বার করার চেষ্টায় থাকে এবং তারা হয়তো প্রশ্ন তুলতে পারে যে: ‘বাইবেল লেখক মথি যেখানে বলেন যে একজন সেনাপতি আসেন যীশুর কাছে সাহায্যপ্রার্থী হিসেবে, সেখানে লূক বলেন যে কিছু প্রতিনিধিকে পাঠানো হয় সাহায্য চাইবার জন্য। তাহলে এর মধ্যে কোন্টা ঠিক?’ (মথি ৮:৫, ৬ লূক ৭:২, ৩) কিন্তু এটি কি সত্যি পরস্পরবিরোধী?
যখন দলগতভাবে জনসমূহের সক্রিয়তা বা কাজকে একজন ব্যক্তিবিশেষের কাজ হিসাবে গণ্য করা হয় যিনি এই কাজের জন্য প্রকৃত পক্ষে দায়ী, তখন যুক্তিবাদী কোন মানুষ এটিকে পরস্পরবিরোধী বলে দাবি করবে না। উদাহরণস্বরূপ, আপনি কি আলোচ্য সংবাদটিকে ভুল বলে মনে করবেন যা জানায় যে জনৈক মেয়র একটা রাস্তা নির্মাণ করেছেন, যেখানে প্রকৃতপক্ষে নির্মাণের কাজ করেছে তার দ্বারা মনোনীত ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্মীবৃন্দ? অবশ্যই নয়! ঠিক তেমনি, মথির পক্ষে এটি বলা কোন অসংগত নয় যে একজন সেনাপতি যীশুর কাছে অনুরোধ জানাতে আসেন যেখানে লূক লেখেন, যে সেই অনুরোধ জানানো হয় বিশেষ কিছু প্রতিনিধিদের মাধ্যমে।
তাই যতই বিস্তারিত ঘটনা জানা যায়, ততই আপাতদৃষ্টিতে বাইবেলে যেগুলিকে পরস্পরবিরোধী বলে মনে হয় তা লোপ পায়।
ইতিহাস ও বিজ্ঞান
এক সময় বাইবেলের ঐতিহাসিক সত্যতা সম্বন্ধে ব্যাপকভাবে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, সমালোচকেরা বাইবেলের কিছু চরিত্রের অস্তিত্ব সম্বন্ধে প্রশ্ন
তুলেছিল যেমন অসূর-রাজ সর্গোন, বাবিলের বেল্শৎসর এবং রোমীয় রাজ্যপাল পন্তীয় পীলাত। কিন্তু সম্প্রতি আবিষ্কার বাইবেলের একটার পর একটা ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করে। তাই ঐতিহাসিক মোশে পার্লম্যান লিখেছিলেন: “হঠাৎ সেই সন্দেহবাদীরা যারা এমনকি পুরনো নিয়মের ঐতিহাসিক সত্যতা সম্বন্ধেও সন্দেহ প্রকাশ করেছিল, তারা তাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে শুরু করে।”যদি আমাদের বাইবেলকে বিশ্বাস করতে হয়, তাহলে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও এটি নির্ভুল হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাই কি? বেশি দিন আগে নয় যখন বৈজ্ঞানিকেরা বাইবেলের বিপরীতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে এই মহাবিশ্বের কোন আরম্ভ নেই। কিন্তু জ্যোতির্বিৎ রবার্ট জ্যাসট্রো সম্প্রতি আরও একটি নতুন তথ্য প্রকাশ করেন যা এই মতবাদকে ভুল প্রমাণ করে এবং তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন: “এখন আমরা দেখতে পাই কিভাবে জ্যোতিঃশাস্ত্রভিত্তিক প্রমাণগুলি, জগতের আরম্ভ সম্বন্ধে বাইবেলের মনোভাবের সাথে সামঞ্জস্য রাখে। যদিও বিস্তারিত বর্ণনার মধ্যে প্রভেদ আছে, কিন্তু আদিপুস্তক সম্বন্ধীয় জ্যোতিঃশাস্ত্র ও বাইবেলের তথ্যগুলো মূলত এক।—আদিপুস্তক ১:১.
পৃথিবীর গঠন সম্বন্ধেও মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্বকোষ ব্যাখ্যা করে যে “সমুদ্রযাত্রার মাধ্যমে আবিষ্কার দেখায় যে পৃথিবী গোলাকার, চেপ্টা নয় যা অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে এসেছে।” কিন্তু বাইবেল এতকাল ঠিক কথাই বলেছে! ঐ সমুদ্রযাত্রার প্রায় ২,০০০রেরও বেশি বছর আগে বাইবেল যিশাইয় ৪০:২২ পদে বলেছিল: “তিনিই পৃথিবীর সীমাচক্রের উপরে উপবিষ্ট,” অর্থাৎ কিছু অনুবাদ অনুসারে “পৃথিবীর গোলক” (ডুয়ে) বা “গোল পৃথিবী” (মোফেট)।
সুতরাং যত বেশি মানুষ জানতে পারছে তত বেশি প্রমাণ হচ্ছে যে বাইবেলের ওপর নির্ভর করা যেতে পারে। ব্রিটিশ যাদুঘরের ভূতপূর্ব ডিরেক্টর স্যার ফেডরিক কেনিয়ান লেখেন: “বিশ্বাস যা বলে, ইতিমধ্যে লব্ধ ফলগুলির দ্বারা এটিই প্রমাণিত হয়েছে যে জ্ঞানবৃদ্ধির মাধ্যমে উপকার আনা ব্যতিরেকে বাইবেল আর অন্যথা কিছু করতে পারে না।”
ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আগে থেকে বলা
ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আগে থেকে বলার ক্ষেত্রে আমরা কি সত্যি বাইবেলের উপর নির্ভর করতে পারি যে ভবিষ্যদ্বাণীর অন্তর্ভুক্ত হল ধার্মিক ‘নূতন স্বর্গ ও নূতন পৃথিবীর প্রতিজ্ঞা?’ (২ পিতর ৩:১৩; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) অতীতে বাইবেল কিধরনের নির্ভরযোগ্যতার নজির রেখেছে? বার-বার সেই সব ভবিষ্যদ্বাণীগুলি যা এমনকি শতাধিক বছরেরও আগে করা হয়েছিল তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ফলে গেছে!
উদাহরণস্বরূপ, প্রায় ২০০ বছরেরও আগে থেকে বাইবেল বিশ্বশক্তি বাবিলের পতন সম্বন্ধে বলেছিল। এমনকি মাদীয়রা যারা পরস্যদের সাথে যোগ দেয়, তাদেরকে জয়ী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। আর যদিও সেই সময় পারস্যরাজ কোরসের জন্ম হয়নি, কিন্তু বাইবেল আগে থাকতে বলেছিল যে সেই বিজয়ে তার এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকবে। তাছাড়া এও বলা হয়েছিল ফরাৎ নদী যা বাবিলকে রক্ষা করত “সেগুলি শুষ্ক হইবে” এবং “[বাবিলের] পুরদ্বার সকল বন্ধ থাকিবে না।”—যিরমিয় ৫০:৫৮; যিশাইয় ১৩:১৭-১৯; ৪৪:২৭–৪৫:১.
ইতিহাসবিদ্ হেরোটোডাসের রিপোর্ট অনুসারে এই সমস্ত নির্দিষ্ট ঘটনাগুলির পরিপূর্ণতা ঘটেছিল। তাছাড়াও, বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে পরিশেষে বাবিল বসতির অযোগ্য হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। আর ঠিক তাই হয়েছিল। বর্তমানে বাবিল শুধুমাত্র একটি ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে। (যিশাইয় ১৩:২০-২২; যিরমিয় ৫১:৩৭, ৪১-৪৩) আর বাইবেলে আরও অনেক ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে যা নাটকীয়ভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।
বর্তমান জগতের বিধিব্যবস্থা সম্বন্ধে বাইবেল তাহলে কী ভবিষ্যদ্বাণী করে? এটি জানায় যে: “জগতের শেষকালে বিষম সময় উপস্থিত হবে। মানুষ অর্থ ও নিজেকে ছাড়া আর কিছুই ভালবাসবে না; তারা হবে আত্মশ্লাঘী, অভিমানী ও অপবাদক, মা-বাবার প্রতি সম্মানবিহীন, অকৃতজ্ঞ, স্নেহরহিত, ক্ষমাহীন . . . তারা এমন ধরনের ব্যক্তি হবে যারা ঈশ্বরের স্থানে বিলাসকে রাখে, তারা সেই ধরনের লোক যারা ব্যাহ্যিকভাবে ধর্মকে বজায় রাখার ভান করবে, কিন্তু ২ তীমথিয় ৩:১-৫, দ্যা নিউ ইংলিশ বাইবেল।
আসলে তা অস্বীকার করবে।”—অবশ্যই, আজকে আমরা এর পরিপূর্ণতা দেখতে পাচ্ছি! কিন্তু বাইবেল এছাড়াও “এই জগতের শেষকাল” সম্বন্ধে এও ভাববাণী করেছিল যে: “জাতির বিপক্ষে জাতি ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে এবং স্থানে স্থানে দুর্ভিক্ষ . . . হইবে।” তাছাড়াও “মহৎ মহৎ ভূমিকম্প এবং স্থানে স্থানে মহামারী হইবে।”—মথি ২৪:৭; লূক ২১:১১.
অবশ্যই, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলি আজকের দিনে পরিপূর্ণতা লাভ করে চলেছে! তাহলে যে প্রতিজ্ঞাগুলি ভবিষ্যতে পরিপূর্ণতা লাভ করবে তার সম্বন্ধে কী বলা যায়, যেমন: “ধার্ম্মিকেরা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে,” এবং “তাহারা আপন আপন খড়্গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল গড়িবে . . . তাহারা আর যুদ্ধ শিখিবে না”?—গীতসংহিতা ৩৭:২৯; যিশাইয় ২:৪.
‘এটি কখনই সত্য হতে পারে না’ কেউ হয়ত বলবে। কিন্তু আমাদের সৃষ্টিকর্তা যা কিছু প্রতিজ্ঞা করেছেন তা সন্দেহ করার প্রকৃতপক্ষে কোন কারণ নেই। তাঁর বাক্যকে বিশ্বাস করা যায়! (তীত ১:২) প্রমাণগুলি আরও পরীক্ষা করার মাধ্যমে আপনি এই বিষয়ে আরও অনেক বেশি নিশ্চিত হতে পারবেন।
উল্লেখ না করা থাকলে ব্যবহৃত বাইবেল অনুবাদ, বাইবেল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার পবিত্র বাইবেল থেকে গৃহীত। যেখানে NW উল্লেখ করা আছে সেখানে অনুবাদ করা হয়েছে ওয়াচটাওয়ার সোসাইটির নিউ ওয়ার্ল্ড ট্রান্সলেশন অফ দ্যা হোলী স্ক্রীপচার্স—উইথ রেফারেন্সেস্ থেকে।
[৪ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
“বিশ্বাস যা বলে, ইতিমধ্যে লব্ধ ফলগুলির দ্বারা এটিই প্রমাণিত হয়েছে যে জ্ঞান বৃদ্ধির মাধ্যমে উপকার আনা ব্যতিরেকে বাইবেল আর অন্যথা কিছু করতে পারে না”