সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সমস্ত দুঃখকষ্ট শীঘ্রই শেষ হবে!

সমস্ত দুঃখকষ্ট শীঘ্রই শেষ হবে!

সমস্ত দুঃখকষ্ট শীঘ্রই শেষ হবে!

আপনার জীবনে কোনো এক সময়ে আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করেছেন, ‘কেন এত দুঃখকষ্ট?’ হাজার হাজার বছর ধরে, মানব পরিবার যুদ্ধবিগ্রহ, দারিদ্র, বিভিন্ন দুর্যোগ, অপরাধ, অবিচার, অসুস্থতা এবং মৃত্যুর কারণে প্রচণ্ড কষ্টভোগ করেছে। বিগত শতাব্দীতে মানবজাতি আগের চেয়ে আরও বেশি দুঃখকষ্ট ভোগ করেছে। এই সমস্ত দুঃখকষ্ট কি কখনো শেষ হবে?

সান্ত্বনাদায়ক উত্তরটি হল হ্যাঁ আর তা খুব শীঘ্রই! ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল ঘোষণা করে: “দুষ্ট লোক আর নাই, . . . কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” কতদিনের জন্য? “ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১, ২৯.

ঈশ্বর দুষ্টতা ও দুঃখকষ্টকে দূর করার পর, পৃথিবী এক পরমদেশে রূপান্তরিত হবে। এরপর লোকেরা নিখুঁত স্বাস্থ্য নিয়ে এবং সুখে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারবে। ঈশ্বরের বাক্য ভবিষ্যদ্বাণী করে: “[ঈশ্বর] তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪.

সেই নতুন জগতে এই আশীর্বাদগুলো উপভোগ করার জন্য এমনকি মৃতেরা জীবন ফিরে পাবে: “ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” (প্রেরিত ২৪:১৫) সেইজন্য একজন অনুতপ্ত দুষ্কর্মকারী, যিনি তাঁর ওপর বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন, তাকে যিশু খ্রিস্ট এই কথা বলতে পেরেছিলেন: “তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে।”—লূক ২৩:৪৩.

কেন দুঃখকষ্ট শুরু হয়েছিল?

যেহেতু মানুষের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল যে, এই ধরনের এক অপূর্ব ভবিষ্যৎ থাকবে, তা হলে কেন তিনি দুঃখকষ্ট শুরু হতে দিয়েছিলেন? কেনই বা তিনি এটাকে এত দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে দিয়েছেন?

ঈশ্বর যখন আদম ও হবাকে সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তিনি তাদেরকে সিদ্ধ শরীর ও মন দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি তাদের একটা পরমদেশতুল্য বাগানে রেখেছিলেন এবং সন্তোষজনক কাজ করতে দিয়েছিলেন। বাইবেল জানায়: “ঈশ্বর আপনার নির্ম্মিত বস্তু সকলের প্রতি দৃষ্টি করিলেন, আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম।” (আদিপুস্তক ১:৩১) তারা যদি ঈশ্বরের বাধ্য থাকত, তা হলে তারা সিদ্ধ সন্তানের জন্ম দিতে পারত এবং পৃথিবী এক বিশ্বব্যাপী পরমদেশে পরিণত হতো, যেখানে লোকেরা চিরকাল শান্তিতে ও সুখে বেঁচে থাকত।

ঈশ্বর মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতার অংশ হিসেবে, আদম ও হবাকে স্বাধীন ইচ্ছার অপূর্ব দান দিয়েছিলেন। তারা অনুভূতিহীন রোবট ছিল না। কিন্তু, তাদের স্থায়ী সুখ নির্ভর করেছিল তাদের সেই স্বাধীন ইচ্ছাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার ওপর আর তা ছিল ঈশ্বরের নিয়মাবলি মেনে চলা। ঈশ্বর বলেন: “আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর, আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি, ও তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করাই।” (যিশাইয় ৪৮:১৭) স্বাধীন ইচ্ছা অপব্যবহার করার ফল হবে খুবই দুঃখজনক, কারণ মানুষকে ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হয়ে সফল হওয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। বাইবেল বলে: “মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।”—যিরমিয় ১০:২৩.

দুঃখের বিষয় হল, আমাদের প্রথম পিতামাতা মনে করেছিল যে, ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হয়েও তারা সফল হতে পারবে। কিন্তু তারা যখন ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তখন তারা তাঁর সমর্থন ও এর ফলে সিদ্ধতা হারিয়েছিল। তাই, তাদের অবনতি ঘটা শুরু হয়েছিল যতদিন পর্যন্ত না তারা বৃদ্ধ হয় ও মারা যায়। বংশগতির সূত্র অনুযায়ী, আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে সেই অসিদ্ধতা ও মৃত্যু পেয়েছি।—রোমীয় ৫:১২.

প্রধান বিচার্য বিষয়—সার্বভৌমত্ব

কেন ঈশ্বর আদম ও হবাকে ধ্বংস করে আরেকটা মানব দম্পতি সৃষ্টি করেননি? কারণ ঈশ্বরের সার্বিক সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ তাঁর শাসন করার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। প্রশ্নটি ছিল, কার শাসন করার অধিকার রয়েছে এবং কার শাসন যথার্থ? ওপরে উল্লেখিত বিষয়টির পরিপ্রেক্ষিতে, মানুষ যদি ঈশ্বরের দ্বারা শাসিত না হতো, তা হলে তারা কি আরও ভাল করতে পারত? সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তা পরীক্ষা করার জন্য যথেষ্ট সময় দিয়ে ঈশ্বর চিরকালের জন্য প্রমাণ করবেন যে, মানুষ তাঁর শাসনাধীনে অথবা তারা নিজেরা শাসন করে ভাল থাকবে। ঈশ্বরের নির্দেশনা থেকে বিচ্ছিন্ন সমস্ত রকমের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় ব্যবস্থা প্রয়োগের চেষ্টা করার জন্য মানুষকে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে।

ফল কী হয়েছে? মানুষের হাজার হাজার বছরের ইতিহাস আমাদের জানায় যে, দিন দিন দুঃখকষ্ট আরও বেড়ে গিয়েছে। বিগত শতাব্দীতে মানব পরিবার প্রচণ্ড দুঃখকষ্ট ভোগ করেছে, যা আগে কখনো ঘটেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গণহত্যার সময়, লক্ষ লক্ষ লোককে হত্যা করা হয়েছে। ১০ কোটিরও বেশি লোক যুদ্ধবিগ্রহে হত হয়েছে। অপরাধ ও দৌরাত্ম্য সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার পৃথিবীব্যাপী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যৌনবাহিত রোগব্যাধি অনেক লোককে আক্রান্ত করে চলেছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেতে পেয়ে ও রোগব্যাধিতে মারা যায়। সব জায়গায় পারিবারিক জীবন ও নৈতিক মূল্যবোধগুলোর অবনতি ঘটেছে। কোনো মনুষ্য সরকারের কাছেই এই সমস্যাগুলোর সমাধান নেই। তাদের কেউই বার্ধক্য, অসুস্থতা এবং মৃত্যুকে দূর করতে পারেনি।

মানুষের অবস্থা ঠিক সেইরকমই যেমনটা আমাদের সময় সম্বন্ধে বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের যুগকে এই বিধিব্যবস্থার ‘শেষ কাল’ বলে শনাক্ত করে, যখন “বিষম সময় উপস্থিত হইবে।” আর ঠিক বাইবেল যেমন বলেছিল, ‘দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা, উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর হইয়াছে।’—২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৩.

দুঃখকষ্টের শেষ নিকটে

সমস্ত প্রমাণ দেখায় যে, আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে মানুষের স্বাধীন হওয়ার দুঃখজনক পরীক্ষার একেবারে শেষে চলে আসছি। এটা স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে, ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হয়ে মানুষের শাসন কখনোই সফল হতে পারে না। একমাত্র ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থাই শান্তি, সুখ, নিখুঁত স্বাস্থ্য এবং অনন্তজীবন নিয়ে আসতে পারে। তাই যিহোবা যে-দুষ্টতা ও দুঃখকষ্টকে থাকতে দিয়েছেন, তা শেষ হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঈশ্বর শীঘ্রই এই অসন্তোষজনক সমগ্র বিধিব্যবস্থাকে ধ্বংস করার দ্বারা মানুষের বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করবেন।

বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী বলে: “সেই রাজগণের [বর্তমানে বিদ্যমান মানব শাসনব্যবস্থার] সময়ে স্বর্গের ঈশ্বর [স্বর্গে] এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, . . . তাহা ঐ সকল রাজ্য [বর্তমান শাসনব্যবস্থা] চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।” (দানিয়েল ২:৪৪) ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্য যিহোবার সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ তাঁর শাসন করার অধিকারের সত্যতা প্রতিপাদন করবে। এটাই হল বাইবেলের মুখ্য শিক্ষা। ‘শেষ কালের’ চিহ্নের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করতে গিয়ে যিশু বলেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।”—মথি ২৪:১৪.

যখন শেষ আসবে, তখন কারা রক্ষা পাবে? বাইবেল উত্তর দেয়: “সরলগণ দেশে বাস করিবে, সিদ্ধেরা তথায় অবশিষ্ট থাকিবে। কিন্তু দুষ্টগণ দেশ হইতে উচ্ছিন্ন হইবে, বিশ্বাসঘাতকেরা তথা হইতে উন্মূলিত হইবে।” (হিতোপদেশ ২:২১, ২২) সরলগণ হল তারা যারা যিহোবার ইচ্ছা সম্বন্ধে শেখে এবং তা পালন করে। যিশু খ্রিস্ট বলেছিলেন: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।” (যোহন ১৭:৩) হ্যাঁ, “জগৎ . . . বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।”—১ যোহন ২:১৭.

উল্লেখ করা না থাকলে, ব্যবহৃত বাইবেল অনুবাদ বাইবেল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার পবিত্র বাইবেল থেকে গৃহীত।