বাইবেল জীবনকে পরিবর্তন করে
কীভাবে একজন মহিলা, যিনি ঈশ্বরের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না এবং ভালো কেরিয়ার অর্জন করেছিলেন, পরে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছিলেন? কীভাবে একজন ক্যাথলিক যুবক মৃতদের অবস্থা জানার পর নিজের জীবনকে পরিবর্তন করেছিলেন? কীভাবে একজন যুবক, যিনি জীবন সম্বন্ধে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, পরবর্তী সময়ে ঈশ্বর সম্বন্ধে জেনে একজন খ্রিস্টান পরিচারক হয়ে উঠেছিলেন? এই ব্যক্তিরা কী বলতে চায়, তা জানুন।
“বছরের পর বছর ধরে আমি চিন্তা করতাম যে, কেন আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।”—রোজালিন জন
জন্ম: ১৯৬৩ সাল
দেশ: ব্রিটেন
আগে আমার খুবই ভালো কেরিয়ার ছিল
আমার অতীত:
আমি দক্ষিণ লন্ডনের ক্রোয়েডন শহরে জন্মেছিলাম। আমাদের পরিবারে আমরা নয় ভাই-বোন আর আমি তাদের মধ্যে ষষ্ঠ। আমার বাবা-মায়ের আদিবাড়ি ছিল ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সেন্ট ভিনসেন্টে। আমার মা মেথডিস্ট গির্জার সদস্য ছিলেন। আমি ঈশ্বর সম্বন্ধে জানার বিষয় খুব-একটা আগ্রহী ছিলাম না কিন্তু আমার মধ্যে অন্যান্য বিষয়ে জানার প্রচুর আগ্রহ ছিল। স্কুলে ছুটি পেলেই আমি আমাদের স্থানীয় লেকের ধারে বসে বসে বিভিন্ন বই পড়তাম। আমি সেই বইগুলো লাইব্রেরি থেকে চেয়ে আনতাম।
স্কুল শেষ হওয়ার কয়েক বছর পর আমি উপলব্ধি করি যে, আমাকে অবহেলিত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে হবে। আমি সেই ব্যক্তিদের জন্য কাজ করতে শুরু করি, যারা গৃহহীন এবং শারীরিকভাবে ও শেখার বিষয় অক্ষম। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে হেলথ সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করি। এই বিষয়ে স্নাতক হওয়ার পর আমি একটা সম্মানীয় চাকরি পাই। তারপর ধীরে ধীরে আমি বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে শুরু করি। ফ্রীলান্স ম্যানেজমেন্ট পরামর্শদাতা এবং সোশ্যাল রিসার্চার হিসেবে কাজ করার জন্য আমার কেবল একটা ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই চলত। একেক সময় আমি প্লেনে করে কয়েক সপ্তাহের জন্য বিদেশ পাড়ি দিতাম, আমার পছন্দসই হোটেলে থাকতাম, সেখানকার ভালো পরিবেশ উপভোগ করতাম এবং নিজের শরীর ঠিক রাখার জন্য স্পা ও জিমে যেতাম। আমি ভাবতাম, আমি আসলেই আমার জীবন উপভোগ করছি কিন্তু অবহেলিত মানুষের প্রতি আমার চিন্তা থেকেই গিয়েছিল।
বাইবেল যেভাবে আমার জীবনকে পরিবর্তন করেছে:
বেশ কয়েক বছর ধরে আমি মনে মনে ভাবতাম, ‘কেন আমরা পৃথিবীতে আছি আর আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী?’ কিন্তু আমি কখনো বাইবেল থেকে এর উত্তর জানার চেষ্টা করিনি। আমার বোন মার্গারেট একজন যিহোবার সাক্ষি ছিল। ১৯৯৯ সালে, সে একদিন তার একজন সাক্ষী বান্ধবীকে নিয়ে আমার বাড়িতে আসে। সেই বান্ধবী আমার প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখায়। তার সঙ্গে আমি বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করি কিন্তু আমি ধীরে ধীরে উন্নতি করছিলাম। এর কারণ হল, আমার বেশিরভাগ সময় কেরিয়ার ও বিলাসবহুল জীবনে ছোটার পিছনেই কেটে যাচ্ছিল।
২০০২ সালের গরম কালে আমি ইংল্যাণ্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে চলে যাই। সেখানে আমি সোশ্যাল রিসার্চে স্নাতোকত্তর করার জন্য পড়াশোনা শুরু করি আর আমার লক্ষ্য ছিল আমি একজন ডক্টরেট হব। আমি আমার ছোটো ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় কিংডম হলে প্রায়ই যোগ দিতে শুরু করি। যদিও আমি উচ্চশিক্ষা লাভ করার বিষয়ে খুবই আকাঙ্ক্ষী ছিলাম, কিন্তু বাইবেল অধ্যয়ন করার পর আমি জীবনের সমস্যার কারণগুলো বুঝতে পারছিলাম এবং সেগুলো সমাধান করার উপায়ও জানতে পারছিলাম। আমি মথি ৬:২৪ পদের সত্যতা উপলব্ধি করি, যেখানে বলা আছে যে, আমরা দুই প্রভুর দাসত্ব করতে পারি না, হয় আমাকে ধনসম্পদ ভালোবাসতে হবে, না হলে ঈশ্বরকে। আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হত, আমি আমার জীবনে কোন বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখতে চাই।
স্নাতকোত্তর কোর্স শুরু করার আগের বছর আমি প্রায়ই সাক্ষিদের বই অধ্যয়নে যোগ দিতাম, যেখানে এমন এক সৃষ্টিকর্তা কি আছেন, যিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন? (ইংরেজি) a শিরোনামের বইটা নিয়ে আলোচনা করা হত। আমি নিশ্চিত হয়ে যাই যে, একমাত্র যিহোবাই মানবজাতির সমস্যা সমাধান করতে পারেন। এখন ইউনিভার্সিটিতে আমাকে শেখানো হয়, জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়ার জন্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই। আমি খুবই রেগে যাই এবং দুই মাস পর ইউনিভার্সিটিতে যাওয়া ছেড়ে দিই। আমি আধ্যাত্মিক বিষয়ে আরও বেশি সময় ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিই।
বাইবেলের যে-শাস্ত্রপদটা আমাকে আমার জীবনধারা পরিবর্তন করতে সাহায্য করেছিল, সেটা ছিল হিতোপদেশ ৩:৫, ৬ পদ। এটি বলে: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।” আমাদের প্রেমময় ঈশ্বরকে জানা বস্তুগত বিষয় এবং ডক্টরেটের খ্যাতির চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। এই পৃথিবী সম্পর্ক ঈশ্বরের উদ্দেশ্য এবং যিশুর বলিদানের গুরুত্ব সম্বন্ধে আমি যতবেশি জানতে থাকি, ততবেশি আমি আমার জীবনকে আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত হই। আমি ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে বাপ্তিস্ম নিই। তারপর, আমি ধীরে ধীরে আমার জীবনকে সাদাসিধে করতে শুরু করি।
আমি যেভাবে উপকৃত হয়েছি:
যিহোবার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব খুবই মূল্যবান। তাঁর বিষয়ে জানার মাধ্যমে আমি মনের শান্তি ও আনন্দ লাভ করতে পেরেছি। এ ছাড়া, আমি যিহোবার অন্যান্য উপাসকের সঙ্গে মেলামেশা করার মাধ্যমে আরও বেশি আনন্দিত হই।
আমার মধ্যে যে জানার আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেটা আমাকে ক্রমাগত সন্তুষ্টি দিচ্ছে কারণ আমি বাইবেল ও খ্রিস্টীয় সভাগুলো থেকে বিভিন্ন বিষয় শিখতে পারছি। আমি আমার বিশ্বাস সম্বন্ধে অন্যদের কাছে জানাতে পেরে খুবই খুশি। বর্তমানে, এটাই আমার কেরিয়ার হয়ে উঠেছে। আমি অন্যদের প্রকৃতই সাহায্য করতে পারছি। আমি তাদের এখনই এক ভালো জীবন উপভোগ করতে এবং ভবিষ্যতের বিষয়ে এক চমৎকার আশা সম্বন্ধে জানাতে পারছি। ২০০৮ সালের জুন মাস থেকে আমি পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় অংশ নিয়েছি আর আগের চেয়ে আরও বেশি সুখী ও সন্তুষ্ট হয়েছি। আমি জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানতে পেরেছি আর এর জন্য আমি যিহোবার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ।
“আমার বন্ধুর মৃত্যু আমার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।”—রোমান ইরনেসবারজার
জন্ম: ১৯৭৩ সাল
দেশ: অস্ট্রিয়া
আগে আমি একজন জুয়াড়ি ছিলাম
আমার অতীত:
আমি অস্ট্রিয়ার ব্রাউনো নামক একটা ছোটো শহরে বড়ো হয়ে উঠি। সেই এলাকাটা ছিল খুবই সমৃদ্ধশালী এবং সেখানে অপরাধ হত না বললেই চলে। আমার পরিবার ছিল ক্যাথলিক এবং আমি একজন ক্যাথলিক হিসেবেই বড়ো হয়ে উঠি।
ছোটোবেলায় একটা ঘটনা আমার উপর গভীর প্রভাব ফেলে। সালটা ছিল ১৯৮৪ আর আমার তখন ১১ বছর বয়স। একদিন আমি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে ফুটবল খেলছিলাম আর সে-দিন বিকেল বেলাই একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় সে মারা যায়। তার মৃত্যু আমার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। সেই দুর্ঘটনার অনেক বছর পরও আমি চিন্তা করতে থাকি, আমরা মারা গেলে আমাদের কী হয়?
স্কুল শেষ করার পর আমি একজন ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করতে শুরু করি। যদিও আমার জুয়াখেলার অভ্যাস ছিল এবং প্রচুর টাকা বাজি রেখে তা খেলতাম কিন্তু আমি কখনোই আর্থিক সমস্যায় পড়িনি। আমি খেলাধুলার পিছনেও অনেক সময় ব্যয় করতে থাকি এবং হেভি মেটাল ও পাঙ্ক রক মিউজিক আমার খুবই প্রিয় ছিল। দিনের পর দিন আমি ডিস্কোতে যেতাম এবং পার্টি করতাম। আমার প্রধান লক্ষ্য ছিল, আনন্দফুর্তি করা। আমি অনৈতিক জীবনযাপন করতাম। কিন্তু এত কিছু করার পরও আমার মধ্যে একটা শূন্যতার অনুভূতি ছিল।
বাইবেল যেভাবে আমার জীবনকে পরিবর্তন করেছে:
১৯৯৫ সালে একজন বয়স্ক সাক্ষি আমার দরজায় কড়া নাড়েন এবং আমাকে একটা বই দেন। সেই বইয়ের একটা অধ্যায়ে বাইবেলের এই প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা ছিল, ‘মানুষ মারা গেলে কী হয়?’ তখনও আমার সেই প্রিয় বন্ধুর ভয়াবহ মৃত্যু আমাকে কষ্ট দিচ্ছিল আর তাই আমি সেই বইটা নিই। আমি কেবল সেই অধ্যায়টাই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে পুরো বইটা পড়ি।
সেই বইটা পড়ার পর মৃতদের অবস্থা সম্বন্ধে আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পাই আর সেইসঙ্গে আমি আরও অনেক বিষয় জানতে পারি। যেহেতু আমি একজন ক্যাথলিক হিসেবে বড়ো হয়ে উঠেছিলাম, তাই আমার বিশ্বাস প্রধানত যিশুর উপর কেন্দ্রীভূত ছিল। তবে আমি বাইবেল গভীরভাবে অধ্যয়ন করার মাধ্যমে যিশুর পিতা যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তুলি। আমি এটা শিখে অভিভূত হয়ে যাই যে, যিহোবা আমাদের জন্য চিন্তা করেন এবং চান যেন আমরা তাঁর বিষয়ে শিখি। (মথি ৭:৭-১১) আমি শিখি, যিহোবার অনুভূতি রয়েছে আর তিনি সবসময়ই তাঁর কথা রাখেন। এটা আমাকে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করতে এবং সেগুলো কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে, তা জানতে অনুপ্রাণিত করে। আমি যা বুঝতে পারি, তা ঈশ্বরের উপর আমার বিশ্বাসকে আরও মজবুত করে।
আমি উপলব্ধি করি, কেবলমাত্র যিহোবার সাক্ষিরাই লোকদের বাইবেল বোঝানোর বিষয়ে প্রকৃতই আগ্রহী। আমি সাক্ষিদের প্রকাশনায় দেওয়া শাস্ত্রপদগুলো নোট করি এবং সেগুলো আমার ক্যাথলিক বাইবেলের সঙ্গে মিলিয়ে নিই। আমি যতবেশি গবেষণা করি, ততবেশি উপলব্ধি করি যে, আমি সত্য খুঁজে পেয়েছি।
বাইবেল অধ্যয়ন করার পর আমি শিখি, যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি। ইফিষীয় ৪:২২-২৪ পদ পড়ার পর আমি বুঝতে পারি যে, আমাকে আমার “পুরোনো ব্যক্তিত্ব অর্থাৎ আগের আচরণ পরিত্যাগ” করতে হবে আর আমাকে ‘নতুন ব্যক্তিত্বকে পরিধান করতে হবে, যা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে মিল রেখে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ তাই, আমি আমার অনৈতিক জীবনযাপন পরিত্যাগ করি। এ ছাড়া, আমি উপলব্ধি করি, আমাকে জুয়াখেলা ত্যাগ করতে হবে কারণ এই অভ্যাস আমাকে বস্তুবাদী ও লোভী হওয়ার জন্য পরিচালিত করছে। (১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০) আমি বুঝতে পারি, এই পরিবর্তনগুলো করার জন্য আমাকে আমার পুরোনো বন্ধুদের ছাড়তে হবে আর সেই বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করতে হবে, যারা আমার বিশ্বাস অনুযায়ী জীবনযাপন করে।
এই পরিবর্তনগুলো করা আমার পক্ষে সহজ ছিল না। কিন্তু আমি সাক্ষিদের সভাগুলোতে যোগ দিতে শুরু করি এবং স্থানীয় মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলি। এ ছাড়া, আমি নিজে নিজে ভালোভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করি। এর ফলে আমি নিজের জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন করতে সক্ষম হই, যেমন গান-বাজনা, জীবনের লক্ষ্য এবং বেশভূষার ক্ষেত্রে। ১৯৯৫ সালে আমি একজন যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বাপ্তিস্ম নিই।
আমি যেভাবে উপকৃত হয়েছি:
এখন আমি টাকাপয়সা ও বস্তুগত বিষয়ের প্রতি এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে পারছি। আগে আমি সহজে রেগে যেতাম কিন্তু এখন আমি নিজেকে সংযত রাখতে পারছি। এ ছাড়া, আমি ভবিষ্যতের বিষয়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হই না।
আমি এক আন্তর্জাতিক সমাজের অংশ হতে পেরে খুবই খুশি, যারা যিহোবার সেবা করে। তাদের মধ্যে আমি এমন অনেক ব্যক্তিকে দেখতে পাই, যারা বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে লড়াই করা সত্ত্বেও বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে চলেছে। এখন আমি খুবই খুশি কারণ আমি আমার পুরো সময় ও শক্তি নিজের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য নয়, কিন্তু যিহোবার সেবা করার এবং অন্যদের প্রতি ভালো কাজ করার জন্য ব্যয় করতে পারছি।
“শেষপর্যন্ত আমি জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাই।”—আইয়েন কিং
জন্ম: ১৯৬৩ সাল
দেশ: ইংল্যান্ড
আগে আমি হতাশায় ভুগতাম
আমার অতীত:
আমার জন্ম ইংল্যান্ডে, কিন্তু আমার বয়স যখন সাত বছর তখন আমার পরিবার অস্ট্রেলিয়ায় চলে যায়। সেখানে আমরা কুইনস্ল্যান্ড প্রদেশে গোল্ড কোস্ট নামক পর্যটন এলাকায় বসবাস করতে শুরু করি। যদিও আমাদের পরিবার খুব ধনী ছিল না কিন্তু আমাদের কোনো কিছুর অভাবও ছিল না।
আমার এক আরামদায়ক জীবনযাপন থাকা সত্ত্বেও আমি সুখী ছিলাম না। আমি নিজের জীবন নিয়ে হতাশায় ভুগতাম। আমার বাবা অতিরিক্ত মদ খেতেন এবং আমার মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। এই কারণে তার প্রতি আমার ততটা ভালোবাসা ছিল না। পরে আমি জানতে পারি, মালায়া দেশে সৈনিক হিসেবে থাকার সময় তাকে অনেক কিছু ভোগ করতে হয়েছিল আর তখন আমি বুঝতে পারি, কেন তিনি আমাদের সঙ্গে ওরকম ব্যবহার করতেন।
হাইস্কুলে পড়ার সময়ই আমি অতিরিক্ত মদ্যপানের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি। ১৬ বছর বয়সে আমি স্কুল ছেড়ে দিয়ে নৌবাহিনীতে যোগ দিই। আমি বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য খেতে শুরু করি এবং বিশেষ করে, তামাকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি। এ ছাড়া, যত দিন এগোতে থাকে, তত আমি আরও বেশি করে মদ খেতে থাকি। প্রথম প্রথম আমি শুধু সপ্তাহান্তে মদ খেতাম কিন্তু পরে আমি প্রতিদিনই মদ খেতে শুরু করি।
কিশোর বয়সে আমার মনে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন জাগে। আমি এভাবে যুক্ত করি, ‘ঈশ্বর যদি অস্তিত্বে থেকে থাকেন, তা হলে কেন তিনি লোকদের কষ্ট পেতে ও মারা যেতে অনুমতি দেন?’ সারা পৃথিবীতে যে দুষ্টতা ছেয়ে রয়েছে, সেজন্য ঈশ্বরকে দোষারোপ করে আমি এমনকী কবিতা লিখতেও শুরু করি।
২৩ বছর বয়সে আমি নৌবাহিনীর কাজ ছেড়ে দিই। এরপর আমি বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করি, এমনকী এক বছরের জন্য বিদেশ ভ্রমণ করি। কিন্তু কোনো কিছুই আমাকে হতাশা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেনি। আমার মধ্যে কোনো কিছু পাওয়ার অথবা লক্ষ্য স্থাপন করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। আমার কিছুই ভালো লাগত না। একটা বাড়ি কেনা অথবা একটা ভালো চাকরি কিংবা চাকরিতে পদোন্নতি, এই সব কিছুই আমার কাছে বেকার বলে মনে হত। আমার শুধু মদ খেতে আর গান শুনতে ভালো লাগত।
আমার আজও সেই মুহূর্তের কথা মনে পড়ে যায়, যখন জীবনের উদ্দেশ্য খোঁজার জন্য আমি আকুল আকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠি। সেইসময় আমি পোল্যান্ড গিয়েছিলাম আর সেখানকার আউশভিটশে এক কুখ্যাত কনসেনট্রেশন ক্যাম্প পরিদর্শন করছিলাম। সেই জায়গায় যে কত নৃশংস ঘটনা ঘটেছে, তা আমি আগেই বইতে পড়েছিলাম। কিন্তু আমি যখন স্বচক্ষে সেই বিশাল ক্যাম্পটাকে দেখি, তখন আমি গভীরভাবে প্রভাবিত হই। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, কীভাবে মানুষ অন্য মানুষের প্রতি এত নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে। সেই ক্যাম্পটা ঘুরে দেখার সময় আমি কেঁদে ফেলি এবং মনে মনে প্রশ্ন করি, ‘কেন এই নিষ্ঠুরতা?’
বাইবেল যেভাবে আমার জীবনকে পরিবর্তন করেছে:
১৯৯৩ সালে বিদেশ থেকে বাড়ি ফেরার পর আমি আমার প্রশ্নে উত্তর খোঁজার জন্য বাইবেল পড়তে শুরু করি। কিছু দিন পর, দুই জন যিহোবার সাক্ষি আমার দরজায় কড়া নাড়ে আর কাছাকাছি একটা স্টেডিয়ামে এক সম্মেলনে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। আমি সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
এই স্টেডিয়ামে আমি কয়েক মাস আগে একটা খেলা দেখতে গিয়েছিলাম কিন্তু সম্মেলনের পরিবেশ একেবারে আলাদা ছিল। সাক্ষিরা ছিল খুবই ভদ্র এবং মার্জিত পোশাক পরিহিত এবং তাদের সন্তানদের আচরণও খুবই ভালো ছিল। দুপুরে খাওয়ার সময় আমি যা দেখি, সেটা আমাকে অবাক করে দেয়। শত শত সাক্ষি সেই মাঠে বসে খাওয়া-দাওয়া করেছিল কিন্তু তারা যখন তাদের বসার জায়গায় ফিরে যায়, তখন মাঠের মধ্যে এক টুকরো কাগজও পড়েছিল না। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল আমি সেই ব্যক্তিদের মধ্যে শান্তি ও সন্তুষ্টির মনোভাব লক্ষ করেছিলাম, যেটা আমি এত বছর ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। সেই দিনের কোনো বক্তৃতার কোনো কথাই আমার মনে নেই কিন্তু সাক্ষিদের আচার-আচরণ আমার উপর গভীর প্রভাব ফেলে।
সেই দিন সন্ধ্যা বেলায় আমার এক ভাইয়ের কথা মনে পড়ে যায়, যে বাইবেল পড়ত এবং বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে পরীক্ষা করত। কিছু বছর আগে সে আমাকে যিশুর একটা কথা বলেছিল। যিশু বলেছিলেন যে, তোমরা সত্য ধর্মকে তাদের ফলের দ্বারাই চিন্তে পারবে। (মথি ৭:১৫-২০) আমি চিন্তা করি, আমার অন্তত একবার পরীক্ষা করে দেখা উচিত, কেন সাক্ষিরা এত আলাদা। জীবনে প্রথমবার আমি আশার আলো দেখতে পাই।
পরের সপ্তাহে সেই দুই জন সাক্ষি আবার আমার বাড়িতে আসে, যারা আমাকে সম্মেলনে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তারা আমাকে বাইবেল অধ্যয়নের প্রস্তাব দেয় আর আমি তা গ্রহণ করি। এ ছাড়া, আমি তাদের সঙ্গে সভায় উপস্থিত থাকতেও শুরু করি।
বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমে ঈশ্বর সম্বন্ধে আমার দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি পালটে যায়। আমি শিখি যে, তিনি দুষ্টতা ও দুঃখকষ্টের কারণ নন বরং লোকদের খারাপ কাজ করতে দেখে তিনি নিজেও দুঃখ পান। (আদিপুস্তক ৬:৬; গীতসংহিতা ৭৮:৪০, ৪১) আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমি আর কখনো যিহোবাকে দুঃখ দেব না। আমি তাঁকে খুশি করার চেষ্টা করব। (হিতোপদেশ ২৭:১১) আমি অতিরিক্ত মদ খাওয়া, তামাকে সেবন এবং অনৈতিক জীবনযাপন ছেড়ে দিই। ১৯৯৪ সালের মার্চ মাসে আমি একজন যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বাপ্তিস্ম নিই।
আমি যেভাবে উপকৃত হয়েছি:
আমি প্রকৃতই সুখী ও সন্তুষ্ট। আমি আমার সমস্যা সমাধান করার জন্য আর মদ খাওয়ার কথা চিন্তা করি না। এর পরিবর্তে, আমি যিহোবার উপরে নিজের ভার অর্পণ করি।—গীতসংহিতা ৫৫:২২.
দশ বছর আগে আমি এক সুন্দরী সাক্ষি বোনকে বিয়ে করি, যার নাম ক্যারেন আর আমার এক ফুটফুটে সৎ মেয়ে রয়েছে, যার নাম নেলা। আমরা তিন জন প্রচার কাজে অনেক সময় ব্যয় করি আর এভাবে অন্যদের ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য শেখাই। পরিশেষে, আমি এক উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবন খুঁজে পেয়েছি।
a যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।