সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমার রুমমেটের সঙ্গে থাকা এত কঠিন কেন?

আমার রুমমেটের সঙ্গে থাকা এত কঠিন কেন?

যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য . . .

আমার রুমমেটের সঙ্গে থাকা এত কঠিন কেন?

“আমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করি। কিন্তু ঘরে এসেই আমি দেখি যে আমার রুমমেট মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে বসে টিভি দেখছে আর কাগজপত্র ও পপকর্ন সব জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। প্রত্যেক বার ঘরে ঢোকার আগেই ঘরে গিয়ে আমি কী দেখতে পাব, সেই দৃশ্য আমার চোখে ভেসে ওঠে আর মনে মনে বলি, ‘আমি ঘরে যেতে চাই না।’”—ডেভিড।

আমার রুমমেট ছিল আদরের দুলালি। আমার মনে হয় সে মনে করত ঘরদোর পরিষ্কার করার ও থালাবাটি ধোয়ার জন্য ঝি আছে। আর সে সবসময় সবকিছু তার মনের মতো করতে চাইত।—রিনে। *

“একজন অপরিচিত ব্যক্তির অদ্ভুত সব স্বভাব সহ্য করা . . . একজনকে নমনীয় হতে এবং আপোশ করার কলাকৌশল শেখাতে পারে। কিন্তু শেখার এই পদ্ধতি প্রায়ই যন্ত্রণাদায়ক হয়,” ইউ.এস. নিউজ আ্যন্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট-এ প্রকাশিত একটা প্রবন্ধ বলেছিল। যারা কোন এক সময় রুমমেটের সঙ্গে থেকেছে, তারা হয়তো এই বিষয়ে একমত হবে।

পড়াশোনার খরচ জোগাতে কিছুটা সাহায্য হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-ছাত্রী রুমমেটের সঙ্গে থাকে। আবার কিছু যুবক-যুবতী বাবামার কাছ থেকে স্বাধীন হতে চায় বলে রুমমেটের সঙ্গে থাকে। খ্রীষ্টান যুবক-যুবতীদের মধ্যে অনেকে আধ্যাত্মিক আগ্রহের জন্য রুমমেটের সঙ্গে থাকা বেছে নিয়েছে। (মথি ৬:৩৩) তারা লক্ষ্য করে যে, কারও সঙ্গে খরচ ভাগাভাগি করে নেওয়া পূর্ণ-সময়ের সুসমাচার প্রচারক হিসেবে সেবা করতে তাদের সাহায্য করে। এ ছাড়া, কখনও কখনও মিশনারি জীবনের ও যিহোবার সাক্ষিদের বিভিন্ন শাখা অফিসে পরিচর্যা করার সময় রুমমেট থাকাটা সাধারণ বিষয়। *

সচেতন থাক! বেশ কয়েকজন যুবক-যুবতীর সঙ্গে কথা বলেছে যারা রুমমেটের সঙ্গে থেকেছে। সবাই একমত হয়েছিল যে, একজন রুমমেট কেবল ভাড়া দিয়ে সাহায্য করার চেয়েও আরও বেশি কিছু করতে পারে—একজন রুমমেট সাহচর্যের এক উৎস হতে পারে, যার সঙ্গে কথা বলা ও একসঙ্গে কাজ করা যায়। লিন মনে করে বলে, “আমরা দুজনে মেয়েলি নানারকম কথাবার্তা বলতাম বা একসঙ্গে বসে সিনেমা দেখতাম।” রিনে বলে, “এ ছাড়া রুমমেট তোমাকে উৎসাহও দিতে পারে। তুমি যখন কাজ কর, তোমার সমস্ত খরচ পরিশোধ করার চেষ্টা কর, প্রচার কর, তখন তোমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য মাঝেমাঝে একজন রুমমেট থাকা ভাল।”

তাসত্ত্বেও, যাকে তুমি একদমই চিন না এমন একজন রুমমেটের সঙ্গে থাকা খুবই কঠিন হতে পারে। ইউ.এস.নিউজ আ্যন্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট কলেজের পরিবেশ সম্বন্ধে বলেছিল: “একজন উপযুক্ত রুমমেট গড়ে তোলার জন্য অনেক স্কুলে ব্যাপক চেষ্টা সত্ত্বেও, বেশির ভাগই অসন্তোষজনক ফল হয়েছে।” সত্যি বলতে কী, কলেজের রুমমেটদের মধ্যে ঝগড়া কখনও কখনও প্রচণ্ড হিংস্রতার দিকে মোড় নেয়! তাই, ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েব সাইট চালু করা হয়েছে, যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের রুমমেটদের সম্বন্ধে তাদের মনের যত ক্ষোভ রয়েছে, সেগুলো প্রকাশ করতে পারে। কেন একজন রুমমেটের সঙ্গে থাকা প্রায়ই কঠিন হয়?

অপরিচিত কারও সঙ্গে থাকা

মার্ক বলে, ‘অপরিচিত কারও সঙ্গে থাকা একধরনের আগ্রহজনক অভিজ্ঞতা। তুমি আসলে জান না যে সে কেমন হবে।’ সত্যিই, যার সঙ্গে তোমার কোন দিক দিয়েই মিল নেই বা খুব সামান্য মিল রয়েছে, তার সঙ্গে থাকা খুবই অস্বস্তিকর হতে পারে। এটা ঠিক যে, খ্রীষ্টানদের অনেক বিষয়ে মিল থাকা এবং কথা বলার জন্য অনেক বিষয় থাকা উচিত। তাসত্ত্বেও, ডেভিড স্বীকার করে: “রুমমেটের সঙ্গে থাকার বিষয়ে আমার অনেক ভয় ছিল।”

কিন্তু ডেভিডের রুমমেটও একই পটভূমি থেকে এসেছিল। তাই বলে তাদের সবকিছুতে মিল ছিল না। মার্ক বলে: “আমার প্রথম রুমমেট কম কথা বলত। তুমি যখন কারও সঙ্গে একই রুমে থাক, তখন তোমার কথা বলা দরকার। কিন্তু, সে তা করত না। এই কারণে আমি খুবই বিরক্ত হতাম।”

বিভিন্ন পটভূমিও আরেক ধরনের চাপ ও যন্ত্রণা আনতে পারে। লিন বলে: “তুমি যখন তোমার মতো চলার জন্য বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যাও, তখন তুমি তোমার মতো করেই সবকিছু করতে চাইবে। কিন্তু, কিছুদিনের মধ্যে তুমি দেখবে যে, সেখানেও অন্য লোকেদের কথা তোমাকে ভাবতে হচ্ছে।” সত্যিই, তোমার পরিবারের নিরাপদ আশ্রয় থেকে এসে যখন তুমি দেখবে যে লোকেরা কত আলাদাভাবে বিষয়গুলোকে দেখে, তখন তা প্রচণ্ড এক ধাক্কা হতে পারে।

আলাদা পটভূমি, আলাদা কার্যপদ্ধতি

প্রশিক্ষণ বা প্রশিক্ষণের অভাবের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে, যা একজন তার বাবামার কাছ থেকে লাভ করে। (হিতোপদেশ ২২:৬) যুবক ফেরনানডো বলে: “আমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি আর আমার রুমমেট ছিল অগোছালো। উদাহরণস্বরূপ আলমারির কথাই ধর: সে কাপড়চোপড় চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখত। আমি সেগুলোকে ঝুলিয়ে রাখতে পছন্দ করতাম।” কখনও কখনও মানের বেলায় চরম পার্থক্য দেখা যায়।

রিনে মনে করে বলে: “আমার একজন রুমমেট ছিল যার শোবার ঘর আঁস্তাকুড়ের মতো! এ ছাড়া, আমার এমন কয়েকজন রুমমেট ছিল যারা খাবার পর টেবিল পরিষ্কার করে না বা যারা বেসিনের ওপর দুই বা তিন দিন ধরে থালাবাটি ফেলে রাখে।” হ্যাঁ, ঘরের কাজকর্মের বেলায় কিছু রুমমেট হিতোপদেশ ২৬:১৪ পদের কথাগুলোকে প্রকাশ করে: “কব্জাতে যেমন কবাট ঘুরে, তেমনি অলস আপন খট্টায় ঘুরে।”

অন্যদিকে, শুচিবাই কাউকে রুমমেট হিসেবে পাওয়াও তেমন একটা উপকার করতে পারে না। লি নামে এক যুবতী তার একজন রুমমেট সম্বন্ধে বলে: “সে সবসময় সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতে চাইত। আমি মোটেও নোংরা নই কিন্তু মাঝেমাঝে জিনিসপত্র, যেমন বইখাতা আমার বিছানার ওপর রেখে দিতাম। আর সে প্রায়ই সেগুলো ঠিক জায়গায় রাখতে চাইত।”

এ ছাড়া, কিছু রুমমেটের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি সম্বন্ধে তাদের নিজস্ব ধারণা রয়েছে। মার্ক বুঝিয়ে বলে: “আমার রুমমেট একেবারে শেষ মুহূর্তে ঘুম থেকে উঠত। উঠেই দৌড়ে বেসিনের কাছে যেত ও কোনরকমে চুলে জল ছিটিয়ে বেরিয়ে পড়ত।”

পটভূমি ও ব্যক্তিত্বের পার্থক্যও বিনোদন ও আমোদপ্রমোদকে প্রভাবিত করতে পারে। মার্ক তার রুমমেট সম্বন্ধে বলে, “সংগীতের ক্ষেত্রে আমাদের পছন্দ একরকম ছিল না।” কিন্তু, পরস্পরের প্রতি সম্মান থাকলে পার্থক্যগুলো উপকারজনক হতে পারে, হয়তো দুজন রুমমেটকেই তাদের রুচিকে আরও প্রসারিত করতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু, প্রায়ই এই পার্থক্যগুলো মতভেদের সৃষ্টি করে। ফেরনানডো বলে, “আমি স্প্যানিশ সংগীত পছন্দ করি কিন্তু আমার রুমমেট সবসময় এর সমালোচনা করে।”

ফোন—আরেক সমস্যা

টেলিফোনের ব্যবহার সংঘর্ষের আরেকটা বড় কারণ হতে পারে। মার্ক বলে: “আমি ঘুমাতে যেতে চাই কিন্তু আমার রুমমেট অনেক সময় ধরে ফোনে কথা বলে। কিছু সময় পর তা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।” একইভাবে লিন বলে: “মাঝে মাঝে আমার রুমমেটের বন্ধুরা ভোর তিনটে বা চারটার সময় ফোন করত। সে না থাকলে আমাকে উঠে কথা বলতে হতো।” এই সমস্যার সমাধান কী ছিল? “আমরা দুজনে নিজের নিজের ফোন নিয়েছিলাম।”

কিন্তু, সব যুবক-যুবতীর ফোন কেনার সামর্থ্য নেই এবং অনেককেই বাধ্য হয়ে একটা ফোন ব্যবহার করতে হয়। এটা একটা ভীষণ চাপপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। রিনে মনে করে বলে: “আমার একজন রুমমেট ডেটিং করছিল আর প্রায়ই সে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলত। এক মাসে ৯০ ডলারেরও বেশি বিল আসে। সে আশা করেছিল যে, আমরা সবাই কিছু কিছু দেব, কারণ আমরা বলেছিলাম যে, সবাই মোট বিল সমান ভাগে ভাগ করে পরিশোধ করব।”

ফোন করা আরেকটা সমস্যা হতে পারে। লি মনে করে বলে, “আমি বয়স্কা একজনের সঙ্গে থাকতাম। আর আমাদের শুধু একটা ফোন ছিল। আমি সবসময় ফোনে কথা বলতাম কারণ আমার অনেক বন্ধুবান্ধব ছিল। তিনি কখনও আমাকে কিছু বলতেন না। আমি ভাবতাম যে, তিনি যদি ফোন ব্যবহার করতেই চান, তা হলে নিশ্চয়ই আমাকে বলবেন। এখন আমি বুঝতে পারছি যে, আমি আসলে অবিবেচক ছিলাম।”

একান্তে থাকার সময়ের অভাব

ডেভিড বলে, “প্রত্যেকের তার নিজের জন্য কিছু সময় দরকার। মাঝেমাঝে আমার কেবল আরাম করার জন্য সময়ের দরকার হয়।” কিন্তু তোমার যদি রুমমেট থাকে, তা হলে সেই একান্ত সময় বের করা খুবই কঠিন হয়। মার্ক স্বীকার করে, “আমি চাইতাম যে আমার নিজস্ব কিছু সময় থাকুক। তাই, একান্ত থাকার অভাবটাই আমার পক্ষে সবচেয়ে কঠিন ছিল। আমার রুমমেট ও আমার কাজের তালিকা একইরকম। তাই, নিরিবিলি সময় খুঁজে পাওয়া মুশকিল।”

এমনকি যীশু খ্রীষ্টেরও কখনও কখনও একা থাকার দরকার হয়েছিল। (মথি ১৪:১৩) রুমমেটের কারণে যদি তা করা কঠিন হয় বা পড়া, অধ্যয়ন করা বা ধ্যান করা সম্ভব না হয়, তা হলে তা হতাশাজনক হতে পারে। মার্ক বলে: “অধ্যয়ন করা কঠিন কারণ সবসময়ই কিছু না কিছু হচ্ছে। সে তার বন্ধুদেরকে ঘরে আমন্ত্রণ জানায়, টেলিফোনে কথা বলে বা টিভি দেখে অথবা রেডিও শোনে।”

তাসত্ত্বেও, রুমমেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যত কঠিনই হোক না কেন, হাজার হাজার যুবক-যুবতী তাতে সফল হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধারাবাহিক প্রবন্ধের কোন একটায় কিছু ব্যবহারিক দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে, যা রুমমেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।(g০২ ৪/২২)

[পাদটীকাগুলো]

^ কিছু নাম পালটে দেওয়া হয়েছে।

^ যদিও এই পরামর্শ যুবক-যুবতীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে কিন্তু তা বয়স্ক ব্যক্তিদেরকেও সাহায্য করতে পারে, যাদের অবস্থার পরিবর্তনের কারণে যেমন বিধবা হয়ে যাওয়ায় রুমমেটের সঙ্গে থাকতে হয়।

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

গানবাজনার পছন্দে পার্থক্য কঠিন অবস্থা এনে দিতে পারে

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

অবিবেচনা চাপ তৈরি করতে পারে