সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

শিশুকাল থেকেই সন্তানের প্রশিক্ষণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

শিশুকাল থেকেই সন্তানের প্রশিক্ষণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

শিশুকাল থেকেই সন্তানের প্রশিক্ষণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

ফ্লরেন্সের বয়স ছিল ৪০ বছর আর তিনি একটা বাচ্চার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু, তার গর্ভকালীন সময়ে একজন ডাক্তার তাকে সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, বাচ্চাটা পঠনে অক্ষমতা নিয়ে জন্মাতে পারে। তবে, তিনি আশা ছেড়ে দেননি এবং পরে এক সুস্থসবল বাচ্চার জন্ম দিয়েছিলেন।

তার ছেলে স্টিভেনের জন্মের কিছুদিন পর থেকেই, ফ্লরেন্স তার সামনে পড়তে এবং প্রতিটা সুযোগে তার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছিলেন। সে যখন আরেকটু বড় হয়েছিল, তখন তিনি তার সঙ্গে খেলাধুলা করতেন, ঘরের বাইরে সময় কাটাতে যেতেন, সংখ্যা গণনা করতে শেখাতেন এবং গান গাইতেন। “এমনকি স্নান করানোর সময়ও আমরা কিছু না কিছু খেলতাম,” তিনি স্মরণ করে বলেন। তা করা সার্থক হয়েছিল।

স্টিভেন ১৪ বছর বয়সেই মাইয়ামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্মান লাভ করেছিল। দুই বছর পর, ১৬ বছর বয়সে সে আইন বিদ্যালয় শেষ করেছিল এবং তার জীবনী অনুসারে পরে সে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে অল্পবয়স্ক উকিল হয়েছিল। তার মা ড. ফ্লরেন্স বাকাস—একজন প্রাক্তন শিক্ষিকা এবং অবসরপ্রাপ্ত উপদেষ্টা—শিশুকাল থেকেই শিক্ষা দেওয়া সম্বন্ধে অধ্যয়ন করায় যথেষ্ট সময় দিয়েছিলেন। তিনি নিশ্চিত যে, তার ছেলের শৈশবকালে তিনি যে-মনোযোগ এবং উদ্দীপনা দিয়েছিলেন, সেটা তার ছেলের ভবিষ্যৎকে পালটে দিয়েছে।

স্বভাব বনাম শিশুশিক্ষা

সম্প্রতি, শিশু মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে যে-গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা নিয়ে তর্কবিতর্ক হয়ে আসছে, সেটা হল শিশুর বিকাশে “স্বভাব,” অর্থাৎ উত্তরাধিকারসূত্রে সে যা পেয়েছে সেটা, নাকি “শিশুশিক্ষা” অর্থাৎ সে যে প্রতিপালিত হয়েছে এবং প্রশিক্ষণ লাভ করেছে, সেটার ভূমিকা রয়েছে। অধিকাংশ গবেষক এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, একটা শিশুর বিকাশ এই দুটো বিষয়ের সমন্বয়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়।

শিশুবিকাশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. জে. ফ্রেজার মাস্টার্ড ব্যাখ্যা করেন: “পর্যবেক্ষণ করে আমরা এখন যা জেনেছি সেটা হল, শিশুকালে শিশুরা যে-অভিজ্ঞতাগুলো লাভ করে, সেগুলো তাদের মস্তিষ্কের বিকাশের ওপর প্রভাব ফেলে।” একইভাবে অধ্যাপিকা সুজান গ্রিনফিল্ড বলেন: “উদাহরণস্বরূপ, আমরা জানি যে অন্যান্য লোকের তুলনায় বেহালাবাদকদের মস্তিষ্কের যে-অংশ বাঁহাতের আঙুলগুলো চালনার সঙ্গে যুক্ত, সেই অংশ আরও বেশি বিকশিত হয়।”

যে-প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত

গবেষণালব্ধ এই ফলাফল দেখে, অনেক বাবামা তাদের সন্তানদের কেবল সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ডে-কেয়ার সেন্টারে পাঠানোর জন্যই উঠেপড়ে লেগে যায় না কিন্তু সেইসঙ্গে চারুকলার পিছনেও জলের মতো টাকা ঢালে। কেউ কেউ মনে করে যে, একটা শিশু যদি সমস্তকিছু চর্চা করে, তা হলে বড় হতে হতে সে সমস্তকিছু করতে সমর্থ হবে। দক্ষ গৃহশিক্ষকের কার্যক্রম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কিন্ডারগার্টেনগুলো ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে। কিছু বাবামা অন্যদের চেয়ে তাদের সন্তানদের আরও বেশি সুযোগসুবিধা দেওয়ার জন্য তাদের পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব, তা-ই করতে ইচ্ছুক।

এই ধরনের একান্ত প্রচেষ্টা কি পুরোপুরি উপকারী বলে প্রমাণিত হয়? যদিও মনে হতে পারে যে, এর ফলে সন্তানদের অফুরন্ত সুযোগসুবিধা দিয়ে প্রতিপালন করা হচ্ছে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এই সন্তানরা শেখার অভিজ্ঞতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটা বুঝতে ব্যর্থ হয়, যা নিজের মতো করে খেলাধুলা করার মাধ্যমে হয়ে থাকে। শিক্ষকরা বলেন, স্বতঃস্ফূর্তভাবে খেলাধুলা করা সৃজনশীলতাকে জাগিয়ে তোলে এবং একটা শিশুর সামাজিক, মানসিক এবং আবেগগত দক্ষতাকে বৃদ্ধি করে।

কিছু শিশুবিকাশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মনে করে যে, বাবামার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত খেলাধুলা এক নতুন ধরনের জটিল সন্তানের সৃষ্টি করছে আর সেটা হল বাবামার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সন্তান, যে-সন্তানরা অশান্তি অনুভব করে ও আবেগগতভাবে অস্থিরতার মধ্যে থাকে, ঘুমাতে পারে না এবং ব্যথা ও কষ্টের বিষয়ে অভিযোগ করে। একজন মনোবিজ্ঞানী বলেন যে, এই ছেলেমেয়েরা যখন কৈশরে পদার্পণ করে, তখন অনেকে মোকাবিলা করার মতো দক্ষতা গড়ে তুলতে শেখে না এবং তারা “পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে, অসামাজিক ও বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।”

এর ফলে, অনেক বাবামা উভয়সংকটের মধ্যে পড়ে যায়। তারা তাদের সন্তানদের পূর্ণ সম্ভাবনার দিকে পৌঁছাতে সাহায্য করতে চায়। কিন্তু, তারা তাদের ছোট ছেলেমেয়েদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করার বোকামিও বুঝতে পারে। এক যুক্তিযুক্ত ভারসাম্য খুঁজে পাওয়ার কোনো উপায় কি আছে? ছোট ছেলেমেয়েদের বিকশিত হওয়ার কতটুকু ক্ষমতা রয়েছে এবং কীভাবে সেই ক্ষমতাকে আরও বাড়ানো যেতে পারে? ছেলেমেয়েরা যে সফল হবে, তা নিশ্চিত করার জন্য বাবামারা কী করতে পারে? পরের প্রবন্ধগুলোতে এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা হবে।

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

শৈশবকালের অভিজ্ঞতাগুলো একটা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

খেলাধুলা সৃজনশীলতাকে জাগিয়ে তোলে এবং একটা শিশুর দক্ষতাকে বৃদ্ধি করে