সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অবশেষে পৃথিবীতে শান্তি!

অবশেষে পৃথিবীতে শান্তি!

অবশেষে পৃথিবীতে শান্তি!

কেউ কেউ মনে করে যে, একমাত্র দৌরাত্ম্যের মাধ্যমেই তারা রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং আধ্যাত্মিক শুদ্ধতা লাভ করতে পারবে—অর্থাৎ শুধু ধ্বংসাত্মক শক্তিই অবাঞ্ছিত শাসকদের দূর করে দিতে পারবে। এ ছাড়া, কিছু সরকার শৃঙ্খলা বজায় রাখার এবং প্রজাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সন্ত্রাসকে কাজে লাগায়। কিন্তু এই কথা যদি সত্যি হয় যে, সন্ত্রাসবাদ হল শাসনব্যবস্থা ও সামাজিক সংস্কারের এক কার্যকারী হাতিয়ার, তা হলে এর মাধ্যমে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং স্থিরতা আসা উচিত। আর এর কিছুসময় পর, দৌরাত্ম্য ও ভয় কমে যাওয়া উচিত। আমরা কি এই ফলাফল দেখতে পেয়েছি?

সত্য বিষয়টা হল, সন্ত্রাসবাদ জীবনের প্রতি সম্মানকে দুর্বল করে দেয় এবং রক্তপাত ও নিষ্ঠুরতার দিকে পরিচালিত করে। কষ্টের কারণে, সন্ত্রাসের শিকারগ্রস্ত লোকেরা প্রায়ই প্রতিশোধ নিয়ে থাকে, যা আরও অবদমিত মনোভাবের দিকে নিয়ে যায় আর এর ফলে আরও প্রতিশোধ নেওয়া হয়।

দৌরাত্ম্য আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারে না

হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ নিজেরাই নিজেদের রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করছে। কিন্তু, তাদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এটা ঠিক বাইবেলের এই কথাগুলোর সঙ্গে মিলে যায়: “হে সদাপ্রভু আমি জানি, মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।” (যিরমিয় ১০:২৩) যিশু বলেছিলেন: “প্রজ্ঞা তার কাজের দ্বারাই সত্য বলে প্রমাণিত হবে।” (মথি ১১:১৯, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) আরও ব্যাপক অর্থে বললে, বাইবেলের এই নীতিগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, সন্ত্রাসবাদ হল এক মিথ্যা প্রত্যাশা। সন্ত্রাসবাদের ফল স্বাধীনতা ও সুখ নয় বরং মৃত্যু, দুর্দশা এবং ধ্বংস। এই মন্দ ফলগুলো বিংশ শতাব্দী জুড়ে ছিল আর তা একবিংশ শতাব্দীকেও জর্জরিত করতে শুরু করেছে। অনেকেই একমত হবে যে, কোনো সমাধান নিয়ে আসার পরিবর্তে সন্ত্রাসবাদই একটা সমস্যা হয়ে উঠেছে।

“প্রতিদিন আমি আশা করি যেন আমার পরিবারের বা বন্ধুদের মধ্যে কেউই মারা না যায় . . . সম্ভবত আমাদের অলৌকিক কিছুর দরকার।” একজন অল্পবয়সি মেয়ে এভাবেই লিখেছিল, যার দেশ সন্ত্রাসমূলক দৌরাত্ম্যের দ্বারা বিধ্বস্ত হয়েছিল। তার কথাগুলো এমন একটা উপসংহারকে নির্দেশ করে, যে-উপসংহারে অনেকে পৌঁছেছে: মানুষের সমস্যাগুলোর সমাধান করা মানুষের ক্ষমতার বাইরে। একমাত্র মানুষের সৃষ্টিকর্তাই সন্ত্রাসবাদসহ পৃথিবীর বর্তমান সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারেন। কিন্তু, কেন আমাদের ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করা উচিত?

যেকারণে ঈশ্বর আমাদের নির্ভরতা পাওয়ার যোগ্য

একটা কারণ হল যে, সৃষ্টিকর্তা হিসেবে যিহোবা আমাদের জীবন দিয়েছেন এবং চান যেন আমরা তা শান্তি ও পরিতৃপ্তির সঙ্গে উপভোগ করি। ঈশ্বরের ভাববাদী যিশাইয় এই কথা লিখতে পরিচালিত হয়েছিলেন: “এখন, হে সদাপ্রভু, তুমি আমাদের পিতা; আমরা মৃত্তিকা, আর তুমি আমাদের কুম্ভকার; আমরা সকলে তোমার হস্তকৃত বস্তু।” (যিশাইয় ৬৪:৮) যিহোবা হলেন মানবজাতির পিতা এবং সমস্ত জাতির লোক তাঁর কাছে মূল্যবান। অবিচার ও ঘৃণা যা সন্ত্রাবাদের দিকে নিয়ে যায়, সেটার জন্য তিনি দায়ী নন। জ্ঞানী রাজা শলোমন একবার ঘোষণা করেছিলেন: “ঈশ্বর মনুষ্যকে সরল করিয়া নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, কিন্তু তাহারা অনেক কল্পনার অন্বেষণ করিয়া লইয়াছে।” (উপদেশক ৭:২৯) ঈশ্বরের অযোগ্যতা নয় বরং মানুষের দুষ্টতা এবং মন্দ দূতদের প্রভাবই হল সন্ত্রাসবাদের মূল কারণ।—ইফিষীয় ৬:১১, ১২.

আরেকটা যে-কারণে আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করতে পারি সেটা হল, তিনি যেহেতু মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তাই অন্য যেকারো চেয়ে তিনিই মানবজাতির সমস্যাগুলো এবং কীভাবে সেগুলোর সমাধান করতে হবে, তা সবচেয়ে ভাল জানেন। বাইবেল হিতোপদেশ ৩:১৯ পদে এই সত্য সম্বন্ধে বলে: “সদাপ্রভু প্রজ্ঞা দ্বারা পৃথিবীর মূল স্থাপন করিয়াছেন, বুদ্ধি দ্বারা আকাশমণ্ডল অটল করিয়াছেন।” ঈশ্বরের ওপর পূর্ণ আস্থা নিয়ে প্রাচীনকালের একজন ব্যক্তি লিখেছিলেন: “কোথা হইতে আমার সাহায্য আসিবে? সদাপ্রভু হইতে আমার সাহায্য আইসে, তিনি আকাশ ও পৃথিবীর নির্ম্মাণকর্ত্তা।”—গীতসংহিতা ১২১:১, ২.

তৃতীয় যে-কারণে আমাদের ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করা উচিত, তা হল: দৌরাত্ম্যমূলক রক্তপাত বন্ধ করার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। নোহের সময়ে “পৃথিবী দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ ছিল।” (আদিপুস্তক ৬:১১) ঈশ্বরের বিচার ছিল তাৎক্ষণিক এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ: “[ঈশ্বর] পুরাতন জগতের প্রতি মমতা করেন নাই, . . . যখন ভক্তিহীনদের জগতে জলপ্লাবন আনিলেন।”—২ পিতর ২:৫.

বাইবেল এমন একটা শিক্ষা সম্বন্ধে বলে, যা আমাদের নোহের দিনের জলপ্লাবন থেকে শেখা উচিত: “প্রভু [“যিহোবা,” NW] ভক্তদিগকে পরীক্ষা হইতে উদ্ধার করিতে, এবং অধার্ম্মিকদিগকে দণ্ডাধীনে বিচারদিনের জন্য রাখিতে জানেন।” (২ পিতর ২:৯) যারা আন্তরিকভাবে এক উত্তম জীবন চায় এবং যারা অন্যদের জন্য জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে, ঈশ্বর তাদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন। যারা জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে, তাদেরকে তিনি “ভক্তিহীন মনুষ্যদের . . . বিনাশের” জন্য রেখে দিয়েছেন। কিন্তু যারা শান্তি চায়, তাদের জন্য তিনি এক নতুন জগৎ প্রস্তুত করছেন, যেখানে ধার্মিকতা বসতি করবে।—২ পিতর ৩:৭, ১৩.

পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি!

বাইবেল লেখকরা প্রায়ই মানবজাতিকে বোঝানোর জন্য ‘পৃথিবী’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। উদাহরণস্বরূপ, আদিপুস্তক ১১:১ পদ বলে যে, ‘সমস্ত পৃথিবী’ অর্থাৎ সেই সময়ে জীবিত মানুষেরা একই ভাষায় কথা বলত। প্রেরিত পিতরের মনেও সেই অর্থ ছিল, যখন তিনি “নূতন পৃথিবীর” বিষয়ে লিখেছিলেন। যিহোবা ঈশ্বর এমনভাবে মানবসমাজকে পুনর্নবীকৃত করবেন যে, দেশে দৌরাত্ম্য এবং ঘৃণার পরিবর্তে ধার্মিকতা ও ন্যায়বিচার স্থায়ী “বসবাসকারী” হবে। মীখা ৪:৩ পদে লিপিবদ্ধ একটা ভবিষ্যদ্বাণীতে বাইবেল আমাদের বলে: “তিনি অনেক জাতির মধ্যে বিচার করিবেন, এবং দূরস্থ বলবান জাতিদের সম্বন্ধে নিষ্পত্তি করিবেন; আর তাহারা আপন আপন খড়্গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল গড়িবে, ও আপন আপন বড়শা ভাঙ্গিয়া কাস্ত্যা গড়িবে; এক জাতি অন্য জাতির বিপরীতে আর খড়্গ তুলিবে না, তাহারা আর যুদ্ধ শিখিবে না।”

সেই ভবিষ্যদ্বাণী যখন পরিপূর্ণ হবে, তখন লোকেরা কীভাবে বসবাস করবে? মীখা ৪:৪ পদ বলে: “প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।” সেই পার্থিব পরমদেশে কেউই পরবর্তী সন্ত্রাসী আক্রমণের ভয়ে বাস করবে না। আপনি কি এই প্রতিজ্ঞার ওপর নির্ভর করতে পারেন? হ্যাঁ, “কেননা বাহিনীগণের সদাপ্রভুর মুখ ইহা বলিয়াছে।”—মীখা ৪:৪.

তাই, যদিও সন্ত্রাসমূলক হুমকি বেড়েই চলছে এবং দৌরাত্ম্যের কারণে জাতিগুলো কম্পান্বিত হচ্ছে কিন্তু শান্তিপ্রিয় ব্যক্তিদের জন্য সমাধান হল যিহোবার ওপর নির্ভর করা। এমন কোনো সমস্যা নেই, যা তিনি সমাধান করতে পারেন না। তিনি ক্ষতি, দুঃখকষ্ট এমনকি মৃত্যুকেও দূর করবেন। বাইবেল বলে: “তিনি মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট করিয়াছেন, ও প্রভু সদাপ্রভু সকলের মুখ হইতে চক্ষুর জল মুছিয়া দিবেন।” (যিশাইয় ২৫:৮) অনেক লোকেদের সেই মূল্যবান দেশ শীঘ্রই শান্তির ফলে উপচে পড়বে, যা এখন সন্ত্রাসবাদের কারণে কষ্ট ও ভয়ে জর্জরিত। “মিথ্যাকথনে অসমর্থ” ঈশ্বরের দ্বারা প্রতিজ্ঞাত সেই শান্তিই মানুষের একান্ত প্রয়োজন।—তীত ১:২; ইব্রীয় ৬:১৭, ১৮. (g ৬/০৬)

[৯ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

বুলট এবং বিস্ফোরকের এক কার্যকারী বিকল্প

নীচের এই অভিব্যক্তিগুলো সেই ব্যক্তিদের, যারা আগে দৌরাত্ম্যকে রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে আসার উপায় বলে মনে করত।

“ইতিহাসের বই পড়ার মাধ্যমে আমি জেনেছি যে, রাজা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সবসময় দরিদ্র লোকেদের ওপর কর্তৃত্ব করেছে। আমি সেই নিচুশ্রেণীর লোকেদের কষ্ট অনুভব করতাম। কীভাবে এই কষ্ট শেষ হতে পারে, সেই সম্বন্ধে আমি যখন চিন্তা করতাম, তখন এই উপসংহারে আসতাম যে আমাদের লড়াই করতে হবে, বন্দুকের বিরুদ্ধে বন্দুক ব্যবহার করতে হবে।”—র্‌যামন। *

“আমি সামরিক দৌরাত্ম্যে অংশ নিয়েছিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল পুরাতন কর্তৃপক্ষের বিরোধিতা করা ও এমন এক সমাজ গড়ে তোলা, যা বিশ্বের লোকেদের মধ্যে থেকে অসমতা দূর করে দেবে।”—লুচান।

“আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন থেকেই অবিচার আমাকে কষ্ট দিত। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল দারিদ্র, অপরাধ, ন্যূনতম শিক্ষা এবং চিকিৎসার অভাব। আমি মনে করতাম যে, অস্ত্র ব্যবহার করার মাধ্যমে সকলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, একটা বাড়ি ও একটা চাকরি লাভ করতে পারবে। আমি এও মনে করতাম যে, যারাই তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভদ্র এবং সম্মানপূর্বক আচরণ করতে অনিচ্ছুক, তাদেরই শাস্তি পাওয়া উচিত।”—পিটার।

“আমি ও আমার স্বামী একটা গুপ্ত সংগঠনের সদস্য ছিলাম, যা দৌরাত্ম্যমূলক বিদ্রোহকে উসকে দিয়েছিল। আমরা এমন একটা সরকার গড়ে তোলার আশা করেছিলাম, যা সমাজের জন্য মঙ্গল ও সুশৃঙ্খলা এবং সকলের জন্য সমতা নিয়ে আসবে। আমরা মনে করেছিলাম যে, আমাদের দেশে ন্যায়বিচার নিয়ে আসার একমাত্র উপায় হল ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড।”—লুরডেস।

এই ব্যক্তিরা ক্ষমতার মাধ্যমে কষ্টভোগী মানবজাতিকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমে তারা বুঝতে পেরেছে যে, ঈশ্বরের বাক্য আরও উত্তম উপায় সম্বন্ধে বলে। যাকোব ১:২০ পদে বাইবেল বলে যে: “মনুষ্যের ক্রোধ ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করে না।”

একমাত্র ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থাই মানবসমাজকে পরিবর্তন করতে পারে। মথি ২৪ অধ্যায় এবং ২ তীমথিয় ৩:১-৫ পদের মতো বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, ঈশ্বরের সরকার ঠিক তা-ই করতে যাচ্ছে। যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমে এই সত্যগুলো শেখার জন্য আমরা আপনাকে উৎসাহিত করছি।

[পাদটীকা]

^ নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।