সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

 প্রচ্ছদ বিষয়

যেভাবে আপনার সময়কে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করবেন

যেভাবে আপনার সময়কে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করবেন

“ইস, আমার হাতে যদি আরেকটু সময় থাকত!” কত বার আপনি একথা বলেছেন? সময়ের ওপর সবার সমান অধিকার আছে, কারণ ক্ষমতাবান ও ধনী লোকেদের কাছে যতটা সময় রয়েছে, অসহায় ও দরিদ্র লোকেদের কাছেও ঠিক ততটাই সময় রয়েছে। এ ছাড়া, ধনী অথবা গরীব, কেউই সময় সঞ্চয় করে রাখতে পারে না। সময় একবার চলে গেলে আর ফিরে আসে না। তাই আমাদের হাতে যে-সময় আছে, সেটাকে ভালোভাবে ব্যবহার করাই হল বিজ্ঞতার কাজ। কীভাবে আমরা তা করতে পারি? চারটে কৌশল বিবেচনা করুন, যেগুলো অনেক লোককে তাদের সময়কে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করতে সাহায্য করেছে।

কৌশল ১: সময় ভাগ করে রাখুন

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখুন। বাইবেল পরামর্শ দেয়, ‘যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার [“শ্রেয়ঃ,” পাদটীকা], তাহা পরীক্ষা করিয়া চিন।’ (ফিলিপীয় ১:১০) গুরুত্বপূর্ণ কিংবা জরুরি অথবা দুটোই এমন কাজগুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন। তা করার সময় মাথায় রাখুন যে, যা গুরুত্বপূর্ণ—যেমন, বাজার করা—তা এক্ষুনি জরুরি না-ও হতে পারে। আর যেটাকে খুবই জরুরি বলে মনে হয়—পছন্দের কোনো টেলিভিশন প্রোগ্রাম দেখা—তা হয়তো গুরুত্বপূর্ণ না-ও হতে পারে।

আগে থেকে চিন্তা করুন। “লৌহ ভোঁতা হইলে ও তাহাতে ধার না দিলে তাহা চালাইতে অধিক বল লাগে,” উপদেশক ১০:১০ পদ বলে। এটি আরও বলে: “কিন্তু প্রজ্ঞাই কৃতকার্য্য হইবার উপযুক্ত উপায়।” শিক্ষাটা কী? লোহাতে ধার দেওয়ার দ্বারা অর্থাৎ আগে থেকে পরিকল্পনা করার দ্বারা আপনি আপনার সময়কে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। অপ্রয়োজনীয় কাজগুলো, যেগুলো আপনার সময় ও শক্তি নষ্ট করে ফেলে, সেগুলো পরে করুন অথবা বাদ দিয়ে দিন। আপনি যদি লক্ষ করেন যে, আপনার হাতের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে এখন আপনার কাছে সময় রয়েছে, তাহলে পরের কাজ শুরু করুন না কেন? আগে থেকে চিন্তা করার দ্বারা আপনি আরও বেশি কাজ করতে পারবেন, ঠিক সেই বিজ্ঞ কর্মীর মতো যিনি তার লোহাতে ধার দিয়ে রাখেন।

জীবনকে সাদাসিধে রাখুন। সেই কাজগুলো বাদ দিতে শিখুন, যেগুলো ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় অথবা যেগুলো আপনার সময় কেড়ে নিতে পারে। অত্যধিক কাজকর্ম করা এবং দায়িত্ব নেওয়া অযথা চাপ নিয়ে আসতে পারে এবং আপনার আনন্দ কেড়ে নিতে পারে।

 কৌশল ২: সময় কেড়ে নেওয়ার মতো বিষয়গুলো এড়িয়ে চলুন

কাজ ফেলে রাখা এবং সিদ্ধান্তহীনতা। “যে জন বায়ু মানে, সে বীজ বপন করিবে না; এবং যে জন মেঘ দেখে, সে শস্য কাটিবে না।” (উপদেশক ১১:৪) শিক্ষাটা কী? কাজ ফেলে রাখার মনোভাব আমাদের সময় কেড়ে নেয় এবং যে-পরিমাণ কাজ করা যেত, তা কমিয়ে দেয়। যে-চাষী উপযুক্ত আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন, তিনি হয়তো কখনোই বীজ বুনতে অথবা শস্য কাটতে পারবেন না। একইভাবে, জীবনের অনিশ্চয়তাগুলো আমাদের দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে দিতে পারে। অথবা আমরা হয়তো মনে করতে পারি যে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আনুসঙ্গিক প্রতিটা তথ্য আমাদের জানতেই হবে। এটা ঠিক যে, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে খোঁজখবর নেওয়া এবং গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন। হিতোপদেশ ১৪:১৫ পদ বলে: “সতর্ক লোক নিজ পাদক্ষেপের প্রতি লক্ষ্য রাখে।” কিন্তু বাস্তবে, প্রত্যেক সিদ্ধান্তের মধ্যেই কিছুটা হলেও অনিশ্চয়তা থাকে।—উপদেশক ১১:৬.

সবকিছু নিখুঁত আশা করা। যাকোব ৩:১৭ পদ বলে, “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে, তাহা . . . ক্ষান্ত [“সুবিবেচক,” ইজি-টু-রিড ভারশন]।” এটা ঠিক যে, কাজ ভালোভাবে করতে পারার ইচ্ছা প্রশংসনীয়! কিন্তু কখনো কখনো আমরা হয়তো এত উচ্চ মান স্থাপন করতে পারি যে, আমরা হয়তো হতাশ কিংবা ব্যর্থ হতে পারি। উদাহরণ স্বরূপ, একজন ব্যক্তি যিনি অন্য ভাষা শিখছেন, তার এটা ধরে নেওয়া উচিত যে, তিনি ভুল করবেন আর ভুল থেকেই তিনি ভাষাটা শিখতে পারবেন। কিন্তু যিনি সবকিছু নিখুঁত আশা করেন, তিনি খুব সম্ভবত, ভুল কিছু বলে ফেলার ভয়ে কথাই বলবেন না আর এই মনোভাব তার উন্নতি ব্যাহত করতে পারে। কত ভালো হবে, যদি আমরা নিজেদের অথবা অন্যদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করার সময় নম্রভাবে আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো স্বীকার করে নিই। হিতোপদেশ ১১:২ পদ বলে “প্রজ্ঞাই নম্রদিগের সহচরী।” এ ছাড়া, নম্র লোকেরা নিজেদের ততটা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখে না এবং নিজেদের ভুল বুঝতে পারে।

“জিনিসপত্র কেনার জন্য আপনি আসলে টাকাপয়সা ব্যয় করেন না। আপনি সময় ব্যয় করেন।” —জন্ম ও মৃত্যুর মাঝে যা করা যেতে পারে (ইংরেজি)

 কৌশল ৩: ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত হোন

কাজ ও আমোদপ্রমোদের মধ্যে ভারসাম্য রাখুন। “পরিশ্রম ও বায়ুভক্ষণসহ পূর্ণ দুই মুষ্টি অপেক্ষা শান্তিসহ পূর্ণ এক মুষ্টি ভাল।” (উপদেশক ৪:৬) কাজপাগল লোকেরা তাদের ‘পরিশ্রমসহ পূর্ণ দুই মুষ্টি’ কাজের পুরস্কার থেকে নিজেদের বঞ্চিত করে। তাদের কোনো সময় ও শক্তি অবশিষ্ট থাকে না। অপরদিকে অলস ব্যক্তিরা “দুই মুষ্টি” বিশ্রামের আকাঙ্ক্ষা করে আর সময়ের অপচয় করে। বাইবেল এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রাখার বিষয়ে উৎসাহিত করে: পরিশ্রম করুন আর তার ফল ভোগ করুন। এই ধরনের আনন্দ হল “ঈশ্বরের দান।”—উপদেশক ৫:১৯.

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান। একজন বাইবেল লেখক বলেছিলেন, “আমি শান্তিতে শয়ন করিব, নিদ্রাও যাইব।” (গীতসংহিতা ৪:৮) পুরোপুরিভাবে শারীরিক, আবেগগত উপকার এবং বোধশক্তির বিকাশের জন্য অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরই রাতে আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। বোধশক্তির বিকাশের জন্য সময় করে ঘুমানো ভালো কারণ এটা মনোসংযোগ করতে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে শেখার ক্ষমতা উন্নত হয়। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া শেখার ক্ষমতাকে ধীর করে দেয় এবং এর ফলে দুর্ঘটনা, ভুলভ্রান্তি এবং অস্বস্তিবোধ হতে পারে।

বাস্তবসম্মত লক্ষ্য স্থাপন করুন। “দৃষ্টিসুখ যত ভাল, প্রাণের লালসা তত ভাল নহে।” (উপদেশক ৬:৯) শিক্ষাটা কী? একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি ছোটোখাটো লালসার দ্বারা নিজের জীবনকে পরিচালিত হতে দেন না, বিশেষ করে সেগুলো যদি অবাস্তব অথবা পূরণ করা অসম্ভব হয়। তাই তিনি চাতুরীপূর্ণ বিজ্ঞাপন এবং সহজে পাওয়া যায় এমন ঋণের দ্বারা প্রলোভিত হন না। এর পরিবর্তে, “দৃষ্টিসুখ” অর্থাৎ তিনি যেগুলো অর্জন করতে পারবেন, সেগুলো নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে শেখেন।

 কৌশল ৪: ভালো মুল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হোন

আপনার মূল্যবোধগুলো বিবেচনা করুন। কোনটা ভালো, গুরুত্বপূর্ণ এবং যুক্তিসংগত তা বুঝতে আপনার মূল্যবোধ আপনাকে সমর্থ করবে। আপনার জীবন যদি একটা তীর হয়, তাহলে আপনার মূল্যবোধ সেই তীরকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। তাই, ভালো মূল্যবোধ আপনাকে জীবনে উপযুক্ত অগ্রাধিকার স্থাপন করতে এবং আপনার সময়ের প্রতিটা মুহূর্তকে সবচেয়ে ভালো উপায়ে ব্যবহার করতে সমর্থ করবে। কোথায় আপনি এই ধরনের মূল্যবোধগুলো পেতে পারেন? অনেকে বাইবেলের মধ্যে এই ধরনের মূল্যবোধগুলো খুঁজে পায়, কারণ তারা এটির প্রজ্ঞার উৎকৃষ্টতাকে উপলব্ধি করে।—হিতোপদেশ ২:৬, ৭.

নিজের মুল্যবোধগুলোর মধ্যে প্রেমকে প্রথমে রাখুন। কলসীয় ৩:১৪ পদ বলে, প্রেম “সিদ্ধির যোগবন্ধন।” আমাদের মধ্যে, বিশেষ করে আমাদের পরিবারের মধ্যে যদি প্রেম না থাকে, তাহলে আমরা কখনোই প্রকৃত সুখী হতে এবং আবেগগতভাবে নিরাপত্তা বোধ করতে পারব না। যারা এই বিষয়টাকে উপেক্ষা করে, হয়তো-বা ধনসম্পদের পিছনে কিংবা কেরিয়ারের পিছনে ছোটাকে অগ্রাধিকার দেয়, তারা প্রকৃতপক্ষে সুখী হতে পারে না। হ্যাঁ, উত্তম কারণেই বাইবেল প্রেমকে সর্বোৎকৃষ্ট গুণ হিসেবে শনাক্ত করে এবং শত শত বার এটার উল্লেখ করে।—১ করিন্থীয় ১৩:১-৩; ১ যোহন ৪:৮.

ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়ার জন্য সময় আলাদা করে রাখুন। জেফ নামে একজন ব্যক্তি তার স্ত্রী, দু-জন সন্তান নিয়ে সুখে থাকতেন এবং তার ভালো বন্ধুবান্ধব ছিল আর কম্পাউন্ডার হিসেবে একটা ভালো চাকরি ছিল। তবে, কাজের সূত্রে তাকে প্রায়ই অন্যদের দুঃখকষ্ট ও মৃত্যু দেখতে হতো। তিনি জিজ্ঞেস করতেন, “জীবনে কি শুধুমাত্র দুঃখকষ্টই রয়েছে?” পরে একদিন তিনি যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত কিছু বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা পড়েছিলেন এবং সন্তুষ্টিজনক উত্তর পেয়েছিলেন।

জেফ যা শিখছিলেন, তা তার স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন আর তারাও এতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। সেই পরিবার বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিল, যা জীবনকে সমৃদ্ধ করেছিল এবং তাদেরকে তাদের সময় আরও বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করতে সাহায্য করেছিল। এ ছাড়া, বাইবেল অধ্যয়ন থেকে তারা হতাশা ও দুঃখকষ্ট মুক্ত এক জগতে অনন্তজীবনের অপূর্ব আশা সম্বন্ধে শিখেছিল।—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.

জেফের অভিজ্ঞতা যিশু খ্রিস্টের বলা এই কথাগুলো মনে করিয়ে দেয় “ধন্য যাহারা ধার্ম্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত, কারণ তাহারা পরিতৃপ্ত হইবে।” (মথি ৫:৬) আপনিও কি ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় আলাদা করে রাখতে চান? এটা ঠিক যে, আর কোনোকিছুই আপনাকে, শুধুমাত্র প্রতিটা দিনই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আপনার পুরো জীবনকে পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করার মতো প্রজ্ঞা দিতে পারবে না। ▪ (g14-E 02)