সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

গল্প ১১৩

পৌল রোমে

পৌল রোমে

দেখো, পৌলের হাতে শেকল আর ওই যে দেখো, একজন রোমীয় সৈন্য তাকে পাহারা দিচ্ছে। পৌল এখন রোমে একজন বন্দি। রোমীয় শাসক কৈসর যতক্ষণ পর্যন্ত না তার প্রতি কী করবেন বলে ঠিক করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত পৌল অপেক্ষা করে আছেন। বন্দি অবস্থায় থাকার সময় লোকজন তার সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করতে পারে।

রোমে আসার তিন দিন পর, পৌল কয়েক জন যিহুদি নেতাকে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য ডেকে পাঠান। তাই, রোমের অনেক যিহুদি তার সঙ্গে দেখা করার জন্য আসে। পৌল তাদের কাছে যিশু এবং ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বাস করে ও খ্রিস্টান হয়, কিন্তু অন্যেরা বিশ্বাস করে না।

পৌল এমন কয়েক জন সৈন্যের কাছেও প্রচার করেন, যারা তাকে পাহারা দিত। দু-বছর ধরে পৌল এখানে বন্দি হিসেবে আছেন আর যাদের কাছে সম্ভব এমন সকলের কাছেই প্রচার করেছেন। এর ফলে, এমনকী কৈসরের বাড়ির লোকজনও রাজ্যের সুসমাচার সম্বন্ধে শুনতে পায় আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ খ্রিস্টানও হয়।

কিন্তু, পৌলের সঙ্গে দেখা করতে আসা এই ব্যক্তিটি কে, যিনি টেবিলের ওপর লিখছেন? তুমি কি অনুমান করতে পার? হ্যাঁ, এই ব্যক্তি হলেন তীমথিয়। তীমথিয়কেও রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার জন্য বন্দি থাকতে হয়েছে, কিন্তু তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর তিনি এখানে পৌলকে সাহায্য করার জন্য এসেছেন। তুমি কি জান, তীমথিয় কী লিখছেন? এসো দেখা যাক।

তোমার কি ফিলিপী এবং ইফিষ নগরের কথা মনে আছে, যেগুলো সম্বন্ধে তুমি এক-শো দশ নম্বর গল্পে পড়েছিলে? পৌল সেই নগরগুলোতে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিলেন। এখন, পৌল বন্দি অবস্থায় সেই খ্রিস্টানদের কাছে চিঠি লিখছেন। এই চিঠিগুলো বাইবেলে রয়েছে আর এগুলোর নাম হল ইফিষীয় এবং ফিলিপীয়। পৌল এখানে তীমথিয়কে বলছেন যে, ফিলিপীতে তাদের খ্রিস্টান বন্ধুদের কাছে কী লিখতে হবে।

ফিলিপীয়রা পৌলের প্রতি অনেক সদয় ব্যবহার দেখিয়েছে। পৌল এখানে বন্দি থাকা অবস্থায়, তারা তার জন্য উপহার পাঠিয়েছে আর তাই পৌল তাদেরকে সেটার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। ইপাফ্রদীত এই উপহার নিয়ে এসেছেন। কিন্তু, তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন আর প্রায় মরতে বসেন। এখন তিনি আবার সুস্থ হয়ে উঠেছেন আর বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য একেবারে তৈরি আছেন। তিনি ফিলিপীতে ফিরে যাওয়ার সময় পৌল ও তীমথিয়ের কাছ থেকে এই চিঠি নিয়ে যাবেন।

বন্দি অবস্থায় পৌল আরও দুটো চিঠি লেখেন আর সেগুলো আমরা বাইবেল থেকে পেতে পারি। একটা হল কলসী নগরের খ্রিস্টানদের উদ্দেশে। তুমি কি জান, সেটির নাম কি? এর নাম হল কলসীয়। এ ছাড়া, তিনি ফিলীমন নামে তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে আরেকটা ব্যক্তিগত চিঠি লেখেন আর ফিলীমনও কলসীতে বাস করেন। এই চিঠিটি ফিলীমনের দাস ওনীষিম সম্বন্ধে লেখা হয়েছিল।

ওনীষিম ফিলীমনের কাছ থেকে পালিয়ে রোমে চলে এসেছিলেন। ওনীষিম কোনো-না-কোনোভাবে জানতে পেরেছিলেন যে, পৌল এখানে কারাগারে আছেন। তিনি তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন আর পৌল ওনীষিমের কাছে প্রচার করেছিলেন। খুব শীঘ্র ওনীষিমও একজন খ্রিস্টান হয়েছিলেন। ওনীষিম পালিয়ে এসেছেন বলে এখন অনেক দুঃখিত হন। তাই, পৌল ফিলীমনের কাছে লেখা চিঠিতে কী লিখেছেন, তা কি তুমি জান?

পৌল ফিলীমনকে অনুরোধ করেন, যেন তিনি ওনীষিমকে ক্ষমা করে দেন। ‘আমি তাকে আবার তোমার কাছে পাঠাচ্ছি,’ পৌল লেখেন। ‘কিন্তু এখন সে শুধু তোমার দাসই নয়। সে একজন চমৎকার খ্রিস্টান ভাইও।’ ওনীষিম যখন কলসীতে ফিরে যান, তখন তিনি সঙ্গে করে কলসীয়দের উদ্দেশে এবং ফিলীমনের উদ্দেশে লেখা এই চিঠি দুটো নিয়ে যান। আমরা কল্পনা করতে পারি, ফিলীমন যখন জানতে পারেন যে, তার দাস একজন খ্রিস্টান হয়েছে, তখন তিনি কতই-না খুশি হন।

পৌল ফিলিপীয়দের ও ফিলীমনের কাছে চিঠি লিখে বেশ কিছু ভালো খবর দিয়েছেন। ‘আমি তীমথিয়কে তোমাদের কাছে পাঠাচ্ছি,’ পৌল ফিলিপীয়দের উদ্দেশে বলেন। ‘কিন্তু, আমিও খুব তাড়াতাড়ি তোমাদের সঙ্গে দেখা করব।’ আর ফিলীমনের উদ্দেশে তিনি লেখেন: ‘আমার থাকার জন্য ওখানে জায়গা ঠিক করে রেখ।’

পৌলকে যখন মুক্ত করা হয়, তখন তিনি অনেক জায়গায় তার খ্রিস্টান ভাই ও বোনদের কাছে পরিদর্শন করেন। কিন্তু, পরে পৌলকে আবারও রোমের কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। এ-বার, তিনি জানেন যে, তাকে মেরে ফেলা হবে। তাই, তিনি তীমথিয়ের কাছে চিঠি লেখেন এবং তাকে তাড়াতাড়ি তার কাছে আসার জন্য অনুরোধ করেন। ‘আমি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছি,’ পৌল লেখেন, ‘আর ঈশ্বর আমাকে পুরস্কার দেবেন।’ পৌলকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কয়েক বছর পর, যিরূশালেমকে আবারও ধ্বংস করা হয় আর এ-বার রোমীয়রা তা করে।

তবে, বাইবেলে আরও অনেক কিছু রয়েছে। যিহোবা ঈশ্বর বাইবেলের শেষ বইগুলো লেখার জন্য প্রেরিত যোহনকে ব্যবহার করেছেন আর ওই বইগুলোর মধ্যে প্রকাশিত বাক্য বইটি রয়েছে। বাইবেলের এই বইটি ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বলে। চলো আমরা শিখি যে, ভবিষ্যতে কী ঘটবে।