সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় সাত

ঘরের মধ্যে কেউ কি বিদ্রোহী?

ঘরের মধ্যে কেউ কি বিদ্রোহী?

১, ২. (ক) যিহুদি ধর্মীয় নেতাদের অবিশ্বস্ততা তুলে ধরার জন্য যিশু কোন দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন? (খ) যিশুর দৃষ্টান্ত থেকে বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে-মেয়েদের সম্বন্ধে আমরা কোন বিষয়টা শিখতে পারি?

 যিশু তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগে, যিহুদি ধর্মীয় নেতাদের একটা দলকে চিন্তা উদ্রেককারী এক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “তোমাদের কেমন বোধ হয়? এক ব্যক্তির দুই পুত্ত্র ছিল; তিনি প্রথম জনের নিকটে গিয়া কহিলেন, বৎস, যাও, আজ দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কর্ম্ম কর। সে উত্তর করিল, আমার ইচ্ছা নাই; শেষে অনুশোচনা করিয়া গেল। পরে তিনি দ্বিতীয় জনের নিকটে গিয়া সেইরূপে কহিলেন। সে উত্তর করিল, কর্ত্তা, আমি যাইতেছি; কিন্তু গেল না। সেই দুইয়ের মধ্যে কে পিতার ইচ্ছা পালন করিল?” যিহুদি নেতারা উত্তর দিয়েছিল: “প্রথম জন।”—মথি ২১:২৮-৩১.

যিশু এখানে যিহুদি নেতাদের অবিশ্বস্ততা তুলে ধরছিলেন। তারা ছিল দ্বিতীয় পুত্রের মতো, যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল, তবে পরে তাদের প্রতিজ্ঞা রাখেনি। কিন্তু, অনেক বাবা-মা বুঝতে পারবে যে, যিশুর এই দৃষ্টান্ত পারিবারিক জীবন সম্বন্ধে এক উত্তম বোধগম্যতার ওপর ভিত্তি করে ছিল। তিনি যেমন খুবই উত্তমভাবে দেখিয়েছিলেন যে, অল্পবয়সি সন্তানরা কী চিন্তা করছে, তা জানা অথবা তারা কী করবে, তা আগে থেকে বলা প্রায়ই অনেক কঠিন। একজন অল্পবয়সি হয়তো তার বয়ঃসন্ধিকালে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু পরে এক দায়িত্ববান ও সম্মানীয় প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে। কিশোর বিদ্রোহের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার সময় আমাদের এই বিষয়টা মনে রাখতে হবে।

বিদ্রোহী বলতে কী বোঝায়?

৩. কেন তাদের সন্তানকে একজন বিদ্রোহী হিসেবে দ্রুত আখ্যা দেওয়া বাবা-মায়ের উচিত নয়?

মাঝে মাঝে আপনি হয়তো এমন কিশোর-কিশোরী সম্বন্ধে শুনে থাকেন, যারা তাদের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ করে। এমনকি আপনি হয়তো ব্যক্তিগতভাবে এমন একটা পরিবারকে চেনেন, যেখানে একজন কিশোর বা কিশোরীকে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব বলে মনে হয়। তবে, একটা সন্তান সত্যিই বিদ্রোহী কি না, তা জানা সবসময় সহজ নয়। অধিকন্তু, এটা বোঝাও কঠিন হতে পারে যে, কেন কিছু সন্তান বিদ্রোহ করে এবং অন্যেরা—এমনকি একই ঘরের হয়েও—করে না। বাবা-মা যদি আশঙ্কা করে যে, তাদের একজন সন্তান হয়তো সম্পূর্ণরূপে বিদ্রোহী হয়ে উঠছে, তাহলে তাদের কী করা উচিত? এর উত্তর দেওয়ার জন্য আমাদের প্রথমে আলোচনা করতে হবে যে, একজন বিদ্রোহী বলতে কী বোঝায়।

৪-৬. (ক) একজন বিদ্রোহী বলতে কী বোঝায়? (খ) কিশোর-কিশোরীরা যদি মাঝে মাঝে অবাধ্য হয়, তাহলে বাবা-মাদের কী মনে রাখা উচিত?

সহজভাবে বললে, একজন বিদ্রোহী হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ইচ্ছাপূর্বক ও ক্রমাগতভাবে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের অবাধ্য হয় অথবা বিরোধিতা করে এবং তাকে অগ্রাহ্য করে। অবশ্য, ‘সন্তানের হৃদয়ে অজ্ঞানতা থাকে।’ (হিতোপদেশ ২২:১৫) তাই, সমস্ত সন্তানই কোনো না কোনো সময়ে বাবা-মা ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের বিরোধিতা করে। আর এটা বিশেষভাবে বয়ঃসন্ধিকাল হিসেবে পরিচিত শারীরিক ও আবেগগত বিকাশের সময় ঘটে থাকে। যেকোনো ব্যক্তির জীবনেই পরিবর্তন চাপ সৃষ্টি করবে আর বয়ঃসন্ধিকালটা হল অনেক ধরনের পরিবর্তনের এক সময়। আপনার কিশোর বয়সি ছেলে বা মেয়ে শৈশবকাল ত্যাগ করে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই কারণে বয়ঃসন্ধির বছরগুলোতে, কিছু বাবা-মা ও সন্তানের পরস্পরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অনেক কষ্ট হয়। প্রায়ই, বাবা-মায়েরা সহজাতভাবে এই পরিবর্তনের মধ্যে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে আর অন্যদিকে কিশোর-কিশোরীরা দ্রুত পরিবর্তন চায়।

একজন বিদ্রোহী কিশোর বা কিশোরী তার বাবা-মায়ের মূল্যবোধগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে থাকে। তবে মনে রাখবেন যে, কয়েকটা অবাধ্যতার কাজ করলেই একজন বিদ্রোহী হয় না। আর আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে কিছু সন্তান হয়তো বাইবেলের সত্যের প্রতি প্রথম প্রথম সামান্যই আগ্রহ দেখিয়ে থাকে কিংবা কোনো আগ্রহই দেখায় না, কিন্তু তারা হয়তো বিদ্রোহী নয়। একজন বাবা অথবা মা হিসেবে দ্রুত আপনার সন্তানকে একটা নির্দিষ্ট আখ্যা দিয়ে ফেলবেন না।

বয়ঃসন্ধিকালে সমস্ত অল্পবয়সি সন্তানই কি বাবা-মায়ের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে? না, একেবারেই নয়। বস্তুতপক্ষে, সাক্ষ্যপ্রমাণ ইঙ্গিত দেয় যে, কেবল অল্পসংখ্যক কিশোর-কিশোরী বয়ঃসন্ধিকালে চরম বিদ্রোহী মনোভাব দেখিয়ে থাকে। তা সত্ত্বেও, সেই সন্তান সম্বন্ধে কী বলা যায়, যে একগুঁয়েভাবে ও ক্রমাগত বিদ্রোহ করে? কী এই ধরনের বিদ্রোহ জাগিয়ে তুলতে পারে?

বিদ্রোহের কারণগুলো

৭. কীভাবে শয়তান নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ একটা সন্তানকে বিদ্রোহ করার জন্য প্রভাবিত করতে পারে?

বিদ্রোহের একটা প্রধান কারণ হল, জগতের শয়তান নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ। “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) শয়তানের ক্ষমতাধীন জগৎ এক ক্ষতিকর সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে, যেটার সঙ্গে খ্রিস্টানদের লড়াই করতে হয়। (যোহন ১৭:১৫) সেই সংস্কৃতির বেশিরভাগই বর্তমানে অতীতের চেয়ে আরও নিকৃষ্টমানের, বিপদজনক এবং খারাপ প্রভাবে পরিপূর্ণ। (২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৩) বাবা-মায়েরা যদি তাদের সন্তানদের শিক্ষা না দেয় এবং সতর্ক ও সুরক্ষা না করে, তাহলে অল্পবয়সিরা সহজেই সেই ‘আত্মার’ দ্বারা কবলিত হতে পারে, যা “এখন অবাধ্যতার সন্তানগণের মধ্যে কার্য্য করিতেছে।” (ইফিষীয় ২:২) এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হল সঙ্গীসাথিদের চাপ। বাইবেল বলে: “যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।” (হিতোপদেশ ১৩:২০) অনুরূপভাবে, এই জগতের আত্মার দ্বারা পরিচালিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যে মেলামেশা করে চলে, সে হয়তো সেই আত্মা দ্বারা প্রভাবিত হবে। অল্পবয়সিদের যদি বুঝতে হয় যে, ঈশ্বরীয় নীতিগুলোর প্রতি বাধ্যতা সর্বোত্তম জীবনের ভিত্তি, তাহলে তাদের ক্রমাগত সাহায্যের প্রয়োজন।—যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮.

৮. কোন বিষয়গুলো হয়তো একটা সন্তানকে বিদ্রোহ করতে পরিচালিত করতে পারে?

বিদ্রোহের আরেকটা কারণ হতে পারে, ঘরের পরিবেশ। উদাহরণস্বরূপ, বাবা অথবা মা যদি মদ্যপায়ী হন, মাদকদ্রব্য গ্রহণ করেন অথবা তার সাথির প্রতি হিংস্র আচরণ করেন, তাহলে জীবনের প্রতি কিশোর-কিশোরীর দৃষ্টিভঙ্গি বিকৃত হয়ে যেতে পারে। এমনকি কিছুটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে এমন ঘরেও বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে, যখন একটা সন্তান মনে করে যে, তার প্রতি বাবা-মায়ের কোনো আগ্রহই নেই। যাই হোক, কেবল বাহ্যিক প্রভাবগুলোর কারণেই সবসময় কিশোর বিদ্রোহ দেখা দেয় না। ঈশ্বরীয় নীতিগুলো কাজে লাগায় এবং সন্তানদেরকে তাদের চারপাশের জগৎ থেকে ব্যাপকভাবে সুরক্ষা করে থাকে এমন বাবা-মা থাকা সত্ত্বেও, কিছু সন্তান বাবা-মায়ের মূল্যবোধগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে। কেন? সম্ভবত এর কারণ হল আমাদের আরেকটা মূল সমস্যা—মানব অসিদ্ধতা। পৌল বলেছিলেন: “এক মনুষ্য [আদম] দ্বারা পাপ, পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল।” (রোমীয় ৫:১২) আদম ছিল এক স্বার্থপর বিদ্রোহী আর সে তার সমস্ত বংশধরের জন্য এক মন্দ উত্তরাধিকার রেখে গিয়েছে। কিছু অল্পবয়সি কেবল এই কারণে বিদ্রোহ করা বেছে নেয় যে, তাদের পূর্বপুরুষও তা-ই করেছিল।

প্রশ্রয়ী এলি এবং কঠোর রহবিয়াম

৯. সন্তান মানুষ করে তোলার ক্ষেত্রে কোন কোন চরমতা একটা সন্তানকে বিদ্রোহ করতে প্ররোচিত করতে পারে?

আরেকটা যে-বিষয় কিশোর বিদ্রোহের দিকে পরিচালিত করে তা হল, সন্তান মানুষ করে তোলার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের ভারসাম্যহীন দৃষ্টিভঙ্গি। (কলসীয় ৩:২১) কিছু বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন বাবা-মা তাদের সন্তানদের কঠোরভাবে বাধানিষেধ দিয়ে থাকে এবং শাসন করে থাকে। অন্যেরা আবার প্রশ্রয়ী হয়ে থাকে এবং সেই নির্দেশনা প্রদান করে না, যা তাদের বয়ঃসন্ধিকালের অনভিজ্ঞ ছেলে-মেয়েদের সুরক্ষা করবে। এই দুটো চরমতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা সবসময় সহজ নয়। আর ভিন্ন ভিন্ন সন্তানের ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা রয়েছে। একজনের হয়তো অন্যজনের চেয়ে আরও বেশি তত্ত্বাবধান প্রয়োজন। যাই হোক, বাইবেলের দুটো উদাহরণ চরম কঠোর অথবা প্রশ্রয়ী হওয়ার বিপদ সম্বন্ধে দেখতে সাহায্য করবে।

১০. যদিও এলি হয়তো একজন বিশ্বস্ত মহাযাজক ছিলেন কিন্তু কেন তিনি একজন উত্তম বাবা ছিলেন না?

১০ প্রাচীন ইস্রায়েলের মহাযাজক এলি একজন বাবা ছিলেন। তিনি ৪০ বছর ধরে সেবা করেছেন এবং নিঃসন্দেহে ঈশ্বরের ব্যবস্থায় অভিজ্ঞ ছিলেন। এলি সম্ভবত তার নিয়মিত যাজকীয় কাজগুলো বেশ বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করতেন আর হয়তো তার ছেলে হফ্‌নি ও পীনহসকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ঈশ্বরের ব্যবস্থা সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু, এলি তার ছেলেদের ব্যাপারে অত্যন্ত প্রশ্রয়ী ছিলেন। হফ্‌নি ও পীনহস নিয়োজিত যাজক হিসেবে সেবা করত কিন্তু তারা ছিল “পাষণ্ড,” যারা কেবল নিজেদের ক্ষুধা ও অনৈতিক আকাঙ্ক্ষা মেটাতে আগ্রহী। তা সত্ত্বেও, তারা যখন পবিত্র স্থানে বিভিন্ন অসম্মানজনক কাজ করেছিল, তখন তাদেরকে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সাহস এলির ছিল না। তিনি কেবল তাদেরকে মৃদু ভর্ৎসনা করেছিলেন। তার প্রশ্রয়ী মনোভাবের দ্বারা এলি ঈশ্বরের চেয়ে বরং তার ছেলেদেরকে বেশি সম্মান দিয়েছিলেন। এর ফলে, তার ছেলেরা যিহোবার শুদ্ধ উপাসনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল এবং এলির পুরো পরিবার বিপর্যয় ভোগ করেছিল।—১ শমূয়েল ২:১২-১৭, ২২-২৫, ২৯; ৩:১৩, ১৪; ৪:১১-২২.

১১. এলির ভুল উদাহরণ থেকে বাবা-মায়েরা কী শিখতে পারে?

১১ এই ঘটনাগুলো যখন ঘটেছিল, তখন এলির সন্তানরা ইতিমধ্যেই প্রাপ্তবয়স্ক ছিল কিন্তু এই ইতিহাস শাসন না করার বিপদ সম্বন্ধে তুলে ধরে। (তুলনা করুন, হিতোপদেশ ২৯:২১. a) কিছু বাবা-মা হয়তো প্রেম ও প্রশ্রয়কে এক করে ফেলে এবং স্পষ্ট, সংগতিপূর্ণ ও যুক্তিযুক্ত নিয়মনীতি স্থাপন ও সেগুলো কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়। এমনকি যখন ঈশ্বরীয় নীতিগুলো লঙ্ঘন করা হয়, তখনও তারা প্রেমপূর্ণ শাসন করার বিষয়টাকে অবহেলা করে। এই ধরনের প্রশ্রয়ী মনোভাবের কারণে পরিশেষে তাদের সন্তানরা হয়তো বাবা-মায়ের অথবা অন্য কোনো ধরনের কর্তৃত্বের প্রতি মনোযোগ দেয় না।—তুলনা করুন, উপদেশক ৮:১১.

১২. কর্তৃত্ব ব্যবহারের ক্ষেত্রে রহবিয়াম কোন ভুল করেছিলেন?

১২ কর্তৃত্ব ব্যবহার করার ক্ষেত্রে রহবিয়াম আরেক চরমতার উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি ছিলেন ইস্রায়েলের ঐক্যবদ্ধ রাজ্যের শেষ রাজা কিন্তু তিনি একজন ভাল রাজা ছিলেন না। রহবিয়াম উত্তরাধিকারসূত্রে এমন এক রাজ্য পেয়েছিলেন, যেখানকার লোকেরা তার বাবা শলোমনের দ্বারা চাপানো বোঝার কারণে অসন্তুষ্ট ছিল। রহবিয়াম কি এই ব্যাপারে বোধগম্যতা দেখিয়েছিলেন? না। প্রতিনিধি দল যখন কিছু পীড়নকর বোঝা দূর করার জন্য অনুরোধ করেছিল, তখন তিনি তার বয়স্ক পরামর্শদাতাদের পরিপক্ব উপদেশের প্রতি মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং আদেশ দিয়েছিলেন যেন লোকেদের জোয়ালকে আরও ভারী করা হয়। তার উদ্ধত মনোভাবের কারণে উত্তরের দশ বংশ বিদ্রোহ করেছিল আর সেই রাজ্য দুভাগ হয়ে গিয়েছিল।—১ রাজাবলি ১২:১-২১; ২ বংশাবলি ১০:১৯.

১৩. কীভাবে বাবা-মায়েরা রহবিয়ামের মতো ভুল করা এড়িয়ে চলতে পারে?

১৩ রহবিয়াম সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণ থেকে বাবা-মায়েরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারে। তাদেরকে প্রার্থনায় ‘সদাপ্রভুর অনুসন্ধান’ করতে এবং বাইবেলের নীতিগুলোর আলোকে সন্তান মানুষ করে তোলার বিভিন্ন পদ্ধতি পরীক্ষা করে দেখতে হবে। (গীতসংহিতা ১০৫:৪) “উপদ্রব জ্ঞানবানকে ক্ষিপ্ত করে,” উপদেশক ৭:৭ পদ বলে। সুচিন্তিত নির্দেশাবলি বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে-মেয়েদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করার সঙ্গে সঙ্গে বিকাশের সুযোগ করে দেয়। কিন্তু, সন্তানদের এতটা কঠোর ও চাপপূর্ণ পরিবেশে বাস করা উচিত নয় যে, তারা যুক্তিযুক্ত মাত্রায় আত্মনির্ভরতা ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হয়। বাবা-মায়েরা যখন উপযুক্ত স্বাধীনতা ও স্পষ্টভাবে বর্ণিত দৃঢ়নির্দেশাবলির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে, তখন অধিকাংশ কিশোর-কিশোরীর মধ্যে বিদ্রোহ করার প্রবণতা কম থাকবে।

মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা বিদ্রোহ রোধ করতে পারে

বাবা-মায়েরা যদি তাদের সন্তানদের কিশোর বয়সের সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে, তাহলে সন্তানরা সম্ভবত আরও দৃঢ়মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি হিসেবে বড় হয়ে উঠবে

১৪, ১৫. সন্তানদের বৃদ্ধিকে বাবা-মায়ের কীভাবে দেখা উচিত?

১৪ যদিও বাবা-মায়েরা তাদের অল্পবয়সিদের শিশুকাল থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার দিকে শারীরিকভাবে বৃদ্ধি পেতে দেখে খুশি হয়, কিন্তু তাদের বয়ঃসন্ধিকালের সন্তান যখন পরনির্ভরশীলতা থেকে উপযুক্ত আত্মনির্ভরতা গড়ে তোলা শুরু করে, তখন তারা হয়তো বিরক্ত হতে পারে। পরিবর্তনের এই সময়টাতে আপনার কিশোর বয়সি সন্তান যদি মাঝেমধ্যে কিছুটা একগুঁয়ে ও অসহযোগী মনোভাবাপন্ন হয়ে থাকে, তাহলে অবাক হবেন না। মনে রাখবেন যে, খ্রিস্টান বাবা-মাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত একজন পরিপক্ব, দৃঢ়মনোভাবাপন্ন ও দায়িত্ববান খ্রিস্টান হিসেবে মানুষ করে তোলা।—তুলনা করুন, ১ করিন্থীয় ১৩:১১; ইফিষীয় ৪:১৩, ১৪.

১৫ যত কঠিনই হোক না কেন, বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে আরও স্বাধীনতার জন্য যেকোনো অনুরোধের ব্যাপারে বাবা-মাদেরকে নেতিবাচক উত্তর দেওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। গঠনমূলক উপায়ে একজন সন্তানকে এক স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। বস্তুতপক্ষে, অপেক্ষাকৃত কম বয়সেও কিছু কিশোর-কিশোরী বেশ পরিপক্ব দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে শুরু করে। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেল অল্পবয়সি রাজা যোশিয়ের কথা বলে: “তিনি অল্পবয়স্ক [প্রায় ১৫ বছর বয়সি] হইলেও আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের ঈশ্বরের অন্বেষণ করিতে আরম্ভ করিলেন।” এই উল্লেখযোগ্য কিশোর স্পষ্টতই একজন দায়িত্ববান ব্যক্তি ছিলেন।—২ বংশাবলি ৩৪:১-৩.

১৬. সন্তানদেরকে ক্রমবর্ধমান দায়িত্ব দেওয়া হলে তাদের কোন বিষয়টা উপলব্ধি করা উচিত?

১৬ কিন্তু, স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে নিকাশ দেওয়ার বিষয়টাও আসে। তাই, আপনার যে-সন্তান প্রাপ্তবয়ক হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাকে নিজস্ব কিছু সিদ্ধান্ত ও কাজের পরিণতি সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করতে দিন। “মনুষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে,” এই নীতি কিশোর-কিশোরী ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের বেলায়ই প্রযোজ্য। (গালাতীয় ৬:৭) সন্তানদের চিরকাল আগলে রাখা যাবে না। কিন্তু, আপনার সন্তান যদি এমন কিছু করতে চায়, যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়, তাহলে? একজন দায়িত্ববান বাবা অথবা মা হিসেবে আপনাকে “না” বলতে হবে। আর যদিও আপনি হয়তো কারণগুলো ব্যাখ্যা করতে পারেন কিন্তু কোনোকিছুই যেন আপনার না-কে, হ্যাঁ-তে পরিণত না করে। (তুলনা করুন, মথি ৫:৩৭.) তবে, “না” শব্দটি শান্ত ও যুক্তিযুক্ত উপায়ে বলার চেষ্টা করুন কারণ “কোমল উত্তর ক্রোধ নিবারণ করে।”—হিতোপদেশ ১৫:১.

১৭. একজন কিশোর বা কিশোরীর কিছু চাহিদা কী, যেগুলো একজন বাবা অথবা মায়ের পূরণ করা উচিত?

১৭ অল্পবয়সিদের সংগতিপূর্ণ শাসনের নিরাপত্তা প্রয়োজন, এমনকি যদিও তারা বাধানিষেধ ও নিয়মনীতির সঙ্গে সবসময় সহজেই একমত হয় না। কোনো বাবা অথবা মা যখন যেরকম মনে করেন, সেটার ওপর ভিত্তি করে যদি বার বার নিয়মনীতি পরিবর্তন করা হয়, তাহলে তা হতাশাজনক হয়ে থাকে। অধিকন্তু, কিশোর-কিশোরীরা যদি আত্মবিশ্বাসের অভাব অথবা লজ্জা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও সাহায্য পায়, তাহলে তারা সম্ভবত আরও দৃঢ়মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি হিসেবে বড় হয়ে উঠবে। কিশোর-কিশোরীরাও এটা উপলব্ধি করে, যখন তাদের প্রতি সেই আস্থা দেখানো হয়, যা তারা অর্জন করেছে।—তুলনা করুন, যিশাইয় ৩৫:৩, ৪; লূক ১৬:১০; ১৯:১৭.

১৮. কিশোর-কিশোরীদের সম্বন্ধে কিছু উৎসাহমূলক সত্য কী?

১৮ বাবা-মায়েরা এটা জেনে সান্ত্বনা পেতে পারে যে, একটা ঘরের মধ্যে যখন শান্তি, স্থিতিশীল অবস্থা এবং প্রেম বিদ্যমান থাকে, তখন সন্তানরা সাধারণত সমৃদ্ধি লাভ করে। (ইফিষীয় ৪:৩১, ৩২; যাকোব ৩:১৭, ১৮) অনেক অল্পবয়সি এমনকি ঘরের খারাপ পরিবেশ কাটিয়ে উঠেছে এবং মদ্যপানের অভ্যাস, দৌরাত্ম্য অথবা অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে এমন পরিবার থেকে আসা সত্ত্বেও, উত্তম প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে বড় হয়ে উঠেছে। তাই, আপনি যদি বাড়িতে এমন এক পরিবেশ তৈরি করেন, যেখানে আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানরা নিরাপদ বোধ করে এবং জানে যে, তারা প্রেম, স্নেহ ও মনোযোগ লাভ করবে—এমনকি সেই সমর্থনের সঙ্গে যদি যুক্তিযুক্ত মাত্রায় বাধানিষেধ ও শাস্ত্রীয় নীতিগুলোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ শাসন যুক্ত থাকে—তাহলে তারা খুব সম্ভবত এমন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে বড় হয়ে উঠবে, যাদের নিয়ে আপনি গর্ববোধ করতে পারবেন।—তুলনা করুন, হিতোপদেশ ২৭:১১.

সন্তানরা যখন সমস্যায় পড়ে

১৯. সন্তানকে কোন পথে চলতে হবে, সেই বিষয়ে যদিও বাবা-মায়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত কিন্তু সন্তানদের কোন দায়িত্ব রয়েছে?

১৯ উত্তম বাবা-মা হওয়া নিশ্চিতভাবেই পার্থক্য নিয়ে আসে। হিতোপদেশ ২২:৬ পদ বলে: “বালককে তাহার গন্তব্য পথানুরূপ শিক্ষা দেও, সে প্রাচীন হইলেও তাহা ছাড়িবে না।” তা সত্ত্বেও, সেই সন্তানদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যাদের উত্তম বাবা-মা থাকা সত্ত্বেও গুরুতর সমস্যা রয়েছে? এটা কি সম্ভব? হ্যাঁ। হিতোপদেশের কথাগুলোকে অন্যান্য পদের আলোকে বুঝতে হবে, যেগুলো বাবা-মায়ের কথা ‘শুনিবার’ ও তাদের বাধ্য থাকার বিষয়ে সন্তানের দায়িত্বের ওপর জোর দেয়। (হিতোপদেশ ১:৮) যদি পরিবারের মধ্যে একতা রাখতে হয়, তাহলে বাবা-মা ও সন্তান উভয়কেই শাস্ত্রীয় নীতিগুলো প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে। বাবা-মা ও সন্তানরা যদি একত্রে কাজ না করে, তাহলে সমস্যা দেখা দেবেই।

২০. সন্তানরা যখন অসতর্ক হওয়ার কারণে ভুল করে, তখন বাবা-মাদের জন্য কী করা এক বিজ্ঞতার কাজ হবে?

২০ একজন কিশোর বা কিশোরী যখন ভুল করে সমস্যায় পড়ে, তখন বাবা-মায়ের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? বিশেষভাবে সেই সময়ই অল্পবয়সিদের সাহায্যের প্রয়োজন। বাবা-মায়েরা যদি মনে রাখে যে, তারা একজন অনভিজ্ঞ অল্পবয়সির সঙ্গে আচরণ করছে, তাহলে তারা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রবণতাকে সহজেই রোধ করতে পারবে। পৌল মণ্ডলীর পরিপক্ব ব্যক্তিদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “যদি কেহ কোন অপরাধে ধরাও পড়ে তবে আত্মিক যে তোমরা, তোমরা সেই প্রকার ব্যক্তিকে মৃদুতার আত্মায় সুস্থ কর।” (গালাতীয় ৬:১) অসতর্ক হওয়ার কারণে ভুল করেছে এমন একজন অল্পবয়সির সঙ্গে আচরণ করার সময়, বাবা-মায়েরাও এই একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারে। কেন তার আচরণ ভুল ছিল এবং কীভাবে সে আবারও ভুল করা এড়িয়ে চলতে পারে, তা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করার সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মাদের এই বিষয়টাও স্পষ্ট করা উচিত যে, খারাপ হচ্ছে সেই ভুল আচরণটা, সেই অল্পবয়সি সন্তান নয়।—তুলনা করুন, যিহূদা ২২, ২৩.

২১. সন্তানরা কোনো গুরুতর পাপ করলে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর উদাহরণ অনুসরণ করে বাবা-মাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?

২১ অল্পবয়সি সন্তানের অপরাধ যদি গুরুতর হয়, তাহলে? সেই ক্ষেত্রে সন্তানের বিশেষ সাহায্য ও দক্ষ নির্দেশনার প্রয়োজন। মণ্ডলীর কোনো সদস্য যখন গুরুতর পাপ করেন, তখন তাকে অনুতপ্ত হতে ও সাহায্যের জন্য প্রাচীনদের কাছে যেতে উৎসাহিত করা হয়। (যাকোব ৫:১৪-১৬) তিনি অনুতপ্ত হওয়ার পর প্রাচীনরা তাকে আধ্যাত্মিকভাবে পুনর্স্থাপন করার জন্য তার সঙ্গে কাজ করে। পরিবারের মধ্যে, ভুল করেছে এমন সন্তানকে সাহায্য করার দায়িত্ব বাবা-মায়ের, যদিও বিষয়টা নিয়ে তাদের হয়তো প্রাচীনদের সঙ্গেও আলোচনা করার প্রয়োজন হতে পারে। তাদের কোনো সন্তানের কৃত যেকোনো গুরুতর পাপ কখনোই প্রাচীনগোষ্ঠীর কাছে লুকোনো উচিত নয়।

২২. সন্তানরা যদি কোনো গুরুতর ভুল করে, তাহলে যিহোবাকে অনুকরণ করে বাবা-মায়েরা কোন মনোভাব বজায় রাখার চেষ্টা করবে?

২২ কোনো গুরুতর সমস্যার সঙ্গে নিজের সন্তান যুক্ত থাকলে, তা অনেক কষ্টকর হয়ে থাকে। আবেগগতভাবে বিপর্যস্ত হয়ে বাবা-মা হয়তো বিপথে যাওয়া সন্তানকে রাগান্বিতভাবে বকাঝকা করার ইচ্ছা বোধ করতে পারে; কিন্তু এটা কেবল তাকে তিক্তবিরক্তই করবে। মনে রাখবেন যে, এই অল্পবয়সি সন্তানের ভবিষ্যৎ হয়তো এই কঠিন সময়ে তার সঙ্গে কেমন আচরণ করা হয়, তার ওপরই নির্ভর করে। এও মনে রাখবেন যে, তাঁর লোকেরা যখন সঠিক পথ থেকে সরে গিয়েছিল, তখন যিহোবা তাদেরকে ক্ষমা করার জন্য তৈরি ছিলেন—তবে কেবল তখনই, যখন তারা অনুতপ্ত হতো। তাঁর প্রেমময় কথাগুলো শুনুন: “সদাপ্রভু কহিতেছেন, আইস, আমরা উত্তর প্রত্যুত্তর করি; তোমাদের পাপ সকল সিন্দূরবর্ণ হইলেও হিমের ন্যায় শুক্লবর্ণ হইবে; লাক্ষার ন্যায় রাঙ্গা হইলেও মেষলোমের ন্যায় হইবে।” (যিশাইয় ১:১৮) বাবা-মাদের জন্য কতই না চমৎকার উদাহরণ!

২৩. কোনো একটা সন্তান গুরুতর পাপ করলে বাবা-মায়ের কীভাবে আচরণ করা উচিত এবং তাদের কী এড়িয়ে চলা উচিত?

২৩ তাই, বিপথে যাওয়া সন্তানকে তার পথ পরিবর্তন করার জন্য উৎসাহিত করতে চেষ্টা করুন। অভিজ্ঞ বাবা-মা এবং মণ্ডলীর প্রাচীনদের কাছ থেকে উপযুক্ত উপদেশ লাভের চেষ্টা করুন। (হিতোপদেশ ১১:১৪) সঙ্গেসঙ্গে প্রতিক্রিয়া না দেখানোর এবং এমন কিছু না বলার বা না করার চেষ্টা করুন, যা আপনার সন্তানের জন্য আপনার কাছে ফিরে আসাকে কঠিন করে তুলবে। অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধ ও তিক্তভাব এড়িয়ে চলুন। (কলসীয় ৩:৮) সহজেই হাল ছেড়ে দেবেন না। (১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৭) মন্দতাকে ঘৃণা করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার সন্তানের প্রতি কঠোর হওয়া ও তিক্তবিরক্ত হওয়া এড়িয়ে চলুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বাবা-মাদের উত্তম উদাহরণ স্থাপন করার এবং ঈশ্বরের প্রতি তাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত।

একগুঁয়ে বিদ্রোহীকে মোকাবিলা করা

২৪. খ্রিস্টান পরিবারে মাঝে মাঝে কোন দুঃখজনক পরিস্থিতির উদ্ভব হয় আর একজন বাবা অথবা মায়ের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত?

২৪ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় যে, একজন অল্পবয়সি বিদ্রোহ করার এবং খ্রিস্টীয় মূল্যবোধগুলোকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করার সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তখন মনোযোগ পরিবর্তন করে পরিবারের বাকি সন্তানদের নিয়ে পারিবারিক জীবন বজায় রাখার ও তা পুনর্নিমাণ করার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা উচিত। সতর্ক থাকুন যেন আপনার সমস্ত শক্তি সেই বিদ্রোহীর পিছনেই ব্যয় না করে ফেলেন আর এভাবে অন্য সন্তানদের অবহেলা করা হয়। পরিবারের বাকি সকলের কাছ থেকে সমস্যাটা লুকোনোর চেষ্টা করার পরিবর্তে তাদের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে যতটুকু উপযুক্ত, ততটুকু আলোচনা করুন এবং তা আশ্বাসদায়ক উপায়ে করুন।—তুলনা করুন, হিতোপদেশ ২০:১৮.

২৫. (ক) একটা সন্তান যদি একগুঁয়ে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে, তাহলে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর উদাহরণ অনুসরণ করে বাবা-মায়ের হয়তো কীভাবে কাজ করা উচিত? (খ) কোনো একটা সন্তান যদি বিদ্রোহী হয়ে ওঠে, তাহলে বাবা-মায়ের কী মনে রাখা উচিত?

২৫ মণ্ডলীতে অসংশোধিত এক বিদ্রোহীতে পরিণত হন এমন একজন ব্যক্তি সম্বন্ধে প্রেরিত যোহন এই কথা বলেছিলেন: “তাহাকে বাটীতে গ্রহণ করিও না, এবং তাহাকে ‘মঙ্গল হউক’ বলিও না।” (২ যোহন ১০) বাবা-মায়েরা হয়তো তাদের নিজেদের সন্তানের প্রতি একই পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজন বোধ করতে পারে, যদি কিনা সে সাবালক হয়ে থাকে এবং সম্পূর্ণরূপে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এই ধরনের পদক্ষেপ যত কঠিন এবং বেদনাদায়কই হোক না কেন, পরিবারের বাকি সকলের সুরক্ষার জন্য মাঝে মাঝে তা অপরিহার্য। আপনার পরিবারের জন্য আপনার সুরক্ষার ও ক্রমাগত তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন রয়েছে। তাই, স্পষ্টভাবে বর্ণিত অথচ যুক্তিযুক্ত আচরণের সীমা বজায় রাখুন। অন্যান্য সন্তানের সঙ্গে ভাববিনিময় করুন। স্কুলে এবং মণ্ডলীতে তারা কেমন করছে, সেই বিষয়ে আগ্রহী হোন। এ ছাড়া, তাদেরকে বুঝতে দিন যে, যদিও আপনি বিদ্রোহী সন্তানের কাজকে অনুমোদন করেন না কিন্তু তাকে আপনি ঘৃণা করেন না। সন্তানকে নিন্দা করার পরিবর্তে, মন্দ কাজকে নিন্দা করুন। যাকোবের দুই ছেলে যখন তাদের নিষ্ঠুর কাজের দ্বারা পরিবারকে ব্যাকুল করে দিয়েছিল, তখন যাকোব তাদের প্রচণ্ড ক্রোধকে অভিশাপ দিয়েছিলেন, ছেলেদেরকে নয়।—আদিপুস্তক ৩৪:১-৩১; ৪৯:৫-৭.

২৬. কোনো সন্তান যদি বিদ্রোহ করে, তাহলে বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন বাবা-মায়েরা কোথা থেকে সান্ত্বনা লাভ করতে পারে?

২৬ আপনার পরিবারে যা ঘটেছে, সেটার জন্য আপনি হয়তো নিজেকে দায়ী মনে করতে পারেন। কিন্তু, আপনি যদি প্রার্থনাপূর্বক আপনার যথাসাধ্য করে থাকেন এবং আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী যিহোবার পরামর্শ অনুসরণ করেন, তাহলে অযৌক্তিকভাবে নিজেকে দোষ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এই বিষয়টা থেকে সান্ত্বনা লাভ করুন যে, কেউই নিখুঁত বাবা অথবা মা হতে পারে না কিন্তু বিবেকবুদ্ধিসম্পন্নভাবে আপনি একজন উত্তম বাবা অথবা মা হওয়ার চেষ্টা করেছেন। (তুলনা করুন, প্রেরিত ২০:২৬.) পরিবারে সম্পূর্ণরূপে বিদ্রোহী একজন ব্যক্তি থাকা দুঃখজনক কিন্তু আপনার বেলায় যদি তা-ই ঘটে থাকে, তাহলে নিশ্চিত থাকুন যে, ঈশ্বর তা বোঝেন এবং তিনি তাঁর অনুগত দাসদের কখনো পরিত্যাগ করবেন না। (গীতসংহিতা ২৭:১০) তাই, আপনার ঘরকে বাকি সন্তানদের জন্য এক নিরাপদ ও আধ্যাত্মিক আশ্রয়স্থল করে তোলার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন।

২৭. অপব্যয়ী পুত্রের নীতিগল্প মনে রেখে এক বিদ্রোহী সন্তানের বাবা-মা সবসময় কী আশা করতে পারে?

২৭ সর্বোপরি, আপনার কখনো আশা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে আপনার প্রাথমিক প্রচেষ্টা অবশেষে বিপথগামী সন্তানের হৃদয়কে প্রভাবিত করতে ও তাকে চেতনা ফিরে পাওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে। (উপদেশক ১১:৬) বেশ কিছু খ্রিস্টান পরিবারেরও আপনার মতো একই অভিজ্ঞতা হয়েছে আর কেউ কেউ তাদের বিপথগামী সন্তানকে ফিরে আসতে দেখেছে, ঠিক যেমনটা যিশুর অপব্যয়ী পুত্রের নীতিগল্পের বাবা দেখেছিলেন। (লূক ১৫:১১-৩২) আপনার বেলায়ও একই বিষয় ঘটতে পারে।

a হিতোপদেশ ২৯:২১ (বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন): “ছেলেবেলা থেকে যদি কোন দাসকে আশ্‌কারা দেওয়া হয়, শেষে তাকে দমন করা যায় না।”