সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় এগারো

আপনার ঘরে শান্তি বজায় রাখুন

আপনার ঘরে শান্তি বজায় রাখুন

১. কিছু বিষয় কী, যেগুলো হয়তো পরিবারের মধ্যে বিভক্তের কারণ হতে পারে?

 সুখী তারাই, যারা এমন পরিবারগুলোর অন্তর্ভুক্ত, যেখানে প্রেম, বোঝাপড়া এবং শান্তি রয়েছে। আশা করি, আপনার পরিবারটাও এমনই। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে, অসংখ্য পরিবার এই বর্ণনার মতো নয় আর সেগুলো কোনো না কোনো কারণে বিভক্ত। কী পরিবারগুলোকে বিভক্ত করে? এই অধ্যায়ে আমরা তিনটে বিষয় আলোচনা করব। কিছু পরিবারে, সদস্যরা সকলেই একই ধর্মে বিশ্বাসী নয়। অন্যান্য পরিবারে, সন্তানরা হয়তো একই বাবা-মায়ের ঘর থেকে আসেনি। আবার এমন পরিবারগুলো রয়েছে, যেখানে জীবিকানির্বাহের সংগ্রাম অথবা আরও বস্তুগত বিষয় পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পরিবারের সদস্যদের বিভক্ত হতে বাধ্য করছে বলে মনে হয়। তবে, যে-পরিস্থিতিগুলো একটা ঘরকে বিভক্ত করে দেয়, তা হয়তো অন্য ঘরকে প্রভাবিত না-ও করতে পারে। এই পার্থক্যের কারণ কী?

২. পারিবারিক জীবনে কেউ কেউ কোথায় নির্দেশনা খুঁজে থাকে কিন্তু এই ধরনের নির্দেশনার সর্বোত্তম উৎস কী?

একটা কারণ হল, দৃষ্টিভঙ্গি। আপনি যদি আন্তরিকভাবে অন্য ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনি সম্ভবত আরও ভাল করে বুঝতে পারবেন যে, কীভাবে এক একতাবদ্ধ পরিবার বজায় রাখা যায়। দ্বিতীয় কারণটা হল, আপনার নির্দেশনার উৎস। অনেক লোক সহকর্মী, প্রতিবেশী, সংবাদপত্রের লেখক অথবা অন্যান্য মানুষের নির্দেশনা অনুসরণ করে। তবে, কেউ কেউ তাদের পরিস্থিতি সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্য কী বলে, তা জানতে পেরেছে এবং এরপর তারা যা যা শিখেছে, সেগুলো কাজে লাগিয়েছে। কীভাবে তা করা একটা পরিবারকে ঘরে শান্তি বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে?—২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭.

আপনার স্বামীর বিশ্বাস যদি ভিন্ন হয়ে থাকে

৩. (ক) ভিন্ন বিশ্বাসে বিশ্বাসী কাউকে বিয়ে করা সম্বন্ধে বাইবেলের পরামর্শ কী? (খ) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন যদি বিশ্বাসী হন এবং অন্যজন না হন, তাহলে কাজে লাগানোর মতো কিছু মৌলিক নীতি কী?

বাইবেল আমাদেরকে ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী কাউকে বিয়ে করার বিরুদ্ধে জোরালো পরামর্শ দেয়। (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৩, ৪; ১ করিন্থীয় ৭:৩৯) তবে, এমনটা হতে পারে যে, আপনি বিয়ের পরে বাইবেল থেকে সত্য শিখেছেন কিন্তু আপনার স্বামী শেখেননি। তাহলে কী? অবশ্য, তখনও বিয়ের প্রতিজ্ঞা বলবৎ থাকে। (১ করিন্থীয় ৭:১০) বাইবেল বিয়ের স্থায়িত্ব সম্বন্ধে জোর দেয় এবং বিবাহিত ব্যক্তিদেরকে তাদের পার্থক্যগুলো থেকে পালিয়ে বেড়ানোর পরিবর্তে, সেগুলো সমাধান করার জন্য উৎসাহিত করে। (ইফিষীয় ৫:২৮-৩১; তীত ২:৪, ৫) কিন্তু, আপনি বাইবেলের ধর্ম পালন করছেন বলে আপনার স্বামী যদি দৃঢ়ভাবে আপত্তি জানান, তাহলে কী? তিনি হয়তো আপনাকে মণ্ডলীর সভাগুলোতে যাওয়ার ব্যাপারে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন অথবা তিনি হয়তো বলতে পারেন যে, তিনি চান না তার স্ত্রী ঘরে ঘরে গিয়ে ধর্ম সম্বন্ধে কথা বলুক। আপনি কী করবেন?

৪. স্বামী যদি স্ত্রীর বিশ্বাসে বিশ্বাসী না হন, তাহলে কোন উপায়ে একজন স্ত্রী সহমর্মিতা দেখাতে পারেন?

নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘কেন আমার স্বামী এইরকম মনে করে?’ (হিতোপদেশ ১৬:২০, ২৩) আপনি কী করছেন, সেই বিষয়ে তিনি যদি আসলে বুঝতেই না পারেন, তাহলে তিনি হয়তো আপনার সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন হতে পারেন। অথবা তিনি হয়তো আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে চাপ অনুভব করতে পারেন, কারণ আপনি এখন আর সেই রীতিনীতিগুলোতে যোগ দেন না, যেগুলো তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। “ঘরে একা একা আমি পরিত্যক্ত বোধ করতাম,” একজন স্বামী বলেছিলেন। এই ব্যক্তি মনে করেছিলেন যে, তিনি কোনো ধর্মের কাছে তার স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলছেন। কিন্তু, গর্ব তাকে এই কথা স্বীকার করতে বাধা দিয়েছিল যে, তিনি একা বোধ করছেন। আপনার স্বামীর হয়তো এই আশ্বাসের প্রয়োজন রয়েছে যে, যিহোবার প্রতি আপনার প্রেমের অর্থ এই নয় যে, আপনি আপনার স্বামীকে অতীতের চেয়ে এখন কম ভালবাসেন। তার সঙ্গে সময় কাটানোর বিষয়ে নিশ্চিত হোন।

৫. ভিন্ন বিশ্বাসে বিশ্বাসী স্বামী রয়েছে এমন একজন স্ত্রীকে কোন ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে?

কিন্তু, আপনি যদি পরিস্থিতিটাকে বিজ্ঞতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে চান, তাহলে এর চেয়ে এমনকি আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিবেচনা করতে হবে। ঈশ্বরের বাক্য স্ত্রীদের জোরালো পরামর্শ দেয়: “তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও, যেমন প্রভুতে উপযুক্ত।” (কলসীয় ৩:১৮) এভাবে, এটি স্বাধীনচেতা মনোভাবের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দেয়। অধিকন্তু, “যেমন প্রভুতে উপযুক্ত” কথাগুলো বলার দ্বারা এই শাস্ত্রপদ ইঙ্গিত দেয় যে, নিজের স্বামীর প্রতি বশীভূত থাকার সঙ্গে প্রভুর প্রতি বশীভূত থাকার বিষয়টাও বিবেচনা করা যুক্ত। এখানেই ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন।

৬. একজন খ্রিস্টান স্ত্রীর কোন নীতিগুলো মনে রাখা উচিত?

একজন খ্রিস্টানের জন্য মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগদান করা এবং অন্যদের কাছে বাইবেলভিত্তিক বিশ্বাস সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে সত্য উপাসনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক, যেগুলোকে অবহেলা করা যাবে না। (রোমীয় ১০:৯, ১০, ১৪; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) তাহলে, কোনো মানুষ যদি আপনাকে ঈশ্বরের একটা নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণ না করতে সরাসরি আদেশ দেয়, তখন আপনি কী করবেন? যিশু খ্রিস্টের প্রেরিতরা ঘোষণা করেছিল: “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।” (প্রেরিত ৫:২৯) তাদের উদাহরণ একটা দৃষ্টান্ত জোগায়, যা জীবনের অনেক পরিস্থিতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যিহোবার প্রতি প্রেম কি আপনাকে তাঁকে সেই ভক্তি প্রদান করতে অনুপ্রাণিত করবে, যা উপযুক্তভাবে তাঁরই প্রাপ্য? একইসঙ্গে, স্বামীর প্রতি আপনার প্রেম ও সম্মান কি আপনাকে তার প্রতি এমনভাবে ভক্তি দেখানোর চেষ্টা করতে পরিচালিত করবে, যা আপনার স্বামীর কাছে গ্রহণযোগ্য?—মথি ৪:১০; ১ যোহন ৫:৩.

৭. একজন খ্রিস্টান স্ত্রীকে অবশ্যই কোন দৃঢ়সংকল্প রাখতে হবে?

যিশু উল্লেখ করেছিলেন যে, তা করা সবসময় সহজ হবে না। তিনি সাবধান করেছিলেন যে, সত্য উপাসনার প্রতি বিরোধিতার কারণে কিছু পরিবারের বিশ্বাসী সদস্যরা নিজেদের পৃথক বলে মনে করবে, ঠিক যেন তাদের ও পরিবারের বাকি সদস্যের মধ্যে একটা খড়্গ চলে এসেছে। (মথি ১০:৩৪-৩৬) জাপানের একজন মহিলার এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তার স্বামী ১১ বছর ধরে তার বিরোধিতা করেছিলেন। স্বামী তার সঙ্গে খুবই দুর্ব্যবহার করতেন এবং প্রায়ই তাকে বাড়ির বাইরে রেখে দরজা বন্ধ করে দিতেন। কিন্তু, তিনি ধৈর্য বজায় রেখেছিলেন। খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর বন্ধুরা তাকে সাহায্য করেছিল। তিনি অবিরত প্রার্থনা করেছিলেন এবং ১ পিতর ২:২০ পদ থেকে অনেক উৎসাহ লাভ করেছিলেন। এই খ্রিস্টান মহিলা দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন যে, তিনি যদি দৃঢ় থাকেন, তাহলে কোনো একদিন তার স্বামী তার সঙ্গে যিহোবার সেবায় যোগ দেবেন। আর স্বামী তা-ই করেছিলেন।

৮, ৯. স্বামীর সম্মুখে অপ্রয়োজনীয় বাধাগুলো নিয়ে আসা এড়ানোর জন্য একজন স্ত্রীর কীভাবে কাজ করা উচিত?

আপনার সাথির মনোভাবকে প্রভাবিত করার জন্য এমন অনেক ব্যবহারিক বিষয় রয়েছে, যেগুলো আপনি করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার স্বামী যদি আপনার ধর্ম নিয়ে আপত্তি করেন, তাহলে অন্যান্য ক্ষেত্রে অভিযোগ করার মতো উপযুক্ত কারণ তুলে ধরার সুযোগ তাকে দেবেন না। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখুন। নিজের বেশভূষার প্রতি নজর দিন। প্রেম ও উপলব্ধি দেখানোর ক্ষেত্রে উদার হোন। সমালোচনা করার পরিবর্তে সাহায্যকারী হোন। তাকে দেখান যে, মস্তকপদের জন্য আপনি তার ওপর নির্ভর করেন। আপনি যদি মনে করেন যে, আপনার সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করা হয়েছে, তাহলে প্রতিশোধ নেবেন না। (১ পিতর ২:২১, ২৩) মানব অসিদ্ধতার কথা বিবেচনা করুন এবং যদি তর্কবিতর্ক দেখা দেয়, তাহলে প্রথমে আপনিই নম্রভাবে অপরাধ স্বীকার করুন।—ইফিষীয় ৪:২৬.

আপনার সভায় যোগদানের কারণে স্বামীকে রাতের খাবার দেরি করে দেবেন না। এ ছাড়া, আপনি হয়তো সেই সময়গুলোতে খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় যাওয়া বেছে নিতে পারেন, যখন আপনার স্বামী বাড়িতে থাকেন না। একজন খ্রিস্টান স্ত্রীর জন্য সেই সময় স্বামীর কাছে প্রচার করা থেকে বিরত থাকা বিজ্ঞতার কাজ, যখন তিনি তা শুনতে চান না। এর পরিবর্তে, তিনি প্রেরিত পিতরের পরামর্শ মেনে চলেন: “হে ভার্য্যা সকল, তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও; যেন কেহ কেহ যদিও বাক্যের অবাধ্য হয়, তথাপি যখন তাহারা তোমাদের সভয় [“সম্মানজনক,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার স্বচক্ষে দেখিতে পায়, তখন বাক্য বিহীনে আপন আপন ভার্য্যার আচার ব্যবহার দ্বারা তাহাদিগকে লাভ করা হয়।” (১ পিতর ৩:১, ২) খ্রিস্টান স্ত্রীরা ঈশ্বরের আত্মার ফল প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আরও পূর্ণরূপে কাজ করে।—গালাতীয় ৫:২২, ২৩.

স্ত্রী যখন একজন খ্রিস্ট ধর্ম পালনকারী না হন

১০. স্ত্রী যদি ভিন্ন বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে থাকেন, তাহলে একজন বিশ্বাসী স্বামীর তার স্ত্রীর প্রতি কেমন আচরণ করা উচিত?

১০ স্বামী যদি একজন খ্রিস্ট ধর্ম পালনকারী হয়ে থাকেন কিন্তু স্ত্রী না হন, তাহলে কী? এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য বাইবেল নির্দেশনা প্রদান করে। এটি বলে: “যদি কোন ভ্রাতার অবিশ্বাসিনী স্ত্রী থাকে, আর সেই নারী তাহার সহিত বাস করিতে সম্মতা হয়, তবে সে তাহাকে পরিত্যাগ না করুক।” (১ করিন্থীয় ৭:১২) এ ছাড়া, এটি স্বামীদের এই উপদেশও দেয়: “তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে প্রেম কর।”—কলসীয় ৩:১৯.

১১. স্ত্রী যদি একজন খ্রিস্ট ধর্ম পালনকারী না হয়ে থাকেন, তাহলে কীভাবে একজন স্বামী বিচক্ষণতা দেখাতে পারেন এবং কৌশলতার সঙ্গে তার স্ত্রীর ওপর মস্তকপদ ব্যবহার করতে পারেন?

১১ আপনি যদি ভিন্ন বিশ্বাসে বিশ্বাসী একজন স্ত্রীর স্বামী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার স্ত্রীর প্রতি সম্মান ও তার আবেগঅনুভূতির প্রতি বিবেচনা দেখানোর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক হোন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে তিনি তার ধর্মীয় বিশ্বাস পালন করার জন্য কিছুটা স্বাধীন, এমনকি যদিও আপনি সেগুলোর সঙ্গে একমত নন। আপনি যখন প্রথম বার তার সঙ্গে আপনার বিশ্বাস নিয়ে কথা বলেন, তখন এইরকম আশা করবেন না যে, নতুন কিছুর জন্য তিনি তার দীর্ঘদিনের বিশ্বাস ত্যাগ করবেন। স্ত্রী ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে যে-রীতিনীতিগুলো সযত্নে লালন করে আসছে সেগুলো মিথ্যা, এই কথা হঠাৎ করে বলার পরিবর্তে, ধৈর্য ধরে তার সঙ্গে শাস্ত্র থেকে যুক্তি করার আপ্রাণ চেষ্টা করুন। এমনও হতে পারে যে, আপনি যদি মণ্ডলীর কাজের জন্য প্রচুর সময় দিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি অবহেলিত বোধ করেন। তিনি হয়তো যিহোবার সেবা করার বিষয়ে আপনার প্রচেষ্টার বিরোধিতা করতে পারেন কিন্তু মূল বার্তা কেবল এটা হতে পারে: “তোমার কাছ থেকে আমি আরও সময় চাই!” ধৈর্যশীল হোন। আপনার প্রেমময় বিবেচনার কারণে পরিশেষে তিনি হয়তো সত্য উপাসনাকে নিজের করে নিতে সাহায্য পাবেন।—কলসীয় ৩:১২-১৪; ১ পিতর ৩:৮, ৯.

সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া

১২. এমনকি যদিও একজন স্বামী ও তার স্ত্রী ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে থাকেন, তবুও কীভাবে সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে শাস্ত্রীয় নীতিগুলো প্রয়োগ করা উচিত?

১২ যে-ঘর উপাসনায় একতাবদ্ধ নয়, সেখানে সন্তানদের ধর্মীয় নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টা মাঝে মাঝে এক বিতর্কিত বিষয় হয়ে ওঠে। কীভাবে শাস্ত্রীয় নীতিগুলো প্রয়োগ করা যেতে পারে? বাইবেল সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার প্রধান দায়িত্ব বাবাকেই দিয়ে থাকে কিন্তু মাকেও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। (হিতোপদেশ ১:৮; তুলনা করুন, আদিপুস্তক ১৮:১৯; দ্বিতীয় বিবরণ ১১:১৮, ১৯.) এমনকি বাবা যদি খ্রিস্টের মস্তকপদকে গ্রহণ না-ও করেন, তবুও তিনিই হলেন পরিবারের মস্তক।

১৩, ১৪. স্বামী যদি তার স্ত্রীকে সন্তানদের খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে নিয়ে যেতে অথবা তাদের সঙ্গে অধ্যয়ন করতে নিষেধ করেন, তাহলে স্ত্রী কী করতে পারেন?

১৩ মা যদি সন্তানদের ধর্মীয় ব্যাপারে শিক্ষা প্রদান করে থাকেন, তাহলে কিছু অবিশ্বাসী বাবা আপত্তি জানায় না। তবে, অন্যেরা জানিয়ে থাকে। কী হবে যদি আপনার স্বামী সন্তানদেরকে মণ্ডলীর সভাগুলোতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি না দেন অথবা এমনকি ঘরে তাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার ব্যাপারে আপনাকে নিষেধ করেন? তখন আপনাকে বেশ কয়েকটা বাধ্যবাধকতার—যিহোবার প্রতি, আপনার স্বামীর মস্তকপদের প্রতি এবং আপনার প্রিয় সন্তানদের প্রতি আপনার বাধ্যবাধকতার—মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। কীভাবে আপনি এগুলোকে সমন্বয় করতে পারেন?

১৪ নিশ্চিতভাবেই আপনি এই বিষয়ে প্রার্থনা করবেন। (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭; ১ যোহন ৫:১৪) কিন্তু, অবশেষে আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আপনি কোন পথটা বেছে নেবেন। আপনি যদি কৌশলতা অবলম্বন করেন, আপনার স্বামীর কাছে এই বিষয়টা স্পষ্ট করেন যে, আপনি তার মস্তকপদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না, তাহলে তার বিরোধিতা হয়তো পরিশেষে কমে যেতে পারে। এমনকি আপনার স্বামী যদি আপনার সন্তানদের সভায় নিয়ে যেতে অথবা তাদের সঙ্গে নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন করতে নিষেধ করেন, তাহলেও আপনি তাদেরকে শিক্ষা দিতে পারেন। আপনার রোজকার কথাবার্তা ও আপনার উত্তম উদাহরণের দ্বারা তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও যিহোবার প্রতি ভালবাসা, তাঁর বাক্যের প্রতি বিশ্বাস—তাদের বাবাসহ—বাবা-মাদের প্রতি সম্মান, অন্য লোকেদের প্রতি প্রেমময় বিবেচনা এবং বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন কাজের অভ্যাসের প্রতি উপলব্ধি গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা করুন। পরিশেষে, বাবা হয়তো উত্তম ফলাফল লক্ষ করতে এবং আপনার প্রচেষ্টার মূল্যকে উপলব্ধি করতে পারেন।—হিতোপদেশ ২৩:২৪.

১৫. সন্তানদের শিক্ষার ক্ষেত্রে একজন বিশ্বাসী বাবার দায়িত্ব কী?

১৫ আপনি যদি একজন বিশ্বাসী স্বামী হয়ে থাকেন কিন্তু আপনার স্ত্রী বিশ্বাসী না হন, তাহলে আপনার সন্তানদের “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে” মানুষ করে তোলার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। (ইফিষীয় ৬:৪) অবশ্য, তা করার সময় আপনার স্ত্রীর সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে সদয়, প্রেমময় এবং যুক্তিবাদী হওয়া উচিত।

তোমার নিজের ও তোমার বাবা-মায়ের ধর্ম যদি ভিন্ন হয়

১৬, ১৭. সন্তানরা যদি বাবা-মায়ের বিশ্বাসের চেয়ে ভিন্ন এক বিশ্বাস গ্রহণ করে থাকে, তাহলে বাইবেলের কোন নীতিগুলো তাদের মনে রাখতে হবে?

১৬ এমনকি অপ্রাপ্তবয়স্কের জন্যও সেই ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিগুলো গ্রহণ করা এখন আর অস্বাভাবিক কিছু নয়, যেগুলো তাদের বাবা-মায়ের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে ভিন্ন। তুমি কি তা গ্রহণ করেছ? যদি করে থাকো, তাহলে বাইবেলে তোমার জন্য পরামর্শ রয়েছে।

১৭ ঈশ্বরের বাক্য বলে: “সন্তানেরা, তোমরা প্রভুতে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও, কেননা তাহা ন্যায্য। ‘তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও।’” (ইফিষীয় ৬:১, ২) এর সঙ্গে বাবা-মায়ের প্রতি গঠনমূলক সম্মান অন্তর্ভুক্ত। তবে, বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্যতা যদিও গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তা সত্য ঈশ্বরকে সম্মান না করে দেখানো যাবে না। একজন সন্তান যখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো যথেষ্ট বড় হয়, তখন সে তার কাজগুলোর জন্য আরও বেশি দায়িত্ব বহন করে। আর এটা কেবল জাগতিক আইনগুলোর ব্যাপারেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে বিশেষভাবে ঐশিক আইনের ব্যাপারেও সত্য। “আমাদের প্রত্যেক জনকে ঈশ্বরের কাছে আপন আপন নিকাশ দিতে হইবে,” বাইবেল বলে।—রোমীয় ১৪:১২.

১৮, ১৯. সন্তানদের ধর্ম যদি বাবা-মায়ের ধর্মের চেয়ে ভিন্ন হয়, তাহলে কীভাবে তারা নিজেদের বিশ্বাস সম্বন্ধে বাবা-মাকে আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে?

১৮ তোমার বিশ্বাস যদি তোমাকে জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন করতে পরিচালিত করে, তাহলে তোমার বাবা-মায়ের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করো। তারা সম্ভবত খুশি হবে, যদি বাইবেলের শিক্ষাগুলো শেখার ও সেগুলো কাজে লাগানোর ফলে তুমি সেই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আরও বেশি সম্মান করতে শেখো এবং আরও বেশি বাধ্য ও অধ্যবসায়ী হও, যেগুলো তারা তোমার কাছ থেকে চান। কিন্তু, তোমার নতুন বিশ্বাস যদি তোমাকে তোমার বাবা-মায়ের সযত্নে লালিত বিশ্বাস ও রীতিনীতিগুলো প্রত্যাখ্যান করতে পরিচালিত করে, তাহলে তারা হয়তো মনে করতে পারে যে, তুমি সেই উত্তরাধিকারকে অবজ্ঞা করছ, যা তারা তোমাকে দিতে চায়। এ ছাড়া, তুমি যা করছ, তা যদি সমাজের বেশিরভাগ লোক পছন্দ না করে অথবা সেটা যদি সেই অনুধাবনগুলো থেকে তোমার মনোযোগ সরিয়ে নিয়ে যায়, যেগুলো তোমাকে বস্তুগতভাবে সমৃদ্ধশালী হতে সাহায্য করতে পারত বলে তারা মনে করে, তাহলে তারা হয়তো তোমার মঙ্গলের কথা ভেবে ভয় পেতে পারে। এক্ষেত্রে, গর্বও একটা বাধা হতে পারে। বস্তুতপক্ষে, তারা মনে করতে পারে যে, তুমি বলতে চাচ্ছ তুমিই ঠিক আর তারা ভুল।

১৯ তাই, যত শীঘ্রই সম্ভব স্থানীয় মণ্ডলী থেকে কিছু প্রাচীন অথবা অন্যান্য পরিপক্ব খ্রিস্টান যাতে তোমার বাবা-মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করো। কী আলোচনা করা হয়, তা নিজের কানে শোনার এবং যিহোবার সাক্ষিরা কেমন লোক, তা নিজের চোখে দেখার জন্য তোমার বাবা-মাকে কিংডম হলে যেতে উৎসাহিত করো। একসময় তোমার বাবা-মায়ের মনোভাব হয়তো নমনীয় হতে পারে। এমনকি বাবা-মা যখন বিরোধিতা করেই চলে, বাইবেল সাহিত্যাদি নষ্ট করে দেয় এবং সন্তানদের খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগদান করতে নিষেধ করে, তখনও সাধারণত অন্য জায়গায় সাহিত্যাদি পড়ার, সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে কথা বলার এবং রীতিবহির্ভূতভাবে অন্যদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার ও তাদেরকে সাহায্য করার বিভিন্ন সুযোগ থাকে। এ ছাড়া, তুমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারো। কোনো কোনো অল্পবয়সিকে আরও বেশি কিছু করার জন্য সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না পরিবার থেকে আলাদা বাস করার জন্য তারা যথেষ্ট বড় হয়। কিন্তু, ঘরে পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, “তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর” করতে ভুলে যেও না। ঘরের শান্তিতে অবদান রাখার জন্য নিজের অংশটুকু পালন করো। (রোমীয় ১২:১৭, ১৮) সর্বোপরি, ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তির অনুধাবন করো।

একজন সৎবাবা অথবা সৎমা হওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা

২০. সন্তানদের কোন ধরনের অনুভূতি থাকতে পারে, যদি তাদের বাবা অথবা মা, একজন সৎবাবা অথবা সৎমা হয়ে থাকেন?

২০ অনেক বাড়িতে যে-পরিস্থিতি সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসে, তা ধর্মীয় নয় বরং সৎপরিবারের সমস্যা। অনেক ঘরে বর্তমানে বাবা অথবা মা উভয়েরই আগের ঘরের সন্তানরা রয়েছে। এইরকম পরিবারে সন্তানরা হয়তো ঈর্ষা ও বিরক্তি কিংবা হতে পারে আনুগত্যের দ্বন্দ্ব ভোগ করে থাকে। ফলে, তারা হয়তো একজন উত্তম বাবা অথবা মা হওয়ার বিষয়ে সৎবাবা কিংবা সৎমায়ের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে। একটা সৎপরিবারকে সফল হওয়ার জন্য কী সাহায্য করতে পারে?

আপন বাবা-মা কিংবা সৎবাবা-মা যা-ই হোন না কেন, বাইবেলের নির্দেশনার ওপর নির্ভর করুন

২১. সৎবাবা অথবা সৎমাদের বিশেষ পরিস্থিতিগুলো সত্ত্বেও কেন তাদের সাহায্যের জন্য বাইবেলে প্রাপ্ত নীতিগুলোর ওপর নির্ভর করা উচিত?

২১ নিশ্চিত থাকুন যে, বিশেষ পরিস্থিতিগুলো সত্ত্বেও বাইবেলের যে-নীতিগুলো অন্যান্য পরিবারে সাফল্য নিয়ে এসেছে, সেগুলো এখানেও প্রযোজ্য। সেই নীতিগুলো উপেক্ষা করা হয়তো ক্ষণিকের জন্য একটা সমস্যার সমাধান নিয়ে আসে বলে মনে হতে পারে, কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা সম্ভবত মনোদুঃখ নিয়ে আসবে। (গীতসংহিতা ১২৭:১; হিতোপদেশ ২৯:১৫) প্রজ্ঞা ও বুদ্ধি বা বিচক্ষণতা গড়ে তুলুন—প্রজ্ঞা দীর্ঘস্থায়ী উপকারের কথা মনে রেখে ঈশ্বরীয় নীতিগুলো প্রয়োগ করার জন্য আর বিচক্ষণতা পরিবারের সদস্যরা কেন একটা বিষয় বলেছে বা করেছে, তা শনাক্ত করার জন্য। এ ছাড়া, সহমর্মিতা দেখানোরও প্রয়োজন রয়েছে।—হিতোপদেশ ১৬:২১; ২৪:৩; ১ পিতর ৩:৮.

২২. কেন সন্তানদের জন্য একজন সৎবাবা অথবা সৎমাকে গ্রহণ করে নেওয়া কঠিন হতে পারে?

২২ আপনি যদি একজন সৎবাবা অথবা সৎমা হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি হয়তো স্মরণ করতে পারেন যে, পরিবারের একজন বন্ধু হিসেবে আপনাকে সম্ভবত সন্তানরা সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু, আপনি যখন তাদের সৎবাবা অথবা সৎমা হয়েছেন, তখন তাদের মনোভাব পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। তাদের আপন বাবা অথবা মা, যিনি এখন আর তাদের সঙ্গে থাকেন না, তার কথা স্মরণ করে সন্তানরা হয়তো আনুগত্যের দ্বন্দ্বের সঙ্গে লড়াই করছে, সম্ভবত এইরকম মনে করে যে, তাদের অনুপস্থিত বাবা অথবা মায়ের জন্য তাদের যে-ভালবাসা রয়েছে, তা আপনি কেড়ে নিতে চান। মাঝে মাঝে, তারা হয়তো রূঢ়ভাবে আপনাকে মনে করিয়ে দিতে পারে যে, আপনি তাদের বাবা অথবা তাদের মা নন। এই ধরনের কথা আঘাত দিতে পারে। তবুও, ‘আপনার আত্মাকে সত্বর বিরক্ত হইতে দিবেন না।’ (উপদেশক ৭:৯) সন্তানদের আবেগের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য বিচক্ষণতা ও সহমর্মিতা প্রয়োজন।

২৩. সৎসন্তান রয়েছে এমন এক পরিবারে কীভাবে শাসন করা যেতে পারে?

২৩ এই গুণগুলো অপরিহার্য, যখন কোনো ব্যক্তি শাসন প্রদান করে থাকেন। সংগতিপূর্ণ শাসন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। (হিতোপদেশ ৬:২০; ১৩:১) আর সমস্ত সন্তান যেহেতু এক নয়, তাই বিভিন্ন জনের ক্ষেত্রে শাসন বিভিন্নরকম হতে পারে। কিছু সৎবাবা-মা দেখেছে যে, অন্ততপক্ষে প্রথম প্রথম বাবা অথবা মা হিসেবে যত্ন নেওয়ার বিষয়টা আপন বাবা কিংবা মা পরিচালনা করলে আরও ভাল হয়। তবে, এটা অপরিহার্য যে, বাবা-মা উভয়ই শাসনের ব্যাপারে একমত হবেন এবং তা সমর্থন করবেন, সৎসন্তানের চেয়ে নিজের সন্তানের প্রতি “পক্ষপাত” করবেন না। (হিতোপদেশ [প্রবচনমালা] ২৪:২৩, বাংলা জুবিলী বাইবেল) বাধ্যতা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অসিদ্ধতার বিষয়টাও বিবেচনায় রাখতে হবে। অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। প্রেমের সঙ্গে শাসন করুন।—কলসীয় ৩:২১.

২৪. সৎপরিবারে বিপরীত লিঙ্গের সদস্যদের মধ্যে নৈতিক সমস্যাগুলো এড়ানোর জন্য কী সাহায্য করতে পারে?

২৪ সমস্যা রোধ করার জন্য পারিবারিক আলোচনা অনেক কিছু করতে পারে। এই আলোচনা পরিবারকে জীবনের সবচেয়ে ‘বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে’ মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে। (তুলনা করুন, ফিলিপীয় ১:৯, ১০, NW, ১১.) এগুলো প্রত্যেককে এটা দেখতেও সাহায্য করতে পারে যে, কীভাবে একজন ব্যক্তি পারিবারিক লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেন। অধিকন্তু, খোলাখুলি আলোচনা নৈতিক সমস্যাগুলোও দূর করতে পারে। মেয়েদের বুঝতে হবে যে, সৎবাবা অথবা কোনো সৎভাইয়ের সামনে তাদের কীভাবে পোশাক-আশাক পরতে ও আচরণ করতে হবে এবং ছেলেদের তাদের সৎমা ও সৎবোনদের সঙ্গে সঠিক আচরণ করার বিষয়ে পরামর্শের প্রয়োজন রয়েছে।—১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৮.

২৫. কোন গুণাবলি সৎপরিবারে শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

২৫ সৎবাবা অথবা সৎমা হওয়ার বিশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য ধৈর্য ধরুন। নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সময়ের প্রয়োজন। রক্তের সম্পর্ক নেই এমন সন্তানদের কাছ থেকে প্রেম ও সম্মান অর্জন করা দুরূহ কাজ হতে পারে। কিন্তু, তা সম্ভব। এক বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ হৃদয় এবং সেইসঙ্গে যিহোবাকে খুশি করার দৃঢ়আকাঙ্ক্ষা সৎপরিবারে শান্তি বজায় রাখার চাবিকাঠি। (হিতোপদেশ ১৬:২০) এই ধরনের গুণ আপনাকে অন্যান্য পরিস্থিতির সঙ্গেও মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

বস্তুগত বিষয়গুলোর পিছনে ছোটার কারণে কি আপনার পরিবার বিভক্ত?

২৬. কোন কোন উপায়ে বস্তুগত বিষয় সংক্রান্ত সমস্যা ও মনোভাবগুলো একটা পরিবারকে বিভক্ত করতে পারে?

২৬ বস্তুগত বিষয় সংক্রান্ত সমস্যা ও মনোভাব পরিবারগুলোকে অনেক দিক দিয়ে বিভক্ত করতে পারে। দুঃখের বিষয় যে, কিছু পরিবার টাকাপয়সা ও ধনী—অথবা অন্ততপক্ষে আরেকটু ধনী—হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তর্কবিতর্ক করার ফলে ভেঙে যায়। যখন দুজন সাথিই চাকরি করে এবং “আমার টাকা, তোমার টাকা” এইরকম মনোভাব গড়ে তোলে, তখন বিভেদ দেখা দিতে পারে। আর এমনকি তর্কবিতর্ক এড়ানো গেলেও যখন দুজন সাথি কাজ করে, তখন তারা হয়তো নিজেদের মধ্যে এমন এক তালিকা রয়েছে বলে দেখতে পায়, যেখানে পরস্পরের জন্য কম সময় হাতে থাকে। জগতে বাবাদের মধ্যে একটা যে-প্রবণতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা হচ্ছে দীর্ঘ সময়ের—কয়েক মাস কিংবা কয়েক বছরের—জন্য তাদের পরিবার থেকে দূরে থাকা, যাতে তারা ঘরে থাকলে যতটা আয় করতে পারত, তার চেয়ে আরও বেশি টাকা আয় করতে পারে। এটা অনেক গুরুতর সমস্যার দিকে পরিচালিত করতে পারে।

২৭. কিছু নীতি কী, যেগুলো একটা পরিবারকে আর্থিক চাপের মধ্যে সাহায্য করতে পারে?

২৭ এই পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করার জন্য কোনো নিয়মকানুন প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে না, যেহেতু বিভিন্ন পরিবারকে বিভিন্ন চাপ ও চাহিদার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়। তা সত্ত্বেও, বাইবেলের পরামর্শ সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, হিতোপদেশ ১৩:১০ (NW) পদ ইঙ্গিত দেয় যে, ‘একসঙ্গে পরামর্শ করার’ মাধ্যমে মাঝে মাঝে অযথা লড়াই এড়ানো যেতে পারে। এর সঙ্গে কেবল একজনের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি বলা নয় কিন্তু সেইসঙ্গে পরামর্শ খোঁজা ও অন্য ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি বোঝাও জড়িত। অধিকন্তু, এক বাস্তবসম্মত বাজেট তৈরি করা পরিবারের প্রচেষ্টাগুলোকে সমন্বয়সাধন করার জন্য সাহায্য করতে পারে। মাঝে মাঝে বাড়তি খরচ মেটানোর জন্য, বিশেষ করে যখন সন্তান অথবা অন্যান্য নির্ভরশীল ব্যক্তি থাকে, তখন উভয় সাথিকেই ঘরের বাইরে কাজ করতে হয়—হতে পারে সাময়িকভাবে। যখন এইরকম হয়, তখন স্বামী তার স্ত্রীকে আশ্বাস দিতে পারেন যে, তার স্ত্রীর জন্য তখনও তার সময় রয়েছে। তিনি ও সেইসঙ্গে সন্তানরা প্রেমের সঙ্গে কিছু কাজে সাহায্য করতে পারেন, যেগুলো হয়তো স্ত্রী সাধারণত একাই সামলান।—ফিলিপীয় ২:১-৪.

২৮. পালন করা হলে, কোন অনুস্মারকগুলো একটা পরিবারকে একতার ক্ষেত্রে কাজ করতে সাহায্য করবে?

২৮ কিন্তু মনে রাখবেন যে, যদিও এই বিধিব্যবস্থায় টাকাপয়সার প্রয়োজন রয়েছে, তবে তা সুখ নিয়ে আসে না। নিশ্চিতভাবেই তা জীবন দান করে না। (উপদেশক ৭:১২) বস্তুতপক্ষে, বস্তুগত বিষয়গুলোর প্রতি অতিরিক্ত জোর দেওয়া, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক অধঃপতন ঘটাতে পারে। (১ তীমথিয় ৬:৯-১২) জীবনের প্রয়োজনগুলো লাভ করার বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টায় তাঁর আশীর্বাদ থাকবে, এই আশ্বাস সহকারে প্রথমে ঈশ্বরের রাজ্য ও তাঁর ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করা কতই না উত্তম! (মথি ৬:২৫-৩৩; ইব্রীয় ১৩:৫) আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে সর্বাগ্রে রেখে এবং প্রথমে ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তির অনুধাবন করে, আপনি হয়তো দেখতে পাবেন যে, আপনার ঘর, হয়তো কিছু পরিস্থিতির কারণে বিভক্ত হওয়া সত্ত্বেও এমন এক ঘর হয়ে উঠবে, যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোতে সত্যিই একতাবদ্ধ।