সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ১০

আপনার ক্ষমতা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ‘ঈশ্বরের অনুকারী হোন’

আপনার ক্ষমতা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ‘ঈশ্বরের অনুকারী হোন’

১. অসিদ্ধ মানুষেরা খুব সহজেই কোন সূক্ষ্ম ফাঁদে পা দেয়?

“ক্ষমতার অধিকারী যেকারোর জন্য এক সূক্ষ্ম ফাঁদ ওত পেতে থাকে।” উনবিংশ শতাব্দীর একজন কবির ওই কথাগুলো এক গুপ্ত বিপদ সম্বন্ধে মনে করিয়ে দেয়: ক্ষমতার অপব্যবহার। দুঃখের বিষয় হল যে, সমস্ত অসিদ্ধ মানুষই খুব সহজে এই ফাঁদে পা দেয়। বাস্তবিকপক্ষে, ইতিহাস জুড়ে ‘এক জন অন্যের উপরে তাহার অমঙ্গলার্থে কর্ত্তৃত্ব করিয়াছে।’ (উপদেশক ৮:৯) কোনো প্রেম না দেখিয়ে ক্ষমতা ব্যবহারের ফলে মানুষের জন্য অবর্ণনীয় কষ্ট এসেছে।

২, ৩. (ক) যিহোবার ক্ষমতার ব্যবহার সম্বন্ধে উল্লেখযোগ্য বিষয় কী? (খ) আমাদের ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত কী হতে পারে আর কীভাবে আমাদের এই সমস্ত ক্ষমতাকে ব্যবহার করা উচিত?

কিন্তু, এটা কি উল্লেখযোগ্য নয় যে যিহোবা ঈশ্বর, যিনি অসীম শক্তির অধিকারী তিনি কখনোই সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করেন না? আমরা যেমন আগের অধ্যায়গুলোতে লক্ষ করেছি, তিনি তাঁর শক্তি—তা সেগুলো সৃজনশীল, ধ্বংসাত্মক, প্রতিরক্ষামূলক বা পুনর্স্থাপন করা যাই হোক না কেন—সবসময় তাঁর প্রেমময় উদ্দেশ্যগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ব্যবহার করেন। তিনি তাঁর ক্ষমতাকে যেভাবে ব্যবহার করেন তা নিয়ে যখন আমরা গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন আমরা তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য প্রেরণা পাই। ফলে, সেটা আমাদের নিজেদের ক্ষমতাকে ব্যবহার করার সময় ‘ঈশ্বরের অনুকারী হইতে’ আমাদের পরিচালিত করতে পারে। (ইফিষীয় ৫:১) কিন্তু আমাদের মতো ক্ষুদ্র মানুষদের কোন ক্ষমতা রয়েছে?

মনে রাখবেন যে, মানুষকে ‘ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতে’ ও সাদৃশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছিল। (আদিপুস্তক ১:২৬, ২৭) তাই, আমাদেরও ক্ষমতা রয়েছে—অন্তত কিছুটা হলেও। আমাদের ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বিভিন্ন বিষয় সম্পাদন করার, কাজ করার সামর্থ্য; অন্যদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্ব করার অধিকার; অন্যদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা, বিশেষ করে যারা আমাদের ভালবাসে; শারীরিক কর্মশক্তি (বল); কিংবা বস্তুগত সম্পদগুলো। যিহোবা সম্বন্ধে গীতরচক বলেছিলেন: “তোমারই কাছে জীবনের উনুই আছে।” (গীতসংহিতা ৩৬:৯) অতএব, সরাসরি হোক বা পরোক্ষভাবেই হোক, আমাদের যেকোনো ন্যায়সংগত ক্ষমতার উৎস হলেন ঈশ্বর। তাই আমরা এটাকে এমনভাবে ব্যবহার করতে চাই, যা তাঁকে খুশি করে। কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

প্রেমই হল মূল চাবিকাঠি

৪, ৫. (ক) সঠিকভাবে ক্ষমতা ব্যবহার করার মূল চাবিকাঠি কী এবং ঈশ্বরের নিজের উদাহরণ কীভাবে তা প্রদর্শন করে? (খ) প্রেম কীভাবে আমাদের ক্ষমতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে?

ক্ষমতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার মূল চাবিকাঠি হল প্রেম। ঈশ্বরের নিজের উদাহরণ কি তা প্রদর্শন করে না? ঈশ্বরের চারটে মৌলিক গুণ—শক্তি, ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা ও প্রেম—যেগুলো সম্বন্ধে ১ অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে, তা মনে করে দেখুন। চারটে গুণের মধ্যে, কোনটা প্রধান? প্রেম। ১ যোহন ৪:৮ পদ বলে, “ঈশ্বর প্রেম।” হ্যাঁ, যিহোবার অপরিহার্য গুণ হল প্রেম; তিনি যা কিছু করেন সেগুলোর সমস্তকিছুকেই এটা প্রভাবিত করে। তাই তাঁর ক্ষমতার সমস্ত প্রকাশ প্রেমের দ্বারা পরিচালিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত তা সেই ব্যক্তিদের জন্য উপকার নিয়ে আসে, যারা তাঁকে ভালবাসে।

এ ছাড়া, প্রেম আমাদের ক্ষমতাকেও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে। কারণ, বাইবেল আমাদের বলে যে, প্রেম হল “মধুর [“দয়াশীল,” NW]” এবং “স্বার্থ চেষ্টা করে না।” (১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫) অতএব, যাদের ওপর আমাদের সামান্য কর্তৃত্ব রয়েছে, প্রেম আমাদেরকে তাদের সঙ্গে রূঢ় বা নিষ্ঠুর আচরণ করতে দেবে না। এর পরিবর্তে, আমরা অন্যদের প্রতি মর্যাদার সঙ্গে আচরণ করব এবং আমাদের চেয়ে তাদের প্রয়োজন ও অনুভূতিকে প্রথমে রাখব।—ফিলিপীয় ২:৩, ৪.

৬, ৭. (ক) ঈশ্বরীয় ভয় কী এবং কেন এই গুণ আমাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে? (খ) ঈশ্বরকে অখুশি করার ও ঈশ্বরকে ভালবাসার মধ্যে যে-সম্পর্ক রয়েছে, তা উদাহরণের মাধ্যমে বর্ণনা করুন।

প্রেম আরেকটি গুণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যা আমাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করতে পারে: ঈশ্বরীয় ভয়। এই গুণের গুরুত্ব কী? হিতোপদেশ ১৬:৬ পদ বলে, “সদাপ্রভুর ভয়ে মনুষ্য মন্দ হইতে সরিয়া যায়।” ক্ষমতার অপব্যবহার নিঃসন্দেহে মন্দ বিষয়গুলোর মধ্যে পড়ে, যেগুলো থেকে আমাদের সরে আসা উচিত। ঈশ্বরের প্রতি ভয় আমাদের সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা থেকে বিরত করে, যাদের ওপর আমাদের ক্ষমতা আছে। কেন? একটা কারণ হল, আমরা জানি যে এইরকম ব্যক্তিদের সঙ্গে আমরা যেরকম আচরণ করি, সেটার জন্য ঈশ্বরের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে। (নহিমিয় ৫:১-৭, ১৫) কিন্তু ঈশ্বরীয় ভয় আরও বেশি কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে। ‘ভয়ের’ জন্য মূল ভাষায় যে-শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, তা প্রায়ই ঈশ্বরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাকে নির্দেশ করে। এভাবে বাইবেল ভয়কে ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের সঙ্গে যুক্ত করে। (দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১২, ১৩) এই গভীর শ্রদ্ধাপূর্ণ ভয় ঈশ্বরকে অখুশি করার উপযুক্ত ভয়কে অন্তর্ভুক্ত করে—শুধু এইজন্য নয় যে, আমরা পরিণতিগুলোকে ভয় করি বরং এইজন্য যে আমরা তাঁকে ভালবাসি।

উদাহরণ হিসেবে, একটা ছোট্ট ছেলে ও তার বাবার মধ্যে যে-গঠনমূলক সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে, সেই সম্বন্ধে চিন্তা করুন। ছেলেটা তার প্রতি তার বাবার স্নেহপূর্ণ, প্রেমময় আগ্রহ বুঝতে পারে। কিন্তু একই সময়ে সে এও জানে যে, তার বাবা তার কাছ থেকে কী চান এবং সে যদি দুষ্টুমি করে, তা হলে তার বাবা তাকে শাসন করবেন। ছেলেটা তার বাবাকে আতঙ্কজনক ভয় পায় না। এর বিপরীতে, সে তার বাবাকে প্রচণ্ড ভালবাসে। এই ছোট্ট ছেলেটা সেই সমস্ত কাজ করে আনন্দ পায়, যেগুলো তার বাবা অনুমোদন করবেন। ঈশ্বরীয় ভয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক একই বিষয় খাটে। যেহেতু আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবাকে ভালবাসি, তাই আমরা এমন কিছু করতে ভয় পাই, যেগুলোর জন্য তিনি “মনঃপীড়া” পাবেন। (আদিপুস্তক ৬:৬) এর বিপরীতে, আমরা তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করতে চাই। (হিতোপদেশ ২৭:১১) সেই কারণেই আমরা আমাদের ক্ষমতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে চাই। আসুন আমরা আরও ভাল করে দেখি যে, কীভাবে আমরা তা করতে পারি।

পরিবারের মধ্যে

৮. (ক) পরিবারে স্বামীর কোন কর্তৃত্ব রয়েছে আর এটা কীভাবে অনুশীলন করতে হবে? (খ) একজন স্বামী কীভাবে দেখান যে তিনি তার স্ত্রীকে সমাদর করেন?

প্রথমে, পারিবারিক বৃত্তের কথা বিবেচনা করুন। ইফিষীয় ৫:২৩ পদ বলে যে, “স্বামী স্ত্রীর মস্তক।” একজন স্বামী কীভাবে ঈশ্বরের দেওয়া এই কর্তৃত্ব অনুশীলন করবেন? বাইবেল স্বামীদের বলে, তাদের স্ত্রীরা ‘অপেক্ষাকৃত দুর্ব্বল পাত্র বলিয়া তাহাদের সহিত জ্ঞানপূর্ব্বক বাস কর, তাহাদিগকে . . . সমাদর কর।’ (১ পিতর ৩:৭) “সমাদর” হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক বিশেষ্য পদের অর্থ হচ্ছে “গুরুত্ব, মূল্য, . . . সম্মান।” এই শব্দের অন্য রূপগুলোকে ‘দান’ ও ‘মহামূল্য’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। (প্রেরিত ২৮:১০, NW; ১ পিতর ২:৭) একজন স্বামী যিনি তার স্ত্রীকে সমাদর করেন তিনি কখনোই তাকে মারধর করবেন না; তাকে নিচু বা অবজ্ঞা করবেন না, এমন কিছু করবেন না যে, স্ত্রী নিজেকে মূল্যহীন বলে মনে করেন। বরং, তিনি তার মূল্য উপলব্ধি করেন ও তার সঙ্গে সম্মানপূর্বক আচরণ করেন। তিনি তার কথা ও কাজের মাধ্যমে—আড়ালে বা লোকেদের সামনে—দেখান যে স্ত্রী তার কাছে মহামূল্যবান। (হিতোপদেশ ৩১:২৮) এইরকম একজন স্বামী শুধু তার স্ত্রীর ভালবাসা ও সম্মানই লাভ করেন না কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করেন।

স্বামী এবং স্ত্রীরা একে অন্যের প্রতি ভালবাসা ও সম্মানের সঙ্গে আচরণ করে সঠিকভাবে তাদের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে

৯. (ক) পরিবারে স্ত্রীদের কোন ক্ষমতা রয়েছে? (খ) কী একজন স্ত্রীকে তার স্বামীকে সমর্থন করার জন্য তার দক্ষতাগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে এবং এর ফল কী হয়?

স্ত্রীদেরও পরিবারে কিছুটা ক্ষমতা রয়েছে। বাইবেল সেই সমস্ত ধার্মিক নারীর সম্বন্ধে বলে, যারা সঠিক মস্তকপদের কাঠামোর মধ্যে থেকে তাদের স্বামীদের গঠনমূলকভাবে প্রভাবিত করতে বা ভুল বিচার এড়ানোর জন্য তাদেরকে সাহায্য করতে পদক্ষেপ নিয়েছিল। (আদিপুস্তক ২১:৯-১২; ২৭:৪৬-২৮:২) একজন স্ত্রীর হয়তো তার স্বামীর চেয়ে বেশি বুদ্ধি থাকতে পারে অথবা তার হয়তো অন্য দক্ষতাগুলো থাকতে পারে, যা তার স্বামীর নেই। তবুও, তার স্বামীকে “গভীর সম্মান” (NW) করতে হবে ও “যেমন প্রভুর” তেমনই তার প্রতি “বশীভূতা” হতে হবে। (ইফিষীয় ৫:২২, ৩৩) ঈশ্বরকে খুশি করার লক্ষ্য নিয়ে চিন্তা করা, একজন স্ত্রীকে তার দক্ষতাগুলো তার স্বামীকে ছোট বা তার ওপর কর্তৃত্ব করার পরিবর্তে তাকে সমর্থন করার জন্য ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। এইরকম একজন ‘বিজ্ঞ স্ত্রী’ পরিবারকে গেঁথে তোলার জন্য তার স্বামীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করেন। তা করে তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখেন।—হিতোপদেশ ১৪:১.

১০. (ক) ঈশ্বর বাবামাদের কোন কর্তৃত্ব দিয়েছেন? (খ) ‘শাসন’ শব্দের মানে কী এবং এটা কীভাবে করা উচিত? (এ ছাড়া, পাদটীকাও দেখুন।)

১০ বাবামাদেরও কর্তৃত্ব রয়েছে, যা ঈশ্বর তাদের দিয়েছেন।। বাইবেল পরামর্শ দেয়: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।” (ইফিষীয় ৬:৪) বাইবেলে, ‘শাসন’ শব্দটার মানে হতে পারে, “লালনপালন করা, প্রশিক্ষণ দেওয়া, শিক্ষা দেওয়া।” সন্তানদের শাসন দরকার; তারা সুস্পষ্ট নির্দেশনা, সীমারেখা ও গণ্ডির মধ্যে থেকে উন্নতি করে। বাইবেল এইরকম শাসন বা শিক্ষাকে প্রেমের সঙ্গে সংযুক্ত করে। (হিতোপদেশ ১৩:২৪) অতএব, “শাসন-দণ্ড” কখনোই মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিকর হওয়া উচিত নয়। * (হিতোপদেশ ২২:১৫; ২৯:১৫) ভালবাসাহীন অনমনীয় বা কঠোর শাসন হল, পিতামাতার কর্তৃত্বের অপব্যবহার এবং তা সন্তানের মনকে ভেঙে দিতে পারে। (কলসীয় ৩:২১) অন্যদিকে, সঠিকভাবে করা ভারসাম্যপূর্ণ শাসন সন্তানদের মধ্যে এই অনুভূতি জাগিয়ে তোলে যে, বাবামা তাদের ভালবাসে এবং তারা কী ধরনের ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠছে, সেই সম্বন্ধে তারা আগ্রহী।

১১. সন্তানেরা কীভাবে তাদের ক্ষমতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে?

১১ সন্তানদের বিষয়ে কী বলা যায়? তারা কীভাবে তাদের ক্ষমতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে? হিতোপদেশ ২০:২৯ পদ বলে: “যুবকদের বলই তাহাদের শোভা।” যুবক-যুবতীদের জন্য তাদের শক্তি ও বলকে আমাদের “সৃষ্টিকর্ত্তাকে” সেবা করার জন্য ব্যবহার করার চেয়ে ভাল আর কোনো উপায় নেই। (উপদেশক ১২:১) যুবক-যুবতীদের মনে রাখা উচিত যে তাদের কাজগুলো তাদের বাবামাদের অনুভূতিকে প্রভাবিত করতে পারে। (হিতোপদেশ ২৩:২৪, ২৫) সন্তানেরা যখন তাদের ঈশ্বর ভয়শীল বাবামাদের বাধ্য থাকে ও সঠিক পথে চলে, তখন তারা তাদের বাবামাদের হৃদয় আনন্দিত করে। (ইফিষীয় ৬:১) এইরকম আচরণ “প্রভুতে তুষ্টিজনক।”—কলসীয় ৩:২০.

মণ্ডলীর মধ্যে

১২, ১৩. (ক) প্রাচীনদের মণ্ডলীতে তাদের কর্তৃত্বকে কোন দৃষ্টিতে দেখা উচিত? (খ) উদাহরণের মাধ্যমে বর্ণনা করুন যে, প্রাচীনদের কেন পালকে কোমলভাবে পালন করা উচিত।

১২ যিহোবা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অধ্যক্ষদের দিয়েছেন। (ইব্রীয় ১৩:১৭) এই যোগ্য পুরুষদের তাদের ঈশ্বরদত্ত কর্তৃত্বকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা জোগাতে এবং পালের মঙ্গলে অবদান রাখতে ব্যবহার করা উচিত। তাদের প্রাচীনপদ কি সহবিশ্বাসীদের ওপর প্রভুত্ব করার অধিকার দেয়? অবশ্যই না! মণ্ডলীতে প্রাচীনদের তাদের ভূমিকা সম্বন্ধে এক ভারসাম্যপূর্ণ, নম্র দৃষ্টিভঙ্গি থাকা দরকার। (১ পিতর ৫:২, ৩) বাইবেল অধ্যক্ষদের বলে: “ঈশ্বরের সেই মণ্ডলীকে পালন কর, যাহাকে তিনি নিজ রক্ত দ্বারা ক্রয় করিয়াছেন।” (প্রেরিত ২০:২৮) পালের প্রতিটা সদস্যকে কোমলভাবে পালন করার জন্য এটাই একটা জোরালো কারণ।

১৩ আমরা হয়তো বিষয়টাকে এভাবে উদাহরণের মাধ্যমে বর্ণনা করতে পারি। একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আপনাকে একটা প্রিয় জিনিস দেখাশোনা করার জন্য বলেছেন। আপনি জানেন যে আপনার বন্ধু অনেক মূল্য দিয়ে সেই জিনিসটা কিনেছেন। আপনি কি সেটা সাবধানে ও যত্নের সঙ্গে নাড়াচাড়া করবেন না? একইভাবে, ঈশ্বর প্রাচীনদের প্রকৃতই এক মূল্যবান সম্পদ দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়েছেন, যা হল মণ্ডলী আর যেটার সদস্যরা মেষের মতো। (যোহন ২১:১৬, ১৭) যিহোবার মেষেরা তাঁর কাছে প্রিয়—এতই প্রিয় যে তিনি তাঁর একজাত পুত্র, যিশু খ্রিস্টের মূল্যবান রক্ত দিয়ে তাদের ক্রয় করেছেন। যিহোবা তাঁর মেষদের জন্য এর চেয়ে উচ্চমূল্য আর দিতে পারতেন না। নম্র প্রাচীনরা তা মনে রাখে এবং সেই অনুযায়ী যিহোবার মেষদের সঙ্গে আচরণ করে।

“জিহ্বার অধীন”

১৪. জিহ্বার কোন ক্ষমতা রয়েছে?

১৪ বাইবেল বলে যে, “মরণ ও জীবন জিহ্বার অধীন।” (হিতোপদেশ ১৮:২১) বাস্তবিকপক্ষেই, জিহ্বা অনেক বেশি ক্ষতি করতে পারে। আমাদের মধ্যে এমন কে আছেন যিনি কারও এক বিবেচনাহীন বা এমনকি অবজ্ঞাপূর্ণ মন্তব্যের কারণে ব্যথা পাননি? কিন্তু ব্যথা উপশম করার ক্ষমতাও জিহ্বার রয়েছে। হিতোপদেশ ১২:১৮ পদ বলে যে, “জ্ঞানবানদের জিহ্বা স্বাস্থ্যস্বরূপ।” হ্যাঁ, উৎসাহজনক, গঠনমূলক কথা হৃদয়ে উপশমকারী, আরোগ্যকারী মলম লাগানোর মতো হতে পারে। কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন।

১৫, ১৬. অন্যদের উৎসাহিত করার জন্য কোন কোন উপায়ে আমরা আমাদের জিহ্বা ব্যবহার করতে পারি?

১৫ “বিষণ্ণদের প্রতি সান্ত্বনার বাক্য” (NW) বলতে ১ থিষলনীকীয় ৫:১৪ পদ পরামর্শ দেয়। হ্যাঁ, এমনকি যিহোবার বিশ্বস্ত দাসদেরও মাঝে মাঝে বিষণ্ণতার সঙ্গে লড়াই করতে হতে পারে। আমরা এইরকম ব্যক্তিদের কীভাবে সাহায্য করতে পারি? যিহোবার চোখে তাদের যে-মূল্য রয়েছে, তা উপলব্ধি করতে তাদের সাহায্য করার জন্য নির্দিষ্ট, অকৃত্রিম প্রশংসা করুন। তাদেরকে বাইবেলের সেই পদের জোরালো কথাগুলো বলুন, যেগুলো দেখায় যে যিহোবা “ভগ্নচিত্তদের” ও “চূর্ণমনাদের” জন্য সত্যিই চিন্তা করেন ও তাদের ভালবাসেন। (গীতসংহিতা ৩৪:১৮) আমরা যখন অন্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আমাদের জিহ্বার ক্ষমতাকে ব্যবহার করি, তখন আমরা দেখাই যে আমরা আমাদের সমবেদনাপূর্ণ ঈশ্বরকে অনুকরণ করছি, “যিনি বিষণ্ণকে সান্ত্বনা দেন।”—২ করিন্থীয় ৭:৬, নিউ অ্যামেরিকান স্ট্যান্ডার্ড বাইবেল।

১৬ অন্যদের অতি প্রয়োজনীয় উৎসাহ দেওয়ার জন্যও আমরা আমাদের জিহ্বার ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে পারি। একজন সহবিশ্বাসীর কোনো প্রিয়জন কি মারা গিয়েছে? আমাদের আগ্রহ ও চিন্তা প্রকাশ পায় এমন সহানুভূতিপূর্ণ কথা দুঃখী হৃদয়কে সান্ত্বনা দিতে পারে। একজন বৃদ্ধ ভাই বা বোন কি নিজেকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন? উপলব্ধিপূর্ণ কথা বয়স্কদের আশ্বাস দিতে পারে যে, তাদের মূল্য রয়েছে ও তাদের উপলব্ধি করা হয়। কেউ কি দীর্ঘস্থায়ী কোনো রোগের সঙ্গে লড়াই করছেন? ফোনে বা সামনাসামনি দয়াপূর্ণ কথাবার্তা অসুস্থ ব্যক্তির মানসিক অবস্থাকে চাঙ্গা করে তুলতে পারে। আমাদের সৃষ্টিকর্তা কতই না খুশি হন, যখন আমরা কথা বলার শক্তিকে “গাঁথিয়া তুলিবার জন্য সদালাপ” করতে ব্যবহার করি!—ইফিষীয় ৪:২৯.

সুসমাচার জানানো—আমাদের ক্ষমতাকে ব্যবহার করার এক সর্বোত্তম উপায়

১৭. অন্যদের উপকারের জন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে আমরা আমাদের জিহ্বাকে ব্যবহার করতে পারি আর আমাদের কেন তা করা উচিত?

১৭ আমাদের জিহ্বার ক্ষমতাকে ব্যবহার করার জন্য, অন্যদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার বলার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ উপায় আর নেই। হিতোপদেশ ৩:২৭ পদ বলে, “যাহাদের মঙ্গল করা উচিত, তাহাদের মঙ্গল করিতে অস্বীকার করিও না, যখন তাহা করিবার ক্ষমতা তোমার হাতে থাকে।” অন্যদের কাছে জীবনরক্ষাকারী সুসমাচার বলার বাধ্যবাধকতা আমাদের রয়েছে। যিহোবা উদারভাবে আমাদের যে-জরুরি বার্তা দিয়েছেন, তা নিজেদের কাছে রেখে দেওয়া ঠিক হবে না। (১ করিন্থীয় ৯:১৬, ২২) কিন্তু এই কাজে আমরা কতখানি অংশ নিই বলে যিহোবা আমাদের কাছ থেকে আশা করেন?

আমাদের “সমস্ত শক্তি দিয়া” যিহোবাকে সেবা করা

১৮. যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী আশা করেন?

১৮ যিহোবার প্রতি আমাদের ভালবাসা আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় পূর্ণরূপে অংশ নিতে পরিচালিত করে। এই বিষয়ে যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী আশা করেন? এমন কিছু, যা আমাদের জীবনের পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আমরা সকলে দিতে পারি: “যাহা কিছু কর, প্রাণের সহিত কার্য্য কর, মনুষ্যের কর্ম্ম নয়, কিন্তু প্রভুরই কর্ম্ম বলিয়া কর।” (কলসীয় ৩:২৩) সর্বশ্রেষ্ঠ আজ্ঞা উল্লেখ করার সময় যিশু বলেছিলেন: “তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত মন ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে [“যিহোবাকে,” NW] প্রেম করিবে।” (মার্ক ১২:৩০) হ্যাঁ, যিহোবা আমাদের প্রত্যেকের কাছে আশা করেন যে, আমরা তাঁকে সমস্ত প্রাণ দিয়ে ভালবাসব ও তাঁর সেবা করব।

১৯, ২০. (ক) প্রাণ যেহেতু হৃদয়, মন ও শক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে, তা হলে মার্ক ১২:৩০ পদে কেন এই বিষয়গুলোকে উল্লেখ করা হয়েছে? (খ) সমস্ত প্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করার মানে কী?

১৯ সমস্ত প্রাণ দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করার মানে কী? প্রাণ বলতে সমস্ত শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্য সহ সম্পূর্ণ ব্যক্তিকে নির্দেশ করে। প্রাণ যেহেতু হৃদয়, মন ও শক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে, তা হলে মার্ক ১২:৩০ পদে কেন এই বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয়েছে? একটা দৃষ্টান্ত বিবেচনা করুন। বাইবেলের সময়ে, একজন ব্যক্তি নিজেকে (নিজের প্রাণকে) দাসত্বে বিক্রি করে দিতে পারত। কিন্তু, দাস হয়তো সমস্ত হৃদয় দিয়ে তার প্রভুর সেবা করত না; সে হয়তো তার সম্পূর্ণ শক্তি বা তার সম্পূর্ণ মানসিক সামর্থ্যগুলো তার মালিকের আয় বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করত না। (কলসীয় ৩:২২) তাই, স্পষ্টতই যিশু এগুলো উল্লেখ করেছিলেন এই বিষয়ের ওপর জোর দেওয়ার জন্য যে, ঈশ্বরের সেবায় আমাদের কোনো কিছুই রেখে দেওয়া উচিত নয়। সমস্ত প্রাণ দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করার মানে, তাঁর সেবায় আমাদের বল ও কর্মশক্তি ব্যবহার করে যতখানি সম্ভব নিজেদের উজাড় করে দেওয়া।

২০ সমস্ত প্রাণ দিয়ে সেবা করার মানে কি আমাদের সকলের পরিচর্যায় একই পরিমাণ সময় ও কর্মশক্তি ব্যবহার করতে হবে? সেটা বলতে গেলে অসম্ভব কারণ একজন ব্যক্তির চেয়ে অন্য ব্যক্তির পরিস্থিতি ও সামর্থ্য ভিন্ন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, উত্তম স্বাস্থ্য ও শারীরিক ক্ষমতা সহ একজন যুবক বা যুবতী হয়তো সেই ব্যক্তির তুলনায় প্রচারে বেশি সময় দিতে পারে, যার শক্তি বৃদ্ধ বয়সের কারণে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। একজন অবিবাহিত ব্যক্তি, যিনি পারিবারিক কর্তব্যগুলো থেকে মুক্ত, তিনি হয়তো এমন ব্যক্তির চেয়ে বেশি কিছু করতে পারেন, যার পরিবারের যত্ন নিতে হয়। আমাদের যদি এমন শক্তি ও পরিস্থিতি থাকে, যা আমাদের পরিচর্যায় বেশি কিছু করতে সমর্থ করে, তা হলে আমাদের কতই না আনন্দিত হওয়া উচিত! তবে আমরা অবশ্যই সমালোচনামূলক মনোভাব রাখতে চাইব না, এই বিষয়ে অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করব না। (রোমীয় ১৪:১০-১২) বরং, আমরা আমাদের শক্তিকে অন্যদের উৎসাহিত করার জন্য ব্যবহার করতে চাই।

২১. আমাদের ক্ষমতা ব্যবহার করার সবচেয়ে ভাল ও গুরুত্বপূর্ণ উপায় কী?

২১ যিহোবা তাঁর ক্ষমতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছেন। অসিদ্ধ মানুষ হিসেবে আমরা আমাদের সাধ্যমতো তাঁকে অনুকরণ করতে চাই। যাদের ওপর আমাদের কিছুটা কর্তৃত্ব রয়েছে, তাদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করে আমরা আমাদের ক্ষমতা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি। এ ছাড়া, যিহোবা আমাদের যে-জীবনরক্ষাকারী প্রচার কাজ সম্পন্ন করতে দিয়েছেন, তা আমরা সমস্ত প্রাণ দিয়ে করতে চাই। (রোমীয় ১০:১৩, ১৪) মনে রাখবেন যে, যিহোবা খুশি হন, যখন আপনি—আপনার প্রাণ—আপনার সাধ্যমতো করেন। এইরকম একজন উপলব্ধিপূর্ণ ও প্রেমময় ঈশ্বরের সেবায় আপনার যথাসাধ্য করার জন্য আপনার হৃদয় কি আপনাকে প্রেরণা দেয় না? আপনার ক্ষমতাকে ব্যবহার করার জন্য এর চেয়ে ভাল বা গুরুত্বপূর্ণ আর কোনো উপায় নেই।

^ অনু. 10 বাইবেলের সময়ে, ‘দণ্ডের’ জন্য ব্যবহৃত ইব্রীয় শব্দের মানে ছিল লাঠি বা ছড়ি, যা একজন মেষপালক তার মেষদের সঠিক পথে চালানোর জন্য ব্যবহার করতেন। (গীতসংহিতা ২৩:৪) একইভাবে, বাবামার কর্তৃত্বের ‘দণ্ড’ কঠোর বা পাশবিক শাস্তিকে নয় বরং প্রেমময় পরিচালনাকে নির্দেশ করে।