সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ১৬

ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমনের ক্ষেত্রে ‘ন্যায়বিচার অনুশীলন করুন’

ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমনের ক্ষেত্রে ‘ন্যায়বিচার অনুশীলন করুন’

১-৩. (ক) কেন আমরা যিহোবার প্রতি ঋণী? (খ) আমাদের প্রেমময় উদ্ধারকর্তা আমাদের কাছ থেকে কী চান?

কল্পনা করুন যে, ডুবে যাচ্ছে এমন একটা জাহাজে আটকা পড়েছেন। ঠিক যখন আপনি চিন্তা করছেন যে, আর কোনো আশা নেই, তখনই একজন উদ্ধারকর্তা আসেন ও আপনাকে নিরাপদ জায়গায় টেনে তোলেন। আপনি কতই না স্বস্তি অনুভব করেন, যখন আপনার উদ্ধারকর্তা আপনাকে বিপদ থেকে দূরে নিয়ে যান এবং বলেন: “আপনি এখন নিরাপদ”! আপনি কি সেই ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞ হবেন না? সত্যি বলতে কী, আপনি আপনার জীবনের জন্য তার কাছে ঋণী থাকবেন।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই উদাহরণটা যিহোবা আমাদের জন্য যা করেছেন, তা বর্ণনা করে। কোনো সন্দেহ নেই যে, আমরা তাঁর কাছে ঋণী। কারণ, তিনি আমাদের জন্য মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা করেছেন আর এর মাধ্যমে পাপ ও মৃত্যুর নিষ্ঠুর নিয়ন্ত্রণ থেকে আমাদের উদ্ধার সম্ভব করেছেন। আমরা এটা জেনে নিরাপদ বোধ করি যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সেই মহামূল্যবান বলিদানে বিশ্বাস অনুশীলন করি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পাপ ক্ষমা হয় এবং আমাদের অনন্ত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত থাকে। (১ যোহন ১:৭; ৪:৯) ১৪ অধ্যায়ে আমরা যেমন দেখেছি যে, মুক্তির মূল্য যিহোবার প্রেম ও ন্যায়বিচারের এক শ্রেষ্ঠ অভিব্যক্তি। আমাদের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত?

আমাদের প্রেমময় উদ্ধারকর্তা আমাদের কাছ থেকে কী চান, তা বিবেচনা করা উপযুক্ত। ভাববাদী মীখার মাধ্যমে যিহোবা বলেন: “হে মনুষ্য, যাহা ভাল, তাহা তিনি তোমাকে জানাইয়াছেন; বস্তুতঃ ন্যায্য আচরণ, দয়ায় অনুরাগ ও নম্রভাবে [“ন্যায়বিচার অনুশীলন করা, দয়া ভালবাসা ও বিনয়ের সঙ্গে,” NW] তোমার ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন, ইহা ব্যতিরেকে সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] তোমার কাছে আর কিসের অনুসন্ধান করেন?” (মীখা ৬:৮) লক্ষ করুন যে, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যে-বিষয়গুলো চান সেগুলোর মধ্যে একটা হল আমরা যেন ‘ন্যায়বিচার অনুশীলন করি।’ কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

‘প্রকৃত ধার্ম্মিকতা’ অনুধাবন করা

৪. কীভাবে আমরা জানি যে, যিহোবা আমাদের কাছে আশা করেন যেন আমরা তাঁর ধার্মিক মানগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করি?

যিহোবা আশা করেন যে, আমরা তাঁর ভাল-মন্দ সম্বন্ধীয় মান অনুযায়ী জীবনযাপন করব। যেহেতু তাঁর মানগুলো ন্যায্য ও ধার্মিক, তাই আমরা যখন সেগুলো মেনে চলি তখন ন্যায়বিচার ও ধার্মিকর্তা অনুধাবন করছি। যিশাইয় ১:১৭ পদ বলে, “সদাচরণ শিক্ষা কর, ন্যায়বিচারের অনুশীলন কর।” ঈশ্বরের বাক্য আমাদের “ধর্ম্মের অনুশীলন” করার জন্য উৎসাহিত করে। (সফনিয় ২:৩) এ ছাড়া, এটা আমাদের বলে, “সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান কর, যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় . . . ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।” (ইফিষীয় ৪:২৪) সত্য বা প্রকৃত ধার্মিকতা—প্রকৃত ন্যায়বিচার—দৌরাত্ম্য, অশুচিতা ও অনৈতিকতা পরিহার করে কারণ এগুলো পবিত্র বিষয়কে কলুষিত করে।—গীতসংহিতা ১১:৫; ইফিষীয় ৫:৩-৫.

৫, ৬. (ক) যিহোবার মানগুলো মেনে চলা আমাদের জন্য কেন দুর্বহ বোঝা নয়? (খ) কীভাবে বাইবেল দেখায় যে, ধার্মিকতা অনুধাবন করা এক চলমান প্রক্রিয়া?

যিহোবার ধার্মিক মানগুলো মেনে চলা কি আমাদের জন্য এক দুর্বহ বোঝাস্বরূপ? না। যে-হৃদয় যিহোবার নিকটবর্তী, তা তাঁর চাহিদাগুলোকে দুর্বহ বোঝা বলে মনে করে না। যেহেতু আমরা আমাদের ঈশ্বরকে এবং তিনি যা কিছু প্রতিনিধিত্ব করেন, সেই সমস্তকিছু ভালবাসি, তাই আমরা এমনভাবে জীবনযাপন করতে চাই, যা তাঁকে খুশি করে। (১ যোহন ৫:৩) মনে করে দেখুন যে, যিহোবা “ধর্ম্মকর্ম্মই ভালবাসেন।” (গীতসংহিতা ১১:৭) আমরা যদি সত্যিই ঈশ্বরের ন্যায়বিচার বা ধার্মিকতাকে অনুকরণ করতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই যিহোবা যা কিছু ভালবাসেন, সেগুলোকে ভালবাসতে এবং তিনি যা কিছু ঘৃণা করেন সেগুলোকে ঘৃণা করতে হবে।—গীতসংহিতা ৯৭:১০.

অসিদ্ধ মানুষদের পক্ষে ধার্মিকতা অনুধাবন করা সহজ নয়। আমাদের পাপপূর্ণ অভ্যাসগুলো সহ পুরোনো ব্যক্তিত্বকে খুলে ফেলতে এবং নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করতে হবে। বাইবেল বলে যে, নতুন ব্যক্তিত্ব তত্ত্বজ্ঞান বা সঠিক জ্ঞানের মাধ্যমে “নূতনীকৃত হইতেছে।” (কলসীয় ৩:৯, ১০) “নূতনীকৃত হইতেছে” শব্দগুলো ইঙ্গিত করে যে, নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করা হল এক চলমান প্রক্রিয়া, যেজন্য একজনের অধ্যবসায়ী প্রচেষ্টার দরকার। যা ভাল তা করার জন্য আমরা যত কঠোর চেষ্টাই করি না কেন, এমন সময় আসে যখন আমাদের পাপী স্বভাবের কারণে আমরা কথায়, কাজে বা চিন্তায় অন্যায় করে ফেলি।—রোমীয় ৭:১৪-২০; যাকোব ৩:২.

৭. ধার্মিকতা অনুধাবনের চেষ্টায় যে-বাধাগুলো আসে, সেগুলোকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

ধার্মিকতা অনুধাবনের চেষ্টায় যে-বাধাগুলো আসে, সেগুলোকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত? অবশ্যই, আমরা পাপের গুরুতর অবস্থাকে খাটো করে দেখব না। একই সময়ে, আমরা কখনোই হাল ছেড়ে দেব না এই ভেবে যে, আমাদের ত্রুটিগুলো যিহোবাকে সেবা করার ক্ষেত্রে আমাদের অযোগ্য করে তোলে। আমাদের সদয় ঈশ্বর অকপটভাবে অনুতপ্ত ব্যক্তিদের তাঁর অনুগ্রহে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছেন। প্রেরিত যোহনের আশ্বাসদায়ক কথাগুলো বিবেচনা করুন: “তোমাদিগকে এই সকল লিখিতেছি, যেন তোমরা পাপ না কর।” কিন্তু এরপর তিনি আরও বলেছিলেন: “যদি কেহ [উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া অসিদ্ধতার কারণে] পাপ করে, তবে পিতার কাছে আমাদের এক সহায় আছেন, তিনি ধার্ম্মিক যীশু খ্রীষ্ট।” (১ যোহন ২:১) হ্যাঁ, যিহোবা যিশুর মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা করেছেন, যাতে করে আমরা আমাদের পাপী স্বভাব সত্ত্বেও, তাঁকে গ্রহণযোগ্যভাবে সেবা করতে পারি। এটা কি যিহোবাকে খুশি করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করতে চাওয়ার মনোভাব রাখতে পরিচালিত করে না?

সুসমাচার এবং ঐশিক ন্যায়বিচার

৮, ৯. কীভাবে সুসমাচার ঘোষণা যিহোবার ন্যায়বিচার প্রদর্শন করে?

আমরা অন্যদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচারে পুরোপুরি অংশ নিয়ে ন্যায়বিচার অনুশীলন করতে পারি, বাস্তবিকপক্ষে ঐশিক ন্যায়বিচার অনুকরণ করতে পারি। যিহোবার ন্যায়বিচার ও সুসমাচারের মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে?

যিহোবা প্রথমে সতর্কবাণী ঘোষণা না করিয়ে এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ আনবেন না। শেষকালে কী ঘটবে সেই সম্বন্ধে যিশু তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীতে বলেছিলেন: “অগ্রে সর্ব্বজাতির কাছে সুসমাচার প্রচারিত হওয়া আবশ্যক।” (মার্ক ১৩:১০; মথি ২৪:৩) “অগ্রে” শব্দটার ব্যবহার ইঙ্গিত করে যে, বিশ্বব্যাপী প্রচার কাজ হওয়ার পরে অন্য ঘটনাগুলো ঘটবে। সেই ঘটনাগুলোর মধ্যে ভবিষ্যদ্বাণীকৃত মহাক্লেশ রয়েছে, যেটার মানে হবে দুষ্টদের জন্য ধ্বংস এবং ধার্মিক নতুন জগতের জন্য পথ প্রস্তুত করা। (মথি ২৪:১৪, ২১, ২২) কেউ কখনোই ন্যায়সংগতভাবে যিহোবাকে এই অভিযোগ করতে পারবে না যে, দুষ্টদের প্রতি তিনি অন্যায় করছেন। সতর্কবাণী ঘোষণা করানোর মাধ্যমে, তিনি এই ব্যক্তিদের তাদের জীবনধারা পরিবর্তন করার আর এভাবে ধ্বংস থেকে রক্ষা পাবার জন্য যথেষ্ট সুযোগ দিচ্ছেন।—যোনা ৩:১-১০.

আমরা যখন পক্ষপাতহীনভাবে অন্যদের কাছে সুসমাচার প্রচার করি, তখন ঈশ্বরের ন্যায়বিচার প্রদর্শন করি

১০, ১১. কীভাবে আমাদের সুসমাচার প্রচারে অংশ নেওয়া ঈশ্বরীয় ন্যায়বিচার প্রতিফলিত করে?

১০ আমাদের সুসমাচার প্রচার কীভাবে ঈশ্বরীয় ন্যায়বিচার প্রতিফলিত করে? প্রথমত, অন্যদের পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করার জন্য আমরা যা করতে পারি, তা করা সঠিক। ডুবে যাচ্ছে এমন এক জাহাজ থেকে উদ্বার পাওয়ার দৃষ্টান্তটা আবারও বিবেচনা করুন। জীবনরক্ষাকারী নৌকায় বিপদ মুক্ত হয়ে, আপনি নিশ্চয়ই তাদের সাহায্য করতে চাইবেন, যারা এখনও জলের মধ্যে রয়েছে। একইভাবে, আমাদের তাদের প্রতি এক নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে, যারা এই দুষ্ট জগতের ‘জলে’ এখনও সংগ্রাম করছে। এটা ঠিক যে, অনেকে আমাদের বার্তা প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু যিহোবা যতক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য ধরেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের “মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে” এবং এভাবে পরিত্রাণের জন্য যোগ্য হতে সুযোগ করে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের রয়েছে।—২ পিতর ৩:৯.

১১ আমরা যাদের দেখা পাই, তাদের সকলের কাছে সুসমাচার প্রচার করার মাধ্যমে আমরা অন্য আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে ন্যায়বিচার প্রদর্শন করি: আমরা পক্ষপাতহীনতা দেখাই। মনে করে দেখুন যে, “ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” NW] করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচারণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।” (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫) আমরা যদি তাঁর ন্যায়বিচার অনুকরণ করতে চাই, তা হলে আমরা লোকেদের সম্বন্ধে আগে থেকেই প্রতিকূল ধারণা পোষণ করব না। এর পরিবর্তে, অন্যদের বর্ণ, সামাজিক মর্যাদা বা অর্থনৈতিক অবস্থা যাই হোক না কেন, তাদের কাছে আমাদের সুসমাচার প্রচার করা উচিত। এভাবে আমরা যারা শুনবে, তাদের সবাইকে সুসমাচার শোনার ও তাতে সাড়া দেওয়ার সুযোগ দিই।—রোমীয় ১০:১১-১৩.

আমরা অন্যদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করি

১২, ১৩. (ক) কেন আমাদের তাড়াহুড়ো করে অন্যদের বিচার করা উচিত নয়? (খ) “বিচার করিও না” এবং “দোষী করিও না” যিশুর এই পরামর্শের মানে কী? (পাদটীকাও দেখুন।)

১২ এ ছাড়া, যিহোবা আমাদের সঙ্গে যেরকম আচরণ করেন, অন্যদের সঙ্গে সেরকম আচরণ করেও আমরা ন্যায়বিচার অনুশীলন করতে পারি। অন্যদের বিচার করা, তাদের ত্রুটিগুলো নিয়ে সমালোচনা করা ও তাদের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সন্দেহ করা খুবই সহজ। কিন্তু আমাদের মধ্যে কে চাইব যে, যিহোবা আমাদের উদ্দেশ্য এবং ত্রুটিগুলো নির্দয়ভাবে যাচাই করুক? যিহোবা আমাদের সঙ্গে এরকম আচরণ করেন না। গীতরচক বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তুমি যদি অপরাধ সকল ধর, তবে, হে প্রভু, কে দাঁড়াইতে পারিবে?” (গীতসংহিতা ১৩০:৩) আমরা কি এতে কৃতজ্ঞ নই যে, আমাদের ন্যায়পরায়ণ এবং করুণাময় ঈশ্বর আমাদের ত্রুটিগুলো ধরে বসে থাকেন না? (গীতসংহিতা ১০৩:৮-১০) তা হলে, অন্যদের সঙ্গে আমাদের কেমন আচরণ করা উচিত?

১৩ আমরা যদি ঈশ্বরের ন্যায়বিচারের করুণাপূর্ণ বৈশিষ্ট্যকে উপলব্ধি করি, তা হলে আমরা তাড়াহুড়ো করে সেই বিষয়গুলো নিয়ে অন্যদের বিচার করব না, যেগুলো নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই বা যেগুলো খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। যিশু তাঁর পর্বতে দত্ত উপদেশে সতর্ক করেছিলেন: “তোমরা বিচার করিও না, যেন বিচারিত না হও।” (মথি ৭:১) লূকের বিবরণ অনুযায়ী, যিশু আরও বলেছিলেন: “দোষী করিও না, তাহাতে দোষীকৃত হইবে না।” * (লূক ৬:৩৭) যিশু দেখিয়েছিলেন যে, অসিদ্ধ মানুষদের বিচার করার প্রবণতা সম্বন্ধে তিনি জানতেন। তাঁর শ্রোতাদের কারও যদি অন্যদের কঠোরভাবে বিচার করার অভ্যাস থাকত, তা হলে সেটা তাদের বন্ধ করতে হতো।

১৪. কোন কোন কারণে আমরা অন্যের ‘বিচার করিব’ না?

১৪ কেন আমরা অন্যদের ‘বিচার করিব’ না? একটা কারণ হল যে, আমাদের কর্তৃত্ব সীমিত। শিষ্য যাকোব আমাদের মনে করিয়ে দেন: “একমাত্র ব্যবস্থাপক ও বিচারকর্ত্তা আছেন,” তিনি যিহোবা। তাই যাকোব নির্দিষ্টভাবে জিজ্ঞেস করেন: “তুমি কে যে প্রতিবাসীর বিচার কর?” (যাকোব ৪:১২; রোমীয় ১৪:১-৪) এ ছাড়া, আমাদের পাপপূর্ণ স্বভাব খুব সহজেই আমাদের বিচারকে অন্যায্য করতে পারে। মনোভাব ও উদ্দেশ্যগুলো—যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত প্রতিকূল ধারণা, ক্ষতিকর গর্ব, হিংসা এবং আত্মধার্মিকতা—সহমানবদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে বিকৃত করতে পারে। আমাদের আরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং এই বিষয়গুলো গভীরভাবে চিন্তা করার দ্বারা আমাদের তাড়াহুড়ো করে অন্যদের দোষ খোঁজা থেকে বিরত থাকা উচিত। আমরা হৃদয় পড়তে জানি না; অথবা আমরা অন্যদের ব্যক্তিগত পরিস্থিতি সম্বন্ধেও জানি না। তা হলে, সহবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্য খারাপ বলার বা ঈশ্বরের সেবায় তাদের প্রচেষ্টা সম্বন্ধে সমালোচনা করার আমরা কে? আমাদের ভাইবোনদের ত্রুটিগুলোর দিকে মনোযোগ না দিয়ে তাদের ভাল দিকগুলো দেখার মাধ্যমে যিহোবাকে অনুকরণ করা কতই না ভাল!

১৫. ঈশ্বরের উপাসকদের মধ্যে কোন ধরনের ভাষা ও আচরণের কোনো জায়গা নেই এবং কেন?

১৫ আমাদের পরিবারের সদস্যদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? দুঃখের বিষয় হল যে, আজকের জগতে সবচেয়ে কঠোর বিচারগুলোর কয়েকটা সেখানে ঘটে থাকে, যেটা হওয়া উচিত শান্তির এক আশ্রয়স্থল আর তা হল ঘর। খারাপ ব্যবহার করে এমন স্বামী, স্ত্রী বা বাবামাদের কথা প্রায়ই শোনা যায়, যারা সবসময় গালিগালাজ বা মারধর করে তাদের পরিবারের সদস্যদের “শাস্তি দেয়।” কিন্তু ঈশ্বরের উপাসকদের মধ্যে খারাপ ভাষা, তিক্ত বিদ্রূপ এবং মারধরের কোনো জায়গা নেই। (ইফিষীয় ৪:২৯, ৩১; ৫:৩৩; ৬:৪) “বিচার করিও না” এবং “দোষী করিও না,” যিশুর এই পরামর্শ যখন আমরা ঘরে থাকি, তখন সেটার প্রয়োগ বাদ হয়ে যায় না। মনে করে দেখুন যে, ন্যায়বিচার অনুশীলনের অন্তর্ভুক্ত যিহোবা আমাদের সঙ্গে যেরকম আচরণ করেন অন্যদের সঙ্গে সেরকম আচরণ করা। আর আমাদের ঈশ্বর কখনোই আমাদের সঙ্গে রূঢ় বা নির্মম আচরণ করেন না। বরং, যারা তাঁকে ভালবাসে তাদের প্রতি তিনি “স্নেহপূর্ণ।” (যাকোব ৫:১১) আমাদের অনুকরণের জন্য কতই না চমৎকার এক উদাহরণ!

প্রাচীনরা ‘ন্যায়ের’ জন্য সেবা করে

১৬, ১৭. (ক) যিহোবা প্রাচীনদের কাছ থেকে কী আশা করেন? (খ) একজন পাপী ব্যক্তি যখন প্রকৃত অনুতাপ দেখাতে ব্যর্থ হয়, তখন কী করতে হবে এবং কেন?

১৬ আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব ন্যায়বিচার অনুশীলন করা কিন্তু বিশেষ করে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর প্রাচীনদের এই বিষয়ে এক দায়িত্ব রয়েছে। যিশাইয়ের দ্বারা লিপিবদ্ধ “শাসনকর্ত্তৃগণ” বা প্রাচীনদের সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বর্ণনা লক্ষ করুন: “দেখ, এক রাজা ধার্ম্মিকতায় রাজত্ব করিবেন, ও শাসনকর্ত্তৃগণ ন্যায়ে শাসন করিবেন।” (যিশাইয় ৩২:১) হ্যাঁ, যিহোবা চান যে প্রাচীনরা ন্যায়বিচার বজায় রেখে সেবা করুক। তারা কীভাবে এটা করতে পারে?

১৭ আধ্যাত্মিকভাবে যোগ্য এই ব্যক্তিরা ভালভাবে জানে যে, ন্যায়বিচার বা ধার্মিকতার জন্য মণ্ডলীকে পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। মাঝে মাঝে, প্রাচীনদের গুরুতর অন্যায় কাজের বিচার করতে হয়। তা করার সময় তারা মনে রাখে যে, ঐশিক ন্যায়বিচার যতদূর সম্ভব করুণা দেখানোর চেষ্টা করে। এভাবে তারা পাপী ব্যক্তি যাতে অনুতপ্ত হন, সেই চেষ্টা করে। কিন্তু পাপী ব্যক্তি যদি তাকে সাহায্য করার এই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও প্রকৃত অনুতাপ দেখাতে ব্যর্থ হন, তা হলে কী? সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার দেখিয়ে, যিহোবার বাক্য দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেয়: “তোমরা আপনাদের মধ্য হইতে সেই দুষ্টকে বাহির করিয়া দেও।” এর মানে হল, মণ্ডলী থেকে তাকে বের করে দেওয়া। (১ করিন্থীয় ৫:১১-১৩; ২ যোহন ৯-১১) এইরকম পদক্ষেপ নিতে প্রাচীনরা দুঃখ পায় কিন্তু তারা উপলব্ধি করে যে, মণ্ডলীর নৈতিক ও আধ্যাত্মিক পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করার জন্য এটা প্রয়োজন। এমনকি তারপরও, তারা আশা করে যে একদিন সেই পাপী ব্যক্তি তার চেতনা ফিরে পাবেন এবং মণ্ডলীতে আবার ফিরে আসবেন।—লূক ১৫:১৭, ১৮.

১৮. অন্যদের বাইবেল-ভিত্তিক পরামর্শ দেওয়ার সময় প্রাচীনরা কী মনে রাখে?

১৮ ন্যায়বিচার বজায় রেখে সেবা করার মধ্যে প্রয়োজনের সময় বাইবেল-ভিত্তিক পরামর্শ দেওয়াও অন্তর্ভুক্ত। প্রাচীনরা অবশ্যই অন্যদের ত্রুটিগুলো খোঁজার চেষ্টা করে না। অথবা তারা প্রতিটা সুযোগেই সংশোধনও করে না। কিন্তু একজন সহবিশ্বাসী হয়তো ‘সচেতন হওয়ার আগে ভুল পদক্ষেপ’ (NW) নিতে পারেন। ঐশিক ন্যায়বিচার নিষ্ঠুর বা অনুভূতিহীন নয়, তা মনে রেখে প্রাচীনরা “সেই প্রকার ব্যক্তিকে মৃদুতার আত্মায় সুস্থ [“পুনঃসমন্বয়,” NW]” করার চেষ্টা করে। (গালাতীয় ৬:১) অতএব, যে-ভুল করেছে তাকে প্রাচীনরা ভর্ৎসনা করবেন না বা কড়া ভাষায় কিছু বলবেন না। এর পরিবর্তে, প্রেমের সঙ্গে দেওয়া পরামর্শ, যাকে দেওয়া হয় তাকে উৎসাহিত করে। এমনকি যখন স্পষ্টভাবে তিরস্কার করা হয়—এক বিবেচনাহীন কাজের পরিণতিগুলো সরাসরি তুলে ধরা হয়—তখনও প্রাচীনরা মনে রাখে যে, ভুল করেছেন এমন একজন সহবিশ্বাসী যিহোবার পালের একটি মেষ। * (লূক ১৫:৭) পরামর্শ বা তিরস্কার যখন স্পষ্টভাবে প্রেমের দ্বারা চালিত হয় এবং প্রেম সহকারে দেওয়া হয়, তখন এটা যে ভুল করেছে তাকে অনেকটা পুনঃসমন্বয় করার মতোই হয়।

১৯. প্রাচীনদের কোন সিদ্ধান্তগুলো নিতে হয় এবং কীসের ওপর ভিত্তি করে তাদের এইরকম সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে?

১৯ প্রাচীনদের প্রায়ই বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা তাদের সহবিশ্বাসীদের প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাচীনরা নির্দিষ্ট সময় পর পর এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেখার জন্য মিলিত হয় যে, মণ্ডলীর অন্যান্য ভাইদের প্রাচীন বা পরিচারক দাস হিসেবে সুপারিশ করা যায় কি না। প্রাচীনরা পক্ষপাতহীন থাকার গুরুত্ব সম্বন্ধে জানে। তারা এই ধরনের নিযুক্তিগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময়, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত অনুভূতির ওপর নির্ভর না করে ঈশ্বরের চাহিদাগুলোর দ্বারা নিজেদের পরিচালিত হতে দেয়। এভাবে তারা “পূর্ব্বধারণা ব্যতিরেকে” কাজ করে, ‘পক্ষপাতের বশে কিছুই করে না।’—১ তীমথিয় ৫:২১.

২০, ২১. (ক) প্রাচীনরা কী হতে প্রাণপণ চেষ্টা করে এবং কেন? (খ) প্রাচীনরা “বিষণ্ণদের” সাহায্য করার জন্য কী করতে পারে?

২০ প্রাচীনরা অন্যভাবেও ঐশিক ন্যায়বিচার প্রয়োগ করে। প্রাচীনরা ‘ন্যায়ের’ জন্য সেবা করবে সেই ভবিষ্যদ্বাণী করার পর, যিশাইয় আরও বলেছিলেন: “যেমন বাত্যা হইতে আচ্ছাদন, ও ঝটিকা হইতে অন্তরাল, যেমন শুষ্ক স্থানে জলস্রোত ও শ্রান্তিজনক ভূমিতে কোন প্রকাণ্ড শৈলের ছায়া, এক জন মনুষ্য তদ্রূপ হইবেন।” (যিশাইয় ৩২:২) অতএব, প্রাচীনরা তাদের সহউপাসকদের জন্য সান্ত্বনা ও সতেজতার উৎস হতে প্রাণপণ চেষ্টা করে।

২১ আজকে, মন ভেঙে দেয় এমন বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হওয়ায় অনেকের উৎসাহ দরকার। প্রাচীনরা, “ক্ষীণসাহসদিগকে [“বিষণ্ণদের,” NW]” সাহায্য করার জন্য আপনারা কী করতে পারেন? (১ থিষলনীকীয় ৫:১৪) সহমর্মিতা দেখিয়ে তাদের কথা শুনুন। (যাকোব ১:১৯) তাদের হয়তো এমন কারও কাছে “মনোব্যথা” বলা দরকার, যার ওপর তারা নির্ভর করে। (হিতোপদেশ ১২:২৫) তাদের পুনরায় আশ্বাস দিন যে, যিহোবা ও সেইসঙ্গে তাদের ভাইবোনেরা তাদেরকে চায়, মূল্যবান মনে করে এবং তাদের ভালবাসে। (১ পিতর ১:২২; ৫:৬, ৭) এ ছাড়া, আপনি তাদের সঙ্গে ও তাদের জন্য প্রার্থনাও করতে পারেন। একজন প্রাচীন অন্তর থেকে তাদের জন্য প্রার্থনা করছেন, তা শোনা সবচেয়ে বেশি সান্ত্বনাদায়ক হতে পারে। (যাকোব ৫:১৪, ১৫) বিষণ্ণদের সাহায্য করার জন্য আপনার প্রেমময় প্রচেষ্টা ন্যায়বিচারক ঈশ্বরের দৃষ্টি এড়াবে না।

প্রাচীনরা যখন ভগ্নমনা ব্যক্তিদের উৎসাহ দেয়, তখন যিহোবার ন্যায়বিচার প্রতিফলিত করে

২২. কোন কোন উপায়ে আমরা যিহোবার ন্যায়বিচার অনুকরণ করতে পারি এবং এর ফল কী হয়?

২২ সত্যিই, আমরা যিহোবার ন্যায়বিচার অনুকরণ করে তাঁর আরও বেশি নিকটবর্তী হতে পারি! আমরা যখন তাঁর ধার্মিক মানগুলো তুলে ধরি, অন্যদের কাছে জীবনরক্ষাকারী সুসমাচার প্রচার করি এবং অন্যদের ত্রুটিগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার চেয়ে তাদের ভাল দিকগুলো দেখা বেছে নিই, তখন আমরা ঈশ্বরের ন্যায়বিচার প্রদর্শন করছি। প্রাচীনরা, আপনারা যখন মণ্ডলীর পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করেন, গঠনমূলক শাস্ত্রীয় পরামর্শ দেন, পক্ষপাতহীন সিদ্ধান্তগুলো নেন এবং ভগ্নমনা ব্যক্তিদের উৎসাহ দেন, তখন আপনারা ঈশ্বরের ন্যায়বিচার প্রতিফলিত করছেন। যিহোবা যখন স্বর্গ থেকে তাকান এবং তাঁর লোকেদের তাদের ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমনের ক্ষেত্রে “ন্যায়বিচার অনুশীলন” করার জন্য যথাসাধ্য করতে দেখেন, তখন তাঁর হৃদয় কতই না আনন্দিত হয়!

^ অনু. 13 “বিচার করিও না” এবং “দোষী করিও না” এই অনুবাদগুলো “বিচার করতে শুরু কোরো না” এবং “দোষ দিতে শুরু কোরো না” অভিব্যক্তিগুলোকে ইঙ্গিত করে। যাই হোক, মূল ভাষায় বাইবেল লেখকগণ এখানে (ঘটমান) বর্তমান কালে নেতিবাচক আদেশগুলো ব্যবহার করে। অতএব বর্ণিত কাজগুলো সেই সময় চলছিল কিন্তু সেগুলো বন্ধ করতে হয়েছিল।

^ অনু. 18 দ্বিতীয় তীমথিয় ৪:২ পদে, বাইবেল বলে যে প্রাচীনদের মাঝে মাঝে ‘অনুযোগ করিতে, ভর্ৎসনা করিতে, চেতনা দিতে’ হবে। “চেতনা” (প্যারাকেলিও) হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক শব্দের মানে হতে পারে, “উৎসাহ দেওয়া।” এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটা গ্রিক শব্দ প্যারাক্লিটস্‌ আইনসংক্রান্ত ব্যাপারে একজন উকিলকে বোঝাতে পারে। তাই, প্রাচীনরা যখন দৃঢ়ভাবে তিরস্কার করে, তখনও যাদের আধ্যাত্মিক সাহায্যের দরকার আছে, তাদের জন্য তারা সাহায্যকারী হয়ে থাকে।