অধ্যায় ২৭
“আঃ! তাঁহার কেমন মঙ্গলভাব!”
১, ২. ঈশ্বরের মঙ্গলভাব কতটা প্রসারিত আর এই গুণের ওপর বাইবেল কীভাবে জোর দেয়?
সূর্যাস্তের সোনালি আলোয় বসে, বহুদিনের পুরনো কয়েক জন বন্ধু মিলে বাইরে একসঙ্গে খাবার খাচ্ছে, দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে হাসছে এবং কথাবার্তা বলছে। এর থেকে অনেক দূরে, একজন কৃষক তার শস্যখেত দেখছে এবং তৃপ্তির হাসি হাসছে কারণ কালো মেঘরাশি ঘনীভূত হয়েছে আর বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা তৃষিত শস্যের ওপর পড়ছে। আবার অন্য কোথাও, এক স্বামী-স্ত্রী তাদের সন্তানের টলমল পায়ের প্রথম হাঁটা দেখে আনন্দিত হচ্ছে।
২ তারা জানুক বা না জানুক, এই সমস্ত লোকেরা একই বিষয় থেকে উপকার লাভ করছে, আর তা হল যিহোবা ঈশ্বরের মঙ্গলভাব। কিছু ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি প্রায়ই এই উক্তিটি করে থাকে, “ঈশ্বর মঙ্গলময়।” এই বিষয়ে বাইবেল আরও বেশি জোর দেয়। এটা বলে: “আঃ! তাঁহার কেমন মঙ্গলভাব!” (সখরিয় ৯:১৭, পাদটীকা) কিন্তু মনে হয় আজকে খুব কম লোকই সেই কথাগুলোর অর্থ জানে। যিহোবা ঈশ্বরের মঙ্গলভাবের সঙ্গে আসলে কী জড়িত আর ঈশ্বরের এই গুণটি আমাদের প্রত্যেককে কীভাবে প্রভাবিত করে?
ঈশ্বরের প্রেমের এক উল্লেখযোগ্য দিক
৩, ৪. মঙ্গলভাব কী আর কেন যিহোবার মঙ্গলভাবকে ঈশ্বরের প্রেমের এক অভিব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করা সর্বোত্তম?
৩ অনেক আধুনিক ভাষায়, “মঙ্গলভাব” এক সাধারণ শব্দ। কিন্তু বাইবেলে যেমন প্রকাশ করা হয়েছে যে, মঙ্গলভাব কোনোভাবেই সাধারণ নয়। প্রথমত, এটা সদ্গুণ ও নৈতিক উৎকর্ষকে নির্দেশ করে। তা হলে, এক অর্থে আমরা বলতে পারি যে মঙ্গলভাব যিহোবাতে পরিব্যাপ্ত। তাঁর সমস্ত বৈশিষ্ট্য—যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত তাঁর শক্তি, ন্যায়বিচার এবং প্রজ্ঞা—পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মঙ্গলজনক। তবুও, মঙ্গলভাবকে যিহোবার প্রেমের এক অভিব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করাই সবচেয়ে ভাল। কেন?
রোমীয় ৫:৭) আইনের চাহিদাগুলো বিশ্বস্তভাবে মেনে চলার বিষয়ে ধার্মিক ব্যক্তির ওপর নির্ভর করা যায় কিন্তু একজন ভাল বা মঙ্গলময় ব্যক্তি আরও বেশি কিছু করেন। তিনি উদ্যোগ নেন, সক্রিয়ভাবে অন্যদের উপকার করার পথ খোঁজেন। আমরা দেখব যে, সেই অর্থে যিহোবা সত্যিই মঙ্গলময়। স্পষ্টতই, এইরকম মঙ্গলভাব যিহোবার অসীম প্রেম থেকে আসে।
৪ মঙ্গলভাব হল এক সক্রিয় গুণ, যা অন্যদের জন্য করা কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। প্রেরিত পৌল দেখিয়েছিলেন যে, মানুষের মধ্যে এটা এমনকি ধার্মিকতার চেয়েও বেশি আবেদনময়। (৫-৭. কেন যিশু “সদ্গুরু” বলে সম্বোধিত হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং এর মাধ্যমে তিনি কোন গভীর সত্যকে নিশ্চিত করেছিলেন?
৫ এ ছাড়া, যিহোবা তাঁর মঙ্গলভাবেও অদ্বিতীয়। যিশুর মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে, তাঁর কাছে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে এসে একজন ব্যক্তি তাঁকে “হে সদ্গুরু” বলে সম্বোধন করেছিলেন। যিশু উত্তরে বলেছিলেন: “আমাকে সৎ কেন বলিতেছ? এক জন ব্যতিরেকে সৎ আর কেহ নাই, তিনি ঈশ্বর।” (মার্ক ১০:১৭, ১৮) এই উত্তর হয়তো আপনাকে দ্বিধান্বিত করতে পারে। কেন যিশু সেই ব্যক্তিকে শুধরে দিয়েছিলেন? যিশু কি একজন “সদ্গুরু” ছিলেন না?
৬ স্পষ্টতই, সেই ব্যক্তি “সদ্গুরু” শব্দগুলো তোষামোদ করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। যিশু বিনয়ভাবে এইরকম গৌরব তাঁর স্বর্গীয় পিতাকে দিয়েছিলেন, যিনি সর্বোচ্চ অর্থে সৎ। (হিতোপদেশ ১১:২, NW) তবে সেইসঙ্গে যিশু এক গভীর সত্যকেও নিশ্চিত করেছিলেন। যা ভাল, তা পরিমাপের একমাত্র ভিত্তি হলেন যিহোবা। ভাল-মন্দ নির্ণয় করার সার্বভৌম অধিকার একমাত্র তাঁরই রয়েছে। আদম ও হবা বিদ্রোহ করে সদ্সদ জ্ঞানদায়ক গাছের ফল খেয়ে সেই অধিকার লাভ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের বিপরীতে, যিশু নম্রভাবে মান নির্ণয়ের ভার তাঁর পিতার ওপর ছেড়ে দেন।
৭ এ ছাড়া, যিশু এও জানতেন যে যিহোবা হলেন সেই সমস্তের উৎস, যা প্রকৃতই ভাল বা মঙ্গলজনক। তিনি হলেন ‘সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বরের’ দাতা। (যাকোব ১:১৭) আসুন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে, যিহোবার মঙ্গলভাব কীভাবে তাঁর উদারতায় প্রদর্শিত হয়।
যিহোবার মঙ্গলভাবের প্রাচুর্যের প্রমাণ
৮. কীভাবে যিহোবা সমস্ত মানবজাতির প্রতি মঙ্গলভাব দেখিয়েছেন?
৮ জীবিত সকলে যিহোবার মঙ্গলভাব থেকে উপকার লাভ করেছে। গীতসংহিতা ১৪৫:৯ পদ বলে: “সদাপ্রভু সকলের পক্ষে মঙ্গলময়।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) তাঁর সর্বগুণসম্পন্ন মঙ্গলভাবের কিছু উদাহরণ কী? বাইবেল বলে: “তিনি আপনাকে সাক্ষ্যবিহীন রাখেন নাই, কেননা তিনি মঙ্গল করিতেছেন, আকাশ হইতে আপনাদিগকে বৃষ্টি এবং ফলোৎপাদক ঋতুগণ দিয়া ভক্ষ্যে ও আনন্দে আপনাদের হৃদয় পরিতৃপ্ত করিয়া আসিতেছেন।” (প্রেরিত ১৪:১৭) কোনো সুস্বাদু খাবার খাওয়ার সময় আপনার মন কি কখনও আনন্দে ভরে উঠেছিল? যিহোবা যদি তাঁর মঙ্গলভাবের কারণে প্রচুর খাদ্য উৎপাদনের জন্য পৃথিবীতে সতেজ জলচক্রের এবং ‘ফলোৎপাদক ঋতুগুলো’ তৈরি না করতেন, তা হলে কোনো খাবারই থাকত না। যিহোবা এই মঙ্গলভাব শুধু যারা তাঁকে ভালবাসে, তাদের প্রতিই নয় বরং সকলের প্রতি দেখিয়েছেন। যিশু বলেছিলেন: “তিনি ভাল মন্দ লোকেদের উপরে আপনার সূর্য্য উদিত করেন, এবং ধার্ম্মিক অধার্ম্মিকগণের উপরে জল বর্ষান।”—মথি ৫:৪৫.
যিহোবা ‘আকাশ হইতে আপনাদিগকে বৃষ্টি এবং ফলোৎপাদক ঋতুগণ’ দিচ্ছেন
৯. কীভাবে আপেল যিহোবার মঙ্গলভাব বর্ণনা করে?
৯ সূর্য, বৃষ্টি এবং ফলোৎপাদক ঋতুগুলো সবসময় কার্যরত থাকায়, অনেকেই মানবজাতির প্রতি যে-সর্বাধিক উদারতা দেখানো হয়েছে, সেটাকে হালকা করে দেখে। উদাহরণ হিসেবে, আপেলের কথা বিবেচনা করুন। পৃথিবীর সমস্ত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটা একটা সাধারণ ফল। তবুও, এটা সুন্দর, খেতে সুস্বাদু এবং সতেজতাদায়ক জলে ও অপরিহার্য পুষ্টিতে পূর্ণ। আপনি কি জানেন যে, সারা বিশ্বে প্রায় ৭,৫০০ জাতের আপেল রয়েছে, যেগুলোর রং লাল, সোনালি, হলুদ, সবুজ এবং আকার চেরির চেয়ে একটু বড় থেকে শুরু করে একটা বাতাবিলেবুর পরমগীত ২:৩) প্রতি বসন্তে আপেল গাছ থোকা থোকা ফুলে ভরে যায়; প্রতি শরতে এটা ফল উৎপাদন করে। প্রতি বছর—প্রায় ৭৫ বছর পর্যন্ত—সেই আপেল গাছ ১৯ কিলোগ্রাম ওজনের প্রায় ২০টা কার্টন পূর্ণ করার মতো ফল উৎপাদন করবে।
সমান? আপনি একটা ক্ষুদ্র আপেল বীজ হাতে নিলে এটাকে খুবই নগণ্য দেখায়। কিন্তু, এটা থেকেই সবচেয়ে চমৎকার গাছগুলোর মধ্যে একটা জন্মায়। (১০, ১১. বোধশক্তিগুলো কীভাবে ঈশ্বরের মঙ্গলভাবকে প্রদর্শন করে?
১০ যিহোবা তাঁর অসীম মঙ্গলভাবের কারণে আমাদের এমন এক শরীর দিয়েছেন, যেটা বোধশক্তি সহ “আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত,” যা কিনা তাঁর কাজগুলো বুঝতে ও সেগুলোতে আনন্দ করতে আমাদের সাহায্য করার জন্য তৈরি। (গীতসংহিতা ১৩৯:১৪) এই অধ্যায়ের শুরুতে যে-দৃশ্যগুলোর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর কথা আবারও চিন্তা করুন। কোন দৃশ্যগুলো এইরকম মুহূর্তে আনন্দ নিয়ে আসে? এক হাসিখুশি শিশুর লাল টুকটুকে গাল। খেতের ওপর অঝোরধারায় ঝরে পড়া বৃষ্টি। সূর্যাস্তের লাল, সোনালি ও বেগুনি রশ্মি। মানুষের চোখের নকশা এমনভাবে করা, যা ৩,০০,০০০-রও বেশি বিভিন্ন রং দেখতে পায়! আর আমাদের শোনার শক্তি এক প্রিয় স্বরের ওঠানামা, গাছের ভিতর দিয়ে বাতাসের গুঞ্জন, শিশুর পরমানন্দের হাসি ধরতে পারে। কেন আমরা এই দৃশ্য ও শব্দগুলো উপভোগ করতে পারি? বাইবেল বলে: “শ্রবণকারী কর্ণ ও দর্শনকারী চক্ষু, এই উভয়ই সদাপ্রভুর নির্ম্মিত।” (হিতোপদেশ ২০:১২) কিন্তু এগুলো বোধশক্তিগুলোর মধ্যে মাত্র দুটো।
১১ ঘ্রাণশক্তি হল যিহোবার মঙ্গলভাবের আরেকটা প্রমাণ। মানুষের নাক প্রায় ১০,০০০ বিভিন্ন গন্ধ পৃথক করতে পারে। শুধু কয়েকটা বিষয়ের কথা চিন্তা করুন: আপনার প্রিয় কোনো খাবার রান্না হওয়া, ফুল, ঝরা পাতা, এক উষ্ণ আগুন থেকে ওঠা সামান্য ধোঁয়া। আর আপনার স্পর্শশক্তি আপনাকে আপনার মুখে বাতাসের কোমল ছোঁয়া, প্রিয় ব্যক্তির আশ্বাসদায়ক আলিঙ্গন, আপনার হাতে এক টুকরো ফলের মসৃণতা অনুভব করতে সমর্থ করে। আর আপনি যখন ফলে একটা কামড় দেন, তখন আপনার আস্বাদন শক্তি কার্যকর হয়। স্বাদ ও গন্ধ একত্রে আপনাকে উদ্দীপিত করে, যখন স্বাদ নির্ণয়কারী গ্রন্থিগুলো ফলের জটিল রাসায়নিক গঠনের দ্বারা সৃষ্ট অতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলো আবিষ্কার করে। হ্যাঁ, যিহোবার সম্বন্ধে এই ঘোষণা করার অনেক কারণ আমাদের রয়েছে: “তোমার দত্ত মঙ্গল কেমন গীতসংহিতা ৩১:১৯) কিন্তু, যাদের ঈশ্বরীয় ভয় রয়েছে তাদের জন্য কীভাবে যিহোবা মঙ্গলভাব “সঞ্চয়” করেছেন?
মহৎ, যাহা তুমি তোমার ভয়কারীদের জন্য সঞ্চয় করিয়াছ।” (অনন্তকালীন উপকারগুলো সহ মঙ্গলভাব
১২. যিহোবার কোন ব্যবস্থাগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন?
১২ যিশু বলেছিলেন: “লেখা আছে, ‘মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।’” (মথি ৪:৪) অতএব, যিহোবার আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলো শারীরিক ব্যবস্থাগুলো থেকে আরও বেশি মঙ্গল করতে পারে কারণ সেগুলো অনন্তজীবনে পরিচালিত করে। এই বইয়ের ৮ অধ্যায়ে আমরা লক্ষ করেছি যে, যিহোবা তাঁর পুনর্স্থাপন করার শক্তি এই শেষকালে এক আধ্যাত্মিক পরমদেশ নিয়ে আসার জন্য ব্যবহার করেছেন। সেই পরমদেশের একটা মুখ্য বৈশিষ্ট্য হল, আধ্যাত্মিক খাবারের প্রাচুর্য।
১৩, ১৪. (ক) ভাববাদী যিহিষ্কেল দর্শনে কী দেখেছিলেন, আমাদের দিনে এর কোন অর্থ রয়েছে? (খ) যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের জন্য কোন জীবনদায়ক আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলো করেন?
১৩ বাইবেলের মহৎ পুনর্স্থাপন সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর একটাতে, ভাববাদী যিহিষ্কেলকে একটা পুনর্স্থাপিত ও মহিমান্বিত মন্দির সম্বন্ধে দর্শন দেওয়া হয়েছিল। সেই মন্দির থেকে এক জলের ধারা প্রবাহিত হয়েছিল, যা ‘দ্বিগুণ আকারের স্রোত’ না হওয়া পর্যন্ত প্রসারিত ও গভীর হয়েছিল। এটা যেখানেই প্রবাহিত হয়েছিল, সেখানেই সেই নদী আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিল। এর তীরগুলোতে অনেক গাছ জন্মেছিল, যেগুলো খাবার জুগিয়েছিল ও রোগ সারিয়েছিল। আর এমনকি সেই নদী লবণাক্ত, নির্জীব মৃত সমুদ্রকে জীবন্ত ও উৎপাদনশীল করেছিল! (যিহিষ্কেল ৪৭:১-১২) কিন্তু এগুলোর মানে কী ছিল?
১৪ সেই দর্শন বুঝিয়েছিল যে, যিহোবা বিশুদ্ধ উপাসনার জন্য তাঁর ব্যবস্থা পুনর্স্থাপিত করবেন, যা যিহিষ্কেলের দেখা মন্দির চিত্রিত করেছিল। দর্শনের সেই নদীর মতো, জীবনের জন্য ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলো আরও ব্যাপকভাবে লোকেদের মধ্যে প্রবাহিত হবে। ১৯১৯ সালে বিশুদ্ধ উপাসনা পুনর্স্থাপিত হওয়ার সময় থেকে, যিহোবা তাঁর লোকেদের জীবনদায়ক ব্যবস্থাগুলো দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন। * অতএব, এই শেষকাল জুড়ে, জগৎ যেখানে আধ্যাত্মিক দুর্ভিক্ষ ভোগ করেছে, সেখানে যিহোবার লোকেরা আধ্যাত্মিক মহাভোজ উপভোগ করেছে।—যিশাইয় ৬৫:১৩.
কীভাবে? বাইবেল, বাইবেল-ভিত্তিক সাহিত্যাদি, সভা ও সম্মেলনগুলো সমস্তই লক্ষ লক্ষ লোকের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ সত্যগুলো নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে। এই উপায়গুলোর মাধ্যমে যিহোবা জীবনের জন্য তাঁর যে-ব্যবস্থাগুলো রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা সম্বন্ধে লোকেদের শিখিয়েছেন, যা হল খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান, যেটা ঈশ্বরকে যারা সত্যিই ভালবাসে ও ভয় করে তাদের জন্য যিহোবার সামনে এক পরিচ্ছন্ন অবস্থান ও অনন্তজীবনের আশা সম্ভব করে।১৫. কোন অর্থে যিহোবার মঙ্গলভাব খ্রিস্টের হাজার বছর রাজত্ব চলাকালে বিশ্বস্ত মানবজাতির প্রতি প্রসারিত হবে?
১৫ কিন্তু যিহিষ্কেলের দর্শনের নদী, এই পুরনো বিধিব্যবস্থা যখন শেষ হয়, তখনই প্রবাহিত হওয়া থেমে যায় না। এর বিপরীতে, এটা খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্ব চলাকালে আরও ব্যাপকভাবে প্রবাহিত হবে। তখন মশীহ রাজ্যের মাধ্যমে যিশুর বলিদানের পুরো মূল্য যিহোবা প্রয়োগ করবেন, যা ধীরে ধীরে বিশ্বস্ত মানবজাতিকে সিদ্ধতায় নিয়ে যাবে। তখন আমরা যিহোবার মঙ্গলভাবে কতই না আনন্দ করব!
যিহোবার মঙ্গলভাবের আরও বৈশিষ্ট্য
১৬. কীভাবে বাইবেল দেখায় যে, যিহোবার মঙ্গলভাবের সঙ্গে অন্য গুণগুলো জড়িত এবং এগুলোর কয়েকটা কী?
১৬ যিহোবার মঙ্গলভাবের সঙ্গে উদারতার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। মোশিকে ঈশ্বর বলেছিলেন: “আমি তোমার সম্মুখ দিয়া আপনার সমস্ত উত্তমতা গমন করাইব, ও তোমার সম্মুখে সদাপ্রভুর নাম ঘোষণা করিব।” পরে সেই বিবরণ বলে: “সদাপ্রভু তাঁহার সম্মুখ দিয়া গমন করতঃ এই ঘোষণা করিলেন, ‘সদাপ্রভু, সদাপ্রভু, স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্ যাত্রাপুস্তক ৩৩:১৯; ৩৪:৬) অতএব, যিহোবার উত্তমতা বা মঙ্গলভাবের সঙ্গে বেশ কিছু ভাল গুণ জড়িত। আসুন এর মধ্যে শুধু দুটো বিবেচনা করি।
[“যিহোবা, যিহোবা, করুণাময় ও সদয় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং প্রেমপূর্ণ-দয়া ও সত্যে মহান,” NW]।’” (১৭. সদয়ভাব কী এবং যিহোবা কীভাবে নগণ্য অসিদ্ধ মানুষদের প্রতি তা দেখিয়েছেন?
১৭ “সদয়।” এই গুণ যিহোবা তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেন, সেই সম্বন্ধে আমাদের অনেক কিছু বলে। নীরস, আবেগহীন বা নিষ্ঠুর, যা প্রায়ই ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা হয়ে থাকে, তা না হয়ে যিহোবা হলেন কোমল ও দয়ালু। উদাহরণস্বরূপ, অব্রাহামকে যিহোবা বলেছিলেন: “চক্ষু তুলিয়া এই যে স্থানে তুমি আছ, এই স্থান হইতে উত্তর দক্ষিণে ও পূর্ব্ব পশ্চিমে দৃষ্টিপাত কর।” (আদিপুস্তক ১৩:১৪) বাইবেল পণ্ডিতরা লক্ষ করে যে, মূল ইব্রীয় ভাষায় যেভাবে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা একটা অব্যয় পদকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা সেই উক্তিকে আদেশসূচক থেকে এক মার্জিত অনুরোধে পরিবর্তন করে। এইরকম অন্যান্য উদাহরণও রয়েছে। (আদিপুস্তক ৩১:১২; যিহিষ্কেল ৮:৫) ভেবে দেখুন যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সার্বভৌম প্রভু মানুষদের প্রতি বিনীতভাবে অনুরোধ করেন! যে-জগতে কর্কশতা, কলহপরায়ণতা ও রূঢ় মনোভাব অতি সাধারণ, সেখানে আমাদের ঈশ্বর যিহোবার সদয়ভাব সম্বন্ধে চিন্তা করা কি সতেজতাদায়ক নয়?
১৮. কোন অর্থে যিহোবা “সত্যে মহান” এবং সেই বাক্যগুলো কেন আশ্বাসদায়ক?
১৮ “সত্যে মহান।” অসততা আজকের জগতের সাধারণ প্রবণতা হয়ে উঠেছে। কিন্তু, বাইবেল আমাদের মনে করিয়ে দেয়: “ঈশ্বর মনুষ্য নহেন যে মিথ্যা বলিবেন।” (গণনাপুস্তক ২৩:১৯) বস্তুত, তীত ১:২ পদ বলে যে ঈশ্বর “মিথ্যাকথনে অসমর্থ।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) তিনি এমনটা করতেই পারেন না। অতএব, যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য; তাঁর বাক্যগুলো যে পরিপূর্ণ হবেই, তা একেবারে নিশ্চিত। যিহোবাকে এমনকি “সত্যের ঈশ্বর” বলা হয়। (গীতসংহিতা ৩১:৫) তিনি কেবল মিথ্যা বলা থেকেই বিরত থাকেন না কিন্তু সেইসঙ্গে প্রচুর সত্য বিতরণ করেন। তিনি গোপনে কাজ করেন না, সমস্ত তথ্য নিজের কাছে রেখে দেন না বা তাঁর কাজ সম্বন্ধে নীরব থাকেন না; বরং তিনি উদারভাবে তাঁর অসীম প্রজ্ঞার আধার থেকে তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের জ্ঞান দান করেন। * তিনি এমনকি তাদের শিক্ষা দেন যে, যে-সত্যগুলো তিনি বিতরণ করেন, সেগুলো মেনে কীভাবে জীবনযাপন করতে হয় যাতে তারা ‘সত্যে চলিতে’ পারে। (৩ যোহন ৩) সাধারণত, যিহোবার মঙ্গলভাব আমাদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে কীভাবে প্রভাবিত করবে?
‘যিহোবার মঙ্গলভাবে উজ্জ্বল হোন’
১৯, ২০. (ক) শয়তান কীভাবে যিহোবার মঙ্গলভাবের ওপর হবার আস্থা নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল এবং এর ফল কী হয়েছিল? (খ) উপযুক্তভাবেই আমাদের ওপর যিহোবার মঙ্গলভাবের কোন প্রভাব থাকা উচিত এবং কেন?
১৯ শয়তান যখন এদন উদ্যানে হবাকে প্রলোভিত করেছিল, তখন সে চতুরভাবে যিহোবার মঙ্গলভাবের ওপর হবার নির্ভরতা নষ্ট করার চেষ্টা শুরু করেছিল। যিহোবা আদমকে বলেছিলেন: “তুমি এই উদ্যানের সমস্ত বৃক্ষের ফল স্বচ্ছন্দে ভোজন করিও।” হাজার হাজার গাছ সেই উদ্যানকে ভূষিত করেছিল, সেগুলোর মধ্যে শুধু একটা গাছের ফল খেতে যিহোবা নিষেধ করেছিলেন। তবুও লক্ষ করুন যে, হবাকে শয়তান তার প্রথম প্রশ্নটা কীভাবে করেছিল: “ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না?” (আদিপুস্তক ২:৯, ১৬; ৩:১) শয়তান হবাকে এই চিন্তা করাতে যিহোবার বাক্যগুলোকে বিকৃত করেছিল যে যিহোবা ভাল কিছু দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। দুঃখের বিষয় হল যে, সেই কৌশল সফল হয়েছিল। হবা, তার পরে আসা অনেক পুরুষ ও মহিলাদের মতো ঈশ্বরের সেই মঙ্গলভাব নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করেছিল, যিনি তাকে সমস্তকিছু দিয়েছিলেন।
২০ এইরকম সন্দেহগুলো যে চরম দুঃখ ও দুর্দশা নিয়ে এসেছে, তা আমরা জানি। তাই আসুন আমরা যিরমিয় ৩১:১২ (NW) পদের বাক্যগুলোতে মনোযোগ দিই: ‘তারা যিহোবার মঙ্গলভাবে উজ্জ্বল হবে।’ যিহোবার মঙ্গলভাব আমাদের আনন্দে উজ্জ্বল করবে। আমাদের ঈশ্বর, যিনি মঙ্গলভাবে পূর্ণ, তাঁর উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে কখনোই আমাদের সন্দেহ করার দরকার নেই। আমরা তাঁর ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি কারণ তিনি চান যে, যারা তাঁকে ভালবাসে তাদের যেন মঙ্গল হয়।
২১, ২২. (ক) কিছু উপায় কী যেগুলোর মাধ্যমে আপনি যিহোবার মঙ্গলভাবের প্রতি সাড়া দিতে চান? (খ) পরের অধ্যায়ে আমরা কোন গুণ সম্বন্ধে আলোচনা করব এবং এটা কীভাবে মঙ্গলভাবের চেয়ে পৃথক?
গীতসংহিতা ১৪৫:৭ পদ বলে: “তাহারা তোমার মহৎ মঙ্গলভাবের খ্যাতি প্রচার করিবে।” প্রত্যেক দিন, আমরা যিহোবার মঙ্গলভাব থেকে কোনো না কোনোভাবে উপকার লাভ করি। তাই, প্রতিদিন তাঁর মঙ্গলভাব যতটা সম্ভব নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে যিহোবার ধন্যবাদ দেওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করুন না কেন? এই গুণ সম্বন্ধে চিন্তা করা, এর জন্য প্রতিদিন যিহোবাকে ধন্যবাদ দেওয়া এবং অন্যদের এই সম্বন্ধে বলা আমাদের মঙ্গলময় ঈশ্বরকে অনুকরণ করতে আমাদের সাহায্য করবে। যিহোবা যেমন করেন, তেমনই আমরা যদি মঙ্গলজনক কাজ করার জন্য চেষ্টা করি, তা হলে আমরা তাঁর আরও নিকটবর্তী হব। বৃদ্ধ প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “প্রিয়তম, যাহা মন্দ, তাহার অনুকারী হইও না, কিন্তু যাহা উত্তম, তাহার অনুকারী হও। যে উত্তম কার্য্য করে, সে ঈশ্বর হইতে।”—৩ যোহন ১১.
২১ এ ছাড়া, আমরা যখন অন্যদের সঙ্গে ঈশ্বরের মঙ্গলভাব সম্বন্ধে কথা বলার সুযোগ পাই, তখন আমরা আনন্দিত হই। যিহোবার লোকেদের সম্বন্ধে২২ যিহোবার মঙ্গলভাব অন্য গুণগুলোর সঙ্গেও যুক্ত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ঈশ্বর ‘প্রেমপূর্ণ-দয়াতে’ বা অনুগত প্রেমে “মহান।” (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬) এই গুণ মঙ্গলভাবের চেয়ে আরও বেশি বিশিষ্ট কারণ যিহোবা এটা বিশেষ করে তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের প্রতি প্রকাশ করেন। পরের অধ্যায়ে আমরা জানব যে, কীভাবে তিনি তা করেন।
^ অনু. 14 মুক্তির মূল্যের চেয়ে যিহোবার মঙ্গলভাবের বড় আর কোনো উদাহরণ নেই। লক্ষ লক্ষ আত্মিক প্রাণীর মধ্যে থেকে আমাদের জন্য মৃত্যুবরণ করতে যিহোবা তাঁর প্রিয়, একজাত পুত্রকে বেছে নিয়েছিলেন।
^ অনু. 18 উপযুক্ত কারণেই সত্যকে বাইবেল আলোর সঙ্গে যুক্ত করে। গীতরচক গেয়েছিলেন, “তোমার দীপ্তি ও তোমার সত্য প্রেরণ কর।” (গীতসংহিতা ৪৩:৩) যারা তাঁর কাছ থেকে শিখতে চায় বা জ্ঞানালোকপ্রাপ্ত হতে চায়, তাদের ওপর যিহোবা প্রচুর আধ্যাত্মিক আলো বর্ষণ করেন।—২ করিন্থীয় ৪:৬; ১ যোহন ১:৫.