সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় এক

ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্যটা কী?

ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্যটা কী?
  • ঈশ্বর কি আপনার জন্য সত্যিই চিন্তা করেন?

  • ঈশ্বর কেমন? তাঁর কি কোনো নাম আছে?

  • ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া কি সম্ভব?

১, ২. সাধারণত প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা কেন ভালো?

বাচ্চারা কীভাবে প্রশ্ন করে, তা কি আপনি কখনো লক্ষ করেছেন? কেউ কেউ কথা বলতে শেখার সঙ্গে সঙ্গেই নানারকম প্রশ্ন করতে শুরু করে। বড়ো বড়ো চোখ করে, অবাক হয়ে আপনার দিকে তাকিয়ে তারা এইরকম প্রশ্ন করে থাকে, যেমন: আকাশ নীল কেন? আকাশের তারাগুলো কীসের তৈরি? পাখিদের কে গান শিখিয়েছে? আপনি হয়তো উত্তর দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন কিন্তু তা সবসময় সহজ নয়। এমনকী আপনার দেওয়া সবচেয়ে ভালো উত্তরও হয়তো আরেকটা প্রশ্ন করার দিকে চালিত করতে পারে আর তা হল: কেন?

শুধুমাত্র বাচ্চারাই যে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে এমন নয়। বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরাও জিজ্ঞেস করে থাকি। আমরা আমাদের পথ খুঁজে বের করতে, কোন বিপদগুলো আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে তা জানতে অথবা আমাদের কৌতূহল মেটাতে প্রশ্ন করে থাকি। কিন্তু, অনেক লোক মনে হয় প্রশ্ন জিজ্ঞেস করাই বাদ দিয়ে দিয়েছে, বিশেষভাবে যেগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অন্ততপক্ষে তারা উত্তরগুলো খোঁজা বাদ দিয়ে দিয়েছে।

৩. কেন অনেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা বাদ দিয়ে দিয়েছে?

এই বইয়ের প্রচ্ছদে দেওয়া প্রশ্নটা, ভূমিকায় উত্থাপিত প্রশ্নগুলো অথবা এই অধ্যায়ের শুরুতে দেওয়া প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। এগুলো হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর মধ্যে মাত্র কয়েকটা, যেগুলো আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন। অথচ অনেকে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করাই বাদ দিয়ে দিয়েছে। কেন? বাইবেলে কি উত্তরগুলো রয়েছে? কেউ কেউ মনে করে, উত্তরগুলো বোঝা অনেক কঠিন। অন্যেরা এইরকম দুশ্চিন্তা করে থাকে যে, প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়তো লজ্জায় বা অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। আর কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তে আসে যে, এই ধরনের প্রশ্নগুলোর উত্তর একমাত্র ধর্মীয় নেতা বা শিক্ষকরাই দিতে পারে। আপনার সম্বন্ধে কী বলা যায়?

৪, ৫. জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর কয়েকটা কী এবং কেন আমাদের সেগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা উচিত?

খুব সম্ভবত, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার ব্যাপারে আপনি আগ্রহী। কোনো সন্দেহ নেই যে, মাঝে মাঝে আপনি ভেবে থাকেন: ‘জীবনের উদ্দেশ্য কী? এই জীবনই কি সব কিছু? ঈশ্বর আসলে কেমন?’ এই ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা উপযুক্ত আর সেইসঙ্গে এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে সন্তোষজনক, নির্ভরযোগ্য উত্তর খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আপনি যেন হাল ছেড়ে না দেন। বিখ্যাত শিক্ষক যিশু খ্রিস্ট বলেছিলেন: “যাচ্ঞা কর, তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে; অন্বেষণ কর, পাইবে; দ্বারে আঘাত কর, তোমাদের জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে।”—মথি ৭:৭.

যদি আপনি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়ার জন্য ‘অন্বেষণ করেন’ বা করে চলেন, তা হলে দেখবেন যে, অনুসন্ধান খুবই পরিতৃপ্তিদায়ক হতে পারে। (হিতোপদেশ ২:১-৫) লোকেরা আপনাকে যা-ই বলুক না কেন, বাইবেলে উত্তরগুলো রয়েছে এবং আপনি সেগুলো খুঁজে বের করতে পারেন। উত্তরগুলো বোঝা খুব কঠিন নয়। আরও ভালো বিষয় হচ্ছে, সেগুলো আশা ও আনন্দ নিয়ে আসে। আর সেগুলো আপনাকে এখনই এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবনযাপন করার জন্য সাহায্য করতে পারে। শুরুতে, আসুন আমরা এমন একটা প্রশ্ন বিবেচনা করি, যা অনেক লোককে ভাবিয়ে তুলেছে।

ঈশ্বর কি চিন্তা করেন না আর তাঁর কি সহানুভূতি নেই?

৬. কেন অনেকে মনে করে যে, মানুষের দুঃখকষ্টের ব্যাপারে ঈশ্বর কোনো চিন্তাই করেন না?

অনেকে মনে করে যে, ঈশ্বর আমাদের জন্য চিন্তা করেন না বা তাঁর কোনো সহানুভূতি নেই। তারা এভাবে যুক্তি দেখায়, ‘ঈশ্বর যদি চিন্তাই করতেন, তা হলে এই জগৎ কি একেবারে আলাদা এক জায়গা হতো না?’ চারিদিকে তাকিয়ে আমরা এমন এক জগৎ দেখি যা যুদ্ধ, ঘৃণা ও দুর্দশায় পরিপূর্ণ। আর আমরা প্রত্যেকেই অসুস্থ হই, কষ্টভোগ করি ও মৃত্যুতে প্রিয়জনদের হারাই। তাই অনেকে বলে থাকে, ‘ঈশ্বর যদি আমাদের সম্বন্ধে ও আমাদের সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তাই করতেন, তা হলে তিনি কি এই ধরনের বিষয়গুলো ঘটা বন্ধ করতেন না?’

৭. (ক) কীভাবে ধর্মীয় শিক্ষকরা অনেককে এইরকম মনে করতে পরিচালিত করেছে যে, ঈশ্বর সহানুভূতিহীন? (খ) আমরা যে-পরীক্ষাগুলো ভোগ করে থাকি, সেগুলো সম্বন্ধে বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়?

আরও খারাপ ব্যাপার হচ্ছে, ধর্মীয় শিক্ষকরা মাঝে মাঝে লোকেদের এইরকম মনে করতে পরিচালিত করে যে, ঈশ্বর হলেন সহানুভূতিহীন। কীভাবে? যখন কোনো দুঃখজনক ঘটনা ঘটে থাকে, তখন তারা বলে যে এটা ঈশ্বরেরই ইচ্ছা। বস্তুতপক্ষে, এই শিক্ষকরা মন্দ বিষয়গুলো ঘটার জন্য ঈশ্বরকে দোষারোপ করে থাকে। কিন্তু, ঈশ্বর সম্বন্ধে তা কি সত্য? বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? যাকোব ১:১৩ পদ উত্তর দেয়: “পরীক্ষার সময়ে কেহ না বলুক, ঈশ্বর হইতে আমার পরীক্ষা হইতেছে; কেননা মন্দ বিষয়ের দ্বারা ঈশ্বরের পরীক্ষা করা যাইতে পারে না, আর তিনি কাহারও পরীক্ষা করেন না।” তাই, আপনার চারপাশে আপনি যে-দুষ্টতা দেখে থাকেন, তার উৎস কখনোই ঈশ্বর নন। (পড়ুন, ইয়োব ৩৪:১০-১২.) এটা ঠিক যে, তিনি মন্দ বিষয়গুলো ঘটতে দেন। কিন্তু, কিছু ঘটতে দেওয়া এবং তা ঘটানোর কারণ হওয়ার মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে।

৮, ৯. (ক) দুষ্টতা থাকতে দেওয়া এবং তা ঘটানোর কারণ হওয়ার মধ্যে পার্থক্যকে আপনি কীভাবে উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করবেন? (খ) মানবজাতিকে স্বেচ্ছাচারিতাপূর্ণ পথে চলতে দেওয়ার পিছনে ঈশ্বরের সিদ্ধান্তের মধ্যে দোষ খোঁজা আমাদের জন্য কেন অন্যায্য হবে?

উদাহরণ স্বরূপ, একজন বিজ্ঞ ও প্রেমময় বাবার কথা চিন্তা করুন, যার একজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে রয়েছে এবং সে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে একই বাড়িতে থাকে। সেই ছেলে যখন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে ও ঘর ছেড়ে চলে যেতে চায়, তখন তার বাবা তাকে থামান না। ছেলে এক মন্দ জীবনধারা অনুসরণ করে ও সমস্যায় পড়ে। এই ক্ষেত্রে বাবা কি তার ছেলের সমস্যাগুলোর কারণ? না। (লূক ১৫:১১-১৩) অনুরূপভাবে, মানুষ যখন মন্দ পথে চলা বেছে নিয়েছে, তখন ঈশ্বর মানুষকে থামাননি কিন্তু এর ফল স্বরূপ যে-সমস্যাগুলো এসেছে সেগুলোর কারণ তিনি নন। তাই নিশ্চিতভাবেই, মানবজাতির সমস্ত সমস্যার জন্য ঈশ্বরকে দোষ দেওয়া অন্যায্য হবে।

মানবজাতিকে এক মন্দ পথে চলতে দেওয়ার পিছনে ঈশ্বরের উত্তম কারণগুলো রয়েছে। বিজ্ঞ ও শক্তিমান সৃষ্টিকর্তা হিসেবে, আমাদের কাছে সেই কারণগুলো তাঁর ব্যাখ্যা করার দরকার নেই। কিন্তু, প্রেমের বশবর্তী হয়ে ঈশ্বর তা করেছেন। আপনি ১১ অধ্যায়ে সেই কারণগুলো সম্বন্ধে আরও বেশি জানতে পারবেন। কিন্তু এই ব্যাপারে নিশ্চিত হোন যে, আমরা যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই সেগুলোর জন্য ঈশ্বর দায়ী নন। এর বিপরীতে, সমাধানের একমাত্র আশা তিনিই আমাদের প্রদান করেন।—যিশাইয় ৩৩:২.

১০. কেন আমরা এই বিষয়ে নির্ভর করতে পারি যে, ঈশ্বর দুষ্টতার সমস্ত প্রভাব দূর করবেন?

১০ অধিকন্তু, ঈশ্বর হলেন পবিত্র। (যিশাইয় ৬:৩) এর অর্থ হচ্ছে, তিনি হলেন বিশুদ্ধ ও নির্মল। তাঁর মধ্যে মন্দতার লেশমাত্র নেই। তাই, আমরা তাঁর উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারি। মানুষের বেলায় আমরা তেমনটা করতে পারি না, কারণ মানুষ মাঝে মাঝে কলুষিত হয়ে পড়ে। এমনকী কর্তৃত্বে থাকা সবচেয়ে সৎ ব্যক্তিরও সেই ক্ষতি পূরণ করার ক্ষমতা থাকে না, যা মন্দ লোকেরা করে থাকে। কিন্তু ঈশ্বর হলেন সর্বক্ষমতাবান। দুষ্টতা মানবজাতির উপর যে-প্রভাবগুলো নিয়ে এসেছে, সেগুলো দূর করার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে এবং তিনি তা করবেনও। ঈশ্বর যখন পদক্ষেপ নেবেন, তখন তিনি তা এমন এক উপায়ে নেবেন যা মন্দতাকে চিরতরে শেষ করবে!—পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৭:৯-১১.

আমরা যে-অবিচারগুলোর মুখোমুখি হই সেই সম্বন্ধে ঈশ্বর কেমন বোধ করেন?

১১. (ক) অবিচার সম্বন্ধে ঈশ্বর কেমন বোধ করেন? (খ) আপনার দুঃখকষ্ট সম্বন্ধে ঈশ্বর কেমন বোধ করেন?

১১ এই সময়ের মধ্যে, পৃথিবীতে ও আপনার জীবনে যা কিছু ঘটে চলেছে, সেই সম্বন্ধে ঈশ্বর কেমন বোধ করেন? প্রথমত, বাইবেল শিক্ষা দেয় যে ঈশ্বর “ন্যায়বিচার ভালবাসেন।” (গীতসংহিতা ৩৭:২৮) তাই, কোনটা ন্যায় ও কোনটা অন্যায় সেই সম্বন্ধে তিনি গভীরভাবে চিন্তা করেন। তিনি সমস্ত ধরনের অবিচার ঘৃণা করেন। বাইবেল জানায় যে, অতীতে পৃথিবী যখন মন্দতায় ভরে গিয়েছিল, তখন ঈশ্বর ‘মনঃপীড়া পাইয়াছিলেন।’ (আদিপুস্তক ৬:৫, ৬) ঈশ্বর পরিবর্তিত হননি। (মালাখি ৩:৬) তিনি এখনও দুঃখকষ্ট দেখাকে ঘৃণা করেন, যা সারা পৃথিবীতে ঘটে চলেছে। আর ঈশ্বর লোকেদের দুঃখকষ্ট ভোগ করতে দেখাকেও ঘৃণা করেন। “তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন,” বাইবেল জানায়।—পড়ুন, ১ পিতর ৫:৭.

বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, যিহোবা হলেন নিখিলবিশ্বের প্রেমময় সৃষ্টিকর্তা

১২, ১৩. (ক) কেন আমাদের মধ্যে ভালোবাসার মতো উত্তম গুণাবলি রয়েছে এবং কীভাবে ভালোবাসা পৃথিবী সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে? (খ) কেন আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, পৃথিবীর সমস্যাগুলোর ব্যাপারে ঈশ্বর সত্যিই কিছু করবেন?

১২ কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, দুঃখকষ্ট ভোগ করতে দেখাকে ঈশ্বর ঘৃণা করেন? আরও প্রমাণ লক্ষ করুন। বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে নির্মাণ করা হয়েছিল। (আদিপুস্তক ১:২৬) ফলে, আমাদের উত্তম গুণাবলি রয়েছে কারণ ঈশ্বরের উত্তম গুণাবলি রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, নির্দোষ লোকেদের কষ্ট পেতে দেখে আপনার কি খারাপ লাগে? আপনি যদি এই ধরনের অবিচারগুলো সম্বন্ধে চিন্তা করে থাকেন, তা হলে নিশ্চিত থাকুন যে, সেগুলো সম্বন্ধে ঈশ্বরের অনুভূতি আরও প্রবল।

১৩ মানুষের সর্বোত্তম বিষয়গুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে, আমাদের ভালোবাসতে পারার ক্ষমতা। সেটাও ঈশ্বরকে প্রতিফলিত করে। বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) আমরা ভালোবাসি কারণ ঈশ্বর ভালোবাসেন। ভালোবাসা কি আপনাকে পৃথিবীতে যে-দুঃখকষ্ট ও অবিচার আপনি দেখতে পান, তা শেষ করতে পরিচালিত করে? আপনার যদি তা শেষ করার ক্ষমতা থাকত, তা হলে আপনি কি তা করতেন? অবশ্যই আপনি তা করতেন! তাই আপনি পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, ঈশ্বর দুঃখকষ্ট ও অবিচার শেষ করবেন। এই বইয়ের ভূমিকায় উল্লেখিত প্রতিজ্ঞাগুলো নিছক স্বপ্ন বা অমূলক আশা নয়। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো সত্য হবেই! তবে, এই ধরনের প্রতিজ্ঞাগুলোতে বিশ্বাসস্থাপন করার জন্য সেই ঈশ্বর সম্বন্ধে আপনাকে আরও বেশি জানতে হবে, যিনি সেগুলো করেছেন।

ঈশ্বর চান যেন আপনি জানতে পারেন যে তিনি কে

আপনি যখন চান যে কেউ আপনার সম্বন্ধে জানুক, তখন আপনি কি আপনার নাম উল্লেখ করেন না? ঈশ্বর বাইবেলের মাধ্যমে আমাদের কাছে তাঁর নাম প্রকাশ করেন

১৪. ঈশ্বরের নাম কী এবং আমাদের কেন তা ব্যবহার করা উচিত?

১৪ আপনি যদি চান যে কেউ আপনাকে জানুক, তা হলে আপনি হয়তো কী করবেন? আপনি কি সেই ব্যক্তিকে আপনার নাম বলবেন না? ঈশ্বরের কি কোনো নাম আছে? অনেক ধর্ম উত্তর দেয় যে, তাঁর নাম হচ্ছে “ঈশ্বর” বা “প্রভু” কিন্তু সেগুলো ব্যক্তিগত কোনো নাম নয়। সেগুলো হচ্ছে উপাধি, ঠিক যেমন “রাজা” এবং “রাষ্ট্রপতি” হচ্ছে উপাধি। বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বরেরও অনেক উপাধি রয়েছে। “ঈশ্বর” ও “প্রভু” সেই উপাধিগুলোর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু, বাইবেল এও শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বরের একটা ব্যক্তিগত নাম রয়েছে আর তা হল: যিহোবা। যাত্রাপুস্তক ৬:৩ পদে যিহোবা বলেন: ‘আমি সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বর, কিন্তু আমার যিহোবা [সদাপ্রভু] নাম লইয়া তাহাদিগকে আমার পরিচয় দিতাম না।’ আপনার বাইবেলের অনুবাদে যদি সেই নামটা না থাকে, তা হলে আপনি হয়তো পরিশিষ্টে দেওয়া “ঐশিক নাম—এটার ব্যবহার ও অর্থ” শিরোনামের প্রবন্ধটা পড়ে দেখতে চাইবেন, এটা জানার জন্য যে কেন তা নেই। সত্য বিষয়টা হল যে, ঈশ্বরের নাম বাইবেলের প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে হাজার হাজার বার পাওয়া যায়। তাই, যিহোবা চান যেন আপনি তাঁর নাম জানেন এবং তা ব্যবহার করেন। এক অর্থে, তিনি নিজেকে আপনার কাছে পরিচিত করানোর জন্য বাইবেল ব্যবহার করছেন।—যাত্রাপুস্তক ৩:১৫.

১৫. যিহোবা নামের অর্থ কী?

১৫ ঈশ্বর নিজেকে এমন একটা নাম দিয়েছেন, যেটা অর্থে পরিপূর্ণ। তাঁর নাম যিহোবা, যেটার অর্থ হচ্ছে ঈশ্বর যে-প্রতিজ্ঞাই করুন না কেন, তা তিনি পূর্ণ করতে পারেন আর তাঁর মনে যে-উদ্দেশ্যই থাকুক না কেন, তা সম্পন্ন করতে পারেন। * ঈশ্বরের নাম সত্যিই অদ্বিতীয়। এটা একমাত্র তাঁর প্রতিই প্রযোজ্য। বেশ কয়েকটা দিক দিয়ে যিহোবা অদ্বিতীয়। কীভাবে?

১৬, ১৭. নীচের উপাধিগুলো থেকে আমরা যিহোবা সম্বন্ধে কী শিখতে পারি: (ক) “সর্ব্বশক্তিমান্‌”? (খ) ‘যুগপর্য্যায়ের রাজন্‌’? (গ) “সৃষ্টিকর্তা”?

১৬ গীতসংহিতা ৮৩:১৮ পদ যিহোবা সম্বন্ধে বলে: “একা তুমিই সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর।” অনুরূপভাবে, একা যিহোবাকেই “সর্ব্বশক্তিমান্‌” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকাশিত বাক্য ১৫:৩ পদ বলে: “মহৎ ও আশ্চর্য্য তোমার ক্রিয়া সকল, হে প্রভু ঈশ্বর, সর্ব্বশক্তিমান্‌; ন্যায্য ও সত্য তোমার মার্গ সকল, হে জাতিগণের [“যুগপর্য্যায়ের,” পাদটীকা] রাজন!” “সর্ব্বশক্তিমান্‌” উপাধিটা আমাদের শিক্ষা দেয় যে, যিহোবা হলেন সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি। তাঁর ক্ষমতা অতুলনীয়; এটা হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। আর ‘যুগপর্য্যায়ের রাজন্‌’ উপাধিটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, যিহোবা অন্য অর্থেও অদ্বিতীয়। একা তিনিই সবসময় ধরে আছেন। গীতসংহিতা ৯০:২ পদ বলে: “এমন কি, অনাদিকাল হইতে অনন্তকাল তুমিই ঈশ্বর।” এই ধারণাটা সশ্রদ্ধ ভয় জাগিয়ে তোলে, তাই নয় কি?

১৭ এ ছাড়া, যিহোবা এই দিক দিয়েও অদ্বিতীয় যে একা তিনিই হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা। প্রকাশিত বাক্য ৪:১১ পদে লেখা আছে: “হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।” যে-সমস্ত বিষয় আপনি চিন্তা করতে পারেন—স্বর্গে অদৃশ্য আত্মিক প্রাণী, রাতের আকাশ ভরা তারকারাজি, বিভিন্ন গাছের ফল থেকে শুরু করে সমুদ্র ও নদীতে সাঁতার কাটে এমন মাছ—সব কিছুই অস্তিত্বে রয়েছে কারণ যিহোবা হলেন সৃষ্টিকর্তা!

আপনি কি যিহোবার নিকটবর্তী হতে পারেন?

১৮. কেন কিছু লোক মনে করে থাকে যে, তারা কখনোই ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারবে না কিন্তু বাইবেল কী শিক্ষা দেয়?

১৮ যিহোবার প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় উৎপাদনকারী গুণাবলি সম্বন্ধে পড়া কিছু লোককে একটু অস্বস্তিতে ফেলে। তারা এই ভেবে ভয় পায়, ঈশ্বর তাদের কাছে এতটা উচ্চ যে তারা কখনোই তাঁর নিকটবর্তী হতে পারবে না অথবা এই ধরনের একজন অত্যুচ্চ ঈশ্বরের কাছে তারা কখনোই তেমন গুরুত্বপূর্ণ হতে পারবে না। কিন্তু, এই ধারণা কি সঠিক? বাইবেল এর ঠিক বিপরীতটাই শিক্ষা দিয়ে থাকে। যিহোবার সম্বন্ধে এটি বলে: “তিনি আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।” (প্রেরিত ১৭:২৭) এমনকী বাইবেল আমাদের জোরালোভাবে পরামর্শ দেয়: “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।”—যাকোব ৪:৮.

১৯. (ক) কীভাবে আমরা ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে শুরু করতে পারি এবং এর কোন উপকার রয়েছে? (খ) ঈশ্বরের কোন গুণাবলি আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি হৃদয়গ্রাহী বলে মনে হয়?

১৯ আপনি কীভাবে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারেন? প্রথমত, এখন আপনি যা করছেন—ঈশ্বর সম্বন্ধে জানা—তা চালিয়ে যান। যিশু বলেছিলেন: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।” (যোহন ১৭:৩) হ্যাঁ, বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, যিহোবা ও যিশু সম্বন্ধে জানা ‘অনন্ত জীবনের’ দিকে পরিচালিত করে! ইতিমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:১৬) এ ছাড়া, যিহোবার আরও অনেক চমৎকার ও হৃদয়গ্রাহী গুণ রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, বাইবেল জানায় যে, যিহোবা হলেন “স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্‌।” (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬) তিনি “মঙ্গলময় ও ক্ষমাবান্‌।” (গীতসংহিতা ৮৬:৫) ঈশ্বর দীর্ঘসহিষ্ণু। (২ পিতর ৩:৯) তিনি বিশ্বাস্য বা বিশ্বস্ত। (১ করিন্থীয় ১:৯) আপনি যত বেশি বাইবেল পড়বেন, ততই দেখতে পাবেন যে, কীভাবে যিহোবা দেখিয়েছেন যে তাঁর এই সমস্ত এবং অন্যান্য আরও অনেক হৃদয়গ্রাহী গুণ রয়েছে।

২০-২২. (ক) ঈশ্বরকে দেখার বিষয়ে আমাদের অক্ষমতা কি তাঁর নিকটবর্তী হতে বাধা দেয়? ব্যাখ্যা করুন। (খ) কিছু ব্যক্তি হয়তো ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই কী করার জন্য আপনাকে জোরালো পরামর্শ দিতে পারে, কিন্তু আপনার কী করা উচিত?

২০ এটা ঠিক যে, আপনি ঈশ্বরকে দেখতে পারেন না কারণ তিনি অদৃশ্য আত্মা। (যোহন ১:১৮; ৪:২৪; ১ তীমথিয় ১:১৭) তবে, বাইবেলের পাতায় পাতায় তাঁর সম্বন্ধে শিখে আপনি তাঁকে একজন ব্যক্তি হিসেবে জানতে পারেন। গীতরচক যেমন বলেছিলেন, আপনি ‘সদাপ্রভুর সৌন্দর্য্য দেখিতে’ পারেন। (গীতসংহিতা ২৭:৪; রোমীয় ১:২০) যিহোবা সম্বন্ধে আপনি যত বেশি জানবেন, তিনি আপনার কাছে ততই বাস্তব হয়ে উঠবেন এবং তাঁকে ভালোবাসার ও তাঁর সঙ্গে নিকট সম্পর্ক বোধ করার তত বেশি কারণ আপনার থাকবে।

একজন প্রেমময় বাবা তার ছেলে-মেয়েদের জন্য যে-ভালোবাসা অনুভব করেন, তা সেই মহৎ ভালোবাসাকে প্রতিফলিত করে, যা আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদের জন্য অনুভব করেন

২১ আপনি ধীরে ধীরে বুঝতে পারবেন যে, বাইবেল কেন যিহোবাকে আমাদের পিতা হিসেবে চিন্তা করার জন্য শিক্ষা দেয়। (মথি ৬:৯) শুধুমাত্র এইজন্য নয় যে, আমাদের জীবন তাঁর কাছ থেকে এসেছে, কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি চান যেন আমরা যথাসম্ভব সর্বোত্তম জীবন লাভ করি—ঠিক যেমন কোনো প্রেমময় বাবা তার ছেলে-মেয়েদের জন্য চাইবেন। (গীতসংহিতা ৩৬:৯) বাইবেল এও শিক্ষা দেয় যে, মানুষ যিহোবার বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। (যাকোব ২:২৩) কল্পনা করে দেখুন—আপনি নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার একজন বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন!

২২ বাইবেল থেকে আরও বেশি শেখার সময়, আপনি হয়তো দেখতে পাবেন যে কিছু ব্যক্তি ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই আপনাকে এই অধ্যয়ন বন্ধ করার জন্য জোরালো পরামর্শ দেবে। তারা হয়তো এই ভেবে দুশ্চিন্তা করতে পারে যে, আপনি আপনার বিশ্বাস পরিবর্তন করে ফেলবেন। কিন্তু, সর্বকালের সর্বোত্তম বন্ধুত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোনো কিছুই যেন আপনাকে থামিয়ে না দেয়।

২৩, ২৪. (ক) আপনি যা শিখছেন সেই বিষয়ে কেন আপনার নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে চলা উচিত? (খ) পরের অধ্যায়ের বিষয় কী?

২৩ অবশ্যই, কিছু কিছু বিষয় থাকবে যা আপনি প্রথমে বুঝতে পারবেন না। সাহায্য চাওয়ার জন্য কিছুটা নম্র হওয়ার দরকার হতে পারে, কিন্তু অস্বস্তিবোধ করার কারণে পিছিয়ে যাবেন না। যিশু বলেছিলেন যে, শিশুর মতো নম্র হওয়া প্রশংসার বিষয়। (মথি ১৮:২-৪) আর আমরা জানি যে, বাচ্চারা অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে থাকে। ঈশ্বর চান যেন আপনি উত্তরগুলো খুঁজে বের করেন। বাইবেল কিছু ব্যক্তির প্রশংসা করে, যারা ঈশ্বর সম্বন্ধে জানতে উৎসুক ছিল। তারা যা শিখেছিল তা যে সত্য, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারা মনোযোগপূর্বক শাস্ত্র পরীক্ষা করে দেখেছিল।—পড়ুন, প্রেরিত ১৭:১১.

২৪ যিহোবা সম্বন্ধে জানার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে বাইবেল পরীক্ষা করা। এটি অন্য যেকোনো বইয়ের চেয়ে আলাদা। কোন দিক দিয়ে? পরবর্তী অধ্যায়ে সেই বিষয়টা বিবেচনা করা হবে।

^ অনু. 15 পরিশিষ্টে দেওয়া “ঐশিক নাম—এটার ব্যবহার ও অর্থ” শিরোনামের প্রবন্ধে ঈশ্বরের নামের অর্থ ও উচ্চারণ নিয়ে আরও তথ্য রয়েছে।