সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় চার

যিশু খ্রিস্ট কে?

যিশু খ্রিস্ট কে?
  • যিশুর বিশেষ ভূমিকা কী?

  • তিনি কোথা থেকে এসেছিলেন?

  • তিনি কী ধরনের ব্যক্তি ছিলেন?

১, ২. (ক) কেন বিখ্যাত কারো সম্বন্ধে জানা বলতে বোঝায় না যে, আপনি সত্যিই তাকে জানেন? (খ) যিশুর সম্বন্ধে কোন বিভ্রান্তি রয়েছে?

জগতে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি রয়েছে। কেউ কেউ তাদের নিজেদের সমাজ, শহর বা দেশে সুপরিচিত। অন্যেরা সারা বিশ্বে পরিচিত। কিন্তু, কেবল বিখ্যাত কারো নাম জানা থাকলেই তা বোঝায় না যে, আপনি সত্যি সত্যি তাকে জানেন। এটা বোঝায় না যে, আপনি তার পটভূমি এবং ব্যক্তি হিসেবে তিনি কেমন, তা বিস্তারিতভাবে জানেন।

সারা পৃথিবীর লোকেরা যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে কিছু-না-কিছু শুনেছে, যদিও তিনি প্রায় ২,০০০ বছর আগে পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন। তা সত্ত্বেও, যিশু আসলে কে ছিলেন, তা নিয়ে অনেকে বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। কেউ কেউ বলে যে, তিনি নিতান্তই একজন ভালো মানুষ ছিলেন। অন্যেরা দাবি করে যে, তিনি একজন ভাববাদী ছাড়া আর কিছুই ছিলেন না। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে, যিশু হলেন ঈশ্বর এবং তাঁকে উপাসনা করা উচিত। আসলেই কি তাঁকে উপাসনা করা উচিত?

৩. যিহোবা ঈশ্বর ও যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে জানা আপনার জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?

যিশু সম্বন্ধে সত্য জানা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেন? কারণ বাইবেল বলে: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।” (যোহন ১৭:৩) হ্যাঁ, যিহোবা ঈশ্বর ও যিশু খ্রিস্টকে প্রকৃতরূপে জানা, এক পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করতে পারে। (যোহন ১৪:৬) অধিকন্তু, কীভাবে জীবনযাপন করতে হয় ও অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়, সেই সম্বন্ধে যিশু সর্বোত্তম উদাহরণস্থাপন করেন। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) এই বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে আমরা ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন আসুন আমরা বিবেচনা করি যে, বাইবেল যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়।

প্রতিজ্ঞাত মশীহ

৪. “মশীহ” এবং “খ্রিস্ট” উপাধিগুলোর অর্থ কী?

যিশুর জন্মের অনেক আগে, বাইবেল এমন একজন ব্যক্তির আগমনের বিষয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল, ঈশ্বর যাঁকে মশীহ বা খ্রিস্ট হিসেবে পাঠাবেন। “মশীহ” (এক ইব্রীয় শব্দ থেকে) এবং “খ্রিস্ট” (এক গ্রিক শব্দ থেকে), দুটো উপাধিরই অর্থ হচ্ছে “অভিষিক্ত ব্যক্তি।” এই প্রতিজ্ঞাত ব্যক্তি হবেন অভিষিক্ত অর্থাৎ তিনি এক বিশেষ পদমর্যাদায় ঈশ্বরের দ্বারা নিযুক্ত হবেন। এই বইয়ের পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আমরা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতায় মশীহের গুরুত্বপূর্ণ স্থান সম্বন্ধে আরও বেশি কিছু শিখব। এ ছাড়া, আমরা সেই আশীর্বাদগুলো সম্বন্ধেও আরও বেশি কিছু শিখব, যেগুলো যিশু এমনকী এখনই আনতে পারেন। তবে, যিশু জন্মগ্রহণ করার আগে, নিঃসন্দেহে অনেকেই ভেবেছিল যে, ‘কে সেই মশীহ হিসেবে প্রমাণিত হবেন?’

৫. যিশু সম্বন্ধে তাঁর শিষ্যরা কোন বিষয়ে সম্পূর্ণ দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন?

প্রথম শতাব্দীতে, নাসরতের যিশুর শিষ্যরা সম্পূর্ণ দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন যে, তিনিই ছিলেন ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত সেই মশীহ। (যোহন ১:৪১) শিমোন পিতর নামে, শিষ্যদের মধ্যে একজন খোলাখুলিভাবে যিশুকে বলেছিলেন: “আপনি সেই খ্রীষ্ট।” (মথি ১৬:১৬) কিন্তু, কীভাবে সেই শিষ্যরা নিশ্চিত হতে পেরেছিলেন এবং কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, প্রকৃতপক্ষে যিশুই হচ্ছেন প্রতিজ্ঞাত মশীহ?

৬. উদাহরণের সাহায্যে বলুন যে, মশীহকে শনাক্ত করতে যিহোবা বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের কীভাবে সাহায্য করেছেন।

ঈশ্বরের যে-ভাববাদীরা যিশুর আগে বাস করতেন, তারা মশীহ সম্বন্ধে অনেক বিস্তারিত বিষয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন। এই বিস্তারিত বিষয়গুলো অন্যদেরকে তাঁকে শনাক্ত করতে সাহায্য করবে। আমরা হয়তো বিষয়গুলোকে এভাবে উদাহরণের সাহায্যে স্পষ্ট করতে পারি: ধরুন আপনাকে এক ব্যস্ততম বাস স্টেশন বা ট্রেন স্টেশন কিংবা বিমানবন্দর থেকে এমন কাউকে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে, যাকে আপনি আগে কখনো দেখেননি। কেউ যদি তার সম্বন্ধে আপনাকে বিস্তারিতভাবে কিছু বিষয় জানায়, তা হলে সেটা কি আপনাকে সাহায্য করবে না? একইভাবে, বাইবেলে বর্ণিত ভাববাদীদের মাধ্যমে, যিহোবা বেশ বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন যে, মশীহ কী করবেন এবং তাঁকে কী ভোগ করতে হবে। এই ধরনের অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণীর পরিপূর্ণতা বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের তাঁকে স্পষ্টভাবে শনাক্ত করতে সাহায্য করবে।

৭. ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলোর মধ্যে দুটো কী, যা যিশুর ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ হয়েছিল?

শুধুমাত্র দুটো উদাহরণ বিবেচনা করুন। প্রথমত, ৭০০ বছরেরও বেশি আগে ভাববাদী মীখা ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, প্রতিজ্ঞাত ব্যক্তি যিহূদা দেশের এক ছোট্ট শহর বৈৎলেহমে জন্মগ্রহণ করবেন। (মীখা ৫:২) যিশু আসলে কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন? ঠিক সেই শহরেই! (মথি ২:১, ৩-৯) দ্বিতীয়ত, অনেক শতাব্দী আগেই দানিয়েল ৯:২৫ পদে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্‌বাণী ঠিক সেই বছরকেই নির্দেশ করেছিল, যখন মশীহের আবির্ভূত হওয়ার কথা ছিল—২৯ খ্রিস্টাব্দ। * এগুলো এবং আরও অন্যান্য ভবিষ্যদ্‌বাণীর পরিপূর্ণতা প্রমাণ করে যে, যিশুই ছিলেন প্রতিজ্ঞাত মশীহ।

যিশু বাপ্তিস্মের সময় মশীহ বা খ্রিস্ট হয়ে উঠেছিলেন

৮, ৯. যিশুই যে মশীহ ছিলেন, সেটার কোন প্রমাণ তাঁর বাপ্তিস্মের সময় স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল?

যিশুই যে মশীহ ছিলেন, সেই সম্বন্ধে আরও প্রমাণ ২৯ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। সেই বছরই যিশু যর্দন নদীতে বাপ্তাইজিত হওয়ার জন্য যোহন বাপ্তাইজকের কাছে গিয়েছিলেন। যোহন যাতে মশীহকে শনাক্ত করতে পারেন, সেইজন্য যিহোবা তাকে একটা চিহ্ন দেখাবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। যিশুর বাপ্তিস্মের সময় যোহন সেই চিহ্নটা দেখেছিলেন। বাইবেল বলে যে, এইরকম ঘটেছিল: “পরে যীশু বাপ্তাইজিত হইয়া অমনি জল হইতে উঠিলেন; আর দেখ, তাঁহার নিমিত্ত স্বর্গ খুলিয়া গেল, এবং তিনি ঈশ্বরের আত্মাকে কপোতের ন্যায় নামিয়া আপনার উপরে আসিতে দেখিলেন। আর দেখ, স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ‘ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত।’” (মথি ৩:১৬, ১৭) যা ঘটেছিল তা দেখার ও শোনার পর যোহনের কোনো সন্দেহই ছিল না যে, যিশু ঈশ্বরের দ্বারা প্রেরিত হয়েছিলেন। (যোহন ১:৩২-৩৪) সেদিন ঈশ্বরের আত্মা বা সক্রিয় শক্তি যে-মুহূর্তে যিশুর উপর বর্ষিত হয়েছিল, সেই মুহূর্তেই তিনি মশীহ বা খ্রিস্টে পরিণত হয়েছিলেন, যিনি নেতা ও রাজা হওয়ার জন্য নিযুক্ত।—যিশাইয় ৫৫:৪.

বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীর পরিপূর্ণতা ও যিহোবা ঈশ্বরের নিজের সাক্ষ্য স্পষ্টভাবে দেখায় যে, যিশুই ছিলেন প্রতিজ্ঞাত মশীহ। কিন্তু, বাইবেল যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে আরও দুটো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেয়: তিনি কোথা থেকে এসেছিলেন এবং তিনি কী ধরনের ব্যক্তি ছিলেন?

যিশু কোথা থেকে এসেছিলেন?

১০. যিশু পৃথিবীতে আসার আগে তাঁর অস্তিত্ব সম্বন্ধে বাইবেল কী শিক্ষা দেয়?

১০ বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, পৃথিবীতে আসার আগে যিশু স্বর্গে বাস করতেন। মীখা ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, মশীহ বৈৎলেহমে জন্মগ্রহণ করবেন এবং এও বলেছিলেন যে, তাঁর উৎপত্তি ছিল “প্রাক্কাল হইতে।” (মীখা ৫:২) অনেক বার যিশু নিজে বলেছিলেন যে, মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করার আগে তিনি স্বর্গে বাস করতেন। (পড়ুন, যোহন ৩:১৩; ৬:৩৮, ৬২; ১৭:৪, ৫) স্বর্গে এক আত্মিক প্রাণী হিসেবে যিহোবার সঙ্গে যিশুর এক বিশেষ সম্পর্ক ছিল।

১১. কীভাবে বাইবেল দেখায় যে, যিশুই হলেন যিহোবার সবচেয়ে প্রিয় পুত্র?

১১ যিশু হলেন যিহোবার সবচেয়ে প্রিয় পুত্র—এবং এর উপযুক্ত কারণও রয়েছে। তাঁকে বলা হয় “সমুদয় সৃষ্টির প্রথমজাত” কারণ তিনি ছিলেন ঈশ্বরের প্রথম সৃষ্টি। * (কলসীয় ১:১৫) আরও কিছু রয়েছে, যা এই পুত্রকে বিশিষ্ট করে তোলে। তিনি হলেন ‘একজাত পুত্ত্র।’ (যোহন ৩:১৬) এর অর্থ হল, একমাত্র যিশুই ঈশ্বরের দ্বারা সরাসরি সৃষ্ট হয়েছেন। সেইসঙ্গে যিশুই হলেন একমাত্র ব্যক্তি, যাঁকে ঈশ্বর অন্যান্য সমস্তকিছু সৃষ্টি করার সময় ব্যবহার করেছিলেন। (কলসীয় ১:১৬) এ ছাড়া, যিশুকে ‘বাক্যও’ বলা হয়ে থাকে। (যোহন ১:১৪) এটা আমাদের জানায় যে, তিনি ঈশ্বরের হয়ে কথা বলেছিলেন, নিঃসন্দেহে পিতার অন্যান্য পুত্রকে, আত্মিক ও মানব উভয়কে বার্তা ও নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন।

১২. কীভাবে আমরা জানি যে, প্রথমজাত পুত্র ঈশ্বরের সমতুল্য নন?

১২ প্রথমজাত পুত্র কি ঈশ্বরের সমতুল্য, যেমনটা কেউ কেউ বিশ্বাস করে থাকে? বাইবেল তা শিক্ষা দেয় না। আগের অনুচ্ছেদে আমরা যেমন দেখেছি যে, পুত্রকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। তাহলে এটা স্পষ্ট যে, তাঁর একটা শুরু ছিল, যেখানে যিহোবা ঈশ্বরের কোনো শুরু বা শেষ কিছুই নেই। (গীতসংহিতা ৯০:২) একজাত পুত্র কখনোই তাঁর পিতার সমতুল্য হওয়ার চেষ্টা করার বিষয়টা এমনকী মাথায়ও আনেননি। বাইবেল স্পষ্টভাবে শিক্ষা দেয় যে, পিতা পুত্রের চেয়ে মহান। (পড়ুন, যোহন ১৪:২৮; ১ করিন্থীয় ১১:৩) একা যিহোবাই “সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বর।” (আদিপুস্তক ১৭:১) তাই, তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। *

১৩. বাইবেল যখন পুত্রকে “অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি” হিসেবে উল্লেখ করে, তখন তা কী বোঝায়?

১৩ যিহোবা ও তাঁর প্রথমজাত পুত্র কোটি কোটি বছর ধরে—তারকাখচিত আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টির বহু আগে থেকেই—এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করেছিলেন। তারা একে অন্যকে নিশ্চয় কতই-না ভালোবেসেছেন! (যোহন ৩:৩৫; ১৪:৩১) এই প্রিয় পুত্র ঠিক তাঁর পিতার মতোই ছিলেন। সেইজন্য বাইবেল পুত্রকে “অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি” হিসেবে উল্লেখ করে। (কলসীয় ১:১৫) হ্যাঁ, এমনকী একজন মানবপুত্র যেমন নানা দিক দিয়ে তাঁর পিতার মতো হয়ে থাকে, তেমনই এই স্বর্গীয় পুত্র তাঁর পিতার গুণাবলি ও ব্যক্তিত্বকে প্রতিফলিত করেছিলেন।

১৪. কীভাবে যিহোবার একজাত পুত্র একজন মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন?

১৪ যিহোবার একজাত পুত্র স্বেচ্ছায় স্বর্গ ত্যাগ করেছিলেন এবং মানুষ হিসেবে বাস করার জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন। কিন্তু আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, ‘এক আত্মিক প্রাণীর পক্ষে কীভাবে একজন মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছিল?’ এটা সম্পাদন করার জন্য যিহোবা এক অলৌকিক কাজ করেছিলেন। তিনি তাঁর একজাত পুত্রের জীবন স্বর্গ থেকে মরিয়ম নামে এক যিহুদি কুমারীর গর্ভে স্থানান্তরিত করেছিলেন। কোনো মানবপিতা এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ফলে, মরিয়ম এক সিদ্ধ পুত্রের জন্ম দিয়েছিলেন এবং তাঁর নাম যিশু রেখেছিলেন।—লূক ১:৩০-৩৫.

যিশু কী ধরনের ব্যক্তি ছিলেন?

১৫. কেন আমরা বলতে পারি যে, যিশুর মাধ্যমে আমরা যিহোবাকে আরও ভালোভাবে জানতে পেরেছি?

১৫ পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু যা বলেছিলেন ও করেছিলেন, তা আমাদের তাঁকে ভালোভাবে জানতে সাহায্য করে।এর চেয়েও বড়ো কথা, যিশুর মাধ্যমেই আমরা যিহোবাকে আরও ভালোভাবে জেনেছি। বিষয়টা কেন এইরকম? মনে করে দেখুন যে, এই পুত্র হচ্ছেন তাঁর পিতার এক নিখুঁত প্রতিফলন। সেইজন্য যিশু তাঁর শিষ্যদের মধ্যে একজনকে বলেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।” (যোহন ১৪:৯) সুসমাচারের বিবরণ হিসেবে পরিচিত বাইবেলের চারটি পুস্তক—মথি, মার্ক, লূক ও যোহন—যিশু খ্রিস্টের জীবন, কাজ ও ব্যক্তিগত গুণাবলি সম্বন্ধে আমাদের অনেক কিছু জানায়।

১৬. যিশুর মূল বার্তা কী ছিল আর তাঁর শিক্ষাগুলো কোথা থেকে এসেছিল?

১৬ যিশু “গুরু” বা শিক্ষক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। (যোহন ১:৩৮; ১৩:১৩) তিনি কী শিক্ষা দিয়েছিলেন? তাঁর বার্তা ছিল মূলত “রাজ্যের সুসমাচার,” যে-রাজ্য হল ঈশ্বরের রাজ্য অর্থাৎ স্বর্গীয় সরকার, যা পুরো পৃথিবীর উপর শাসন করবে এবং বাধ্য মানবজাতির উপর অশেষ আশীর্বাদ নিয়ে আসবে। (মথি ৪:২৩) এটা কার বার্তা ছিল? যিশু নিজে বলেছিলেন: “আমার উপদেশ আমার নহে, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার,” অর্থাৎ যিহোবার। (যোহন ৭:১৬) যিশু জানতেন যে, তাঁর পিতা চান যেন মানুষ রাজ্যের সুসমাচার সম্বন্ধে শুনতে পায়। ৮ অধ্যায়ে আমরা ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে এবং এটা যা সম্পাদন করবে, সেই বিষয়ে আরও বেশি কিছু জানব।

১৭. যিশু কোথায় তাঁর শিক্ষা দিয়েছিলেন আর কেন তিনি অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য এতটা প্রাণপণ করেছিলেন?

১৭ যিশু কোথায় তাঁর শিক্ষা দিয়েছিলেন? যেখানেই তিনি লোকেদের পেয়েছিলেন—পল্লিতে পল্লিতে এবং সেইসঙ্গে নগরে নগরে, গ্রামে গ্রামে, বাজারে বাজারে ও তাদের ঘরে ঘরে। যিশু আশা করেননি যে, লোকেরা তাঁর কাছে আসবে। তিনিই তাদের কাছে গিয়েছিলেন। (মার্ক ৬:৫৬; লূক ১৯:৫, ৬) কেন যিশু এতটা প্রাণপণ করেছিলেন এবং প্রচার ও শিক্ষাদানের কাজে এতখানি সময় ব্যয় করেছিলেন? কারণ এটাই ছিল তাঁর জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা। যিশু সবসময় তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করতেন। (যোহন ৮:২৮, ২৯) কিন্তু তাঁর প্রচার করার পিছনে আরেকটা কারণ ছিল। যারা তাঁকে দেখতে এসেছিল, সেই লোকেদের প্রতি তিনি সমবেদনা বোধ করেছিলেন। (পড়ুন, মথি ৯:৩৫, ৩৬.) তারা তাদের ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা উপেক্ষিত হয়েছিল, যাদের উচিত ছিল তাদেরকে ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সত্য শিক্ষা দেওয়া। যিশু জানতেন যে, লোকেদের রাজ্যের বার্তা শোনা কতটা প্রয়োজন ছিল।

১৮. যিশুর কোন গুণাবলি আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি হৃদয়গ্রাহী বলে মনে হয়?

১৮ যিশু ছিলেন কোমল উষ্ণতা ও গভীর অনুভূতিসম্পন্ন একজন ব্যক্তি। ফলে অন্যেরা দেখেছিল যে, তাঁর কাছে সহজেই যাওয়া যায় ও তিনি সদয়। এমনকী শিশুরাও তাঁর কাছে স্বচ্ছন্দবোধ করত। (মার্ক ১০:১৩-১৬) যিশু ছিলেন পক্ষপাতহীন। তিনি দুর্নীতি এবং অবিচারকে ঘৃণা করতেন। (মথি ২১:১২, ১৩) এমন এক সময়, যে-সময়ে কিনা নারীদেরকে সামান্য সম্মান দেখানো হতো এবং বলতে গেলে কোনো অধিকারই তাদের ছিল না, সেই সময়ে যিশু তাদের প্রতি মর্যাদা দেখিয়ে আচরণ করেছিলেন। (যোহন ৪:৯, ২৭) যিশু ছিলেন অকৃত্রিমভাবে নম্র। একবার তিনি তাঁর প্রেরিতদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন, যে-কাজটা সাধারণত এক নিচু শ্রেণীর দাস করত।

যিশু যেখানেই লোকেদের পেয়েছিলেন, সেখানেই প্রচার করেছিলেন

১৯. কোন উদাহরণ দেখায় যে, যিশু অন্যদের চাহিদাগুলোর প্রতি অনুভূতিশীল ছিলেন?

১৯ যিশু অন্যদের চাহিদাগুলোর ব্যাপারে অনুভূতিশীল ছিলেন। এটা বিশেষভাবে সেই সময় স্পষ্ট হয়েছিল, যখন ঈশ্বরের আত্মার শক্তিতে তিনি অলৌকিকভাবে আরোগ্যসাধন করেছিলেন। (মথি ১৪:১৪) উদাহরণ স্বরূপ, একজন কুষ্ঠরোগী যিশুর কাছে এসে বলেছিলেন: “যদি আপনার ইচ্ছা হয়, আমাকে শুচি করিতে পারেন।” যিশু ব্যক্তিগতভাবে এই ব্যক্তির ব্যথা ও কষ্ট অনুভব করেছিলেন। করুণাবিষ্ট হয়ে যিশু তাঁর হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং সেই ব্যক্তিকে স্পর্শ করে বলেছিলেন: “আমার ইচ্ছা, তুমি শুচীকৃত হও।” আর সেই অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন! (মার্ক ১:৪০-৪২) সেই ব্যক্তি কেমন বোধ করেছিলেন, তা কি আপনি কল্পনা করতে পারেন?

শেষ পর্যন্ত বিশ্বস্ত

২০, ২১. কীভাবে যিশু, ঈশ্বরের প্রতি অনুগত বাধ্যতার উদাহরণস্থাপন করেছিলেন?

২০ যিশু, ঈশ্বরের প্রতি অনুগত বাধ্যতার সর্বোত্তম উদাহরণস্থাপন করেছিলেন। তিনি সব ধরনের পরিস্থিতিতে এবং সব ধরনের বিরোধিতা ও কষ্ট সত্ত্বেও, তাঁর স্বর্গীয় পিতার প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছিলেন। শয়তানের পরীক্ষা বা প্রলোভনগুলোকে যিশু দৃঢ়তার সঙ্গে ও সফলভাবে প্রতিরোধ করেছিলেন। (মথি ৪:১-১১) একবার যিশুর নিজের কিছু আত্মীয় তাঁর উপর বিশ্বাসস্থাপন করেনি, এমনকী তারা বলেছিল যে তিনি “হতজ্ঞান” হয়ে গিয়েছেন। (মার্ক ৩:২১) কিন্তু যিশু নিজেকে তাদের দ্বারা প্রভাবিত হতে দেননি; তিনি ঈশ্বরের কাজ করে চলেছিলেন। অপমান ও খারাপ ব্যবহার সত্ত্বেও, যিশু আত্মসংযম বজায় রেখেছিলেন, কখনো তাঁর বিরোধীদের ক্ষতি করার চেষ্টা করেননি।—১ পিতর ২:২১-২৩.

২১ যিশু মৃত্যু পর্যন্ত—তাঁর শত্রুদের হাতে এক নিষ্ঠুর ও বেদনাদায়ক মৃত্যু পর্যন্ত—বিশ্বস্ত ছিলেন। (পড়ুন, ফিলিপীয় ২:৮.) মানুষ হিসেবে তাঁর জীবনের শেষ দিনে তিনি কী সহ্য করেছিলেন, তা বিবেচনা করুন। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তিনি মিথ্যা সাক্ষিদের দ্বারা অভিযুক্ত হয়েছিলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকদের দ্বারা অপরাধী বলে প্রতিপন্ন হয়েছিলেন, জনতা তাঁকে উপহাস করেছিল এবং সৈন্যদের দ্বারা তিনি নির্যাতিত হয়েছিলেন। একটা দণ্ডে বিদ্ধ হয়ে তিনি তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন, চিৎকার করে বলেছিলেন: “সমাপ্ত হইল।” (যোহন ১৯:৩০; প্রেরিত ৫:৩০) কিন্তু, যিশু মারা যাওয়ার পর তৃতীয় দিনে তাঁর স্বর্গীয় পিতা তাঁকে আত্মিক জীবনে পুনরুত্থিত করেছিলেন। (১ পিতর ৩:১৮) কয়েক সপ্তাহ পর, তিনি স্বর্গে ফিরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি “ঈশ্বরের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইলেন” এবং রাজকীয় ক্ষমতা লাভ করার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন।—ইব্রীয় ১০:১২, ১৩.

২২. মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকার দ্বারা যিশু কী সম্পাদন করেছিলেন?

২২ মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকার দ্বারা যিশু কী সম্পাদন করেছিলেন? যিশুর মৃত্যু আসলে যিহোবার আদি উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে আমাদের জন্য এক পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবন লাভ করার সুযোগ খুলে দেয়। যিশুর মৃত্যু কীভাবে তা সম্ভবপর করে, তা পরের অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে।

^ অনু. 7 দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণীর এক ব্যাখ্যা, যা যিশুর ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ হয়েছিল, সেই বিষয়ে জানার জন্য পরিশিষ্টে দেওয়া “দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী যেভাবে মশীহের আগমন সম্বন্ধে জানায়” শিরোনামের প্রবন্ধ দেখুন।

^ অনু. 11 যিহোবাকে একজন পিতা বলা হয় কারণ তিনি হলেন সৃষ্টিকর্তা। (যিশাইয় ৬৪:৮) যেহেতু যিশুকে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছিলেন, তাই তাঁকে বলা হয় ঈশ্বরের পুত্র। একই কারণগুলোর জন্য অন্যান্য আত্মিক প্রাণীকে ও এমনকী মনুষ্য আদমকে বলা হয় ঈশ্বরের পুত্র।—ইয়োব ১:৬; লূক ৩:৩৮.

^ অনু. 12 প্রথমজাত পুত্র যে ঈশ্বরের সমতুল্য নন, সেই বিষয়ে আরও প্রমাণের জন্য পরিশিষ্টে দেওয়া “পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা সম্বন্ধে সত্যটা” শিরোনামের প্রবন্ধ দেখুন।