সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় এগারো

কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন?

কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন?
  • ঈশ্বর কি এই জগতে দুঃখকষ্ট ঘটিয়েছেন?

  • এদন উদ্যানে কোন বিচার্য বিষয় উত্থাপিত হয়েছিল?

  • মানুষের দুঃখকষ্টের প্রভাবগুলোকে ঈশ্বর কীভাবে দূর করবেন?

১, ২. আজকে লোকেরা কী ধরনের দুঃখকষ্টের মুখোমুখি হয় আর তা অনেককে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পরিচালিত করে?

যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশে এক ভয়ানক লড়াইয়ের পর, নিহত হাজার হাজার সাধারণ নারী ও শিশুকে প্রতীকচিহ্ন দিয়ে ঘেরা এক গণকবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল। প্রত্যেকটা প্রতীকচিহ্নে এই কথা খোদাই করা ছিল: “কেন?” কখনো কখনো এটাই সবচেয়ে বেদনাদায়ক প্রশ্ন হয়ে থাকে। যখন যুদ্ধ, দুর্যোগ, রোগব্যাধি বা অপরাধ তাদের নির্দোষ প্রিয়জনদের জীবন কেড়ে নেয়, তাদের ঘরবাড়ি নষ্ট করে দেয় কিংবা অন্যান্যভাবে তাদের জন্য অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট নিয়ে আসে, তখন লোকেরা দুঃখের সঙ্গে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। তারা জানতে চায় যে, কেন এই ধরনের দুঃখজনক বিষয়গুলো তাদের প্রতি ঘটে থাকে।

কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন? যিহোবা ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান, প্রেমময়, বিজ্ঞ এবং ন্যায়বিচারক হয়ে থাকেন, তা হলে কেন এই জগৎ এত ঘৃণা এবং অন্যায়ে পরিপূর্ণ? আপনি কি নিজে কখনো এই বিষয়গুলো নিয়ে ভেবে দেখেছেন?

৩, ৪. (ক) কী দেখায় যে, কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন তা জিজ্ঞেস করা অন্যায় নয়? (খ) দুষ্টতা এবং দুঃখকষ্ট সম্বন্ধে যিহোবা কেমন বোধ করেন?

কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন, তা জিজ্ঞেস করা কি অন্যায়? কেউ কেউ এই ভেবে দুশ্চিন্তা করে যে, এই ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার মানে বোঝাবে তাদের যথেষ্ট বিশ্বাস নেই বা তারা ঈশ্বরের প্রতি অসম্মান দেখাচ্ছে। কিন্তু, বাইবেল পড়ার সময় আপনি দেখতে পাবেন যে বিশ্বস্ত, ঈশ্বর ভয়শীল লোকেদের মনেও একইরকম প্রশ্নগুলো এসেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, ভাববাদী হবক্‌কূক যিহোবাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তুমি কেন আমাকে অধর্ম্ম দেখাইতেছ, কেন দুষ্কার্য্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতেছ? লুটপাট ও দৌরাত্ম্য আমার সম্মুখে হইতেছে, বিরোধ উপস্থিত, বিসংবাদ বাড়িয়া উঠিতেছে।”—হবক্‌কূক ১:৩.

যিহোবা সমস্ত দুঃখকষ্ট শেষ করে দেবেন

এই ধরনের প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করায় যিহোবা কি বিশ্বস্ত ভাববাদী হবক্‌কূককে তিরস্কার করেছিলেন? না। এর পরিবর্তে, ঈশ্বর অনুপ্রাণিত বাইবেলের নথিতে হবক্‌কূকের অকপট কথাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এ ছাড়া, ঈশ্বর তাকে বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে আরও স্পষ্ট বোধগম্যতা এবং আরও অধিক বিশ্বাস অর্জন করতে সাহায্য করেছিলেন। যিহোবা আপনার বেলায়ও একই বিষয় করতে চান। মনে রাখবেন বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, “তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।” (১ পিতর ৫:৭) ঈশ্বর দুষ্টতাকে এবং এটা যে-দুঃখকষ্ট নিয়ে আসে, সেটাকে যেকোনো মানুষের চেয়ে আরও বেশি ঘৃণা করেন। (যিশাইয় ৫৫:৮, ৯) তাহলে, কেন জগতে এত দুঃখকষ্ট রয়েছে?

কেন এত দুঃখকষ্ট?

৫. মানুষের দুঃখকষ্ট সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কোন কারণগুলো দেখানো হয়, কিন্তু বাইবেল কী শিক্ষা দেয়?

বিভিন্ন ধর্মের লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতা ও শিক্ষকদের কাছে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার জন্য গিয়েছে যে, কেন এত দুঃখকষ্ট রয়েছে। প্রায়ই এর উত্তর পাওয়া যায়, দুঃখকষ্ট ঈশ্বরের ইচ্ছায় হয়ে থাকে এবং তিনি বহু পূর্বেই দুঃখজনক ঘটনাগুলো-সহ কী কী ঘটবে, সমস্তই স্থির করে রেখেছেন। অনেককে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বরের পথ রহস্যময় বা তিনি লোকেদের—এমনকী শিশুদের—মৃত্যু ঘটান, যাতে তিনি তাদেরকে স্বর্গে তাঁর সঙ্গে থাকার জন্য নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু, আপনি যেমন শিখেছেন যে, যিহোবা ঈশ্বর কখনো মন্দ কিছু ঘটান না। বাইবেল বলে: “ইহা দূরে থাকুক যে, ঈশ্বর দুষ্কার্য্য করিবেন, সর্ব্বশক্তিমান্‌ অন্যায় করিবেন।”—ইয়োব ৩৪:১০.

৬. কেন অনেক লোক জগতের দুঃখকষ্টের জন্য ঈশ্বরকে দোষ দেওয়ার মতো ভুল করে থাকে?

আপনি কি জানেন যে, কেন লোকেরা জগতে ঘটা সমস্ত দুঃখকষ্টের জন্য ঈশ্বরকে দোষ দেওয়ার মতো ভুল করে থাকে? অনেক ক্ষেত্রে, তারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে দোষ দেয় কারণ তারা মনে করে যে, তিনি হচ্ছেন এই জগতের প্রকৃত শাসক। তারা এক সরল অথচ গুরুত্বপূর্ণ সত্য জানে না, যা বাইবেল শিক্ষা দেয়। আপনি এই বইয়ের ৩ অধ্যায়ে সেই সত্যটা শিখেছেন। এই জগতের প্রকৃত শাসক হচ্ছে শয়তান দিয়াবল।

৭, ৮. (ক) কীভাবে এই জগৎ এর শাসকের ব্যক্তিত্বকে প্রতিফলিত করে? (খ) কীভাবে মানুষের অসিদ্ধতা এবং “কাল ও দৈব” দুঃখকষ্টের দিকে পরিচালিত করেছে?

বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে: “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) আপনি যখন এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করেন, তখন সেটা কি আপনার কাছে অর্থপূর্ণ বলে মনে হয় না? এই জগৎ সেই অদৃশ্য আত্মিক প্রাণীর ব্যক্তিত্বকে প্রতিফলিত করে, যে “সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মায়” বা জন্মাচ্ছে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) শয়তান হচ্ছে ঘৃণাপূর্ণ, প্রতারক এবং নিষ্ঠুর। তাই তার প্রভাবাধীন জগৎ ঘৃণা, প্রতারণা ও নিষ্ঠুরতায় পরিপূর্ণ। এত দুঃখকষ্ট থাকার পিছনে এটা হচ্ছে একটা কারণ।

তিন অধ্যায়ে যেমন আলোচনা করা হয়েছে, এত দুঃখকষ্ট থাকার পিছনে দ্বিতীয় কারণটা হচ্ছে, এদন উদ্যানে সেই বিদ্রোহের সময় থেকেই মানবজাতি অসিদ্ধ এবং পাপপূর্ণ। পাপী মানুষেরা কর্তৃত্বের জন্য লড়াই করে থাকে আর এর ফল স্বরূপ যুদ্ধ, নিপীড়ন ও দুঃখকষ্ট ভোগ করতে হয়। (উপদেশক ৪:১; ৮:৯) দুঃখকষ্টের তৃতীয় কারণটা হচ্ছে, “কাল ও দৈব।” (পড়ুন, উপদেশক ৯:১১.) যে-জগতে সুরক্ষাকারী শাসক হিসেবে যিহোবা নেই, সেখানে লোকেরা ভুল সময়ে ভুল জায়গায় যাওয়ার কারণে হয়তো দুঃখকষ্ট ভোগ করতে পারে।

৯. কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, দুঃখকষ্ট ক্রমাগত থাকতে দেওয়ার পিছনে যিহোবার বৈধ কারণ রয়েছে?

এটা জানা আমাদের জন্য সান্ত্বনাদায়ক যে, ঈশ্বর দুঃখকষ্ট ঘটান না। যুদ্ধ, অপরাধ, নিপীড়ন বা এমনকী প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো, যেগুলো লোকেদের জন্য দুঃখকষ্ট নিয়ে আসে, সেগুলোর জন্য তিনি দায়ী নন। তা সত্ত্বেও, আমাদের জানতে হবে যে, কেন যিহোবা এই সমস্ত দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন? তিনি যদি সর্বশক্তিমান হয়ে থাকেন, তা হলে এটা বন্ধ করার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। তা হলে, কেন তিনি তা ব্যবহার করেন না? যে-প্রেমময় ঈশ্বর সম্বন্ধে আমরা জানতে পেরেছি, তাঁর নিশ্চয়ই এর পিছনে এক বৈধ কারণ রয়েছে।—১ যোহন ৪:৮.

এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয় উত্থাপিত হয়

১০. শয়তান কোন বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিল এবং কীভাবে?

১০ কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন, তা জানার জন্য আমাদের সেই সময়ের কথা চিন্তা করতে হবে, যখন দুঃখকষ্ট শুরু হয়েছিল। শয়তান যখন আদম ও হবাকে যিহোবার অবাধ্য হতে পরিচালিত করেছিল, তখন এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। শয়তান যিহোবার শক্তি নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেনি। এমনকী শয়তানও জানে যে, যিহোবার শক্তি অসীম। এর পরিবর্তে, যিহোবার শাসন করার অধিকার নিয়ে শয়তান প্রশ্ন তুলেছিল। ঈশ্বরকে একজন মিথ্যাবাদী—যিনি তাঁর প্রজাদের ভালো কিছু থেকে বঞ্চিত করেন—বলার দ্বারা শয়তান অভিযোগ করেছিল যে, যিহোবা হচ্ছেন একজন মন্দশাসক। (পড়ুন, আদিপুস্তক ৩:২-৫.) শয়তান ইঙ্গিত করেছিল যে, মানবজাতি ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থা ছাড়া আরও ভালো থাকতে পারবে। এটা যিহোবার সার্বভৌমত্বের, তাঁর শাসন করার অধিকারের উপর এক আক্রমণ ছিল।

১১. কেন যিহোবা এদনে বিদ্রোহীদের ধ্বংস করে দেননি?

১১ আদম ও হবা যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। আসলে, তারা বলেছিল: ‘যিহোবাকে আমাদের শাসক হিসেবে প্রয়োজন নেই। কোনটা ঠিক ও কোনটা ভুল তা আমরা নিজেরাই স্থির করতে পারব।’ সেই বিচার্য বিষয়টা যিহোবা কীভাবে মীমাংসা করতে পারতেন? বুদ্ধিবিশিষ্ট সমস্ত প্রাণীকে তিনি কীভাবে শিক্ষা দিতে পারতেন যে, বিদ্রোহীরা ভুল ছিল এবং তাঁর পথ ছিল সত্যিই সর্বোত্তম? কেউ হয়তো বলতে পারে যে, ঈশ্বরের কেবল বিদ্রোহীদের ধ্বংস করা ও সমস্তকিছু নতুনভাবে শুরু করা উচিত ছিল। কিন্তু যিহোবা, আদম ও হবার বংশধর দিয়ে পৃথিবীকে পূর্ণ করার ব্যাপারে তাঁর উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছিলেন আর তিনি চেয়েছিলেন, যেন তারা এক পার্থিব পরমদেশে বাস করে। (আদিপুস্তক ১:২৮) যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সবসময় পূর্ণ করেন। (যিশাইয় ৫৫:১০, ১১) তা ছাড়া, এদনে সেই বিদ্রোহীদের কাছ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার মাধ্যমে সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হতো না, যে-প্রশ্ন যিহোবার শাসন করার অধিকার সম্বন্ধে উঠেছিল।

১২, ১৩. উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন যে, কেন যিহোবা শয়তানকে এই জগতের শাসক হয়ে উঠতে দিয়েছেন এবং কেন ঈশ্বর মানুষকে নিজেদের শাসন করার অনুমতি দিয়েছেন।

১২ আসুন আমরা একটা দৃষ্টান্ত বিবেচনা করি। কল্পনা করুন, একজন শিক্ষক তার ছাত্রদের বলছেন যে, কীভাবে এক জটিল প্রশ্নের সমাধান করতে হয়। এক চতুর কিন্তু বিদ্রোহী ছাত্র দাবি করে যে, প্রশ্নটা সমাধানের জন্য শিক্ষকের উপায়টা ভুল। সেই শিক্ষক যোগ্য নন তা ইঙ্গিত করে এই বিদ্রোহী ছাত্র নাছোড়বান্দাভাবে বলতে থাকে যে, প্রশ্নটা সমাধান করার আরও অনেক উপায় সে জানে। কিছু ছাত্র মনে করে যে, তার কথা ঠিক আর তারাও বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। সেই শিক্ষকের তখন কী করা উচিত? তিনি যদি বিদ্রোহী ছাত্রদের ক্লাস থেকে বের করে দেন, তা হলে অন্য ছাত্রদের উপর তা কেমন প্রভাব ফেলবে? তারা কি মনে করবে না যে, তাদের সহছাত্র ও যারা তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে, তারা ঠিকই ছিল? ক্লাসের অন্য সব ছাত্র হয়তো শিক্ষকের প্রতি সম্মান হারিয়ে ফেলবে, এইরকম মনে করে যে, সেই শিক্ষক ভুল প্রমাণিত হওয়ার বিষয়ে ভয় পান। কিন্তু ধরুন, শিক্ষক সেই বিদ্রোহী ছাত্রকে পুরো ক্লাসের সামনে এটা দেখাতে দিলেন যে, সে কীভাবে সেই প্রশ্নটা সমাধান করবে।

ছাত্র কি শিক্ষকের চেয়ে বেশি যোগ্য?

১৩ যিহোবা সেই শিক্ষকের মতো একই ধরনের কিছু করেছেন। মনে করে দেখুন যে, এদনে কেবলমাত্র বিদ্রোহীরাই জড়িত ছিল না। লক্ষ লক্ষ স্বর্গদূত তা দেখছিলেন। (ইয়োব ৩৮:৭; দানিয়েল ৭:১০) যিহোবা সেই বিদ্রোহকে যেভাবে মোকাবিলা করেছিলেন, তা সেইসমস্ত স্বর্গদূত ও পরে সমস্ত বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে। তাই, যিহোবা কী করেছেন? তিনি শয়তানকে এটা দেখাতে দিয়েছেন যে, সে কীভাবে মানবজাতির উপর শাসন করবে। এ ছাড়া, ঈশ্বর মানুষকে শয়তানের নির্দেশনার অধীনে নিজেদের শাসন করতে দিয়েছেন।

১৪. মানুষকে নিজেদের শাসন করতে দেওয়ার ব্যাপারে যিহোবার সিদ্ধান্ত থেকে কোন উপকার আসবে?

১৪ আমাদের দৃষ্টান্তের শিক্ষক জানেন যে, সেই বিদ্রোহী ও তার পক্ষের ছাত্ররা ভুল। কিন্তু তিনি এও জানেন যে, তারা যা বলতে চায়, সেই বিষয়টা তাদের প্রমাণ করার চেষ্টা করতে সুযোগ দেওয়া পুরো ক্লাসকে উপকৃত করবে। বিদ্রোহীরা যখন ব্যর্থ হবে, তখন সমস্ত সৎ ছাত্র বুঝতে পারবে যে, সেই ক্লাসে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একমাত্র সেই শিক্ষকই যোগ্য। তারা বুঝতে পারবে যে, কেন এরপর সেই শিক্ষক যেকোনো বিদ্রোহীকে সেই ক্লাস থেকে বের করে দেন। একইভাবে যিহোবা জানেন যে, সমস্ত সৎহৃদয়ের ব্যক্তি ও স্বর্গদূতেরা এটা দেখার দ্বারা উপকৃত হবে যে, শয়তান ও তার সহবিদ্রোহীরা ব্যর্থ হয়েছে এবং মানুষ নিজে নিজে শাসন করতে পারে না। প্রাচীনকালের যিরমিয়ের মতো, তারা এই অতি গুরুত্বপূর্ণ সত্য শিখতে পারবে: “হে সদাপ্রভু, আমি জানি, মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।”—যিরমিয় ১০:২৩.

কেন এত দীর্ঘসময়?

১৫, ১৬. (ক) কেন যিহোবা এত দীর্ঘসময় ধরে দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন? (খ) কেন যিহোবা ভয়ানক অপরাধগুলোর মতো বিভিন্ন বিষয় ঘটা বন্ধ করেননি?

১৫ কিন্তু, কেন যিহোবা এত দীর্ঘসময় ধরে দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন? আর কেনই-বা তিনি মন্দ বিষয়গুলো ঘটা বন্ধ করেন না? দুটো বিষয় বিবেচনা করুন, যা আমাদের দৃষ্টান্তের শিক্ষক করবেন না। প্রথমত, সেই বিদ্রোহী ছাত্র যখন তার বিষয়টা উপস্থাপন করে, তখন তিনি তাকে থামিয়ে দেবেন না। দ্বিতীয়ত, সেই শিক্ষক বিদ্রোহীকে তার বিষয়টা প্রমাণ করতে সাহায্য করবেন না। একইভাবে, যিহোবা যে-দুটো বিষয় না করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেগুলো বিবেচনা করুন। প্রথমত, তিনি শয়তানকে এবং যারা নিজেদের সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করে শয়তানের পক্ষ নেয়, তাদেরকে থামিয়ে দেননি। তাই, সময় অতিক্রান্ত হতে দেওয়া অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছিল। মানব ইতিহাসের হাজার হাজার বছরে মানবজাতি সমস্ত ধরনের স্বশাসন বা মানবসরকার দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছে। মানবজাতি বিজ্ঞান এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি করেছে কিন্তু অন্যায়, দরিদ্রতা, অপরাধ এবং যুদ্ধ যেকোনো সময়ের চেয়ে মন্দ থেকে মন্দতর হয়েছে। মানবশাসন এখন ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে।

১৬ দ্বিতীয়ত, যিহোবা এই জগৎকে শাসন করার জন্য শয়তানকে সাহায্য করেননি। উদাহরণ স্বরূপ, ঈশ্বর যদি ভয়ানক অপরাধগুলো দমন করতেন, তা হলে কি এটা মূলত বিদ্রোহীদের বিষয়টাকে সমর্থন করা হতো না? ঈশ্বর কি মানুষকে এইরকম চিন্তা করার দিকে পরিচালিত করতেন না যে, কোনোরকম ধ্বংসাত্মক ফলাফল ছাড়াই মানুষ নিজেরাই নিজেদের শাসন করতে পারে? ঈশ্বর যদি সেভাবে কাজ করতেন, তা হলে তিনি এক মিথ্যার অংশীদার হয়ে যেতেন। কিন্তু, “মিথ্যাকথা বলা ঈশ্বরের অসাধ্য।”—ইব্রীয় ৬:১৮.

১৭, ১৮. মানুষের শাসন ও শয়তানের প্রভাবের ফলে যে-সমস্ত ক্ষতি হয়েছে, সেই বিষয়ে যিহোবা কী করবেন?

১৭ কিন্তু, সেইসমস্ত ক্ষতির বিষয়ে কী বলা যায়, যা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে দীর্ঘসময় ধরে করা বিদ্রোহের ফলে ঘটেছে? আমাদের মনে রাখা উচিত যে, যিহোবা হচ্ছেন সর্বশক্তিমান। তাই, তিনি মানবজাতির দুঃখকষ্টের প্রভাবগুলো দূর করতে পারেন এবং করবেন। ইতিমধ্যেই আমরা যেমন শিখেছি যে, পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করার দ্বারা আমাদের গ্রহের ধ্বংস হওয়াকে বাতিল করা হবে। যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে বিশ্বাসের মাধ্যমে পাপের প্রভাবগুলোকে সরিয়ে ফেলা হবে এবং পুনরুত্থানের মাধ্যমে মৃত্যুর প্রভাবগুলোকে বাতিল করে দেওয়া হবে। এভাবে ঈশ্বর ‘দিয়াবলের কার্য্য সকল লোপ করিতে’ যিশুকে ব্যবহার করবেন। (১ যোহন ৩:৮) যিহোবা এই সমস্তকিছুই একেবারে সঠিক সময়ে পরিপূর্ণ করবেন। আমরা আনন্দিত হতে পারি যে, তিনি আগেই পদক্ষেপ নেননি কারণ তাঁর ধৈর্য আমাদের সত্য শেখার ও তাঁকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। (পড়ুন, ২ পিতর ৩:৯, ১০.) এই সময়ের মধ্যে, ঈশ্বর আন্তরিক উপাসকদের সক্রিয়ভাবে অন্বেষণ করছেন এবং তাদের যেকোনো দুঃখকষ্ট সহ্য করতে সাহায্য করছেন, যা এই সমস্যাপূর্ণ জগতে তাদের উপর আসতে পারে।—যোহন ৪:২৩; ১ করিন্থীয় ১০:১৩.

১৮ কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারে যে, ‘ঈশ্বর যদি আদম ও হবাকে এমনভাবে সৃষ্টি করতেন যে তারা বিদ্রোহ করতে পারত না, তা হলে কি এই সমস্ত দুঃখকষ্ট রোধ করা যেত?’ সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আপনাকে এক মূল্যবান উপহার সম্বন্ধে স্মরণ করতে হবে, যা যিহোবা আপনাকে দিয়েছেন।

ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া উপহারকে আপনি কীভাবে ব্যবহার করবেন?

ঈশ্বর আপনাকে দুঃখকষ্ট সহ্য করতে সাহায্য করবেন

১৯. যিহোবা আমাদের কোন মূল্যবান উপহার দিয়েছেন এবং কেন আমাদের এটাকে মূল্যবান বলে গণ্য করা উচিত?

১৯ পাঁচ অধ্যায়ে আমরা যেমন লক্ষ করেছি যে, মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছিল। সেটা কত মূল্যবান এক উপহার, তা কি আপনি উপলব্ধি করেন? ঈশ্বর অগণিত প্রাণী সৃষ্টি করেছেন আর এগুলো মূলত সহজাত প্রবৃত্তির দ্বারা পরিচালিত হয়। মানুষ কিছু রোবট তৈরি করেছে, যেগুলোকে প্রতিটা নির্দেশ পালন করার জন্য প্রোগ্রাম করা যায়। ঈশ্বর যদি আমাদের সেটার মতো করে তৈরি করতেন, তা হলে আমরা কি সুখী হতাম? না, আমরা আনন্দিত যে, আমরা কী ধরনের ব্যক্তি হব, জীবনে কোন পথ অনুধাবন করব, কী ধরনের বন্ধুত্ব গড়ে তুলব এবং এইরকম আরও অন্যান্য বিষয় বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা আমাদের রয়েছে। আমরা কিছুটা স্বাধীনতা পেতে পছন্দ করি আর ঈশ্বরও চান যেন আমরা তা উপভোগ করি।

২০, ২১. কীভাবে আমরা যথাসম্ভব সর্বোত্তম উপায়ে স্বাধীন ইচ্ছার উপহারকে ব্যবহার করতে পারি এবং কেন আমাদের তা করতে চাওয়া উচিত?

২০ যিহোবা সেইরকম সেবার প্রতি আগ্রহী নন, যা জোরপূর্বক করা হয়ে থাকে। (২ করিন্থীয় ৯:৭) উদাহরণ স্বরূপ: কোন বিষয়টা একজন বাবা অথবা মাকে বেশি আনন্দ দেবে—একটা বাচ্চার হৃদয় থেকে প্রকাশ করা কৃতজ্ঞতা, না কি বাধ্যবাধকতার কারণে প্রকাশ করা কৃতজ্ঞতা? তাই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা হচ্ছে, আপনি কীভাবে সেই স্বাধীন ইচ্ছাকে ব্যবহার করবেন, যা যিহোবা আপনাকে দিয়েছেন? শয়তান, আদম এবং হবা তাদের স্বাধীন ইচ্ছা সবচেয়ে খারাপভাবে ব্যবহার করেছিল। তারা যিহোবা ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আপনি কী করবেন?

২১ স্বাধীন ইচ্ছার চমৎকার উপহারকে যথাসম্ভব সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করার সুযোগ আপনার রয়েছে। আপনি সেই লক্ষ লক্ষ লোকের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন, যারা যিহোবার পক্ষ অবলম্বন করেছে। তারা ঈশ্বরকে আনন্দিত করে কারণ তারা শয়তানকে একজন মিথ্যাবাদী এবং শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ এক শাসক বলে প্রমাণিত করার ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। (হিতোপদেশ ২৭:১১) জীবনে সঠিক পথ বেছে নেওয়ার দ্বারা আপনিও তা-ই করতে পারেন। পরবর্তী অধ্যায়ে এটাই ব্যাখ্যা করা হবে।