সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় তেরো

জীবন সম্বন্ধে এক ঈশ্বরীয় দৃষ্টিভঙ্গি

জীবন সম্বন্ধে এক ঈশ্বরীয় দৃষ্টিভঙ্গি
  • ঈশ্বর জীবনকে কীভাবে দেখেন?

  • ঈশ্বর গর্ভপাত করাকে কীভাবে দেখেন?

  • জীবনের প্রতি আমরা কীভাবে সম্মান দেখাই?

১. কে সমস্ত জীবিত বস্তু সৃষ্টি করেছেন?

“সদাপ্রভু সত্য ঈশ্বর,” ভাববাদী যিরমিয় বলেছিলেন। “তিনিই জীবন্ত ঈশ্বর।” (যিরমিয় ১০:১০) অধিকন্তু, যিহোবা ঈশ্বর হচ্ছেন সমস্ত জীবিত বস্তুর সৃষ্টিকর্তা। স্বর্গীয় প্রাণীরা তাঁকে বলেছিল: “তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।” (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) ঈশ্বরের উদ্দেশে প্রশংসার এক গীতে রাজা দায়ূদ বলেছিলেন: “তোমারই কাছে জীবনের উনুই আছে।” (গীতসংহিতা ৩৬:৯) অতএব, জীবন হচ্ছে ঈশ্বরের কাছ থেকে এক উপহার।

২. আমাদের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যিহোবা কী করেন?

এ ছাড়া, যিহোবা আমাদের জীবনকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। (প্রেরিত ১৭:২৮) আমরা যে-খাবার খাই, যে-জল পান করি, যে-শ্বাস নিই এবং যে-ভূমিতে বাস করি, সেগুলো তিনি জোগান। (পড়ুন, প্রেরিত ১৪:১৫-১৭.) যিহোবা এই বিষয়টা এমন এক উপায়ে করেছেন, যা জীবনকে উপভোগ্য করে তোলে। কিন্তু, জীবনকে পূর্ণরূপে উপভোগ করার জন্য আমাদের ঈশ্বরের আইনগুলো শিখতে ও সেগুলোর বাধ্য থাকতে হবে।—যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮.

জীবনের প্রতি সম্মান দেখানো

৩. হেবলের হত্যাকে যিহোবা কীভাবে দেখেছিলেন?

ঈশ্বর চান যেন আমরা জীবনের—আমাদের ও সেইসঙ্গে অন্যদের, উভয়ের জীবনের—প্রতি সম্মান দেখাই। উদাহরণ স্বরূপ, আদম ও হবার সময়ে তাদের ছেলে কয়িন তার ছোটো ভাই হেবলের উপর প্রচণ্ড রাগ করেছিলেন। যিহোবা কয়িনকে সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, তার রাগ তাকে গুরুতর পাপ করার দিকে পরিচালিত করতে পারে। কয়িন সেই সাবধানবাণীকে অগ্রাহ্য করেছিলেন। তিনি ‘আপন ভ্রাতা হেবলের বিরুদ্ধে উঠিয়া তাহাকে বধ করিলেন।’ (আদিপুস্তক ৪:৩-৮) কয়িন তার ভাইকে হত্যা করার কারণে যিহোবা তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন।—আদিপুস্তক ৪:৯-১১.

৪. মোশির ব্যবস্থায় ঈশ্বর কীভাবে জীবন সম্বন্ধে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর জোর দিয়েছিলেন?

হাজার হাজার বছর পর, যিহোবা ইস্রায়েলের লোকেদেরকে সন্তোষজনক উপায়ে তাঁকে সেবা করার জন্য সাহায্য করতে বিভিন্ন আইন দিয়েছিলেন। এই আইনগুলো ভাববাদী মোশির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছিল বলে মাঝে মাঝে এগুলোকে মোশির ব্যবস্থা বলা হয়। মোশির ব্যবস্থার একটা অংশ বলেছিল: “নরহত্যা করিও না।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৭) এটা ইস্রায়েলীয়দের দেখিয়েছিল যে, ঈশ্বর মানুষের জীবনকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন এবং লোকেদেরও অন্যদের জীবনকে মূল্যবান বলে গণ্য করতে হবে।

৫. গর্ভপাত করাকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

মায়ের গর্ভে থাকা এক শিশুর জীবন সম্বন্ধে কী বলা যায়? মোশির ব্যবস্থা বলেছিল: “পুরুষরা যদি একে অন্যের সঙ্গে বিবাদ করে ও তারা একজন গর্ভবতী মহিলাকে প্রকৃতই আঘাত করে এবং তার সন্তান অকালে ভূমিষ্ঠ হয় কিন্তু কোনো মারাত্মক দুর্ঘটনা না ঘটে, তা হলে সেই ব্যক্তির উপর মহিলার কর্তা যা ধার্য করেন, সেই অনুসারে ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; আর সে বিচারকদের বিচারমতে তা দেবে। কিন্তু যদি কোনো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে, তা হলে তোমাকে অবশ্যই প্রাণের পরিশোধে প্রাণ দিতে হবে।” (যাত্রাপুস্তক ২১:২২, ২৩NW) ব্যবস্থা অনুসারে, মায়ের গর্ভে একটা শিশুর মৃত্যু ঘটানো অন্যায় ছিল। বস্তুতপক্ষে, এমনকী এই ধরনের একটা জীবনও যিহোবার কাছে মূল্যবান। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১২৭:৩.) এর অর্থ হচ্ছে গর্ভপাত করা অন্যায়।

৬. কেন আমাদের সহমানবদের ঘৃণা করা উচিত নয়?

জীবনের প্রতি সম্মান দেখানোর অন্তর্ভুক্ত সহমানবদের প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা। বাইবেল বলে: “যে কেহ আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করে, সে নরঘাতক; এবং তোমরা জান, অনন্ত জীবন কোন নরঘাতকের অন্তরে অবস্থিতি করে না।” (১ যোহন ৩:১৫) আমরা যদি অনন্তজীবন পেতে চাই, তা হলে আমাদের হৃদয় থেকে সহমানবদের প্রতি যেকোনো ধরনের ঘৃণাকে উপড়ে ফেলতে হবে কারণ ঘৃণাই হচ্ছে অধিকাংশ দৌরাত্ম্যের মূল কারণ। (১ যোহন ৩:১১, ১২) তাই, আমাদের একে অন্যকে ভালোবাসতে শেখা অতি গুরুত্বপূর্ণ।

৭. কিছু অভ্যাস কী, যা জীবনের প্রতি অসম্মান প্রকাশ করে?

আমাদের নিজেদের জীবনের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়ে কী বলা যায়? লোকেরা সাধারণত মারা যেতে চায় না, কিন্তু কেউ কেউ শুধুমাত্র আনন্দ পাওয়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, অনেকে তামাকসেবন করে, পান-সুপারি খায় বা নিছক আনন্দ লাভের উদ্দেশ্যে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে। এই ধরনের বস্তুগুলো শরীরের ক্ষতি করে এবং প্রায়ই এর ব্যবহারকারীদের হত্যা করে। যে-ব্যক্তি এই বস্তুগুলো ব্যবহার করাকে অভ্যাসে পরিণত করেন, তিনি জীবনকে পবিত্র হিসেবে দেখেন না। এই অভ্যাসগুলো ঈশ্বরের চোখে অশুচি। (পড়ুন, রোমীয় ৬:১৯; ১২:১; ২ করিন্থীয় ৭:১.) ঈশ্বরকে সন্তোষজনক উপায়ে সেবা করার জন্য আমাদের এই ধরনের অভ্যাসকে পরিত্যাগ করতে হবে, এমনকী তা করা যদি কঠিন বলেও মনে হয়। যিহোবা আমাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য জোগাতে পারেন আর আমাদের জীবনকে তাঁর কাছ থেকে পাওয়া এক মূল্যবান উপহার হিসেবে গণ্য করার জন্য আমরা যে-প্রচেষ্টা করি, সেটাকে যিহোবা উপলব্ধি করেন।

৮. কেন আমাদের নিরাপত্তা সম্বন্ধে সচেতন থাকার প্রয়োজনীয়তা মনে রাখা উচিত?

জীবনের প্রতি যদি আমাদের সম্মান থাকে, তা হলে আমরা নিরাপত্তা সম্বন্ধে সচেতন থাকার প্রয়োজনীয়তাকে মনে রাখব। আমরা অসতর্ক হয়ে পড়ব না এবং শুধুমাত্র আনন্দ বা উত্তেজনার জন্য ঝুঁকি নেব না। আমরা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো এবং দৌরাত্ম্যপূর্ণ বা বিপদজনক খেলাধুলা এড়িয়ে চলব। (গীতসংহিতা ১১:৫) প্রাচীন ইস্রায়েলের জন্য ঈশ্বরের ব্যবস্থা বলেছিল: “নূতন গৃহ প্রস্তুত করিলে তাহার ছাদে আলিসিয়া [বা, নিচু প্রাচীর] নির্ম্মাণ করিবে, পাছে তাহার উপর হইতে কোন মনুষ্য পড়িলে তুমি আপন গৃহে রক্তপাতের অপরাধ বর্ত্তাও।” (দ্বিতীয় বিবরণ ২২:৮) সেই আইনে উল্লেখিত নীতির সঙ্গে মিল রেখে আপনার ঘরে সিঁড়ির মতো জায়গাগুলোকে নিরাপদ অবস্থায় রাখুন, যাতে কেউ হোঁচট না খায়, পড়ে না যায় অথবা গুরুতরভাবে আহত না হয়। আপনার যদি গাড়ি থাকে, তা হলে নিশ্চিত হোন যে সেটা চালানোর পক্ষে নিরাপদ। আপনার বাড়ি বা গাড়িকে আপনার বা অন্যদের জন্য বিপদের কারণ হতে দেবেন না।

৯. আমাদের যদি জীবনের প্রতি সম্মান থাকে, তা হলে আমরা পশুদের সঙ্গে কেমন আচরণ করব?

কোনো পশুর জীবন সম্বন্ধে কী বলা যায়? সেটাও সৃষ্টিকর্তার কাছে পবিত্র। খাদ্য এবং বস্ত্র সংগ্রহ করার কিংবা বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঈশ্বর পশুহত্যা করাকে অনুমতি দেন। (আদিপুস্তক ৩:২১; ৯:৩; যাত্রাপুস্তক ২১:২৮) কিন্তু, পশুদের প্রতি নিষ্ঠুর হওয়া বা নিছক আনন্দ লাভের জন্য এদের হত্যা করা অন্যায় এবং তা জীবনের পবিত্রতার প্রতি চরম অসম্মান প্রকাশ করে।—হিতোপদেশ ১২:১০.

রক্তের প্রতি সম্মান দেখানো

১০. কীভাবে যিহোবা দেখিয়েছেন যে, জীবন ও রক্তের মধ্যে একটা সম্পর্ক রয়েছে?

১০ কয়িন তার ভাই হেবলকে হত্যা করার পর, যিহোবা কয়িনকে বলেছিলেন: “তোমার ভ্রাতার রক্ত ভূমি হইতে আমার কাছে ক্রন্দন করিতেছে।” (আদিপুস্তক ৪:১০) ঈশ্বর যখন হেবলের রক্তের বিষয়ে কথা বলেছিলেন, তখন তিনি আসলে হেবলের জীবনের বিষয়ে বলছিলেন। কয়িন হেবলের জীবন কেড়ে নিয়েছিলেন আর তাই, এখন কয়িনকে শাস্তি পেতে হবে। এটা এমন ছিল যেন হেবলের রক্ত বা জীবন ন্যায়বিচারের জন্য যিহোবার কাছে ক্রন্দন করছিল। জীবন ও রক্তের মধ্যে যে-সম্পর্ক রয়েছে, তা নোহের দিনে জলপ্লাবনের পরে আবারও দেখানো হয়েছিল। জলপ্লাবনের আগে মানুষ শুধুমাত্র বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, শস্য এবং বাদাম খেত। জলপ্লাবনের পর নোহ ও তার ছেলেদের যিহোবা বলেছিলেন: “প্রত্যেক গমনশীল প্রাণী তোমাদের খাদ্য হইবে।” কিন্তু, ঈশ্বর এই বিধিনিষেধ দিয়েছিলেন: “সপ্রাণ [বা জীবন-সহ] অর্থাৎ সরক্ত মাংস ভোজন করিও না।” (আদিপুস্তক ১:২৯; ৯:৩, ৪) স্পষ্টতই, যিহোবা একটা প্রাণীর জীবন ও রক্তকে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত করেন।

১১. ঈশ্বর নোহের দিন থেকে রক্তের কোন ব্যবহার সম্বন্ধে নিষেধ করে এসেছেন?

১১ আমরা রক্ত না খাওয়ার দ্বারা এর প্রতি সম্মান দেখাই। যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের যে-ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, তাতে তিনি আদেশ দিয়েছিলেন: “কোন ব্যক্তি . . . যদি মৃগয়াতে কোন খাদ্য পশু কিম্বা পক্ষী বধ করে, তবে সে তাহার রক্ত ঢালিয়া দিয়া ধূলাতে আচ্ছাদন করিবে। . . . এই জন্য আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহিলাম, তোমরা কোন প্রাণীর রক্ত ভোজন করিবে না।” (লেবীয় পুস্তক ১৭:১৩, ১৪) কোনো পশুপাখির রক্ত না খাওয়ার বিষয়ে ঈশ্বরের আদেশ প্রায় ৮০০ বছর আগে নোহকে দেওয়া হয়েছিল, যা তখনও বলবৎ ছিল। যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল স্পষ্ট: তাঁর দাসেরা পশুপাখির মাংস খেতে পারত কিন্তু রক্ত নয়। তাদেরকে রক্ত ভূমিতে ঢেলে দিতে হতো—মূলত, সেই প্রাণীর জীবন ঈশ্বরের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।

১২. প্রথম শতাব্দীতে রক্ত সম্বন্ধে পবিত্র আত্মার দ্বারা কোন আদেশ দেওয়া হয়েছিল, যা আজও প্রযোজ্য?

১২ খ্রিস্টানদের উপরও অনুরূপ আদেশ বলবৎ রয়েছে। প্রেরিতরা এবং প্রথম শতাব্দীতে যিশুর অনুসারীদের মধ্যে নেতৃত্বদানকারী অন্যান্য ব্যক্তি এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একত্রিত হয়েছিলেন যে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে সকলকে কোন আজ্ঞাগুলো পালন করতে হবে। তারা এই উপসংহারে পৌঁছেছিলেন: “পবিত্র আত্মার এবং আমাদের ইহা বিহিত বোধ হইল, যেন এই কয়েকটী প্রয়োজনীয় বিষয় ছাড়া তোমাদের উপরে আর কোন ভার না দিই, ফলে প্রতিমার প্রসাদ এবং রক্ত ও গলা টিপিয়া মারা [মাংসের মধ্যে রক্ত থেকে যাওয়া] প্রাণীর মাংস ও ব্যভিচার হইতে পৃথক্‌ থাকা তোমাদের উচিত।” (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯; ২১:২৫) তাই, আমাদের অবশ্যই ‘রক্ত হইতে পৃথক থাকিতে’ হবে। আমাদের তা পালন করা, ঈশ্বরের চোখে প্রতিমাপূজা ও যৌন অনৈতিকতাকে পরিহার করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার ডাক্তার যদি আপনাকে মদ থেকে বিরত থাকতে বলেন, তা হলে আপনি কি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শিরায় তা গ্রহণ করবেন?

১৩. উদাহরণের সাহায্যে বলুন যে, কেন রক্ত থেকে পৃথক থাকার আদেশের মধ্যে রক্তগ্রহণ করা অন্তর্ভুক্ত।

১৩ রক্ত থেকে পৃথক থাকার এই আদেশ কি রক্তগ্রহণ করাকে অন্তর্ভুক্ত করে? হ্যাঁ। উদাহরণ স্বরূপ: ধরুন একজন ডাক্তার আপনাকে মদ্য-জাতীয় পানীয় থেকে পৃথক বা বিরত থাকতে বলেছেন। সেই কথার মানে কি শুধু এই বোঝাবে যে, আপনার মদ খাওয়া উচিত নয়, কিন্তু আপনি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে আপনার শিরায় তা নিতে পারেন? কখনোই না! একইভাবে রক্ত থেকে পৃথক থাকা বলতে আমাদের শরীরে কোনোভাবেই তা গ্রহণ না করাকে বোঝায়। তাই, রক্ত থেকে পৃথক থাকার আদেশের অর্থ হচ্ছে, আমরা কাউকেই আমাদের শিরায় রক্ত দিতে অনুমতি দেব না।

১৪, ১৫. ডাক্তাররা যদি বলেন যে, একজন খ্রিস্টানকে রক্তগ্রহণ করতেই হবে, তা হলে তিনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন এবং কেন?

১৪ একজন খ্রিস্টান যদি গুরুতরভাবে আহত হন বা তার কোনো বড়ো অপারেশনের প্রয়োজন হয়, তা হলে কী? ধরুন ডাক্তাররা বললেন যে, তাকে রক্তগ্রহণ করতেই হবে নতুবা তিনি মারা যাবেন। অবশ্যই সেই খ্রিস্টান মারা যেতে চাইবেন না। ঈশ্বরের দেওয়া জীবনের মহামূল্য উপহারকে রক্ষা করার প্রচেষ্টায় তিনি অন্যান্য ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি গ্রহণ করবেন, যেটার সঙ্গে রক্তের অপব্যবহার জড়িত নেই। তাই, তিনি এইরকম চিকিৎসা লাভ করার চেষ্টা করবেন, যদি সেগুলোর ব্যবস্থা থাকে এবং তিনি রক্তের বিভিন্ন বিকল্প বিষয় গ্রহণ করবেন।

১৫ এই বিধিব্যবস্থায় শুধুমাত্র আরেকটু বেশি সময় বেঁচে থাকার জন্য একজন খ্রিস্টান কি ঈশ্বরের আইন ভঙ্গ করবেন? যিশু বলেছিলেন: “যে কেহ আপন প্রাণ [অথবা, জীবন] রক্ষা করিতে ইচ্ছা করে, সে তাহা হারাইবে, আর যে কেহ আমার নিমিত্তে আপন প্রাণ হারায়, সে তাহা পাইবে।” (মথি ১৬:২৫) আমরা মারা যেতে চাই না। কিন্তু, আমরা যদি ঈশ্বরের আইনভঙ্গ করার মাধ্যমে আমাদের বর্তমান জীবনকে রক্ষা করার চেষ্টা করি, তা হলে আমরা অনন্তজীবন হারানোর বিপদের মধ্যে থাকব। তাই, আমরা ঈশ্বরের আইনের যথার্থতার উপর নির্ভর করে বিজ্ঞ হব, সম্পূর্ণরূপে এই আস্থা রেখে যে, যদি আমরা কোনো কারণে মারাও যাই, আমাদের জীবনদাতা পুনরুত্থানে আমাদের স্মরণ করবেন এবং জীবনের মহামূল্য উপহারকে আমাদের ফিরিয়ে দেবেন।—যোহন ৫:২৮, ২৯; ইব্রীয় ১১:৬.

১৬. রক্ত সম্বন্ধে ঈশ্বরের দাসেরা কোন বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

১৬ আজকে, ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসেরা রক্ত সম্বন্ধে তাঁর নির্দেশনা মেনে চলার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। তারা এটা কোনোভাবেই খাবে না। কিংবা চিকিৎসাগত কারণে তারা রক্তগ্রহণও করবে না। * তারা নিশ্চিত যে, রক্তের সৃষ্টিকর্তা ভালো করে জানেন যে তাদের জন্য কোনটা সর্বোত্তম। আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, তিনি তা জানেন?

রক্তের একমাত্র সঠিক ব্যবহার

১৭. প্রাচীন ইস্রায়েলে, যিহোবা ঈশ্বরের কাছে রক্তের একমাত্র গ্রহণযোগ্য ব্যবহার কী ছিল?

১৭ মোশির ব্যবস্থা রক্তের একমাত্র সঠিক ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছিল। প্রাচীন ইস্রায়েলীয়দের কাছ থেকে যে-উপাসনা চাওয়া হয়েছিল, সেই সম্বন্ধে যিহোবা আদেশ দিয়েছিলেন: “রক্তের মধ্যেই শরীরের প্রাণ [বা জীবন] থাকে, এবং তোমাদের প্রাণের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করণার্থ আমি তাহা বেদির উপরে তোমাদিগকে দিয়াছি; কারণ প্রাণের গুণে রক্তই প্রায়শ্চিত্তসাধক।” (লেবীয় পুস্তক ১৭:১১) ইস্রায়েলীয়রা যখন পাপ করেছিল, তখন তারা একটা পশু উৎসর্গ করার ও এর কিছু রক্ত আবাসের বা পরবর্তী সময়ে ঈশ্বরের মন্দিরের বেদিতে রাখার মাধ্যমে ক্ষমা পেতে পারত। এই ধরনের উৎসর্গগুলো ছিল রক্তের একমাত্র সঠিক ব্যবহার।

১৮. যিশুর পাতিত রক্ত থেকে আমরা কোন উপকার ও আশীর্বাদগুলো পেতে পারি?

১৮ সত্য খ্রিস্টানরা মোশির ব্যবস্থার অধীনে নয় আর তাই, তারা পশুবলি উৎসর্গ করে না বা বেদিতে পশুর রক্তও রাখে না। (ইব্রীয় ১০:১) কিন্তু, প্রাচীন ইস্রায়েলের সময়ে বেদির উপর রক্তের ব্যবহার, ঈশ্বরের পুত্র যিশু খ্রিস্টের মহামূল্য বলিদানের পূর্বাভাস দিয়েছিল। এই বইয়ের ৫ অধ্যায়ে আমরা যেমন শিখেছি যে, যিশু তাঁর রক্তকে বলি হিসেবে পাতিত হতে দিয়ে আমাদের জন্য তাঁর মানবজীবন দান করেছিলেন। এরপর, তিনি স্বর্গারোহণ করেছিলেন ও একবারে চিরকালের জন্য ঈশ্বরের কাছে তাঁর পাতিত রক্তের মূল্য উৎসর্গ করেছিলেন। (ইব্রীয় ৯:১১, ১২) সেটা আমাদের পাপের ক্ষমা পাওয়ার ভিত্তি জুগিয়েছিল এবং আমাদের জন্য অনন্তজীবন পাওয়ার পথ খুলে দিয়েছিল। (মথি ২০:২৮; যোহন ৩:১৬) রক্তের ব্যবহার যে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা প্রমাণিত হয়েছিল! (১ পিতর ১:১৮, ১৯) একমাত্র যিশুর পাতিত রক্তের উৎকর্ষে বিশ্বাস করার মাধ্যমেই আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি।

জীবন ও রক্তের প্রতি আপনি কীভাবে সম্মান দেখাতে পারেন?

১৯. ‘সকলের রক্তের দায় হইতে শুচি’ হওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?

১৯ জীবনের এই প্রেমময় ব্যবস্থার জন্য আমরা যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ হতে পারি! আর সেটার দ্বারা আমাদের কি অন্যদের এই বিষয়ে বলতে পরিচালিত হওয়া উচিত নয় যে, যিশুর বলিদানে বিশ্বাস রাখার ভিত্তিতে অনন্তজীবন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে? সহমানবদের জীবন সম্বন্ধে ঈশ্বরের মতো করে চিন্তা করা আমাদেরকে উৎসুকভাবে ও উদ্যোগ সহকারে তা করতে পরিচালিত করবে। (পড়ুন, যিহিষ্কেল ৩:১৭-২১.) আমরা যদি অধ্যবসায়ের সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করি, তা হলে আমরা প্রেরিত পৌলের মতো বলতে পারব: “সকলের রক্তের দায় হইতে আমি শুচি; কারণ আমি তোমাদিগকে ঈশ্বরের সমস্ত মন্ত্রণা জ্ঞাত করিতে সঙ্কুচিত হই নাই।” (প্রেরিত ২০:২৬, ২৭) লোকেদেরকে ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে বলা হল এটা দেখানোর এক চমৎকার উপায় যে, জীবন ও রক্তের প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ সম্মান রয়েছে।

^ অনু. 16 রক্তগ্রহণের বিকল্প বিষয়গুলোর উপর তথ্যের জন্য কীভাবে রক্ত আপনার জীবন রক্ষা করতে পারে? (ইংরেজি) ব্রোশারের “রক্ত সঞ্চালনের বিভিন্ন উত্তম বিকল্প” শিরোনামের অধ্যায় এবং ২০০৪ সালের ১৫ই জুন প্রহরীদুর্গ পত্রিকার “উপহার হিসেবে আপনার জীবনকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করুন,” “জীবন্ত ঈশ্বরের দ্বারা নির্দেশিত হোন” এবং “পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল” শিরোনামের প্রবন্ধগুলো দেখুন। দুটোই যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।