সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় সতেরো

প্রার্থনায় ঈশ্বরের নিকটবর্তী হোন

প্রার্থনায় ঈশ্বরের নিকটবর্তী হোন
  • কেন আমাদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা উচিত?

  • ঈশ্বর যাতে আমাদের প্রার্থনা শোনেন, তার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?

  • ঈশ্বর কীভাবে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন?

“স্বর্গের ও পৃথিবীর নির্ম্মাণকর্ত্তা” আমাদের প্রার্থনা শুনতে ইচ্ছুক

১, ২. কেন আমাদের প্রার্থনাকে এক বিশেষ সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত আর এই সম্বন্ধে বাইবেল যা শিক্ষা দেয়, তা কেন আমাদের জানতে হবে?

বিশাল নিখিলবিশ্বের তুলনায় পৃথিবী খুবই ক্ষুদ্র। বস্তুতপক্ষে, “স্বর্গের ও পৃথিবীর নির্ম্মাণকর্ত্তা” যিহোবার কাছে মানবজাতি কলসের একটা ক্ষুদ্র জলবিন্দুর তুল্য। (গীতসংহিতা ১১৫:১৫; যিশাইয় ৪০:১৫) তা সত্ত্বেও, বাইবেল বলে: “সদাপ্রভু সেই সকলেরই নিকটবর্ত্তী, যাহারা তাঁহাকে ডাকে, যাহারা সত্যে তাঁহাকে ডাকে। যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তিনি তাহাদের বাঞ্ছা পূর্ণ করেন, আর তাহাদের আর্ত্তনাদ শুনিয়া” থাকেন। (গীতসংহিতা ১৪৫:১৮, ১৯) এর অর্থ কী তা একটু চিন্তা করুন! সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা আমাদের নিকটবর্তী এবং তিনি আমাদের কথা শুনবেন যদি আমরা ‘সত্যে তাঁহাকে ডাকি।’ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার কী এক বিশেষ সুযোগই না আমাদের রয়েছে!

কিন্তু, আমরা যদি চাই যে যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শুনুন, তা হলে আমাদের অবশ্যই এমন উপায়ে প্রার্থনা করতে হবে, যা তিনি অনুমোদন করেন। কীভাবে আমরা তা করতে পারি, যদি আমরা না-ই বুঝি যে, প্রার্থনা সম্বন্ধে বাইবেল কী শিক্ষা দেয়? শাস্ত্র এই বিষয়ে কী বলে তা জানা আমাদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রার্থনা আমাদেরকে যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে সাহায্য করে।

কেন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করবেন?

৩. একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ কী যেজন্য আমাদের যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা উচিত?

যে-একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণে যিহোবার কাছে আমাদের প্রার্থনা করা উচিত তা হল, তিনি আমাদের তা করতে আমন্ত্রণ জানান। তাঁর বাক্য আমাদের উৎসাহ দেয়: “কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।” (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) নিশ্চিতভাবেই, নিখিলবিশ্বের সর্বোচ্চ শাসকের এই ধরনের সদয় ব্যবস্থাকে আমরা উপেক্ষা করতে চাইব না!

৪. কীভাবে যিহোবার কাছে নিয়মিত প্রার্থনা তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করে?

প্রার্থনা করার আরেকটা কারণ হচ্ছে, যিহোবার কাছে নিয়মিতভাবে প্রার্থনা করা তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করার এক উপায়। প্রকৃত বন্ধুরা কেবলমাত্র তখনই ভাববিনিময় করে না, যখন তাদের কিছু প্রয়োজন হয়। এর পরিবর্তে, ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা একে অন্যের প্রতি আগ্রহী এবং তাদের বন্ধুত্ব আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যখন তারা নির্দ্বিধায় তাদের ধারণা, চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতিকে প্রকাশ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বেলায়ও একই বিষয় ঘটে থাকে। এই বইয়ের সাহায্যে আপনি যিহোবা, তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে বাইবেল যা শিক্ষা দেয়, সেই বিষয়ে অনেক কিছু শিখেছেন। আপনি তাঁকে একজন বাস্তব ব্যক্তি হিসেবে জেনেছেন। প্রার্থনা আপনাকে স্বর্গীয় পিতার কাছে আপনার চিন্তাভাবনা ও মনের অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ করে দেয়। আপনি যখন তা করেন, তখন আপনি যিহোবার আরও নিকটবর্তী হন।—যাকোব ৪:৮.

কোন চাহিদাগুলো আমাদের অবশ্যই পূরণ করতে হবে?

৫. কী দেখায় যে, যিহোবা সমস্ত প্রার্থনা শোনেন না?

যিহোবা কি সমস্ত প্রার্থনা শোনেন? ভাববাদী যিশাইয়ের দিনে বিদ্রোহী ইস্রায়েলীয়দের তিনি যা বলেছিলেন, তা বিবেচনা করুন: “যদ্যপি অনেক প্রার্থনা কর, তথাপি শুনিব না; তোমাদের হস্ত রক্তে পরিপূর্ণ।” (যিশাইয় ১:১৫) তাই, কিছু কিছু কাজের কারণে ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনা না-ও শুনতে পারেন। অতএব, আমরা যদি চাই যে ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনা শুনুন, তা হলে আমাদের অবশ্যই কিছু মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে।

৬. ঈশ্বর যাতে আমাদের প্রার্থনা শোনেন, তার জন্য একটা অপরিহার্য চাহিদা কী এবং কীভাবে আমরা তা পূরণ করতে পারি?

একটা অপরিহার্য চাহিদা হচ্ছে, আমরা যেন বিশ্বাস করে চলি। (পড়ুন, মার্ক ১১:২৪.) প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “বিনা বিশ্বাসে [ঈশ্বরের] প্রীতির পাত্র হওয়া কাহারও সাধ্য নয়; কারণ যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” (ইব্রীয় ১১:৬) প্রকৃত বিশ্বাস থাকার মানে, ঈশ্বর আছেন এবং তিনি প্রার্থনা শোনেন ও উত্তর দেন, কেবল তা জানার চেয়েও আরও বেশি কিছু। আমাদের কাজের দ্বারা বিশ্বাস প্রমাণিত হয়। প্রতিদিন আমাদের জীবনযাপনের দ্বারা আমাদেরকে অবশ্যই স্পষ্ট প্রমাণ দিতে হবে যে, আমাদের বিশ্বাস রয়েছে।—যাকোব ২:২৬.

৭. (ক) প্রার্থনায় যিহোবার সঙ্গে কথা বলার সময় কেন আমাদের সম্মান দেখানো উচিত? (খ) ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার সময় কীভাবে আমরা নম্রতা ও আন্তরিকতা দেখাতে পারি?

এ ছাড়া যিহোবা এও চান যে, যারা তাঁর কাছে প্রার্থনা করে তারা যেন নম্রতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তা করে। যিহোবার সঙ্গে কথা বলার সময় আমাদের নম্র হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে, তাই নয় কি? লোকেদের যখন একজন রাজা বা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকে, তখন তারা সাধারণত সম্মানপূর্বক কথা বলে, শাসকের উচ্চ পদমর্যাদাকে স্বীকার করে থাকে। তাহলে, যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার সময় আমাদের আরও কতই-না অধিক সম্মান দেখানো উচিত! (গীতসংহিতা ১৩৮:৬) বস্তুতপক্ষে, তিনি হচ্ছেন “সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বর।” (আদিপুস্তক ১৭:১) আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন আমরা যেভাবে তা করি সেটা প্রদর্শন করা উচিত যে, আমরা তাঁর সামনে আমাদের অবস্থানকে নম্রভাবে স্বীকার করে থাকি। এ ছাড়া, এই ধরনের নম্রতা আন্তরিকতার সঙ্গে হৃদয় থেকে প্রার্থনা করতে এবং গতানুগতিক, পুনরাবৃত্তিমূলক প্রার্থনা এড়িয়ে চলতে পরিচালিত করবে।—মথি ৬:৭, ৮.

৮. আমরা যেজন্য প্রার্থনা করি, কীভাবে সেটার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে পারি?

ঈশ্বরের দ্বারা গ্রাহ্য হওয়ার জন্য আরেকটা চাহিদা হচ্ছে, আমরা যেন আমাদের প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করি। যিহোবা আশা করেন যে আমরা যে-কারণে প্রার্থনা করি, সেটার জন্য আমরা যেন আমাদের যথাসাধ্য করি। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যদি প্রার্থনা করি যে “আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য আজ আমাদিগকে দেও,” তা হলে আমাদের আয়ত্তে থাকা যেকোনো কাজ করার জন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। (মথি ৬:১১; ২ থিষলনীকীয় ৩:১০) আমরা যদি কোনো মাংসিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করি, তা হলে আমাদের সতর্ক হতে হবে যেন আমরা সেই পরিস্থিতিগুলো এড়িয়ে চলি, যেগুলো আমাদের প্রলোভনের দিকে পরিচালিত করতে পারে। (কলসীয় ৩:৫) এই মৌলিক চাহিদাগুলো ছাড়াও প্রার্থনা সম্বন্ধে আরও প্রশ্ন রয়েছে, যেগুলোর উত্তর আমাদের জানতে হবে।

প্রার্থনা সম্বন্ধে কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া

৯. কার কাছে ও কার মাধ্যমে আমাদের প্রার্থনা করা উচিত?

কার কাছে আমাদের প্রার্থনা করা উচিত? যিশু তাঁর অনুসারীদের ‘আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃর’ কাছে প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন। (মথি ৬:৯) তাহলে, আমাদের শুধুমাত্র যিহোবা ঈশ্বরের কাছেই প্রার্থনা করতে হবে। কিন্তু, যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর একজাত পুত্র যিশু খ্রিস্টের পদমর্যাদাকে স্বীকার করি। ৫ অধ্যায়ে আমরা যেমন শিখেছি যে, যিশুকে আমাদের পাপ ও মৃত্যু থেকে মুক্ত করার জন্য মুক্তির মূল্য হিসেবে কাজ করতে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। (যোহন ৩:১৬; রোমীয় ৫:১২) তিনিই হচ্ছেন মনোনীত মহাযাজক এবং বিচারক। (যোহন ৫:২২; ইব্রীয় ৬:২০) তাই, শাস্ত্র আমাদের যিশুর মাধ্যমেই প্রার্থনা করতে নির্দেশনা দেয়। তিনি নিজে বলেছিলেন: “আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না।” (যোহন ১৪:৬) আমরা যদি চাই যে আমাদের প্রার্থনা শোনা হোক, তা হলে আমাদের অবশ্যই একমাত্র যিহোবার কাছে তাঁর পুত্রের মাধ্যমে প্রার্থনা করতে হবে।

১০. আমরা যখন প্রার্থনা করি, তখন কেন কোনো নির্দিষ্ট অঙ্গভঙ্গির প্রয়োজন নেই?

১০ প্রার্থনা করার সময় আমাদের কি কোনো বিশেষ অঙ্গভঙ্গি করতে হবে? না। যিহোবা, হাত বা সমস্ত দেহ কোনোটা দিয়েই নির্দিষ্ট অঙ্গভঙ্গি চান না। বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, বিভিন্ন ভঙ্গিতে প্রার্থনা করা গ্রহণযোগ্য। এর অন্তর্ভুক্ত বসে, মাথা নিচু করে, হাঁটু গেড়ে ও দাঁড়িয়ে। (১ বংশাবলি ১৭:১৬; নহিমিয় ৮:৬; দানিয়েল ৬:১০; মার্ক ১১:২৫) যে-বিষয়টা প্রকৃতই গুরুত্বপূর্ণ তা হল, কোনো বিশেষ অঙ্গভঙ্গি নয় যেগুলো অন্যেরা দেখতে পারে বরং হৃদয়ের সঠিক মনোভাব। বস্তুত, আমাদের রোজকার কাজকর্ম করার সময় বা যখন আমরা কোনো জরুরি বিষয়ের মুখোমুখি হই, তখন আমরা হয়তো যেখানেই থাকি, নীরবে প্রার্থনা করতে পারি। যিহোবা এই ধরনের প্রার্থনা শোনেন, এমনকী যদিও আমাদের চারপাশের লোকেদের দ্বারা আমরা সম্পূর্ণরূপে অলক্ষে থাকি।—নহিমিয় ২:১-৬.

১১. কিছু ব্যক্তিগত উদ্‌বেগ কী, যেগুলো প্রার্থনার জন্য যথাযথ বিষয়?

১১ আমরা হয়তো কীসের জন্য প্রার্থনা করতে পারি? বাইবেল ব্যাখ্যা করে: “যদি তাঁহার ইচ্ছানুসারে কিছু যাচ্ঞা করি, তবে [ঈশ্বর] আমাদের যাচ্ঞা শুনেন।” (১ যোহন ৫:১৪) তাই, আমরা হয়তো এমন যেকোনো কিছুর জন্য প্রার্থনা করতে পারি, যা ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রাখে। এটা কি তাঁরই ইচ্ছা যে, আমরা যেন ব্যক্তিগত উদ্‌বেগগুলোর জন্য প্রার্থনা করি? অবশ্যই! যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা অনেকটা কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার মতো হতে পারে। আমরা হয়তো খোলাখুলিভাবে কথা বলতে পারি, ঈশ্বরের কাছে ‘আমাদের মনের কথা ভাঙ্গিয়া বলিতে’ পারি। (গীতসংহিতা ৬২:৮) পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করা আমাদের জন্য যথাযথ কারণ এটা আমাদেরকে যা সঠিক তা করতে সাহায্য করবে। (লূক ১১:১৩) এ ছাড়া, আমরা বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময় নির্দেশনা এবং কঠিন পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার সময় শক্তি চাইতে পারি। (যাকোব ১:৫) আমরা যখন পাপ করি, তখন আমাদের খ্রিস্টের বলিদানের ভিত্তিতে ক্ষমা চাওয়া উচিত। (ইফিষীয় ১:৩, ৭) অবশ্যই, ব্যক্তিগত বিষয়গুলো আমাদের প্রার্থনার একমাত্র বিষয় হওয়া উচিত নয়। অন্য লোকেদের—পরিবারের সদস্য ও সেইসঙ্গে সহউপাসকদের—অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমাদের প্রার্থনাকে প্রশস্ত করা উচিত।—প্রেরিত ১২:৫; কলসীয় ৪:১২.

১২. কীভাবে আমরা হয়তো আমাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলোকে আমাদের প্রার্থনায় প্রধান গুরুত্ব দিতে পারি?

১২ আমাদের প্রার্থনায় যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত। নিশ্চিতভাবেই তাঁর সমস্ত মঙ্গলভাবের জন্য তাঁকে আন্তরিক প্রশংসা ও ধন্যবাদ জানানোর কারণ আমাদের রয়েছে। (১ বংশাবলি ২৯:১০-১৩) যিশু মথি ৬:৯-১৩ পদে লিপিবদ্ধ আদর্শ প্রার্থনা সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন, যেখানে তিনি আমাদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের নাম যেন পবিত্রীকৃত হয়। (পড়ুন।) এরপর ঈশ্বরের রাজ্য আসার এবং তাঁর ইচ্ছা যেন স্বর্গের ন্যায় পৃথিবীতেও পূর্ণ হয় সেই বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। যিহোবার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উল্লেখ করার পরই যিশু ব্যক্তিগত উদ্‌বেগগুলোর প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন। একইভাবে, আমরা যখন আমাদের প্রার্থনায় ঈশ্বরকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়ে থাকি, তখন আমরা দেখাই যে, আমরা কেবলমাত্র আমাদের নিজস্ব মঙ্গলের প্রতিই আগ্রহী নই।

১৩. গ্রহণযোগ্য প্রার্থনার দীর্ঘতা সম্বন্ধে শাস্ত্র কোন ইঙ্গিত দেয়?

১৩ আমাদের প্রার্থনা কত দীর্ঘ হওয়া উচিত? ব্যক্তিগত বা জনসাধারণের সামনে প্রার্থনা কত দীর্ঘ হওয়া উচিত, সেই বিষয়ে বাইবেল কোনো সীমা নির্ধারণ করে না। সেগুলোর ব্যাপ্তি হতে পারে, খাবারের আগে এক সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা থেকে শুরু করে দীর্ঘ ব্যক্তিগত প্রার্থনা পর্যন্ত, যেখানে আমরা যিহোবার কাছে আমাদের হৃদয় উজাড় করে দিই। (১ শমূয়েল ১:১২, ১৫) কিন্তু, যিশু আত্মধার্মিক ব্যক্তিবিশেষদের নিন্দা করেছিলেন, যারা অন্যদের সামনে দীর্ঘ, লোক-দেখানো প্রার্থনা করত। (লূক ২০:৪৬, ৪৭) এই ধরনের প্রার্থনা যিহোবার উপর প্রভাব ফেলে না। যে-বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ তা হল, আমরা যেন হৃদয় থেকে প্রার্থনা করি। তাই, গ্রহণযোগ্য প্রার্থনার দীর্ঘতা হয়তো প্রয়োজন ও পরিস্থিতি অনুযায়ী বিভিন্ন হতে পারে।

যেকোনো সময়ই আপনার প্রার্থনা শোনা হতে পারে

১৪. বাইবেল যখন আমাদের “প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাক” বলে উৎসাহ দেয়, তখন তা কী বোঝায় আর এই ক্ষেত্রে সান্ত্বনাদায়ক বিষয়টা কী?

১৪ আমাদের কত বার প্রার্থনা করা উচিত? বাইবেল আমাদের উৎসাহ দেয়, “সর্ব্বদাই প্রার্থনা করা উচিত, নিরুৎসাহ হওয়া উচিত নয়,” “প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাক,” এবং “অবিরত প্রার্থনা কর।” (লূক ১৮:১; রোমীয় ১২:১২; ১ থিষলনীকীয় ৫:১৭) অবশ্য, এই বিবৃতিগুলো এইরকম বোঝায় না যে, দিনের প্রতিটা মুহূর্তে আমাদের যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে চলতে হবে। এর পরিবর্তে, বাইবেল আমাদের নিয়মিত প্রার্থনা করতে, আমাদের প্রতি তাঁর মঙ্গলভাবের জন্য ক্রমাগত যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাতে এবং নির্দেশনা, সান্ত্বনা ও শক্তির জন্য তাঁর উপর নির্ভর করতে জোরালোভাবে পরামর্শ দেয়। এটা জানা কি সান্ত্বনাদায়ক নয় যে, আমরা কতক্ষণ বা কত বার প্রার্থনায় তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারি, সেই ক্ষেত্রে যিহোবা কোনো সীমা স্থাপন করে দেননি? যদি আমরা প্রার্থনা করার বিশেষ সুযোগকে সত্যিই উপলব্ধি করি, তা হলে আমাদের স্বর্গীয় পিতার কাছে প্রার্থনা করার অনেক সুযোগ আমরা খুঁজে পাব।

১৫. ব্যক্তিগত ও জনসাধারণের উদ্দেশ্যে করা প্রার্থনার শেষে কেন আমাদের “আমেন” বলা উচিত?

১৫ কেন আমাদের প্রার্থনার শেষে “আমেন” বলা উচিত? “আমেন” শব্দের অর্থ হচ্ছে “নিশ্চয়ই” অথবা “তা-ই হোক।” শাস্ত্রীয় উদাহরণগুলো দেখায় যে, ব্যক্তিগত ও জনসাধারণের সামনে প্রার্থনার শেষে “আমেন” বলা উপযুক্ত। (১ বংশাবলি ১৬:৩৬; গীতসংহিতা ৪১:১৩) আমাদের নিজস্ব প্রার্থনার শেষে “আমেন” বলার দ্বারা আমরা নিশ্চিত করি যে, আমাদের কথাগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে বলা হয়েছে। আমরা যখন জনসাধারণের উদ্দেশ্যে করা কারো প্রার্থনার শেষে “আমেন” বলি—হোক তা নীরবে বা জোরে—তখন আমরা দেখাই, যে-কথাগুলো বলা হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে আমরা একমত।—১ করিন্থীয় ১৪:১৬.

ঈশ্বর যেভাবে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন

১৬. প্রার্থনা সম্বন্ধে আমরা কোন আস্থা রাখতে পারি?

১৬ যিহোবা কি সত্যিই প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেন? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই! আমাদের আস্থাশীল হওয়ার দৃঢ়ভিত্তি রয়েছে যে, “প্রার্থনা-শ্রবণকারী” লক্ষ লক্ষ মানুষের করা আন্তরিক প্রার্থনার উত্তর দেন। (গীতসংহিতা ৬৫:২) আমাদের প্রার্থনার প্রতি যিহোবার উত্তর হয়তো বিভিন্ন উপায়ে আসতে পারে।

১৭. কেন এটা বলা যেতে পারে যে, ঈশ্বর তাঁর স্বর্গদূতদের ও তাঁর পার্থিব দাসদের আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়ার জন্য ব্যবহার করে থাকেন?

১৭ যিহোবা প্রার্থনার উত্তর দেওয়ার জন্য তাঁর স্বর্গদূত ও পার্থিব দাসদের ব্যবহার করেন। (ইব্রীয় ১:১৩, ১৪) এইরকম অনেক ব্যক্তির অভিজ্ঞতা রয়েছে, যারা বাইবেল বোঝার জন্য সাহায্য চেয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিল এবং এরপরে শীঘ্রই যিহোবার একজন দাসের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছিল। এই ধরনের অভিজ্ঞতা রাজ্য প্রচার কাজে স্বর্গদূতদের নির্দেশনার প্রমাণ দেয়। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬) প্রকৃত প্রয়োজনের সময়ে করা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়ার জন্য যিহোবা হয়তো একজন খ্রিস্টানকে আমাদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতে প্রেরণা দিতে পারেন।—হিতোপদেশ ১২:২৫; যাকোব ২:১৬.

আমাদের প্রার্থনার উত্তর হিসেবে যিহোবা একজন খ্রিস্টানকে আমাদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতে প্রেরণা দিতে পারেন

১৮. কীভাবে যিহোবা তাঁর দাসদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়ার জন্য পবিত্র আত্মা এবং তাঁর বাক্য ব্যবহার করেন?

১৮ এ ছাড়া, যিহোবা ঈশ্বর তাঁর দাসদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়ার জন্য তাঁর পবিত্র আত্মা ও তাঁর বাক্য বাইবেল ব্যবহার করেন। পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়ে এবং তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে শক্তি জুগিয়ে তিনি হয়তো সাহায্য চেয়ে করা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিতে পারেন। (২ করিন্থীয় ৪:৭) প্রায়ই নির্দেশনা চেয়ে করা আমাদের প্রার্থনার উত্তর বাইবেল থেকে আসতে পারে, যেখানে যিহোবা আমাদেরকে বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য জোগান। আমাদের ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়নের সময় এবং এই বইয়ের মতো খ্রিস্টীয় প্রকাশনাগুলো পড়ার সময় সাহায্যকারী শাস্ত্রপদ পাওয়া যেতে পারে। যে-শাস্ত্রীয় বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনা করতে হবে, সেগুলো হয়তো কোনো খ্রিস্টীয় সভায় যা বলা হয়েছে তার দ্বারা অথবা মণ্ডলীতে কোনো চিন্তাশীল প্রাচীনের মন্তব্যের মাধ্যমে আমাদের মনোযোগে আনা হতে পারে।—গালাতীয় ৬:১.

১৯. মাঝে মাঝে যদি মনে হয় যে, আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হচ্ছে না, তা হলে আমাদের কী মনে রাখা উচিত?

১৯ যদি মনে হয় যে, যিহোবা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিতে দেরি করছেন, তা হলে সেটার কারণ কখনো এই নয় যে, তিনি সেগুলোর উত্তর দিতে অসমর্থ। এর পরিবর্তে, আমাদের স্মরণে রাখতে হবে যে, যিহোবা তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী ও তাঁর নিরূপিত সময়ে প্রার্থনার উত্তর দেন। তিনি আমাদের চেয়ে হাজার গুণ ভালোভাবে আমাদের প্রয়োজনগুলো সম্বন্ধে এবং সেগুলো কীভাবে মেটাতে হবে, তা জানেন। প্রায়ই তিনি আমাদেরকে ক্রমাগত ‘যাচ্ঞা করিবার, অন্বেষণ করিবার এবং দ্বারে আঘাত করিবার’ সুযোগ দেন। (লূক ১১:৫-১০) এই ধরনের অধ্যবসায় ঈশ্বরকে দেখায় যে, আমাদের আকাঙ্ক্ষা খুবই গভীর এবং আমাদের বিশ্বাস অকৃত্রিম। অধিকন্তু, যিহোবা হয়তো আমাদের প্রার্থনার উত্তর এমন এক উপায়ে দিতে পারেন, যা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি হয়তো কোনো নির্দিষ্ট পরীক্ষা সম্বন্ধে আমাদের প্রার্থনার উত্তর, সমস্যাটা সরিয়ে দেওয়ার দ্বারা নয় বরং আমাদেরকে সহ্য করার শক্তি দেওয়ার মাধ্যমে তা দিতে পারেন।—পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:১৩.

২০. কেন আমাদের প্রার্থনার মূল্যবান সুযোগের সদ্‌ব্যবহার করা উচিত?

২০ আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ হতে পারি যে, এই বিশাল নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা সেই সকলের নিকটবর্তী, যারা যথাযথভাবে প্রার্থনায় তাঁকে ডাকে! (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৪৫:১৮.) আমরা যেন প্রার্থনার মূল্যবান সুযোগের সদ্‌ব্যবহার করি। আমরা যদি তা করি, তা হলে প্রার্থনা-শ্রবণকারী যিহোবার আরও নিকটবর্তী হওয়ার আনন্দময় প্রত্যাশা আমাদের থাকবে।