সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পরিশিষ্ট

ঐশিক নাম​—এটার ব্যবহার ও অর্থ

ঐশিক নাম​—এটার ব্যবহার ও অর্থ

যাত্রাপুস্তক ৬:৩ পদে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তাঁর নাম প্রকাশ করেন। আপনার বাইবেলে এই পদ কি বলে যে, তাঁর নাম যিহোবা? বেশ কয়েকটা বাইবেল অনুবাদে এখানে ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম রয়েছে। কিন্তু, অনেক অনুবাদ যিহোবা নামটা বাদ দিয়ে সেখানে ‘সদাপ্রভু’ বা ‘সনাতন’-এর মতো উপাধিগুলো ব্যবহার করে থাকে। এই পদে কোনটা ব্যবহার করা উচিত? একটা উপাধি না কি যিহোবা নামটা?

ইব্রীয় বর্ণে ঈশ্বরের নাম

যে-ভাষায় বাইবেলের বেশির ভাগ অংশ লেখা হয়েছিল, সেই মূল ইব্রীয় ভাষায় এখানে এক অদ্বিতীয় ব্যক্তিগত নাম দেখা যায়। এটা ইব্রীয় বর্ণ দিয়ে এভাবে বানান করা হয়, יהוה (YHWH)। ইংরেজিতে, সেই নামের প্রচলিত অনুবাদ হচ্ছে, “যিহোবা।” সেই নাম কি শুধুমাত্র বাইবেলের একটা পদেই রয়েছে? না। এটা ইব্রীয় শাস্ত্র-এর মূল পাঠ্যাংশে প্রায় ৭,০০০ বার পাওয়া যায়!

ঈশ্বরের নাম কতখানি গুরুত্বপূর্ণ? যিশু খ্রিস্ট যে-আদর্শ প্রার্থনা শিখিয়েছিলেন, সেটা বিবেচনা করুন। এটা এভাবে শুরু হয়: “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।” (মথি ৬:৯) পরে, ঈশ্বরের কাছে যিশু প্রার্থনা করেছিলেন: “পিতঃ, তোমার নাম মহিমান্বিত কর।” উত্তরে স্বর্গ থেকে ঈশ্বর বলেছিলেন: “আমি তাহা মহিমান্বিত করিয়াছি, আবার মহিমান্বিত করিব।” (যোহন ১২:২৮) স্পষ্টতই, ঈশ্বরের নাম হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে, কেন কিছু অনুবাদক তাদের বাইবেল অনুবাদ থেকে এই নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে এবং সেই নামের জায়গায় উপাধিগুলো বসিয়েছে?

আপাতদৃষ্টিতে দুটো প্রধান কারণ রয়েছে বলে মনে হয়। প্রথমত, অনেকে দাবি করে যে, এই নাম ব্যবহার করা উচিত নয় কারণ মূল ভাষায় এটা কীভাবে উচ্চারিত হতো, তা আজকে অজানা রয়েছে। প্রাচীন ইব্রীয় ভাষা কোনো স্বরবর্ণ ছাড়াই লেখা হতো। তাই, আজকে কেউই একেবারে সঠিকভাবে বলতে পারে না যে, বাইবেলের সময়ের লোকেরা YHWH-কে কীভাবে উচ্চারণ করত। কিন্তু, এইজন্য কি আমাদের ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করা থেকে বিরত হওয়া উচিত? বাইবেলের সময়ে, যিশু নামটা হয়তো ইয়েশুয়া অথবা সম্ভবত ইহোশুয়া হিসেবে উচ্চারিত হতো—কেউ নিশ্চিতভাবে তা বলতে পারে না। তা সত্ত্বেও, সারা পৃথিবীর লোকেরা আজকে যিশু নামের বিভিন্ন রূপ ব্যবহার করে থাকে, এমনভাবে সেটাকে উচ্চারণ করে, যা তাদের ভাষায় প্রচলিত রয়েছে। প্রথম শতাব্দীতে এটা কীভাবে উচ্চারিত হতো, শুধুমাত্র তা না জানার কারণে তারা সেই নাম ব্যবহার করতে ইতস্তত করে না। অনুরূপভাবে আপনি যদি বিদেশে যান, তা হলে আপনি হয়তো দেখতে পাবেন যে, আপনার নিজের নাম অন্য ভাষায় সম্পূর্ণ আলাদাভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। তাই, ঈশ্বরের নামের প্রাচীন উচ্চারণ সম্বন্ধে অনিশ্চয়তা, এটা ব্যবহার না করার পিছনে কোনো কারণ নয়।

বাইবেল থেকে ঈশ্বরের নাম বাদ দেওয়ার পিছনে দ্বিতীয় কারণটার সঙ্গে যিহুদিদের দীর্ঘ প্রতিষ্ঠিত পরম্পরাগত রীতিনীতি জড়িত। তাদের মধ্যে অনেকে বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বরের নাম কখনো উচ্চারণ করা উচিত নয়। এই বিশ্বাসটা স্পষ্টতই বাইবেলের একটা আইনের ভুল প্রয়োগের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যেটা বলে: “তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নাম অনর্থক লইও না, কেননা যে কেহ তাঁহার নাম অনর্থক লয়, সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] তাহাকে নির্দ্দোষ করিবেন না।”—যাত্রাপুস্তক ২০:৭.

এই আইন ঈশ্বরের নামের অপব্যবহারকে নিষেধ করে। কিন্তু, এটা কি তাঁর নামের সম্মানজনক ব্যবহারকে নিষেধ করে? কখনোই না। ইব্রীয় বাইবেলের (“পুরাতন নিয়ম”-এর) লেখকরা সকলে বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছিলেন, যারা প্রাচীন ইস্রায়েলীয়দের দেওয়া ঈশ্বরের সেই ব্যবস্থা অনুযায়ী জীবনযাপন করতেন। অথচ তারা ঈশ্বরের নাম বার বার ব্যবহার করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, তারা অনেক গীতে এই নামকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, যেগুলো উপাসকদের দলগুলো উচ্চরবে গেয়েছিল। যিহোবা ঈশ্বর এমনকী তাঁর উপাসকদের তাঁর নামে ডাকতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন আর বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা এই কথার বাধ্য হয়েছিলেন। (যোয়েল ২:৩২, NW; প্রেরিত ২:২১, NW) তাই, নিশ্চিতভাবে যিশু যেমনটা করেছিলেন, তেমনই আজকে খ্রিস্টানরা সম্মানজনকভাবে ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করতে ইতস্ততবোধ করে না।—যোহন ১৭:২৬.

ঈশ্বরের নামের জায়গায় উপাধি ব্যবহার করে, বাইবেল অনুবাদকরা এক গুরুতর ভুল করে থাকে। তারা ঈশ্বরকে দূরবর্তী ও নৈর্ব্যক্তিক হিসেবে তুলে ধরে, যেখানে বাইবেল মানুষদের “সদাপ্রভুর গূঢ় মন্ত্রণা [“যিহোবার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা,” NW]” গড়ে তুলতে জোরালোভাবে পরামর্শ দেয়। (গীতসংহিতা ২৫:১৪) আপনার একজন অন্তরঙ্গ বন্ধুর কথা চিন্তা করুন। আপনি যদি কখনো আপনার বন্ধুর নামই না জানেন, তা হলে আপনি আসলে তার কতটা ঘনিষ্ঠ হতে পারবেন? অনুরূপভাবে, লোকেদের যদি ঈশ্বরের যিহোবা নামটা সম্বন্ধে অজ্ঞাত রাখা হয়, তা হলে তারা কীভাবে প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারে? অধিকন্তু, লোকেরা যখন ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করে না, তখন তাদের এটার চমৎকার অর্থ সম্বন্ধেও জ্ঞানের অভাব থাকে। এই ঐশিক নামের অর্থ কী?

ঈশ্বর নিজে তাঁর বিশ্বস্ত দাস মোশির কাছে তাঁর নামের অর্থ ব্যাখ্যা করেছিলেন। মোশি যখন ঈশ্বরের নাম সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তখন যিহোবা উত্তর দিয়েছিলেন: “আমি যে আছি সেই আছি।” (যাত্রাপুস্তক ৩:১৪) রদারহ্যামের অনুবাদ এই কথাগুলোকে এভাবে অনুবাদ করে: “আমার যা ইচ্ছা আমি তা-ই হব।” তাই, তাঁর উদ্দেশ্যগুলো পরিপূর্ণ করার জন্য যিহোবাকে যা-ই হতে হোক না কেন, তিনি তা-ই হতে পারেন আর তিনি তাঁর সৃষ্টির এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য যা প্রয়োজন তা ঘটাতে পারেন।

ধরুন আপনি যা হতে চান, তা-ই হতে পারেন। আপনার বন্ধুদের জন্য আপনি কী করবেন? তাদের মধ্যে একজন যদি গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তা হলে আপনি একজন দক্ষ ডাক্তার হয়ে উঠতে পারেন ও তাকে সুস্থ করে তুলতে পারেন। আরেকজন যদি অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হন, তা হলে আপনি একজন ধনী জোগানদাতা হয়ে উঠতে পারেন ও তার উদ্ধারে এগিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু সত্য বিষয়টা হল, আপনি যা হতে পারেন সেই ক্ষেত্রে আপনার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের সকলেরই তা রয়েছে। আপনি যখন বাইবেল অধ্যয়ন করবেন, তখন আপনি এটা দেখে অবাক হয়ে যাবেন যে, কীভাবে যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করার জন্য যা-কিছুরই প্রয়োজন হোক না কেন, তিনি তা-ই হন। আর যারা তাঁকে ভালোবাসে তাদের পক্ষে তাঁর শক্তি ব্যবহার করে তিনি খুশি হন। (২ বংশাবলি ১৬:৯) যিহোবার ব্যক্তিত্বের এই সুন্দর দিকগুলো সেই ব্যক্তিরা বুঝতে পারে না, যারা তাঁর নাম জানে না।

স্পষ্টতই, যিহোবা নামটা বাইবেলে থাকা উচিত। এই নামের অর্থ জানা ও এটাকে আমাদের উপাসনায় নির্দ্বিধায় ব্যবহার করা আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবার আরও নিকটবর্তী হওয়ার ক্ষেত্রে শক্তিশালী সাহায্য। *

^ অনু. 2 ঈশ্বরের নাম, এটার অর্থ ও কেন এটা আমাদের উপাসনায় ব্যবহার করা উচিত তার কারণগুলো সম্বন্ধে আরও তথ্যের জন্য দয়া করে যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত ঐশ্বরিক নামটি যা চিরকাল থাকবে (ইংরেজি) ব্রোশারটা দেখুন। এ ছাড়া, ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়নের জন্য এক সহায়িকা পুস্তিকার বিভাগ ১ দেখুন।