পরিশিষ্ট
১৯১৪ সাল—বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীতে এক তাৎপর্যপূর্ণ বছর
কয়েক দশক আগে থেকেই বাইবেল ছাত্ররা ঘোষণা করেছিল যে, ১৯১৪ সালে কিছু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটবে। সেগুলো কী ছিল এবং কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ ১৯১৪ সালকে সেই গুরুত্বপূর্ণ বছর হিসেবে নির্দেশ করে?
লূক ২১:২৪ পদে যেমন লিপিবদ্ধ রয়েছে, যিশু বলেছিলেন: “জাতিগণের সময় সম্পূর্ণ না হওয়া পর্য্যন্ত যিরূশালেম জাতিগণের পদ-দলিত হইবে।” যিরূশালেম যিহুদি জাতির রাজধানী ছিল—রাজা দায়ূদের কুল থেকে আসা রাজাদের সিংহাসনের স্থান। (গীতসংহিতা ৪৮:১, ২) তবে, এই রাজারা বিভিন্ন জাতির নেতাদের মধ্যে অদ্বিতীয় ছিলেন। তারা “সদাপ্রভুর সিংহাসনে” স্বয়ং ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে উপবেশন করেছিলেন। (১ বংশাবলি ২৯:২৩) ফলে, যিরূশালেম যিহোবার শাসনপদের এক প্রতীক ছিল।
কিন্তু, কখন ও কীভাবে ঈশ্বরের শাসনপদ পরজাতি বা “জাতিগণের পদ-দলিত” হতে আরম্ভ করেছিল? এটা ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭ সালে, যখন বাবিলীয়রা যিরূশালেম জয় করেছিল। ‘সদাপ্রভুর সিংহাসন’ শূন্য হয়ে গিয়েছিল এবং দায়ূদের কাছ থেকে আসা রাজাদের বংশের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয়েছিল। (২ রাজাবলি ২৫:১-২৬) এই ‘দলিত’ অবস্থা কি চিরকাল ধরে চলবে? না, কারণ যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্বাণী যিরূশালেমের শেষ রাজা সিদিকিয় সম্বন্ধে বলেছিল: “উষ্ণীষ অপসারণ কর ও রাজমুকুট দূর কর; . . . যাহা আছে, তাহাও থাকিবে না, যাবৎ তিনি না আইসেন, যাঁহার অধিকার; আমি তাঁহাকে দিব।” (যিহিষ্কেল ২১:২৬, ২৭) দায়ূদের বংশের রাজমুকুটে “যাঁহার অধিকার” রয়েছে, তিনি হলেন খ্রিস্ট যিশু। (লূক ১:৩২, ৩৩) তাই, এই ‘দলিত’ অবস্থা তখন শেষ হয়েছিল, যখন যিশু রাজা হয়েছিলেন।
দানিয়েল ৪ অধ্যায়ের বিবরণে রয়েছে। এটা এক ভবিষ্যদ্বাণীমূলক স্বপ্নকে বর্ণনা করে, যা বাবিলের রাজা নবূখদ্নিৎসর দেখেছিলেন। তিনি এক বৃহৎ বৃক্ষ দেখেছিলেন, যেটা কেটে ফেলা হয়েছিল। এই বৃক্ষের কর্তিত অংশ বৃদ্ধি পেতে পারেনি কারণ এটা লোহা ও পিতল দিয়ে বদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। একজন স্বর্গদূত ঘোষণা করেছিলেন: “তাহার উপরে সাত কাল ঘুরুক।”—দানিয়েল ৪:১০-১৬.
সেই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাটা কখন ঘটেছিল? যিশু দেখিয়েছিলেন যে, পরজাতীয়রা একটা নির্দিষ্ট সময়কাল ধরে শাসন করবে। সেই সময়কাল কতদিন স্থায়ী হবে, সেটা জানার জন্য কিছু যোগসূত্রবাইবেলে, বৃক্ষ কখনো কখনো শাসনপদকে প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যবহৃত হয়েছে। (যিহিষ্কেল ১৭:২২-২৪; ৩১:২-৫) তাই, রূপক বৃক্ষ কেটে ফেলা প্রতিনিধিত্ব করে যে, কীভাবে ঈশ্বরের শাসনপদ ব্যাহত হবে, যা যিরূশালেমের রাজাদের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু, সেই দর্শন এই ঘোষণা করেছিল যে, ‘যিরূশালেমের এই পদ-দলন’ ক্ষণস্থায়ী হবে—“সাত কাল” পর্যন্ত। সেই সময়কাল কত দীর্ঘ?
প্রকাশিত বাক্য ১২:৬, ১৪ পদ ইঙ্গিত করে যে, সাড়ে তিন কাল সমান “এক সহস্র দুই শত ষাট দিন।” তাই “সাত কাল” হবে এর দ্বিগুণ বা ২,৫২০ দিন। কিন্তু, পরজাতীয়রা যিরূশালেমের পতনের মাত্র ২,৫২০ দিন পর ঈশ্বরের শাসনপদকে ‘পদ-দলিত’ করা বন্ধ করে দেয়নি। তাহলে, স্পষ্টতই এই ভবিষ্যদ্বাণী আরও দীর্ঘ এক সময়কালকে অন্তর্ভুক্ত করে। গণনাপুস্তক ১৪:৩৪ এবং যিহিষ্কেল ৪:৬ পদ যা “এক এক দিনের জন্য এক এক বছর” সম্বন্ধে বলে, সেটার উপর ভিত্তি করে “সাত কাল” ২,৫২০ বছরে শেষ হয়।
২,৫২০ বছর শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭ সালের অক্টোবর মাসে, যখন যিরূশালেম বাবিলীয়দের হাতে পতিত হয়েছিল এবং দায়ূদের বংশের রাজাকে তার সিংহাসন থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। সেই সময়কাল ১৯১৪ সালের অক্টোবর মাসে শেষ হয়েছিল। সেই সময়ে “জাতিগণের সময়” শেষ হয়েছিল এবং যিশু খ্রিস্টকে ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত করা হয়েছিল। *—গীতসংহিতা ২:১-৬; দানিয়েল ৭:১৩, ১৪.
মথি ২৪:৩-৮; লূক ২১:১১) এই ধরনের ঘটনাগুলো জোরালো সাক্ষ্য দেয় যে, ১৯১৪ সাল বাস্তবিকই ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের জন্ম এবং বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ‘শেষ কালের’ শুরুকে চিহ্নিত করেছিল।—২ তীমথিয় ৩:১-৫.
যিশু যেমন ভাববাণী করেছিলেন যে, স্বর্গীয় রাজা হিসেবে তাঁর “আগমন” বা উপস্থিতি জগতের লক্ষণীয় ঘটনাগুলো—যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প, মহামারী—দ্বারা চিহ্নিত হবে। (^ অনু. 4 খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭ সালের অক্টোবর থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৬০৬ বছর। যেহেতু কোনো শূন্য বছর নেই, তাই খ্রিস্টপূর্ব ১ সালের অক্টোবর থেকে ১৯১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১,৯১৪ বছর। ৬০৬ বছর ও ১,৯১৪ বছর যোগ করার দ্বারা আমরা ২,৫২০ বছর পাই। খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭ সালে যিরূশালেমের পতন সম্বন্ধে তথ্যের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) বইয়ের “কালনিরূপণ” প্রবন্ধটা দেখুন।