সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ১

“ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই”

“ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই”

“ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি; আর তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।” —১ যোহন ৫:৩.

১, ২. কী আপনাকে যিহোবা ঈশ্বরকে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত করে?

আপনি কি ঈশ্বরকে ভালোবাসেন? আপনি যদি ইতিমধ্যেই ব্যক্তিগতভাবে যিহোবার কাছে আপনার জীবন উৎসর্গ করে থাকেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আপনি এই জোরালো উত্তর দেবেন, হ্যাঁ—আর তা উপযুক্ত! যিহোবাকে ভালোবাসা আমাদের জন্য এক স্বাভাবিক বিষয়। আমাদের জন্য ঈশ্বরের ভালোবাসার প্রতি সাড়া দিয়ে আমরাও আসলে তাঁকে ভালোবাসি। বাইবেল এটাকে এভাবে বলে: “আমরা প্রেম করি, কারণ [ঈশ্বরই] প্রথমে আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন।”—১ যোহন ৪:১৯.

যিহোবাই প্রথমে আমাদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে এক অপূর্ব পার্থিব বাড়ি দিয়েছেন। তিনি আমাদের দৈহিক ও বস্তুগত চাহিদাগুলোর প্রতি লক্ষ রাখেন। (মথি ৫:৪৩-৪৮) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, তিনি আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলোর যত্ন নিয়ে থাকেন। তিনি আমাদেরকে তাঁর বাক্য বাইবেল দিয়েছেন। অধিকন্তু, তিনি আমাদেরকে এই নিশ্চয়তা সহকারে তাঁর কাছে প্রার্থনা করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন যে, তিনি আমাদের প্রার্থনা শুনবেন এবং আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য তাঁর পবিত্র আত্মা দেবেন। (গীতসংহিতা ৬৫:২; লূক ১১:১৩) সর্বোপরি, তিনি তাঁর সবচেয়ে প্রিয় পুত্রকে আমাদের মুক্তিদাতা হিসেবে পাঠিয়েছেন, যেন আমরা পাপ ও মৃত্যু থেকে উদ্ধার লাভ করতে পারি। যিহোবা আমাদের প্রতি কতই-না মহৎ প্রেম দেখিয়েছেন!—পড়ুন, যোহন ৩:১৬; রোমীয় ৫:৮.

৩. (ক) ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করার জন্য আমাদের কী করা প্রয়োজন? (খ) কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা আমাদের বিবেচনা করতে হবে আর কোথায় এর উত্তর পাওয়া যায়?

যিহোবা চান আমরা যেন তাঁর প্রেম থেকে চিরকাল উপকার লাভ করি। কিন্তু, আমরা উপকার লাভ করব কী করব না, তা আসলে আমাদের নিজেদের উপর নির্ভর করে। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের উপদেশ দেয়: অনন্তজীবনের প্রতি দৃষ্টি রেখে “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর।” (যিহূদা ২১) “আপনাদিগকে রক্ষা কর” অভিব্যক্তিটা ইঙ্গিত দেয় যে, ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করার জন্য আমাদের কাজ করা প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট উপায়গুলোর মাধ্যমে তাঁর প্রেমের প্রতি আমাদের সাড়া দিতে হবে। তাই, যে-গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা আমাদের বিবেচনা করতে হবে তা হল, ‘কীভাবে আমি ঈশ্বরের প্রতি আমার প্রেম প্রদর্শন করতে পারি?’ এর উত্তরটা প্রেরিত যোহনের এই অনুপ্রাণিত কথাগুলোতে পাওয়া যায়: “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি; আর তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।” (১ যোহন ৫:৩) এই কথাগুলোর অর্থ আমাদের মনোযোগের সঙ্গে পরীক্ষা করা উচিত কারণ আমরা আমাদের ঈশ্বরকে দেখাতে চাই যে, আমরা তাঁকে কতটা ভালোবাসি।

“ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই”

৪, ৫. কীভাবে আপনার হৃদয়ে যিহোবার প্রতি প্রেম গড়ে উঠতে শুরু করেছিল, তা বর্ণনা করুন।

প্রেরিত যোহন উপরে উদ্ধৃত উক্তিটা এই কথা বলার দ্বারা শুরু করেছিলেন, “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, . . .।” আসুন আমরা দেখি যে, ঈশ্বরের প্রতি প্রেম বলতে কী বোঝায়, তা তিনি কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু, এই প্রশ্ন বিবেচনা করার আগে, মনে করে দেখার চেষ্টা করুন যে, কখন আপনার হৃদয়ে যিহোবার প্রতি প্রেম গড়ে উঠতে শুরু করেছিল।

উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্ম যিহোবার প্রতি প্রেমময় বাধ্যতার এক জীবনের শুরুকে চিহ্নিত করে

এক মুহূর্তের জন্য সেই সময়ের কথা একটু চিন্তা করুন, যখন আপনি প্রথম যিহোবা ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে সত্য শিখেছিলেন এবং বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন। আপনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, যদিও আপনি ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন এক পাপী হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তবুও যিহোবা খ্রিস্টের মাধ্যমে আপনার জন্য পথ খুলে দিয়েছেন, যাতে আপনি আদম যে-সিদ্ধতা হারিয়েছিলেন, তা অর্জন করতে ও অনন্তজীবন লাভ করতে পারেন। (মথি ২০:২৮; রোমীয় ৫:১২, ১৮) আপনি সেই ত্যাগস্বীকারের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শুরু করেছিলেন, যা যিহোবা তাঁর সবচেয়ে প্রিয় পুত্রকে আপনার জন্য মৃত্যুবরণ করতে পাঠানোর মাধ্যমে করেছিলেন। আপনার হৃদয় উদ্দীপিত হয়েছিল আর আপনি ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করতে শুরু করেছিলেন, যিনি আপনার জন্য এইরকম মহৎ প্রেম দেখিয়েছেন।—পড়ুন, ১ যোহন ৪:৯, ১০.

৬. কীভাবে অকৃত্রিম প্রেম প্রকাশিত হয় আর ঈশ্বরের প্রতি প্রেম আপনাকে কী করতে অনুপ্রাণিত করেছে?

কিন্তু, সেই অনুভূতি ছিল যিহোবার প্রতি অকৃত্রিম প্রেমের এক শুরু মাত্র। প্রেম নিছক এক অনভূতি নয়; অথবা এটা শুধু মুখের কথাও নয়। ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত প্রেমের সঙ্গে শুধু এই কথা বলার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত যে, “আমি যিহোবাকে ভালোবাসি।” বিশ্বাসের মতো অকৃত্রিম প্রেমও সেই কাজগুলোর মাধ্যমে দেখা যায়, যেগুলো করতে এই প্রেম অনুপ্রাণিত করে। (যাকোব ২:২৬) নির্দিষ্টভাবে বললে, যে-ব্যক্তিকে আমরা ভালোবাসি, তাকে খুশি করে এমন কাজগুলো করার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভালোবাসা দেখাই। তাই, আপনার হৃদয়ে যখন যিহোবার প্রতি প্রেম গড়ে উঠেছিল, তখন আপনি এমন উপায়ে জীবনযাপন করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, যা আপনার স্বর্গীয় পিতাকে খুশি করে। আপনি কি একজন বাপ্তাইজিত সাক্ষি? যদি তা-ই হয়ে থাকেন, তাহলে এই গভীর অনুরাগ ও ভক্তি আপনাকে নিজের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পরিচালিত করেছে। আপনি ‘প্রভুর [“যিহোবার,” NW]’ ইচ্ছা পালন করার জন্য নিজেকে তাঁর কাছে উৎসর্গ করেছেন এবং বাপ্তাইজিত হওয়ার মাধ্যমে আপনার উৎসর্গীকরণকে চিত্রিত করেছেন। (পড়ুন, রোমীয় ১৪:৭, ৮.) যিহোবার কাছে করা এই গুরুগম্ভীর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করার সঙ্গে প্রেরিত যোহনের দ্বারা উল্লেখিত পরবর্তী কথাগুলো জড়িত।

“আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি”

৭. ঈশ্বরের কিছু আজ্ঞা কী আর সেগুলো পালন করার সঙ্গে কী জড়িত?

ঈশ্বরের প্রতি প্রেম বলতে কী বোঝায়, তা যোহন ব্যাখ্যা করেন: “আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি।” ঈশ্বরের আজ্ঞা সকল কী? যিহোবা তাঁর বাক্য বাইবেলের মাধ্যমে একাধিক নির্দিষ্ট আজ্ঞা দিয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি এই ধরনের অভ্যাসগুলো নিষেধ করেছেন যেমন, মত্ততা, ব্যভিচার, প্রতিমাপূজা, চুরি করা এবং মিথ্যা বলা। (১ করিন্থীয় ৫:১১; ৬:১৮; ১০:১৪; ইফিষীয় ৪:২৮; কলসীয় ৩:৯) ঈশ্বরের আজ্ঞা সকল পালন করার সঙ্গে বাইবেলের স্পষ্ট নৈতিক মানগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা জড়িত।

৮, ৯. যিহোবাকে কী খুশি করে, তা আমরা কীভাবে জানতে পারি, এমনকী সেই পরিস্থিতিগুলোতে, যেখানে বাইবেলের নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই? একটা উদাহরণ দিন।

কিন্তু, যিহোবাকে খুশি করার জন্য আমাদের কেবল তাঁর সরাসরি আজ্ঞা সকল পালন করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে হবে। যিহোবা আমাদের এমন সব আইন দিয়ে জর্জরিত করেন না, যেগুলো আমাদের রোজকার জীবনের প্রতিটা দিককে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই, প্রতিদিন আমরা হয়তো এমন অনেক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারি, যেগুলোর জন্য বাইবেলের নির্দিষ্ট কোনো আজ্ঞা নেই। এই ধরনের ক্ষেত্রগুলোতে কোন বিষয়টা যিহোবাকে খুশি করবে, তা আমরা কীভাবে জানতে পারি? বাইবেলে ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। বাইবেল অধ্যয়ন করে আমরা জেনেছি যে, কোন বিষয়টা যিহোবা ভালোবাসেন এবং কোন বিষয়টা তিনি ঘৃণা করেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৯৭:১০; হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯) আমরা সেইসমস্ত মনোভাব ও কাজ সম্বন্ধে বুঝতে পারি, যেগুলোকে তিনি মূল্যবান বলে গণ্য করেন। যিহোবার ব্যক্তিত্ব ও পথ সম্বন্ধে আমরা যত বেশি জানব, ততই আমরা তাঁর চিন্তাভাবনাকে আমাদের সিদ্ধান্তে পরিচালনা দিতে এবং আমাদের কাজগুলোর উপর প্রভাব ফেলতে দিতে সমর্থ হব। এভাবে, এমনকী যে-পরিস্থিতিগুলো সম্বন্ধে বাইবেলে কোনো নির্দিষ্ট আইন নেই, সেই ক্ষেত্রেও আমরা প্রায়ই “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] ইচ্ছা কি,” তা বুঝতে পারব।—ইফিষীয় ৫:১৭.

উদাহরণ স্বরূপ, বাইবেলে এমন কোনো সরাসরি আজ্ঞা নেই, যা আমাদেরকে সেইসমস্ত চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠানগুলো দেখতে নিষেধ করে, যেগুলো চরম দৌরাত্ম্য অথবা যৌন অনৈতিকতাকে তুলে ধরে। কিন্তু, এই ধরনের বিষয়বস্তু দেখার বিরুদ্ধে আমাদের কি আসলেই নির্দিষ্ট আইনের প্রয়োজন রয়েছে? আমরা জানি যে, এইরকম বিষয়গুলোকে যিহোবা কোন দৃষ্টিতে দেখেন। তাঁর বাক্য স্পষ্টভাবে আমাদেরকে বলে: “দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোক [সদাপ্রভুর] . . . ঘৃণাস্পদ।” (গীতসংহিতা ১১:৫) এটি এও বলে: “ব্যভিচারীদের ও বেশ্যাগামীদের বিচার ঈশ্বর করিবেন।” (ইব্রীয় ১৩:৪) এই অনুপ্রাণিত বাক্যগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যে, যিহোবার ইচ্ছা কী। তাই, আমরা টেলিভিশন, ইন্টারনেট অথবা অন্যান্য মাধ্যমের দ্বারা এই ধরনের অভ্যাসের সুস্পষ্ট চিত্রগুলো দেখে আনন্দ লাভ করা বেছে নিই না, যেগুলো আমাদের ঈশ্বর ঘৃণা করেন। আমরা জানি যে, আমরা যখন এমন নৈতিক কলুষতা এড়িয়ে চলি, যেটাকে এই জগৎ অক্ষতিকর আমোদপ্রমোদ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে, তখন তা যিহোবাকে খুশি করে। *

১০, ১১. কেন আমরা যিহোবার প্রতি বাধ্য থাকার পথ বেছে নিই আর আমরা তাঁর প্রতি কোন ধরনের বাধ্যতা দেখাই?

১০ কোন প্রধান কারণে আমরা ঈশ্বরের আজ্ঞা সকল পালন করি? কেন আমরা প্রতিদিন এমন উপায়ে জীবনযাপন করতে চাই, যেটাকে আমরা ঈশ্বরের চিন্তাভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে জানি? আমরা কেবল শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার অথবা সেই ক্ষতিকর পরিণতিগুলোকে এড়ানোর জন্য এই পথ বেছে নিই না, যেগুলো এমন ব্যক্তিদের উপর আসে, যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা অগ্রাহ্য করে। (গালাতীয় ৬:৭) এর পরিবর্তে, যিহোবার প্রতি বাধ্যতাকে আমরা তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম দেখানোর এক মূল্যবান সুযোগ বলে মনে করি। ঠিক যেমন একটা সন্তান তার বাবার অনুমোদন লাভ করার জন্য উৎসুক, তেমনই আমরাও যিহোবার প্রসন্নতা বা অনুমোদন লাভ করতে চাই। (গীতসংহিতা ৫:১২) তিনি আমাদের পিতা আর আমরা তাঁকে ভালোবাসি। আমরা যে ‘সদাপ্রভুর অনুগ্রহ’ বা অনুমোদন নিয়ে আসে এমন উপায়ে জীবনযাপন করছি, তা জানার চেয়ে আর কোনোকিছুই আমাদের জন্য এত বেশি আনন্দ ও এত গভীর পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে না।—হিতোপদেশ ১২:২.

১১ তাই, আমরা অসন্তুষ্ট মনোভাব নিয়ে বাধ্য হই না; কিংবা এটা নির্বাচনমূলক বা শর্তসাপেক্ষও নয়। * কোন বিষয়ে বাধ্য থাকব, তা আমরা নিজেরা বাছাই করি না আর কেবলমাত্র সেই সময়ই বাধ্য হই না, যখন তা আমাদের জন্য সুবিধাজনক হয় অথবা তা হওয়া সামান্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসে বা কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই নিয়ে আসে না। এর বিপরীতে, আমরা “অন্তঃকরণের সহিত . . . আজ্ঞাবহ” বা বাধ্য হই। (রোমীয় ৬:১৭) আমরা বাইবেলের গীতরচকের মতো অনুভব করি, যিনি লিখেছিলেন: “আমি তোমার আজ্ঞাসমূহে আমোদ করিব, সে সকল আমি ভালবাসি।” (গীতসংহিতা ১১৯:৪৭) হ্যাঁ, আমরা যিহোবার বাধ্য থাকতে ভালোবাসি। আমরা স্বীকার করি যে, তিনি আমাদের সম্পূর্ণ ও শর্তহীন বাধ্যতা পাওয়ার যোগ্য—এবং তিনি তা চান। (দ্বিতীয় বিবরণ ১২:৩২) আমরা চাই যিহোবা যেন আমাদের সম্বন্ধে একই কথা বলেন, যা তাঁর বাক্য নোহ সম্বন্ধে বলে থাকে। সেই বিশ্বস্ত কুলপতি, যিনি বহু দশক ধরে বাধ্য থাকার মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন, তার সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “নোহ সেইরূপ করিলেন, ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারেই সকল কর্ম্ম করিলেন।”—আদিপুস্তক ৬:২২.

১২. কখন আমাদের বাধ্যতা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে?

১২ আমাদের স্বেচ্ছায় বাধ্য হওয়া সম্বন্ধে যিহোবা কেমন বোধ করেন? তাঁর বাক্য বলে যে, এভাবে আমরা তাঁর “চিত্তকে আনন্দিত” করি। (হিতোপদেশ ২৭:১১) আমাদের বাধ্যতা কি আসলেই নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম প্রভুর হৃদয়কে আনন্দিত করে? বাস্তবিকই তা করে—আর তা উত্তম কারণেই! যিহোবা আমাদেরকে নৈতিক দিক দিয়ে স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এর অর্থ হল যে, আমাদের বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে; আমরা ঈশ্বরের বাধ্য হওয়া বেছে নিতে পারি অথবা তাঁর অবাধ্য হওয়া বেছে নিতে পারি। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৫, ১৬, ১৯, ২০) আমরা যখন স্বেচ্ছায় যিহোবার বাধ্য হওয়া বেছে নিই এবং সেই সিদ্ধান্তের পিছনে চালিকাশক্তি হিসেবে ঈশ্বরের প্রতি এক প্রেমপূর্ণ হৃদয় থাকে, তখন আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার জন্য মহা সন্তোষ ও আনন্দ নিয়ে আসি। (হিতোপদেশ ১১:২০) এ ছাড়া, আমরা জীবনের সর্বোত্তম পথও বাছাই করছি।

“তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়”

১৩, ১৪. কেন এটা বলা যেতে পারে যে, ঈশ্বরের “আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়” আর কীভাবে তা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে?

১৩ প্রেরিত যোহন আমাদেরকে যিহোবার চাহিদাগুলো সম্বন্ধে অত্যন্ত আশ্বাসদায়ক কিছু বলেছেন: “তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।” যে-গ্রিক শব্দকে ১ যোহন ৫:৩ পদে “দুর্ব্বহ” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার আক্ষরিক অর্থ হল “ভারী।” * যিহোবার চাহিদাগুলো অযৌক্তিক অথবা পীড়নকর নয়। তাঁর আইনগুলো পালন করা অসিদ্ধ মানুষের ক্ষমতার বাইরে নয়।

১৪ আমরা হয়তো এটাকে এভাবে উদাহরণের সাহায্য ব্যাখ্যা করতে পারি। একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাড়ি বদলের সময় তাকে সাহায্য করার জন্য আপনাকে বলেন। সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক বাক্স রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু বাক্স যথেষ্ট হালকা বলে একজন ব্যক্তি অনায়াসেই সেগুলো বহন করতে পারেন কিন্তু অন্যগুলো ভারী এবং সেগুলো তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য দু-জন ব্যক্তির প্রয়োজন। যে-বাক্সগুলো আপনি বহন করবেন বলে আপনার বন্ধু চান, সেগুলো তিনি নির্ধারণ করে দেন। তিনি কি আপনাকে এমন বাক্সগুলো বহন করতে বলবেন, যেগুলো আপনার জন্য খুবই ভারী বলে তিনি জানেন? না। আপনি সেগুলো একা বহন করার চেষ্টা করে আঘাত পান, তিনি তা চাইবেন না। একইভাবে, আমাদের প্রেমময় ও সদয় ঈশ্বর আমাদেরকে এমন আজ্ঞা সকল পালন করতে বলেন না, যেগুলো পালন করা খুবই কঠিন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১১-১৪) তিনি কখনো আমাদেরকে এইরকম এক ভারী বোঝা বহন করতে বলবেন না। যিহোবা আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো জানেন কারণ “তিনিই আমাদের গঠন জানেন; আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে।”—গীতসংহিতা ১০৩:১৪.

১৫. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবার আজ্ঞা সকল আমাদের জন্য সবচেয়ে উপকারজনক?

১৫ যিহোবার আজ্ঞা সকল আদৌ দুর্বহ নয়; বরং সেগুলো আমাদের জন্য সবচেয়ে উপকারজনক। (পড়ুন, যিশাইয় ৪৮:১৭.) তাই, মোশি প্রাচীন ইস্রায়েলকে বলতে পেরেছিলেন: “সদাপ্রভু আমাদিগকে এই সমস্ত বিধি পালন করিতে, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করিতে আজ্ঞা করিলেন, যেন যাবজ্জীবন আমাদের মঙ্গল হয়, আর তিনি অদ্যকার মত যেন আমাদিগকে জীবিত রাখেন।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:২৪) আমরাও নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমাদেরকে তাঁর আইনগুলো দেওয়ার সময়ে যিহোবার হৃদয়ে আমাদের সর্বোত্তম—আমাদের দীর্ঘস্থায়ী, অনন্ত—মঙ্গলের কথা ছিল। সত্যিই তো, অন্য আর কীই-বা হতে পারে? যিহোবা হলেন অসীম প্রজ্ঞার অধিকারী ঈশ্বর। (রোমীয় ১১:৩৩) তাই, তিনি জানেন যে, আমাদের জন্য সর্বোত্তমটা কী। এ ছাড়া, যিহোবা প্রেমের মূর্ত প্রতীক। (১ যোহন ৪:৮) প্রেম হল তাঁর অপরিহার্য গুণ আর এই গুণ তিনি যা কিছু বলেন ও করেন, সেগুলোর সমস্তকিছুকেই প্রভাবিত করে। এটাই হল সেইসমস্ত আজ্ঞার ভিত্তি, যেগুলো তিনি তাঁর দাসদের দিয়েছেন।

১৬. এই অধঃপতিত জগতের বিভিন্ন প্রভাব এবং অসিদ্ধতার প্রবণতাগুলো সত্ত্বেও কেন আমরা এক বাধ্যতার পথ অনুধাবন করতে পারি?

১৬ তবে, এর অর্থ এই নয় যে, ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা, অনুসরণ করার মতো এক সহজ পথ। আমাদেরকে এই অধঃপতিত জগতের প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, যে-জগৎ “পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) এ ছাড়া, আমাদেরকে সেই অসিদ্ধতার সঙ্গেও লড়াই করতে হবে, যা আমাদেরকে ঈশ্বরের আইনগুলো লঙ্ঘন করার জন্য প্ররোচিত করে। (রোমীয় ৭:২১-২৫) কিন্তু, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেম সফল হতে পারে। যিহোবা সেই ব্যক্তিদের আশীর্বাদ করেন, যারা তাদের বাধ্যতার মাধ্যমে যিহোবার প্রতি তাদের প্রেমের প্রমাণ দিতে চায়। তিনি “আপন আজ্ঞাবহদিগকে” বা যারা তার বাধ্য, তাদেরকে পবিত্র আত্মা দান করেন। (প্রেরিত ৫:৩২) সেই আত্মা আমাদের মধ্যে চমৎকার ফল উৎপন্ন করে—সেইসমস্ত মূল্যবান গুণ, যেগুলো এক বাধ্যতার পথ অনুধাবন করার ক্ষেত্রে আমাদেরকে সাহয্য করতে পারে।—গালাতীয় ৫:২২, ২৩.

১৭, ১৮. (ক) এই প্রকাশনায় আমরা কী পরীক্ষা করব আর তা করার সময় আমাদের কী মনে রাখা উচিত? (খ) পরের অধ্যায়ে কী আলোচনা করা হবে?

১৭ এই প্রকাশনায় আমরা যিহোবার বিভিন্ন নীতি এবং নৈতিক মান ও তাঁর ইচ্ছা সম্বন্ধীয় আরও অনেক অভিব্যক্তি পরীক্ষা করব। তা করার সময় আমাদেরকে বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে। আসুন আমরা মনে রাখি যে, যিহোবা আমাদেরকে তাঁর আইন ও নীতিগুলো পালন করার জন্য জোর করেন না; তিনি চান যেন আমরা স্বেচ্ছায় বাধ্য হই, যা আমাদের হৃদয় থেকে আসে। আসুন আমরা যেন ভুলে না যাই যে, যিহোবা আমাদের এমন উপায়ে জীবনযাপন করতে বলছেন, যা এখনই প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে আসবে এবং ভবিষ্যতে অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করবে। এ ছাড়া, আসুন আমরা আমাদের পূর্ণহৃদয়ের বাধ্যতাকে, যিহোবাকে আমরা কতটা ভালোবাসি, তা দেখানোর এক মূল্যবান সুযোগ হিসেবে মনে করি।

১৮ আমাদেরকে ভুল থেকে সঠিকটা নির্ণয় করার জন্য সাহায্য করতে যিহোবা প্রেমের সঙ্গে আমাদেরকে বিবেকের ক্ষমতা দিয়েছেন। তবে, এক নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হতে হলে, আমাদের বিবেককে প্রশিক্ষিত হতে হবে, যা পরের অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে।

^ অনু. 9 যেভাবে গঠনমূলক আমোদপ্রমোদ বাছাই করা যায়, সেই সম্বন্ধে আলোচনার জন্য এই প্রকাশনার ৬ অধ্যায় দেখুন।

^ অনু. 11 এমনকী দুষ্ট আত্মারাও অসন্তুষ্ট মনোভাব নিয়ে বাধ্য হতে পারে। যিশু যখন মন্দদূতদেরকে তাদের দ্বারা আক্রান্ত কিছু লোকের মধ্যে থেকে বের হয়ে আসার আদেশ দিয়েছিলেন, তখন মন্দদূতরা অনিচ্ছুকভাবে হলেও যিশুর কর্তৃত্ব স্বীকার করতে ও সেই আদেশ পালন করতে বাধ্য হয়েছিল।—মার্ক ১:২৭; ৫:৭-১৩.

^ অনু. 13 মথি ২৩:৪ পদে এই শব্দটা “ভারী দুর্ব্বহ বোঝা” অর্থাৎ অত্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ নিয়মনীতি ও মানুষের তৈরি পরম্পরাগত বিধি সম্বন্ধে বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, যেগুলো অধ্যাপক ও ফরীশীরা সাধারণ লোকেদের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল।