সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ৮

ঈশ্বর শুচি লোকেদের ভালোবাসেন

ঈশ্বর শুচি লোকেদের ভালোবাসেন

“তুমি শুচির সহিত শুচি ব্যবহার করিবে।” —গীতসংহিতা ১৮:২৬.

১-৩. (ক) কেন একজন মা নিশ্চিত হয়ে নেন যে, তার ছেলে পরিপাটী ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কি না? (খ) কেন যিহোবা চান যেন তাঁর উপাসকরা শুচি থাকে আর কী আমাদেরকে শুচি থাকতে অনুপ্রাণিত করে?

একজন মা তার ছোট্ট ছেলেকে বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করছেন। তিনি এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নেন যে, তার ছেলে স্নান করেছে এবং তার কাপড়চোপড় পরিপাটী ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তিনি জানেন যে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ছেলের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এও উপলব্ধি করেন যে, তার ছেলের বেশভূষা তার বাবা-মায়ের জন্য হয় খ্যাতি, না হয় অখ্যাতি নিয়ে আসবে।

আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবা চান যেন তাঁর দাসেরা শুচি থাকে। তাঁর বাক্য বলে: “তুমি শুচির সহিত শুচি ব্যবহার করিবে।” * (গীতসংহিতা ১৮:২৬) যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন; তিনি জানেন যে, শুচি থাকা আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ ছাড়া, তিনি চান যেন তাঁর সাক্ষি হিসেবে আমরা তাঁর জন্য সুখ্যাতি নিয়ে আসি। বস্তুতপক্ষে, আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বেশভূষা ও উত্তম আচরণ যিহোবা এবং তাঁর পবিত্র নামের জন্য গৌরব নিয়ে আসবে, নিন্দা নয়।—যিহিষ্কেল ৩৬:২২; পড়ুন, ১ পিতর ২:১২.

ঈশ্বর যে শুচি লোকেদের ভালোবাসেন, তা জানা আমাদেরকে শুচি থাকতে অনুপ্রাণিত করে। আমরা চাই আমাদের জীবনধারা তাঁর জন্য সম্মান নিয়ে আসুক কারণ আমরা তাঁকে ভালোবাসি। এ ছাড়া, আমরা তাঁর প্রেমে অবস্থিতি করতে চাই। তাহলে, আসুন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে, কেন আমাদের শুচি থাকতে হবে, শুচি থাকার সঙ্গে কী জড়িত এবং কীভাবে আমরা নিজেদেরকে শুচি রাখতে পারি। এই ধরনের এক পরীক্ষা আমাদেরকে এটা দেখতে সাহায্য করতে পারে যে, এমন ক্ষেত্রগুলো আছে কি না, যেখানে আমাদের উন্নতি করতে হবে।

কেন আমাদের শুচি থাকতে হবে?

৪, ৫. (ক) কোন প্রধান কারণে আমাদের শুচি থাকতে হবে? (খ) কীভাবে দৃশ্যমান সৃষ্টিগুলোর মধ্যে যিহোবার শুচিতা স্পষ্ট হয়?

একটা যে-উপায়ে যিহোবা আমাদের পরিচালনা দেন, তা হল উদাহরণের মাধ্যমে। তাই, তাঁর বাক্য আমাদের এই জোরালো পরামর্শ দেয়, “তোমরা ঈশ্বরের অনুকারী হও।” (ইফিষীয় ৫:১) এখানেই প্রধান কারণটা রয়েছে, যেজন্য আমাদের শুচি থাকতে হবে: আমরা যে-ঈশ্বরের উপাসনা করি, সেই যিহোবা হলেন শুচি, শুদ্ধ এবং সমস্ত ক্ষেত্রে পবিত্র।—পড়ুন, লেবীয় পুস্তক ১১:৪৪, ৪৫.

যিহোবার অনেক গুণ এবং পন্থার মতো তাঁর শুচিতাও তাঁর দৃশ্যমান সৃষ্টিগুলোর মধ্যে স্পষ্ট হয়। (রোমীয় ১:২০) পৃথিবীকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন তা মানুষদের জন্য এক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বাড়ি হয়ে ওঠে। যিহোবা বাস্তুসংস্থানচক্র প্রদান করেছেন, যা আমাদের বায়ু ও জলকে বিশুদ্ধ করে। কিছু জীবাণু বর্জ্য পদার্থকে অক্ষতিকর দ্রব্যে রূপান্তরিত করে। বিজ্ঞানীরা এইরকম কিছু ক্ষুধার্ত অণুজীবকে মানুষের স্বার্থপরতা এবং লোভের কারণে সৃষ্ট তৈলাক্ত পদার্থের নিঃসরণ ও অন্যান্য দূষণকে পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করেছে। স্পষ্টতই, যিনি “পৃথিবী গঠন করিয়াছেন,” তাঁর কাছে শুচিতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। (যিরমিয় ১০:১২) এটা আমাদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া উচিত।

৬, ৭. কীভাবে মোশির ব্যবস্থা এই বিষয়ে জোর দিয়েছিল যে, যারা যিহোবাকে উপাসনা করে, তাদের কাছ থেকে শুচিতা চাওয়া হয়েছিল?

আরেকটা যে-কারণে আমাদের শুচি থাকতে হবে, তা হল আমাদের সার্বভৌম শাসক যিহোবা চান যেন তাঁর উপাসকরা শুচি থাকে। যিহোবা ইস্রায়েলকে যে-ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, সেই ব্যবস্থার মধ্যে শুচিতা ও উপাসনা ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। ব্যবস্থায় নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছিল যে, প্রায়শ্চিত্তদিনে মহাযাজককে একবার নয় বরং দু-বার স্নান করতে হতো। (লেবীয় পুস্তক ১৬:৪, ২৩, ২৪) যিহোবার কাছে বলি উৎসর্গ করার আগে নিয়োজিত যাজকদের তাদের হাত ও পা ধুতে হতো। (যাত্রাপুস্তক ৩০:১৭-২১; ২ বংশাবলি ৪:৬) ব্যবস্থায় শারীরিক অশুচিতা ও রীতিগত কলুষতার প্রায় ৭০টা কারণ সম্বন্ধে তুলে ধরা হয়েছিল। অশুচি অবস্থায় থাকাকালীন একজন ইস্রায়েলীয় উপাসনায় অংশ নিতে পারতেন না—কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা করার জন্য শাস্তি স্বরূপ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো। (লেবীয় পুস্তক ১৫:৩১) যে-কেউ শরীর ও কাপড়চোপড় ধৌতকরণসহ আবশ্যকীয় শুচিকরণ প্রক্রিয়া পালন করতে প্রত্যাখ্যান করত, তাকে ‘সমাজ হইতে উচ্ছিন্ন’ করা অর্থাৎ মৃত্যুদন্ড দেওয়া হতো।—গণনাপুস্তক ১৯:১৭-২০.

যদিও আমরা মোশির ব্যবস্থার অধীন নই, কিন্তু এটা আমাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। স্পষ্টতই, ব্যবস্থা এই বিষয়ে জোর দিয়েছিল যে, যারা ঈশ্বরের উপাসনা করে, তাদের কাছ থেকে শুচিতা চাওয়া হয়েছিল। যিহোবার পরিবর্তন হয়নি। (মালাখি ৩:৬) আমাদের উপাসনা “শুচি ও বিমল” না হলে সেটা তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। (যাকোব ১:২৭) তাই, আমাদের জানতে হবে যে, এই ক্ষেত্রে তিনি কী চান।

ঈশ্বরের চোখে শুচি হওয়ার সঙ্গে যা জড়িত

৮. কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা শুচি থাকি বলে যিহোবা চান?

বাইবেলে, শুচি হওয়ার ধারণাটা কেবল শারীরিক শুচিতাকেই নির্দেশ করে না। ঈশ্বরের চোখে শুচি হওয়া আমাদের জীবনের প্রতিটা দিককে প্রভাবিত করে। যিহোবা চান আমরা যেন চারটে মৌলিক ক্ষেত্রে—আধ্যাত্মিক, নৈতিক, মানসিক এবং শারীরিক দিক দিয়ে—শুচি থাকি। আসুন আমরা আলোচনা করি যে, প্রতিটা ক্ষেত্রের সঙ্গে কী জড়িত।

৯, ১০. আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শুচি থাকার অর্থ কী আর সত্য খ্রিস্টানরা কী এড়িয়ে চলে?

আধ্যাত্মিক শুচিতা। সহজভাবে বললে, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শুচি থাকার অর্থ হল, সত্য উপাসনাকে মিথ্যা উপাসনার সঙ্গে মিশ্রিত না করা। ইস্রায়েলীয়রা যখন যিরূশালেমে ফিরে আসার জন্য বাবিল ত্যাগ করেছিল, তখন তাদেরকে এই অনুপ্রাণিত পরামর্শে মনোযোগ দিতে হয়েছিল: “সেই স্থান হইতে বাহির হও, অশুচি কোন বস্তু স্পর্শ করিও না, . . . তোমরা বিশুদ্ধ হও।” (যিশাইয় ৫২:১১) ইস্রায়েলীয়রা মূলত যিহোবার উপাসনাকে পুনর্স্থাপন করার জন্য দেশে ফিরে যাচ্ছিল। সেই উপাসনাকে বিশুদ্ধ হতে হয়েছিল—ঈশ্বরকে অসম্মান করে এমন কোনো শিক্ষা, অভ্যাস এবং বাবিলীয় ধর্মের প্রথা দ্বারা কলুষিত নয়।

১০ আজকে, সত্য খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা মিথ্যা উপাসনার দ্বারা কলুষিত হয়ে না পড়ি। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১০:২১.) এই ক্ষেত্রে সতর্কতা অপরিহার্য কারণ আমাদের চারপাশেই মিথ্যা ধর্মের প্রভাব রয়েছে। অনেক দেশে বিভিন্ন প্রথা, কর্মকাণ্ড এবং আচার-অনুষ্ঠান মিথ্যা ধর্মীয় শিক্ষাগুলোর সঙ্গে যুক্ত যেমন এই ধারণা যে, আমাদের মধ্যে এমন কিছু আছে, যা মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকে। (উপদেশক ৯:৫, ৬, ১০) সত্য খ্রিস্টানরা মিথ্যা ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত রীতিনীতি এড়িয়ে চলে। * আমরা অন্যদের কাছ থেকে আসা চাপকে, বিশুদ্ধ উপাসনার বিষয়ে দেওয়া বাইবেলের মানগুলোর ক্ষেত্রে আপোশ করার সুযোগ দেব না।—প্রেরিত ৫:২৯.

১১. নৈতিক শুচিতার অন্তর্ভুক্ত কী আর এই ক্ষেত্রে আমাদের শুচি থাকা কেন অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

১১ নৈতিক শুচিতা। নৈতিক দিক দিয়ে শুচি থাকার অন্তর্ভুক্ত যেকোনো ধরনের যৌন অনৈতিকতা এড়িয়ে চলা। (পড়ুন, ইফিষীয় ৫:৫.) নৈতিক দিক দিয়ে আমাদের শুচি থাকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই বইয়ের পরবর্তী অধ্যায়ে দেখব যে, ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই ‘ব্যভিচার হইতে পলায়ন করিতে হইবে।’ অনুতাপহীন ব্যভিচারীরা “ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।” (১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০, ১৮) ঈশ্বরের চোখে এই ধরনের ব্যক্তিরা তাদের অন্তর্ভুক্ত, যারা “ঘৃণার্হ।” তারা যদি নৈতিক দিক দিয়ে শুচি থাকতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ‘তাহাদের অংশ হইবে দ্বিতীয় মৃত্যু।’—প্রকাশিত বাক্য ২১:৮.

১২, ১৩. চিন্তাভাবনা ও কাজের মধ্যে কোন সংযোগ রয়েছে আর কীভাবে আমরা মানসিক দিক দিয়ে শুচি থাকতে পারি?

১২ মানসিক শুচিতা। আমাদের চিন্তাভাবনা আমাদেরকে কাজ করতে পরিচালিত করে। আমরা যদি অন্যায় চিন্তাভাবনাকে আমাদের মন ও হৃদয়ে স্থান দিই, তাহলে আগে হোক বা পরে হোক, আমরা খুব সম্ভবত অশুচি কাজগুলো করে ফেলতে পারি। (মথি ৫:২৮; ১৫:১৮-২০) কিন্তু, আমরা যদি বিশুদ্ধ ও শুচি চিন্তাভাবনা দ্বারা আমাদের মনকে পূর্ণ করি, তাহলে আমরা এমন আচরণ বজায় রাখতে অনুপ্রাণিত হতে পারি, যা শুচি। (পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৮.) কীভাবে আমরা মানসিক দিক দিয়ে শুচি থাকতে পারি? একটা বিষয় হল, আমাদের এমন যেকোনো ধরনের আমোদপ্রমোদ এড়িয়ে চলতে হবে, যা আমাদের চিন্তাভাবনাকে কলুষিত করে দিতে পারে। * অধিকন্তু, নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা আমাদের মনকে শুচি চিন্তাভাবনা দিয়ে পূর্ণ করতে পারি।—গীতসংহিতা ১৯:৮, ৯.

১৩ ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করার জন্য আমাদের আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও মানসিক দিক দিয়ে শুচি থাকা অপরিহার্য। শুচিতার এই ক্ষেত্রগুলো সম্বন্ধে এই প্রকাশনার অন্যান্য অধ্যায়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আসুন আমরা এখন চতুর্থ ক্ষেত্রটা—শারীরিক শুচিতা—পরীক্ষা করি।

কীভাবে আমরা শারীরিক দিক দিয়ে শুচি থাকতে পারি?

১৪. কেন শারীরিক শুচিতা কেবল এক ব্যক্তিগত বিষয় নয়?

১৪ শারীরিক শুচিতার সঙ্গে আমাদের দেহ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জড়িত। এই ধরনের শুচিতা কি এক ব্যক্তিগত বিষয়, যেটাতে অন্য কারো হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়? যিহোবার উপাসকদের ক্ষেত্রে তা কোনোভাবেই সত্য নয়। ইতিমধ্যেই যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে, আমাদের শারীরিক শুচিতা শুধু এজন্য যিহোবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় যে, এটা আমাদের জন্য সর্বোত্তম কিন্তু এজন্যও যে, এটার দ্বারা আমরা তাঁর সুখ্যাতি নিয়ে আসি। শুরুতে ব্যবহৃত দৃষ্টান্তটা নিয়ে চিন্তা করুন। যে-সন্তান সবসময়ই নোংরা বা অপরিপাটী অবস্থায় থাকে, তাকে দেখে আপনি তার বাবা-মা সম্বন্ধে সন্দেহ করবেন, তাই নয় কি? আমরা চাইব না যে, আমাদের বেশভূষা অথবা জীবনধারা কোনোভাবে আমাদের স্বর্গীয় পিতার উপর নিন্দা নিয়ে আসুক অথবা আমরা যে-বার্তা প্রচার করি, সেটাকে ছোটো করুক। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “আমরা কোন বিষয়ে কোন ব্যাঘাত জন্মাই না, যেন সেই পরিচর্য্যা-পদ কলঙ্কিত না হয়; কিন্তু ঈশ্বরের পরিচারক বলিয়া সর্ব্ববিষয়ে আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইতেছি।” (২ করিন্থীয় ৬:৩, ৪) তাহলে, কীভাবে আমরা শারীরিক দিক দিয়ে শুচি থাকতে পারি?

১৫, ১৬. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত কী আর আমাদের কাপড়চোপড়ের অবস্থা কেমন হওয়া উচিত?

১৫ আমাদের ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বেশভূষা। যদিও সংস্কৃতি ও জীবনযাপনের অবস্থা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে, তবুও আমরা নিয়মিতভাবে স্নান করার এবং আমরা ও আমাদের সন্তানরা যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আছি, তা নিশ্চিত করার জন্য সাধারণত পর্যাপ্ত সাবান এবং জল পেতে পারি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত খাবার খাওয়ার আগে ও পরে, টয়লেট ব্যবহারের পরে এবং বাচ্চাকে ধোয়ার বা তার ন্যাপি পরিবর্তন করার পরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। সাবান ও জল দিয়ে হাত ধোয়া অসুস্থতা প্রতিরোধ করতে এবং প্রকৃতপক্ষে জীবন বাঁচাতে পারে। এটা ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়া ছড়ানো প্রতিরোধ করতে পারে আর এভাবে লোকেদেরকে ডায়ারিয়া সংক্রান্ত রোগব্যাধি এড়াতে সাহায্য করে। যে-দেশগুলোতে ঘরবাড়ি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সঙ্গে সাধারণত সংযুক্ত থাকে না, সেখানে বর্জ্য পদার্থ হয়তো মাটি চাপা দেওয়া যেতে পারে, যেমনটা প্রাচীন ইস্রায়েলে করা হতো।—দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:১২, ১৩.

১৬ আমাদের কাপড়চোপড়ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও উপস্থাপনযোগ্য রাখার জন্য নিয়মিতভাবে ধোয়া উচিত। একজন খ্রিস্টানের কাপড়চোপড় দামি অথবা আধুনিক ফ্যাশনের হতে হবে এমন নয় কিন্তু তা পরিপাটি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও মার্জিত হওয়া উচিত। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ২:৯, ১০.) আমরা যেখানেই থাকি না কেন, আমরা চাই যেন আমাদের বেশভূষা ‘আমাদের ত্রাণকর্ত্তা ঈশ্বরের শিক্ষা ভূষিত’ করে।—তীত ২:১০.

১৭. কেন আমাদের ঘরবাড়ি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও উপস্থাপনযোগ্য হওয়া উচিত?

১৭ আমাদের ঘরবাড়ি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা। আমাদের ঘরবাড়ি হয়তো আকর্ষণীয় বা বিলাসবহুল নয়, কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও উপস্থাপনযোগ্য হওয়া উচিত। একইভাবে, আমরা যদি সভা ও ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যাওয়ার জন্য মোটরগাড়ি ব্যবহার করি, তাহলে সেটা ভিতরে ও বাইরে উপযুক্ত মাত্রায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আমরা আমাদের যথাসাধ্য করতে পারি। আসুন আমরা যেন ভুলে না যাই যে, এক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বাড়ি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা আমরা যে-ঈশ্বরের উপাসনা করে থাকি, তাঁর সাক্ষ্য বহন করে থাকে। সর্বোপরি, আমরা লোকেদেরকে শিক্ষা দিই যে, যিহোবা হলেন এক শুচি ঈশ্বর আর তিনি ‘পৃথিবীনাশকদিগকে নাশ করিবেন’ এবং তাঁর রাজ্য শীঘ্র আমাদের পার্থিব গৃহকে এক পরমদেশে রূপান্তরিত করবে। (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮; লূক ২৩:৪৩) নিশ্চিতভাবেই আমরা চাই আমাদের ঘরবাড়ি ও জিনিসপত্রের বাহ্যিক অবস্থা যেন অন্যদেরকে এটা দেখতে সাহায্য করে যে, আমরা এখনই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তুলছি, যা আসন্ন নতুন জগতের জন্য উপযুক্ত হবে।

শারীরিক শুচিতার সঙ্গে আমাদের দেহ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জড়িত

১৮. কীভাবে আমরা আমাদের কিংডম হলের প্রতি সম্মান দেখাতে পারি?

১৮ আমাদের উপাসনার স্থান। যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা আমাদেরকে কিংডম হলের প্রতি সম্মান দেখাতে পরিচালিত করে, যেটা সেই এলাকায় সত্য উপাসনার এক কেন্দ্রবিন্দু। নতুন ব্যক্তিরা যখন কিংডম হলে আসে, তখন আমরা আমাদের সভার স্থান সম্বন্ধে তাদেরকে অনুকূল ধারণা দিতে চাই। হলটা যে আকর্ষণীয় রয়েছে, তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করা ও তা রক্ষাণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন। আমাদের কিংডম হলকে ভালো অবস্থায় রাখার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করার মাধ্যমে আমরা হলের প্রতি সম্মান দেখাই। আমাদের উপাসনার স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার এবং “সারিবার ও মেরামৎ করিবার” ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার জন্য স্বেচ্ছায় আমাদের সময় দেওয়া এক বিশেষ সুযোগ। (২ বংশাবলি ৩৪:১০) আমরা যখন সম্মেলন হল অথবা সম্মেলনের জন্য অন্য কোনো স্থানে মিলিত হই, তখন একই নীতি প্রযোজ্য।

কলুষিত অভ্যাস থেকে নিজেদেরকে শুচি রাখা

১৯. নিজেদেরকে শারীরিক দিক দিয়ে শুচি রাখার জন্য আমাদের কী এড়িয়ে চলতে হবে আর এই ক্ষেত্রে কীভাবে বাইবেল আমাদের সাহায্য করে থাকে?

১৯ নিজেদেরকে শারীরিক দিক দিয়ে শুচি রাখার জন্য আমাদের এই ধরনের কলুষিত অভ্যাস এড়িয়ে চলতে হবে যেমন, ধূমপান করা, মদ্য-জাতীয় পানীয়ের অপব্যবহার করা এবং চিকিৎসার বাইরে নেশাকর অথবা মনের উপর প্রভাববিস্তারকারী দ্রব্য ব্যবহার করা। বাইবেল নির্দিষ্টভাবে সেই সমস্ত অশুচি ও জঘন্য অভ্যাসের বিষয়ে উল্লেখ করে না, যেগুলো আজকে চারপাশে ছেয়ে রয়েছে কিন্তু এতে সেই নীতিগুলো রয়েছে, যেগুলো আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, এই ধরনের বিষয়ে যিহোবা কেমন বোধ করেন। বিভিন্ন বিষয়ে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি জানি বলে তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা আমাদেরকে সেই পথ অবলম্বন করতে পরিচালিত করে, যেটাতে তাঁর অনুমোদন রয়েছে। আসুন আমরা পাঁচটা শাস্ত্রীয় নীতি আলোচনা করি।

২০, ২১. আমরা কোন ধরনের অভ্যাসগুলো থেকে মুক্ত থাকি বলে যিহোবা চান আর তা মেনে নেওয়ার কোন জোরালো কারণ আমাদের রয়েছে?

২০ “প্রিয়তমেরা এই সকল প্রতিজ্ঞার অধিকারী হওয়াতে আইস, আমরা মাংসের ও আত্মার সমস্ত মালিন্য হইতে আপনাদিগকে শুচি করি, ঈশ্বরভয়ে পবিত্রতা সিদ্ধ করি।” (২ করিন্থীয় ৭:১) যিহোবা চান আমরা যেন এমন অভ্যাসগুলো থেকে মুক্ত থাকি, যেগুলো আমাদের মাংসিক দেহকে কলুষিত করে এবং আমাদের আত্মা বা আমাদের প্রভাববিস্তারকারী মনোভাবকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই, আমাদের আসক্ত হয়ে যাওয়ার মতো আচরণগুলো পরিহার করতে হবে, যেগুলো শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে পরিচিত।

২১ বাইবেল আমাদেরকে ‘সমস্ত মালিন্য হইতে আপনাদিগকে শুচি করিবার’ জোরালো কারণ জোগায়। লক্ষ করুন যে, ২ করিন্থীয় ৭:১ পদ এই কথাগুলো দিয়ে শুরু হয়: “এই সকল প্রতিজ্ঞার অধিকারী হওয়াতে।” কোন কোন প্রতিজ্ঞা? আগের পদগুলোতে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেন: “আমিই তোমাদিগকে গ্রহণ করিব, এবং তোমাদের পিতা হইব।” (২ করিন্থীয় ৬:১৭, ১৮) একটু কল্পনা করুন: যিহোবা আপনাকে তাঁর সুরক্ষামূলক যত্নের অধীনে রাখার এবং একজন পিতা যেমন কোনো পুত্র বা কন্যাকে ভালোবাসেন, ঠিক তেমনই আপনাকে ভালোবাসার প্রতিজ্ঞা করেন। কিন্তু, যিহোবা একমাত্র তখনই এই প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করবেন, যদি আপনি “মাংসের ও আত্মার . . . মালিন্য” এড়িয়ে চলেন। তাই, যিহোবার সঙ্গে এইরকম এক মূল্যবান ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থেকে আপনাকে বঞ্চিত করার জন্য যেকোনো জঘন্য অভ্যাসকে সুযোগ দেওয়া কতই না মূর্খতাপূর্ণ কাজ হবে!

২২-২৫. কোন শাস্ত্রীয় নীতিগুলো আমাদেরকে অশুচি অভ্যাসগুলো এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

২২ “তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।” (মথি ২২:৩৭) যিশু এই আজ্ঞাকে সবচেয়ে মহৎ আজ্ঞা বলে বেছে নিয়েছিলেন। (মথি ২২:৩৮) যিহোবা আমাদের কাছ থেকে এইরকম প্রেম পাওয়ার যোগ্য। আমাদের সমস্ত অন্তঃকরণ, প্রাণ ও মন দিয়ে তাঁকে ভালোবাসার জন্য আমাদেরকে সেই অভ্যাসগুলো এড়িয়ে চলতে হবে, যেগুলো আমাদের জীবনকে সংক্ষিপ্ত অথবা আমাদের ঈশ্বরদত্ত চিন্তাশক্তিকে শিথিল করে দিতে পারে।

২৩ [ঈশ্বরই] সকলকে জীবন ও শ্বাস ও সমস্তই দিতেছেন।” (প্রেরিত ১৭:২৪, ২৫) জীবন হল ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এক উপহার। আমরা সেই দাতাকে ভালোবাসি, তাই আমরা এই উপহারের জন্য সম্মান দেখাতে চাই। আমরা এমন যেকোনো অভ্যাস এড়িয়ে চলি, যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর কারণ আমরা স্বীকার করি যে, এই ধরনের অভ্যাস জীবনের দাতার প্রতি চরম অসম্মান প্রদর্শন করে।—গীতসংহিতা ৩৬:৯.

২৪ “তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” (মথি ২২:৩৯) অশুচি অভ্যাস বেশিরভাগ সময়ই কেবল সেই ব্যক্তিকেই নয়, কিন্তু তার চারপাশের ব্যক্তিদেরও প্রভাবিত করে। উদাহরণ স্বরূপ, ধূমপায়ী ব্যক্তি ধূমপান করার সময় সেখানে থাকলে, তা অধূমপায়ী ব্যক্তির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। যে-ব্যক্তি তার চারপাশের লোকেদের ক্ষতি করেন, তিনি এই ঐশিক আজ্ঞা লঙ্ঘন করেন যে, আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের ভালোবাসি। এ ছাড়া, তিনি এই দাবিকেও মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন করেন যে, তিনি ঈশ্বরকে ভালোবাসেন।—১ যোহন ৪:২০, ২১.

২৫ “তুমি তাহাদিগকে স্মরণ করাইয়া দেও, যেন তাহারা আধিপত্যের ও কর্ত্তৃত্বের বশীভূত হয়, বাধ্য হয়।” (তীত ৩:১) অনেক দেশে নির্দিষ্ট নেশাকর ওষুধ রাখা ও তা ব্যবহার করা আইনবিরুদ্ধ। সত্য খ্রিস্টান হিসেবে আমরা অবৈধ নেশাকর ওষুধ রাখি না বা তা ব্যবহার করি না।—রোমীয় ১৩:১.

২৬. (ক) ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করার জন্য আমাদের কী করতে হবে? (খ) কেন ঈশ্বরের চোখে শুচি থাকা সর্বোত্তম জীবন?

২৬ ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করার জন্য আমাদের শুচি থাকতে হবে আর তা শুধু একটা বা দুটো ক্ষেত্রে নয় বরং সমস্ত ক্ষেত্রে। কলুষিত অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করা এবং সেগুলো থেকে শুচি থাকা হয়তো সহজ হবে না, তবে তা অসম্ভব নয়। * সত্যিই, এটা সর্বোত্তম জীবন কারণ যিহোবা সবসময় আমাদের উপকারের জন্য শিক্ষা দেন। (পড়ুন, যিশাইয় ৪৮:১৭.) আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, শুচি থাকার মাধ্যমে আমরা সেই পরিতৃপ্তি লাভ করতে পারি, যা এটা জানার মাধ্যমে আসে যে, আমরা যে-ঈশ্বরকে ভালোবাসি তাঁর সুখ্যাতি নিয়ে আসছি আর এভাবে তাঁর প্রেমে অবস্থিতি করছি।

^ অনু. 2 মূলভাষার যে-শব্দকে “শুচি” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা কখনো কখনো শারীরিক শুচিতাকে নির্দেশ করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নৈতিক বা আধ্যাত্মিক শুচিতাকে নির্দেশ করে।

^ অনু. 26 আমি কি যা সঠিক, তা করার জন্য লড়াই করি?” এবং উপরে “ ঈশ্বরের সকলই সাধ্য” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

^ অনু. 67 নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।