সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠ ৪৩

মদ সম্বন্ধে বাইবেল কী জানায়?

মদ সম্বন্ধে বাইবেল কী জানায়?

মদ সম্বন্ধে সারা পৃথিবীতে লোকদের মধ্যে আলাদা-আলাদা ধারণা রয়েছে। কেউ কেউ মনে করে, কখনো কখনো বন্ধুদের সঙ্গে মদ খেলে, তাতে ভুলের কিছু নেই। আবার অনেকে মদ খাওয়া তো দূরের কথা, ছুঁয়েও দেখে না। অন্যদিকে, কেউ কেউ আবার এত বেশি মদ খায় যে, মাতলামি করতে শুরু করে। কিন্তু, মদ খাওয়ার বিষয়ে বাইবেল আমাদের কী জানায়?

১. মদ খাওয়া কি ভুল?

বাইবেল বলে না যে, মদ খাওয়া ভুল। আসলে, যিহোবা মানুষের খুশির জন্য যা-কিছু দিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে একটা হল, দ্রাক্ষারস বা মদ। তাই বাইবেল বলে, “মর্ত্ত্যের চিত্তানন্দ-জনক দ্রাক্ষারস।” (গীতসংহিতা ১০৪:১৪, ১৫) বাইবেলে যে-সমস্ত বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীদের বিষয়ে বলা রয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ দ্রাক্ষারস খেতেন।—১ তীমথিয় ৫:২৩.

২. মদ খাওয়ার বিষয়ে বাইবেল কোন পরামর্শ দেয়?

বাইবেল বলে, “মদ্যপায়ীদের সঙ্গী হইও না।” (হিতোপদেশ ২৩:২০) যিহোবার দৃষ্টিতে অতিরিক্ত মদ খাওয়া এবং মাতলামি করা (মাতাল হওয়া) ভুল। (গালাতীয় ৫:২১) তাই, আমাদের এত পরিমাণে মদ খাওয়া উচিত নয়, যার ফলে আমরা ঠিকমতো চিন্তা করতে পারব না, আমাদের কথা ও কাজের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারব না এবং আমাদের স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হবে। এই বিষয়টা আমাদের সেইসময়ও মনে রাখা উচিত, যখন আমরা একা একা মদ খাই। আমরা যদি নিজেদের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারি, তা হলে আমাদের জন্য মদ না খাওয়া ভালো হবে।

৩. মদ খাওয়ার বিষয়ে অন্যদের সিদ্ধান্তের প্রতি কীভাবে আমরা সম্মান দেখাতে পারি?

একজন ব্যক্তি মদ খাবেন, কি খাবেন না, সেটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কেউ যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখে মদ খায়, তা হলে আমাদের তার বিচার করা উচিত নয়। আর কেউ যদি মদ না খেতে চায়, তা হলে আমাদের তাকে জোর করা উচিত নয়। (রোমীয় ১৪:১০) আমরা মদ খাওয়ার ফলে যদি কেউ বিঘ্ন পায়, তা হলে ভালো হবে আমরা যেন তাদের চিন্তাভাবনার প্রতি সম্মান দেখিয়ে মদ না খাই। (পড়ুন, রোমীয় ১৪:২১.) যেমন বাইবেল আমাদের বলে, “প্রত্যেকে কেবল নিজের উপকারের জন্য চেষ্টা না করুক, কিন্তু অন্যের উপকারের জন্য চেষ্টা করুক।”—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১০:২৩, ২৪.

গভীরভাবে গবেষণা করুন

বাইবেলের কিছু নীতি নিয়ে এখন আমরা আলোচনা করব, যেগুলো আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে যে, আমরা মদ খাব, কি খাব না, আর খেলেও কতটা পরিমাণে খাব। আর সেইসঙ্গে আমরা এটাও জানব, যদি আমাদের মদ খাওয়ার নেশা থাকে, তা হলে কীভাবে আমরা তা ছাড়তে পারি।

৪. মদ খাব কি খাব না, সেই বিষয়ে কীভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি?

মদ খাওয়ার বিষয়ে যিশু কী চিন্তা করতেন? এই বিষয়টা আমরা তাঁর প্রথম অলৌকিক কাজ থেকে বুঝতে পারি। যোহন ২:১-১১ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন:

  • মদের বিষয়ে এবং যারা মদ খেত, তাদের বিষয়ে যিশু কী চিন্তা করতেন?

  • যিশু বলেননি যে, মদ খাওয়া ভুল। তাই, একজন খ্রিস্টানের সেই ব্যক্তির প্রতি কোন দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত, যিনি মদ খান?

একজন খ্রিস্টান চাইলে মদ খেতে পারেন, তবে এর অর্থ কি এই যে, তিনি যেকোনো পরিস্থিতিতে মদ খাবেন? হিতোপদেশ ২২:৩ পদ পড়ুন এবং চিন্তা করুন, এই পরিস্থিতিগুলোতে আপনি মদ খাবেন কি না:

  • আপনাকে গাড়ি কিংবা কোনো মেশিন চালাতে হবে।

  • আপনি একজন গর্ভবতী।

  • আপনাকে ডাক্তার মদ খেতে বারণ করেছেন।

  • আপনি একবার মদ খাওয়া শুরু করার পর খেতেই থাকেন।

  • আপনি যেখানে থাকেন, সেখানে মদ খাওয়া আইনত নিষিদ্ধ।

  • আপনার সঙ্গে এমন একজন ব্যক্তি রয়েছেন, যিনি অনেক কষ্টে মদ খাওয়ার নেশা ছেড়েছেন।

বিয়ে কিংবা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে আপনার কি মদ খাওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত? কোন বিষয়টা আপনাকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে? ভিডিওটা দেখুন

রোমীয় ১৩:১৩ এবং ১ করিন্থীয় ১০:৩১, ৩২ পদ পড়ুন এবং প্রতিটা শাস্ত্রপদ পড়ার পর নীচে দেওয়া প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন:

  • কীভাবে এই নীতি আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে?

একজন খ্রিস্টান মদ খাবেন, কি খাবেন না, সেটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু, তিনি যদি খান, তা হলে কিছু পরিস্থিতিতে তিনি মদ না খাওয়ার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন

৫. কতটা পরিমাণে মদ খাবেন, তা নির্ধারণ করুন

মনে রাখুন, যিহোবার দৃষ্টিতে মদ খাওয়া ভুল নয়। কিন্তু, অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খাওয়া ভুল। কেন? হোশেয় ৪:১১, ১৮ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন:

  • অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খেলে কোন বিপদ আসতে পারে?

অতিরিক্ত মাত্রায় মদ না খাওয়ার জন্য আমরা কী করতে পারি? আপনাকে সীমা নির্ধারণ করতে হবে অথবা জানতে হবে যে, আপনি কতটা খেতে পারেন। হিতোপদেশ ১১:২ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন:

  • কতটা মদ খাব, সেই বিষয়ে একটা সীমা নির্ধারণ করা কেন ভালো?

৬. মদ খাওয়ার নেশা কীভাবে ছাড়তে পারেন?

একজন ব্যক্তি অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খেতেন। কীভাবে তিনি তার এই নেশা ছাড়তে পেরেছিলেন, তা লক্ষ করুন। ভিডিওটা দেখুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন।

  • মদ খাওয়ার পর দিমিত্রি কেমন আচরণ করতেন?

  • মদ খাওয়া ছেড়ে দেওয়া তার জন্য কি সহজ ছিল?

  • অবশেষে কীভাবে তিনি তার এই নেশা ছাড়তে পেরেছিলেন?

১ করিন্থীয় ৬:১০, ১১ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন:

  • যিহোবার দৃষ্টিতে মাতাল হওয়া কতটা গুরুতর বিষয়?

  • কোন বিষয়টা থেকে বোঝা যায় যে, যাদের মদ খাওয়ার নেশা রয়েছে, তারা তা ছাড়তে পারে?

মথি ৫:৩০ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন:

  • এখানে হাত কেটে ফেলার অর্থ হল, যিহোবার ইচ্ছা অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য আমাদের হয়তো কিছু ত্যাগস্বীকার করতে হবে। তাই, আপনি যদি মদ খাওয়ার নেশা ছাড়তে না পারেন, তা হলে কী করতে পারেন? a

১ করিন্থীয় ১৫:৩৩ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন:

  • আপনি যদি এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করেন, যারা অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খায়, তা হলে আপনার উপর কোন প্রভাব পড়তে পারে?

কেউ কেউ বলে থাকে: “মদ খাওয়া ভুল।”

  • উত্তরে আপনি কী বলবেন?

সারাংশ

যিহোবা মানুষের খুশির জন্য যা-কিছু দিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে একটা হল, মদ। কিন্তু, তাঁর দৃষ্টিতে অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খাওয়া এবং মাতলামি করা (মাতাল হওয়া) ভুল।

পুনরালোচনা

  • মদ খাওয়ার বিষয়ে বাইবেল কী জানায়?

  • অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খাওয়ার কোন বিপদ রয়েছে?

  • মদ খাওয়ার বিষয়ে অন্যদের সিদ্ধান্তের প্রতি কীভাবে আমরা সম্মান দেখাতে পারি?

লক্ষ্য

আরও জানুন

কীভাবে তরুণ-তরুণীরা মদ খাওয়ার বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে?

মদ খাওয়ার আগে পরিণতি নিয়ে চিন্তা করো (২:৩১)

মদ খাওয়ার নেশা ছাড়ার জন্য আপনি কোন পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন? আসুন তা জানি।

“আমি মদ খাওয়ার বিষয়ে মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছি না তো?” (প্রহরীদুর্গ, জানুয়ারি ১ ২০১০, ইংরেজি)

একজন খ্রিস্টানের কি টোস্টিংয়ে অর্থাৎ মদের গ্লাস ওপরে তুলে শুভকামনা করাতে অংশ নেওয়া উচিত?

“পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল” (প্রহরীদুর্গ, ফেব্রুয়ারি ১৫ ২০০৭)

“আমি বোতলের পর বোতল মদ খেতাম,” এটা এমন একজন ব্যক্তির কাহিনী, যিনি অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খেতেন। কীভাবে তিনি মদ খাওয়ার নেশা ছাড়তে পেরেছিলেন? আসুন তা জানি।

“বাইবেল জীবনকে পরিবর্তন করে” (প্রহরীদুর্গ, মে ১ ২০১২, ইংরেজি)

a মদ খাওয়ার নেশা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের হয়তো এই নেশা ছাড়ার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। বেশিরভাগ ডাক্তার বলে থাকে, যারা একবার মদ খাওয়ার নেশা কাটিয়ে উঠেছে, তাদের আর কখনো মদ খাওয়া উচিত নয়।