সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের রাজ্য যে কাজগুলো করবে

ঈশ্বরের রাজ্য যে কাজগুলো করবে

ঈশ্বরের রাজ্য যে কাজগুলো করবে

“তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।”মথি ৬:১০.

১. ঈশ্বরের রাজ্য আসার মানে কী হবে?

 যীশু যখন তাঁর শিষ্যদেরকে ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন তখন তিনি জানতেন যে ঈশ্বরের রাজ্য আসার মানে হবে, ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হয়ে মানুষ যে হাজার হাজার বছর ধরে শাসন করে এসেছে, সেই শাসনব্যবস্থার শেষ। মানুষের শাসনের সময়ে পৃথিবীতে ঈশ্বরের ইচ্ছা পুরোপুরিভাবে পূর্ণ হয়নি। (গীতসংহিতা ১৪৭:১৯, ২০) কিন্তু, স্বর্গে রাজ্য স্থাপিত হওয়ার পর সারা পৃথিবীতে ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ হবে। মানুষের হাত থেকে শাসনভার কেড়ে নিয়ে ঈশ্বরের রাজ্যের শাসন শুরু হওয়ার সেই ভয়ংকর সময় একেবারে কাছে।

২. মানুষের হাত থেকে শাসনভার কেড়ে নেওয়ার সময়ে কী হবে?

মানুষের হাত থেকে শাসনভার কেড়ে নেওয়ার সময়কে যীশু “মহাক্লেশ” বলেছিলেন, যা “জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না।” (মথি ২৪:২১) মহাক্লেশ কতদিন থাকবে সেই বিষয়ে বাইবেলে কিছু বলা নেই কিন্তু এটুকু বলা আছে যে সেই সময়ে এমন কিছু ভয়ংকর ঘটনা ঘটবে, যা পৃথিবীতে আগে কখনও হয়নি। মহাক্লেশের শুরুতে, সমস্ত মিথ্যা ধর্মকে ধ্বংস করা হবে, যা দেখে পৃথিবীর বেশির ভাগ লোকই প্রচণ্ড ভয় পাবে। কিন্তু, সেই সময় যিহোবার সাক্ষিরা ভয় পাবেন না কারণ এরকমটা যে হবে, তা তারা অনেক আগে থেকেই জানতেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৭:১, ১৫-১৭; ১৮:১-২৪) হর্‌মাগিদোনের মাধ্যমে এই মহাক্লেশ শেষ হবে আর তখন ঈশ্বরের রাজ্য শয়তানের পুরো শাসনব্যবস্থাকে ভেঙে গুড়িয়ে দেবে।—দানিয়েল ২:৪৪; প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬.

৩. অবাধ্য লোকেদের দশা সম্বন্ধে যিরমিয় কী বলেন?

সেই সময় “যাহারা ঈশ্বরকে জানে না” এবং খ্রীষ্টের হাতে তাঁর যে রাজ্য রয়েছে সেই রাজ্যের “সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না” তাদের দশা কী হবে? (২ থিষলনীকীয় ১:৬-৯) এই বিষয়ে বাইবেলের একটা ভবিষ্যদ্বাণী জানায়: “দেখ, এক জাতির পরে অন্য জাতির প্রতি অমঙ্গল উপস্থিত হইবে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত হইতে প্রচণ্ড ঘূর্ণ্যবায়ু উঠিবে। তৎকালে সদাপ্রভুর নিহত লোক সকল পৃথিবীর এক প্রান্ত হইতে পৃথিবীর অন্য প্রান্ত পর্য্যন্ত দেখা যাইবে; কেহ তাহাদের নিমিত্ত বিলাপ করিবে না, এবং তাহাদিগকে সংগ্রহ করা কি কবর দেওয়া যাইবে না, তাহারা ভূমির উপরে সারের ন্যায় পতিত থাকিবে।”—যিরমিয় ২৫:৩২, ৩৩.

দুষ্টতার শেষ

৪. এই দুষ্ট জগৎকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য কেন যিহোবাকে দোষ দেওয়া যাবে না?

হাজার হাজার বছর ধরে যিহোবা ঈশ্বর দুষ্টতা সহ্য করে এসেছেন আর মানুষের শাসন যে খারাপ ছাড়া ভাল কিছুই আনতে পারবে না, তা বুঝতে সৎ ব্যক্তিদের জন্য এই সময়ই যথেষ্ট। উদাহরণ হিসেবে বিংশ শতাব্দীর কথা বলা যায়। একটা উৎস থেকে পাওয়া তথ্য জানায় যে শুধু বিংশ শতাব্দীতেই যুদ্ধ, বিপ্লব ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ১৫ কোটিরও বেশি লোক মারা গেছে। মানুষ যে কতটা হিংস্র হতে পারে, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দেখা গিয়েছিল। সেই সময় পাঁচ কোটিরও বেশি লোককে হত্যা করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে অনেককেই নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী আমাদের সময়ে “দুষ্ট লোকেরা ও ভণ্ডেরা দিন দিন আরও খারাপ” হয়েছে। (২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৩, প্রেমের বাণী) আজকে অনৈতিকতা, অপরাধ, হিংস্রতা, দুর্নীতি ও ঈশ্বরের নিয়মনীতি লংঘন করার হার খুব দ্রুত বেড়ে চলেছে। তাই, এই দুষ্ট জগৎকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যিহোবাকে দোষ দেওয়া যাবে না।

৫, ৬. কনানের দুষ্টতা কতটা চরমে পৌঁছেছিল তা বলুন।

আজকের অবস্থা প্রায় ৩,৫০০ বছর আগের কনান দেশের মতো। কনানের অবস্থা সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “তাহারা আপন আপন দেবগণের উদ্দেশে সদাপ্রভুর ঘৃণিত যাবতীয় কুকার্য্য করিয়া আসিয়াছে; এমন কি, তাহারা সেই দেবগণের উদ্দেশে আপন আপন পুত্ত্রকন্যাগণকেও অগ্নিতে পোড়ায়।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১২:৩১) ইস্রায়েল জাতিকে যিহোবা বলেছিলেন: “সেই জাতিদের দুষ্টতা প্রযুক্ত, . . . তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সম্মুখে তাহাদিগকে অধিকারচ্যুত করিবেন।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৯:৫) বাইবেলের ঐতিহাসিক হেনরি এইচ. হ্যালি বলেছিলেন: “বাল, অষ্টারোৎ এবং কনানের অন্যান্য দেবতাদের উপাসনায় উচ্ছৃঙ্খল উৎসব করা হতো; তাদের মন্দিরগুলো অনৈতিকতার কেন্দ্র ছিল।”

তাদের দুষ্টতা কতটা চরমে পৌঁছেছিল সেই বিষয়টা হ্যালি দেখিয়েছিলেন। কনানের অনেক এলাকা খুঁড়ে প্রত্নতত্ত্ববিদরা “বড় বড় বয়ম পেয়েছিলেন, যেগুলোতে বালের উদ্দেশে বলি দেওয়া শিশুদের হাড়গোড় রয়েছে।” তিনি বলেছিলেন: “পুরো এলাকাটাই নবজাত শিশুদের কবরস্থান ছিল। . . . কনানীয়রা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে তাদের দেবতাদের সামনে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতো আর তারপর তাদের প্রথম সন্তানদেরকে এই দেবতাদের উদ্দেশে বলি দিত। এগুলো দেখে মনে হয়, কনানও সদোম ও ঘমোরার মতোই হয়ে গিয়েছিল। . . . এইরকম এক জঘন্য ও বর্বর জাতির কি বেশি দিন টিকে থাকার কোন অধিকার ছিল? . . . যে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা কনানের শহরগুলোর ধ্বংসস্তূপ খুঁড়েছিলেন, তারা এগুলো দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন যে কেন ঈশ্বর আরও আগেই ওই লোকেদেরকে ধ্বংস করে দেননি।”

পৃথিবীর অধিকারী হওয়া

৭, ৮. কীভাবে ঈশ্বর এই পৃথিবীকে পরিষ্কার করবেন?

ঈশ্বর যেমন কনানকে ধ্বংস করেছিলেন, তেমনই খুব শীঘ্রিই দুষ্ট লোকেদের ধ্বংস করে দিয়ে এই পৃথিবীকে পরিষ্কার করবেন এবং যারা তাঁর ইচ্ছা মেনে চলে তাদেরকে এটা দেবেন: “সরলগণ দেশে [পৃথিবীতে] বাস করিবে, সিদ্ধেরা তথায় অবশিষ্ট থাকিবে। কিন্তু দুষ্টগণ দেশ [পৃথিবী] হইতে উচ্ছিন্ন হইবে।” (হিতোপদেশ ২:২১, ২২) গীতরচক বলেন: “ক্ষণকাল, পরে দুষ্ট লোক আর নাই, . . . কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১) শুধু তাই নয়, শয়তানকেও বন্দি করা হবে যাতে “ঐ সহস্র বৎসর সম্পূর্ণ না হইলে সে জাতিবৃন্দকে আর ভ্রান্ত করিতে না পারে।” (প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩) হ্যাঁ, “জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।”—১ যোহন ২:১৭.

যারা পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে চান, তাদের অপূর্ব আশা সম্বন্ধে অল্প কথায় যীশু বলেছিলেন: “ধন্য যাহারা মৃদুশীল, কারণ তাহারা দেশের [পৃথিবীর] অধিকারী হইবে।” (মথি ৫:৫) তিনি সম্ভবত গীতসংহিতা ৩৭:২৯ পদের কথাগুলো বলেছিলেন, যেখানে বলা আছে: “ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।” যীশু জানতেন যে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল, ধার্মিক লোকেরা এক পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকবে। যিহোবা বলেন: “আমিই আপনার মহাপরাক্রম . . . দ্বারা পৃথিবী, পৃথিবী-নিবাসী মনুষ্য ও পশু নির্ম্মাণ করিয়াছি, এবং আমি যাহাকে তাহা দেওয়া বিহিত বুঝি, তাহাকে তাহা দিয়া থাকি।”—যিরমিয় ২৭:৫.

এক অপূর্ব নতুন জগৎ

৯. ঈশ্বরের রাজ্য কীরকম জগৎ নিয়ে আসবে?

হর্‌মাগিদোনের পর, ঈশ্বরের রাজ্য এক অপূর্ব ‘নূতন পৃথিবী’ নিয়ে আসবে যেখানে “ধার্ম্মিকতা বসতি করে।” (২ পিতর ৩:১৩) হর্‌মাগিদোন থেকে যারা রক্ষা পাবেন তারা যখন দেখবেন যে এই দুষ্ট জগৎ আর নেই তখন তারা কত স্বস্তিই না পাবেন! সেই সময় ঈশ্বরের রাজ্য স্বর্গ থেকে নতুন জগৎকে শাসন করবে আর লোকেরা প্রচুর আশীর্বাদ ও অনন্ত জীবন পাওয়ার আশা নিয়ে নতুন জগতে ঢুকতে পেরে কত খুশিই না হবেন!—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৭.

১০. নতুন জগতে কোন্‌ কোন্‌ খারাপ জিনিসগুলো থাকবে না?

১০ নতুন জগতে যুদ্ধ, অপরাধ, খাবারের অভাব থাকবে না আর এমনকি হিংস্র জীবজন্তুদের কাছে যেতেও মানুষ ভয় পাবে না। “আমি [আমার লোকেদের] পক্ষে শান্তির নিয়ম স্থির করিব, ও হিংস্র পশুদিগকে দেশ হইতে শেষ করিব; . . . আর ক্ষেত্রের বৃক্ষ ফল উৎপন্ন করিবে, ও ভূমি নিজ শস্য দিবে; এবং তাহারা নির্ভয়ে স্বদেশে থাকিবে।” “তাহারা আপন আপন খড়্গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল গড়িবে, ও আপন আপন বড়শা ভাঙ্গিয়া কাস্ত্যা গড়িবে; এক জাতি অন্য জাতির বিপরীতে আর খড়্গ তুলিবে না, তাহারা আর যুদ্ধ শিখিবে না। কিন্তু প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।”—যিহিষ্কেল ৩৪:২৫-২৮; মীখা ৪:৩, ৪.

১১. কেন আমরা বিশ্বাস করতে পারি যে রোগ আর থাকবে না?

১১ রোগ, দুঃখ আর এমনকি মৃত্যুকেও দূর করা হবে। এই বিষয়ে বাইবেল বলে: “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত; তন্নিবাসী প্রজাদের অপরাধের ক্ষমা হইবে।” (যিশাইয় ৩৩:২৪) “[ঈশ্বর] তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল। . . . দেখ, আমি সকলই নূতন করিতেছি।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৪, ৫) যীশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন তখন তিনি দেখিয়েছিলেন যে ঈশ্বরের দেওয়া ক্ষমতায় ওই কাজগুলো তিনি করতে পারেন। পবিত্র আত্মার শক্তিতে তিনি খোঁড়া লোকেদের ভাল করে দিয়েছিলেন এবং অসুস্থদের সুস্থ করেছিলেন।—মথি ১৫:৩০, ৩১.

১২. মৃতদের জন্য কোন্‌ আশা রয়েছে?

১২ যীশু শুধু অসুস্থ লোকেদেরই সুস্থ করেননি। তিনি মৃত লোকেদেরও জীবিত করেছিলেন। এটা নম্র লোকেদের ওপর কীরকম ছাপ ফেলেছিল? যীশু যখন ১২ বছরের একটা মৃত মেয়েকে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন তখন তার বাবামা “খুব আশ্চর্য হয়ে” গিয়েছিল। (মার্ক ৫:৪২, প্রে.বা.) ঈশ্বরের রাজ্য যখন পৃথিবীর ওপর শাসন করবে তখন যীশু কী করবেন এটা তা-ই দেখিয়েছিল। সেই সময় পৃথিবীতে “ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” (প্রেরিত ২৪:১৫) সেই সময়ের কথা একবার ভেবে দেখুন যখন মৃত লোকেরা দলে দলে আবার বেঁচে উঠবে ও তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলিত হবে আর তখন লোকেরা কত আশ্চর্যই না হবে! কোন সন্দেহ নেই যে রাজ্যের তত্ত্বাবধানে এই লোকেদেরকে শিক্ষা দেওয়া হবে আর এর ফলে “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।”—যিশাইয় ১১:৯.

যিহোবার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে

১৩. ঈশ্বরের যে শাসন করার অধিকার আছে তা কীভাবে দেখা যাবে?

১৩ ঈশ্বরের রাজ্যের এক হাজার বছরের শাসন শেষ হওয়ার আগে সমস্ত মানুষ সিদ্ধ হবে অর্থাৎ তাদের শরীর ও মন সিদ্ধ হয়ে যাবে। আর সারা পৃথিবী এদন বাগানের মতো পরমদেশ হয়ে উঠবে। সুখ, শান্তি, নিরাপত্তা ও মানুষের মধ্যে ভালবাসা থাকবে। ঈশ্বরের রাজ্য শাসন শুরু করার আগে মানুষের মধ্যে এইরকম কখনও দেখা যায়নি। হাজার হাজার বছর ধরে চলা মানুষের শাসন এবং ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের এক হাজার বছরের শাসনের মধ্যে কত আকাশপাতাল পার্থক্যই না তখন দেখা যাবে! ওই রাজ্যের শাসনের মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হবে যে ঈশ্বরের শাসনই হল শ্রেষ্ঠ। আর তখন ঈশ্বরের শাসন করার অধিকার অর্থাৎ তাঁর সার্বভৌমত্ব পুরোপুরিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

১৪. হাজার বছরের শেষে যারা বিদ্রোহ করবে তাদেরকে কী করা হবে?

১৪ এক হাজার বছর শেষে, যিহোবা সিদ্ধ মানুষদেরকে তাদের স্বাধীন ইচ্ছা কাজে লাগানোর সুযোগ দেবেন আর তখন মানুষেরা কাকে সেবা করতে চায়, তা বেছে নিতে পারবে। বাইবেলে বলা আছে যে সেই সময় “শয়তানকে তাহার কারা হইতে মুক্ত করা যাইবে।” ছাড়া পেয়ে সে আবারও মানুষকে ভুল পথে নেওয়ার চেষ্টা করবে আর তখন কিছু মানুষ শয়তানের পথে পা দিয়ে ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হতে চাইবে। “দ্বিতীয় বার” যাতে “সঙ্কট উপস্থিত” না হয় সেইজন্য শয়তান, তার মন্দ দূতেদের ও যে লোকেরা যিহোবার সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে তাদেরকে যিহোবা চিরদিনের জন্য ধ্বংস করে দেবেন। তখন কেউই বলতে পারবে না যে ঈশ্বর কোন সুযোগ না দিয়েই তাদেরকে চিরদিনের জন্য ধ্বংস করে দিয়েছেন বা অসিদ্ধতার জন্য তারা ভুল করেছে। তারা সে কথা বলতে পারবে না কারণ তারা সিদ্ধ আদম-হবার মতো ইচ্ছা করে যিহোবার ধার্মিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে।—প্রকাশিত বাক্য ২০:৭-১০; নহূম ১:৯.

১৫. যিহোবার সঙ্গে বিশ্বস্ত লোকেদের কীরকম সম্পর্ক হবে?

১৫ তবে মনে হয় যে বেশির ভাগ লোকই যিহোবার সার্বভৌমত্বকে মেনে নেবে। সমস্ত বিদ্রোহীরা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ধার্মিক লোকেরা অর্থাৎ যারা বিশ্বস্ততার চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাশ করবে তারা যিহোবার সামনে দাঁড়াবে। এই বিশ্বস্ত লোকেদেরকে তখন যিহোবা তাঁর সন্তান বলে স্বীকার করবেন। আর এভাবেই বিদ্রোহ করার আগে ঈশ্বরের সঙ্গে আদম-হবার যেরকম সম্পর্ক ছিল, তাদেরও সেরকম সম্পর্ক হবে। আর তখন রোমীয় ৮:২১ পদের কথাগুলো পূর্ণ হবে। এখানে বলা আছে: “সৃষ্টি নিজেও [মানবজাতি] ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইয়া ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা পাইবে।” যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করেন: “[ঈশ্বর] মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট করিয়াছেন [করিবেন], ও প্রভু সদাপ্রভু সকলের মুখ হইতে চক্ষুর জল মুছিয়া দিবেন।”—যিশাইয় ২৫:৮.

অনন্ত জীবনের আশা

১৬. অনন্ত জীবনের পুরস্কারকে সামনে রাখা কেন সঠিক?

১৬ বিশ্বস্ত লোকেদের জন্য কী এক অপূর্ব ভবিষ্যতই না রয়েছে! ঈশ্বর অনন্তকাল ধরে তাদের আধ্যাত্মিক ও শারীরিক চাহিদা অকৃপণভাবে পূরণ করে চলবেন। তাই, গীতরচক ঠিক কথাই বলেছিলেন: “তুমিই আপন হস্ত মুক্ত করিয়া থাক, সমুদয় প্রাণীর [সঠিক] বাঞ্ছা পূর্ণ করিয়া থাক।” (গীতসংহিতা ১৪৫:১৬) যারা এই পৃথিবীতে থাকবে তাদেরকে যিহোবা পরমদেশে অনন্ত জীবনের আশাকে, তাঁর ওপর তাদের বিশ্বাসেরই একটা অংশ বলে মনে করতে বলেন। যদিও যিহোবার সার্বভৌমত্ব নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছিল সেটা মীমাংসা হওয়াই বেশি জরুরি, তবুও তিনি লোকেদেরকে পুরস্কারের আশা সামনে রেখে তাঁকে সেবা করতে বলেন। পুরো বাইবেলে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ততা ও অনন্ত জীবনের আশা, ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাসের এক জরুরি অংশ হিসেবে একই সূতোয় গাঁথা রয়েছে। “যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।”—ইব্রীয় ১১:৬.

১৭. কীভাবে যীশু দেখিয়েছিলেন যে আশা সামনে রেখে বিশ্বাসে অটল থাকা ভুল নয়?

১৭ যীশু বলেছিলেন: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাঁহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।” (যোহন ১৭:৩) যীশু এখানে বলেছেন যে ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলো জানার মাধ্যমেই অনন্ত জীবন পাওয়া যাবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন অপরাধী যখন যীশুকে আপন রাজ্যে আসার পর তাকে স্মরণ করতে বলেছিলেন তখন যীশু বলেছিলেন: “তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে।” (লূক ২৩:৪৩) যদি সামনে কোন পুরস্কারের আশা না-ই থাকত, তাহলে যীশু ওই ব্যক্তিকে বিশ্বাস করতে বলতেন না। যীশু জানতেন যে যিহোবা চান তাঁর দাসেরা পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্ত জীবনের আশা রাখুক, যাতে এই আশা তাদেরকে এই জগৎ থেকে আসা বিভিন্ন পরীক্ষা সহ্য করে বিশ্বাসে অটল থাকতে সাহায্য করে। তাই, অনন্ত জীবনের পুরস্কারকে সামনে রেখে একজন খ্রীষ্টান বিশ্বাসে অটল থাকতে পারেন।

রাজ্যের ভবিষ্যৎ

১৮, ১৯. হাজার বছরের রাজত্বের শেষে রাজা ও রাজ্যের কী হবে?

১৮ যেহেতু রাজ্য যিহোবার শাসনের অধীনে থাকবে, যেটার মাধ্যমে পৃথিবী ও মানুষকে যিহোবা সিদ্ধ করবেন এবং তাঁর সঙ্গে সম্মিলিত করবেন, তাই প্রশ্ন আসে যে হাজার বছরের রাজত্বের পর ওই রাজ্যের রাজা, যীশু খ্রীষ্ট ও তাঁর সঙ্গী ১,৪৪,০০০ জন রাজা ও যাজকরা কী কাজ করবেন? “তৎপরে পরিণাম হইবে; তখন তিনি সমস্ত আধিপত্য এবং সমস্ত কর্ত্তৃত্ব ও পরাক্রম লোপ করিলে পর পিতা ঈশ্বরের হস্তে রাজ্য সমর্পণ করিবেন। কেননা যাবৎ তিনি ‘সমস্ত শত্রুকে তাঁহার পদতলে না রাখিবেন,’ তাঁহাকে রাজত্ব করিতেই হইবে।”—১ করিন্থীয় ১৫:২৪, ২৫.

১৯ খ্রীষ্ট যদি ঈশ্বরের হাতে রাজ্য বুঝিয়েই দেন, তাহলে রাজ্য চিরস্থায়ী হবে বলে বাইবেলে যে কথা লেখা আছে তার মানে কী? এর মানে হল রাজ্য যে কাজগুলো করবে সেগুলো চিরস্থায়ী হবে। ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য খ্রীষ্ট যা কিছু করেছেন, তার জন্য তিনি চিরকালের জন্য সম্মান পাবেন। কিন্তু, সেই সময় যেহেতু পাপ ও মৃত্যু পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে ও মানুষ সেগুলো থেকে পুরোপুরি মুক্ত হবে, তাই মুক্তিদাতা হিসেবে যীশুর তখন আর কোন কাজ থাকবে না। এছাড়াও রাজ্যের হাজার বছরের শাসন যখন পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে তখন যিহোবা ও বাধ্য মানুষদের মধ্যে আর কোন রাজ্যের দরকার হবে না। সেই সময় “ঈশ্বরই সর্ব্বেসর্ব্বা” হবেন।—১ করিন্থীয় ১৫:২৮.

২০. খ্রীষ্ট এবং ১,৪৪,০০০ জনের ভবিষ্যৎ আমরা কী করে জানতে পারি?

২০ হাজার বছরের রাজত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর, খ্রীষ্ট ও তাঁর সঙ্গী শাসকরা কী কাজ করবেন? বাইবেল এই বিষয়ে কিছু বলে না। কিন্তু, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে যিহোবা তাদেরকে আরও অনেক কাজ দেবেন। আসুন আজকে আমরা সবাই যিহোবার সার্বভৌমত্বকে মেনে নিই ও অনন্ত জীবন পাওয়ার মতো যোগ্য হয়ে উঠি। তাহলেই ভবিষ্যতে যিহোবা তাঁর রাজ্যের রাজা এবং তাঁর সঙ্গী রাজা ও যাজকদের জন্য কী কাজ রেখেছেন আর সেই সঙ্গে এই বিস্ময়কর বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে নিয়েই বা তিনি কী করবেন, তা দেখার সুযোগ পাব।

পুনরালোচনার বিষয়বস্তু

• শাসনব্যবস্থার কোন্‌ পরিবর্তন একেবারে কাছে?

• ঈশ্বর কীভাবে দুষ্ট ও ধার্মিকদের বিচার করবেন?

• নতুন জগৎ কীরকম হবে?

• কীভাবে যিহোবার সার্বভৌমত্ব পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

“ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে”

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

বিশ্বস্ত লোকেরা যিহোবার সঙ্গে এক সঠিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে