সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

হাসমোনিয়রা ও তাদের উত্তরাধিকার

হাসমোনিয়রা ও তাদের উত্তরাধিকার

হাসমোনিয়রা ও তাদের উত্তরাধিকার

 যীশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন যিহুদিধর্ম বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গিয়েছিল আর প্রত্যেকটা দলই লোকেদের ওপর প্রভাব ফেলার চেষ্টা করত। সুসমাচারের বিবরণগুলোতে ও সেইসঙ্গে প্রথম শতাব্দীর যিহুদি ইতিহাসবিদ যোসেফাসের লেখায় এইরকম অবস্থার কথা জানা যায়।

এই অবস্থায় প্রভাবশালী দল হিসেবে ফরীশী ও সদ্দূকীদের আবির্ভাব ঘটে। তারা লোকেদের ওপর এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছিলেন যে, তাদের প্রভাবে লোকেরা এমনকি যীশুকে পর্যন্ত মশীহ বলে অস্বীকার করেছিল। (মথি ১৫:১, ২; ১৬:১; যোহন ১১:৪৭, ৪৮; ১২:৪২, ৪৩) কিন্তু, ইব্রীয় শাস্ত্রের কোথাও এই দুই প্রভাবশালী দলের কথা লেখা নেই।

সাধারণ কাল পূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর অবস্থার কথা বলতে গিয়ে যোসেফাস প্রথমে সদ্দূকী ও ফরীশীদের কথা বলেন। এই সময়ে অনেক যিহুদিরা হেলেনিজম অর্থাৎ গ্রিক সংস্কৃতি ও দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করে। সেলুসিড শাসকরা যখন যিরূশালেম মন্দিরকে জিউস দেবতার উদ্দেশে উৎসর্গ করে অপবিত্র করেছিল, তখন গ্রিক ও যিহুদিধর্মের মধ্যেকার এতদিনের চাপা দ্বন্দ্ব ফেটে পড়ে। হাসমোনিয় পরিবার থেকে আসা জুডা ম্যাকাবি নামে একজন শক্তিমান যিহুদি নেতা, এক বিদ্রোহী সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়ে গ্রিকদের হাত থেকে মন্দির মুক্ত করেন। *

ম্যাকাবিয় বিদ্রোহ ও জয়ের পরের কিছু বছর, এক বিশেষ প্রবণতার জন্য বিশেষভাবে লক্ষণীয় ছিল। সেই সময়ে, পাল্লা দিয়ে নানা আদর্শের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সম্প্রদায় গড়ে ওঠার প্রবণতা দেখা গিয়েছিল আর প্রত্যেকটা সম্প্রদায় বড় যিহুদি সমাজের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করত। কিন্তু, এইরকম প্রবণতার কারণ কী ছিল? যিহুদিধর্মে কেন এতগুলো ভাগ হয়ে গিয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে চাইলে, আসুন আমরা হাসমোনিয়দের ইতিহাস একটু পরীক্ষা করে দেখি।

স্বাধীনতা ও অনৈক্যের বৃদ্ধি

যিহোবার মন্দিরে আবার উপাসনা চালু করার ধর্মীয় লক্ষ্যে পৌঁছানোর পর জুডা ম্যাকাবি রাজনীতিতে মন দেন। ফলে, অনেক যিহুদিরা তাকে অনুসরণ করা বাদ দিয়ে দেন। তাসত্ত্বেও, তিনি সেলুসিড শাসকদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যান, রোমের সঙ্গে একটা চুক্তি করেন এবং এক স্বাধীন যিহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। যুদ্ধে জুডা মারা যাওয়ার পর তার ভাই জোনাথন ও দাদা সায়মন লড়াই চালিয়ে যান। প্রথম প্রথম সেলুসিড শাসকরা খুব জোরালোভাবে ম্যাকাবিদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পরে, শাসকরা রাজনৈতিক সন্ধি করতে রাজি হন ও হাসমোনিয় ভাইদেরকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেন।

যাজকের বংশ থেকে আসা সত্ত্বেও, হাসমোনিয়দের মধ্যে কেউ কখনও মহাযাজক হিসেবে সেবা করেননি। অনেক যিহুদিরা মনে করতেন যে শলোমন যাকে মহাযাজক হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন, সেই সাদোকের বংশ থেকে আসা যাজকরাই কেবল এই পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন। (১ রাজাবলি ২:৩৫; যিহিষ্কেল ৪৩:১৯) সেলুসিড শাসকরা যাতে তাকে মহাযাজক বানাতে রাজি হন সেইজন্য জোনাথন যুদ্ধ করেন ও কূটনীতি কাজে লাগান। কিন্তু, জোনাথনের মৃত্যুর পর তার দাদা সায়মন তার চেয়ে বেশি ক্ষমতা পেয়েছিলেন। সা.কা.পূ. ১৪০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যিরূশালেমে ব্রোঞ্জের ফলকের ওপর খোদাই করে গ্রিক ভাষায় এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশ জারি করা হয়: “[গ্রিক সেলুসিড শাসক] দেমেত্রিওস রাজা তাঁকে [সায়মনকে] মহাযাজক মর্যাদা আরোপ করলেন, তার নিজের রাজ-বন্ধুদের মধ্যে তাঁকে তালিকাভুক্ত করলেন, তাঁকে মহাসম্মান অর্পণ করলেন। . . . ইহুদীরা ও যাজকবর্গ এ বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছিলেন যে, শিমোন [সায়মন] সবসময়ের জন্য তাঁদের অগ্রনেতা ও মহাযাজক হবেন যে পর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য এক নবীর [ভাববাদীর] উদ্ভব না হয়।”—১ ম্যাকাবীয় ১৪:৩৮-৪১ (এপোক্রিফায় পাওয়া এক ঐতিহাসিক বই)।

সায়মন ও তার বংশধররা শাসক ও সেইসঙ্গে মহাযাজক হবেন, এই বিষয়টা শুধু বিদেশি সেলুসিড কর্তৃপক্ষই মেনে নেননি কিন্তু সেইসঙ্গে তার নিজের লোকেদের এক “বিরাট দল”-ও তা মেনে নিয়েছিল। এটা এক যুগান্তকারী ঘটনা ছিল। ইতিহাসবিদ এমিল শুরার লিখেছিলেন যে, রাজনৈতিক বংশ প্রতিষ্ঠা হয়ে যাওয়ার পর হাসমোনিয়দের “মূল চিন্তা তোরাহ্‌ [যিহুদি ব্যবস্থা] পালন করা হচ্ছে কী হচ্ছে না, তা দেখা ছিল না বরং তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কীভাবে রক্ষা করা ও আরও বাড়ানো যায়, সেই দিকে তারা মন দিয়েছিলেন।” তবে, যিহুদিদের অনুভূতিতে যাতে আঘাত না লাগে সেইজন্য সায়মন খুব সাবধানে “রাজা” উপাধি না নিয়ে “লোকেদের নেতা” উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।

হাসমোনিয়রা ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দুই ক্ষমতা দখল করে নেওয়ায় সবাই খুশি ছিল না। অনেক পণ্ডিত ব্যক্তির মতানুসারে, এই সময়েই কুমরান সম্প্রদায় গড়ে উঠেছিল। কুমরান লিপিগুলোতে লেখা “ধার্মিকতার শিক্ষক” সাদোকের বংশের একজন যাজককে মনে করা হতো, যিনি যিরূশালেম ছেড়ে গিয়ে এক বিরোধী দলকে নিয়ে ডেড সীর ধারে যিহূদিয়ার মরুভূমিতে গিয়েছিলেন। ডেড সী স্ক্রোলগুলোর একটাতে হবক্‌কূক বইয়ের ওপর মন্তব্য ছিল আর সেখানে এই কথা বলে নিন্দা করা হয়েছিল: “দুষ্ট যাজককে প্রথমে সত্যের নামে ডাকা হয়েছিল কিন্তু ইস্রায়েলের ওপর শাসন করার সময় তার হৃদয় গর্বিত হয়ে পড়ে।” অনেক পণ্ডিত ব্যক্তিরা মনে করেন যে, যাকে ‘দুষ্ট যাজক’ বলা হয়েছে তিনি হয় জোনাথন নতুবা সায়মন।

সায়মন তার রাজ্যের সীমানা বাড়ানোর জন্য সামরিক অভিযান চালাতেই থাকেন। কিন্তু, হঠাৎ করে তার শাসনের পতন ঘটে যখন তার জামাই টলেমি, তাকে ও তার দুই ছেলেকে হত্যা করেন। সায়মন ও তার দুই ছেলে সেই সময় যিরীহো নগরে ভোজ উৎসবে ছিলেন। কিন্তু, ক্ষমতা দখলের জন্য টলেমির ফন্দি ভেস্তে যায়। জন হিরকানাস নামে সায়মনের আরেক ছেলে জীবিত থাকে আর তাকে হত্যাকারীদের সম্বন্ধে আগেই সতর্ক করা হয়। তিনি তার সম্ভাব্য খুনিদেরকে বন্দি করেন ও তার বাবার জায়গায় নেতা ও মহাযাজক হন।

সীমানা ও অবিচারের বৃদ্ধি

প্রথমে সিরিয়ার সৈন্যরা জন হিরকানাসকে হুমকি দেন কিন্তু পরে সা.কা.পূ. ১২৯ সালে সেলুসিড রাজবংশ পার্থিয়দের সঙ্গে এক তুমুল যুদ্ধে হেরে যায়। সেলুসিডদের ওপর এই যুদ্ধ যে ছাপ ফেলেছিল সেই সম্বন্ধে যিহুদি পণ্ডিত মেনাহেম স্টার্ন লিখেছিলেন: “রাজ্যের পুরো কাঠামো একেবারে ভেঙে পড়েছিল।” ফলে হিরকানাস “পুরো যিহূদিয়ার ওপর রাজনৈতিক স্বাধীনতা আবারও ফিরিয়ে আনতে এবং বিভিন্ন দিক দিয়ে সাম্রাজ্যের সীমানা বাড়াতে পেরেছিলেন।” আর সত্যি সত্যি তার সাম্রাজ্য অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল।

সিরিয়ার হুমকিতে দমে না গিয়ে হিরকানাস যিহূদিয়ার বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণ করতে থাকেন ও সেগুলোকে দখল করেন। ওই অঞ্চলগুলোর বাসিন্দাদের যিহুদিধর্মে ধর্মান্তরিত হতে হতো নতুবা তাদের শহরগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হতো। ইদুমীয়দের (ইদোমীয়দের) বিরুদ্ধে এইরকম একটা অভিযান চালানো হয়েছিল। এই সম্বন্ধে স্টার্ন বলেছিলেন: “ইদুমীয়দের ধর্মান্তরিতকরণ ছিল খুবই উল্লেখযোগ্য কারণ শুধু কয়েকজন ব্যক্তি ধর্মান্তরিত হয়নি বরং একসঙ্গে পুরো জাতি হয়েছিল।” অন্যান্য অঞ্চলগুলোর মধ্যে শমরীয়কেও হিরকানাস জয় করেছিলেন ও এখানকার গরিষীম পর্বতের ওপর স্থাপিত শমরীয়দের মন্দিরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। হাসমোনিয় রাজবংশের জোর করে ধর্মান্তরিত করার এই নীতিকে উপহাস করে ইতিহাসবিদ শলোমন গ্রেজেল লিখেছিলেন: “এই ক্ষেত্রে মাত্তাথিয়াসের [জুডা ম্যাকাবির বাবা] নাতি সেই নীতিকে অর্থাৎ ধর্মীয় স্বাধীনতার নীতিকে লঙ্ঘন করেছিলেন, যা আগের প্রজন্ম মহানুভবতার সঙ্গে আগলে রেখেছিল।”

ফরীশী ও সদ্দূকীদের আবির্ভাব

হিরকানাসের রাজত্বের কথা লেখার সময়ই যোসেফাস প্রথমবারের মতো ফরীশী ও সদ্দূকীদের বেড়ে চলা প্রভাব সম্বন্ধে লেখেন। (যোসেফাস সেই ফরীশীদের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন যারা জোনাথনের রাজত্বের সময়ে ছিলেন।) তিনি তাদের উৎপত্তি সম্বন্ধে কিছুই বলেননি। কিছু পণ্ডিত ব্যক্তিরা মনে করেন যে, হাসিদিম নামে এক ধর্মপ্রাণ সম্প্রদায় থেকে তাদের উৎপত্তি, যারা জুডা ম্যাকাবিকে তার ধর্মীয় লক্ষ্যগুলোর জন্য সমর্থন করতেন কিন্তু তিনি যখন রাজনীতিতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন তখন তাকে আর সমর্থন করতেন না।

যে মূল ইব্রীয় শব্দ থেকে ফরীশী শব্দ এসেছে তার মানে “আলাদা ব্যক্তি,” যদিও কেউ কেউ মনে করেন যে “ব্যাখ্যাকারী” শব্দটার সঙ্গে এটার সম্পর্ক রয়েছে। ফরীশীরা কোন বিশেষ বংশ থেকে আসেননি বরং তারা সাধারণ লোকেদের মধ্যেই পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। ধর্মের প্রতি অতি ভক্তি দেখাতে গিয়ে তারা রীতিনীতিসংক্রান্ত কলুষতা থেকে নিজেদের আলাদা রেখেছিলেন, তারা যাজকদের পবিত্র থাকার বিষয়ে মন্দিরের আইনগুলোকে রোজকার জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগাতেন। ফরীশীরা শাস্ত্রের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য এক নতুন পদ্ধতি ও ধারণা গড়ে তুলেছিলেন, যা পরে মৌখিক আইন বলে পরিচিত হয়েছিল। সায়মনের রাজত্বের সময় যখন তাদের মধ্যে থেকে কিছু ব্যক্তিদেরকে ইয়েরোসিয়াতে (প্রাচীনবর্গের পরিষদে) নিযুক্ত করা হয়েছিল, তখন তারা লোকেদের ওপর আরও বেশি প্রভাব ফেলেছিলেন। এই ইয়েরোসিয়াই পরে মহাসভা নামে পরিচিত হয়েছিল।

যোসেফাস বলেন যে, জন হিরকানাস প্রথমে ফরীশীদের একজন ছাত্র ও সমর্থক ছিলেন। কিন্তু, এক পর্যায়ে ফরীশীরা তাকে তিরস্কার করেছিলেন কারণ তিনি মহাযাজকের পদ ছাড়তে চাননি। আর এর ফলে পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বদলে গিয়েছিল। ফরীশীদের ধর্মীয় আইনগুলোকে হিরকানাস বাতিল করে দিয়েছিলেন। আরেকটা শাস্তি হিসেবে তিনি ফরীশীদের ধর্মীয় শত্রু, সদ্দূকীদের পক্ষ নিয়েছিলেন।

সদ্দূকী নামটা সম্ভবত মহাযাজক সাদোকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যার বংশধররা সেই শলোমনের সময় থেকে যাজকের কাজ করে আসছিলেন। কিন্তু, সমস্ত সদ্দূকীরাই এই বংশ থেকে আসেননি। যোসেফাসের কথা অনুসারে, সদ্দূকীরা ওই জাতির অভিজাত ও ধনী লোক ছিলেন, সমাজের সাধারণ লোকেরা তাদেরকে সমর্থন করত না। অধ্যাপক শিফম্যান মন্তব্য করেন: “তাদের মধ্যে বেশির ভাগই . . . যাজক ছিলেন অথবা মহাযাজকদের পরিবারের লোকেদের বিয়ে করেছিলেন।” এভাবে অনেক দিন ধরে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের ওঠাবসা ছিল। কিন্তু, সাধারণ লোকেদের জীবনে ফরীশীদের প্রভাব দিন-দিন বেড়ে চলায় ও সমস্ত লোকেদের যাজকদের মতো পবিত্র হওয়া সম্বন্ধে ফরীশীদের ধারণা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায় সেটাকে সদ্দূকীদের তৈরি ক্ষমতার পতন ঘটানোর হুমকি বলে মনে করা হয়েছিল। পরে, হিরকানাসের রাজত্বের শেষের বছরগুলোতে সদ্দূকীরা আবারও ক্ষমতা ফিরে পেয়েছিল।

রাজনীতির বৃদ্ধি হয় কিন্তু ধর্মের প্রতি ভক্তি কমে যায়

হিরকানাসের বড় ছেলে এরিস্টোবুলাস মারা যাওয়ার আগে মাত্র এক বছর শাসন করেছিলেন। তিনি ইতুরিয়ার অধিবাসীদেরকে জোর করে ধর্মান্তরিত করেছিলেন এবং গালীলের উত্তরাঞ্চলকে হাসমোনিয়দের অধিকারে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু, তার ভাই আলেকজান্ডার জেনেস যিনি সা.কা.পূ. ১০৩ থেকে সা.কা.পূ. ৭৬ সাল পর্যন্ত শাসন করেছিলেন, তার রাজত্বের সময়েই হাসমোনিয় রাজবংশ সর্বোচ্চ ক্ষমতা লাভ করেছিল।

আলেকজান্ডার জেনেস আগের নীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং সকলের সামনে নিজেকে মহাযাজক ও রাজা বলে ঘোষণা করেছিলেন। হাসমোনিয় ও ফরীশীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দিন-দিন কেবল বাড়তেই থাকে, এমনকি এই কারণে একটা গৃহযুদ্ধ বাঁধে ও তাতে প্রায় ৫০,০০০ যিহুদি মারা যায়। বিদ্রোহ দমন হয়ে যাওয়ার পর পৌত্তলিক রাজাদের মতো জেনেস ৮০০ জন বিদ্রোহীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। তাদের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে তাদের চোখের সামনে হত্যা করা হয়েছিল আর সেই সময় জেনেস তার উপপত্নীদের সঙ্গে ভোজোৎসব করছিলেন। *

ফরীশীদের সঙ্গে জেনেসের শত্রুতা ছিল ঠিকই কিন্তু তিনি খুবই ঝানু রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি দেখেছিলেন যে, ফরীশীদের জনপ্রিয়তা দিন-দিন বেড়ে চলেছে। মৃত্যুশয্যায় তিনি তার স্ত্রী শালোমী আলেকজান্ড্রাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, তিনি যেন ফরীশীদের সঙ্গে কর্তৃত্ব ভাগ করে নেন। জেনেস ছেলেদেরকে তার রাজ্যের উত্তরাধিকার না করে তার স্ত্রীকে মনোনীত করেছিলেন। তার স্ত্রী নিজেকে একজন দক্ষ শাসক প্রমাণ করেছিলেন কারণ হাসমোনিয়দের শাসনের মধ্যে (সা.কা.পূ. ৭৬ থেকে সা.কা.পূ. ৬৭ সাল) তার সময়েই সবচেয়ে বেশি শান্তি ছিল। ফরীশীদেরকে আবার কর্তৃত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের ধর্মীয় নীতিগুলোর বিরুদ্ধে যে সমস্ত আইন জারি করা হয়েছিল, সেগুলোকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল।

শালোমীর মৃত্যুর পর, তার দুই ছেলে হিরকানাস ২য় এবং এরিস্টোবুলাস ২য়র মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। হিরকানাস ২য় তখন মহাযাজক হিসেবে কাজ করছিলেন। এই দুজনের একজনেরও রাজনৈতিক ও সামরিক বিষয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের মতো জ্ঞান ছিল না আর এর থেকে বোঝা যায় যে, সেলুসিড রাজ্যের পুরোপুরি পতনের পর সেই এলাকায় রোমীয়দের উপস্থিতি যে বেড়ে চলেছিল তা তারা একেবারেই বুঝতে পারেননি। সা.কা.পূ. ৬৩ সালে দুই ভাই-ই দম্মেশকে রোমীয় শাসক পম্পেইয়ের কাছে যান ও তাদের বাদানুবাদের বিষয়টা শোনার জন্য তাকে অনুরোধ জানান। ওই বছরই পম্পেই ও তার সৈন্যরা যিরূশালেমে প্রবেশ করে তা দখল করে নেয়। এখান থেকেই হাসমোনিয় রাজ্যের পতন শুরু হয়। সা.কা.পূ. ৩৭ সালে ইদুমিয় রাজা মহান হেরোদ যিরূশালেম দখল করেছিলেন। তাকে রোমের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পরিষদ “যিহূদিয়ার রাজা,” “রোমীয়দের মিত্র ও বন্ধু” বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল। সেই সময় হাসমোনিয় রাজ্যের আর কোন অস্তিত্বই ছিল না।

হাসমোনিয় উত্তরাধিকার

যীশু পৃথিবীতে থাকতে যে ধর্মীয় বিভক্তি ছিল তার ভিত্তি, জুডা ম্যাকাবি থেকে শুরু করে এরিস্টোবুলাস ২য় পর্যন্ত হাসমোনিয়েদের যুগেই স্থাপিত হয়েছিল। শুরুতে হাসমোনিয়দের ঈশ্বরের উপাসনার জন্য উদ্যোগ ছিল কিন্তু পরে তা স্বার্থপরতায় মোড় নিয়েছিল। তাদের যাজকদের ঈশ্বরের ব্যবস্থা মেনে চলার জন্য লোকেদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার সুযোগ ছিল কিন্তু তারা জাতিকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের অতল গহ্বরে তলিয়ে দিয়েছিল। এই অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছিল, যেগুলোর একটার সঙ্গে আরেকটা মিল ছিল না। হাসমোনিয়দের আর কোন অস্তিত্বই ছিল না কিন্তু হেরোদ ও রোমের অধীনে ধর্মীয় ক্ষমতার জন্য সদ্দূকী, ফরীশী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে লড়াই চলতেই থাকে।

[পাদটীকাগুলো]

^ ১৯৯৮ সালের ১৫ই নভেম্বর প্রহরীদুর্গ এর “ম্যাকাবিরা কারা ছিলেন?” প্রবন্ধটা দেখুন।

^ “নহূমের ব্যাখ্যা”-র ডেড সী স্ক্রোল বলে যে, “গর্জনকারী সিংহ” যে “জীবন্ত মানুষদের টাঙিয়ে রেখেছিল” তা সম্ভবত এই ঘটনাই।

[৩০ পৃষ্ঠার তালিকা]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

হাসমোনিয় রাজবংশ

জুডা ম্যাকাবি জোনাথন ম্যাকাবি সায়মন ম্যাকাবি

জন হিরকানাস

↓ ↓

শালোমী আলেকজান্ড্রা—বিয়ে করেছিলেন—আলেকজান্ডার জেনেসকে এরিস্টোবুলাস

↓ ↓

হিরকানাস ২য় এরিস্টোবুলাস ২য়

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

জুডা ম্যাকাবি যিহুদিদেরকে স্বাধীন করার চেষ্টা করেছিলেন

[সৌজন্যে]

The Doré Bible Illustrations/Dover Publications, Inc.

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

হাসমোনিয়রা ন-যিহুদি শহরগুলোকে দখল করার জন্য লড়াই করেছিল

[সৌজন্যে]

The Doré Bible Illustrations/Dover Publications, Inc.