সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন”

“তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন”

“তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন”

[ঈশ্বর] আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।”প্রেরিত ১৭:২৭.

১, ২. (ক) তারা ভরা আকাশের দিকে তাকালে, সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে কোন্‌ প্রশ্ন হয়তো আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি? (খ) বাইবেল কীভাবে আমাদের নিশ্চয়তা দেয় যে, মানুষেরা যিহোবার দৃষ্টিতে তুচ্ছ নয়?

 আপনি কি কখনও পরিষ্কার রাতে তারা ভরা আকাশ দেখেছেন এবং বিস্মিত হয়েছেন? অসংখ্য তারা এবং বিশাল শূন্যতা এক বিস্ময় জাগিয়ে তোলে। এই বিশাল নিখিলবিশ্বে পৃথিবী হল একটা ক্ষুদ্র বস্তু। এর অর্থ কি এই যে, “সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর,” সৃষ্টিকর্তা মানুষ সম্বন্ধে চিন্তিত হওয়ার অনেক উর্ধ্বে বা অত্যন্ত দূরবর্তী এবং তাদের পক্ষে তাঁকে জানা অননুসন্ধেয়?—গীতসংহিতা ৮৩:১৮.

বাইবেল আমাদের নিশ্চয়তা দেয় যে, মানুষেরা কখনোই যিহোবার দৃষ্টিতে তুচ্ছ নয়। বস্তুত, ঈশ্বরের বাক্য তাঁকে খোঁজার জন্য আমাদের উৎসাহ দেয় এই বলে: “তিনি আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।” (প্রেরিত ১৭:২৭; ১ বংশাবলি ২৮:৯) সত্যিই, আমরা যদি ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিই, তা হলে আমাদের প্রচেষ্টায় তিনি সাড়া দেবেন। কীভাবে? ২০০৩ সালের জন্য আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদের কথাগুলো এই হৃদয়গ্রাহী উত্তর দেয়: “তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।” (যাকোব ৪:৮) আসুন, আমরা কয়েকটা অপূর্ব আশীর্বাদ সম্বন্ধে আলোচনা করি, যেগুলো যিহোবা যারা তাঁর নিকটবর্তী, তাদের ওপর বর্ষণ করেন।

যিহোবার কাছ থেকে এক ব্যক্তিগত উপহার?

৩. যারা যিহোবার নিকটবর্তী হয়, তাদের তিনি কোন্‌ উপহার দেন?

প্রথমত, যিহোবার দাসদের এক মূল্যবান উপহার রয়েছে, যে-উপহার তিনি তাঁর লোকেদের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন। সমস্ত শক্তি, প্রাচুর্য এবং শিক্ষা, যা এই বিধিব্যবস্থা দিয়ে থাকে, সেগুলোর কোন কিছুই এই উপহারের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। এটা হল এক ব্যক্তিগত উপহার, যে-উপহার যিহোবা শুধু তাদেরই দেন, যারা তাঁর নিকটবর্তী হয়। সেটা কী? ঈশ্বরের বাক্য উত্তর দেয়: “হাঁ, . . . যদি বুদ্ধির জন্য উচ্চৈঃস্বর কর; যদি রৌপ্যের ন্যায় তাহার অন্বেষণ কর, গুপ্ত ধনের ন্যায় তাহার অনুসন্ধান কর; তবে সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] ভয় বুঝিতে পারিবে, ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে। কেননা সদাপ্রভুই [“যিহোবাই,” NW] প্রজ্ঞা দান করেন।” (হিতোপদেশ ২:৩-৬) কল্পনা করুন যে, অসিদ্ধ মানুষ “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” খুঁজে পেতে পারে! সেই উপহার—ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া জ্ঞান—“গুপ্ত ধনের” সঙ্গে তুলনীয়। কেন?

৪, ৫. ‘ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানকে’ কেন “গুপ্ত ধনের” সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে? ব্যাখ্যা করুন।

একটা বিষয় হল, ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের মহামূল্য রয়েছে। এর সবচেয়ে মূল্যবান একটা আশীর্বাদ হল, অনন্ত জীবনের আশা। (যোহন ১৭:৩) কিন্তু, সেই জ্ঞান এমনকি এখনই আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বরের বাক্য মনোযোগ সহকারে অধ্যয়নের ফলে আমরা এইধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে পেরেছি যেমন: ঈশ্বরের নাম কী? (যাত্রাপুস্তক ৩:১৫) মৃতদের প্রকৃত অবস্থা কী? (উপদেশক ৯:৫, ১০) পৃথিবী এবং মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কী? (যিশাইয় ৪৫:১৮) এ ছাড়া, বাইবেলের বিজ্ঞ পরামর্শ কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমরা জীবনযাপনের সবচেয়ে ভাল উপায় সম্বন্ধেও শিখেছি। (যিশাইয় ৩০:২০, ২১; ৪৮:১৭, ১৮) এভাবে, আমাদের উপযুক্ত নির্দেশনা রয়েছে, যা আমাদের জীবনের উদ্বিগ্নতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে এবং সেই কাজ অনুধাবন করতে সাহায্য করে, যা প্রকৃত আনন্দ ও পরিতৃপ্তি বাড়িয়ে তোলে। সর্বোপরি, ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন আমাদের যিহোবার অপূর্ব গুণাবলি সম্বন্ধে জানতে এবং তাঁর নিকটবর্তী হতে সাহায্য করেছে। ‘ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের’ ওপর ভিত্তি করে যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের চেয়ে মূল্যবান আর কী-ই-বা হতে পারে?

আরও একটা কারণে ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানকে “গুপ্ত ধনের” সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। অনেক ধনসম্পদের মতো, এই জগতে এটাও তুলনামূলকভাবে দুর্লভ। পৃথিবীর ছয়শ কোটি লোকের মধ্যে প্রায় ষাট লক্ষ যিহোবার উপাসক বা ১,০০০ লোকের মধ্যে প্রায় একজন ব্যক্তি “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” পেয়েছে। ঈশ্বরের বাক্য জানা কতটা দুর্লভ সুযোগ, তা ব্যাখ্যা করার জন্য শুধু বাইবেলের একটা প্রশ্ন বিবেচনা করুন: মৃত্যুতে মানুষের কী হয়? শাস্ত্র থেকে আমরা জানি যে, মৃত্যুর পর আর কিছুই বেঁচে থাকে না এবং মৃতেরা কিছুই জানে না। (যিহিষ্কেল ১৮:৪) তবুও, মৃত্যুর পর একজন ব্যক্তির মধ্যে কিছু বেঁচে থাকে এই মিথ্যা বিশ্বাস জগতের বেশির ভাগ ধর্মের মধ্যেই রয়েছে। খ্রীষ্টীয়জগতের ধর্মগুলোর মধ্যে এটা হল একটা মৌলিক বিষয়। এ ছাড়া, ইসলাম, জৈন, তাও, বৌদ্ধ, যিহুদি, শিখ, শিন্টো এবং হিন্দুধর্মের মধ্যেও এই বিশ্বাস রয়েছে। চিন্তা করে দেখুন যে, কোটি কোটি লোক এই একটা মিথ্যা মতবাদের দ্বারা প্রতারিত হয়েছে!

৬, ৭. (ক) একমাত্র কারা “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” খুঁজে পেতে পারে? (খ) কোন্‌ উদাহরণ দেখায় যে, যিহোবা আমাদের সেই অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন, যা অনেক ‘বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমানরা’ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে?

কেন আরও বেশি লোক “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” পায় না? কারণ ঈশ্বরের সাহায্য ছাড়া কোন ব্যক্তি তাঁর বাক্যের অর্থ পুরোপুরি বুঝতে পারে না। মনে রাখবেন যে, এই জ্ঞান হল একটা উপহার। যিহোবা শুধু তাদেরই এটা দেন, যারা আন্তরিকতা ও নম্রতা সহকারে তাঁর বাক্য অনুসন্ধান করতে ইচ্ছুক। এইরকম ব্যক্তিরা হয়তো “মাংস অনুসারে জ্ঞানবান্‌” নয়। (১ করিন্থীয় ১:২৬) তাদের অনেককে জগতের মান অনুযায়ী এমনকি “অশিক্ষিত সামান্য লোক” হিসেবেও বিবেচনা করা হতে পারে। (প্রেরিত ৪:১৩) কিন্তু, সেটা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। যিহোবা আমাদের হৃদয়ের মধ্যে যে-গুণাবলি খুঁজে পেয়েছেন, সেটার জন্যই তিনি “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” দিয়ে আমাদের পুরস্কৃত করেন।

একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। খ্রীষ্টীয়জগতের অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি বাইবেলের বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছে। এইধরনের তথ্যগুলো হয়তো ঐতিহাসিক পটভূমি, ইব্রীয় এবং গ্রিক শব্দের অর্থ এবং আরও অনেক বিষয় সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে পারে। এই পণ্ডিত ব্যক্তিরা যা কিছু শিখেছে, সেগুলোর মধ্যে কি সত্যিই তারা “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” পেয়েছে? তারা কি স্পষ্টভাবে বাইবেলের বিষয়বস্তু অর্থাৎ যিহোবার স্বর্গীয় রাজ্যের মাধ্যমে তাঁর সার্বভৌমত্বের প্রতিপাদন বুঝতে পেরেছে? তারা কি জানে যে, যিহোবা ঈশ্বর ত্রিত্বের অংশ নন? আমাদের এইধরনের বিষয়গুলো সম্বন্ধে সঠিক বোধগম্যতা রয়েছে। কেন? যিহোবা আমাদের আধ্যাত্মিক সত্যের ওপর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন, যা অনেক ‘বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমানরা’ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। (মথি ১১:২৫) যারা যিহোবার নিকটবর্তী হয়, তাদের তিনি কত আশীর্বাদই না করেন!

“যাহারা যিহোবাকে প্রেম করে, তিনি তাহাদের সকলকে রক্ষা করেন”

৮, ৯. (ক) যারা যিহোবার নিকটবর্তী হয়, তাদের জন্য কীভাবে দায়ূদ আরেকটা আশীর্বাদ সম্বন্ধে বর্ণনা করেছেন? (খ) প্রকৃত খ্রীষ্টানদের কেন ঐশিক সুরক্ষার দরকার?

যারা যিহোবার নিকটবর্তী হয়, তারা আরেকটা আশীর্বাদ উপভোগ করে আর সেটা হল ঐশিক সুরক্ষা। গীতরচক দায়ূদ, যিনি দুর্দশা সম্বন্ধে খুব ভাল করেই জানতেন, তিনি লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] সেই সকলেরই নিকটবর্ত্তী, যাহারা তাঁহাকে ডাকে, যাহারা সত্যে তাঁহাকে ডাকে। যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তিনি তাহাদের বাঞ্ছা পূর্ণ করেন, আর তাহাদের আর্ত্তনাদ শুনিয়া তাহাদিগকে ত্রাণ করেন। যাহারা সদাপ্রভুকে [“যিহোবাকে,” NW] প্রেম করে, তিনি তাহাদের সকলকে রক্ষা করেন।” (গীতসংহিতা ১৪৫:১৮-২০) হ্যাঁ, যারা যিহোবাকে ভালবাসে, তিনি তাদের নিকটবর্তী হন এবং তাদের সাহায্যের আর্তনাদের দ্রুত উত্তর দিতে পারেন।

কেন আমাদের ঐশিক সুরক্ষার দরকার আছে? প্রকৃত খ্রীষ্টানরা এই ‘বিষম সময়ে’ বসবাস করার ফলাফল অনুভব করা ছাড়াও যিহোবার প্রধান শত্রু, শয়তান দিয়াবলের বিশেষ লক্ষবস্তু। (২ তীমথিয় ৩:১) সেই সুনিপুণ শত্রু আমাদের “গ্রাস” করতে চায়। (১ পিতর ৫:৮) শয়তান আমাদের তাড়না করে, চাপ এবং প্রলোভনের মধ্যে ফেলে। এ ছাড়া, সে আমাদের মন ও হৃদয়ের মনোভাবও লক্ষ করে এবং দেখে যে কীভাবে তা কাজে লাগানো যায়। তার মনে একটা উদ্দেশ্য রয়েছে: আমাদের বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেওয়া এবং আধ্যাত্মিকতাকে ধ্বংস করা। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১২, ১৭) যেহেতু আমাদের এইরকম এক শক্তিশালী শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়, তাই এটা জানা কি আশ্বাসজনক নয় যে, “যাহারা যিহোবাকে প্রেম করে, তিনি তাহাদের সকলকে রক্ষা করেন”?

১০. (ক) যিহোবা কীভাবে তাঁর লোকেদের সুরক্ষা জোগান? (খ) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা কী এবং কেন?

১০ কিন্তু, যিহোবা কীভাবে তাঁর লোকেদের সুরক্ষা জোগান? সুরক্ষা করার বিষয়ে তাঁর প্রতিজ্ঞা আমাদের এই ব্যবস্থায় এক সমস্যামুক্ত জীবনের নিশ্চয়তা দেয় না বা এর অর্থ এই নয় যে, তিনি আমাদের জন্য অলৌকিক কিছু করতে বাধ্য। তবুও, যিহোবা তাঁর লোকেদের দলগতভাবে শারীরিক সুরক্ষা জোগান। সবচেয়ে বড় কথা হল, পৃথিবী থেকে প্রকৃত উপাসনাকারীদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তিনি কখনও দিয়াবলকে অনুমতি দেবেন না। (২ পিতর ২:৯) সর্বোপরি, যিহোবা আমাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সুরক্ষা জোগান। তিনি আমাদের সেই সমস্ত বিষয় দিয়ে সুসজ্জিত করেন, যা আমাদের পরীক্ষা সহ্য করার এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে রক্ষা করার জন্য দরকার। সবশেষে, আধ্যাত্মিক সুরক্ষা হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা। কেন? যতক্ষণ যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক থাকবে, ততক্ষণ কোন কিছুই—এমনকি মৃত্যুও—আমাদের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারবে না।—মথি ১০:২৮.

১১. যিহোবা তাঁর লোকেদের আধ্যাত্মিক সুরক্ষার জন্য কোন্‌ কোন্‌ ব্যবস্থা করেছেন?

১১ যারা যিহোবার নিকটবর্তী হয়, তাদের আধ্যাত্মিক সুরক্ষার জন্য তিনি প্রচুর ব্যবস্থা করেছেন। তিনি তাঁর বাক্য বাইবেলের মাধ্যমে আমাদের জন্য প্রজ্ঞা দিয়েছেন, যাতে আমরা বিভিন্ন পরীক্ষার মোকাবিলা করতে পারি। (যাকোব ১:২-৫) শাস্ত্রে পাওয়া বাস্তব পরামর্শ কাজে লাগানোই হল একটা সুরক্ষা। এ ছাড়া, যিহোবা “যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা” দান করেন। (লূক ১১:১৩) সেই আত্মা হল নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি, তাই নিশ্চিতভাবে এটা আমাদের যেকোন পরীক্ষা বা প্রলোভন, যা আমাদের পথে আসতে পারে, সেগুলোর জন্য সুসজ্জিত করতে পারে। খ্রীষ্টের মাধ্যমে যিহোবা “দানরূপ মানুষদের” দিয়েছেন। (ইফিষীয় ৪:৮, NW) আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে যোগ্য এই ব্যক্তিরা সহ উপাসকদের সাহায্য করার সময় যিহোবার গভীর করুণা প্রতিফলিত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে।—যাকোব ৫:১৪, ১৫.

১২, ১৩. (ক) কীসের মাধ্যমে যিহোবা আমাদের উপযুক্ত সময়ে আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগান? (খ) আমাদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের জন্য যিহোবার ব্যবস্থাদি সম্বন্ধে আপনি কেমন মনে করেন?

১২ যিহোবা আমাদের সুরক্ষার জন্য আরও কিছু জোগান: উপযুক্ত সময়ে আধ্যাত্মিক খাবার। (মথি ২৪:৪৫) ছাপানো প্রকাশনাদি, যার মধ্যে রয়েছে প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকা ও সেইসঙ্গে সভা, অধিবেশন এবং সম্মেলনগুলোর মাধ্যমে যিহোবা আমাদের সেই সমস্ত বিষয়গুলো জোগান, যা আমাদের দরকারের সময় প্রয়োজন। আপনি কি এমন কোন সময়ের কথা মনে করতে পারেন, যখন আপনি কোন খ্রীষ্টীয় সভা, কোন অধিবেশন অথবা কোন সম্মেলনে এমন কিছু শুনেছেন, যা আপনার হৃদয় স্পর্শ করেছে এবং আপনাকে শক্তিশালী করেছে বা সান্ত্বনা দিয়েছে? আপনি কি কখনও ওপরে উল্লেখিত পত্রিকাগুলোর কোন একটা প্রবন্ধ পড়ে মনে করেছেন যে, এটা আপনার জন্যই লেখা হয়েছে?

১৩ শয়তানের সবচেয়ে কার্যকারী হাতিয়ারগুলোর মধ্যে একটা হল, নিরুৎসাহিতা এবং আমরাও এর প্রভাব থেকে মুক্ত নই। সে খুব ভাল করেই জানে যে, দীর্ঘস্থায়ী হতাশা আমাদের শক্তি কেড়ে নিতে পারে এবং আমাদের আক্রমণযোগ্য করে তোলে। (হিতোপদেশ ২৪:১০) যেহেতু শয়তান নেতিবাচক অনুভূতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে, তাই আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন। প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকাগুলোতে প্রায়ই এমন সব প্রবন্ধ ছাপানো হয়, যেগুলো আমাদের নিরুৎসাহিতার সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে। এইরকম একটা প্রবন্ধ সম্বন্ধে একজন খ্রীষ্টান বোন লিখেছিলেন: “প্রবন্ধটা আমি প্রায় প্রতিদিন পড়ি এবং প্রতিবারই চোখে জল এসে যায়। এটা আমি আমার বিছানার পাশে রাখি, যাতে যখনই আমি হতাশ বোধ করি তখনই হাতের কাছে পেতে পারি। এইরকম প্রবন্ধগুলোর মাধ্যমে আমি উপলব্ধি করতে পারি যে, যিহোবার সুরক্ষিত বাহু আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।” * সময়োপযোগী আধ্যাত্মিক খাবার জোগানোর জন্য আমরা কি যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞ নই? মনে রাখবেন যে, আমাদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের জন্য তাঁর ব্যবস্থাগুলো প্রমাণ দেয় যে, তিনি আমাদের নিকটবর্তী এবং আমাদের তিনি তাঁর সুরক্ষিত যত্নের মধ্যে রেখেছেন।

‘প্রার্থনা-শ্রবণকারীর’ কাছে আসা

১৪, ১৫. (ক) যারা যিহোবার নিকটবর্তী হয়, তাদের তিনি কোন্‌ ব্যক্তিগত আশীর্বাদ দেন? (খ) যিহোবার কাছে নির্দ্বিধায় প্রার্থনা করতে পারা কেন এক বিশেষ সুযোগ?

১৪ আপনি কি কখনও লক্ষ করেছেন যে, মানুষ যখন ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব লাভ করে তখন প্রায়ই তাদের কর্তৃত্বের অধীনস্থ লোকেরা খুব কমই তাদের কাছে আসতে পারে? কিন্তু, যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে কী বলা যায়? তিনি কি এতই দূরে যে, সাধারণ মানুষের আবেদনের প্রতি তিনি আগ্রহ দেখাতে অসমর্থ? একেবারেই নয়! প্রার্থনা করার দান হল আরেকটা আশীর্বাদ, যা যিহোবা তাদের দান করেন, যারা তাঁর নিকটবর্তী হয়। নির্দ্বিধায় ‘প্রার্থনা-শ্রবণকারীর’ কাছে আসা সত্যিই এক বিশেষ সুযোগ। (গীতসংহিতা ৬৫:২) কেন?

১৫ উদাহরণস্বরূপ: বড় কোন প্রতিষ্ঠানের মুখ্য নির্বাহীর অনেক দায়িত্ব থাকে। তিনি স্থির করেন যে, কোন্‌ বিষয়গুলো তিনি নিজে পরিচালনা করবেন এবং কোন্‌গুলো তিনি অন্যদের কাছে অর্পণ করবেন। একইভাবে নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম শাসকের নির্ধারণ করার অধিকার আছে যে, কোন্‌ বিষয়গুলোর সঙ্গে তিনি নিজে জড়িত হবেন এবং কোন্‌গুলো তিনি অপরকে অর্পণ করবেন। যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্র যীশুর কাছে যা কিছু অর্পণ করেছেন, তা বিবেচনা করুন। পুত্রকে “বিচার করিবার অধিকার” দেওয়া হয়েছে। (যোহন ৫:২৭) দূতেরা “তাঁহার বশীকৃত” হয়েছে। (১ পিতর ৩:২২) যিহোবার শক্তিশালী পবিত্র আত্মা যীশুকে পৃথিবীতে তাঁর শিষ্যদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সাহায্য করেছে। (যোহন ১৫:২৬; ১৬:৭) যীশু তাই বলতে পেরেছিলেন: “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্ত্তৃত্ব আমাকে দত্ত হইয়াছে।” (মথি ২৮:১৮) কিন্তু, আমাদের প্রার্থনার ক্ষেত্রে যিহোবা ব্যক্তিগতভাবে জড়িত থাকাকে বেছে নিয়েছেন। এই কারণে বাইবেল আমাদের শুধু যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে এবং তা যীশুর নামে করতে নির্দেশনা দেয়।—গীতসংহিতা ৬৯:১৩; যোহন ১৪:৬, ১৩.

১৬. কেন আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবা সত্যিই আমাদের প্রার্থনা শোনেন?

১৬ যিহোবা কি সত্যিই আমাদের প্রার্থনা শোনেন? তিনি যদি উদাসীন হতেন কিংবা চিন্তা না করতেন, তা হলে তিনি কখনও আমাদের “প্রার্থনায় নিবিষ্ট” থাকতে বলতেন না বা তাঁর ওপর আমাদের ভার এবং উদ্বিগ্নতাগুলো অর্পণ করতে বলতেন না। (রোমীয় ১২:১২; গীতসংহিতা ৫৫:২২; ১ পিতর ৫:৭) বাইবেলের সময়ের বিশ্বস্ত দাসদের পূর্ণ আস্থা ছিল যে, যিহোবা প্রার্থনা শোনেন। (১ যোহন ৫:১৪) তাই, গীতরচক দায়ূদ বলেছিলেন: “[যিহোবা] আমার রব শুনেন।” (গীতসংহিতা ৫৫:১৭) আমাদেরও আস্থা রাখার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, যিহোবা নিকটবর্তী, আমাদের সমস্ত চিন্তা এবং উদ্বিগ্নতার কথা শুনতে তিনি প্রস্তুত।

যিহোবা তাঁর দাসদের আশীর্বাদ করেন

১৭, ১৮. (ক) যিহোবা তাঁর বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীদের বিশ্বস্ত সেবা সম্বন্ধে কেমন বোধ করেন? (খ) ব্যাখ্যা করুন যে, কীভাবে হিতোপদেশ ১৯:১৭ পদ দেখায় যে, আমাদের করুণাপূর্ণ কাজগুলো যিহোবার দ্বারা অলক্ষিত থাকে না।

১৭ নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম হিসেবে যিহোবার অবস্থান, সাধারণ মানুষের কিছু করা বা না করার ওপর নির্ভর করে না। তবুও, যিহোবা হলেন উপলব্ধিপূর্ণ ঈশ্বর। তিনি তাঁর বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীদের বিশ্বস্ত সেবাকে মূল্য দেন—বস্তুত, তা উপলব্ধি করেন। (গীতসংহিতা ১৪৭:১১) তা হলে, এটা হল আরেকটা উপকার, যা যারা তাঁর নিকটবর্তী হয় তারা উপভোগ করে: তিনি তাঁর দাসদের পুরস্কৃত করেন।—ইব্রীয় ১১:৬.

১৮ বাইবেল স্পষ্টভাবে দেখায় যে, যিহোবা তাঁর উপাসনাকারীরা যা করে, সেগুলোকে মূল্য দেন। উদাহরণস্বরূপ, আমরা পড়ি: “যে দরিদ্রকে কৃপা করে, সে সদাপ্রভুকে ঋণ দেয়; তিনি তাহার সেই উপকারের পরিশোধ করিবেন।” (হিতোপদেশ ১৯:১৭) দরিদ্রদের জন্য যিহোবার করুণাময় বিবেচনা মোশির ব্যবস্থার মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছিল। (লেবীয় পুস্তক ১৪:২১; ১৯:১৫) দরিদ্রদের সঙ্গে আচরণের সময় আমরা যখন তাঁর করুণা অনুকরণ করি, তখন যিহোবা কেমন বোধ করেন? আমরা যখন কোন কিছু পাওয়ার আশা না করে দরিদ্রকে দান করি, তখন যিহোবা এটাকে তাঁর প্রতি দেওয়া একটা ঋণ বলে মনে করেন। যিহোবা অনুগ্রহ এবং আশীর্বাদের মাধ্যমে সেই ঋণ পরিশোধ করার প্রতিজ্ঞা করেন। (হিতোপদেশ ১০:২২; মথি ৬:৩, ৪; লূক ১৪:১২-১৪) হ্যাঁ, আমরা যখন সহ উপাসকদের দরকারের সময় তাদের করুণা দেখাই, তখন এটা যিহোবার হৃদয়ে পৌঁছায়। এটা জেনে আমরা কতই না কৃতজ্ঞ যে, আমাদের করুণাপূর্ণ কাজগুলো আমাদের স্বর্গীয় পিতার দ্বারা অলক্ষিত থাকে না!—মথি ৫:৭.

১৯. (ক) কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, প্রচার এবং শিষ্য তৈরির কাজে আমরা যা করি, যিহোবা সেটাকে উপলব্ধি করেন? (খ) কীভাবে যিহোবা তাঁর রাজ্যের সমর্থনে করা কাজকে পুরস্কৃত করেন?

১৯ যিহোবা বিশেষ করে তাঁর রাজ্যের জন্য করা আমাদের কাজকে উপলব্ধি করেন। আমরা যখন যিহোবার নিকটবর্তী হই, তখন এটা স্বাভাবিক যে রাজ্যের প্রচার এবং শিষ্য তৈরির কাজে যতটুকু সম্ভব আমরা আমাদের সময়, শক্তি এবং সম্পদ ব্যবহার করতে চাই। (মথি ২৮:১৯, ২০) কখনও কখনও, আমরা হয়তো মনে করতে পারি যে আমরা সামান্যই করছি। আমাদের অসিদ্ধ হৃদয় এমনকি আমাদের মনে এইরকম চিন্তা নিয়ে আসতে পারে যে, যিহোবা আমাদের কাজে খুশি হচ্ছেন কি না। (১ যোহন ৩:১৯, ২০) কিন্তু, প্রেমের দ্বারা পরিচালিত হওয়া হৃদয় থেকে আসা সমস্ত উপহারকে যিহোবা মূল্যবান মনে করেন, তা সেটা যত ছোটই হোক না কেন। (মার্ক ১২:৪১-৪৪) বাইবেল আমাদের নিশ্চয়তা দেয়: “ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং . . . তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।” (ইব্রীয় ৬:১০) সত্যিই, যিহোবা তাঁর রাজ্যের সমর্থনে করা এমনকি ছোট কাজও মনে রাখেন এবং পুরস্কৃত করেন। এখনই প্রচুর আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ ছাড়াও, আমরা আসন্ন নতুন জগতের আনন্দপূর্ণ জীবনের জন্য অপেক্ষা করতে পারি, যেখানে যিহোবা অকাতরে দান করবেন এবং যারা তাঁর নিকটবর্তী হয়, তাদের সকলের ধার্মিক আকাঙ্ক্ষাগুলো পরিপূর্ণ করবেন!—গীতসংহিতা ১৪৫:১৬; ২ পিতর ৩:১৩.

২০. দুহাজার তিন সাল জুড়ে, কীভাবে আমরা আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদের কথাগুলো মনে রাখতে পারি এবং এর ফল কী হবে?

২০ আসুন, ২০০৩ সাল জুড়ে আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করি যে, আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করে চলছি কি না। আমরা যদি তা করি, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুসারে সাড়া দেবেন। সর্বোপরি, ‘ঈশ্বর মিথ্যাকথনে অসমর্থ।’ (তীত ১:২) আপনি যদি তাঁর নিকটবর্তী হন, তা হলে তিনিও আপনার নিকটবর্তী হবেন। (যাকোব ৪:৮) আর এর ফল কী হবে? এখনই প্রচুর আশীর্বাদ এবং আগের চেয়ে যিহোবার আরও নিকটবর্তী হওয়ার চিরকালীন আশা।

[পাদটীকা]

^ “যিহোবা আমাদের হৃদয় অপেক্ষা মহান” প্রবন্ধটার প্রতি প্রতিক্রিয়া, ২০০০ সালের ১লা মে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৮-২৯ পৃষ্ঠায় রয়েছে।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• যারা যিহোবার নিকটবর্তী হয়, তাদের তিনি কোন্‌ উপহার দেন?

• যিহোবা তাঁর লোকেদের আধ্যাত্মিক সুরক্ষার জন্য কোন্‌ কোন্‌ ব্যবস্থা করেছেন?

• যিহোবার কাছে নির্দ্বিধায় প্রার্থনা করতে পারা কেন এক বিশেষ সুযোগ?

• বাইবেল কীভাবে দেখায় যে, যিহোবা তাঁর বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীদের বিশ্বস্ত সেবাকে উপলব্ধি করেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবা আমাদের আধ্যাত্মিক সত্যের ওপর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবা আধ্যাত্মিক সুরক্ষা জোগান

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবা নিকটবর্তী, আমাদের সমস্ত প্রার্থনা শুনতে প্রস্তুত