সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কীভাবে আপনি বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারেন?

কীভাবে আপনি বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারেন?

কীভাবে আপনি বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারেন?

 “জ্ঞানবান শুনিবে ও পাণ্ডিত্যে বৃদ্ধি পাইবে,” প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা শলোমন বলেছিলেন। আমাদের মধ্যে অধিকাংশই শুধুমাত্র অন্যদের উপদেশ শুনতে উপেক্ষা করেছি বলে মাঝেমধ্যে মূর্খ সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে থাকি।—হিতোপদেশ ১:৫.

শলোমনের এই কথাগুলো পরে তার রচিত আরও ‘তিন সহস্র প্রবাদ বাক্যের’ সঙ্গে বাইবেলে লেখা হয়েছিল। (১ রাজাবলি ৪:৩২) আমরা কি তার বিজ্ঞ কথাগুলো জানার ও সেগুলোতে মনোযোগ দেওয়ার দ্বারা উপকৃত হতে পারি? হ্যাঁ, পারি। সেগুলো আমাদের ‘প্রজ্ঞা ও উপদেশ পাইতে, বুদ্ধির কথা বুঝিতে; বিজ্ঞতার আচরণ সম্বন্ধে, ধার্ম্মিকতা, বিচার ও ন্যায় সম্বন্ধে উপদেশ পাইতে’ সাহায্য করে। (হিতোপদেশ ১:২, ৩) আসুন আমরা বাইবেল ভিত্তিক পাঁচটা নির্দেশনা সম্বন্ধে আলোচনা করি, যেগুলো আমাদের বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করতে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী পরিণতিগুলো বিবেচনা করুন

কিছু কিছু সিদ্ধান্তের লক্ষণীয় পরিণতি থাকবে। তাই, এগুলোর ফল কী হবে, তা আগে থেকেই নির্ণয় করার চেষ্টা করুন। সাবধান থাকুন, ক্ষণস্থায়ী উপকারগুলো যেন আপনাকে সম্ভাব্য অবাঞ্ছিত দীর্ঘস্থায়ী পরিণতিগুলোকে বুঝতে পারার ক্ষেত্রে অন্ধ করে না রাখে। “সতর্ক লোক বিপদ দেখিয়া আপনাকে লুকায়, কিন্তু অবোধ লোকেরা অগ্রে গিয়া দণ্ড পায়,” হিতোপদেশ ২২:৩ পদ সাবধান করে।

ক্ষণস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী কোন কোন পরিণতি হবে, সেগুলোর তালিকা একটা কাগজে লেখা হয়তো সাহায্যকারী হতে পারে। একটা নির্দিষ্ট চাকরি বেছে নেওয়ার ক্ষণস্থায়ী ফল হতে পারে ভাল বেতন ও উপভোগ্য কাজ। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী পরিণতিগুলোর অন্তর্ভুক্ত কি এমন এক চাকরি থাকা, যেটার প্রকৃত কোনো ভবিষ্যৎ নেই? ভবিষ্যতে এর জন্য কি আপনাকে আপনার বন্ধুবান্ধব বা পরিবারকে ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে হতে পারে? এটা কি আপনাকে এক ক্ষতিকর পরিবেশের মধ্যে ফেলবে বা হয়তো এতটা বিরক্তিকর হবে যে, আপনি অত্যন্ত নিরাশ হয়ে পড়বেন? সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো বিবেচনা করুন ও এরপর সিদ্ধান্ত নিন যে, কোনটা অগ্রাধিকার পাবে।

পর্যাপ্ত সময় নিন

তাড়াহুড়ো করে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো সহজেই মূর্খ প্রমাণিত হতে পারে। হিতোপদেশ ২১:৫ পদ সাবধান করে: “পরিশ্রমীর চিন্তা হইতে কেবল ধনলাভ হয়, কিন্তু যে কেহ হঠকারী, তাহার কেবল অভাব ঘটে।” উদাহরণস্বরূপ, মোহাবিষ্ট কিশোর-কিশোরীদের বিয়ের সম্পর্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সময় নেওয়া উচিত। তা না হলে, তারা হয়তো ১৮ শতাব্দীর প্রথমদিকের ইংরেজ নাট্যকার উইলিয়াম কংগ্রিভ যা বলেছিলেন, সেই কথাগুলোর সত্যতা দেখতে পারে, তিনি বলেছিলেন: “তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করলে, পরে এর জন্য আমরা হয়তো অনেক সময় ধরে আপশোস করব।”

কিন্তু, যথেষ্ট সময় নেওয়াকে গড়িমসি করার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। কিছু কিছু সিদ্ধান্ত এত গুরুত্বপূর্ণ যে, সেগুলো যুক্তিযুক্তভাবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নেওয়া বিজ্ঞের কাজ হবে। অযথা বিলম্ব করার জন্য, হয় আমাদের নতুবা অন্যদের বিরাট মূল্য দিতে হতে পারে। কোনো সিদ্ধান্তকে মূলতুবি রাখাই হয়তো এক সিদ্ধান্তে পরিণত হতে পারে আর সেটা সম্ভবত এক মূর্খ সিদ্ধান্ত হবে।

পরামর্শ গ্রহণ করুন

যেহেতু দুটো পরিস্থিতি কখনোই পুরোপুরি একরকম হয় না, তাই দুজন ব্যক্তি একইরকম সমস্যার মুখোমুখি হলেও সবসময় অভিন্ন সিদ্ধান্ত না-ও নিতে পারে। তবুও, আমাদের মতো একই ব্যাপারগুলোতে অন্যেরা কীভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা শোনা সাহায্যকারী হবে। তাদের জিজ্ঞেস করুন যে, এখন তারা তাদের সিদ্ধান্তকে কীভাবে মূল্যায়ন করে। উদাহরণ হিসেবে, কোনো ব্যাবসা বেছে নেওয়ার সময়, ইতিমধ্যেই এই ব্যাবসা করছে এমন ব্যক্তিদের এই কাজের ভাল-মন্দ দুদিক সম্বন্ধে বলতে বলুন। তারা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কোন উপকারগুলো পেয়েছে বলে মনে করে এবং কোন অসুবিধা বা সম্ভাব্য বিপদগুলো রয়েছে?

“মন্ত্রণার অভাবে সঙ্কল্প সকল ব্যর্থ হয়,” আমাদের সাবধান করা হয়েছে, “কিন্তু মন্ত্রিরাহুল্যে সে সকল সুস্থির হয়।” (হিতোপদেশ ১৫:২২) অবশ্যই, অন্যদের কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়ার এবং অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে শেখার সময় আমাদের উচিত তা করার সময় পূর্ণরূপে উপলব্ধি করা যে, শেষ সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগতভাবে আমাদেরই নিতে হবে এবং সেটার নেওয়ার দায়িত্ব বহন করতে হবে।—গালাতীয় ৬:৪, ৫.

উত্তমরূপে প্রশিক্ষিত বিবেকের কথা শুনুন

বিবেক আমাদের সেই মৌলিক নীতিগুলোর সঙ্গে মিল রেখে সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করে, যেগুলোকে মেনে চলে আমরা জীবনযাপন করতে চাই। একজন খ্রিস্টানের জন্য এর অর্থ হল, ঈশ্বরের চিন্তাধারাকে প্রতিফলিত করার মতো বিবেককে প্রশিক্ষিত করা। (রোমীয় ২:১৪, ১৫) ঈশ্বরের বাক্য আমাদের বলে: “তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।” (হিতোপদেশ ৩:৬) অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে, উত্তমরূপে প্রশিক্ষিত বিবেক রয়েছে এমন দুজন ব্যক্তি হয়তো ভিন্ন উপসংহারে পৌঁছাতে পারে আর তাই ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

কিন্তু, উত্তমরূপে প্রশিক্ষিত এক বিবেক এই ধরনের স্বাধীন পদক্ষেপ নেওয়াকে বাদ দেবে, যখন সেই পদক্ষেপগুলো সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যেগুলোকে ঈশ্বরের বাক্যে সরাসরি নিন্দা করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেলের নীতিগুলোর দ্বারা প্রশিক্ষিত হয়নি এমন এক বিবেক হয়তো একজন পুরুষ ও নারীকে বিয়ের আগেই একসঙ্গে থেকে একে অপরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে কি না, তা দেখতে অনুমতি দিতে পারে। এই যুক্তি দেখিয়ে তারা হয়তো মনে করতে পারে, তারা এক বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারণ এটা তাদের তাড়াহুড়ো করে অবিবেচকের মতো বিয়ে করা থেকে বিরত করবে। তাদের বিবেক হয়তো দংশন করবে না। কিন্তু, যৌনতা ও বিবাহ সম্বন্ধে যে-ব্যক্তি ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত হন, তিনি এই ধরনের এক ক্ষণস্থায়ী ও অনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবেন।—১ করিন্থীয় ৬:১৮; ৭:১, ২; ইব্রীয় ১৩:৪.

আপনার সিদ্ধান্তগুলো যেভাবে অন্যদের প্রভাবিত করে

প্রায়ই আপনার সিদ্ধান্তগুলো হয়তো অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে। তাই, কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে এক মূর্খ—এমনকি কাণ্ডজ্ঞানহীন—সিদ্ধান্ত নেবেন না, যা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন বা সর্বোপরি ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার মূল্যবান সম্পর্ককে বিপদে ফেলতে পারে। হিতোপদেশ ১০:১ পদ বলে: “জ্ঞানবান পুত্ত্র পিতার আনন্দজনক, কিন্তু হীনবুদ্ধি পুত্ত্র মাতার খেদজনক।”

অন্যদিকে, মনে রাখবেন যে মাঝে মাঝে বন্ধুত্বের মধ্যেও বাছাই করার দরকার হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো পূর্বে বিশ্বাস করা ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিগুলো প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যেগুলো সম্বন্ধে এখন আপনি জানেন যে এগুলো শাস্ত্রের বিপরীত। অথবা আপনি হয়তো এখন যে-ঐশিক নির্দেশাবলি গ্রহণ করেছেন, সেই অনুযায়ী আপনার জীবন পরিচালিত করতে চান বলে নিজের ব্যক্তিত্বে বিরাট পরিবর্তনগুলো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপনার সিদ্ধান্ত হয়তো কিছু বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনকে খুশি করবে না কিন্তু যেকোনো সিদ্ধান্ত যা ঈশ্বরকে খুশি করে, সেটাই হল বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত।

বিজ্ঞতার সঙ্গে সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটা নিন

সাধারণ লোকেদের অগোচরে প্রত্যেকেই আজকে জীবন-মৃত্যুর সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুখোমুখি হয়ে থাকে। সা.কা.পূ. ১৪৭৩ সালে ইস্রায়েলীয়রা একইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল, যখন তারা প্রতিজ্ঞাত দেশের সীমান্তে শিবির স্থাপন করেছিল। ঈশ্বরের মুখপাত্র হিসেবে মোশি তাদের বলেছিলেন: “আমি তোমার সম্মুখে জীবন ও মৃত্যু, আশীর্ব্বাদ ও শাপ রাখিলাম। অতএব জীবন মনোনীত কর, যেন তুমি সবংশে বাঁচিতে পার; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম কর, তাঁহার রবে অবধান কর, ও তাঁহাতে আসক্ত হও; কেননা তিনিই তোমার জীবন ও তোমার দীর্ঘ পরমায়ুস্বরূপ; তাহা হইলে সদাপ্রভু তোমার পিতৃপুরুষদিগকে, অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবকে, যে দেশ দিতে দিব্য করিয়াছিলেন, সেই দেশে তুমি বাস করিতে পাইবে।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯, ২০.

বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী ও কালনিরূপণবিদ্যা দেখায় যে, আমরা ‘বিষম সময়ে’ বাস করছি এবং “এই সংসারের অভিনয় অতীত হইতেছে [“এই জগতের দৃশ্যপট পরিবর্তন হচ্ছে,” NW]।” (২ তীমথিয় ৩:১; ১ করিন্থীয় ৭:৩১) ভবিষ্যদ্বাণীকৃত পরিবর্তন দেউলিয়া মানব সমাজের ধ্বংসের চূড়ান্তে গিয়ে পৌঁছাবে, যে-জায়গায় ঈশ্বরের ধার্মিক নতুন জগৎ আসবে।

আমরা সেই নতুন জগতের দোরগোড়ায় রয়েছি। ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে আপনি কি পৃথিবীতে অনন্তজীবন উপভোগ করার জন্য প্রবেশ করবেন? অথবা শয়তানের ব্যবস্থাকে যখন পৃথিবী থেকে নির্মূল করা হবে, তখন আপনাকেও কি সরিয়ে ফেলা হবে? (গীতসংহিতা ৩৭:৯-১১; হিতোপদেশ ২:২১, ২২) এখন কোন পথ অনুসরণ করা উচিত সেই সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে আর তা সত্যিই এমন এক সিদ্ধান্ত, যা প্রকৃতই জীবন-মৃত্যুর এক বিষয়। আপনি কি সঠিক সিদ্ধান্ত অর্থাৎ বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্যকে স্বাগত জানাবেন?

জীবন অন্বেষণ করার সিদ্ধান্তের সঙ্গে প্রথমে ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কী চান, সেই বিষয়গুলো জড়িত। এই চাহিদাগুলো সঠিকভাবে জানাতে অধিকাংশ গির্জাই ব্যর্থ হয়েছে। তাদের নেতারা প্রায়ই লোকেদের মিথ্যা বিষয়গুলো বিশ্বাস করতে ও ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে এমন বিষয়গুলো করতে বিভ্রান্ত করেছে। তারা ঈশ্বরকে “আত্মায় ও সত্যে” উপাসনা করার ব্যাপারে এক ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে ব্যাখ্যা করতে উপেক্ষা করেছে। (যোহন ৪:২৪) সেইজন্য অধিকাংশ লোকই ঈশ্বরকে সঠিকভাবে উপাসনা করে না। কিন্তু লক্ষ করুন যিশু কী বলেছিলেন: “যে আমার সপক্ষ নয়, সে আমার বিপক্ষ; এবং যে আমার সহিত কুড়ায় না, সে ছড়াইয়া ফেলে।”—মথি ১২:৩০.

যিহোবার সাক্ষিরা ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে আরও উত্তম জ্ঞান অর্জন করার জন্য আনন্দের সঙ্গে লোকেদের সাহায্য করে। তারা লোকেদের সুবিধাজনক সময়ে ও জায়গায়, ব্যক্তিবিশেষ বা দলের সঙ্গে নিয়মিত বাইবেল আলোচনা করে থাকে। যারা এই ব্যবস্থা থেকে উপকার নিতে চায় তারা স্থানীয় সাক্ষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে অথবা প্রহরীদুর্গ পত্রিকার প্রকাশকদের লিখতে পারে।

অবশ্য ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কী চান, সেই সম্বন্ধে কারও কারও হয়তো ইতিমধ্যেই মৌলিক জ্ঞান রয়েছে। এমনকি তারা হয়তো বাইবেলের সত্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা সম্বন্ধে দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে পারে। তবুও, তাদের মধ্যে অনেকে ঈশ্বরের কাছে নিজেদের উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিরত রয়েছে। কেন? হয়তো অনেক কারণ থাকতে পারে।

এটা কি হতে পারে যে, তারা এটা করার গুরুত্ব সম্বন্ধে জানে না? যিশু স্পষ্টভাবে বলেছিলেন: “যাহারা আমাকে হে প্রভু, হে প্রভু বলে, তাহারা সকলেই যে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পাইবে, এমন নয়, কিন্তু যে ব্যক্তি আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে, সেই পাইবে।” (মথি ৭:২১) কেবল বাইবেলের জ্ঞানই যথেষ্ট নয়; কাজ করাও দরকার। প্রাথমিক খ্রিস্টীয় মণ্ডলী এই ক্ষেত্রে নমুনা স্থাপন করেছিল। আমরা প্রথম শতাব্দীতে তাদের কয়েক জনের সম্বন্ধে পড়ি: “ফিলিপ ঈশ্বরের রাজ্য ও যীশু খ্রীষ্টের নাম বিষয়ক সুসমাচার প্রচার করিলে তাহারা যখন তাঁহার কথায় বিশ্বাস করিল, তখন পুরুষ ও স্ত্রীলোকেরাও বাপ্তাইজিত হইতে লাগিল।” (প্রেরিত ২:৪১; ৮:১২) তাই, একজন ব্যক্তি যদি সর্বান্তঃকরণে ঈশ্বরের বাক্যকে গ্রহণ করে, এটি যা বলে তা বিশ্বাস করে এবং ঈশ্বরের মানগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করে, তা হলে কী তাকে তার উৎসর্গীকরণের প্রতীকস্বরূপ বাপ্তিস্ম নেওয়া থেকে বাধা দেয়? (প্রেরিত ৮:৩৪-৩৮) অবশ্য, ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য তাকে এই পদক্ষেপ স্বেচ্ছায় ও আনন্দের সঙ্গে নিতে হবে।—২ করিন্থীয় ৯:৭.

কেউ কেউ হয়তো মনে করতে পারে যে, ঈশ্বরের কাছে তাদের জীবন উৎসর্গীকৃত করার মতো যথেষ্ট জ্ঞান তাদের নেই। কিন্তু প্রত্যেকেই যখন জীবনে কোনো নতুন পথে চলতে শুরু করে, তখন তাদের সীমিত জ্ঞানই থাকে। কোন পেশাদার ব্যক্তি দাবি করতে পারবে যে, আজকে তিনি তার কাজ সম্বন্ধে যতটা জানেন, তার কেরিয়ারের শুরুতেও তিনি ততটাই জানতেন? ঈশ্বরকে সেবা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শুধুমাত্র বাইবেলের মৌলিক শিক্ষা ও নীতিগুলো সম্বন্ধে জ্ঞান এবং সেইসঙ্গে এর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার জন্য আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা থাকা দরকার।

কেউ কেউ কি এই ভয়ে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে যে, তারা হয়তো সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারবে না? মানুষের করা অনেক প্রতিশ্রুতির মধ্যেই ব্যর্থ হওয়ার যুক্তিসংগত আশঙ্কা রয়েছে। যে-ব্যক্তি বিয়ে করার ও পরিবার গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন, তিনি হয়তো কিছুটা অযোগ্য মনে করতে পারেন কিন্তু প্রতিশ্রুতি দেওয়া তাকে সেই ক্ষেত্রে তার যথাসাধ্য করার চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। একইভাবে, চালকের নতুন লাইসেন্স পাওয়া একজন যুবক ব্যক্তির মধ্যে হয়তো পথে দুর্ঘটনা ঘটানোর কিছুটা ভয় থাকতে পারে—বিশেষভাবে তিনি যদি জানেন, পরিসংখ্যান দেখায় যে, বয়স্ক চালকদের চেয়ে যুবক চালকরা তুলনামূলকভাবে বেশি দুর্ঘটনা ঘটায়। তবে এই জ্ঞান উপকারজনক হতে পারে, তাকে আরও বেশি সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। একটা লাইসেন্স নেওয়া থেকে বিরত থাকা কোনোভাবেই সমাধান নয়!

জীবনের জন্য সিদ্ধান্ত নিন!

বাইবেল দেখায় যে, পৃথিবীর বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থা এবং যারা এগুলোকে সমর্থন করে, তারা শীঘ্রই পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়ে যাবে। কিন্তু, যে-ব্যক্তিরা বিজ্ঞতার সঙ্গে জীবনের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করে, তারা জীবিত থাকবে। নতুন জগৎ সমাজের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে, তারা ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য অনুযায়ী পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করায় অংশ নেবে। ঈশ্বরের নির্দেশনাধীনে আপনি কি এই আনন্দদায়ক কাজে অংশ নেওয়া উপভোগ করবেন?

যদি তা-ই হয়, তা হলে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নিন। ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য ঐশিক চাহিদাগুলো জানার সিদ্ধান্ত নিন। সেগুলো পূরণ করার সিদ্ধান্ত নিন। সর্বোপরি, শেষ পর্যন্ত আপনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলার সিদ্ধান্ত নিন। সংক্ষেপে বললে, জীবনের জন্য সিদ্ধান্ত নিন!

[৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

গম্ভীর সিদ্ধান্তগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সময় নিন

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

কোনো কেরিয়ার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে পরামর্শ গ্রহণ করুন

[৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যারা এখন ঈশ্বরকে সেবা করার সিদ্ধান্ত নেয়, তারা পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করায় অংশ নেবে