সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার জ্ঞানে ইন্দ্রিয়দমন জোগান

আপনার জ্ঞানে ইন্দ্রিয়দমন জোগান

আপনার জ্ঞানে ইন্দ্রিয়দমন জোগান

“তোমরা . . . জ্ঞানে জিতেন্দ্রিয়তা . . . যোগাও।”—২ পিতর ১:৫-৮.

১. মানুষের অনেক সমস্যার কারণ কোন অক্ষমতা?

 মাদকবিরোধী এক বড় অভিযানে, যুক্তরাষ্ট্রের যুবক-যুবতীদের উপদেশ দেওয়া হয়েছিল: “কেবল বল, না।” প্রত্যেকে যদি কেবল মাদকদ্রব্যের ক্ষেত্রেই নয় কিন্তু অতিরিক্ত মদ্যপান, অবিবেচনাপূর্ণ বা অনৈতিক জীবনধারা, অসৎ ব্যাবসা এবং ‘মাংসের অভিলাষের’ ক্ষেত্রে না বলত, তা হলে পরিস্থিতি আরও কতই না ভাল হতো! (রোমীয় ১৩:১৪) কিন্তু, কে জোরগলায় বলবে যে, না বলা সবসময় সহজ?

২. (ক) বাইবেলের কোন উদাহরণগুলো দেখায়, না বলা যে কঠিন তা নতুন কিছু নয়? (খ) এই উদাহরণগুলোর আমাদের কী করতে উৎসাহিত করা উচিত?

যেহেতু সমস্ত অসিদ্ধ মানুষের পক্ষে ইন্দ্রিয়দমন অনুশীলন করা কঠিন, তাই আমাদের এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী হওয়া উচিত যে, ব্যক্তিগতভাবে আমরা যেসমস্ত লড়াইয়ের মুখোমুখি হই, সেগুলোতে কীভাবে জয়ী হতে পারি। বাইবেল আমাদের অতীতের লোকেদের বিষয়ে বলে, যারা ঈশ্বরের সেবা করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিল কিন্তু মাঝে মাঝে শুধুমাত্র না বলা, তাদের জন্য কঠিন ছিল। দায়ূদ এবং বৎশেবার সঙ্গে তার ব্যভিচারের পাপ সম্বন্ধে মনে করে দেখুন। এটা ব্যভিচারের কারণে জন্মানো সন্তান ও বৎশেবার স্বামীর মৃত্যু ঘটিয়েছিল, যারা দুজনেই ছিল নির্দোষ। (২ শমূয়েল ১১:১-২৭; ১২:১৫-১৮) অথবা প্রেরিত পৌলের কথা চিন্তা করুন, যিনি খোলাখুলিভাবে স্বীকার করেছিলেন: “কেননা আমি যাহা ইচ্ছা করি, সেই উত্তম ক্রিয়া করি না; কিন্তু মন্দ, যাহা ইচ্ছা করি না, কাজে তাহাই করি।” (রোমীয় ৭:১৯) আপনিও কি মাঝে মাঝে একইরকম নিরাশ বোধ করেন? পৌল আরও বলেছিলেন: “বস্তুতঃ আন্তরিক মানুষের ভাব অনুসারে আমি ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আমোদ করি। কিন্তু আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অন্য প্রকার এক ব্যবস্থা দেখিতে পাইতেছি; তাহা আমার মনের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, এবং পাপের যে ব্যবস্থা আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আছে, আমাকে তাহার বন্দি দাস করে। দুর্ভাগ্য মনুষ্য আমি! এই মৃত্যুর দেহ হইতে কে আমাকে নিস্তার করিবে?” (রোমীয় ৭:২২-২৪) বাইবেলের উদাহরণগুলোর আমাদের এই সংকল্পকে আরও দৃঢ় করা উচিত যে, আরও বেশি ইন্দ্রিয়দমন অর্জন করার জন্য আমাদের লড়াইয়ে আমরা কখনও হাল ছেড়ে দেব না।

ইন্দ্রিয়দমন, শেখার মতো এক বিষয়

৩. ব্যাখ্যা করুন, কেন আমরা আশা করতে পারি না যে ইন্দ্রিয়দমন প্রকাশ করা সহজ।

জিতেন্দ্রিয়তা বা ইন্দ্রিয়দমন, যেটার মধ্যে না বলার ক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত, তা ২ পিতর ১:৫-৭ পদে বিশ্বাস, সদ্‌গুণ, জ্ঞান, ধৈর্য, ভক্তি, ভ্রাতৃস্নেহ এবং প্রেমের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। এই অন্যান্য কাম্য গুণগুলোর একটাও সহজাত নয়। সেগুলোকে ক্রমান্বয়ে গড়ে তুলতে হবে। সেগুলোকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রকাশ করার জন্য সংকল্প ও প্রচেষ্টার দরকার। তাই বলে আমাদের কি আশা করা উচিত যে, ইন্দ্রিয়দমন কোনো সহজ বিষয়?

৪. কেন অনেকে মনে করে যে, ইন্দ্রিয়দমনের ব্যাপারে তাদের কোনো সমস্যা নেই কিন্তু এটা আসলে কীসের লক্ষণ?

এটা ঠিক যে, অনেকে হয়তো মনে করতে পারে ইন্দ্রিয়দমনের ব্যাপারে তাদের কোনো সমস্যা নেই। তারা তাদের ইচ্ছামতো জীবনযাপন করে, জেনেই হোক বা অজান্তেই হোক তাদের অসিদ্ধ মাংসের আদেশ মেনে জীবনযাপন করে এবং এর ফলে তাদের নিজেদের বা অন্যদের পরিণতি কী হবে, সেই বিষয়ে তাদের কোনো চিন্তাই নেই। (যিহূদা ১০) না বলার ক্ষমতা ও ইচ্ছুক মনোভাবের অভাব আগের চেয়ে এখন আরও বেশি করে দেখা যায়। এটা হল এক লক্ষণ যে, আমরা বাস্তবিকই “শেষ কালে” বাস করছি, যে-সম্বন্ধে পৌল বলেছিলেন, যখন তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “বিষম সময় উপস্থিত হইবে। কেননা মনুষ্যেরা আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, আত্মশ্লাঘী, অভিমানী, ধর্মনিন্দক, . . . অজিতেন্দ্রিয় . . . হইবে।”—২ তীমথিয় ৩:১-৩.

৫. ইন্দ্রিয়দমনের বিষয়ে যিহোবার সাক্ষিরা কেন আগ্রহী এবং কোন উপদেশ এখনও কার্যকর?

ইন্দ্রিয়দমনের প্রয়োজনীয়তা যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসে, সেই বিষয়ে যিহোবার সাক্ষিরা ভালভাবে অবগত আছে। পৌলের মতো তারা ঈশ্বরের মানগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করার দ্বারা ঈশ্বরকে খুশি করার আকাঙ্ক্ষা এবং তাদের অসিদ্ধ মাংস যে-পথ অনুসরণ করতে বলে, সেটার মধ্যে যে এক লড়াই হচ্ছে তা জানে। এই কারণে তারা এই কঠিন লড়াইয়ে কীভাবে জয়ী হওয়া যায়, সেই সম্বন্ধে অনেক দিন ধরে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিগত ১৯১৬ সালে, এখন আপনি যে-পত্রিকাটা পড়ছেন সেটার প্রথমদিকের একটা সংখ্যা “আমাদের নিজেদের, আমাদের চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে সঠিক পথ অবলম্বন করার” বিষয়ে বলেছিল। এটা ফিলিপীয় ৪:৮ পদের কথা মনে রাখার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছিল। সেই শাস্ত্রপদে যে-ঐশিক উপদেশ রয়েছে তা এখনও কার্যকর, যদিও তা মূলত প্রায় ২,০০০ বছর আগে দেওয়া হয়েছিল আর খুব সম্ভবত এটা পালন করা তখনকার বা ১৯১৬ সালের চেয়ে এখন আরও বেশি কঠিন। তা সত্ত্বেও, খ্রিস্টানরা জাগতিক আকাঙ্ক্ষাগুলোকে না বলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে, এই বিষয়টা জেনে যে তা করার দ্বারা তারা তাদের সৃষ্টিকর্তাকে হ্যাঁ বলছে।

৬. ইন্দ্রিয়দমন ক্রমান্বয়ে গড়ে তোলার সময় কেন আমাদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই?

গালাতীয় ৫:২২, ২৩ পদে ইন্দ্রিয়দমনকে ‘[পবিত্র] আত্মার ফলের’ অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা যদি ‘প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, [এবং] মৃদুতার’ সঙ্গে এই গুণটাও প্রদর্শন করি, তা হলে আমরা প্রচুররূপে উপকৃত হব। পিতর যেমন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, তা করা আমাদের ঈশ্বরের সেবায় ‘অলস কি ফলহীন থাকা’ থেকে বিরত করবে। (২ পিতর ১:৮) কিন্তু, আমাদের হতাশ হওয়া বা নিজেদের তিরস্কার করা উচিত নয়, যদি আমরা এই বিশেষ গুণগুলো যতটা দ্রুত ও পূর্ণরূপে প্রকাশ করতে চাই, ততটা করতে না পারি। আপনি হয়তো লক্ষ করেছেন যে, স্কুলে একজন ছাত্র কোনো বিষয় অন্যের চেয়ে দ্রুত শিখে ফেলে। অথবা কর্মক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি একটা নতুন কাজ অন্য সহকর্মীদের চেয়ে আরও তাড়াতাড়ি শিখে ফেলেন। একইভাবে, কেউ কেউ খ্রিস্টীয় গুণগুলো অন্যদের চেয়ে তাড়াতাড়ি প্রকাশ করতে শেখে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, যথাসম্ভব সর্বোত্তম উপায়ে ঈশ্বরীয় গুণগুলো ক্রমান্বয়ে গড়ে তুলে চলা। আর আমরা তা করতে পারি যিহোবা তাঁর বাক্য ও মণ্ডলীর মাধ্যমে যে-সাহায্য জুগিয়েছেন, সেগুলোর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে। উন্নতি করে চলার জন্য সংকল্পবদ্ধ প্রচেষ্টার চেয়ে দ্রুত আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানো কম গুরুত্বপূর্ণ।

৭. কী দেখায় যে ইন্দ্রিয়দমন গুরুত্বপূর্ণ?

আত্মার দ্বারা উৎপন্ন গুণগুলোর তালিকায় একেবারে শেষে থাকা সত্ত্বেও, ইন্দ্রিয়দমন কোনোভাবেই অন্যগুলোর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং এর উলটো। আমাদের মনে রাখা উচিত যে আমাদের যদি নিখুঁত ইন্দ্রিয়দমন থাকে, তা হলে সমস্ত “মাংসের কার্য্য” এড়ানো যেতে পারে। কিন্তু, অসিদ্ধ মানুষদের কোনো কোনো “মাংসের কার্য্য” যেমন, ‘বেশ্যাগমন, অশুচিতা, স্বৈরিতা, প্রতিমাপূজা, কুহক, নানা প্রকার শত্রুতা, বিবাদ, ঈর্ষা, রাগ, প্রতিযোগিতা, দলভেদ, মাৎসর্য্যের’ কাছে নতি স্বীকার করার প্রবণতা রয়েছে। (গালাতীয় ৫:১৯-২১) তাই, আমাদের ক্রমাগত লড়াই করতে হবে, হৃদয় ও মন দুটো থেকে নেতিবাচক প্রবণতাগুলো উপড়ে ফেলার জন্য সংকল্পবদ্ধ হতে হবে।

কারও কারও আরও বেশি লড়াই করতে হয়

৮. কোন বিষয়গুলো ইন্দ্রিয়দমন অনুশীলন করাকে কারও কারও জন্য বিশেষভাবে কঠিন করে তোলে?

কিছু খ্রিস্টানের পক্ষে ইন্দ্রিয়দমন অনুশীলন করা অন্যদের চেয়ে আরও বেশি কঠিন হয়। কেন? বাবামার প্রশিক্ষণ বা অতীতের অভিজ্ঞতাগুলো হয়তো এই ক্ষেত্রে কারণ হতে পারে। যদি ইন্দ্রিয়দমন ক্রমান্বয়ে গড়ে তোলা ও প্রদর্শন করা আমাদের জন্য তেমন কোনো সমস্যা মনে না হয়, তা হলে সেটা আমাদের জন্য আনন্দের এক বিষয়। কিন্তু যাদের পক্ষে এটা অনুশীলন করা কঠিন হয়, সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে উঠাবসা ও কথাবার্তা বলার সময় আমাদের সমবেদনাশীল ও বোধগম্য হওয়া উচিত, এমনকি যদি তাদের ইন্দ্রিয়দমনের অভাবের কারণে আমাদের কিছু ব্যক্তিগত অসুবিধা হয় তবুও। আমাদের নিজেদের অসিদ্ধতার কথা বিবেচনা করে, আমাদের মধ্যে কারই বা আত্মধার্মিক মনোভাব দেখানোর যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে?—রোমীয় ৩:২৩; ইফিষীয় ৪:২.

৯. কারও কারও কোন দুর্বলতাগুলো রয়েছে এবং কখন এই দুর্বলতাগুলো পুরোপুরিভাবে নির্মূল হয়ে যাবে?

উদাহরণস্বরূপ: আমরা হয়তো জানি যে, কিছু সহখ্রিস্টান যারা তামাক বা অন্যান্য “উত্তেজক মাদকদ্রব্য” গ্রহণ করা পরিত্যাগ করেছে, তাদের হয়তো মাঝে মাঝে সেগুলোর জন্য এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা আসতে পারে। অথবা কেউ কেউ তাদের খাবার বা মদ্যজাতীয় পানীয় গ্রহণে সীমা বজায় রাখাকে কঠিন বলে মনে করতে পারে। অন্যদের হয়তো তাদের জিহ্বাকে দমন করায় সমস্যা হতে পারে, তাই তারা প্রায়ই বাক্যে উছোট খায়। এই ধরনের অসম্পূর্ণতাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য ইন্দ্রিয়দমন ক্রমান্বয়ে গড়ে তুলতে অধ্যবসায়ী প্রচেষ্টার প্রয়োজন। কেন? যাকোব ৩:২ পদ বাস্তবসম্মতভাবে স্বীকার করে: “আমরা সকলে অনেক প্রকারে উছোট খাই। যদি কেহ বাক্যে উছোট না খায়, তবে সে সিদ্ধ পুরুষ, সমস্ত শরীরকেই বল্‌গা দ্বারা বশে রাখিতে সমর্থ।” আবার অন্যেরা জুয়াখেলার প্রতি এক প্রবল আসক্তি বোধ করতে পারে। অথবা তারা হয়তো তাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখাকে কঠিন বলে মনে করতে পারে। এগুলো বা এইরকম অন্যান্য দুর্বলতাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে শেখার জন্য হয়তো সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। যদিও আমরা এখন লক্ষণীয় উন্নতিগুলো করতে পারি কিন্তু অন্যায় আকাঙ্ক্ষাগুলো একমাত্র তখনই স্থায়ীভাবে নির্মূল হয়ে যাবে, যখন আমরা সিদ্ধতায় পৌঁছাবো। এই সময়ের মধ্যে, ইন্দ্রিয়দমন অনুশীলন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা আমাদের জীবনের পাপপূর্ণ ধারায় পুনরায় পতিত হওয়া এড়াতে সাহায্য করবে। এই লড়াই চলতে থাকার সময়, আসুন আমরা হাল ছেড়ে না দেওয়ার জন্য একে অন্যকে সাহায্য করি।—প্রেরিত ১৪:২১, ২২.

১০. (ক) কেন যৌন বিষয়গুলোতে ইন্দ্রিয়দমন অনুশীলন করা কারও কারও জন্য বিশেষভাবে কঠিন? (খ) একজন ভাই কোন বড় পরিবর্তন করেছিলেন? (১৬ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন।)

১০ আরেকটা ক্ষেত্র যেখানে ইন্দ্রিয়দমন অনুশীলন করা কঠিন, তা হল যৌনতা। মানব যৌনতা, যিহোবা আমাদের যেভাবে সৃষ্টি করেছেন, সেটারই এক অংশ। কিন্তু, কারও কারও জন্য ঈশ্বরের মানগুলোর সঙ্গে মিল রেখে যৌন বিষয়কে সঠিক স্থানে রাখা বিশেষভাবে কঠিন। তাদের সমস্যা হয়তো আরও চরমে পৌঁছায় কারণ তাদের যৌনবাসনা অত্যন্ত প্রবল। আমরা এক যৌনউন্মাদনাপূর্ণ জগতে বাস করি, যা নানাভাবে কামনাকে উদ্দীপিত করে তোলে। এটা সেই খ্রিস্টানদের জন্য বেশ বড় এক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যারা অন্তত কিছু সময়ের জন্য অবিবাহিত থাকতে চায়, যাতে বিবাহের বিক্ষেপগুলো থেকে মুক্ত থেকে ঈশ্বরকে সেবা করতে পারে। (১ করিন্থীয় ৭:৩২, ৩৩, ৩৭, ৩৮) কিন্তু “আগুণে জ্বলা অপেক্ষা বরং বিবাহ করা ভাল,” শাস্ত্রীয় এই আদেশের সঙ্গে মিল রেখে তারা হয়তো বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা অবশ্যই সম্মানীয়। একই সময়ে তারা শাস্ত্রের পরামর্শ অনুযায়ী “কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়। (১ করিন্থীয় ৭:৯, ৩৯) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবার ধার্মিক নীতিগুলোকে সমর্থন করার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ দেখে যিহোবা আনন্দিত হন। তাদের সহখ্রিস্টানরা এই ধরনের উচ্চ নৈতিক মান ও নীতিনিষ্ঠা রক্ষাকারী সত্য উপাসকদের সঙ্গে মেলামেশা করাকে আনন্দের বিষয় হিসেবে গণ্য করে।

১১. কীভাবে আমরা এমন একজন ভাই বা বোনকে সাহায্য করতে পারি, যিনি বিয়ে করতে চান কিন্তু তার সেই সুযোগ হয়নি?

১১ যদি কোনো উপযুক্ত সাথি পাওয়া না যায়, তা হলে কী? সেই ব্যক্তির হতাশার কথা কল্পনা করুন, যিনি বিয়ে করতে চান অথচ করতে পারছেন না! তিনি হয়তো তার বন্ধুবান্ধবদের বিয়ে করতে এবং কিছুটা সুখী হতে দেখেন কিন্তু তিনি তখনও উপযুক্ত কোনো সাথি খুঁজছেন। সেই পরিস্থিতিতে কিছু ব্যক্তিদের জন্য হস্তমৈথুনের খারাপ অভ্যাস হয়তো এক চলমান সমস্যা হতে পারে। যাইহোক না কেন, কোনো খ্রিস্টানই নিজের অজান্তে অন্য আরেক জনকে কষ্ট দিতে চান না, যিনি বিশুদ্ধ থাকার জন্য লড়াই করছেন। আমরা হয়তো নিজের অজান্তেই অন্যদের নিরুৎসাহিত করতে পারি, যদি আমরা এইরকম অবিবেচনাপূর্ণ মন্তব্য করি যেমন, “আপনি আর কবে বিয়ে করবেন?” হয়তো কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এই কথা বলা হয়নি কিন্তু আমাদের জিহ্বাকে দমন করার ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়দমন প্রকাশ করা আমাদের জন্য আরও কতই না ভাল হবে! (গীতসংহিতা ৩৯:১) আমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত অবস্থায় বিশুদ্ধ থাকছে, তারা আমাদের উষ্ণ প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। নিরুৎসাহজনক কিছু বলার পরিবর্তে, আমরা উৎসাহজনক হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, কিছু পরিপক্ব ব্যক্তিরা যখন খাওয়াদাওয়া বা গঠনমূলক খ্রিস্টীয় মেলামেশার জন্য একত্র হয়, তখন আমরা অবিবাহিত ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য বিশেষ চেষ্টা করতে পারি।

বিবাহে ইন্দ্রিয়দমন

১২. এমনকি যারা বিবাহিত তাদেরও কেন ইন্দ্রিয়দমনের প্রয়োজন হতে পারে?

১২ বিয়ে করা যৌন বিষয়গুলোতে ইন্দ্রিয়দমনের প্রয়োজনকে দূর করে দেয় না। উদাহরণস্বরূপ, স্বামী ও স্ত্রীর যৌন চাহিদার মধ্যে হয়তো বিরাট পার্থক্য থাকতে পারে। অথবা একজন সাথির শারীরিক অবস্থা হয়তো কখনও কখনও স্বাভাবিক যৌনসম্পর্ক করাকে কঠিন বা এমনকি অসম্ভব করে তুলতে পারে। হতে পারে অতীত কোনো অভিজ্ঞতার কারণে একজন সাথি হয়তো এই আদেশের বাধ্য হওয়াকে কঠিন বলে মনে করতে পারেন: “স্বামী স্ত্রীকে তাহার প্রাপ্য দিউক; আর তদ্রূপ স্ত্রীও স্বামীকে দিউক।” এই ধরনের এক পরিস্থিতিতে, অন্য সাথির হয়তো কিছুটা অতিরিক্ত ইন্দ্রিয়দমন অনুশীলন করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে দুজনেই বিবাহিত খ্রিস্টানদের প্রতি দেওয়া পৌলের এই প্রেমময় উপদেশ মনে রাখতে পারে: “তোমরা এক জন অন্যকে বঞ্চিত করিও না; কেবল প্রার্থনার নিমিত্তে অবকাশ পাইবার জন্য উভয়ে একপরামর্শ হইয়া কিছু কাল পৃথক্‌ থাকিতে পার; পরে পুনর্ব্বার একত্র হইবে, যেন শয়তান তোমাদের অসংযমতা প্রযুক্ত তোমাদিগকে পরীক্ষায় না ফেলে।”—১ করিন্থীয় ৭:৩, ৫.

১৩. সেই ব্যক্তিদের জন্য আমরা কী করতে পারি, যারা ইন্দ্রিয়দমন অনুশীলন করার জন্য লড়াই করছে?

১৩ বিবাহিত দম্পতিরা কত কৃতজ্ঞই না হতে পারে, যদি দুজনেই এই সবচেয়ে অন্তরঙ্গ সম্পর্কের ক্ষেত্রে সঠিক ইন্দ্রিয়দমন অনুশীলন করতে শিখে থাকে। একই সময়ে তাদের উচিত সেই সহউপাসকদের প্রতি বোধগম্যতা দেখানো, যারা এই ক্ষেত্রে তা প্রদর্শন করতে এখনও লড়াই করে চলেছে। আমাদের কখনও এই ব্যাপারে প্রার্থনা করতে ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, যিহোবা যেন আমাদের আত্মিক ভাইবোনদের অন্তর্দৃষ্টি, সাহস ও দৃঢ়সংকল্প দান করেন, যাতে তারা ইন্দ্রিয়দমন প্রদর্শন করার ব্যাপারে তাদের লড়াই চালিয়ে যেতে পারে এবং অসংগত আকাঙ্ক্ষাগুলো দমন করার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে।—ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.

একে অন্যকে সাহায্য করে চলুন

১৪. সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে কেন আমাদের সমবেদনা এবং বোধগম্যতার সঙ্গে আচরণ করা উচিত?

১৪ মাঝে মাঝে আমরা হয়তো দেখি যে, সেই সহখ্রিস্টানদের পরিস্থিতি বোঝা কঠিন, যারা হয়তো এমন এক ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়দমন প্রদর্শন করতে লড়াই করে চলেছে, যেখানে তা দেখানো আমাদের জন্য কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু প্রতিটা লোকের স্বভাব ভিন্ন। কেউ কেউ সহজেই আবেগের দ্বারা পরিচালিত হয়; অন্যেরা তা হয় না। কেউ কেউ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা তুলনামূলকভাবে সহজ বলে মনে করে, ইন্দ্রিয়দমন তেমন বড় কোনো সমস্যাই তৈরি করে না। অন্যদের আরও বড় বড় সমস্যা রয়েছে। কিন্তু, মনে রাখবেন যে, যে-ব্যক্তি লড়াই করছেন তিনি খারাপ ব্যক্তি নন। সহখ্রিস্টানদের আমাদের বোধগম্যতা ও সমবেদনার দরকার আছে। যারা ইন্দ্রিয়দমন প্রদর্শন করাকে বৃদ্ধি করার জন্য এখনও লড়াই করে চলেছে, তাদের প্রতি যখন আমরা ক্রমাগত করুণা দেখিয়ে যাই, তখন তাতে আমাদের নিজস্ব সুখও জড়িত থাকে। আমরা মথি ৫:৭ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলোতে তা দেখতে পাই।

১৫. কেন গীতসংহিতা ১৩০:৩ পদের কথাগুলো ইন্দ্রিয়দমনের ক্ষেত্রে সান্ত্বনাদায়ক?

১৫ একজন সহখ্রিস্টান যিনি হয়তো কিছু ক্ষেত্রে খ্রিস্টীয় ব্যক্তিত্ব প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তার সম্বন্ধে আমরা কখনোই ভুল ধারণা পোষণ করতে চাই না। এটা জানা কতই না উৎসাহজনক যে, আমরা যে-সময় ইন্দ্রিয়দমন প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছি সেটা দেখার পাশাপাশি আরও অনেকবার যে তা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হইনি সেটা যিহোবা দেখেন, এমনকি এগুলো সহখ্রিস্টানদের অলক্ষিত থেকে গেলেও। গীতসংহিতা ১৩০:৩ পদের কথাগুলো মনে রাখা অত্যন্ত সান্ত্বনাদায়ক: “হে সদাপ্রভু, তুমি যদি অপরাধ সকল ধর, তবে, হে প্রভু, কে দাঁড়াইতে পারিবে?”

১৬, ১৭. (ক) কীভাবে আমরা ইন্দ্রিয়দমনের ব্যাপারে গালাতীয় ৬:২, ৫ পদ প্রয়োগ করতে পারি? (খ) ইন্দ্রিয়দমন সম্বন্ধে পরে আমরা কী আলোচনা করব?

১৬ যিহোবার সন্তোষদায়ক হওয়ার জন্য আমাদের প্রত্যেককে অবশ্যই ক্রমান্বয়ে ইন্দ্রিয়দমন গড়ে তুলতে হবে আর আমরা এই ক্ষেত্রে আমাদের খ্রিস্টীয় ভাইদের সাহায্যের বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি। যদিও আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ ভার বহন করতে হবে তা সত্ত্বেও আমাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, দুর্বলতাগুলো মোকাবিলা করতে আমরা যেন একে অন্যকে সাহায্য করি। (গালাতীয় ৬:২, ৫) আমরা সেই বাবা অথবা মা, সাথি বা বন্ধুবান্ধবদের মূল্যবান গণ্য করতে পারি, যারা আমাদের সেই সমস্ত জায়গায় যাওয়া থেকে থামায়, যেখানে আমাদের যাওয়া উচিত নয়, সেই বিষয় দেখা থেকে বিরত করে, যা দেখা উচিত নয় এবং সেই কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা দেয়, যা আমাদের করা উচিত নয়। তারা আসলে আমাদের ইন্দ্রিয়দমন প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে অর্থাৎ না বলতে সাহায্য করছেন!

১৭ অনেক খ্রিস্টান হয়তো ইন্দ্রিয়দমন সম্বন্ধে আমরা এই পর্যন্ত যা কিছু আলোচনা করেছি, সেই বিষয়ের সঙ্গে একমত হতে পারে কিন্তু তারা হয়তো মনে করতে পারে যে, ব্যক্তিগতভাবে তাদের আরও অনেক উন্নতি করার প্রয়োজন রয়েছে। তারা হয়তো আরও পূর্ণরূপে ইন্দ্রিয়দমন প্রদর্শন করতে চায়, ততখানি পর্যন্ত যা অসিদ্ধ মানুষদের কাছ থেকে যুক্তিসংগতভাবে আশা করা যায়। আপনিও কি সেইরকম মনে করেন? তা হলে, ঈশ্বরের আত্মার ফলের এই বৈশিষ্ট্যটা ক্রমান্বয়ে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনি কী করতে পারেন? আর তা করা কীভাবে আপনাকে একজন খ্রিস্টান হিসেবে দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে? আসুন আমরা পরের প্রবন্ধে তা দেখি।

আপনার কি মনে আছে?

কেন ইন্দ্রিয়দমন. . .

• ক্রমান্বয়ে গড়ে তোলা খ্রিস্টানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

• কারও কারও জন্য বিশেষভাবে কঠিন?

• বিবাহে অপরিহার্য?

• এমন এক গুণ যা ক্রমান্বয়ে গড়ে তোলার জন্য আমরা একে অন্যকে সাহায্য করতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৬ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

তিনি না বলতে শিখেছিলেন

জার্মানিতে বসবাসকারী যিহোবার সাক্ষিদের একজন, টেকনিক্যাল কমিউনিকেশন ক্লার্ক হিসেবে কাজ করতেন। তার কাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল প্রায় ৩০টা বিভিন্ন টেলিভিশন ও রেডিওর কার্যক্রম দেখে ও শুনে, তা জানানো। মাঝখানে যখন বিঘ্ন সৃষ্টি হতো, তখন তাকে কার্যক্রমের প্রতি মনোযোগ দিতে হতো, যাতে সমস্যাটা স্পষ্টভাবে ধরতে পারেন। তিনি বলেন: “প্রায়ই খারাপ কিছু দেখানোর সময়ে বিঘ্ন ঘটত, ঠিক যখন দৌরাত্ম্য বা যৌনতার দৃশ্যগুলো হতো তখন। নোংরা দৃশ্যগুলো দিনের পর দিন, এমনকি সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে আমার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেত, যেন সেগুলো আমার মস্তিষ্কে একেবারে গেঁথে গিয়েছিল।” তিনি স্বীকার করেন যে, তার আধ্যাত্মিকতার ওপর এটা এক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল: “আমি অল্পতেই রেগে যেতাম, দৌরাত্ম্যমূলক সেই দৃশ্যগুলো আমার ইন্দ্রিয়দমন অনুশীলন করাকে কঠিন করে তুলেছিল। যৌন দৃশ্যগুলো আমার ও আমার স্ত্রীর মধ্যে স্নায়ুবিক চাপ সৃষ্টি করেছিল। আমাকে প্রতিদিন লড়াই করতে হতো। লড়াইয়ে যাতে পরাজিত না হই, সেইজন্য আমি আরেকটা নতুন চাকরি খোঁজার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এমনকি এর চেয়ে কম বেতনের হলেও। শীঘ্রই আমি আরেকটা চাকরি খুঁজে পাই। আমার ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছে।”

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

বাইবেল অধ্যয়নের ফলে অর্জিত জ্ঞান আমাদের ইন্দ্রিয়দমন অনুশীলন করতে সাহায্য করে