সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সুসমাচার ফল উৎপন্ন করে সাও থোমে ও প্রিন্সিপেতে

সুসমাচার ফল উৎপন্ন করে সাও থোমে ও প্রিন্সিপেতে

সুসমাচার ফল উৎপন্ন করে সাও থোমে ও প্রিন্সিপেতে

 অধিকাংশ লোকই হয়তো সাও থোমে ও প্রিন্সিপের কথা কখনও শোনেনি। এই দ্বীপগুলোর সম্বন্ধে সাধারণত অবকাশযাপনের ব্রোশারগুলোতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় না। বিশ্বের মানচিত্রে এগুলোকে একটা ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো দেখায়, যেগুলো আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে গিনি উপসাগরে অবস্থিত। সাও থোমে প্রায় বিষুবরেখার ওপর অবস্থিত এবং প্রিন্সিপে সাও থোমে থেকে একটু উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। বৃষ্টিবহুল, আর্দ্র জলবায়ু প্রচুর বৃষ্টিবহুল অরণ্য উৎপন্ন করেছে, যা পর্বতগুলোর ঢালকে আবৃত করেছে, যেগুলো ২,০০০ মিটারের চেয়েও উঁচু।

এই ক্রান্তীয় দ্বীপগুলো নীল জল ও তালজাতীয় গাছ দিয়ে ঘেরা আর এর অধিবাসীরা বন্ধুত্বপূর্ণ ও আন্তরিক, যাদের মধ্যে আফ্রিকা ও ইউরোপের পটভূমির লোকেরা থাকায় এক মনোরম সংমিশ্রিত সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে। ১,৭০,০০০ অধিবাসী প্রধান রপ্তানিদ্রব্য কাকাও বা কৃষিকর্ম ও মাছ ধরার ওপর জীবনধারণ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, এমনকি এক বেলার খাবার জোটানোই বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে।

কিন্তু, বিংশ শতাব্দীর শেষ দশক এমন এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার সাক্ষি হয়েছে, যা এই দ্বীপগুলোর বেশির ভাগ জনগণের জীবনকে প্রচুররূপে প্রভাবিত করেছে। ১৯৯৩ সালের জুন মাসে সাও থোমে ও প্রিন্সিপের যিহোবার সাক্ষিরা আইনগতভাবে নিবন্ধীকৃত হয়েছে আর এটা এই দ্বীপগুলোতে যিহোবার সাক্ষিদের ইতিহাসের এক দীর্ঘ ও কঠিন যুগের সমাপ্তি নিয়ে এসেছে।

কষ্টের মধ্যে বীজ বপন করা হয়েছে

এটা জানা গেছে যে, এই দেশে প্রথম সাক্ষি এসেছিলেন ১৯৫০ এর দশকের শুরুর দিকে, যখন আফ্রিকায় অন্যান্য পর্তুগিজ উপনিবেশ থেকে বন্দিদের শ্রম শিবিরগুলোতে কাজ করার জন্য বিভিন্ন দ্বীপে পাঠানো হয়েছিল। আফ্রিকার একজন সাক্ষি, যিনি একজন অগ্রগামী বা পূর্ণ-সময়ের পরিচারক ছিলেন, তাকে মোজাম্বিক থেকে এই দ্বীপে নির্বাসিত করা হয়েছিল কারণ তিনি সেই দেশে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করেছিলেন। একাকী এই সাক্ষি প্রচার কাজে ব্যস্ত ছিলেন আর ছয় মাসের মধ্যে তার সঙ্গে আরও ১৩ জন সুসমাচার ছড়ানোর কাজে যোগ দিয়েছিল। পরে একই পরিস্থিতির কারণে অ্যাংগোলা থেকে অন্যান্য সাক্ষিরা এসেছিল। তাদের কারাবরণের সময় তারা স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে সুসমাচার জানানোর প্রতিটা সুযোগ কাজে লাগিয়েছিল।

যে-ভাইয়েরা সাও থোমের শ্রম শিবিরগুলোতে ছিল তারা সকলে ১৯৬৬ সালের মধ্যে আফ্রিকার মূল ভূখণ্ডে চলে এসেছিল। রাজ্য প্রকাশকদের যে-ছোট্ট দল সেখানে ছিল, তারা সাহসের সঙ্গে সেই কাজ চালিয়ে গিয়েছিল। তারা বাইবেল অধ্যয়নের জন্য মিলিত হতো বলে তাদের তাড়না, প্রহার এবং জেলে বন্দি করা হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে দেখা করার বা উৎসাহ দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। সেই দেশ ১৯৭৫ সালে পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এবং ধীরে ধীরে ও ধাপে ধাপে রাজ্যের সত্যের বীজ ফল উৎপন্ন করতে শুরু করে।

সম্প্রসারণ ও নির্মাণ

১৯৯৩ সালের যে-মাসে আইনগত নিবন্ধীকরণ হয়েছিল, সেই মাসেই সেখানে প্রকাশকদের শীর্ষ সংখ্যা ছিল ১০০ জন। সেই বছরই পর্তুগাল থেকে বিশেষ অগ্রগামীরা এসেছিল। মিশ্র পর্তুগিজ ভাষা শেখার জন্য তারা যে-প্রচেষ্টা করেছে, তা তাদেরকে স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে প্রিয় করে তুলেছিল। এরপর কিংডম হলের জন্য জমি খোঁজা অগ্রাধিকার পেয়েছিল। এই প্রয়োজনের কথা শোনার পর মারিয়া নামে একজন বোন তার জমির অর্ধেকটা দান করেছিলেন, যেখানে তার একটা ছোট্ট বাড়ি ছিল। একটা বিরাট কিংডম হল বানানোর জন্য সেই জমিটা যথেষ্ট বড় ছিল। মারিয়া জানতেন না যে, এই সম্পত্তির ওপর উচ্চাকাঙ্ক্ষী নির্মাণকারীদের নজর পড়েছিল কারণ তার জীবিত কোনো আত্মীয়স্বজন ছিল না। একদিন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মারিয়ার সঙ্গে কথা বলার জন্য এসেছিলেন।

“আপনার সম্বন্ধে আমি যা শুনেছি, তা কিন্তু আপনার জন্য ভাল হবে না!” তিনি তাকে হুমকি দিয়েছিলেন। “আমি শুনেছি যে, আপনি আপনার জমি দান করে দিয়েছেন। আপনি কি জানেন না যে, এই জমির অনেক মূল্য রয়েছে কারণ এটা শহরের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত?”

“আমি যদি আপনার কাছে এই জমিটা বিক্রি করতাম, তা হলে আপনি আমাকে এর কত দাম দিতেন? মারিয়া জিজ্ঞেস করেছিলেন। সেই ব্যক্তি কোনো উত্তর না দেওয়ায় মারিয়া বলে চলেন: “আপনি যদি পৃথিবীর সমস্ত ধনও আমাকে দেন, তবুও তা যথেষ্ট হবে না কারণ টাকাপয়সা জীবন কিনতে পারে না।”

“আপনার তো কোনো সন্তান নেই, তাই না?” সেই ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেছিলেন।

আলোচনা সেখানেই শেষ করে দেওয়ার জন্য মারিয়া বলেছিলেন: “এই জমি যিহোবার। তিনি আমাকে অনেক বছরের জন্য ধার দিয়েছিলেন এবং এখন আমি তাঁর জিনিস তাঁকেই ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমি চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য সানন্দে প্রতীক্ষা করে আছি।” এরপর তিনি সেই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আপনার কাছে দেওয়ার জন্য তো অনন্তজীবন নেই, আছে কি?” আর একটা কথাও না বলে সেই ব্যক্তি ঘুরে দাঁড়ান ও চলে যান।

ফলস্বরূপ, পর্তুগাল থেকে আসা যোগ্য ভাইদের সাহায্যে একটা আকর্ষণীয় বড় দোতলা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছিল। এই বাড়িটায় ভূগর্ভস্থ অংশ রয়েছে, একটা বিশাল কিংডম হল এবং থাকার জায়গা রয়েছে। এ ছাড়া প্রাচীন, পরিচারক দাস ও অগ্রগামীদের স্কুল করার জন্যও ক্লাসরুম রয়েছে। এখানে দুটো মণ্ডলী এখন সভা করে আর এটা রাজধানীতে বিশুদ্ধ উপাসনার জন্য এক উত্তম শিক্ষা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

মিসশিতে ৬০ জন উদ্যোগী প্রকাশকের একটা মণ্ডলী ছিল। যেহেতু সভাগুলো কলা বাগানের মধ্যে অবস্থিত একটা অস্থায়ী কিংডম হলে হতো, তাই একটা উপযুক্ত কিংডম হলের প্রয়োজন বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। এই বিষয়টা সরকারি নগরভবনে জানানো হয়েছিল এবং সহানুভূতিশীল কর্মকর্তারা প্রধান সড়কের পাশে একটা ভাল জমির প্রস্তাব দিয়েছিল। পর্তুগালের ভাইদের সাহায্যে, দ্রুত নির্মাণ পদ্ধতি ব্যবহার করে দুমাসের মধ্যেই একটা সুন্দর কিংডম হল বানানো হয়েছিল। স্থানীয় লোকেরা তাদের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারেনি। শহরের একটা নির্মাণ প্রকল্পে জড়িত সুইডেনের একজন প্রকৌশলী ভাইবোনদের কাজ করতে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। “অবিশ্বাস্য!” তিনি মন্তব্য করেছিলেন। “এখানে এই মিসশিতে যিহোবার সাক্ষিরা এক দ্রুত নির্মাণ পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছে! আমাদের প্রকল্পকেও এভাবেই সংগঠিত করা উচিত।” ১৯৯৯ সালের ১২ই জুন ২৩২ জনের উপস্থিতিতে কিংডম হলটা উৎসর্গ করা হয়েছিল। মিসশি শহরে হলটা পর্যটকদের জন্য একটা প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।

এক ঐতিহাসিক সম্মেলন

সাও থোমে ও প্রিন্সিপেতে যিহোবার সাক্ষিদের জন্য এক ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী “ঐশিক শিক্ষা” জেলা সম্মেলন—এই দ্বীপগুলোতে এটাই প্রথম। এটা অনুষ্ঠিত হয়েছিল দেশের সবচেয়ে সুন্দর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিলনায়তনে। ১১৬ জন রাজ্য প্রকাশকের আনন্দ কি আপনি কল্পনা করতে পারেন, যারা ৪০৫ জনের উপস্থিতি এবং প্রথম বার বাইবেল ভিত্তিক নাটক দেখছিল ও সম্মেলনের নতুন প্রকাশগুলো পাচ্ছিল? ২০ জন উৎসর্গীকৃত ব্যক্তির বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য একটা অত্যুষ্ণ সমুদ্রসৈকত ব্যবহার করা হয়েছিল।

যে-অসাধারণ বিষয়টা জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, তা ছিল অদ্বিতীয় লেপেল ব্যাজগুলো যা প্রতিনিধিরা পরেছিল। পর্তুগাল ও অ্যাংগোলা থেকে আসা ২৫ জন অতিথিদের উপস্থিতি সম্মেলনকে আন্তর্জাতিক করে তুলেছিল। শীঘ্রই উষ্ণ খ্রিস্টীয় প্রেমের এক বন্ধন গড়ে উঠেছিল এবং শেষ অধিবেশনে যখন তারা বিদায় জানিয়েছিল, তখন অনেকের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়েছিল।—যোহন ১৩:৩৫.

জাতীয় বেতার থেকে সাংবাদিকরা এসেছিল এবং সম্মেলন অধ্যক্ষের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। এ ছাড়া, তারা বেশ কয়েকটা বক্তৃতা থেকে কিছু কিছু উদ্ধৃতি সম্প্রচার করেছিল। এটা সত্যিই এক ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল এবং এটা দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন এই বিশ্বস্ত সাক্ষিদের যিহোবার দৃশ্যত সংগঠনকে অনেক নিকটবর্তী মনে করতে সাহায্য করেছিল।

যিহোবার প্রশংসার্থে ফল উৎপন্ন করা

রাজ্যের বার্তা যখন ফল উৎপন্ন করে, তখন এতে উত্তম আচরণ প্রকাশ পায়, যা যিহোবার প্রশংসা ও সম্মান নিয়ে আসে। (তীত ২:১০) একজন কিশোরী সাপ্তাহিক বাইবেল অধ্যয়ন থেকে যা শিখছিল তা উপভোগ করত। কিন্তু, তার বাবা তাকে মণ্ডলীর সভাগুলোতে আসতে নিষেধ করেছিলেন। যখন সে সম্মানপূর্বক তাকে খ্রিস্টীয় সভাগুলোর গুরুত্ব ও সেগুলোতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তার ইচ্ছা সম্বন্ধে জানিয়েছিল, তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন। বাবা মনে করেছিলেন যে, অন্যান্য যুবক-যুবতীরা যা করে—তাড়াতাড়ি কোনো পুরুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে তার সঙ্গে গিয়ে থাকবে, যে তাকে খাওয়াপরা জোগাবে—সেও হয়তো তা-ই করবে। বাবা যখন জানতে পারেন যে, সে একজন খ্রিস্টান হিসেবে এক উদাহরণযোগ্য, শুদ্ধ জীবনযাপন করছে, তখন তিনি আবার তাকে ঘরে ফিরিয়ে এনেছিলেন এবং যিহোবাকে সেবা করার জন্য তাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন।

আরেকটা উদাহরণ হল, একটা গানের দলের নেতা সম্বন্ধে। অনৈতিক জীবনযাপন করার কারণে তার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। জীবনের উদ্দেশ্য অন্বেষণ করতে গিয়ে সাক্ষিদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিনি যখন বাইবেলের নৈতিক মানগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে শুরু করেছিলেন, তখন তিনি শহরের আলোচ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। শীঘ্রই তিনি সমস্ত ক্ষতিকর সাহচর্য ত্যাগ করার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছিলেন। (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) এরপর তিনি যিহোবার কাছে তার উৎসর্গীকরণের প্রতীকস্বরূপ বাপ্তিস্ম নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ নিয়েছিলেন।

বেশ কয়েক জন যুবক সত্য ধর্মের অন্বেষণ করছিল। তাদের অন্বেষণের ফলে তারা বেশ কয়েকটা ইভানজেলিক্যাল দলের পাদরিদের সঙ্গে আলোচনায় লিপ্ত হয় কিন্তু ফলস্বরূপ তারা আরও বেশি বিভ্রান্ত ও হতাশ হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত, তারা হিংস্র ভবঘুরে ও ধর্মীয় যেকোনো কিছুর প্রতি বিদ্রূপকারী হয়ে উঠেছিল।

একদিন যিহোবার সাক্ষিদের একজন, এক মিশনারি বাইবেল অধ্যয়ন করাতে যাওয়ার পথে সেই জায়গার কাছাকাছি আসেন, যেখানে সেই যুবকরা ছিল। সেই দলটা চেয়েছিল সেই মিশনারি যেন তাদের কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দেন আর তাই তারা তাকে একটা ঘরের পিছন দিকে উঠানে নিয়ে গিয়েছিল, যেখানে তাকে একটা ছোট্ট স্টুলের ওপর বসতে বলা হয়েছিল। এরপর তারা আত্মা, নরকাগ্নি, স্বর্গে জীবন এবং জগতের শেষ এই ধরনের বিষয়বস্তুর ওপর নানা প্রশ্ন করে তাকে জর্জরিত করেছিল। সেই সাক্ষি তাদের সব প্রশ্নের উত্তর বাইবেল থেকে দিয়েছিলেন, যে-বাইবেলটি সেই দলের নেতা তাকে দিয়েছিলেন। একঘন্টা পর লা নামের সেই দলনেতা মিশনারিকে বলেছিলেন: “আমরা যখন আপনাকে আসতে ও প্রশ্নের উত্তর দিতে বলেছিলাম, তখন আমাদের উদ্দেশ্য ছিল আপনাকে উপহাস করা, যেমনটা আমরা অন্য ধর্মের লোকেদের করেছি। আমরা ভেবেছিলাম যে, কেউই সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবে না। কিন্তু আপনি পেরেছেন এবং আপনি ঠিক বাইবেল ব্যবহার করে সেগুলোর উত্তর দিয়েছেন! আমাকে বলুন যে, কীভাবে আমি বাইবেল সম্বন্ধে আরও বেশি কিছু শিখতে পারি?” লার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করা হয়েছিল এবং শীঘ্রই তিনি সভাগুলোতে যোগ দিতে শুরু করেছিলেন। অল্প কিছুদিন পরই তিনি সেই দল পরিত্যাগ করেছিলেন এবং তার হিংস্র জীবনধারা ত্যাগ করেছিলেন। এক বছরের মধ্যে তিনি যিহোবার কাছে তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন ও বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। এখন তিনি একজন পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করছেন।

একটা স্থানীয় প্রথা যা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে গেঁথে রয়েছে তা হল, দম্পতিরা আইনগতভাবে বিয়ে না করেই একসঙ্গে বাস করে। অনেকে বছরের পর বছর ধরে এভাবে একসঙ্গে থেকে আসছে ও তাদের সন্তানও রয়েছে। এই ব্যাপারে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গিকে মেনে নিতে তারা কঠিন বোধ করে। এটা দেখা হৃদয়গ্রাহী যে, কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য একজন ব্যক্তিকে এই বাধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল।—২ করিন্থীয় ১০:৪-৬; ইব্রীয় ৪:১২.

অ্যান্টোনিও বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার বিবাহকে বৈধ করা উচিত এবং তিনি ভুট্টা ফসল কাটার পর তা করার পরিকল্পনা করেছিলেন কারণ তখন বিবাহভোজের জন্য তার হাতে কিছু টাকা থাকবে। ফসল কাটার ঠিক আগের রাতে চোর এসে তার শস্য চুরি করে নিয়ে যায়। তিনি পরের বছরের শস্যের জন্য অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন আর এবারও তা চুরি হয়ে যায়। বিয়ের জন্য টাকাপয়সা সংগ্রহের আরেকটা প্রচেষ্টাও যখন ব্যর্থ হয়, তখন অ্যান্টোনিও বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার প্রকৃত বিরোধী আসলে কে। “শয়তান আমার সঙ্গে আর খেলতে পারবে না,” তিনি বলেছিলেন। “বিবাহভোজের ব্যবস্থা করতে পারি বা না পারি, দেড় মাসের মধ্যে আমরা বিয়ে করব!” তারা তা-ই করেছিল এবং তারা অবাক হয়ে গিয়েছিল, যখন তাদের বন্ধুবান্ধবরা বিবাহভোজের জন্য কয়েকটা মুরগি, হাঁস এবং একটা ছাগল জুগিয়েছিল। তাদের বিবাহ নিবন্ধন করার পর অ্যান্টোনিও ও তার স্ত্রী—ও সেইসঙ্গে তাদের ছয় সন্তান—যিহোবার কাছে তাদের উৎসর্গীকরণের প্রতীকস্বরূপ বাপ্তিস্ম নিয়েছিল।

প্রিন্সিপে দ্বীপে

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৬,০০০ অধিবাসীর প্রিন্সিপে দ্বীপে সাও থোমে থেকে সীমা অধ্যক্ষ ও অগ্রগামীরা মাঝেমধ্যে পরিদর্শন করে থাকে। দ্বীপের অধিবাসীরা খুবই অতিথিপরায়ণ এবং সাক্ষিরা যা বলে তা শোনার জন্য খুব উৎসুক। একজন ব্যক্তির কাছে একটি ট্র্যাক্ট ছেড়ে আসার পর সেটা পড়ে তিনি পরদিনই সেই অগ্রগামীদের খোঁজ করেছিলেন এবং তাদের আরও বেশি ট্র্যাক্ট বিতরণ করতে সাহায্য করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। অগ্রগামীরা ব্যাখ্যা করেছিল যে, এটা এমন এক কাজ যা তাদেরই করতে হবে কিন্তু সেই ব্যক্তি নাছোড়বান্দা হয়ে বলেছিলেন যে, তিনি তাদের সঙ্গে ঘরে ঘরে যাবেন যাতে গৃহকর্তাদের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন ও শোনার জন্য সুপারিশ করতে পারেন। সেই লোক শেষ পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন কিন্তু যাবার আগে অগ্রগামীরা যে-গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিল, সেইজন্য তাদের প্রশংসা করেছিলেন।

১৯৯৮ সালে দুজন অগ্রগামী সাও থোমে থেকে প্রিন্সিপেতে চলে আসে এবং শীঘ্রই তারা ১৭টা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করা শুরু করেছিল। সেই কাজ ক্রমাগত সম্প্রসারিত হয়েছিল এবং শীঘ্রই মণ্ডলীর বই অধ্যয়নে গড়ে ১৬ জন এবং জনসাধারণের বক্তৃতায় ৩০ জনেরও বেশি উপস্থিত হতো। সভা করার জন্য জায়গার প্রয়োজন সম্বন্ধে সরকারি নগরভবনকে জানানো হয়েছিল এবং আনন্দের সঙ্গে কিংডম হল বানানোর জন্য জায়গা দেওয়া হয়েছিল। সাও থোমে থেকে ভাইয়েরা একটা ছোট্ট কিংডম হল বানানোর জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছিল, যেটাতে দুজন বিশেষ অগ্রগামীর জন্য থাকার জায়গাও রয়েছে।

কোনো সন্দেহ নেই যে, এই দূরবর্তী দ্বীপগুলোতে সুসমাচার অনেক ফল উৎপন্ন করছে ও বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। (কলসীয় ১:৫, ৬) ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসে সাও থোমে ও প্রিন্সিপেতে ৪৬ জন প্রকাশক ছিল। ২০০২ সালের পরিচর্যা বছরে রাজ্য ঘোষণাকারীদের শীর্ষ সংখ্যা ৩৮৮ জনে গিয়ে পৌঁছেছে! ২০ শতাংশেরও বেশি প্রকাশক পূর্ণ-সময় পরিচর্যায় রত আছে এবং প্রায় ১,৪০০টা গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করা হচ্ছে। ২০০১ সালের স্মরণার্থ সভার উপস্থিতি সর্বকালের শীর্ষ সংখ্যা ১,৯০৭ জনে পৌঁছায়। হ্যাঁ, এই ক্রান্তীয় দ্বীপগুলোতে যিহোবার বাক্য দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে এবং গৌরবান্বিত হচ্ছে।—২ থিষলনীকীয় ৩:১.

[১২ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

জনপ্রিয় বেতার সম্প্রচার করে

এই দ্বীপগুলোতে যে-প্রকাশনাটার ব্যাপকভাবে প্রশংসা করা হয়েছে, সেটা হল যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে-উত্তরগুলো কাজ করে (ইংরেজি)। * প্রতি দুসপ্তাহ পর পর সেই শিরোনামে ১৫ মিনিটের একটা অনুষ্ঠান জাতীয় বেতারে সম্প্রচার করা হয়। এটা শোনা কতই না রোমাঞ্চকর, যখন সম্প্রচারকারী জিজ্ঞেস করেন যে, “যুবক-যুবতীরা, তোমরা কীভাবে জানবে যে, এটা সত্যিকারের প্রেম নাকি মোহ?” আর এরপর বই থেকে কিছু অংশ পড়েন! (৩১ অধ্যায় দেখুন।) একইরকম সম্প্রচার পারিবারিক সুখের রহস্য* (ইংরেজি) বই থেকে নির্বাচিত অংশ উপস্থাপন করে থাকে।

[পাদটীকা]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

সাও থোমেতে ১৯৯৪ সালে প্রথম কিংডম হল

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

১. মিসশিতে দ্রুত নির্মিত কিংডম হল

২. এক ঐতিহাসিক জেলা সম্মেলন এই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল

৩. সম্মেলনে আনন্দিত বাপ্তিস্ম প্রার্থীরা

[৮ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

ভূ-গোলক: Mountain High Maps® Copyright © ১৯৯৭ Digital Wisdom, Inc.