সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আদিপুস্তকের প্রধান বিষয়গুলো—প্রথম ভাগ

আদিপুস্তকের প্রধান বিষয়গুলো—প্রথম ভাগ

যিহোবার বাক্য জীবন্ত

আদিপুস্তকের প্রধান বিষয়গুলো—প্রথম ভাগ

“আদি” কথার অর্থ “উৎপত্তি” বা “সূচনা।” একটা বইয়ের এই নামকরণ যথাযথ, যেটি বর্ণনা করে কীভাবে এই নিখিলবিশ্ব অস্তিত্বে এসেছিল, কীভাবে পৃথিবীকে মানুষের বাস করার উপযোগী করা হয়েছিল এবং কীভাবে মানুষ এখানে স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করেছিল। মোশি সীনয়ের প্রান্তরে এই বইটি লিখেছিলেন, সম্ভবত সা.কা.পূ. ১৫১৩ সালে এটি লেখা শেষ হয়েছিল।

আদিপুস্তক জলপ্লাবনের আগের জগৎ সম্বন্ধে, জলপ্লাবনের পরবর্তী সময়ে যা ঘটেছিল এবং যিহোবা ঈশ্বর অব্রাহাম, ইস্‌হাক, যাকোব এবং যোষেফের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করেছিলেন, তা আমাদের জানায়। এই প্রবন্ধটি আদিপুস্তক ১:১–১১:৯ পদের প্রধান বিষয়গুলো তুলে ধরবে, যা মূলত কুলপতি অব্রাহামের সঙ্গে যিহোবার আচরণ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত ঘটনাবলি।

জলপ্লাবনের আগের জগৎ

(আদিপুস্তক ১:১–৭:২৪)

“আদিতে,” আদিপুস্তকের একেবারে শুরুর এই কথাগুলো সুদূর অতীতের কোটি কোটি বছর পিছনে গিয়ে পৌঁছায়। সৃষ্টির ছয় “দিবস” বা বিশেষ সৃজনশীল কাজের সময়কালের ঘটনাবলি এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেন তা একজন মানুষের সামনে ঘটেছিল, যিনি পৃথিবীতে উপস্থিত থেকে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। ছয় দিনের শেষে ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেন। যদিও মানুষের অবাধ্যতার কারণে শীঘ্রই পরমদেশ হারিয়ে যায়, তবুও যিহোবা আশা দেন। বাইবেলের একেবারে প্রথম ভাববাণী এক ‘বংশ’ সম্বন্ধে বলে, যিনি পাপের প্রভাব শেষ ও শয়তানের মস্তক চূর্ণ করবেন।

এর পরের ১৬শ বছর ধরে, শয়তান কিছু বিশ্বস্ত ব্যক্তি, যেমন হেবেল, হনোক এবং নোহ ছাড়া সমস্ত মানুষকেই ঈশ্বরের কাছ থেকে সরিয়ে নিতে সফল হয়। উদাহরণ হিসেবে, কয়িন তার ধার্মিক ভাই হেবলকে হত্যা করে। স্পষ্টতই অবজ্ঞার সঙ্গে “লোকেরা সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে ডাকিতে আরম্ভ করিল।” লেমক নিজের আত্মরক্ষার্থে কীভাবে এক যুবককে হত্যা করেছিলেন সেই বিষয়ে এক ছন্দ রচনা করেন, যা সেই সময়কার দৌরাত্ম্যপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে। পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে যখন ঈশ্বরের অবাধ্য দূত পুত্রেরা মহিলাদের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে এবং দৌরাত্ম্যপূর্ণ দৈত্যদের জন্ম দেয়, যাদের নেফিলিম বলা হতো। তবুও, বিশ্বস্ত নোহ জাহাজ তৈরি করেন, আসন্ন মহাপ্লাবন সম্বন্ধে সাহসের সঙ্গে অন্যদের সতর্ক করেন এবং এর ধ্বংস থেকে তার পরিবারের সঙ্গে রক্ষা পান।

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

১:১৬—যদি চতুর্থ দিন পর্যন্ত মহাজ্যোতি নির্মাণ করা না হয়ে থাকে, তা হলে ঈশ্বর কীভাবে প্রথম দিনেই আলো উৎপন্ন করলেন? যে-ইব্রীয় শব্দ থেকে ১৬ পদের “নির্ম্মাণ” শব্দটা অনুবাদ করা হয়েছে সেটার অর্থ এবং আদিপুস্তক ১ অধ্যায় ১ ২১ এবং ২৭ পদে ব্যবহৃত “সৃষ্টি” শব্দটার অর্থ এক নয়। ‘আকাশমণ্ডলের’ অন্তর্ভুক্ত মহাজ্যোতিগুলো এমনকি “প্রথম দিবস” শুরু হওয়ারও অনেক আগে সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু, এগুলোর দীপ্তি পৃথিবীর উপরিভাগ পর্যন্ত পৌঁছায়নি। প্রথম দিবসে “দীপ্তি হইল” কারণ মেঘের স্তর ভেদ করে বিকীর্ণ দীপ্তি ছড়িয়ে পড়েছিল আর তা পৃথিবীর ওপর দৃশ্যমান হয়েছিল। এভাবে ঘূর্ণায়মান পৃথিবীতে পর্যায়ক্রমে দিন ও রাত হতে শুরু করেছিল। (আদিপুস্তক ১:১-৩, ৫) সেই দীপ্তির উৎস পৃথিবী থেকে তখনও অদৃশ্য ছিল। যাইহোক, চতুর্থ সৃষ্টির দিনে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। “পৃথিবীতে দীপ্তি দিবার জন্য” সূর্য, চন্দ্র এবং নক্ষত্রসমূহ নির্মাণ করা হয়েছিল। (আদিপুস্তক ১:১৭) এমনভাবে সেগুলো ‘ঈশ্বর নির্ম্মাণ করিলেন’ যেকারণে সেগুলো তখন পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান হয়েছিল।

৩:৮—যিহোবা কি আদমের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছিলেন? বাইবেল জানায় যে, ঈশ্বর যখন মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন, তখন তিনি প্রায়ই এক স্বর্গদূতের মাধ্যমে তা বলতেন। (আদিপুস্তক ১৬:৭-১১; ১৮:১-৩, ২২-২৬; ১৯:১; বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ২:১-৪; ৬:১১-১৬, ২২; ১৩:১৫-২২) ঈশ্বরের প্রধান মুখপাত্র ছিলেন তাঁর একজাত পুত্র, যাঁকে “বাক্য” বলা হয়েছে। (যোহন ১:১) খুব সম্ভবত ঈশ্বর আদম ও হবার সঙ্গে ‘বাক্যের’ মাধ্যমে কথা বলতেন।—আদিপুস্তক ১:২৬-২৮; ২:১৬; ৩:৮-১৩.

৩:১৭—কীভাবে ভূমি অভিশপ্ত হয়েছিল আর তা কত সময়ের জন্য? ভূমির ওপর অভিশাপ ঘোষণার অর্থ সেখানে চাষাবাদ করা খুবই কষ্টকর হবে। কন্টক ও শেয়ালকাঁটা সহ অভিশপ্ত ভূমির প্রভাব আদমের বংশধররা এমন গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিল যে, নোহের বাবা লেমক বলেছিলেন ‘সদাপ্রভু কর্ত্তৃক অভিশপ্ত ভূমি হইতে আমাদের হস্তের ক্লেশ হয়।’ (আদিপুস্তক ৫:২৯) জলপ্লাবনের পরে যিহোবা নোহ ও তার ছেলেদের আশীর্বাদ করেছিলেন, তারা পৃথিবী পরিপূর্ণ করবে বলে তাঁর উদ্দেশ্য ঘোষণা করেন। (আদিপুস্তক ৯:১) ভূমির ওপর ঈশ্বরের অভিশাপ আপাতদৃষ্টিতে তুলে নেওয়া হয়েছিল।—আদিপুস্তক ১৩:১০.

৪:১৫—যিহোবা কীভাবে “কয়িনের নিমিত্ত এক চিহ্ন রাখিলেন”? বাইবেল বলে না যে, কয়িনের শরীরের কোথাও একটা চিহ্ন দেওয়া হয়েছিল। এই চিহ্ন সম্ভবত এক গুরুগম্ভীর আদেশ ছিল, যা অন্যেরা জানত ও মেনে চলত আর তা দেওয়া হয়েছিল প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে তাকে হত্যা করা থেকে বিরত করতে।

৪:১৭—কয়িন কোথা থেকে তার স্ত্রী পেয়েছিল? আদম “আরও পুত্ত্রকন্যার জন্ম দিলেন।” (আদিপুস্তক ৫:৪) সুতরাং কয়িন তার নিজের এক বোনকে অথবা হয়তো তার ভাই বা বোনের মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিল। পরে, ইস্রায়েলীয়দের প্রতি ঈশ্বরের ব্যবস্থা নিজের ভাই ও বোনের মধ্যে বিয়ে করাকে অনুমোদন করেনি।—লেবীয় পুস্তক ১৮:৯.

৫:২৪—কীভাবে ঈশ্বর ‘হনোককে গ্রহণ’ করেছিলেন? হনোক স্পষ্টতই মৃত্যুর ঝুঁকির মুখে ছিলেন কিন্তু ঈশ্বর তাকে তার শত্রুদের হাতে কষ্টভোগ করাকে অনুমোদন করেননি। “হনোক লোকান্তরে নীত হইলেন, যেন মৃত্যু না দেখিতে পান,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন। (ইব্রীয় ১১:৫) এর মানে নয় যে, ঈশ্বর তাকে স্বর্গে নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি বাস করছিলেন। যিশুই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি স্বর্গে গিয়েছিলেন। (যোহন ৩:১৩; ইব্রীয় ৬:১৯, ২০) হনোক “লোকান্তরে নীত হইলেন, যেন মৃত্যু না দেখিতে পান” এর অর্থ হয়তো এই যে, ঈশ্বর ভবিষ্যতের দর্শন দেখিয়ে তাকে গভীরভাবে সেটাতে নিবিষ্ট করেছিলেন এবং সেই অবস্থাতে থাকতে থাকতেই তিনি তাকে মৃত্যুতে শুইয়ে দিয়েছিলেন। এইরকম পরিস্থিতিতে হনোক শত্রুদের হাতে কষ্ট ভোগ করেননি বা ‘মৃত্যু দেখিতে’ পাননি।

৬:৬—কোন অর্থে বলা যেতে পারে যে, মানুষকে নির্মাণ করে যিহোবা “অনুশোচনা করিলেন?” যে-ইব্রীয় শব্দ থেকে “অনুশোচনা” শব্দটা অনুবাদ করা হয়েছে, সেটা মনোভাব বা উদ্দেশ্যের পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত। যিহোবা সিদ্ধ আর তাই মানুষকে সৃষ্টি করে তিনি ভুল করেননি। কিন্তু, তিনি জলপ্লাবনের আগের দুষ্ট বংশের বিষয়ে তাঁর মনোভাবের পরিবর্তন করেছিলেন। ঈশ্বর মানুষের সৃষ্টিকর্তা থেকে মানুষের ধ্বংসকর্তায় পরিবর্তিত হয়েছিলেন কারণ তাদের দুষ্টতার কারণে তিনি অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তিনি যে কিছু ব্যক্তিকে রক্ষা করেছিলেন তা দেখায় যে, তিনি শুধু তাদের জন্যই অনুশোচনা করেছেন, যারা দুষ্ট হয়ে গিয়েছিল।—২ পিতর ২:৫, ৯.

৭:২—কোন বিষয়টাকে শুচি ও অশুচি পশুর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হতো? স্পষ্টতই উপাসনায় যেগুলোকে বলি দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো সেগুলোর সঙ্গে পার্থক্য নির্ণয় করার ভিত্তি জড়িত ছিল, যেগুলো খাওয়া যেত ও যেত না, সেগুলোর সঙ্গে নয়। জলপ্লাবনের আগে মানুষ পশুর মাংস খায়নি। খাবারের ক্ষেত্রে “শুচি” ও “অশুচি” বিষয় শুধুমাত্র মোশির ব্যবস্থায় উল্লেখ করা হয়েছে আর সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছিল যখন ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়েছিল। (প্রেরিত ১০:৯-১৬; ইফিষীয় ২:১৫) স্পষ্টতই নোহ জানতেন, যিহোবার উপাসনায় বলি দেওয়ার জন্য কোনটা উপযুক্ত ছিল। তিনি জাহাজ থেকে বের হওয়ার পর পরই “সদাপ্রভুর উদ্দেশে যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন, এবং সর্ব্বপ্রকার শুচি পশুর ও সর্ব্বপ্রকার শুচি পক্ষীর মধ্যে কতকগুলি লইয়া বেদির উপরে হোম করিলেন।”—আদিপুস্তক ৮:২০.

৭:১১—বিশ্বব্যাপী জলপ্লাবনের জল কোথা থেকে এসেছিল? সৃষ্টির দ্বিতীয় সময়কালে বা ‘দিবসে’ যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলসংক্রান্ত “বিতান” গঠিত হয়েছিল, তখন “বিতানের অধঃস্থিত” ও “বিতানের ঊর্দ্ধ্বস্থিত” অবস্থানে জল ছিল। (আদিপুস্তক ১:৬, ৭) “অধঃস্থিত” জলসমূহ ইতিমধ্যেই পৃথিবীতে ছিল। “ঊর্দ্ধ্বস্থিত” জলে প্রচুর পরিমাণে আদ্রতা পৃথিবীর ওপরে ভাসমান ছিল আর তা এক ‘মহাজলধি’ গঠন করেছিল। আর এই জলই নোহের সময়ে পৃথিবীতে পড়েছিল।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

১:২৬. ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে নির্মিত হওয়ায় মানুষের ঈশ্বরীয় গুণগুলো প্রতিফলিত করার ক্ষমতা রয়েছে। যিনি আমাদের নির্মাণ করেছেন তাঁকে প্রতিফলিত করতে আমাদের এই গুণগুলো যেমন প্রেম, করুণা, দয়া, মঙ্গলভাব এবং ধৈর্য গড়ে তোলার চেষ্টা করা উচিত।

২:২২-২৪. বিবাহ হল ঈশ্বরে ব্যবস্থা। বিবাহ বন্ধন স্থায়ী এবং পবিত্র, যেখানে স্বামী পরিবারের মস্তক হিসেবে সেবা করেন।

৩:১-৫, ১৬-২৩. আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে যিহোবার সার্বভৌমত্বকে মেনে নেওয়ার ওপর আমাদের সুখ নির্ভর করে।

৩:১৮, ১৯; ৫:৫; ৬:৭; ৭:২৩. যিহোবার বাক্য সবসময় সত্য প্রমাণিত হয়।

৪:৩-৭. যিহোবা হেবলের বলিদানে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন কারণ তিনি একজন ধার্মিক বিশ্বাসী ব্যক্তি ছিলেন। (ইব্রীয় ১১:৪) অন্যদিকে, কয়িনের কাজ যেমন ইঙ্গিত করে, তার মধ্যে বিশ্বাসের অভাব ছিল। তার কাজ মন্দ ছিল যা ঈর্ষা, বিদ্বেষ এবং হত্যার দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল। (১ যোহন ৩:১২) এ ছাড়া, সে তার বলিদানের বিষয় নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায়নি এবং কোনোরকম আন্তরিকতা ছাড়াই সে তা উৎসর্গ করেছিল। যিহোবার উদ্দেশে আমাদের স্তব-বলি কি উপযুক্ত মনোভাব ও সঠিক আচরণের দ্বারা আন্তরিক এবং সংগত হওয়া উচিত নয়?

৬:২২. যদিও জাহাজ তৈরি করতে অনেক বছর লেগেছিল, তারপরও নোহ ঈশ্বর যেমন আদেশ করেছিলেন, ঠিক তেমনই করেছিলেন। তাই, নোহ ও তার পরিবার মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পেয়েছিল। যিহোবা তাঁর লিখিত বাক্যের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের নির্দেশনা দেন। এগুলো শোনা ও মেনে চলা আমাদের জন্য উপকারী।

৭:২১-২৪. যিহোবা দুষ্টদের সঙ্গে ধার্মিকদের ধ্বংস করেন না।

মানবজাতি এক নতুন যুগে প্রবেশ করে

(আদিপুস্তক ৮:১–১১:৯)

জলপ্লাবনের আগের জগৎ শেষ হওয়ার পর মানবজাতি এক নতুন যুগে প্রবেশ করে। মানুষকে মাংস খাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, তবে তা রক্ত থেকে পৃথক থাকার বিষয়ে আজ্ঞা মেনে চলে। হত্যাকারীর জন্য যিহোবা মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করেন এবং আর কখনও মহাপ্লাবন না আনার প্রতিজ্ঞার বিষয়ে রঙধনুর চুক্তি স্থাপন করেন। নোহের তিন ছেলে সমগ্র মানবজাতির পূর্বপুরুষ হয়ে ওঠে কিন্তু তার প্রপৌত্র নিম্রোদ “সদাপ্রভুর সাক্ষাতে পরাক্রান্ত ব্যাধ” হয়। পৃথিবীকে জনসংখ্যায় পরিপূর্ণ করার পরিবর্তে, মানুষ নিজেদের নাম বিখ্যাত করার জন্য বাবিল নামে এক শহর ও একটা দুর্গ বানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের অভিপ্রায় ব্যর্থ হয় যখন যিহোবা তাদের ভাষার ভেদ জন্মান এবং তাদেরকে পৃথিবীব্যাপী ছিন্নভিন্ন করেন।

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

৮:১১—যদি জলপ্লাবনে সব বৃক্ষ ধ্বংস হয়েছিল, তা হলে কোথা থেকে কপোত জিত বৃক্ষের পাতা পেয়েছিল? এখানে দুটো সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু জিত বৃক্ষ খুব শক্ত এক বৃক্ষ, তাই এটা হয়তো মহাপ্লাবনের সময়ে জলের নিচে কিছু মাস বেঁচেছিল। প্লাবনের জল কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জলের তলস্থিত একটা জিত বৃক্ষ শুকনো ভূমিতে আবার পাতা বের করতে শুরু করে। আবার এটাও হতে পারে যে, নোহের কাছে কপোত জিত বৃক্ষের যে-পাতাটা এনেছিল তা কোনো নতুন চারার একটা পল্লব, যা প্লাবনের জল সরে যাওয়ার পর গজিয়েছিল।

৯:২০-২৫—নোহ কেন কনানকে অভিশাপ দিয়েছিলেন? খুব সম্ভবত কনান তার দাদু নোহের বিরুদ্ধে কোনো বিকৃত বা অন্যায় ব্যবহারের জন্য দোষী ছিলেন। যদিও কনানের বাবা হাম এটা দেখেছিলেন কিন্তু তিনি এর প্রতিকার করেননি বরং এই ঘটনা চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। যাইহোক, নোহের অন্য দুই ছেলে শেম ও যেফৎ তাদের বাবার উলঙ্গতা ঢেকে দিয়েছিল। এই কারণের জন্য তারা আশীর্বাদ পেয়েছিল কিন্তু কনান অভিশাপ পেয়েছিলেন এবং হাম নিজ বংশধরদের ওপর লজ্জা বয়ে আনার ফলে কষ্টভোগ করেছিলেন।

১০:২৫—পেলগের সময়ে পৃথিবী কীভাবে “বিভক্ত” হয়েছিল? পেলগ সা.কা.পূ. ২২৬৯ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বেঁচেছিলেন। “তৎকালে” যিহোবা বাবিলের নির্মাতাদের ভাষার ভেদ এবং তাদেরকে পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় ছিন্নভিন্ন করে এক বিরাট বিভাজন করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১১:৯) এইভাবে, পেলগের সময়ে “পৃথিবী [অথবা পৃথিবীর জনসংখ্যা] বিভক্ত হইল।”

আমাদের জন্য শিক্ষা:

৯:১; ১১:৯. মানুষের কোনো পরিকল্পনা বা প্রচেষ্টা যিহোবার উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করতে পারে না।

১০:১-৩২. জলপ্লাবনের ঘটনার আগে ও পরের বংশ বৃত্তান্তের দুটো তালিকা—৫ ও ১০ অধ্যায়—পুরো মানবজাতিকে নোহের তিন ছেলের মাধ্যমে প্রথম মানব আদমের সঙ্গে যুক্ত করে। অশূরীয়, কলদীয়, ইব্রীয়, সিরীয় এবং কিছু আরব গোষ্ঠী হল শেমের বংশধর। ইথিওপীয়, মিশরীয়, কনানীয় এবং কিছু আফ্রিকান ও আরব গোষ্ঠী হামের বংশ থেকে এসেছে। ইন্দো-ইউরোপীয়রা যেফতের বংশধর। সব মানুষই একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আর ঈশ্বরের কাছে সবাই সমান অধিকার নিয়ে জন্মায়। (প্রেরিত ১৭:২৬) এই সত্য অবশ্যই আমরা যেভাবে অন্যদের দেখি ও তাদের সঙ্গে আচরণ করি, সেটাকে প্রভাবিত করবে।

ঈশ্বরের বাক্য কার্যসাধক হতে পারে

আদিপুস্তকের প্রথম ভাগ মানব ইতিহাসের শুরুর একমাত্র সঠিক বিবরণ তুলে ধরে। এই পৃষ্ঠাগুলোতে আমরা মানুষকে এই পৃথিবীতে রাখার বিষয়ে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি লাভ করি। এটা দেখা কতই না আশ্বাসদায়ক যে, মানুষের কোনো প্রচেষ্টাই, যেমন নিম্রোদ করেছিল, এর পূর্ণতায় বাধা হতে পারে না!

আপনি যখন ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়ের প্রস্তুতির জন্য সাপ্তাহিক বাইবেল পাঠ করেন, তখন শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর” অংশটা বিবেচনা করা আপনাকে এমন শাস্ত্রীয় পদগুলো বুঝতে সাহায্য করবে, যা সহজে বোঝা যায় না। আপনি কীভাবে সাপ্তাহিক বাইবেল পাঠ থেকে উপকৃত হতে পারেন, তা “আমাদের জন্য শিক্ষা” এই শিরোনামের নিচে মন্তব্যগুলো জানতে সাহায্য করবে। উপযুক্ত হলে, পরিচর্যা সভার স্থানীয় প্রয়োজনের জন্য মূল উপাদান এখান থেকে পাওয়া যেতে পারে। যিহোবার বাক্য আমাদের জীবনে সত্যিই জীবন্ত ও কার্যসাধক হতে পারে।—ইব্রীয় ৪:১২.