সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিশুর অলৌকিক কাজগুলো—আপনি কী শিখতে পারেন?

যিশুর অলৌকিক কাজগুলো—আপনি কী শিখতে পারেন?

যিশুর অলৌকিক কাজগুলোআপনি কী শিখতে পারেন?

 আপনি হয়তো এটা জেনে অবাক হবেন যে, পৃথিবীতে যিশুর জীবন সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণ কখনও “অলৌকিক” শব্দের জন্য মূল ভাষার শব্দটিকে ব্যবহার করেনি। যে-গ্রিক শব্দকে (দিনামিস) কখনও কখনও “অলৌকিক” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার আক্ষরিক অর্থ “শক্তি।” (লূক ৮:৪৬) এ ছাড়া, এটাকে “পরাক্রম-কার্য্য” হিসেবেও অনুবাদ করা যেতে পারে। (মথি ১১:২০) একজন পণ্ডিত ব্যক্তির কথা অনুসারে, এই গ্রিক শব্দটি “সেই পরাক্রম কাজের ওপর জোর দেয়, যা সম্পাদন করা হয়েছে এবং বিশেষ করে সেই শক্তির ওপর জোর দেয়, যার দ্বারা এটা সম্পাদিত হয়েছে। ঈশ্বরের শক্তি যে কার্যরত, সেটার ওপর জোর দেওয়ার জন্য এই ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।”

আরেকটি গ্রিক শব্দ (টিরাস) সাধারণত “অদ্ভুত লক্ষণ” হিসেবে অনুবাদিত হয়েছে। (যোহন ৪:৪৮; প্রেরিত ২:১৯) এই অভিব্যক্তি পর্যবেক্ষকদের ওপর এর প্রভাবকে তুলে ধরে। প্রায়ই জনতা এবং শিষ্যরা যিশুর পরাক্রম কাজগুলো দেখে বিস্মিত এবং চমৎকৃত হতো।—মার্ক ২:১২; মার্ক ৪:৪১; ৬:৫১; লূক ৯:৪৩.

তৃতীয় যে-গ্রিক শব্দ (সিমিয়ন) যিশুর অলৌকিক কাজের বিষয়ে উল্লেখ করে, সেটির অর্থ “চিহ্ন।” এটা “অলৌকিক কাজের গভীর অর্থের ওপর জোর দেয়,” রবার্ট ডিফিনবাউ নামে একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেন। তিনি আরও বলেন: “চিহ্ন এমন এক অলৌকিক কাজ, যা আমাদের প্রভু যিশু সম্বন্ধে সত্য প্রকাশ করে।”

মোহ নাকি ঈশ্বরদত্ত শক্তি?

বাইবেল যিশুর অলৌকিক কাজগুলোকে চাতুরী অথবা মোহ বলে বর্ণনা করে না, যা লোকেদের আনন্দ দেওয়ার জন্য করা হয়েছে। এগুলো ‘ঈশ্বরের মহিমার’ প্রকাশ, যেমন একটি বালকের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল যার মধ্যে থেকে যিশু মন্দ আত্মা বের করে দিয়েছিলেন। (লূক ৯:৩৭-৪৩) এই ধরনের পরাক্রম কাজগুলো কি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের পক্ষে অসম্ভব, যাঁর “সামর্থ্যের আধিক্য” আছে বলে বর্ণনা করে হয়েছে? (যিশাইয় ৪০:২৬) অবশ্যই নয়!

সুসমাচারের বিবরণগুলো যিশুর প্রায় ৩৫টা অলৌকিক কাজের বিষয়ে উল্লেখ করে। কিন্তু তাঁর অলৌকিক কাজের মোট সংখ্যা সম্বন্ধে জানায় না। উদাহরণস্বরূপ, মথি ১৪:১৪ পদ বলে: “তিনি [যিশু] . . . বিস্তর লোক দেখিয়া তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, এবং তাহাদের পীড়িত লোকদিগকে সুস্থ করিলেন।” আমাদের বলা হয়নি যে, সেই সময়ে কত জন অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করা হয়েছিল।

এই ধরনের পরাক্রম কাজগুলো যিশুর এই দাবি করার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ছিল যে, তিনিই ছিলেন ঈশ্বরের পুত্র, সেই প্রতিজ্ঞাত মশীহ। শাস্ত্র প্রকৃতই দেখায় যে, ঈশ্বরদত্ত শক্তি যিশুকে অলৌকিক কাজগুলো সম্পাদন করতে সমর্থ করেছিল। প্রেরিত পিতর যিশুকে এই বলে উল্লেখ করেছিলেন যে, “পরাক্রম-কার্য্য, অদ্ভুত লক্ষণ ও চিহ্ন সমূহ দ্বারা তোমাদের নিকটে ঈশ্বর-কর্ত্তৃক প্রমাণিত মনুষ্য; তাঁহারই দ্বারা ঈশ্বর তোমাদের মধ্যে ঐ সকল কার্য্য করিয়াছেন, যেমন তোমরা নিজেই জান।” (প্রেরিত ২:২২) আরেকবার পিতর উল্লেখ করেছিলেন যে, “ঈশ্বর তাঁহাকে [যিশুকে] পবিত্র আত্মাতে ও পরাক্রমে অভিষেক করিয়াছিলেন; তিনি হিতকার্য্য করিয়া বেড়াইতেন, এবং দিয়াবল কর্ত্তৃক পীড়িত সকল লোককে সুস্থ করিতেন; কারণ ঈশ্বর তাঁহার সহবর্ত্তী ছিলেন।”—প্রেরিত ১০:৩৭, ৩৮.

যিশুর অলৌকিক কাজগুলো তাঁর বার্তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। মার্ক ১:২১-২৭ পদ যিশুর শিক্ষা এবং তাঁর একটা অলৌকিক কাজের প্রতি লোকেদের প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে জানায়। মার্ক ১:২২ পদ বলে যে, জনতা “তাঁহার উপদেশে চমৎকৃত হইল” এবং ২৭ পদ বলে যে, যখন তিনি একটা মন্দ আত্মাকে বের করেছিলেন, তখন লোকেরা “চমকৃত হইল।” যিশুর পরাক্রম কাজ এবং তাঁর বার্তা উভয়ই প্রমাণ করেছিল যে, তিনিই ছিলেন সেই প্রতিজ্ঞাত মশীহ।

যিশু কেবল দাবি করেননি যে, তিনি মশীহ; তাঁর কথাবার্তা এবং অন্যান্য কাজের সঙ্গে তাঁর অলৌকিক কাজগুলোতে ঈশ্বরদত্ত যে-শক্তি প্রদর্শিত হয়েছিল, তা তাঁর মশীহত্বের বিষয়ে প্রমাণ দিয়েছিল। তাঁর ভূমিকা এবং কার্যভার নিয়ে যখন বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছিল, তখন যিশু সাহসের সঙ্গে উত্তর দিয়েছিলেন: “যোহনের [বাপ্তাইজকের] দত্ত সাক্ষ্য অপেক্ষা আমার গুরুতর সাক্ষ্য আছে; কেননা পিতা আমাকে যে সকল কার্য্য সম্পন্ন করিতে দিয়াছেন, যে সকল কার্য্য আমি করিতেছি, সেই সকল আমার বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিতেছে যে, পিতা আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন।”—যোহন ৫:৩৬.

প্রামাণিক বৈশিষ্ট্য

কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, যিশুর অলৌকিক কাজগুলো বাস্তব, প্রামাণিক? কিছু প্রামাণিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করুন।

যিশু তাঁর পরাক্রম কাজগুলো সম্পাদন করার সময় কখনও নিজের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করাননি। তিনি নিশ্চিত করতেন যে, যেকোনো অলৌকিক কাজের শেষে যেন ঈশ্বরই সুনাম এবং গৌরব লাভ করেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন অন্ধ ব্যক্তিকে সুস্থ করার আগে যিশু এই বিষয়ে জোর দিয়েছিলেন যে, আরোগ্য করা হবে যাতে “এই ব্যক্তিতে ঈশ্বরের কার্য্য . . . প্রকাশিত হয়।”—যোহন ৯:১-৩; ১১:১-৪.

মায়াবী, জাদুকর এবং বিশ্বাস আরোগ্যকারীদের মতো যিশু কখনও সম্মোহনবিদ্যা, চাতুরী, আকর্ষণীয় প্রদর্শনী, জাদুমন্ত্র অথবা আবেগপূর্ণ আচার-অনুষ্ঠান ব্যবহার করেননি। তিনি কুসংস্কার অথবা পবিত্র বলে মান্য বিষয়বস্তু ব্যবহার করেননি। যে-বিনয়ী উপায়ে যিশু দুজন অন্ধ ব্যক্তিকে সুস্থ করেছিলেন, তা লক্ষ করুন। বিবরণ বলে, “যীশু করুণাবিষ্ট হইয়া তাহাদের চক্ষু স্পর্শ করিলেন, আর তখনই তাহারা দেখিতে পাইল ও তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল।” (মথি ২০:২৯-৩৪) কোনো প্রথা, অনুষ্ঠান অথবা লোকদেখানো কাজ জড়িত ছিল না। যিশু তাঁর অলৌকিক কাজগুলো জনসাধারণ্যে করেছিলেন আর প্রায়ই অসংখ্য প্রত্যক্ষ সাক্ষির সামনে করেছিলেন। তিনি কোনো বিশেষ আলোকসজ্জা, মঞ্চ বা সরঞ্জাম ব্যবহার করেননি। এর বৈসাদৃশ্যে, আধুনিক দিনের তথাকথিত অলৌকিক কাজগুলোকে প্রায়ই বাস্তব বলে প্রমাণ করা যায় না।—মার্ক ৫:২৪-২৯; লূক ৭:১১-১৫.

মাঝে মাঝে যিশু সেই সমস্ত ব্যক্তির বিশ্বাসকে স্বীকার করতেন, যারা তাঁর অলৌকিক কাজগুলো থেকে উপকৃত হতো। কিন্তু, একজন ব্যক্তির বিশ্বাসের অভাব যিশুকে কোনো অলৌকিক কাজ সম্পাদন করা থেকে বিরত করত না। তিনি যখন গালীলের কফরনাহূমে ছিলেন, তখন “লোকেরা অনেক ভূতগ্রস্তকে তাঁহার নিকটে আনিল, তাহাতে তিনি বাক্য দ্বারাই সেই আত্মাগণকে ছাড়াইলেন, এবং সকল পীড়িত লোককে সুস্থ করিলেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—মথি ৮:১৬.

যিশুর অলৌকিক কাজগুলো লোকেদের প্রকৃত শারীরিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য সম্পাদন করা হয়েছিল, কারও কৌতূহল মেটানোর জন্য নয়। (মার্ক ১০:৪৬-৫২; লূক ২৩:৮) আর যিশু কখনও কোনোভাবে ব্যক্তিগত লাভের জন্য অলৌকিক কাজগুলো সম্পাদন করেননি।—মথি ৪:২-৪; মথি ১০:৮.

সুসমাচারের বিবরণগুলো সম্বন্ধে কী বলা যায়?

যিশুর অলৌকিক কাজের ঘটনাগুলো চারটে সুসমাচারের বিবরণের মাধ্যমে আমাদের দেওয়া হয়েছে। আমরা যখন যিশুর অলৌকিক কাজগুলোর প্রামাণিকতা পরীক্ষা করি, তখন এই বিবরণগুলোর ওপর নির্ভর করার কি কোনো কারণ রয়েছে? হ্যাঁ, আছে।

ইতিমধ্যেই যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, যিশুর অলৌকিক কাজগুলো জনসমক্ষে, অনেক প্রত্যক্ষ সাক্ষির সামনে সম্পাদন করা হয়েছিল। সবচেয়ে প্রথম সুসমাচার সেই সময়ে লেখা হয়েছিল, যখন বেশির ভাগ প্রত্যক্ষ সাক্ষি তখনও জীবিত ছিল। সুসমাচার লেখকদের সততা সম্বন্ধে অলৌকিক কাজগুলো এবং পুনরুত্থান (ইংরেজি) বই বলে: “ঈশ্বরতত্ত্ব সংক্রান্ত প্রচারের উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোকে অলৌকিক কাজগুলোর জোয়ারে, বাছবিচারহীনভাবে ঢেকে দেওয়ার যে-অভিযোগ সুসমাচার প্রচারকদের করা হয়েছে, তা পুরোপুরি অন্যায়। . . . তাদের অভিপ্রায় ছিল সৎ লিপিবদ্ধকারী হওয়া।”

খ্রিস্টধর্মের যিহুদি বিরোধীরা কখনও সুসমাচারের বিবরণে বর্ণিত পরাক্রম কাজগুলো নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেনি। তারা শুধু সেই শক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, যার দ্বারা সেগুলো করা হয়েছিল। (মার্ক ৩:২২-২৬) এমনকি পরের সমালোচকরাও যিশুর অলৌকিক কাজগুলোকে কৃতকার্যভাবে অস্বীকার করতে পারেনি। এর বিপরীতে, সা.কা. প্রথম এবং দ্বিতীয় শতাব্দীতে আমরা যিশুর দ্বারা সম্পাদিত অলৌকিক কাজগুলোর উল্লেখ দেখতে পাই। স্পষ্টতই, তাঁর অলৌকিক কাজগুলো সম্বন্ধে সুসমাচারের বিবরণগুলোকে প্রামাণিক হিসেবে দেখার উপযুক্ত কারণ আমাদের রয়েছে।

অলৌকিক কাজগুলোর পিছনে যিনি রয়েছেন

যিশুর অলৌকিক কাজগুলো সম্বন্ধে পরীক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, যদি আমরা শুধু সেগুলোর প্রামাণিকতা নিয়ে আমাদের উপযুক্ত যুক্তিতর্ককে সীমাবদ্ধ রাখি। যিশুর অলৌকিক কাজগুলো সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে সুসমাচারের বিবরণগুলো গভীর অনুভূতি, অসীম সমবেদনা ও সেইসঙ্গে সহমানবদের মঙ্গলের প্রতি গভীর আগ্রহ রয়েছে, এমন এক ব্যক্তিকে প্রকাশ করে।

সেই কুষ্ঠ ব্যক্তির সম্বন্ধে বিবেচনা করুন, যিনি আকুল আবেদন নিয়ে যিশুর কাছে এসেছিলেন: “যদি আপনার ইচ্ছা হয়, আমাকে শুচি করিতে পারেন।” “করুণাবিষ্ট হইয়া” যিশু হাত বাড়িয়ে দিয়ে সেই কুষ্ঠকে স্পর্শ করে বলেছিলেন, “আমার ইচ্ছা, তুমি শুচীকৃত হও।” সেই ব্যক্তি সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। (মার্ক ১:৪০-৪২) এভাবে যিশু সেই সহমর্মিতা দেখিয়েছিলেন, যা তাঁকে অলৌকিক কাজগুলো সম্পাদন করার জন্য ঈশ্বরদত্ত শক্তি ব্যবহার করতে পরিচালিত করেছিল।

যিশু যখন নায়িন্‌ নগর থেকে আসা এক শবযাত্রার সম্মুখীন হয়েছিলেন, তখন কী ঘটেছিল? সেই মৃত যুবকটি একজন বিধবার একমাত্র পুত্র ছিল। সেই মহিলার প্রতি “করুণাবিষ্ট” হয়ে যিশু তার কাছে গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “কাঁদিও না।” এরপর তিনি তার পুত্রের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।—লূক ৭:১১-১৫.

যিশুর অলৌকিক কাজগুলো থেকে যে-সান্ত্বনাদায়ক শিক্ষা পাওয়া যেতে পারে, সেটা হল তিনি “করুণাবিষ্ট” হয়েছিলেন এবং লোকেদের সাহায্য করার জন্য কাজ করেছিলেন। কিন্তু, এই ধরনের অলৌকিক কাজগুলো শুধুই ইতিহাস নয়। ইব্রীয় ১৩:৮ পদ বলে, “যীশু খ্রীষ্ট কল্য ও অদ্য এবং অনন্তকাল যে, সেই আছেন।” তিনি এখন স্বর্গীয় রাজা হিসেবে শাসন করছেন এবং মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে থাকাকালীন তিনি যা করেছিলেন, তার চেয়ে আরও ব্যাপকভাবে তিনি ঈশ্বরদত্ত অলৌকিক শক্তি ব্যবহার করতে তৈরি এবং সমর্থ আছেন। শীঘ্রই, যিশু বাধ্য মানবজাতিকে আরোগ্য করার জন্য সেগুলো ব্যবহার করবেন। যিহোবার সাক্ষিরা এই উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা সম্বন্ধে আরও শেখানোর জন্য আপনাকে সাহায্য করে আনন্দিত হবে।

[৪, ৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিশুর অলৌকিক কাজগুলো ‘ঈশ্বরের মহিমার’ প্রকাশ ছিল

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশুর গভীর অনুভূতি ছিল