সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

দ্বিতীয় বিবরণ বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

দ্বিতীয় বিবরণ বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

যিহোবার বাক্য জীবন্ত

দ্বিতীয় বিবরণ বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

সময়টা হল সা.কা.পূ. ১৪৭৩ সাল। যিহোবা ইস্রায়েল-সন্তানগণকে মিশরের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করার পর চল্লিশ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এই বছরগুলো প্রান্তরে কাটানোর ফলে ইস্রায়েলীয়রা এখনও এমন এক জাতি হিসেবে রয়েছে, যাদের কোনো দেশ নেই। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত, তারা প্রতিজ্ঞাত দেশের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়ায়। এই দেশটা তারা দখল করলে পর তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে? কীধরনের সমস্যাগুলোর মুখোমুখি তারা হবে এবং এগুলোর সঙ্গে তাদের কীভাবে মোকাবিলা করা উচিত?

ইস্রায়েলীয়রা যর্দন নদী পার হয়ে কনান দেশে ঢোকার আগে মোশি মণ্ডলীকে সামনে যে-বিরাট কাজ রয়েছে, তার জন্য তাদের প্রস্তুত করেন। কীভাবে? ধারাক্রমে বক্তৃতাগুলো দেওয়ার মাধ্যমে, যেগুলো উৎসাহ দেয় ও উদ্বুদ্ধ করে, উপদেশ দেয় ও সতর্ক করে। তিনি ইস্রায়েলীয়দের স্মরণ করিয়ে দেন যে, যিহোবা ঈশ্বর একাগ্র ভক্তি পাওয়ার যোগ্য এবং তারা যেন আশেপাশে থাকা জাতিগুলোর পথ অনুসরণ না করে। এই বক্তৃতাগুলো হচ্ছে বাইবেলের দ্বিতীয় বিবরণ বইয়ের প্রধান অংশ। আর এগুলোতে ঠিক সেই পরামর্শগুলোই রয়েছে, যা বর্তমানে আমাদের প্রয়োজন, কারণ আমরাও এমন এক জগতে বাস করছি, যেখানে যিহোবাকে আমাদের একাগ্র ভক্তি দেওয়া এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা।—ইব্রীয় ৪:১২.

শেষ অধ্যায়টি ছাড়া দ্বিতীয় বিবরণের বইটি মোশির দ্বারা লেখা আর এটাতে দুমাসের আরেকটু বেশি সময়কার বিবরণ রয়েছে। * (দ্বিতীয় বিবরণ ১:৩; যিহোশূয়ের পুস্তক ৪:১৯) আসুন আমরা দেখি যে কীভাবে সেটাতে যা লেখা রয়েছে তা আমাদের সর্বান্তঃকরণে যিহোবা ঈশ্বরকে ভালবাসতে ও তাঁকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করতে সাহায্য করতে পারে।

‘স্বচক্ষে যাহা দেখিয়াছ, তাহা ভুলিয়া যাইও না’

(দ্বিতীয় বিবরণ ১:১–৪:৪৯)

প্রথম বক্তৃতায়, মোশি প্রান্তরের কয়েকটা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন—বিশেষ করে সেই অভিজ্ঞতাগুলো যেগুলো ইস্রায়েলীয়দের প্রতিজ্ঞাত দেশ অধিকার করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সাহায্য করতে পারে। বিচারকর্তাদের নিযুক্তিকরণের বিবরণ তাদের নিশ্চয়ই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের এমন উপায়ে সংগঠিত করেন, যা প্রেমপূর্ণ যত্নের নিশ্চয়তা দেয়। এ ছাড়া, মোশি এও বর্ণনা করেন যে, দশ জন গুপ্তচরের আনা খারাপ সংবাদের ফলে পূর্ববর্তী বংশ প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই সতর্কতামূলক উদাহরণ মোশির শ্রোতাদের ওপর যে-ছাপ ফেলেছে, তা একটু কল্পনা করুন, কারণ তারা সেই দেশ স্বচক্ষে দেখেছে।

ইস্রায়েল-সন্তানগণ যর্দন নদী পার হওয়ার আগে যিহোবা যেসমস্ত যুদ্ধে তাদের জয়ী করেছিলেন সেগুলো স্মরণ করা, তাদের নিশ্চয়ই সাহসে পূর্ণ করেছে যখন তারা নদীর ওপারে তাদের যুদ্ধ শুরু করার জন্য তৈরি ছিল। যে-দেশ তারা দখল করতে যাচ্ছে, তা প্রতিমাপূজায় পূর্ণ ছিল। তাই, প্রতিমাপূজার বিরুদ্ধে মোশির এক কড়া সতর্কবাণী দেওয়া কতই না উপযুক্ত!

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

২:৪-৬, ৯, ১৯, ২৪, ৩১-৩৫; ৩:১-৬—কেন ইস্রায়েলীয়রা যর্দনের পূর্ব দিকে বসবাসরত কিছু লোককে নিঃশেষে বিনষ্ট করেছিল কিন্তু অন্যদের করেনি? যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের এষৌর-সন্তানদের বিরোধিতা না করার আদেশ দিয়েছিলেন। কেন? কারণ তারা ছিল যাকোবের ভাইয়ের বংশধর। ইস্রায়েলীয়দের মোয়াবীয় ও অম্মোনীয়দেরকে ক্লেশ না দিতে অথবা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করতে বলা হয়েছিল কারণ তারা ছিল অব্রাহামের ভাইপো লোটের বংশধর। কিন্তু, ইমোরীয় রাজা সীহোন এবং ওগের, তাদের নিয়ন্ত্রিত দেশগুলোর প্রতি এই ধরনের কোনো দাবি ছিল না। তাই, সীহোন যখন ইস্রায়েলীয়দের তার দেশের মধ্যে দিয়ে যেতে দিতে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ওগ তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে আসেন, তখন যিহোবা ইস্রায়েলীয়দেরকে সেই রাজাদের শহরগুলোকে ধ্বংস করার, কাউকে জীবিত না রাখার আদেশ দিয়েছিলেন।

৪:১৫-২০, ২৩, ২৪—ক্ষোদিত প্রতিমা বানানোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার অর্থ কি এই যে, সাজানোর উদ্দেশ্যে বস্তুগুলোর প্রতিরূপ বানানো ভুল? না। এখানে নিষেধাজ্ঞাটা ছিল উপাসনার জন্য প্রতিমাগুলো বানানোর বিরুদ্ধে—‘প্রতিমাগুলোর কাছে প্রণিপাত করিবার ও তাহাদের সেবা করিবার’ বিরুদ্ধে। শাস্ত্র সাজানোর উদ্দেশ্যে খোদাই করা ভাস্কর্য তৈরি অথবা কোনো বস্তুর চিত্রাঙ্কন করাকে নিষেধ করে না।—১ রাজাবলি ৭:১৮, ২৫.

আমাদের জন্য শিক্ষা:

১:২, ১৯. ইস্রায়েল-সন্তানগণ প্রায় ৩৮ বছর ধরে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছিল, যদিও “সেয়ীর পর্ব্বত দিয়া হোরেব [সীনয় পর্বতের চারিদিকে পার্বত্য অঞ্চল, যেখানে দশ আজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল] অবধি” কাদেশ-বর্ণেয় “পর্য্যন্ত যাইতে” মাত্র “এগার দিন লাগে।” যিহোবা ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়ার ফলে কী বিরাট মূল্যই না দিতে হয়!—গণনাপুস্তক ১৪:২৬-৩৪.

১:১৬, ১৭. আজকেও ঈশ্বরের বিচার করার মানগুলো একই রয়েছে। বিচার সংক্রান্ত কমিটিতে কাজ করার জন্য আস্থা সহকারে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের কখনোই পক্ষপাতিত্ব অথবা লোকভয়ের কারণে তাদের বিচারকে বিকৃত হতে দেওয়া উচিত নয়।

৪:৯. ইস্রায়েলের সাফল্যের জন্য অপরিহার্য বিষয় ছিল যেন ‘তাহারা যে সকল ব্যাপার স্বচক্ষে দেখিয়াছে, তাহা ভুলিয়া না যায়।’ প্রতিজ্ঞাত নতুন জগৎ যত এগিয়ে আসছে, এটা তত বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরাও যেন তাঁর বাক্যের অধ্যবসায়ী ছাত্র বা ছাত্রী হয়ে যিহোবার চমৎকার কাজগুলোর ওপর আমাদের দৃষ্টিকে কেন্দ্রীভূত রাখি।

যিহোবাকে ভালবাসুন ও তাঁর আজ্ঞাগুলো মেনে চলুন

(দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১–২৬:১৯)

মোশি তার দ্বিতীয় বক্তৃতায়, সীনয় পবর্তে ব্যবস্থা দেওয়ার বিষয়টা বর্ণনা করেন এবং দশ আজ্ঞা পুনরায় উল্লেখ করেন। সাতটা জাতিকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। ইস্রায়েল-সন্তানগণ প্রান্তরে যে এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করেছে, সেটা তাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়: “মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচে না, কিন্তু সদাপ্রভুর মুখ হইতে যাহা যাহা নির্গত হয়, তাহাতেই মনুষ্য বাঁচে।” তাদের নতুন পরিস্থিতিতে, অবশ্যই তাদের ‘সমস্ত আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।’—দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৩; ১১:৮.

প্রতিজ্ঞাত দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করলে ইস্রায়েলীয়দের শুধু উপাসনার ক্ষেত্রেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে বিচার, সরকার, যুদ্ধ এবং প্রতিদিনকার সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষেত্রেও নিয়মগুলোর প্রয়োজন হবে। মোশি এই নিয়মগুলো পুনরালোচনা করেন এবং যিহোবাকে ভালবাসা ও তাঁর আজ্ঞাগুলোর প্রতি বাধ্য থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

৮:৩, ৪—প্রান্তরে যাত্রা করার সময় কীভাবে ইস্রায়েলীয়দের বস্ত্র জীর্ণ হয়নি এবং তাদের পা ফুলেনি? নিয়মিতভাবে সরবরাহকৃত মান্নার মতো এটা ছিল এক অলৌকিক ব্যবস্থা। ইস্রায়েলীয়রা যাত্রা শুরু করার সময় থেকে একই বস্ত্র ও জুতা ব্যবহার করে এসেছিল, সম্ভবত সেগুলো পালাক্রমে অন্যদের জন্য ছেড়ে যায় যখন ছেলেমেয়েরা বড় হতে থাকে ও বয়স্করা মারা যায়। প্রান্তরে যাত্রা করার শুরুতে ও শেষে নেওয়া দুটো লোকগণনা যেহেতু প্রকাশ করেছিল যে, ইস্রায়েলীয়দের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি, তাই শুরুতে জোগানো এই বস্তুগুলো যথেষ্ট ছিল বল মনে হয়।—গণনাপুস্তক ২:৩২; ২৬:৫১.

১৪:২১—কেন ইস্রায়েলীয়রা রক্ত ঝরানো হয়নি এমন কোনো মৃত পশু যেটাকে তারা নিজেরা খেত না, সেটা একজন বিদেশিকে দিয়ে দিতে অথবা একজন বিজাতীয় লোকের কাছে বিক্রি করতে পারত? বাইবেলে ‘বিদেশী’ শব্দটা একজন ন-ইস্রায়েলীয় ব্যক্তিকে বোঝাতে পারে, যিনি ধর্মান্তরিত হয়েছেন অথবা এমন একজন স্থায়ী অধিবাসীকে বোঝাতে পারে যিনি দেশের মৌলিক নিয়মগুলো মেনে চলতেন কিন্তু যিহোবার একজন উপাসক হননি। একজন বিজাতীয় ও বিদেশি যারা ধর্মান্তরিত হয়নি, তারা ব্যবস্থার অধীনে ছিল না আর তাই রক্ত ঝরানো হয়নি এমন মৃত পশুকে বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করতে পারত। ইস্রায়েলীয়দের এই ধরনের পশুকে এই লোকেদের কাছে দেওয়ার বা বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে, ধর্মান্তরিত ব্যক্তি ব্যবস্থা চুক্তির অধীনে ছিল। লেবীয়পুস্তক ১৭:১০ পদে যেমন ইঙ্গিত রয়েছে, এই ধরনের ব্যক্তির জন্য পশুর রক্ত খাওয়া নিষেধ ছিল।

২৪:৬—‘যাঁতা কিম্বা তাহার উপরের পাট বন্ধক রাখাকে’ কেন “প্রাণ” বন্ধক রাখার সমতুল্য করা হয়েছে? একটা জাঁতা ও এর উপরের পাট, একজন ব্যক্তির ‘প্রাণ’ অর্থাৎ একজন ব্যক্তির জীবনোপায়কে চিত্রিত করত। এগুলোর কোনো একটাকে বন্ধক রাখা পুরো পরিবারকে রোজকার খাবারের জোগান থেকে বঞ্চিত রাখত।

২৫:৯—একজন ব্যক্তি যিনি ভ্রাতৃপত্নীকে গ্রহণ করার রীতি মেনে চলতে অস্বীকার করেন তার পাদুকা খোলার ও তার মুখে থুথু দেওয়ার তাৎপর্য কী? “মুক্তি . . . করিবার জন্য পূর্ব্বকালে ইস্রায়েলের রীতি” অনুযায়ী “লোকে আপন পাদুকা খুলিয়া প্রতিবাসীকে দিত।” (রূতের বিবরণ ৪:৭) তাই, একজন ব্যক্তি যিনি ভ্রাতৃপত্নীকে গ্রহণ করার রীতি মেনে চলতে অস্বীকার করেন তার পাদুকা খোলা এটা নিশ্চিত করত যে, তিনি তার মৃত ভাইয়ের জন্য একজন উত্তরাধিকার জন্ম দেওয়ার ব্যাপারে তার অবস্থান ও অধিকারকে পরিত্যাগ করেছেন। এটা ছিল লজ্জাজনক। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৫:১০) তার মুখে থুথু দেওয়া ছিল এক অপমানজনক কাজ।—গণনাপুস্তক ১২:১৪.

আমাদের জন্য শিক্ষা:

৬:৬-৯. ইস্রায়েলীয়দের যেমন ব্যবস্থা সম্বন্ধে জানার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তেমনই আমাদেরও ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো ভালভাবে জানতে হবে, সবসময় সেগুলোকে আমাদের চোখের সামনে রাখতে হবে এবং আমাদের বাচ্চাদের শিক্ষা দিতে হবে। আমরা অবশ্যই ‘আমাদের হস্তে চিহ্নস্বরূপে সে সকল বাঁধিয়া রাখিব’ অর্থাৎ আমাদের কাজগুলো—আমাদের হাত দ্বারা চিত্রিত—দেখাবে যে, আমরা যিহোবার বাধ্য আছি। ‘ভূষণস্বরূপে দুই চক্ষুর মধ্যস্থানে’ থাকার মতো, আমাদের বাধ্যতা সবার কাছে অবশ্যই দৃশ্যমান হতে হবে।

৬:১৬. আমরা যেন কখনোই যিহোবাকে পরীক্ষা না করি, যেমন ইস্রায়েলীয়রা মঃসাতে অবিশ্বস্তভাবে তা করেছিল যেখানে তারা জলের অভাব নিয়ে বচসা করেছিল।—যাত্রাপুস্তক ১৭:১-৭.

৮:১১-১৮. বস্তুবাদিতা যিহোবাকে ভুলে যেতে আমাদের পরিচালিত করতে পারে।

৯:৪-৬. আমাদের অবশ্যই আত্মধার্মিকতা থেকে নিজেদের রক্ষা করা উচিত।

১৩:৬. আমরা যিহোবার উপাসনা থেকে আমাদের সরিয়ে নিতে কাউকে সুযোগ দেব না।

১৪:১. নিজের অঙ্গহানি করা হল মানব শরীরের প্রতি অসম্মান দেখানো, হয়তো মিথ্যা ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আর এইরকম করা অবশ্যই এড়াতে হবে। (১ রাজাবলি ১৮:২৫-২৮) পুনরুত্থানের ওপর আমাদের আশা থাকার ফলে, মৃত ব্যক্তির জন্য শোক করার ক্ষেত্রে এই ধরনের চরম অভিব্যক্তি প্রকাশ করা অনুপযোগী।

২০:৫-৭; ২৪:৫. বিশেষ পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি বিবেচনা দেখানো উচিত এমনকি তখনও, যখন আমরা কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু করছি।

২২:২৩-২৭. একজন মহিলা যখন ধর্ষিত হওয়ার বিপদের মধ্যে পড়েন, তখন প্রতিরোধ করার উপায়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকারী একটা উপায় হল চিৎকার করা।

“জীবন মনোনীত কর”

(দ্বিতীয় বিবরণ ২৭:১–৩৪:১২)

মোশি তার তৃতীয় বক্তৃতায় উল্লেখ করেন যে, যর্দন নদী পার হওয়ার পর ইস্রায়েলীয়দের অবশ্যই বৃহৎ প্রস্তরে ব্যবস্থাটি লিখতে হবে ও সেইসঙ্গে অবাধ্য হওয়ার অভিশাপ এবং বাধ্য হওয়ার আশীর্বাদগুলো ঘোষণা করতে হবে। চতুর্থ বক্তৃতা, যিহোবা ও ইস্রায়েলের মধ্যে স্থাপিত চুক্তির পুনরায় নবীনকরণ দিয়ে শুরু হয়। মোশি আবারও অবাধ্যতার বিরুদ্ধে সতর্ক করেন এবং লোকেদের ‘জীবন মনোনীত করিবার’ জন্য উৎসাহিত করেন।—দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯.

চারটে বক্তৃতা দেওয়া ছাড়াও মোশি নেতৃত্বের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেন আর ইস্রায়েলীয়দের এক সুন্দর গান শেখান, যেটা যিহোবার প্রশংসা করে এবং অবিশ্বস্ততার ফলে যেসমস্ত বিপর্যয় আসতে পারে, সেগুলোর বিষয়ে সাবধান করে। বিভিন্ন বংশকে আশীর্বাদ করার পর মোশি ১২০ বছর বয়সে মারা যান আর তাকে সমাহিত করা হয়। শোক পর্ব ৩০ দিন চলতে থাকে, যা দ্বিতীয় বিবরণ বইটি যতখানি সময়কে অন্তর্ভুক্ত করেছে, তার প্রায় অর্ধেক সময়ের সমান।

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

৩২:১৩, ১৪—ইস্রায়েলীয়দের যেহেতু কোনো মেদ খাওয়া নিষেধ ছিল, তা হলে তারা যে “মেষশাবকের মেদ” খেত, সেটার অর্থ কী ছিল? এখানে এই অভিব্যক্তিটি রূপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং পালের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট পশুকে চিত্রিত করে। কথাগুলো রূপক তার ইঙ্গিত, এই বিষয়টার দ্বারা জানা যায় যে, মূল ইব্রীয় ভাষায় সেই একই পদ “গমের যকৃতের মেদ” ও “দ্রাক্ষার রক্ত” সম্বন্ধে বলে।

৩৩:১-২৯—মোশি যে-আশীর্বাদগুলো দিয়ে ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আশীর্বাদ করেছিলেন, তাতে শিমিয়োনের বিষয় কেন নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি? তার কারণ শিমিয়োন ও সেইসঙ্গে লেবি ‘নিষ্ঠুরের’ মতো কাজ করেছিল এবং তাদের ক্রোধ ছিল “প্রচণ্ড।” (আদিপুস্তক ৩৪:১৩-৩১; ৪৯:৫-৭) তাদের উত্তরাধিকার অন্য বংশদের সমতুল্য ছিল না। লেবি ৪৮টা শহর পেয়েছিলেন এবং শিমিয়োনের অংশটুকু যিহূদার এলাকার মধ্যে ছিল। (যিহোশূয় ১৯:৯; ২১:৪১, ৪২) তাই, মোশি নির্দিষ্টভাবে শিমিয়োনকে আশীর্বাদ করেননি। কিন্তু, শিমিয়োনের আশীর্বাদ সাধারণভাবে ইস্রায়েলকে দেওয়া আশীর্বাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

৩১:১২. মণ্ডলীর সভাগুলোতে অল্পবয়সীদের বড়দের সঙ্গে বসা উচিত এবং শোনার ও শেখার প্রচেষ্টা করা উচিত।

৩২:৪. যিহোবার কার্যাবলি সিদ্ধ কারণ তিনি ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা, প্রেম ও শক্তি, তাঁর এই গুণগুলোকে পুরোপুরি ভারসাম্যতার সঙ্গে প্রকাশ করেন।

আমাদের কাছে বহুমূল্য

দ্বিতীয় বিবরণ যিহোবাকে “একই সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW]” হিসেবে উপস্থাপন করে। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪) এই বইটি হল এমন এক বই, যা ঈশ্বরের সঙ্গে এক অদ্বিতীয় সম্পর্কে থাকা লোকেদের সম্বন্ধে জানায়। এ ছাড়া, দ্বিতীয় বিবরণ বইটি প্রতিমাপূজার বিরুদ্ধে সাবধান করে এবং সত্য ঈশ্বরকে একাগ্র ভক্তি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।

নিশ্চিতভাবেই, আমাদের কাছে দ্বিতীয় বিবরণ হল বহুমূল্য! যদিও আমরা ব্যবস্থার অধীনে নই, তবুও আমরা এর থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি, যেগুলো আমাদের ‘সমস্ত হৃদয়, প্রাণ, ও শক্তি দিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে [“যিহোবাকে,” NW] প্রেম করিতে’ সাহায্য করবে।—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৫.

[পাদটীকা]

^ শেষ অধ্যায়টি, যেখানে মোশির মৃত্যুর বিবরণ রয়েছে সেটি হয়তো যিহোশূয় অথবা মহাযাজক ইলীয়াসর যোগ করেছিলেন।

[২৪ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

সেয়ীর

কাদেশ-বর্ণেয়

সীনয় (হোরেব) পর্বত

লোহিত সমু দ্র

[সৌজন্যে]

Based on maps copyrighted by Pictorial Archive (Near Eastern History) Est. and Survey of Israel

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

মোশির বক্তৃতাগুলো হচ্ছে দ্বিতীয় বিবরণের প্রধান অংশ

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার জোগানো মান্নার ব্যবস্থা থেকে কী শিক্ষা দেওয়া হয়েছে?

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

জাঁতা কিংবা তার ওপরের পাট বন্ধক রাখাকে “প্রাণ” বন্ধক রাখার সমতুল্য করা হয়েছিল