সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

স্মরণে রাখার মতো এক জন্ম

স্মরণে রাখার মতো এক জন্ম

স্মরণে রাখার মতো এক জন্ম

“তোমাদের জন্য ত্রাণকর্ত্তা জন্মিয়াছেন; তিনি খ্রীষ্ট প্রভু।”লূক ২:১১.

প্রায় দুহাজার বছর আগে, বৈৎলেহম নগরের একজন মহিলা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। স্থানীয় অল্প কয়েক জন লোক এই জন্মের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পেরেছিল। কিন্তু কিছু মেষপালক, যারা মাঠে তাদের পশুপালের সঙ্গে রাত কাটাচ্ছিল, তারা দূতেদের এক বৃহৎ দলকে দেখেছিল এবং এই গান গাইতে শুনেছিল: “ঊর্দ্ধ্বলোকে ঈশ্বরের মহিমা, পৃথিবীতে [তাঁহার] প্রীতিপাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি।”—লূক ২:৮-১৪.

মেষপালকরা এরপর মরিয়ম এবং তার স্বামী যোষেফকে আস্তাবলের মধ্যে খুঁজে পেয়েছিল, ঠিক যেমনটা স্বর্গদূত তারা যেখানে থাকবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। মরিয়ম, যিনি শিশুটির নাম যিশু রেখেছিলেন, তিনি তাঁকে আস্তাবলের যাবপাত্রে শুইয়ে রেখেছিলেন। (লূক ১:৩১; ২:১২) বর্তমানে অর্থাৎ দুহাজার বছর পরে, সমস্ত মানবজাতির প্রায় এক তৃতীয়াংশ দাবি করে যে, তারা যিশু খ্রিস্টকে অনুসরণ করে। আর তাঁর জন্মকে ঘিরে বিভিন্ন ঘটনা এমন এক গল্পের ভিত্তি গঠন করেছে, যা সম্ভবত মানব ইতিহাসের যেকোনো গল্পের চেয়ে বেশি বার বলা হয়েছে।

গোঁড়া ক্যাথলিক ঐতিহ্য বিদ্যমান এবং ঐতিহ্যগত উৎসবগুলোর ব্যাপারে পটু এমন এক দেশ হিসেবে স্পেন বৈৎলেহমের সেই অদ্বিতীয় রাত উদ্‌যাপন করার জন্য অনেক পন্থা গড়ে তুলেছে।

স্প্যানিশ বড়দিন

ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে, যিশুর জন্ম বিষয়ক দৃশ্য স্প্যানিশ উদ্‌যাপনগুলোর সবচেয়ে পরিচিত দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে। অনেক পরিবার যাবপাত্রের একটা ছোট প্রতিরূপ তৈরি করে, যেখানে যিশুকে শুইয়ে রাখা হয়েছিল। মাটি দিয়ে তৈরি মূর্তিগুলো মেষপালক এবং ম্যাজাই (অথবা “তিন জন রাজা”) ও সেইসঙ্গে যোষেফ, মরিয়ম এবং যিশুকে তুলে ধরে। বড়দিনের মরশুমে প্রায় স্বাভাবিক আকারের বিভিন্ন মূর্তিসহ যিশুর জন্ম বিষয়ক বৃহৎ দৃশ্য প্রায়ই টাউন হলের কাছে স্থাপন করা হয়। ফ্রান্সিস অফ আসিজি, যিশুর জন্মের সুসমাচারের বিবরণের প্রতি লোকেদের মনোযোগ আকর্ষণ করানোর জন্য সম্ভবত ইতালিতে এই প্রথার প্রবর্তন করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে, ফ্রান্সিসকান (সাধু ফ্রান্সিসের মত অনুসরণকারী) যাজক সম্প্রদায় স্পেন এবং অন্যান্য অনেক দেশে এই প্রথাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল।

স্প্যানিশ বড়দিন উদ্‌যাপনগুলোতে ম্যাজাই এক বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে, অনেকটা অন্যান্য দেশের স্যান্টা ক্লজের মতো। ধরে নেওয়া হয় যে, ৬ই জানুয়ারি, দিয়া দ্য রেইস (রাজাদের দিন) এর সময় ম্যাজাই স্প্যানিশ ছেলেমেয়েদের উপহার দিয়ে থাকে, ঠিক যেমন জনপ্রিয় বিশ্বাস অনুযায়ী ম্যাজাই নবজাত যিশুর জন্য উপহার নিয়ে এসেছিল। কিন্তু, খুব কম লোকই জানে যে, কত জন ম্যাজাই যিশুকে দেখতে এসেছিল, তা সুসমাচারের বিবরণ উল্লেখ করে না। রাজার পরিবর্তে তাদেরকে বরং জ্যোতিষী হিসেবে আরও সঠিকভাবে শনাক্ত করা হয়। * এ ছাড়া, ম্যাজাইয়ের সাক্ষাতের পর, হেরোদ যিশুকে হত্যা করার জন্য বৈৎলেহমের “দুই বৎসর ও তাহার অল্প বয়সের” সমস্ত পুত্র সন্তানকে হত্যা করেছিলেন। এটা দেখায় যে, যিশুর জন্মের বেশ কিছুদিন পরে তারা সাক্ষাৎ করেছিল।—মথি ২:১১, ১৬.

দ্বাদশ শতাব্দী থেকে, কিছু স্প্যানিশ শহরে বৈৎলেহমে মেষপালকদের ও পরে ম্যাজাইয়ের সাক্ষাৎসহ নাটকের আকারে যিশুর জন্ম অভিনয় করে দেখানো হয়। বর্তমানে, প্রতি বছর ৫ই জানুয়ারি বেশির ভাগ স্প্যানিশ শহর কাবালগাতা অথবা প্রদর্শনীর আয়োজন করে, যে-সময়ে “তিন জন রাজা” জাঁকজমকপূর্ণ ভ্রাম্যমাণ মঞ্চে চড়ে শহরের মধ্যে দিয়ে যায় এবং দর্শকদের ক্যান্ডি বিতরণ করে। বড়দিনের ঐতিহ্যগত সাজসজ্জা এবং ভিইয়ানসিকোস (কীর্তন) উৎসবমুখর উপলক্ষকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।

বড়দিনের আগের রাতে (২৪শে ডিসেম্বর) বেশির ভাগ স্প্যানিশ পরিবার বিশেষ রাতের খাবার খায়। ঐতিহ্যগত খাবারের মধ্যে রয়েছে, টুরন (কাঠবাদাম এবং মধু দিয়ে তৈরি মিষ্টি), বাদামের গুড়াঁ, চিনি, ডিম ইত্যাদি মিশ্রিত ছোট কেক, শুকনো ফল, আগুনে ঝলসানো ভেড়ার মাংস এবং সামুদ্রিক খাবার। পরিবারের সদস্যরা, এমনকি যারা দূরদূরান্তে বাস করে, তারাও হয়তো এই সময় একত্রিত হওয়ার জন্য বিশেষ চেষ্টা করে থাকে। ৬ই জানুয়ারিতে আরেকটা ঐতিহ্যগত খাবারের সময় পরিবারগুলো রসকনে দ্য রেইস, ‘রাজাদের’ গোলাকৃতি কেক খায়, যার ভিতরে একটা সরপ্রেসা (ছোট্ট মূর্তি) লুকানো থাকে। রোমীয়দের সময়ে এইরকম এক প্রথা একজন দাসকে একদিনের জন্য “রাজা” হওয়ার সুযোগ দিত, যার অংশটুকুর মধ্যে লুকানো সামগ্রী থাকত।

“বছরের সবচেয়ে আনন্দঘন এবং ব্যস্ত সময়”

যেকোনো স্থানীয় প্রথাই গড়ে উঠুক না কেন, বড়দিন এখন পৃথিবীর সবচেয়ে প্রধান উৎসব হয়ে উঠেছে। ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া বড়দিনকে “পৃথিবীব্যাপী লক্ষ লক্ষ খ্রিস্টান এবং কিছু ন-খ্রিস্টানের জন্য বছরের সবচেয়ে আনন্দঘন এবং ব্যস্ত সময়” বলে বর্ণনা করেছে। এটা কি ভাল কিছু?

স্পষ্টতই, খ্রিস্টের জন্ম এক ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। দূতেরা যে এটাকে ‘পৃথিবীতে [তাঁহার] প্রীতিপাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তির’ পূর্বলক্ষণ হিসেবে ঘোষণা করেছিল, তা স্পষ্টভাবে এর তাৎপর্যকে তুলে ধরে।

যাই হোক, “খ্রিস্টধর্মের শুরুর দিকে, যিশুর জন্মকে উৎসব হিসেবে পালন করা হতো না,” স্প্যানিশ সাংবাদিক খোয়ান আরিয়াস বলেন। যদি তা-ই হয়, তা হলে বড়দিন উদ্‌যাপন কোথা থেকে এসেছে? যিশুর জন্ম এবং জীবন স্মরণ করার সবচেয়ে উত্তম উপায়টা কী? পরের প্রবন্ধে আপনি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাবেন।

[পাদটীকা]

^ লা সাগ্রাদা এসক্রিটুরা—টেক্সটো ই কোমেনটেরিয়ো পোর প্রোফেসোরিস দ্য লা কমপানিয়া দ্য খেসুস (পবিত্র শাস্ত্র—কোম্পেনি অফ যিজাস এর অধ্যাপকদের দ্বারা লিখিত পদ এবং ব্যাখ্যা, ইংরেজি) ব্যাখ্যা করে যে, “পারসিক, মাদীয় ও কল্‌দীয়দের মধ্যে ম্যাজাই এক যাজকশ্রেণী গঠন করেছিল, যারা জাদুবিদ্যা সংক্রান্ত বিজ্ঞান, জ্যোতিষবিদ্যা এবং চিকিৎসাবিদ্যা প্রবর্তন করেছিল।” যাই হোক, মধ্যযুগে ম্যাজাইয়ের যে-দল বালক যিশুকে দেখতে গিয়েছিল, তাদেরকে সাধু বলে গণ্য করা হয়েছিল এবং মেলখিয়র, গ্যাসপার, বালটাজার নামে ভূষিত করা হয়েছিল। অনুমান করা হয় যে, তাদের দেহের অবশিষ্টাংশ জার্মানির কোলোন ক্যাথিড্রালে রাখা হয়েছে।