সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি যিহোবার সাহায্য গ্রহণ করেন?

আপনি কি যিহোবার সাহায্য গ্রহণ করেন?

আপনি কি যিহোবার সাহায্য গ্রহণ করেন?

“প্রভু [“যিহোবা,” NW] আমার সহায়, আমি ভয় করিব না।”ইব্রীয় ১৩:৬.

১, ২. আমাদের জীবনে যিহোবার সাহায্য এবং নির্দেশনা গ্রহণ করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

 কল্পনা করুন যে, আপনি একটা পাহাড়ের দুর্গম পথ দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে হাঁটছেন। তবে, আপনি একা নন কারণ একজন পথপ্রদর্শক আপনার সঙ্গে আছেন আর সেখানে তিনিই হলেন সবচেয়ে উত্তম পথপ্রদর্শক। আপনার চেয়ে তার অভিজ্ঞতা এবং অক্লান্ত কর্মশক্তি অনেক গুণ বেশি কিন্তু তিনি ধৈর্য ধরে আপনার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটছেন। তিনি লক্ষ করেন যে, মাঝে মাঝে আপনি হোঁচট খাচ্ছেন। আপনার নিরাপত্তার কথা ভেবে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এক স্থানে আপনাকে সাহায্য করার জন্য তিনি আপনার দিকে তার হাত বাড়িয়ে দেন। আপনি কি সেই সাহায্য নিতে প্রত্যাখ্যান করবেন? অবশ্যই না! কারণ আপনার নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

খ্রিস্টান হিসেবে আমরাও এক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পথে চলছি। সেই সংকীর্ণ পথে আমাদের কি একাই চলতে হবে? (মথি ৭:১৪) না, কারণ বাইবেল দেখায় যে, সর্বোত্তম পথপ্রদর্শক যিহোবা ঈশ্বর মানুষদেরকে তাঁর সঙ্গে গমনাগমন করার বা চলার সুযোগ দিয়েছেন। (আদিপুস্তক ৫:২৪; ৬:৯) যিহোবা কি তাঁর দাসদের চলার সময় সাহায্য করেন? তিনি বলেন: “কেননা আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর তোমার দক্ষিণ হস্ত ধারণ করিব; তোমাকে বলিব, ভয় করিও না, আমি তোমার সাহায্য করিব।” (যিশাইয় ৪১:১৩) আমাদের দৃষ্টান্তের সেই পথপ্রদর্শকের মতো যিহোবা সদয়ভাবে সেই সমস্ত ব্যক্তির দিকে তাঁর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এবং তাদের সঙ্গী হন, যারা তাঁর সঙ্গে চলতে চায়। নিশ্চিতভাবেই, আমাদের মধ্যে কেউই তাঁর সাহায্যকে প্রত্যাখ্যান করতে চাইব না!

৩. এই আলোচনার সময় আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?

আগের প্রবন্ধে আমরা চারটে উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি, যেগুলোর মাধ্যমে যিহোবা তাঁর প্রাচীনকালের লোকেদের সাহায্য করেছিলেন। আজকেও কি তিনি একই উপায়গুলোর দ্বারা তাঁর লোকেদের সাহায্য করেন? আর আমরা যে এই ধরনের যেকোনো সাহায্য গ্রহণ করি, তা কীভাবে নিশ্চিত হতে পারি? আসুন আমরা এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করি। তা করে আমরা আরও বেশি আস্থা রাখতে পারব যে, যিহোবা সত্যিই আমাদের সহায়।—ইব্রীয় ১৩:৬.

দূতেদের কাছ থেকে সাহায্য

৪. আজকে ঈশ্বরের দাসেরা কেন দূতেদের সাহায্যের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে?

দূতেরা কি যিহোবার বর্তমান দিনের দাসদের সাহায্য করে? হ্যাঁ, তারা করে। এটা ঠিক যে, আজকে সত্য উপাসকদের বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য তারা দৃশ্যতভাবে উপস্থিত হয় না। এমনকি বাইবেলের সময়েও দূতেরা মাত্র অল্প কয়েকটা ক্ষেত্রে এভাবে সাহায্য করেছিল। তারা যা করেছিল, সেগুলোর বেশির ভাগই মানুষের কাছে অদৃশ্য ছিল, যেমনটা আজকের দিনেও হয়ে থাকে। তা সত্ত্বেও, ঈশ্বরের দাসেরা অনেক উৎসাহিত হয়েছিল, যখন তারা বুঝতে পেরেছিল যে, তাদেরকে সাহায্য করার জন্য দূতেরা সর্বদা রয়েছে। (২ রাজাবলি ৬:১৪-১৭) আমাদের একইরকম মনে করার উত্তম কারণ রয়েছে।

৫. বাইবেল কীভাবে দেখায় যে, আজকে প্রচার কাজে দূতেরা জড়িত রয়েছে?

যিহোবার দূতেরা বিশেষভাবে সেই কাজের প্রতি আগ্রহী, যে-কাজে আমরা জড়িত। সেই কাজটা কী? এর উত্তর আমরা প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬ পদে পেতে পারি: “আমি আর এক দূতকে দেখিলাম, তিনি আকাশের মধ্যপথে উড়িতেছেন, তাঁহার কাছে অনন্তকালীন সুসমাচার আছে, যেন তিনি পৃথিবী-নিবাসীদিগকে, প্রত্যক জাতি ও বংশ ও ভাষা ও প্রজাবৃন্দকে, সুসমাচার জানান।” এই “অনন্তকালীন সুসমাচার” স্পষ্টতই “রাজ্যের” সেই ‘সুসমাচারের’ সঙ্গে জড়িত, যা যিশুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী এই বিধিব্যবস্থা শেষ হওয়ার আগে “সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে।” (মথি ২৪:১৪) অবশ্য, দূতেরা সরাসরি প্রচার করছে না। যিশু মানুষকে এই গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন। (মথি ২৮:১৯, ২০) এটা জানা কি উৎসাহজনক নয় যে, আমরা যখন সেই দায়িত্ব পূর্ণ করি, তখন বিজ্ঞ এবং শক্তিশালী আত্মিক প্রাণী, পবিত্র দূতেদের কাছ থেকে আমরা সাহায্য পাই?

৬, ৭. (ক) কোন বিষয়টা ইঙ্গিত করে যে, দূতেরা আমাদের প্রচার কাজে সমর্থন করছে? (খ) যিহোবার দূতেদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার বিষয়ে কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি?

আমাদের কাজে দূতেরা যে সাহায্য করে তার অনেক প্রমাণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা প্রায়ই শুনে থাকি যে, পরিচর্যার সময় যিহোবার সাক্ষিরা এমন একজন ব্যক্তির দেখা পান, যিনি সত্য খুঁজে পেতে সাহায্য চেয়ে সম্প্রতি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। এই ধরনের অভিজ্ঞতাগুলো এত অহরহ ঘটে থাকে যে, এগুলোকে নিছক কাকতালীয় ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দূতেদের কাছ থেকে এই ধরনের সাহায্যের ফলে দিন দিন আরও বেশি লোকেরা সেই বিষয়টা করতে শিখছে, যা “আকাশের মধ্যপথে উড়িতেছেন,” এমন ‘এক দূত’ ঘোষণা করেছিলেন: “ঈশ্বরকে ভয় কর ও তাঁহাকে গৌরব প্রদান কর।”—প্রকাশিত বাক্য ১৪:৭.

যিহোবার পরাক্রমী দূতেদের সমর্থন লাভ করার জন্য আপনি কি আকুল আকাঙ্ক্ষা করেন? তা হলে, আপনার পরিচর্যায় যথাসাধ্য করুন। (১ করিন্থীয় ১৫:৫৮) যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া এই বিশেষ কার্যভারে যখন আমরা নিজেদের বিলিয়ে দিই, তখন তাঁর দূতেদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি।

প্রধান দূতের কাছ থেকে সাহায্য

৮. স্বর্গে যিশুর কোন উচ্চ অবস্থান রয়েছে এবং কেন সেটা আমাদের জন্য আশ্বাসদায়ক?

যিহোবা আমাদের আরেকজন দূতের মাধ্যমেও সাহায্য জোগান। প্রকাশিত বাক্য ১০:১ পদ এক ভয়ংকর ‘শক্তিমান দূতের’ বিষয়ে বলে, যাঁর “মুখ সূর্য্যতুল্য।” দর্শনে দেখা এই দূত স্পষ্টতই স্বর্গীয় ক্ষমতায় গৌরবান্বিত যিশু খ্রিস্টকে চিত্রিত করে। (প্রকাশিত বাক্য ১:১৩, ১৬) যিশু কি আসলেই একজন দূত? এক অর্থে হ্যাঁ, কারণ তিনি হলেন প্রধান দূত। (১ থিষলনীকীয় ৪:১৬) যিহোবার সমস্ত আত্মিক পুত্রদের মধ্যে যিশু হলেন সবচেয়ে পরাক্রমশালী। যিহোবা তাঁর সমস্ত দূত বাহিনীকে যিশুর আদেশাধীনে রেখেছেন। এই প্রধান দূত বাস্তবিকপক্ষেই সাহায্যের এক শক্তিশালী উৎস। কোন কোন উপায়ে?

৯, ১০. (ক) আমরা যখন পাপ করি, তখন যিশু কীভাবে আমাদের “সহায়” হিসেবে কাজ করেন? (খ) যিশুর উদাহরণ থেকে আমরা কোন সাহায্য পেতে পারি?

বৃদ্ধ প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “যদি কেহ পাপ করে, তবে পিতার কাছে আমাদের এক সহায় আছেন, তিনি ধার্ম্মিক যীশু খ্রীষ্ট।” (১ যোহন ২:১) কেন যোহন বলেছেন যে, বিশেষভাবে আমরা যখন পাপ করি, তখন যিশু আমাদের “সহায়”? আসলে, আমরা প্রতিদিন পাপ করি এবং পাপ মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। (উপদেশক ৭:২০; রোমীয় ৬:২৩) কিন্তু, আমাদের পাপের জন্য যিশু তাঁর জীবন বলি হিসেবে উৎসর্গ করেছিলেন। আর তিনি আমাদের পক্ষে মিনতি করার জন্য আমাদের করুণাময় পিতার পাশে রয়েছেন। আমাদের প্রত্যেকের এই ধরনের সাহায্যের প্রয়োজন। কীভাবে আমরা তা গ্রহণ করতে পারি? আমাদের পাপের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে এবং যিশুর বলিদানের ভিত্তিতে ক্ষমা চাইতে হবে। এ ছাড়া, আমাদের একই পাপ পুনরায় করাও এড়িয়ে চলতে হবে।

১০ আমাদের জন্য মৃত্যুবরণ করা ছাড়াও যিশু এক নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছেন। (১ পিতর ২:২১) তাঁর উদাহরণ আমাদের নির্দেশনা দেয়, আমাদের পথ তৈরি করতে সাহায্য করে, যাতে আমরা গুরুতর পাপ এড়াতে এবং যিহোবা ঈশ্বরকে খুশি করতে পারি। এই ধরনের সাহায্যের জন্য আমরা কি আনন্দিত নই? যিশু তাঁর অনুসারীদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, আরেকটা সহায় জোগানো হবে।

পবিত্র আত্মার সাহায্য

১১, ১২. যিহোবার আত্মা কী, এটা কতটা শক্তিশালী এবং আজকে কেন আমাদের তা প্রয়োজন?

১১ যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমি পিতার নিকটে নিবেদন করিব, এবং তিনি আর এক সহায় তোমাদিগকে দিবেন, যেন তিনি চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকেন; তিনি সত্যের আত্মা; জগৎ তাঁহাকে গ্রহণ করিতে পারে না।” (যোহন ১৪:১৬, ১৭) এই “সত্যের আত্মা” অথবা পবিত্র আত্মা কোনো ব্যক্তি নয় কিন্তু এক শক্তি—যিহোবার নিজের সক্রিয় শক্তি। এর শক্তি অসীম। এটা এমন এক শক্তি, যা যিহোবা নিখিলবিশ্ব সৃষ্টি করতে, চমৎকার অলৌকিক কাজ সম্পাদন করতে এবং দর্শনের সাহায্যে তাঁর ইচ্ছা সম্বন্ধে প্রকাশ করতে ব্যবহার করেছিলেন। যেহেতু যিহোবা আজকে এই নির্দিষ্ট উপায়গুলোতে তাঁর আত্মা ব্যবহার করেন না, তাই এটার অর্থ কি এই যে আমাদের এর প্রয়োজন নেই?

১২ কখনোই না! এই ‘বিষম সময়ে’ আমাদের আগের চেয়ে এখন আরও বেশি করে যিহোবার আত্মার সাহায্য প্রয়োজন। (২ তীমথিয় ৩:১) এটা আমাদের পরীক্ষা সহ্য করতে শক্তিশালী করে। এটা আমাদের সেই চমৎকার গুণাবলি গড়ে তুলতে সাহায্য করে, যা আমাদেরকে যিহোবার এবং আমাদের আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের আরও নিকটবর্তী করে। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) তা হলে, কীভাবে আমরা যিহোবার কাছ থেকে আসা এই চমৎকার সাহায্য থেকে উপকার পেতে পারি?

১৩, ১৪. (ক) কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, যিহোবা স্বেচ্ছায় তাঁর লোকেদের জন্য পবিত্র আত্মা জোগান? (খ) কোন ধরনের কাজের মাধ্যমে আমরা হয়তো দেখাতে পারি যে, আমরা আসলে পবিত্র আত্মার দান গ্রহণ করি না?

১৩ প্রথমত, পবিত্র আত্মা চেয়ে আমাদের প্রার্থনা করা প্রয়োজন। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা মন্দ হইয়াও যদি তোমাদের সন্তানদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্য দান করিতে জান, তবে ইহা কত অধিক নিশ্চয় যে, স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।” (লূক ১১:১৩) হ্যাঁ, যিহোবা হলেন সর্বোত্তম পিতা, যা আপনি কল্পনা করতে পারেন। আমরা যদি বিশ্বাস সহকারে আন্তরিকভাবে তাঁর কাছে পবিত্র আত্মার জন্য যাঞ্চা করি, তা হলে এটা ভাবাই যায় না যে তিনি আমাদের এই উপহার দিতে অস্বীকার করবেন। অতএব, প্রশ্ন হল আমরা কি পবিত্র আত্মার জন্য যাঞ্চা করি? প্রতিদিন আমাদের প্রার্থনায় এই অনুরোধ জানানো উচিত।

১৪ দ্বিতীয়ত, এর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করার দ্বারা আমরা সেই উপহার গ্রহণ করি। উদাহরণস্বরূপ: ধরুন একজন খ্রিস্টান অশ্লীল বিষয়গুলো দেখার প্রবণতার সঙ্গে লড়াই করছেন। এই নোংরা অভ্যাসকে প্রতিরোধ করতে তাকে সাহায্য করার জন্য তিনি পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করেছেন। তিনি খ্রিস্টান প্রাচীনদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছেন এবং তারা তাকে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য, এমনকি এই ধরনের নোংরা বিষয়বস্তুর ধারেকাছে যাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। (মথি ৫:২৯) কী হবে যদি তিনি তাদের পরামর্শ না শোনেন এবং আবারও প্রলোভনে পা দেন? তাকে সাহায্য করার জন্য পবিত্র আত্মা চেয়ে তার প্রার্থনার সঙ্গে তিনি কি মিল রেখে কাজ করছেন? নাকি এর পরিবর্তে তিনি ঈশ্বরের আত্মাকে দুঃখিত করার ঝুঁকির মুখে রয়েছেন এবং এই উপহার লাভ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন? (ইফিষীয় ৪:৩০) আসলে আমরা ক্রমাগত যিহোবার কাছ থেকে আসা এই চমৎকার সাহায্য লাভ করে চলেছি কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমাদের সকলের যথাসাধ্য করা প্রয়োজন।

ঈশ্বরের বাক্য থেকে সাহায্য

১৫. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা বাইবেলকে হালকাভাবে নিই না?

১৫ বহু শতাব্দী ধরে যিহোবার বিশ্বস্ত দাসদের জন্য বাইবেল সাহায্যের এক উৎস হয়ে এসেছে। কিন্তু, পবিত্র শাস্ত্রকে হালকাভাবে নেওয়ার পরিবর্তে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এটি সাহায্যের জন্য কত শক্তিশালী এক উৎস। সেই সাহায্য গ্রহণ করার সঙ্গে প্রচেষ্টা জড়িত। বাইবেল পড়াকে আমাদের রোজকার তালিকার একটা অংশ করে তুলতে হবে।

১৬, ১৭. (ক) গীতসংহিতা ১:২, ৩ পদ কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য পড়ার পুরস্কারগুলো সম্বন্ধে বর্ণনা করে? (খ) গীতসংহিতা ১:৩ পদ কীভাবে কঠোর পরিশ্রমের চিত্র তুলে ধরে?

১৬ গীতসংহিতা ১:২, ৩ পদ ধার্মিক ব্যক্তির সম্বন্ধে বলে যে, সে “সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে। সে জলস্রোতের তীরে রোপিত বৃক্ষের সদৃশ হইবে, যাহা যথাসময়ে ফল দেয়, যাহার পত্র ম্লান হয় না; আর সে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়।” আপনি কি এই বাক্যাংশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা লক্ষ করেছেন? এই কথাগুলো পড়া এবং এই উপসংহারে আসা খুবই সহজ যে, এটা কেবল এক শান্তিপূর্ণ পরিবেশের সুন্দর চিত্র অংকন করে—নদীর তীরে বেড়ে ওঠা ছায়াদানকারী এক গাছ। এইরকম এক জায়গায় দুপুরবেলা একটু ঘুমিয়ে নেওয়া কত শান্তিময়ই না হবে! কিন্তু, এই গীত আমাদেরকে বিশ্রামের কথা চিন্তা করতে বলছে না। এটা বেশ ভিন্ন এক চিত্র তুলে ধরছে, যা কঠোর পরিশ্রম করার বিষয়ে বলছে। কীভাবে?

১৭ লক্ষ করুন যে, এই গাছ নিছক ছায়াদানকারী এক গাছ নয়, যা নদীর পাশে এমনি এমনিই বেড়ে উঠেছে। এটা ফল উৎপাদনকারী এক গাছ, বাছাই করা এক জায়গায়—“জলস্রোতের তীরে”—চিন্তাভাবনা করেই ‘রোপণ’ করা হয়েছে। কোনো জলস্রোতের কাছে লাগানো একটা গাছের চেয়ে আর কোন গাছই বা বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে? আসলে, কোনো ফল বাগানের একজন মালিক হয়তো তার বহুমূল্য গাছগুলোর গোড়ায় জল সরবরাহের জন্য জলসেচনের নালা খনন করতে পারেন। হ্যাঁ, বিষয়টা একেবারে পরিষ্কার! যদি আধ্যাত্মিক অর্থে আমরা সেই গাছের মতো সমৃদ্ধ হই, তা হলে এর কারণ হল আমাদের সাহায্য করার জন্য অনেক কাজ করা হয়েছে। আমরা এমন এক সংগঠনের সঙ্গে মেলামেশা করি, যা সরাসরি আমাদের দিকে বিশুদ্ধ জল নিয়ে আসে, তবে আমাদের অবশ্যই নিজেদের অংশটুকু করতে হবে। আমাদের এই মূল্যবান জল থেকে উপকার গ্রহণ করার মতো এক অবস্থানে থাকতে হবে, ঈশ্বরের বাক্যের সত্য যাতে আমাদের মনে ও হৃদয়ে পৌঁছায় এর জন্য যে-ধ্যান এবং গবেষণা করা প্রয়োজন, তাতে রত থাকতে হবে। এভাবে, আমরাও উত্তম ফল উৎপন্ন করতে পারব।

১৮. আমাদের প্রশ্নগুলোর জন্য বাইবেলের উত্তর খুঁজে পেতে কী করা প্রয়োজন?

১৮ বাইবেল আমাদের কোনো উপকারই করবে না যদি আমরা এটিকে না খুলে কেবল শেলফের মধ্যেই রেখে দিই। অথবা এটা কোনো জাদুমন্ত্র বা কবচ নয়—যেন আমরা আমাদের চোখ বন্ধ করে বাইবেলের যেকোনো একটা পৃষ্ঠা খুলেই আশা করব যে, যে-পৃষ্ঠাটা আমাদের সামনে খোলা রয়েছে সেখানেই আমাদের প্রশ্নের উত্তরটা থাকবে। আমরা যখন বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুখোমুখি হই, তখন আমাদের মাটির নিচে থাকা গুপ্তধনের ক্ষেত্রে যেমন, তেমনই ‘ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের’ জন্য খনন করতে হবে। (হিতোপদেশ ২:১-৫) শাস্ত্রীয় পরামর্শ খোঁজার জন্য প্রায়ই অধ্যবসায় এবং মনোযোগের সঙ্গে গবেষণা করা প্রয়োজন, যা আমাদের নির্দিষ্ট প্রয়োজনগুলোর বিষয়ে আলোচনা করে। আমাদের গবেষণার কাজে সাহায্য করতে আমাদের কাছে বাইবেলভিত্তিক অনেক প্রকাশনা রয়েছে। ঈশ্বরের বাক্যে প্রজ্ঞার রত্নগুলো পাওয়ার জন্য উৎসুকভাবে খনন করতে আমরা যখন এগুলো ব্যবহার করি, তখন সত্যি সত্যিই আমরা যিহোবার সাহায্যকে ব্যবহার করছি।

সহবিশ্বাসীদের মাধ্যমে সাহায্য

১৯. (ক) প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকার প্রবন্ধগুলোকে কেন সহবিশ্বাসীদের দ্বারা জোগানো এক সাহায্য হিসেবে দেখা যেতে পারে? (খ) আমাদের পত্রিকাগুলোর নির্দিষ্ট কোন প্রবন্ধের দ্বারা আপনি সাহায্য পেয়েছেন?

১৯ যিহোবার মনুষ্য দাসেরা সবসময় একে অপরের সাহায্যের উৎস হয়ে এসেছে। এই ক্ষেত্রে যিহোবা কি পরিবর্তিত হয়েছেন? কখনোই না। কোনো সন্দেহ নেই যে, আমরা প্রত্যেকে এমন ঘটনাগুলোর কথা মনে করতে পারি, যখন ঠিক যেসময়ে আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল, ঠিক তখনই আমাদের সহবিশ্বাসীদের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছি। উদাহরণস্বরূপ, আপনি কি প্রহরীদুর্গ অথবা সচেতন থাক! পত্রিকার এমন কোনো প্রবন্ধের কথা স্মরণ করতে পারেন, যা আপনাকে যখন আপনার এর প্রয়োজন ছিল, তখন সান্ত্বনা দিয়েছে অথবা কোনো সমস্যা সমাধান করতে বা আপনার বিশ্বাসের পক্ষে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছে? সেই সাহায্য যিহোবা ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ মাধ্যমে জুগিয়েছিলেন, যাদেরকে “উপযুক্ত সময়ে খাদ্য” জোগানোর জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.

২০. কোন কোন উপায়ে খ্রিস্টান প্রাচীনরা ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ হিসেবে প্রমাণিত হন?

২০ কিন্তু, সহবিশ্বাসীদের কাছ থেকে বেশির ভাগ সময়ই আমরা সরাসরি সাহায্য পেয়ে থাকি। একজন খ্রিস্টান প্রাচীনের দেওয়া একটা বক্তৃতা আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে অথবা তার কোনো পালকীয় সাক্ষাৎ আমাদের কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে সাহায্য করে বা তার কোনো সদয় পরামর্শ আমাদের কোনো দুর্বলতা বুঝতে এবং তা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। একজন কৃতজ্ঞ খ্রিস্টান বোন, একজন প্রাচীন তাকে যে-সাহায্য করেছিলেন সেই বিষয়ে লিখেন: “ক্ষেত্রের পরিচর্যায়, আমার অনুভূতি প্রকাশ করতে সাহায্য করার জন্য তিনি সময় করে নিয়েছিলেন। মাত্র আগের দিন রাতেই আমি এমন কারও জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, যার সঙ্গে আমি কথা বলতে পারি। পরের দিনই এই ভাই আমার সঙ্গে সমবেদনা দেখিয়ে কথা বলেছিলেন। তিনি আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে, বছরের পর বছর ধরে যিহোবা কীভাবে আমাকে সাহায্য করেছেন। এই প্রাচীনকে আমার কাছে পাঠানোর জন্য আমি যিহোবার কাছে কৃতজ্ঞ।” এই সমস্ত উপায়ে খ্রিস্টান প্রাচীনরা দেখান যে, তারা ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ বা দানরূপ মানুষ, যাদেরকে যিহোবা যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে জুগিয়েছেন, যাতে তারা জীবনের পথে ধৈর্য ধরার জন্য আমাদেরকে সাহায্য করেন।—ইফিষীয় ৪:৮.

২১, ২২. (ক) মণ্ডলীর সদস্যরা যখন ফিলিপীয় ২:৪ পদে পাওয়া পরামর্শ কাজে লাগায়, তখন কোন ফলগুলো হয়? (খ) কেন এমনকি সামান্য দয়ার কাজও গুরুত্বপূর্ণ?

২১ প্রাচীনরা ছাড়াও, প্রত্যেক বিশ্বস্ত খ্রিস্টান “আপনার বিষয়ে নয়, কিন্তু পরের বিষয়েও লক্ষ্য” রাখার অনুপ্রাণিত আদেশ কাজে লাগাতে চায়। (ফিলিপীয় ২:৪) খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সদস্যরা যখন এই পরামর্শ কাজে লাগায়, তখন দয়ার চমৎকার কাজগুলো দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি পরিবার হঠাৎ করে একসঙ্গে অনেক দুঃখজনক ঘটনার শিকার হয়। বাবা তার ছোট মেয়েকে নিয়ে দোকানে গিয়েছিলেন। বাড়িতে ফেরার পথে, তাদের গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে। মেয়েটি মারা যায়; বাবা মারাত্মক আহত হন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর, প্রথম প্রথম তিনি এতটাই অক্ষম হয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি নিজে নিজে কিছুই করতে পারেননি। তার স্ত্রী একা একা স্বামীর যত্ন নিতে গিয়ে মানসিকভাবে প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছিলেন। তাই, মণ্ডলীর এক দম্পতি এই শোকার্ত দম্পতিকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায় এবং কয়েক সপ্তাহের জন্য তাদের যত্ন নেয়।

২২ অবশ্য, দয়ার সমস্ত কাজের সঙ্গেই এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনা এবং ব্যক্তিগত ত্যাগস্বীকার জড়িত থাকে না। কিছু কিছু সাহায্য ছোট আকারে করা হয়ে থাকে। কিন্তু, দয়া যত সামান্যই হোক না কেন, আমরা তা উপলব্ধি করি, তাই নয় কি? আপনি কি এমন কোনো সময়ের কথা মনে করতে পারেন, যখন কোনো ভাই বা বোনের এক সদয় কথা অথবা বিবেচনাপূর্ণ কাজ আপনাকে ঠিক সেই সাহায্যটাই জুগিয়েছে, যেটা আপনার প্রয়োজন ছিল? যিহোবা প্রায়ই এই উপায়গুলোতে আমাদের যত্ন নিয়ে থাকেন।—হিতোপদেশ ১৭:৭; ১৮:২৪.

২৩. আমরা যখন অন্যদের সাহায্য করার প্রচেষ্টা করি, তখন যিহোবা এটাকে কীভাবে দেখেন?

২৩ আপনি কি চান যে, যিহোবা আপনাকে অন্যদের সাহায্য করার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করুক? সেই বিশেষ সুযোগ আপনার জন্য খোলা রয়েছে। বস্তুত, যিহোবা আপনার এই প্রচেষ্টাকে মূল্য দেন। তাঁর বাক্য বলে: “যে দরিদ্রকে কৃপা করে, সে সদাপ্রভুকে ঋণ দেয়; তিনি তাহার সেই উপকারের পরিশোধ করিবেন।” (হিতোপদেশ ১৯:১৭) আমাদের ভাইবোনদের জন্য নিজেদের বিলিয়ে দেওয়া প্রচুর সুখ নিয়ে আসে। (প্রেরিত ২০:৩৫, NW) এই ধরনের সাহায্য দান করার সুখ অথবা তা লাভ করার উৎসাহ কোনোটাই তারা পায় না, যারা নিজেদের ইচ্ছে করে পৃথক রাখে। (হিতোপদেশ ১৮:১) তাই, আসুন আমরা নিয়মিতভাবে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিই, যাতে একে অপরকে উৎসাহিত করতে পারি।—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.

২৪. অতীতের চমৎকার অলৌকিক কাজগুলো দেখতে পাইনি বলে কেন আমাদের বঞ্চিত বোধ করা উচিত নয়?

২৪ যিহোবা যে-উপায়গুলোতে সাহায্য করে থাকেন, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা কি আনন্দের বিষয় নয়? যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্যগুলোকে পূর্ণ করতে চমৎকার অলৌকিক কাজগুলো করার সময়ে যদি আমরা বেঁচে না-ও থাকি তবুও আমাদের বঞ্চিত বোধ করার কোনো প্রয়োজন নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল যে, বিশ্বস্ত থাকার জন্য আমাদের যে-সাহায্যের দরকার তার সমস্তই যিহোবা জোগান। আর আমরা যদি বিশ্বাসে একসঙ্গে ধৈর্য ধরি, তা হলে আমরা সমগ্র ইতিহাসের মধ্যে যিহোবার সবচেয়ে চমৎকার এবং গৌরবান্বিত কাজগুলো দেখতে পাব! আসুন আমরা যিহোবার প্রেমময় সাহায্য গ্রহণ করার এবং তা থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই, যাতে আমরা ২০০৫ সালের জন্য বার্ষিক শাস্ত্রপদের কথাগুলোর সঙ্গে সুর মেলাতে পারি: “যিহোবার কাছ থেকে আমার সাহায্য আসে।”—গীতসংহিতা ১২১:২, NW.

আপনি কী মনে করেন?

আজকে আমাদের যে-সাহায্যের প্রয়োজন, তা যিহোবা কীভাবে জোগান—

• দূতেদের মাধ্যমে?

• পবিত্র আত্মার মাধ্যমে?

• তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্যের মাধ্যমে?

• সহবিশ্বাসীদের মাধ্যমে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

এটা জানা উৎসাহজনক যে, দূতেরা প্রচার কাজে সহযোগিতা করছে

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের যে-সান্ত্বনার প্রয়োজন, তা দেওয়ার জন্য যিহোবা হয়তো আমাদের একজন সহবিশ্বাসীকে ব্যবহার করতে পারেন