সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যেখানে সত্য উপাসনা এবং পৌত্তলিক ধর্মে সংঘর্ষ ঘটে

যেখানে সত্য উপাসনা এবং পৌত্তলিক ধর্মে সংঘর্ষ ঘটে

যেখানে সত্য উপাসনা এবং পৌত্তলিক ধর্মে সংঘর্ষ ঘটে

 তুরস্কের পশ্চিম উপকূলে প্রাচীন ইফিষের ধ্বংসাবশেষগুলো প্রায় একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে গভীর প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার এক স্থান হয়ে আছে। বিভিন্ন ভবন পুনর্নিমাণ করা হয়েছে এবং আবিষ্কৃত অসংখ্য বস্তুগুলো নিয়ে বিজ্ঞানীরা অধ্যয়ন করেছে ও ব্যাখ্যা দিয়েছে। ফলে, তুরস্কের ইফিষ হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটা।

ইফিষ সম্বন্ধে কোন বিষয় আবিষ্কৃত হয়েছে? আজকে এই আকর্ষণীয় প্রাচীন মহানগরীর কোন চিত্র অংকন করা যেতে পারে? ইফিষের ধ্বংসাবশেষ এবং অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় ইফিষ জাদুঘর এই উভয় জায়গায় পরিদর্শন আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে, সত্য উপাসনা এবং পৌত্তলিক ধর্মে কীভাবে ইফিষে সংঘর্ষ ঘটে। প্রথমে আসুন, ইফিষ সম্বন্ধে কিছু পটভূমি বিবেচনা করি।

এক লোভনীয় স্থান

সাধারণ কাল পূর্ব একাদশ শতাব্দীতে অস্থিরতা এবং দেশান্তর হওয়া ছিল ইউরেশিয়ার উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সেই সময়েই আয়োনিয়ার গ্রিক অধিবাসীরা এশিয়া মাইনরের পশ্চিম উপকূলে উপনিবেশ স্থাপন করতে শুরু করেছিল। এই প্রাথমিক উপনিবেশ স্থাপনকারীরা সেই লোকেদের সংস্পর্শে এসেছিল যারা এক দেবীমাতার উপাসনার জন্য পরিচিত ছিল, যে-দেবী পরে ইফিষীয় দীয়ানা বা আর্টিমিস বলে পরিচিত হয়েছিল।

সাধারণ কাল পূর্ব সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি সিমেরীয় যাযাবররা উত্তরের কৃষ্ণ সাগর থেকে এশিয়া মাইনর লুটপাট করার জন্য এসেছিল। পরে, সা.কা.পূ. প্রায় ৫৫০ সালে সেখানে লিডিয়ার রাজা ক্রিসাস ক্ষমতায় এসেছিলেন, যিনি একজন প্রভাবশালী শাসক ছিলেন ও তার বিপুল ঐশ্বর্যের জন্য খ্যাতিলাভ করেছিলেন। পারস্য সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে রাজা কোরস ইফিষসহ আয়োনিয়ার শহরগুলো জয় করেছিলেন।

সাধারণ কাল পূর্ব ৩৩৪ সালে মেসিডোনিয়ার বা মাকিদনিয়ার আলেকজান্ডার পারস্যের বিরুদ্ধে তার সামরিক অভিযান আরম্ভ করেছিলেন আর এভাবে তিনি ইফিষের নতুন শাসক হয়েছিলেন। সা.কা.পূ. ৩২৩ সালে আলেকজান্ডারের অকাল মৃত্যুর পর ইফিষ তার সেনাপতিদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। সা.কা.পূ. ১৩৩ সালে পর্গামের নিঃসন্তান রাজা আ্যটালাস ৩য়, ইফিষকে রোমীয়দের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন, ফলে ইফিষ এশিয়ার রোমীয় প্রদেশের অংশ হয়ে উঠেছিল।

সত্য উপাসনা পৌত্তলিক ধর্মের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে

প্রেরিত পৌল যখন সা.কা. প্রথম শতাব্দীতে তার দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রার শেষদিকে ইফিষে এসেছিলেন, তখন সেই শহরে বা নগরে প্রায় ৩,০০,০০০ অধিবাসী ছিল। (প্রেরিত ১৮:১৯-২১) তার তৃতীয় মিশনারি যাত্রার সময়ে পৌল ইফিষে ফিরে এসেছিলেন এবং পুনরুজ্জীবিত হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে সমাজগৃহে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে কথা বলেছিলেন। তবে, তিন মাস পর যিহুদিদের কাছ থেকে বিরোধিতা তীব্রতর হয়েছিল আর পৌল প্রতিদিন তূরাণ্ণের বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে কথা প্রসঙ্গ করার বা বক্তৃতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৯:১, ৮, ৯) তার প্রচার কাজ দুই বছর ধরে চলেছিল আর সেইসঙ্গে শক্তির অসাধারণ কাজগুলো যেমন অনেক অলৌকিক আরোগ্যসাধন এবং দুষ্ট আত্মাদের বের করার কাজও করা হয়েছিল। (প্রেরিত ১৯:১০-১৭) এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে, অনেকে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল! হ্যাঁ, যিহোবার বাক্য প্রবল হয়েছিল তাই পূর্বে জাদুক্রিয়া চর্চা করত এমন বিরাট সংখ্যক লোক নিজে থেকে তাদের মূল্যবান বইপত্র পুড়িয়ে দিয়েছিল।—প্রেরিত ১৯:১৯, ২০.

পৌলের সফল প্রচার অনেককে শুধুমাত্র দেবী দীয়ানার উপাসনাকে পরিত্যাগ করতেই চালিত করেনি কিন্তু সেইসঙ্গে সেই ব্যক্তিদেরও ক্রুদ্ধ করে তুলেছিল, যারা এই পৌত্তলিক উপাসনাকে ছড়িয়ে দিচ্ছিল। দীয়ানা দেবীর রুপোর মন্দির নির্মাণ করা ছিল এক লাভজনক ব্যাবসা। তাদের ব্যাবসা ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ায় দীমীত্রিয় নামে একজন ব্যক্তি দাঙ্গা বাধানোর জন্য স্বর্ণকারদের উসকে দিয়েছিলেন।—প্রেরিত ১৯:২৩-৩২.

বিরোধিতা চরমে পৌঁছায় যখন জনতা দুই ঘন্টা ধরে উন্মত্তভাবে চিৎকার করে বলতে থাকে: “ইফিষীয়দের দীয়ানাই মহাদেবী।” (প্রেরিত ১৯:৩৪) সেই কোলাহল থেমে যাওয়ার পর পৌল তার সহখ্রিস্টানদের আরেকবার উৎসাহিত করেছিলেন আর এরপর অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। (প্রেরিত ২০:১) কিন্তু তার মাকিদনিয়াতে চলে যাওয়া, দীয়ানা দেবীর নির্ধারিত অধঃপতনকে থামাতে পারেনি।

দীয়ানার মন্দির টলায়মান হয়

ইফিষে দীয়ানা দেবীর প্রতি ভক্তি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। রাজা ক্রিসাসের সময়ের আগে এই এলাকার ধর্মীয় জীবনে দেবীমাতা সিবিলি ছিলেন অন্যতম। সিবিলি থেকে শুরু করে গ্রিক দেবদেবীদের মধ্যে এক পৌরাণিক বংশানুক্রমিক যোগসূত্র স্থাপন করার দ্বারা ক্রিসাস গ্রিক এবং ন-গ্রিক উভয়ের কাছে গ্রহণযোগ্য সিবিলি দেবীকে এক ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যাশা করেছিলেন। তার সমর্থন পেয়ে, সা.কা.পূ ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সিবিলির উত্তরসূরি দীয়ানার মন্দিরের কাজ শুরু হয়েছিল।

এই মন্দির গ্রিক স্থাপত্যবিদ্যায় একটা মাইলফলক ছিল। এর আগে কখনও এইরকম ও এই আকারের এক ভবন নির্মাণ করার জন্য এই ধরনের বিশাল আকৃতির মার্বেল পাথরের ফলক ব্যবহৃত হয়নি। এই মন্দির সা.কা.পূ. ৩৫৬ সালে আগুন লেগে ধ্বংস হয়েছিল। পুনরায় সমরূপ চমৎকার মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল, যা চাকরির এবং তীর্থযাত্রীদের অন্যতম আকর্ষণের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠেছিল। প্রায় ৭৩ মিটার প্রশস্ত ও ১২৭ মিটার দীর্ঘ প্ল্যাটফর্মের ওপর পুনর্স্থাপিত মন্দির ছিল প্রায় ৫০ মিটার প্রশস্ত এবং ১০৫ মিটার দীর্ঘ। এটাকে পৃথিবীর সপ্ত আশ্চর্যের মধ্যে একটা বলে বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু, সবাই এতে খুশি ছিল না। ইফিষের দার্শনিক হেরাক্লেটাস অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে সেই মন্দিরের বেদিতে যাওয়াকে মন্দতার অন্ধকারের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন এবং মন্দিরের নীতিগুলোকে পশুদের চেয়েও নিম্নমানের বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ লোকের কাছে মনে হয়েছিল যে, ইফিষে দীয়ানার এই মন্দির কখনও পতিত হবে না। তবে ইতিহাস ভিন্ন কিছু প্রমাণ করেছিল। ইফিসস—দে নইই ফিউরি (ইফিষ—নতুন নির্দেশক, ইংরেজি) বই বলে: “সাধারণ কালের দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যে দীয়ানার উপাসনা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত দেবদেবীদের মন্দিরগুলো দ্রুত পতিত হয়েছিল।”

সাধারণ কালের তৃতীয় শতাব্দীতে এক প্রচণ্ড ভূমিকম্পে ইফিষ কেঁপে উঠেছিল। এ ছাড়া, দীয়ানার মন্দিরের আকর্ষণীয় ধনসম্পদ কৃষ্ণ সাগরে ভ্রমণরত গথ উপজাতির লোকেরা লুট করেছিল, যারা পরে সেই মন্দিরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। সেই বইটি উল্লেখ করে: “পরাজিত এবং তার নিজের বাসস্থান রক্ষা করতে অক্ষম হওয়ায় কীভাবে দীয়ানাকে নগর রক্ষাকারিণী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে?”—গীতসংহিতা ১৩৫:১৫-১৮.

অবশেষে, সা.কা. চতুর্থ শতাব্দীর শেষের দিকে সম্রাট থিওডোশিয়াস ১ম “খ্রিস্টধর্মকে” রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে অনুমোদন করেছিলেন। দীয়ানার এক সময়ের প্রভাবশালী মন্দিরের পাথরের গাঁথনি অল্পসময়ের মধ্যেই নির্মাণ সামগ্রীর উপাদানে পরিণত হয়েছিল। দীয়ানার উপাসনা পুরোপুরি এর তাৎপর্য হারিয়ে ফেলেছিল। একজন অজ্ঞাতনামা পর্যবেক্ষক প্রাচীন বিশ্বের এক বিস্ময় হিসেবে মন্দিরের প্রশংসা করে এমন এক কবিতার বিষয়ে এই মন্তব্য করেছিলেন: “এটা বর্তমানে সবচেয়ে জনশূন্য এবং দুর্দশাগ্রস্ত এলাকা।”

দীয়ানা থেকে “ঈশ্বরের জননী” পর্যন্ত

পৌল ইফিষের মণ্ডলীর প্রাচীন ব্যক্তিদের সতর্ক করেছিলেন যে, তিনি চলে গেলে পর “দুরন্ত কেন্দুয়ারা” আবির্ভূত হবে এবং তাদের মধ্যে থেকে লোকেরা উঠবে ও “বিপরীত কথা কহিবে।” (প্রেরিত ২০:১৭, ২৯, ৩০) ঠিক তা-ই ঘটেছিল। ঘটনাবলি প্রকাশ করে যে, ধর্মভ্রষ্ট খ্রিস্টধর্মের রূপ নিয়ে ইফিষে মিথ্যা ধর্ম প্রবল হয়েছিল।

সাধারণ কাল ৪৩১ সালে ইফিষ ছিল তৃতীয় গির্জাগোষ্ঠীর ঐক্য পরিষদের সভার স্থান, যেখানে খ্রিস্টের সত্তার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ইফিসস—দে নইই ফিউরি বই ব্যাখ্যা করে: “আলেক্‌সান্দ্রীয়রা যারা বিশ্বাস করত যে খ্রিস্ট ছিলেন শুধুমাত্র একটি সত্তার যা মূলত ঐশিক, তাদের বিজয় . . . সম্পূর্ণ হয়েছিল।” ফলাফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। “ইফিষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল, যার মাধ্যমে মরিয়মকে খ্রিস্টের জন্মদাত্রী হিসেবে পদমর্যাদা থেকে ঈশ্বরের জন্মদাত্রীর পদমর্যাদায় উচ্চীকৃত করা হয়েছিল আর তা করে শুধু মরিয়মকে উপাসনা করার ভিত্তিই প্রতিষ্ঠিত হয়নি কিন্তু সেইসঙ্গে গির্জার মধ্যেই প্রথম বিশাল বিরোধী উপদলের জন্ম দিয়েছিল। . . . এই বিতর্ক আজ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।”

এইভাবে, সিবিলি এবং দীয়ানার উপাসনার জায়গায় “ঈশ্বরের জন্মদাত্রী” বা “ঈশ্বরের জননী” মরিয়মের উপাসনা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বইটি যেমন উল্লেখ করে, “ইফিষে মরিয়মের উপাসনা . . . এক প্রচলিত রীতি হিসেবে আজ পর্যন্ত টিকে রয়েছে, যেটাকে দীয়ানার উপাসনা থেকে আলাদা করে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে না।”

ইতিহাসের আস্তাকুড়ে

দীয়ানার উপাসনা শেষ হওয়ার পর ইফিষের পতন ঘটেছিল। ভূমিকম্প, ম্যালেরিয়া এবং পোতাশ্রয়ে ধীরে ধীরে পলি জমে যাওয়ার কারণে সেই নগরের জীবন ক্রমান্বয়ে আরও কঠিন হয়ে উঠেছিল।

সাধারণ কাল সপ্তম শতাব্দীর মধ্যে ইসলাম ধর্ম এখানে ব্যাপক প্রসার লাভ করতে শুরু করেছিল। ইসলাম ধর্ম শুধুমাত্র আরবীয় গোষ্ঠীগুলোকে এর ভাবাদর্শের অধীনে ঐক্যবদ্ধ করেনি। আরবীয় নৌবহরগুলো সা.কা. সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দী জুড়ে ইফিষকে লুটপাট করেছিল। যখন পোতাশ্রয়ে পুরোপুরি পলি জমে গিয়েছিল এবং নগরটা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল, তখন দুর্দশাপূর্ণ ইফিষ পুরোপুরিভাবে শেষ হয়ে গিয়েছিল। একসময়ের সেই চমৎকার মহানগরীর মধ্যে আয়াসোলিক (বর্তমানে সেলচুক) নামে শুধুমাত্র একটা উপনিবেশ অবশিষ্ট রয়েছে।

ইফিষের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দিয়ে গমন

ইফিষের প্রাচীন গৌরবের বিষয়ে ধারণা পাওয়ার জন্য একজন ব্যক্তি এর ধ্বংসাবশেষগুলো পরিদর্শন করতে পারেন। যদি আপনি আপনার পরিদর্শন ওপরের প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করেন, তা হলে আপনি পুরস্কার হিসেবে শীঘ্রই অপূর্ব কুইরিটেস সড়ক দেখতে পাবেন, যা সেলসাসের লাইব্রেরির দিকে নেমে গিয়েছে। সড়কের ডান দিকে অবস্থিত ওডিয়েম—সা.কা. দ্বিতীয় শতাব্দীতে নির্মিত একটা ছোট্ট থিয়েটার—আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। প্রায় ১,৫০০ জন বসতে পারার মতো এই হল শুধুমাত্র পরিষদ ভবন হিসেবে নয়, সেইসঙ্গে জনসাধারণের আমোদপ্রমোদের জন্যও ব্যবহৃত হতো। কুইরিটেস সড়কের উভয় পাশে বিভিন্ন ভবন ছিল যেমন স্টেট আ্যগোরা, যেখানে রাজ্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হতো, হেড্রিয়ানের মন্দির, কয়েকটা সরকারি ফোয়ারা এবং উঁচু জায়গায় অবস্থিত সারিবদ্ধ ঘরবাড়ি—যে-বাড়িগুলো ছিল ইফিষের সম্মানিত ব্যক্তিদের।

সাধারণ কাল দ্বিতীয় শতাব্দীতে নির্মিত রুচিশীল সেলসাস লাইব্রেরির সৌন্দর্য আপনার ওপর ছাপ ফেলবে। এর বিপুল সংখ্যক গুটানো পুস্তকগুলো বিশাল একটা পড়ার কক্ষে রাখা হয়েছিল। ভবনের চমৎকার সদরের বহির্ভাগে চারটে খোদাই করা মূর্তি আদর্শ গুণাবলিকে চিত্রিত করেছিল, যা রোমের সেলসাসের মতো উর্ধ্বতন সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে আশা করা হয়েছিল, যাদের নাম ছিল: সোফিয়া (প্রজ্ঞা), আরিটি (সদ্‌গুণ), আ্যনিয়া (ভক্তি), এবং ইপিসতিমি (জ্ঞান বা বোধগম্যতা)। আসল মূর্তিগুলো ভিয়েনার ইফিষ জাদুঘরে দেখতে পাওয়া যায়। লাইব্রেরির প্রাঙ্গণ সংলগ্ন একটা স্মারক দরজা আপনাকে টেট্রাগনোস আ্যগোরা অর্থাৎ বাজারের দিকে নিয়ে যাবে। এই বিশাল জায়গা, যেটার চারিদিকে জনসাধারণের এক বেড়ানোর স্থান ছিল, সেখানে লোকেরা তাদের নিয়মিত ব্যবসায়িক কাজকর্ম সম্পাদন করার জন্য যেত।

আপনি এরপর মার্বেল রোডে আসবেন, যেটা আপনাকে বিশাল থিয়েটারের দিকে নিয়ে যায়। রোম সাম্রাজ্যের সময়ে সর্বশেষ সম্প্রসারণের ফলে এই থিয়েটারে প্রায় ২৫,০০০ দর্শকের জন্য আসন ছিল। ভবনের সদরের বহির্ভাগ বিভিন্ন স্তম্ভ, উঁচু উঁচু ভাস্কর্য, এবং খোদাই করা মূর্তি দিয়ে জমকালোভাবে সজ্জিত করা ছিল। সেখানে সমবেত লোকেদের মধ্যে স্বর্ণকার দীমীত্রিয় যে-প্রচণ্ড বিক্ষোভ উসকে দিয়েছিলেন, তা আপনি স্পষ্টভাবে কল্পনা করতে পারেন।

সেই সড়ক যা বিশাল থিয়েটার থেকে প্রসারিত হয়ে শহরের পোতাশ্রয়ের দিকে চলে গিয়েছে সেটা খুবই চমৎকার। এটা প্রায় ৫০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১১ মিটার প্রশস্ত, যার উভয় পাশে নানা স্তম্ভ রয়েছে। থিয়েটারের জিমনাসিয়াম এবং পোতাশ্রয়ের জিমনাসিয়াম দুটোই শারীরিক প্রশিক্ষণের জন্য সংরক্ষিত হয়েছিল, সেগুলো এই রাস্তার পাশেই তৈরি করা হয়েছিল। সড়কের শেষ প্রান্তে পোতাশ্রয়ের নজরকাড়া দ্বার বহির্বিশ্বে যাওয়ার তোরণ হিসেবে ছিল আর এখানে এসেই পৃথিবীর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কয়েকটা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দিয়ে আমাদের সংক্ষিপ্ত পরিদর্শন শেষ হয়। এই ঐতিহাসিক মহানগরীর ও সেইসঙ্গে অসংখ্য স্মৃতি স্মারকগুলোর কাঠের তৈরি নমুনাগুলো ভিয়েনার ইফিষ জাদুঘরে রয়েছে।

জাদুঘর পরিদর্শন করার সময় এবং ইফিষীয় দীয়ানা দেবীর মূর্তি দেখার সময়, একজন ব্যক্তি সঙ্গে সঙ্গে ইফিষের প্রাথমিক খ্রিস্টানদের ধৈর্যের কথা চিন্তা করবেন। তাদেরকে এমন এক শহরে বাস করতে হয়েছিল, যেটা প্রেতচর্চায় ডুবে ছিল এবং ধর্মীয় কুসংস্কারের দ্বারা অন্ধ ছিল। দীয়ানা দেবীর উপাসকরা রাজ্যের বার্তার প্রচণ্ড বিরোধিতা করেছিল। (প্রেরিত ১৯:১৯; ইফিষীয় ৬:১২; প্রকাশিত বাক্য ২:১-৩) এই ধরনের প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে সত্য উপাসনা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সত্য ঈশ্বরের এই উপাসনাও জয়লাভ করবে, যখন আমাদের দিনের মিথ্যা উপাসনার সমাপ্তি ঘটবে, ঠিক যেমনটা প্রাচীন দীয়ানা দেবীর উপাসনার বেলায় ঘটেছিল।—প্রকাশিত বাক্য ১৮:৪-৮.

[২৬ পৃষ্ঠার মানচিত্র/চিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

মেসিডোনিয়া

কৃষ্ণ সাগর

এশিয়া মাইনর

ইফিষ

ভূমধ্যসাগর

মিশর

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

দীয়ানার মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ

[২৮, ২৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

১. সেলসাসের লাইব্রেরি

২. কাছ থেকে দেখা আরিটি

৩. মার্বেল রোড, যা বিশাল থিয়েটারের দিকে নিয়ে যায়