সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

শয়তানের প্রতিরোধ করুন, তা হলে সে পলায়ন করবে!

শয়তানের প্রতিরোধ করুন, তা হলে সে পলায়ন করবে!

শয়তানের প্রতিরোধ করুন, তা হলে সে পলায়ন করবে!

“তোমরা ঈশ্বরের বশীভূত হও; কিন্তু দিয়াবলের প্রতিরোধ কর, তাহাতে সে তোমাদের হইতে পলায়ন করিবে।”—যাকোব ৪:৭.

১, ২. (ক) যিশাইয় ১৪ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ ঘোষণায় দিয়াবলের কোন বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে? (খ) আমরা কোন প্রশ্নগুলো আলোচনা করব?

 দিয়াবল হল ঔদ্ধত্যের মূর্ত প্রতীক। তার গর্ব ঈশ্বরের ভাববাদী যিশাইয়ের দ্বারা লিপিবদ্ধ বাক্যের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। বাবিল প্রধান বিশ্বশক্তি হওয়ার ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে, যিহোবার লোকেদের এভাবে চিত্রিত করা হয়েছে যেন তারা “বাবিল-রাজের” বিরুদ্ধে এই ঘোষণা করছে: “তুমি মনে মনে বলিয়াছিলে, ‘আমি স্বর্গারোহণ করিব, ঈশ্বরের নক্ষত্রগণের [দায়ূদের রাজবংশীয় রাজাদের] ঊদ্ধের্ব আমার সিংহাসন উন্নত করিব . . . আমি পরাৎপরের তুল্য হইব।’” (যিশাইয় ১৪:৩, ৪, ১২-১৫; গণনাপুস্তক ২৪:১৭) “বাবিল-রাজের” গর্ব “এই যুগের দেব” শয়তানের মনোভাবের মতোই ছিল। (২ করিন্থীয় ৪:৪) কিন্তু, শয়তানের ঔদ্ধত্যের পতন ঘটবে, ঠিক যেমন বাবিলীয় রাজবংশের এক অপমানজনক পরিণতি ঘটেছিল।

কিন্তু, যতদিন পর্যন্ত দিয়াবল অস্তিত্বে রয়েছে, ততদিন পর্যন্ত আমরা হয়তো এই ধরনের প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করতে পারি: আমাদের কি শয়তানকে ভয় পাওয়া উচিত? কেন সে খ্রিস্টানদের তাড়না করার জন্য লোকেদের উসকে দেয়? কীভাবে আমরা শয়তানের দ্বারা প্রতারিত হওয়া এড়াতে পারি?

আমাদের কি দিয়াবলকে ভয় পাওয়া উচিত?

৩, ৪. অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা এবং তাদের সহযোগীরা কেন দিয়াবলকে ভয় পায় না?

যিশু খ্রিস্টের এই কথাগুলো অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের অনেক শক্তি জুগিয়ে থাকে: “তোমাকে যে সকল দুঃখ ভোগ করিতে হইবে, তাহাতে ভয় করিও না। দেখ, তোমাদের পরীক্ষার জন্য দিয়াবল তোমাদের কাহাকেও কাহাকেও কারাগারে নিক্ষেপ করিতে উদ্যত আছে, তাহাতে দশ দিন পর্য্যন্ত তোমাদের ক্লেশ হইবে। তুমি মরণ পর্য্যন্ত বিশ্বস্ত থাক, তাহাতে আমি তোমাকে জীবন-মুকুট দিব।” (প্রকাশিত বাক্য ২:১০) অভিষিক্ত ব্যক্তিরা এবং তাদের পার্থিব আশাসম্পন্ন সহযোগীরা দিয়াবলকে ভয় পায় না। এই ভয় না পাওয়ার কারণ সহজাত সাহস নয়। এর কারণ হল, ঈশ্বরের প্রতি তাদের সশ্রদ্ধ ভয় রয়েছে এবং তারা ‘তাঁহার পক্ষচ্ছায়ার নীচে শরণ লয়।’—গীতসংহিতা ৩৪:৯; ৩৬:৭.

যিশু খ্রিস্টের প্রাথমিক নির্ভীক শিষ্যরা, বিভিন্ন কষ্ট ভোগ করা সত্ত্বেও মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত ছিল। শয়তান দিয়াবল যা করতে পারত সেই ভয়ে তারা কবলিত হয়নি কারণ তারা জানত যে, যিহোবার কাছে যারা অনুগত বলে প্রমাণিত হবে তাদেরকে তিনি কখনো পরিত্যাগ করবেন না। একইভাবে, আজকের দিনের প্রচণ্ড তাড়নার মুখে, অভিষিক্ত খ্রিস্টান এবং তাদের উৎসর্গীকৃত সহযোগীরা ঈশ্বরের প্রতি তাদের নীতিনিষ্ঠাকে না ভাঙার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। কিন্তু, প্রেরিত পৌল ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, দিয়াবল আমাদের মৃত্যু ঘটাতে পারে। এই কারণে কি আমাদের ভয় পাওয়া উচিত নয়?

৫. ইব্রীয় ২:১৪, ১৫ পদ থেকে আমরা কী শিখি?

পৌল বলেছিলেন যে, যিশু ‘রক্তমাংসের ভাগী হইয়াছিলেন’ যেন “মৃত্যু দ্বারা মৃত্যুর কর্ত্তৃত্ববিশিষ্ট ব্যক্তিকে অর্থাৎ দিয়াবলকে শক্তিহীন করেন, এবং যাহারা মৃত্যুর ভয়ে যাবজ্জীবন দাসত্বের অধীন ছিল, তাহাদিগকে উদ্ধার করেন।” (ইব্রীয় ২:১৪, ১৫) ‘মৃত্যুর কর্ত্তৃত্ববিশিষ্ট ব্যক্তি’ হিসেবে শয়তান, ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদাকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল এবং এরপর যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য যিহুদি নেতা ও রোমীয়দের ব্যবহার করেছিল। (লূক ২২:৩; যোহন ১৩:২৬, ২৭) কিন্তু, যিশু তাঁর বলিদানমূলক মৃত্যুর মাধ্যমে পাপী মানবজাতিকে শয়তানের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করেন এবং আমাদের জন্য অনন্তজীবন পাওয়া সম্ভবপর করেন।—যোহন ৩:১৬.

৬, ৭. মৃত্যুর ওপর শয়তানের কত দূর পর্যন্ত কর্তৃত্ব রয়েছে?

মৃত্যুর ওপর দিয়াবলের কত দূর পর্যন্ত কর্তৃত্ব রয়েছে? শয়তানের মন্দ কাজের শুরু থেকেই তার মিথ্যা কথা এবং পরিচালনা মানুষের জন্য মৃত্যু নিয়ে এসেছে। আমরা তা বলতে পারি কারণ আদম পাপ করেছিল আর এভাবে মানব পরিবারের মধ্যে পাপ ও মৃত্যু নিয়ে এসেছে। (রোমীয় ৫:১২) অধিকন্তু, শয়তানের পার্থিব দাসেরা যিহোবার উপাসকদের তাড়না করেছে, কখনো কখনো তাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটিয়েছে, ঠিক যেমনটা যিশু খ্রিস্টের বেলায় তারা করেছিল।

তা সত্ত্বেও, আমাদের এইরকম মনে করা উচিত নয় যে, দিয়াবল যাকে খুশি তাকেই মেরে ফেলতে পারে। ঈশ্বর সেইসমস্ত ব্যক্তিকে রক্ষা করেন, যারা তাঁর অধিকারভুক্ত আর তিনি কখনো পৃথিবীতে তাঁর সমস্ত উপাসককে নিঃশেষে বিনষ্ট করতে শয়তানকে অনুমতি দেবেন না। (রোমীয় ১৪:৮) এটা ঠিক যে, যিহোবা তাঁর সমস্ত লোকের ওপর তাড়না ঘটতে দেন এবং দিয়াবলের আক্রমণের কারণে আমাদের কাউকে কাউকে মৃত্যুও ভোগ করতে দেন। কিন্তু, শাস্ত্র সেই ব্যক্তিদের জন্য পুনরুত্থানের অপূর্ব আশা দেয়, যাদের নাম ‘স্মরণার্থক পুস্তকে’ রয়েছে—আর জীবনের এই পুনর্স্থাপনকে রোধ করার জন্য দিয়াবল কিছুই করতে পারবে না!—মালাখি ৩:১৬; যোহন ৫:২৮, ২৯; প্রেরিত ২৪:১৫.

কেন শয়তান আমাদের তাড়না করে?

৮. কেন দিয়াবল ঈশ্বরের দাসদের ওপর তাড়না নিয়ে আসে?

আমরা যদি ঈশ্বরের অনুগত দাস হই, তা হলে শয়তান কেন আমাদের ওপর তাড়না নিয়ে আসে, তার একটা মূল কারণ রয়েছে। তার উদ্দেশ্যে হল, সে আমাদের বিশ্বাসের ব্যাপারে আপোশ করাতে চায়। আমাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে আমাদের এক মূল্যবান সম্পর্ক রয়েছে আর শয়তান তা নষ্ট করে দিতে চায়। এতে আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়। এদনে, যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তাঁর প্রতীক ‘নারীর’ সঙ্গে ‘সর্পের’ এবং তাদের উভয়ের ‘বংশের’ মধ্যে শত্রুতা থাকবে। (আদিপুস্তক ৩:১৪, ১৫) শাস্ত্র দিয়াবলকে “পুরাতন সর্প” বলে শনাক্ত করে এবং এও প্রকাশ করে যে, তার সময় অল্প ও সে অতিশয় রাগাপন্ন। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯, ১২) যেহেতু দুই ‘বংশের’ মধ্যে শত্রুতা চলছে, তাই যারা বিশ্বস্তভাবে যিহোবাকে সেবা করে, তারা জানে যে তাড়না আসবেই। (২ তীমথিয় ৩:১২) শয়তানের এই ধরনের তাড়নার প্রকৃত কারণ সম্বন্ধে কি আপনি জানেন?

৯, ১০. দিয়াবল কোন বিচার্য বিষয়ের উত্থাপন করেছে এবং এর সঙ্গে মানুষের আচরণ কীভাবে সম্পর্কযুক্ত?

দিয়াবল সর্বজনীন সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত বিচার্য বিষয়ের উত্থাপন করেছে। এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আরেকটা বিষয় হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তার প্রতি মানুষের নীতিনিষ্ঠা নিয়ে সে প্রশ্ন তুলেছে। শয়তান ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি ইয়োবের ওপর তাড়না নিয়ে এসেছিল। কেন? যিহোবার প্রতি ইয়োবের নীতিনিষ্ঠাকে ভেঙে ফেলার জন্য। ইয়োবের স্ত্রী এবং তিন জন “কষ্টজনক সান্ত্বনাকারী,” সেই সময়ে শয়তানের উদ্দেশ্য সাধন করেছিল। ইয়োবের বইয়ে যেমন দেখানো হয়েছে, দিয়াবল ঈশ্বরকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, এই দাবি করে যে, তাকে যদি কারো ওপর পরীক্ষা নিয়ে আসতে দেওয়া হয়, তা হলে কোনো মানুষই ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে না। কিন্তু, ইয়োব দৃঢ়ভাবে তার নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছিলেন আর এভাবে শয়তানকে একজন মিথ্যাবাদী প্রমাণ করেছিলেন। (ইয়োব ১:৮–২:৯; ১৬:২; ২৭:৫; ৩১:৬) যিহোবার সাক্ষিদের নীতিনিষ্ঠাকে ভেঙে ফেলার এবং তার চ্যালেঞ্জকে প্রমাণ করার চেষ্টায় দিয়াবল আজকে তাদের ওপর তাড়না নিয়ে আসে।

১০ দিয়াবল বেপরোয়াভাবে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের নীতিনিষ্ঠাকে ভেঙে ফেলতে চায় বলে আমাদের ওপর তাড়না নিয়ে আসে, এই বিষয়টা জানা আসলে আমাদের সাহসী ও বলবান হতে সাহায্য করতে পারে। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:৬) আমাদের ঈশ্বর নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম এবং তিনি আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে সাহায্য করবেন। নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখে আমরা যেন সবসময় যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করার চেষ্টা করি, যাতে তিনি যে তাঁকে টিটকারি দেয় সেই বড় বিদ্রূপকারী শয়তান দিয়াবলকে উত্তর দিতে পারেন।—হিতোপদেশ ২৭:১১.

‘আমাদেরকে দুষ্ট ব্যক্তির হাত থেকে উদ্ধার করো’

১১. ‘আমাদের প্রলোভনে নিয়ে এসো না,” এই অনুরোধের অর্থ কী?

১১ নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা কোনো সাধারণ বিষয় নয়; এর জন্য আন্তরিক প্রার্থনার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আদর্শ প্রার্থনার কথাগুলো বিশেষভাবে সাহায্যকারী। প্রার্থনার এক অংশে যিশু বলেছিলেন: “আমাদেরকে প্রলোভনে নিয়ে এসো না কিন্তু দুষ্ট ব্যক্তির হাত থেকে উদ্ধার করো।” (মথি ৬:১৩, NW) যিহোবা আমাদের পাপ করতে প্রলোভিত করেন না। (যাকোব ১:১৩) কিন্তু, শাস্ত্র মাঝে মাঝে এমন বিষয়গুলো তিনি করেছেন বা ঘটিয়েছেন বলে উল্লেখ করে, যেগুলো আসলে তিনি শুধুমাত্র ঘটতে দিয়েছেন। (রূতের বিবরণ ১:২০, ২১) তাই, যিশু যেমন ইঙ্গিত করেছেন সেই অনুযায়ী প্রার্থনা করে আমরা যিহোবাকে অনুরোধ জানাই যেন তিনি আমাদেরকে প্রলোভনে পড়তে না দেন। আর তিনি প্রলোভনে পড়তে দেবেন না কারণ আমাদের কাছে এই শাস্ত্রীয় আশ্বাস রয়েছে: “ঈশ্বর বিশ্বাস্য; তিনি তোমাদের প্রতি তোমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটিতে দিবেন না, বরং পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষার পথও করিয়া দিবেন, যেন তোমরা সহ্য করিতে পার।”—১ করিন্থীয় ১০:১৩.

১২. আমরা কেন এই প্রার্থনা করি: ‘আমাদেরকে দুষ্ট ব্যক্তির হাত থেকে উদ্ধার করো’?

১২ আদর্শ প্রার্থনায় প্রলোভনের বিষয়ে উল্লেখ করার পর, যিশু উপযুক্তভাবেই বলেছিলেন: ‘আমাদেরকে দুষ্ট ব্যক্তির হাত থেকে উদ্ধার করো।’ কিছু বাইবেল অনুবাদে এভাবে লেখা আছে: ‘আমাদের মন্দের হাত থেকে উদ্ধার কর’ (বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) অথবা আমাদের স্ট্যান্ডার্ড বাইবেল অনুসারে, ‘আমাদিগকে মন্দ হইতে রক্ষা কর।’ কিন্তু, শাস্ত্রে “হাত থেকে উদ্ধার” অভিব্যক্তিটি মূলত লোকেদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় আর মথির সুসমাচার দিয়াবলকে “পরীক্ষক” বা প্রলোভনকারী অর্থাৎ একজন ব্যক্তি হিসেবে নির্দেশ করে। (মথি ৪:৩, ১১) তাই, ‘দুষ্ট ব্যক্তি’ শয়তান দিয়াবলের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করার জন্য সে আমাদের প্ররোচিত করতে চায়। (১ থিষলনীকীয় ৩:৫) আমরা যখন এই অনুরোধ করি যে, ‘আমাদেরকে দুষ্ট ব্যক্তির হাত থেকে উদ্ধার করো,’ তখন আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে পরিচালনা দিতে এবং সাহায্য করতে বলি, যাতে আমরা শয়তানের দ্বারা প্রতারিত না হই।

দিয়াবলের দ্বারা প্রতারিত হবেন না

১৩, ১৪. মণ্ডলীতে দুশ্চরিত্রের ছিলেন এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে কেন করিন্থীয়দের পরিবর্তিত হওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল?

১৩ পৌল যখন করিন্থের খ্রিস্টানদের ক্ষমা করে দেওয়ার বিষয়ে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, তখন তিনি লিখেছিলেন: “যাহার কোন দোষ তোমরা ক্ষমা কর, আমিও ক্ষমা করি; কেননা আমিও যদি কিছু ক্ষমা করিয়া থাকি, তবে তোমাদের নিমিত্তে খ্রীষ্টের সাক্ষাতে তাহা ক্ষমা করিয়াছি, যেন আমরা শয়তানকর্ত্তৃক প্রতারিত না হই; কেননা তাহার কল্পনা সকল আমরা অজ্ঞাত নই।” (২ করিন্থীয় ২:১০, ১১) দিয়াবল বিভিন্ন উপায়ে আমাদের প্রতারিত করতে পারে কিন্তু কেন পৌল সবেমাত্র উদ্ধৃত কথাগুলো বলেছিলেন?

১৪ পৌল করিন্থীয়দের তিরস্কার করেছিলেন কারণ তারা মণ্ডলীতে এক দুশ্চরিত্রের ব্যক্তিকে থাকতে দিয়েছিল। এটা নিশ্চয়ই শয়তানকে আনন্দিত করেছিল কারণ ‘পরজাতীয়দের মধ্যেও নাই এমন ব্যভিচার’ মণ্ডলীর মধ্যে প্রশয় দেওয়া জন্য মণ্ডলীর ওপর নিন্দা এসেছিল। অবশেষে, সেই অপরাধীকে সমাজচ্যুত করা হয়েছিল। (১ করিন্থীয় ৫:১-৫, ১১-১৩) পরে একসময় সেই ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়েছিল। করিন্থীয়রা যদি সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে পুনর্বহাল না করত, তা হলে দিয়াবল আরেকটা উপায়ে তাদের প্রতারিত করত। কোন উপায়ে? তারা স্বয়ং শয়তানের মতোই রূঢ় এবং নির্দয় হয়ে পড়ত। অনুতপ্ত সেই ব্যক্তি যদি ‘অতিরিক্ত মনোদুঃখে কবলিত’ হতেন এবং ঈশ্বরকে উপাসনা করা পুরোপুরি বাদ দিতেন, তা হলে এর জন্য বিশেষত প্রাচীনরা দয়াময় ঈশ্বর যিহোবার কাছে কিছুটা দায়ী থাকত। (২ করিন্থীয় ২:৭; যাকোব ২:১৩; ৩:১) অবশ্য, কোনো সত্য খ্রিস্টানই নিষ্ঠুর, রূঢ় এবং নির্দয় হয়ে শয়তানকে অনুকরণ করতে চাইবে না।

ঈশ্বরের যুদ্ধসজ্জার দ্বারা সুরক্ষিত

১৫. আমরা কোন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি এবং জয়ী হওয়া কীসের ওপর নির্ভর করে?

১৫ আমরা যদি দিয়াবলের হাত থেকে উদ্ধার পেতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই দুষ্ট আত্মিকবাহিনীর বিরুদ্ধে আধ্যাত্মিক যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া নির্ভর করে “ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা” পরিধান করার ওপর। (ইফিষীয় ৬:১১-১৮) এই যুদ্ধসজ্জার অন্তর্ভুক্ত হল, “ধার্ম্মিকতার বুকপাটা।” (ইফিষীয় ৬:১৪) প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা শৌল ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিলেন এবং পবিত্র আত্মা হারিয়ে কষ্ট ভোগ করেছিলেন। (১ শমূয়েল ১৫:২২, ২৩) কিন্তু, আমরা যদি ধার্মিকতার অনুশীলন করি এবং সমগ্র আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা পরিধান করি, তা হলে আমাদের ওপর পবিত্র আত্মা থাকবে এবং সেইসঙ্গে শয়তান ও তার দুষ্ট দূত অর্থাৎ মন্দ দূতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সুরক্ষাও থাকবে।—হিতোপদেশ ১৮:১০.

১৬. কীভাবে আমরা সেই দুষ্ট আত্মিকবাহিনীর বিরুদ্ধে ক্রমাগত সুরক্ষা পেতে পারি?

১৬ সেই দুষ্ট আত্মিকবাহিনীর বিরুদ্ধে ক্রমাগত সুরক্ষার জন্য আমাদের অন্যান্য বিষয় ছাড়াও নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের বাক্য পড়তে ও অধ্যয়ন করতে হবে এবং ‘বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষের’ দ্বারা জোগানো প্রকাশনাদির উত্তম ব্যবহার করতে হবে। (লূক ১২:৪২) এভাবে পৌলের এই পরামর্শ অনুযায়ী আমরা আমাদের মনকে গঠনমূলক আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো দিয়ে পূর্ণ করব: “হে ভ্রাতৃগণ, যাহা যাহা সত্য, যাহা যাহা আদরণীয়, যাহা যাহা ন্যায্য, যাহা যাহা বিশুদ্ধ, যাহা যাহা প্রীতিজনক, যাহা যাহা সুখ্যাতিযুক্ত, যে কোন সদ্‌গুণ ও যে কোন কীর্ত্তি হউক, সেই সকল আলোচনা কর।”—ফিলিপীয় ৪:৮.

১৭. কী আমাদের সুসমাচারের কার্যকারী ঘোষণাকারী হতে সাহায্য করবে?

১৭ যিহোবা আমাদেরকে ‘শান্তির সুসমাচারের সুসজ্জতার পাদুকা চরণে দিয়া দাঁড়াইয়া থাকিতে’ সমর্থ করেন। (ইফিষীয় ৬:১৫) খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে নিয়মিতভাবে উপস্থিত হওয়া আমাদেরকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করতে সুসজ্জিত করে। অন্যদেরকে ঈশ্বরের সত্য শিখতে আর এভাবে আধ্যাত্মিক স্বাধীনতা লাভ করতে সাহায্য করে আমরা কত আনন্দই না পাই! (যোহন ৮:৩২) “আত্মার খড়গ, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য” মিথ্যা শিক্ষাগুলো প্রতিহত করার এবং “দুর্গসমূহ” বা দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকা বিষয়গুলো “ভাঙ্গিয়া ফেলিবার জন্য” অপরিহার্য। (ইফিষীয় ৬:১৭; ২ করিন্থীয় ১০:৪, ৫) ঈশ্বরের লিখিত বাক্য বাইবেল দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা আমাদেরকে সত্য শিক্ষা দিতে সাহায্য করে এবং দিয়াবলের চাতুরীর কাছে নতি শিকার করা থেকে রক্ষা করে।

১৮. কীভাবে আমরা “দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর সম্মুখে দাঁড়াইতে” পারি?

১৮ পৌল এই কথাগুলো বলে আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা সম্বন্ধে তার আলোচনা শুরু করেন: “তোমরা প্রভুতে ও তাঁহার শক্তির পরাক্রমে বলবান্‌ হও। ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা পরিধান কর, যেন দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর সম্মুখে দাঁড়াইতে পার।” (ইফিষীয় ৬:১০, ১১) ‘দাঁড়ানো’ হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক শব্দটি একজন সৈন্যের স্থির অবস্থানকে নির্দেশ করে। আধ্যাত্মিক যুদ্ধে আমরা আমাদের অবস্থানে দৃঢ় থাকি, যদিও শয়তান আমাদের একতা নষ্ট করে দেওয়ার, আমাদের শিক্ষাগুলোকে কলুষিত করার অথবা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের নীতিনিষ্ঠাকে ভেঙে ফেলার চেষ্টায় বিভিন্ন চাতুরীপূর্ণ উপায় ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু, দিয়াবলের আক্রমণ এযাবৎ সফল হয়নি—এবং সেগুলো কখনো হবেও না! *

দিয়াবলের প্রতিরোধ করুন, তা হলে সে পলায়ন করবে

১৯. দিয়াবলের প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার একটা উপায় কী?

১৯ দিয়াবল এবং তার নির্দেশাধীন সেই দুষ্ট আত্মিকবাহিনীর বিরুদ্ধে আধ্যাত্মিক যুদ্ধে আমরা সফল হতে পারি। শয়তানের ভয়ে কম্পিত হওয়ার কোনো কারণ নেই যেহেতু শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের বশীভূত হও; কিন্তু দিয়াবলের প্রতিরোধ কর, তাহাতে সে তোমাদের হইতে পলায়ন করিবে।” (যাকোব ৪:৭) শয়তান এবং তার সঙ্গে সংঘবদ্ধ সেই দুষ্ট আত্মিকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার একটা উপায় হল, ইন্দ্রজাল অথবা জাদুমন্ত্রের সঙ্গে এবং যারা এই বিষয়গুলোতে যুক্ত তাদের সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত না হওয়া। শাস্ত্র স্পষ্টভাবে দেখায় যে, যিহোবার দাসদের অবশ্যই গণকদের কাছে যাওয়া অথবা জ্যোতিষিবিদ্যা, ভবিষ্যৎকথন এবং প্রেতচর্চা প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমরা যদি আধ্যাত্মিকভাবে সক্রিয় এবং দৃঢ় থাকি, তা হলে এইরকম ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই যে, কেউ আমাদের ওপর জাদুমন্ত্রের প্রভাব ফেলবে।—গণনাপুস্তক ২৩:২৩; দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১২; যিশাইয় ৪৭:১২-১৫; প্রেরিত ১৯:১৮-২০.

২০. কীভাবে আমরা দিয়াবলের প্রতিরোধ করতে পারি?

২০ বাইবেলের মান এবং সত্যগুলোর সঙ্গে লেগে থেকে আর সেইসঙ্গে দিয়াবলের বিরুদ্ধে দৃঢ় থেকে আমরা ‘দিয়াবলের প্রতিরোধ করি।’ এই জগৎ শয়তানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কারণ সে এই জগতের দেব। (২ করিন্থীয় ৪:৪) তাই, আমরা জগতের এই বৈশিষ্ট্যগুলো যেমন গর্ব, স্বার্থপরতা, অনৈতিকতা, দৌরাত্ম্য এবং বস্তুবাদিতা প্রত্যাখ্যান করি। আমরা জানি যে, প্রান্তরে প্রলোভনের সময় শাস্ত্র ব্যবহার করে যিশু যখন দিয়াবলের আক্রমণকে প্রতিরোধ করেছিলেন, তখন সে পালিয়ে গিয়েছিল। (মথি ৪:৪, ৭, ১০, ১১) একইভাবে, শয়তান পরাজিত হয়ে ‘আমাদের হইতে পলায়ন’ করবে, যদি আমরা যিহোবার প্রতি পুরোপুরি বশীভূত থাকি এবং প্রার্থনাপূর্বক তাঁর ওপর নির্ভর করি। (ইফিষীয় ৬:১৮) যিহোবা ঈশ্বর এবং তাঁর প্রিয় পুত্রের সমর্থন থাকায় কেউই আমাদের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারবে না—না, এমনকি দিয়াবলও নয়!—গীতসংহিতা ৯১:৯-১১.

[পাদটীকা]

^ ঈশ্বরের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা সম্বন্ধে আরও তথ্যের জন্য ২০০৪ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৫-২০ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনার উত্তর কী?

• আমাদের কি শয়তান দিয়াবলকে ভয় পাওয়া উচিত?

• কেন শয়তান খ্রিস্টানদের ওপর তাড়না নিয়ে আসে?

• কেন আমরা “দুষ্ট ব্যক্তির” হাত থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করি?

• কীভাবে আমরা আধ্যাত্মিক যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় সফল হতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রিস্টের প্রাথমিক নির্ভীক অনুসারীরা মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত থেকেছিল

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

দিয়াবল সেই ব্যক্তিদের পুনরুত্থানকে রোধ করতে পারে না, যারা যিহোবার স্মৃতিতে রয়েছে

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি “দুষ্ট ব্যক্তির” হাত থেকে উদ্ধারের জন্য প্রার্থনা করেন?

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি “ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা” পরিধান করছেন?