সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিটা দিক দিয়েই শ্রেষ্ঠ

ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিটা দিক দিয়েই শ্রেষ্ঠ

ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিটা দিক দিয়েই শ্রেষ্ঠ

 যিশু খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের শিখিয়েছিলেন: “অতএব তোমরা এই মত প্রার্থনা করিও; হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক, তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।” (মথি ৬:৯, ১০) আমাদের অনেকের কাছেই প্রভুর প্রার্থনা বলে পরিচিত এই প্রার্থনাটি ঈশ্বরের রাজ্যের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করে।

রাজ্যের মাধ্যমে ঈশ্বরের নাম পবিত্রীকৃত হবে। এটা শয়তান ও মানুষের বিদ্রোহের ফলে এর নামের ওপরে আসা সমস্ত অসম্মানকে মুছে ফেলবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমস্ত বুদ্ধিমান প্রাণীর সুখ নির্ভর করে ঈশ্বরের নামকে পবিত্ররূপে দেখা ও তাঁর শাসন করার অধিকারকে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করার ওপর।—প্রকাশিত বাক্য ৪:১১.

অধিকন্তু, রাজ্যকে প্রতিষ্ঠা করা হয় যাতে ‘[ঈশ্বরের] ইচ্ছা সিদ্ধ হয়, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হয়।’ আর সেই ইচ্ছাটি কী? এটা হল ঈশ্বর ও মানবজাতির মধ্যে সেই সম্পর্ককে ফিরিয়ে আনা, যা আদম হারিয়েছিল। রাজ্য, নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম ব্যক্তি যিহোবার উদ্দেশ্য অনুসারে পৃথিবীতে পরমদেশ প্রতিষ্ঠার কাজও করবে, যেখানে ভাল লোকেরা চিরকাল জীবন উপভোগ করতে পারবে। হ্যাঁ, ঈশ্বরের রাজ্য প্রথম পাপের কারণে ঘটা সমস্ত ক্ষতিকে পূরণ করবে এবং পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের প্রেমময় উদ্দেশ্যকে বাস্তবে রূপায়িত করবে। (১ যোহন ৩:৮) এই রাজ্য এবং এটা যা সম্পাদন করবে, প্রকৃতপক্ষে সেটাই হল বাইবেলের মূল বার্তা।

কোন কোন দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ?

ঈশ্বরের রাজ্য হচ্ছে প্রচুর ক্ষমতাসম্পন্ন এক বাস্তব সরকার। এটা কতটা ক্ষমতাসম্পন্ন সেই বিষয়ে ভাববাদী দানিয়েল আমাদের শুধুমাত্র এক আভাস দিয়েছেন। বহু আগে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: ‘স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন তাহা . . . ঐ সকল [মানব] রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিবে।’ অধিকন্তু, ইতিহাস জুড়ে উত্থান-পতন হতে থাকা মানব সরকারগুলোর বৈসাদৃশ্যে ঈশ্বরের রাজ্য “কখনও বিনষ্ট হইবে না।” (দানিয়েল ২:৪৪) এখানেই শেষ নয়। প্রতিটা দিক দিয়েই এই রাজ্য যেকোনো মানব সরকারের চেয়ে বহুগুণ শ্রেষ্ঠ।

ঈশ্বরের রাজ্যের একজন শ্রেষ্ঠ রাজা রয়েছে। কে সেই রাজা তা বিবেচনা করুন। দানিয়েল এক ‘স্বপ্ন ও মনের দর্শনে’ ঈশ্বরের রাজ্যের শাসককে “মনুষ্য-পুত্ত্রের ন্যায়” দেখেছিলেন, যাঁকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সামনে আনা হয়েছিল এবং চিরস্থায়ী “কর্ত্তৃত্ব, মহিমা ও রাজত্ব” দেওয়া হয়েছিল। (দানিয়েল ৭:১, ১৩, ১৪) সেই মনুষ্যপুত্র মশীহ—যিশু খ্রিস্ট—ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। (মথি ১৬:১৩-১৭) যিহোবা ঈশ্বর তাঁর রাজ্যের রাজা হিসেবে তাঁর নিজের পুত্র, যিশুকে মনোনীত করেছিলেন। পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু দুষ্ট ফরীশীদের বলেছিলেন: “ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের মধ্যেই আছে,” অর্থাৎ সেই রাজ্যের ভাবী রাজা হিসেবে তিনি সেইসয়ম তাদের মাঝেই উপস্থিত ছিলেন।—লূক ১৭:২১.

মানবজাতির মধ্যে শাসক হিসেবে যিশুর যোগ্যতার সমতুল্য কে আছে? ইতিমধ্যেই যিশু সম্পূর্ণরূপে একজন ধার্মিক, নির্ভরযোগ্য এবং সমবেদনাপূর্ণ নেতা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। সুসমাচারের বিবরণগুলো তাঁকে একজন কর্মোদ্যম ও সেইসঙ্গে একজন কোমল ও গভীর সহানুভূতিসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে চিত্রিত করে। (মথি ৪:২৩; মার্ক ১:৪০, ৪১; ৬:৩১-৩৪; লূক ৭:১১-১৭) অধিকন্তু, পুনরুত্থিত যিশু মৃত্যু বা অন্যান্য মানব সীমাবদ্ধতার বশীভূত নন।—যিশাইয় ৯:৬, ৭.

যিশু ও তাঁর সহশাসকরা শ্রেষ্ঠ অবস্থান থেকে শাসন করে। দানিয়েল তার স্বপ্ন-দর্শনে এও দেখেছিলেন যে, ‘রাজত্ব, কর্ত্তৃত্ব পবিত্র প্রজাদিগকে দত্ত হইয়াছিল।’ (দানিয়েল ৭:২৭) যিশু একা শাসন করেন না। তাঁর সঙ্গে অন্য ব্যক্তিরাও আছে, যারা রাজা হিসেবে শাসন করবে এবং যাজক হিসেবে সেবা করবে। (প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০; ২০:৬) তাদের বিষয়ে বলতে গিয়ে প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, সেই মেষশাবক সিয়োন পর্ব্বতের উপরে দাঁড়াইয়া আছেন, এবং তাঁহার সহিত এক লক্ষ চোয়াল্লিশ সহস্র লোক . . . তাহারা . . . পৃথিবী হইতে ক্রীত।”—প্রকাশিত বাক্য ১৪:১-৩.

সেই মেষশাবক হলেন তাঁর রাজ্যের অবস্থানে যিশু খ্রিস্ট। (যোহন ১:২৯; প্রকাশিত বাক্য ২২:৩) এই সিয়োন পর্বত স্বর্গকে নির্দেশ করে। * (ইব্রীয় ১২:২২) যিশু এবং তাঁর ১,৪৪,০০০ জন সহকারী স্বর্গ থেকে শাসন করছেন। শাসন করার জন্য কী এক উচ্চ অবস্থান! স্বর্গে থাকায়, তাদের দৃষ্টিক্ষেত্র বেশ বিস্তৃত। যেহেতু স্বর্গ হল এর সিংহাসন তাই ‘ঈশ্বরের রাজ্যকে’ ‘স্বর্গরাজ্যও’ বলা হয়। (লূক ৮:১০; মথি ১৩:১১) কোনো অস্ত্র, এমনকি পারমাণবিক আক্রমণও ওই স্বর্গীয় সরকারকে হুমকি দিতে বা এর পতন ঘটাতে পারবে না। এটা অজেয় এবং এর প্রতি যিহোবার উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণ করবে।—ইব্রীয় ১২:২৮.

পৃথিবীতে ঈশ্বরের রাজ্যের নির্ভরযোগ্য প্রতিনিধিরা রয়েছে। কীভাবে আমরা তা জানি? গীতসংহিতা ৪৫:১৬ পদ বলে: “তুমি . . . সমস্ত পৃথিবীতে অধ্যক্ষ করিবে” বা অধ্যক্ষ নিযুক্ত করবে। এই ভবিষ্যদ্বাণীতে “তুমি” হলেন ঈশ্বরের পুত্র। (গীতসংহিতা ৪৫:৬, ৭; ইব্রীয় ১:৭, ৮) অতএব, যিশু খ্রিস্ট স্বয়ং এই অধ্যক্ষরূপ প্রতিনিধিদের নিযুক্ত করবেন। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, তারা বিশ্বস্তভাবে তাঁর নির্দেশনা পালন করবে। এমনকি আজকেও, যেসমস্ত যোগ্য ব্যক্তিরা মণ্ডলীতে প্রাচীন হিসেবে সেবা করে, তারা সহবিশ্বাসীদের ওপর “প্রভুত্ব” নয় কিন্তু তাদের রক্ষা করতে, সতেজ করতে এবং সান্ত্বনা দিতে শেখে।—মথি ২০:২৫-২৮; যিশাইয় ৩২:২.

রাজ্যের ধার্মিক প্রজারা রয়েছে। তারা ঈশ্বরের চোখে সিদ্ধ বা নিষ্কলঙ্ক এবং সরল। (হিতোপদেশ ২:২১, ২২) “মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে,” বাইবেল বলে, “এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:১১) রাজ্যের প্রজারা হল মৃদুশীল—শিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক, নম্র, মৃদু এবং ভদ্র। আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো হল তাদের আগ্রহের প্রধান বিষয়। (মথি ৫:৩) তারা যা সঠিক, তা করতে চায় এবং ঈশ্বরের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে।

ঈশ্বরের রাজ্য শ্রেষ্ঠ আইনগুলোর দ্বারা পরিচালিত হয়। রাজ্য পরিচালনাকারী আইন এবং নীতিগুলো স্বয়ং যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে। আমাদের ওপর অন্যায়ভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করার পরিবর্তে সেগুলো আমাদের উপকৃত করে। (গীতসংহিতা ১৯:৭-১১) বহু লোক ইতিমধ্যেই যিহোবার ধার্মিক চাহিদানুসারে জীবনযাপন করে উপকৃত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য বাইবেলের উপদেশে মনোযোগ দেওয়া আমাদের পারিবারিক জীবনকে উন্নত করে। (ইফিষীয় ৫:৩৩–৬:৩) যখন আমরা ‘প্রেম পরিধান করিবার’ বিষয়ে আদেশের বাধ্য হই, তখন অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। (কলসীয় ৩:১৩, ১৪) এভাবে যখন আমরা শাস্ত্রীয় নীতি অনুসারে জীবনযাপন করি, তখন আমরা কাজ করার উত্তম অভ্যাসগুলো এবং টাকাপয়সার প্রতি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলি। (হিতোপদেশ ১৩:৪; ১ তীমথিয় ৬:৯, ১০) মত্ততা, যৌন অনৈতিকতা, তামাক সেবন, এবং মাদকাসক্তি পরিহার করা আমাদের স্বাস্থ্যকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।—হিতোপদেশ ৭:২১-২৩; ২৩:২৯, ৩০; ২ করিন্থীয় ৭:১.

ঈশ্বরের রাজ্য হল, ঈশ্বর নিযুক্ত এক সরকার। এর রাজা—মশীহ, যিশু খ্রিস্ট—এবং তাঁর সমস্ত সহশাসক ঈশ্বরের ন্যায্য আইনগুলো ও প্রেমময় নীতিগুলো সমর্থন করার জন্য ঈশ্বরের কাছে বাধ্য। পার্থিব প্রতিনিধিসহ রাজ্যের প্রজারা আনন্দের সঙ্গে ঈশ্বরের আইন অনুসারে জীবনযাপন করে থাকে। এই জন্য, রাজ্যের শাসক ও প্রজাদের জীবনের কেন্দ্রে রয়েছে ঈশ্বর। তাই, রাজ্য হল এক প্রকৃত ঈশতন্ত্র অর্থাৎ ঈশ্বরের শাসন। নিশ্চিতভাবেই এটা যে-উদ্দেশ্যে স্থাপিত হয়েছে, সেই উদ্দেশ্যকে সম্পাদন করবে। কিন্তু ঈশ্বরের রাজ্য, যা মশীহ রাজ্য হিসেবেও পরিচিত, তা কখন শাসন করতে শুরু করেছিল?

রাজ্যের শাসন শুরু হয়

কখন রাজ্যের শাসন শুরু হয়, তা জানার মূল চাবি যিশুর কথায় পাওয়া যায়। তিনি বলেছিলেন, “জাতিগণের সময় সম্পূর্ণ না হওয়া পর্য্যন্ত যিরূশালেম জাতিগণের পদ-দলিত হইবে।” (লূক ২১:২৪) সারা পৃথিবীতে শুধুমাত্র যিরূশালেমই ছিল একমাত্র নগর, যেটার সঙ্গে সরাসরিভাবে ঈশ্বরের নাম জড়িত ছিল। (১ রাজাবলি ১১:৩৬; মথি ৫:৩৫) এটা ছিল ঈশ্বর অনুমোদিত এক পার্থিব রাজ্যের রাজধানী। সেই নগর এই অর্থে জাতিগণের পদদলিত হওয়ার কথা ছিল যে, ঈশ্বরের লোকেদের ওপর তাঁর শাসন জাগতিক সরকারগুলোর দ্বারা বাধাগ্রস্ত হবে। এটা কখন শুরু হবে?

যিরূশালেমে যিহোবার সিংহাসনে শেষ যে-রাজা বসবেন তাকে বলা হয়েছিল: “উষ্ণীষ অপসারণ কর ও রাজমুকুট দূর কর। . . . যাবৎ তিনি না আইসেন, যাঁহার অধিকার; আমি তাঁহাকে দিব।” (যিহিষ্কেল ২১:২৫-২৭) সেই রাজার মাথা থেকে রাজমুকুট অপসারিত হওয়ার এবং ঈশ্বরের লোকেদের ওপর থেকে তাঁর শাসনব্যবস্থা বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। এটা ঘটেছিল সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে, যখন বাবিলীয়রা যিরূশালেম ধ্বংস করে। সেই “সময়” বা নিরূপিত সময় চলাকালীন, ঈশ্বরের শাসনকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য পৃথিবীতে তাঁর কোনো সরকার থাকবে না। একমাত্র ওই সময়ের শেষেই যিহোবা “যাঁহার অধিকার” আছে—যিশু খ্রিস্টকে—শাসন করার ক্ষমতা দেবেন। ওই সময়কাল কতটা দীর্ঘ হবে?

বাইবেলের দানিয়েল বইয়ের এক ভবিষ্যদ্বাবাণী বর্ণনা করে: “বৃক্ষটা ছেদন কর ও বিনষ্ট কর, কিন্তু ভূমিতে উহার মূলের কাণ্ডকে লৌহ ও পিত্তলের শৃঙ্খলে বদ্ধ করিয়া ক্ষেত্রের কোমল তৃণমধ্যে রাখ . . . যে পর্য্যন্ত না তাহার উপরে সাত কাল ঘুরে।” (দানিয়েল ৪:২৩) এখন যেমন আমরা দেখব যে, এখানে উল্লেখিত ‘সাত কালের’ দৈর্ঘ্যই ‘জাতিগণের সময়ের’ সমান।

বাইবেলে কখনো কখনো ব্যক্তি, শাসক বা রাজ্যকে বৃক্ষ দ্বারা চিত্রিত করা হয়। (গীতসংহিতা ১:৩; যিরমিয় ১৭:৭, ৮; যিহিষ্কেল ৩১ অধ্যায়) প্রতীকী বৃক্ষটা “সমস্ত পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত দৃশ্যমান হইল।” (দানিয়েল ৪:১১) তাই, বৃক্ষ দ্বারা চিত্রিত সেই শাসনব্যবস্থা, যেটাকে ছেদন ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করার এবং “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” ব্যাপ্ত হওয়ার কথা ছিল, সেটা মানবজাতির সমগ্র রাজ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে। (দানিয়েল ৪:১৭, ২০, ২২) অতএব, সেই বৃক্ষটা ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ শাসনব্যবস্থাকে প্রতিনিধিত্ব করে, বিশেষভাবে পৃথিবীর ক্ষেত্রে। যিহোবা ইস্রায়েল জাতির ওপর যে-রাজ্য স্থাপন করেছিলেন সেটার মাধ্যমে পৃথিবীতে কিছু সময়ের জন্য এই শাসনব্যবস্থাকে প্রয়োগ করেছিলেন। প্রতীকী ঐ বৃক্ষটাকে ছেদন করা হয়েছিল ও এর বৃদ্ধি রোধ করার জন্য কাণ্ডকে লোহা ও তামার শৃঙ্খলে বদ্ধ করা হয়েছিল। এটা ইঙ্গিত করেছিল যে, পৃথিবীতে ঈশ্বরের প্রতিনিধিস্বরূপ শাসনব্যবস্থা কাজ করা বন্ধ করেছিল, যা সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে ঘটেছিল—কিন্তু চিরকালের জন্য নয়। বৃক্ষটা ততদিন পর্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকবে যতদিন না “সাত কাল” অতিবাহিত হয়। ঐ সময়কালের শেষে, যিহোবা বৈধ উত্তরাধিকারী, যিশু খ্রিস্টকে শাসনভার দেবেন। স্পষ্টতই, “সাত কাল” এবং “জাতিগণের সময়” একই সময়কালকে বোঝায়।

বাইবেল আমাদেরকে ‘সাত কালের’ দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। “এক কাল ও দুই কাল ও অর্দ্ধ কাল”—মোট সাড়ে তিন “কাল”’—হিসেবে এটা ১,২৬০ দিনের সমান। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৬, ১৪) এর মানে ওই সংখ্যার দ্বিগুণ অর্থাৎ সাত কাল সমান ২,৫২০ দিন।

যখন আমরা সাধারণ কাল পূর্ব ৬০৭ সাল থেকে আক্ষরিক ২,৫২০ দিন গণনা করি তখন আমরা সা.কা.পূ. ৬০০ সালে এসে পৌঁছাই। কিন্তু, সাত কালের স্থায়িত্ব সেই সময়ের চেয়ে আরও অনেক বেশি দীর্ঘ হয়েছিল। যিশু যখন “জাতিগণের সময়” সম্পর্কে বলেছিলেন, তখনও এটা চলছিল। তাই, সাত কাল হচ্ছে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক সময়। অতএব, আমাদের এখানে শাস্ত্রের নিয়ম প্রয়োগ করতে হবে: “এক এক দিনের জন্য এক এক বৎসর।” (গণনাপুস্তক ১৪:৩৪; যিহিষ্কেল ৪:৬) এই অনুসারে, ঐশিক কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়া পৃথিবীতে জাগতিক শক্তিগুলোর শাসনকালের মোট সময় হল ২,৫২০ বছর। সা.কা.পূ. ৬০৭ সাল থেকে ২,৫২০ বছর গণনা করলে তা আমাদের সা.কা. ১৯১৪ সালে নিয়ে আসে। সেই বছরই “জাতিগণের সময়” বা “সাত কাল” শেষ হয়। অর্থাৎ ১৯১৪ সালে ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হিসেবে যিশু খ্রিস্ট তাঁর শাসন শুরু করেন।

“তোমার রাজ্য আইসুক”

যেহেতু মশীহ রাজ্য ইতিমধ্যেই স্বর্গে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে, তা হলে আমাদের কি এখনও এটা আসুক বলে প্রার্থনা করে চলা উচিত, যেমনটা যিশু তাঁর আদর্শ প্রার্থনায় শিখিয়েছিলেন? (মথি ৬:৯, ১০) হ্যাঁ। সেই অনুরোধ হচ্ছে সঠিক এবং এখনও খুবই অর্থপূর্ণ। কারণ ঈশ্বরের রাজ্য ভবিষ্যতে এই পৃথিবীতে এর পূর্ণ ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।

যখন তা ঘটবে, বিশ্বস্ত মানবজাতি কত আশীর্ব্বাদই না উপভোগ করবে! “ঈশ্বর আপনি তাহাদের সঙ্গে থাকিবেন,” বাইবেল বলে, “আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) সেই সময়, “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।” (যিশাইয় ৩৩:২৪) যারা ঈশ্বরকে খুশি করে তারা অনন্তজীবন উপভোগ করবে। (যোহন ১৭:৩) এগুলো ও বাইবেলের অন্যান্য ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর পরিপূর্ণতার জন্য অপেক্ষা করার সময় আসুন আমরা “প্রথমে [ঈশ্বরের] রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করি।”—মথি ৬:৩৩.

[পাদটীকা]

^ প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ যিবূষীয়দের কাছ থেকে পার্থিব সিয়োন পর্বতের দুর্গ হস্তগত করে সিয়োনকে তার রাজ্যের রাজধানী করেছিলেন। (২ শমূয়েল ৫:৬, ৭, ৯) তিনি পবিত্র সিন্দুককেও সেই জায়গায় সরিয়ে এনেছিলেন। (২ শমূয়েল ৬:১৭) যেহেতু সিন্দুকের সঙ্গে যিহোবার উপস্থিতি জড়িত ছিল, তাই সিয়োনকে ঈশ্বরের নিবাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা স্বর্গের জন্য এক উপযুক্ত প্রতীক।—যাত্রাপুস্তক ২৫:২২; লেবীয় পুস্তক ১৬:২; গীতসংহিতা ৯:১১; প্রকাশিত বাক্য ১১:১৯.

[৪ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

যিহোবা তাঁর রাজ্যের রাজা হওয়ার জন্য যিশু খ্রিস্টকে নিযুক্ত করেছেন

[৬ পৃষ্ঠার ডায়াগ্রাম/চিত্রগুলো]

২,৫২০ বছর

৬০৭ সালের অক্টোবর ◀ সা.কা.পূ. সা.কা. ▸ ১৯১৪ সালের অক্টোবর

৬০৬ ১/৪ বছর ১,৯১৩ ৩/৪ বছর

‘জাতিগণের সময়’ শুরু হয়েছিল সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে এবং শেষ হয়েছে সা.কা ১৯১৪ সালে

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের রাজ্যের পার্থিব প্রজারা অনেক আশীর্বাদ উপভোগ করবে