সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘আমরা যিশুর সম্বন্ধে না বলিয়া থাকিতে পারি না’

‘আমরা যিশুর সম্বন্ধে না বলিয়া থাকিতে পারি না’

“মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে”

‘আমরা যিশুর সম্বন্ধে না বলিয়া থাকিতে পারি না’

 সময়টা সা.কা. ৩৩ সাল এবং জায়গাটা যিরূশালেমের যিহুদি জাতীয় বিচারালয়ের বিশাল কক্ষ। এমনই এক পরিবেশে মহাসভা, যিশু খ্রিস্টের ১২ জন অনুসারীর বিচার শুরু করবে। কেন? কারণ তারা যিশুর সম্বন্ধে প্রচার করে চলেছে। প্রেরিত পিতর ও যোহন এই নিয়ে দ্বিতীয়বার আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অন্য প্রেরিতদের জন্য এটা প্রথম বিচার।

মহাযাজক ১২ জন প্রেরিতের উদ্দেশে পূর্বে আদালতের জারি করা আদেশ সম্বন্ধে বলেন। সেই সময়, যিশুর সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে যখন নিষেধ করা হয়েছিল, তখন প্রেরিত পিতর ও যোহন উত্তর দিয়েছিল: “ঈশ্বরের কথা অপেক্ষা আপনাদের কথা শুনা ঈশ্বরের সাক্ষাতে বিহিত কি না, আপনারা বিচার করুন; কারণ আমরা যাহা দেখিয়াছি ও শুনিয়াছি, তাহা না বলিয়া থাকিতে পারি না।” সাহস চেয়ে প্রার্থনা করার পর যিশুর শিষ্যরা সুসমাচার ঘোষণার কাজ চালিয়ে গিয়েছিল।—প্রেরিত ৪:১৮-৩১.

পূর্বে তার দেওয়া হুমকি ব্যর্থ হয়েছিল, সেই সম্বন্ধে অবগত থাকায় দ্বিতীয়বার বিচারের সময় মহাযাজক ঘোষণা করেন: “আমরা তোমাদিগকে এই নামে উপদেশ দিতে দৃঢ়রূপে নিষেধ করিয়াছিলাম; তথাপি দেখ, তোমরা আপনাদের উপদেশে যিরূশালেম পরিপূর্ণ করিয়াছ, এবং সেই ব্যক্তির রক্ত আমাদের উপরে বর্ত্তাইতে মনস্থ করিতেছ।”—প্রেরিত ৫:২৮.

অবিচলিত দৃঢ়সংকল্প

সাহসের সঙ্গে পিতর ও অন্য প্রেরিতরা বলেন: “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।” (প্রেরিত ৫:২৯) বস্তুতপক্ষে, যিহোবার আজ্ঞাগুলোর সঙ্গে মানুষের দাবিগুলোর যখন সংঘাত ঘটে, তখন নগণ্য মানুষের চেয়ে বরং আমাদের তাঁর আজ্ঞা পালন করতে হবে। *

ঈশ্বরের প্রতি তাদের বশ্যতা সম্বন্ধে প্রেরিতদের বলা কথাগুলো মহাসভার সদস্যদের দৃঢ়প্রত্যয়ী করা উচিত। ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, যিহুদি সমাজের এই নেতারা একবাক্যে উত্তর দেবে: ‘ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করো।’ বস্তুতপক্ষে, তারা কি বিশ্বাস করে না যে ঈশ্বর হলেন নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম প্রভু?

স্পষ্টতই সমস্ত প্রেরিতের হয়ে পিতর বলেন যে, পরিচর্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়ে তারা মানুষের চেয়ে বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করবে। এভাবে, তিনি প্রেরিতদের ওপর আনা অবাধ্যতার অভিযোগকে ভিত্তিহীন করেন। তাদের নিজেদের জাতির ইতিহাস থেকেই মহাসভার সদস্যরা জানে যে, কখন মানুষের চেয়ে বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করা সম্পূর্ণরূপে সঠিক সেই বিষয়ে উদাহরণ রয়েছে। মিশরের দুজন ধাত্রী ইব্রীয় নারীদের গর্ভজাত পুত্রসন্তানদের জীবিত রাখার দ্বারা ফরৌণকে নয় কিন্তু ঈশ্বরকে ভয় করেছিল। (যাত্রাপুস্তক ১:১৫-১৭) আত্মসমর্পণ করার চাপ আসলেও রাজা হিষ্কিয় সন্‌হেরীবের নয় কিন্তু ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করেছিলেন। (২ রাজাবলি ১৯:১৪-৩৭) মহাসভার সদস্যরা যেটির সঙ্গে পরিচিত সেই ইব্রীয় শাস্ত্র এই বিষয়ের ওপর জোর দেয় যে, যিহোবা আশা করেন তাঁর লোকেরা যেন তাঁর আজ্ঞা পালন করে।—১ শমূয়েল ১৫:২২, ২৩.

বাধ্যতা পুরস্কৃত হয়

উচ্চ আদালতের অন্তত একজন সদস্য “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে,” এই কথাগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন বলে মনে হয়। মহাসভার একজন গণ্যমান্য বিচারক গমলীয়েল একটা গোপন বৈঠক ডেকে আদালতকে তার বিজ্ঞ পরামর্শ শুনতে রাজি করান। অতীতের উদাহরণগুলোর কথা উল্লেখ করে গমলীয়েল বলেন যে, প্রেরিতদের কাজে বাধা দেওয়া বিজ্ঞতার কাজ নয়। তিনি এই বলে শেষ করেন: “এই লোকদের হইতে ক্ষান্ত হও, তাহাদিগকে থাকিতে দেও . . . কি জানি, দেখা যাইবে যে, তোমরা ঈশ্বরের সহিত যুদ্ধ করিতেছ।”—প্রেরিত ৫:৩৪-৩৯.

গমলীয়েলের যুক্তিসংগত কথাগুলো প্রেরিতদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য উচ্চ আদালতকে দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছিল। যদিও তাদের মারধর করা হয়েছিল কিন্তু প্রেরিতরা তাদের এই অভিজ্ঞতার দ্বারা কোনোভাবেই ভীত হয়নি। বরং, বাইবেলের বিবরণ বলে: “তাঁহারা প্রতিদিন ধর্ম্মধামে ও বাটীতে উপদেশ দিতেন, এবং যীশুই যে খ্রীষ্ট, এই সুসমাচার প্রচার করিতেন, ক্ষান্ত হইতেন না।”—প্রেরিত ৫:৪২.

ঈশ্বরের কর্তৃত্বই হচ্ছে সর্বোচ্চ, এই বিষয়টা জোরালোভাবে বলার দ্বারা প্রেরিতরা কত আশীর্বাদই না লাভ করেছিল! আজকে সত্য খ্রিস্টানদেরও একই মনোভাব রয়েছে। যিহোবার সাক্ষিরা সবসময় যিহোবাকে তাদের সর্বোচ্চ শাসক হিসেবে দেখে থাকে। যদি তাদেরকে ঈশ্বরের নির্দেশনার বিপরীতে কাজ করতে আদেশ দেওয়া হয়, তা হলে তারা প্রেরিতদের মতোই উত্তর দেয়: “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।”

[পাদটীকা]

^ যিহোবার সাক্ষিদের ২০০৬ সালের ক্যালেন্ডার (ইংরেজি), সেপ্টেম্বর/অক্টোবর দেখুন।

[৯ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন?

সুসমাচার লেখক লূক কীভাবে মহাসভার গোপন বৈঠকে বলা গমলীয়েলের বিবৃতি সম্বন্ধে তথ্য পেলেন? গমলীয়েলের কথাগুলো লূকের কাছে সম্ভবত ঐশিক অনুপ্রেরণার দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছিল। কিংবা হতে পারে, পৌল (গমলীয়েলের প্রাক্তন ছাত্রদের একজন) গমলীয়েলের বক্তৃতার সারাংশ লূককে জানিয়েছিলেন। অথবা লূক হয়তো উচ্চ আদালতের কোনো সহানুভূতিশীল ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছিলেন।