সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘তাঁহারা মহাসভাকে ডাকিয়া একত্র করিলেন’

‘তাঁহারা মহাসভাকে ডাকিয়া একত্র করিলেন’

‘তাঁহারা মহাসভাকে ডাকিয়া একত্র করিলেন’

 মহাযাজক এবং যিহুদি শাসকরা বুঝতে পারছিল না যে তারা কী করবে। যিশু খ্রিস্টকে কেন্দ্র করে যে-উত্তেজনা চলছে সেটাকে থামানোর জন্য তারা কী করতে পারে? তারা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিতে সফল হয়েছিল কিন্তু এখন যিশুর শিষ্যরা যিরূশালেমকে তাঁর পুনরুত্থানের বিষয়ে কথার দ্বারা পূর্ণ করছে। তাদের কী করে চুপ করানো যায়? এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে, মহাযাজক ও তার সঙ্গীরা যিহুদি লোকেদের সর্বোচ্চ আদালত, ‘মহাসভাকে ডাকিয়া একত্র করিলেন।’—প্রেরিত ৫:২১.

সেই সময়ে ইস্রায়েলে রোমীয় রাজ্যপাল পন্তীয় পীলাত ছিলেন সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের অধিকারী। কিন্তু মহাসভা কীভাবে পীলাতের ওপর প্রভাব ফেলেছিল? তাদের নিজস্ব আইনগত অধিকারের ব্যাপ্তি কতটা ছিল? মহাসভা কীভাবে গঠিত হয়েছিল? আর এটা কীভাবে কাজ করত।

মহাসভার গঠন

“মহাসভা” হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে “একসঙ্গে বসা।” এটা ছিল কোনো সম্মেলন বা সভার জন্য ব্যবহৃত এক সাধারণ অভিব্যক্তি। যিহুদি পরম্পরা অনুযায়ী, এটা সাধারণত এক ধর্মীয় বিচার সংক্রান্ত কাঠামো বা আদালতকে বোঝাত।

তালমুড, যেটি সা.কা. ৭০ সালে যিরূশালেম ধ্বংসের পর কয়েক শতাব্দী ধরে সংকলন করা হয়েছিল, সেটির লেখকরা মহাসভাকে এক প্রাচীন কাঠামো বলে বর্ণনা করেছিল। তারা মনে করেছিল যে, এটা সবসময় সেই পণ্ডিত ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত হতো, যারা যিহুদি আইনের নানা বিষয় নিয়ে তর্ক করার জন্য মিলিত হতো এবং তারা বিশ্বাস করত যে, এটা সেই সময় থেকে শুরু হয়েছিল, যখন মোশি ইস্রায়েল জাতিকে নেতৃত্ব দিতে তাকে সাহায্য করার জন্য ৭০ জন প্রাচীনকে একত্র করেছিলেন। (গণনাপুস্তক ১১:১৬, ১৭) ইতিহাসবেত্তারা এই ধারণাকে অস্বীকার করে। তারা বলে যে, ইস্রায়েলে পারস্য শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রথম শতাব্দীর মহাসভার মতো কোনোকিছু অস্তিত্বে আসেনি। এ ছাড়া, ইতিহাসবেত্তারা এও বিশ্বাস করত যে, তালমুড বিশেষজ্ঞদের শিক্ষিত সমাজ, মহাসভার চেয়ে বরং দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীর রব্বিদের সভাগুলোর সঙ্গে আরও বেশি পরিচিত ছিল। তা হলে, কখন মহাসভা অস্তিত্বে আসে?

বাইবেল প্রকাশ করে যে সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে বাবিল থেকে যিহূদায় ফিরে আসা নির্বাসিত ব্যক্তিদের এক জাতীয় সংগঠন ছিল। নহিমিয় এবং ইষ্রা, অধ্যক্ষ, প্রাচীনবর্গ, প্রধান লোক এবং অধ্যক্ষ বা শাসনকর্তাদের বিষয় উল্লেখ করে—সম্ভবত সেটাই ছিল ভবিষ্যৎ মহাসভার শুরু।—ইষ্রা ১০:৮; নহিমিয় ৫:৭.

ইব্রীয় শাস্ত্র লেখা শেষ হওয়ার সময় থেকে শুরু করে মথির সুসমাচারের রচনা পর্যন্ত সময়কাল, যিহুদিদের জন্য এক বিশৃঙ্খলার সময় ছিল। সা.কা.পূ. ৩৩২ সালে, মহান আলেকজান্ডার যিহূদিয়া অধিকার করেছিলেন। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর, যিহূদিয়া তার অধিকৃত দুটো গ্রিক রাজ্যের—প্রথমে টলেমীদের ও পরে সেলুসিডদের—অধীনে আসে। সেলুসিড রাজ্যের বিবরণে, যা সা.কা.পূ. ১৯৮ সাল থেকে শুরু হয়েছিল, আমরা যিহুদিদের একটা সেনেটের বিষয়ে প্রথম উল্লেখ পাই। যদিও এই পরিষদের সীমিত ক্ষমতা ছিল কিন্তু এটা যিহুদিদেরকে স্বায়ত্তশাসনের আভাস দিয়েছিল।

সাধারণ কাল পূর্ব ১৬৭ সালে সেলুসিড রাজা আ্যন্টিওকাস ৪র্থ (এপিফেনস) যিহুদিদের ওপর গ্রিক সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি যিরূশালেম মন্দিরের বেদির ওপর জিউস দেবের উদ্দেশে একটা শূকর বলি দিয়ে মন্দিরকে অপবিত্র করেছিলেন। এটা সেইসময়ে একটা বিদ্রোহকে উসকে দিয়েছিল, যখন ম্যাকাবিরা সেলুসিড শাসন থেকে স্বাধীন হয়ে হাসমোনিয় রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিল। * একইসময়ে, অধ্যাপক ও ফরীশীরা—জননেতারা, যারা বিদ্রোহে ইন্ধন জুগিয়েছিল—যাজকীয় শ্রেণীর ক্ষমতা হারিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের ক্ষমতা লাভ করেছিল।

গ্রিক শাস্ত্রে বর্ণিত মহাসভার উৎপত্তি হতে শুরু করছিল। এটা এক জাতীয় প্রশাসনিক পরিষদ এবং যিহুদি আইন ব্যাখ্যা করার জন্য বিচার বিভাগীয় সর্বোচ্চ কাঠামো হয়ে উঠেছিল।

ক্ষমতার ভারসাম্য

প্রথম শতাব্দীর মধ্যে, রোম যিহূদিয়ার অধীনে ছিল। কিন্তু, যিহুদিরা বেশ অনেকখানি স্বাধীনতা উপভোগ করছিল। রোমীয়দের পন্থা ছিল এর প্রজাদের নিজস্ব সরকার বেছে নেওয়ার অধিকার প্রদান করা। সুতরাং, রোমীয় আধিকারিকরা স্থানীয় আদালতের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করত না এবং তারা সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে উদ্ভব হতে পারে এমন সমস্যাগুলোকে এড়িয়ে চলত। এর পিছনে উদ্দেশ্য ছিল, নিজস্ব রীতিনীতি পালন করার সুযোগ দিয়ে এবং মূলত নিজেদেরকে শাসন করার অনুমতি দিয়ে অধিবাসীদের মধ্যে শান্তি ও আনুগত্য বৃদ্ধি করা। মহাযাজক, যিনি মহাসভার সভাপতি ছিলেন তাকে নিযুক্ত ও পদচ্যুত করা এবং কর ধার্য করা ছাড়া, রোমীয়রা একমাত্র তখনই যিহুদিদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করত, যখন তাদের নিজস্ব সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থের জন্য তা অপরিহার্য ছিল। যিশুর বিচারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঘটনায় যেমন দেখা গিয়েছে, রোম মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে এর ক্ষমতাকে যতদূর সম্ভব সীমিত করে রেখেছিল।—যোহন ১৮:৩১.

এভাবে মহাসভা যিহুদিদের সবচেয়ে আভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করত। গ্রেপ্তার করার জন্য এর পদাতিকরা ছিল। (যোহন ৭:৩২) রোমীয়দের হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিম্ন আদালত লঘু অপরাধ ও নাগরিক মামলাগুলোর বিচার করত। কোনো মামলায় যখন নিম্ন আদালত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারত না, তখন তা মহাসভাকে অর্পণ করা হতো, যার রায় ছিল চূড়ান্ত।

এর বিচার করার অধিকারের ব্যাপ্তিকে বজায় রাখার জন্য মহাসভাকে শান্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে ও রোমীয় শাসনকে সমর্থন করতে হতো। কিন্তু রোমীয়রা যদি কোনোরকম রাজনৈতিক অপরাধের বিষয় সন্দেহ করত, তা হলে তাদের কাছে যেভাবে সঠিক বলে মনে হতো, সেভাবে তারা তাতে হস্তক্ষেপ করত। প্রেরিত পৌলকে গ্রেপ্তার করা ছিল এমনই একটা মামলা।—প্রেরিত ২১:৩১-৪০.

আদালতের সদস্যপদ

মহাসভায় ৭১ জন সদস্য ছিল—মহাযাজক এবং জাতির গণ্যমান্য ৭০ জন ব্যক্তি। রোমীয়দের সময়ে যাজকীয় উচ্চপদস্থ ব্যক্তি (মূলত সদ্দূকীরা), অযাজকীয় অভিজাত শ্রেণীর লোক এবং ফরীশীদের পক্ষের পাণ্ডিত্যপূর্ণ অধ্যাপকদের নিয়ে মহাসভা গঠিত হয়েছিল। সম্মানিত অপেশাদার ব্যক্তিদের সমর্থন পেয়ে অভিজাত যাজকশ্রেণী আদালতে কর্তৃত্ব করত। * সদ্দূকীরা যেখানে ছিল রক্ষণশীল, সেখানে ফরীশীরা উদার ও মূলত অতি সাধারণ লোক ছিল, লোকেদের ওপর যাদের এক বিরাট প্রভাব ছিল। ইতিহাসবেত্তা জোসিফাসের মতে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও সদ্দূকীরা ফরীশীদের চাহিদাগুলোকে মেটাত। পৌল এই শত্রুতা ও বিশ্বাসের পার্থক্যের সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন, যখন তিনি মহাসভার সামনে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছিলেন।—প্রেরিত ২৩:৬-৯.

মহাসভা মূলত অভিজাত শ্রেণীর লোকেদের নিয়ে গঠিত হওয়ার কারণেই সম্ভবত এর সদস্যপদ আজীবন ছিল এবং অবশিষ্ট সদস্যদের দ্বারা শূন্য পদগুলো পূরণ করা হয়েছিল। মিশনা অনুসারে, নতুন সদস্যদের “যাজক, লেবীয় এবং এমন ইস্রায়েলীয়” হতে হতো, “যে-ইস্রায়েলীয়ের মেয়ে যাজককে বিয়ে করতে পারত,” অর্থাৎ এমন যিহুদি, যিনি তার বংশধরদের বিশুদ্ধতা প্রমাণ করার জন্য বংশতালিকা প্রদান করতে সমর্থ ছিলেন। যেহেতু উচ্চ আদালত সমগ্র দেশের বিচার ব্যবস্থা দেখাশোনা করত, তাই এটা যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় যে, যে-ব্যক্তিরা নিম্ন আদালতে সুনাম অর্জন করেছিল, তাদেরকে মহাসভার একটা পদে আসীন করা হতো।

অধিকারের ব্যাপ্তি ও কর্তৃত্ব

যিহুদিরা মহাসভাকে বেশ সম্মান করত এবং নিম্ন আদালতের বিচারকরা এর রায়কে মেনে নিতে বাধ্য ছিল, তা না হলে তাদের মৃত্যুদণ্ড ভোগ করতে হতো। আদালত বিশেষ করে যাজকদের যোগ্যতা সংক্রান্ত, যিরূশালেম, এর মন্দির এবং মন্দিরে উপাসনা সংক্রান্ত বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিত। প্রকৃতপক্ষে বলতে গেলে, মহাসভার নাগরিক অধিকারের ব্যাপ্তি শুধুমাত্র যিহূদিয়া জুড়েই ছিল। কিন্তু, যেহেতু মহাসভাকে ব্যবস্থার চূড়ান্ত ব্যাখ্যার উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হতো, তাই এটা বিশ্বব্যাপী যিহুদি সমাজগুলোর ওপর নৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, মহাযাজক ও তার পরিষদ দম্মেশকের সমাজ-গৃহগুলোর নেতাদের আদেশ দিয়েছিল, যাতে তারা খ্রিস্টের অনুসারীদের গ্রেপ্তার করতে সাহায্য করে। (প্রেরিত ৯:১, ২; ২২:৪, ৫; ২৬:১২) একইভাবে, যে-যিহুদিরা উৎসবগুলোর জন্য যিরূশালেমে গিয়েছিল তারা সম্ভবত মহাসভার এই রায় তাদের নিজ নিজ দেশে নিয়ে গিয়েছিল।

মিশনা অনুসারে, গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মামলাগুলোতে, যে-বিচারকরা প্রকাশ্যে মহাসভার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করত তাদের মোকাবিলায় এবং মিথ্যা ভাববাদীদের বিচারের ক্ষেত্রে এর একক আধিপত্য ছিল। আদালতের সামনে যিশু এবং স্তিফানকে ঈশ্বর-নিন্দক হিসেবে, পিতর ও যোহনকে জাতির ধ্বংসকারী হিসেবে এবং পৌলকে মন্দির অপবিত্রকারী হিসেবে উপস্থিত করা হয়েছিল।—মার্ক ১৪:৬৪; প্রেরিত ৪:১৫-১৭; ৬:১১; ২৩:১; ২৪:৬.

যিশু ও তাঁর শিষ্যদের বিচার

শুধুমাত্র বিশ্রামবার ও পবিত্র দিনগুলো ছাড়া, প্রতিদিন সকালের বলি উৎসর্গের সময় থেকে সন্ধ্যাকালীন নৈবেদ্য উৎসর্গের সময় পর্যন্ত মহাসভার অধিবেশন বসত। বিচারগুলো শুধুমাত্র দিনের আলোতে অনুষ্ঠিত হতো। যেহেতু মৃত্যুদণ্ডগুলো বিচারের পরের দিন পর্যন্ত ঘোষণা করা হতো না, তাই এই ধরনের মামলাগুলো বিশ্রামবার বা কোনো পর্ব চলাকালে সেই দিন পর্যন্ত মুলতুবি থাকত। যারা সাক্ষি ছিল, তাদেরকে নির্দোষের রক্তপাতের গুরুত্ব সম্পর্কে অত্যন্ত কড়াকড়িভাবে সতর্ক করে দেওয়া হতো। সেইজন্য, রাতের বেলা ও একটা পর্বের শুরুতে কায়াফার বাড়িতে অনুষ্ঠিত যিশুর বিচার ও তাঁকে দোষারোপ করা অবৈধ ছিল। এর চেয়েও জঘন্য বিষয় ছিল যে, বিচারকরাই মিথ্যা সাক্ষিদের অন্বেষণ করেছিল এবং যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য পীলাতকে রাজি করিয়েছিল।—মথি ২৬:৫৭-৫৯; যোহন ১১:৪৭-৫৩; ১৯:৩১.

তালমুড বলে যে, মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত মামলাগুলোতে বিচারকরা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ পরীক্ষা করত। তা সত্ত্বেও, স্তিফান এবং তারও আগে যিশু এইরকম বিচার পায়নি। মহাসভার সামনে স্তিফান আত্মপক্ষ সমর্থন করায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা তাকে পাথর মেরেছিল। এইরকম পরিস্থিতিগুলোতে প্রেরিত পৌলকেও হত্যা করা হতো যদি না রোমীয়রা তার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করত। বস্তুতপক্ষে, মহাসভার সদস্যরা তাকে হত্যা করার চক্রান্ত করেছিল।—প্রেরিত ৬:১২; ৭:৫৮; ২৩:৬-১৫.

আদালতের সদস্যদের মধ্যে অন্ততপক্ষে অল্প কয়েকজন নীতিবান ব্যক্তি ছিল। একজন যুবক যিহুদি শাসক যিনি যিশুর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তিনি সম্ভবত মহাসভার একজন সদস্য ছিলেন। যদিও সেই ব্যক্তির ধনসম্পদ একটা বাধা ছিল, তবুও তার মধ্যে নিশ্চয়ই ভাল গুণগুলো ছিল কারণ যিশু তাকে তাঁর অনুসারী হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।—মথি ১৯:১৬-২২; লূক ১৮:১৮, ২২.

সহবিচারকরা কী ভাবতে পারে, সেই ভয় “যিহূদীদের এক জন অধ্যক্ষ,” নীকদীমকে রাতের অন্ধকারে যিশুর সঙ্গে দেখা করতে পরিচালিত করেছিল। তবুও, নীকদীম মহাসভার সামনে এই কথা জিজ্ঞেস করে যিশুর পক্ষ সমর্থন করেছিলেন: “অগ্রে মানুষের নিজের কথা না শুনিয়া, ও সে কি করে, না জানিয়া, আমাদের ব্যবস্থা কি কাহারও বিচার করে?” পরবর্তীকালে কবরে রাখার জন্য যিশুর মৃতদেহকে প্রস্তুত করার সময় নীকদীম “গন্ধরসে মিশ্রিত . . . অগুরু” নিয়ে এসেছিলেন।”—যোহন ৩:১, ২; ৭:৫১, ৫২; ১৯:৩৯.

মহাসভার আরেকজন সদস্য, অরিমাথিয়ার যোষেফ সাহসের সঙ্গে পীলাতের কাছে যিশুর দেহ চেয়েছিলেন এবং তার নিজস্ব নতুন কবরে রেখেছিলেন। যোষেফ “ঈশ্বরের রাজ্যের অপেক্ষা” করছিলেন কিন্তু যিহুদিদের ভয় তাকে যিশুর একজন শিষ্য বলে নিজের পরিচয় দিতে বাধা দিয়েছিল। কিন্তু, যোষেফ যিশুকে হত্যা করার চক্রান্তে মহাসভার সঙ্গে হাত মেলাননি বলে তিনি প্রশংসা পাওয়া যোগ্য।—মার্ক ১৫:৪৩-৪৬; মথি ২৭:৫৭-৬০; লূক ২৩:৫০-৫৩; যোহন ১৯:৩৮.

মহাসভার সদস্য গমলীয়েল যিশুর শিষ্যদেরকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তার সহবিচারকদের বিজ্ঞতার সঙ্গে পরামর্শ দিয়েছিলেন। “কি জানি,” তিনি বলেছিলেন “দেখা যাইবে যে, তোমরা ঈশ্বরের সহিত যুদ্ধ করিতেছ।” (প্রেরিত ৫:৩৪-৩৯) যিশু ও তাঁর শিষ্যদের প্রতি যে ঈশ্বরের সমর্থন রয়েছে সেটা বুঝতে কোন বিষয়টা উচ্চ আদালতকে বাধা দিয়েছিল? যিশুর অলৌকিক কাজগুলোকে স্বীকার করার পরিবর্তে মহাসভা এভাবে যুক্তি করেছিল: “আমরা কি করি? এ ব্যক্তি ত অনেক চিহ্ন-কার্য্য করিতেছে। আমরা যদি ইহাকে এইরূপ চলিতে দিই, তবে সকলে ইহাতে বিশ্বাস করিবে; আর রোমীয়েরা আসিয়া আমাদের স্থান ও জাতি উভয়ই কাড়িয়া লইবে।” (যোহন ১১:৪৭, ৪৮) ক্ষমতার প্রতি লোভ যিহুদি উচ্চ আদালতের ন্যায়বিচারকে বিকৃত করে দিয়েছিল। একইভাবে, যিশুর শিষ্যরা যখন লোকেদেরকে সুস্থ করেছিল, তখন তাতে আনন্দ করার বদলে ধর্মীয় নেতারা “ঈর্ষাতে পরিপূর্ণ হইলেন।” (প্রেরিত ৫:১৭) বিচারক হিসেবে তাদের ঈশ্বর ভয়শীল হওয়া উচিত ছিল কিন্তু তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল দুর্নীতিপরায়ণ এবং অসৎ।—যাত্রাপুস্তক ১৮:২১; দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৮-২০.

ঐশিক বিচার

ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি ইস্রায়েলের অবাধ্যতা এবং মশীহকে প্রত্যাখ্যান করার কারণে যিহোবা শেষ পর্যন্ত সেই জাতিকে তাঁর মনোনীত লোক হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সা.কা. ৭০ সালে, রোমীয়রা যিরূশালেম শহর ও এর মন্দিরকে ধ্বংস করার ফলে সমগ্র যিহুদি ব্যবস্থা এবং অবশেষে মহাসভাও বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

প্রথম শতাব্দীর মহাসভার কোনো সদস্য পুনরুত্থিত হবেন কি না এবং কারা পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ করেছে, সেই বিষয়ে যিহোবার মনোনীত বিচারক যিশু খ্রিস্ট সিদ্ধান্ত নেবেন। (মার্ক ৩:২৯; যোহন ৫:২২) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে যিশু নিখুঁত ন্যায়বিচার করবেন।—যিশাইয় ১১:৩-৫.

[পাদটীকাগুলো]

^ ম্যাকাবিয় ও হাসমোনিয়দের সম্বন্ধে ১৯৯৮ সালের ১৫ই নভেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২১-৪ পৃষ্ঠা এবং ২০০১ সালের ১৫ই জুন পত্রিকার ২৭-৩০ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ বাইবেল যখন ‘প্রধান যাজকদের’ সম্পর্কে বলে, তখন তা বর্তমান ও প্রাক্তন মহাযাজক এবং সেই পরিবারগুলোর সদস্যদেরকে বোঝায়, যারা ভবিষ্যতে যাজকদের উচ্চ পদগুলো পূরণ করার জন্য যোগ্য।—মথি ২১:২৩.