সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে প্রেম ও সম্মান দেখান

আপনার জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে প্রেম ও সম্মান দেখান

আপনার জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে প্রেম ও সম্মান দেখান

“তোমরাও প্রত্যেকে আপন আপন স্ত্রীকে তদ্রূপ আপনার মত প্রেম কর; কিন্তু স্ত্রীর উচিত যেন সে স্বামীকে ভয় [“সম্মান,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] করে।” —ইফিষীয় ৫:৩৩.

১, ২. সমস্ত বিবাহিত ব্যক্তির নিজেকে কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা উচিত এবং কেন?

 ধরুন, আপনি সুন্দর কাগজে মোড়ানো একটা উপহারের প্যাকেট পেয়েছেন, যেটার ওপরে লেখা রয়েছে: “যত্নের সঙ্গে ব্যবহার করুন।” সেই প্যাকেটটা আপনি কীভাবে নাড়াচাড়া করবেন? সেটা যাতে নষ্ট না হয়, তার জন্য নিশ্চিতভাবেই আপনি সমস্ত ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করবেন। উপহার হিসেবে বিয়ে সম্বন্ধে কী বলা যায়?

অর্পা ও রূৎ নামে দুজন অল্পবয়স্ক মহিলাকে নয়মী নামে এক ইস্রায়েলীয় বিধবা বলেছিলেন: “তোমরা উভয়ে যেন স্বামীর বাটীতে বিশ্রাম পাও, সদাপ্রভু তোমাদিগকে এই বর দিউন।” (রূতের বিবরণ ১:৩-৯) এক উত্তম স্ত্রী সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “বাটী ও ধন পৈত্রিক অধিকার; কিন্তু বুদ্ধিমতী স্ত্রী সদাপ্রভু হইতে পাওয়া যায়।” (হিতোপদেশ ১৯:১৪) আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তা হলে আপনার সাথিকে ঈশ্বরের কাছ থেকে এক বর বা উপহার হিসেবে দেখতে হবে। ঈশ্বর আপনাকে যে-উপহার দিয়েছেন, সেটাকে আপনি কীভাবে ব্যবহার করছেন?

৩. স্বামী ও স্ত্রীদের পৌলের কোন উপদেশে মনোযোগ দেওয়া উচিত?

প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের কাছে লেখার সময় প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “তোমরাও প্রত্যেকে আপন আপন স্ত্রীকে তদ্রূপ আপনার মত প্রেম কর; কিন্তু স্ত্রীর উচিত যেন সে স্বামীকে সম্মান করে।” (ইফিষীয় ৫:৩৩) কীভাবে স্বামী ও স্ত্রীরা তাদের কথাবার্তার ক্ষেত্রে এই উপদেশে মনোযোগ দিতে পারে, তা বিবেচনা করুন।

“অশান্ত মন্দ বিষয়” সম্বন্ধে সাবধান থাকুন

৪. কীভাবে জিহ্বা হয় ভাল নতুবা মন্দ প্রভাব হতে পারে?

বাইবেল লেখক যাকোব বলেন যে, জিহ্বা হল “অশান্ত মন্দ বিষয়,” যা “মৃত্যুজনক বিষে পরিপূর্ণ।” (যাকোব ৩:৮) যাকোব অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সত্য সম্বন্ধে অবগত ছিলেন: এক অশান্ত জিহ্বা হল ধ্বংসাত্মক। নিঃসন্দেহে, তিনি বাইবেলের সেই প্রবাদের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন, যা অবিবেচনাপূর্ণ কথাবার্তাকে “খড়্গাঘাতের” সঙ্গে তুলনা করে। এর বৈসাদৃশ্যে, সেই একই প্রবাদ বলে যে, “জ্ঞানবানদের জিহ্বা স্বাস্থ্যস্বরূপ।” (হিতোপদেশ ১২:১৮) সত্যিই, কথাবার্তা এক জোরালো প্রভাব ফেলতে পারে। সেগুলো হয় আঘাত দিতে নতুবা স্বাস্থ্যকর হতে বা গেঁথে তুলতে পারে। আপনার বিবাহসাথির ওপর আপনার কথাবার্তার কোন প্রভাব রয়েছে? আপনি যদি আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে এই প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেন, তা হলে তিনি কেমন উত্তর দেবেন?

৫, ৬. কোন বিষয়গুলোর জন্য কারো কারো পক্ষে জিহ্বাকে দমন করা কঠিন হয়ে পড়ে?

আঘাত দেয় এমন কথাবার্তা যদি ধীরে ধীরে আপনার বিয়ের অংশ হয়ে ওঠে, তা হলে আপনি পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেন। কিন্তু, এর জন্য কঠোর প্রচেষ্টার প্রয়োজন। কেন? একটা কারণ হল যে, আপনাকে অসিদ্ধ মাংসের সঙ্গে লড়াই করতে হয়। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপ আমরা যেভাবে চিন্তা করি ও পরস্পরের সঙ্গে যেভাবে কথা বলি, তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। “যদি কেহ বাক্যে উছোট না খায়,” যাকোব লিখেছিলেন, “তবে সে সিদ্ধ পুরুষ, সমস্ত শরীরকেই বল্‌গা দ্বারা বশে রাখিতে সমর্থ।”—যাকোব ৩:২.

মানব অসিদ্ধতা ছাড়াও, পারিবারিক পরিবেশ জিহ্বার অপব্যবহারের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। কিছু লোক এমন ঘরে মানুষ হয়েছে, যেখানে বাবামারা ছিল “ক্ষমাহীন [‘ঝগড়া করে আপোস করে না,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন], . . . অজিতেন্দ্রিয়, প্রচণ্ড।” (২ তীমথিয় ৩:১-৪) বেশির ভাগ সময়ই, যে-ছেলেমেয়েরা এই ধরনের পরিবেশে বড় হয়, তারা যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে তখন একইরকম বৈশিষ্ট্য দেখিয়ে থাকে। অবশ্য, অসিদ্ধতা অথবা অনুপযুক্ত পরিবেশে বড় হওয়া, কোনোটাই ক্ষতিকর কথাবার্তার জন্য কোনো অজুহাত হতে পারে না। তবে, এই বিষয়গুলো সম্বন্ধে সচেতন থাকা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, ক্ষতিকর কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে জিহ্বাকে দমন করা কারো কারো পক্ষে কেন বিশেষভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক।

‘পরীবাদ ত্যাগ করুন’

৭. পিতর যখন খ্রিস্টানদেরকে ‘সমস্ত পরীবাদ ত্যাগ করিবার’ উপদেশ দিয়েছিলেন, তখন তিনি কী বুঝিয়েছিলেন?

কারণ যা-ই হোক না কেন, আঘাত দেয় এমন কথাবার্তা বিয়েতে ব্যবহার করা নিজের স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা ও সম্মানের অভাবকে ইঙ্গিত করতে পারে। উত্তম কারণেই পিতর খ্রিস্টানদেরকে ‘সমস্ত পরীবাদ ত্যাগ করিবার’ উপদেশ দিয়েছিলেন। (১ পিতর ২:১) যে-গ্রিক শব্দকে “পরীবাদ” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটির অর্থ হল “অপমানজনক ভাষা।” এটি ‘লোকেদেরকে কথার দ্বারা বিদ্ধ করার’ ধারণা প্রকাশ করে। এটা এক অশান্ত জিহ্বার প্রভাবগুলোকে কত ভালভাবেই না বর্ণনা করে!

৮, ৯. অপমানজনক কথাবার্তা ব্যবহারের ফল কী হতে পারে আর কেন বিবাহসাথিদের তা ব্যবহার করা এড়িয়ে চলা উচিত?

অপমানজনক কথাবার্তাকে হয়তো ততটা গুরুতর বলে মনে না-ও হতে পারে কিন্তু একজন স্বামী বা স্ত্রী যদি এই ধরনের কথাবার্তা ব্যবহার করেন, তা হলে কী ঘটে তা বিবেচনা করুন। নিজের সাথিকে বোকা, অলস অথবা স্বার্থপর বলার অর্থ প্রকাশ করে যে, তার সম্পূর্ণ চরিত্রকে একটা আখ্যা দিয়ে সারাংশ করা যেতে পারে আর তা এক মর্যাদাহানিকর আখ্যা! নিশ্চিতভাবেই এটা নিষ্ঠুর কাজ। আর অতিরঞ্জিত উক্তিগুলো সম্বন্ধেই বা কী বলা যায়, যেগুলো সাথির ত্রুটিগুলোকে বড় করে তুলে ধরে? “তুমি সবসময়ই দেরি করো” অথবা “তুমি কখনোই আমার কথা শোনো না,” এই ধরনের বিবৃতিগুলো কি আসলেই অতিরঞ্জন নয়? এগুলো নিশ্চিতভাবে এক আত্মরক্ষামূলক প্রত্যুত্তর করতে বাধ্য করবে। আর এর ফলে হয়তো প্রচণ্ড তর্কবিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে।—যাকোব ৩:৫.

অপমানজনক কথাবার্তাপূর্ণ আলাপআলোচনা একটা বিয়েতে চাপ সৃষ্টি করে আর এটাও মারাত্মক পরিণতি ঘটাতে পারে। হিতোপদেশ ২৫:২৪ পদ বলে: “বরং ছাদের কোণে বাস করা ভাল; তবু বিবাদিনী স্ত্রীর সহিত প্রশস্ত বাটীতে বাস করা ভাল নয়।” অবশ্য, বিবাদ করে এমন স্বামীর ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যেতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেকোনো সাথির কাছ থেকে আঘাত দেওয়ার মতো কথাবার্তা একটা সম্পর্ককে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেবে আর এর ফলে হয়তো একজন স্বামী বা স্ত্রী মনে করতে পারেন যে, তাকে ভালবাসা হয় না, এমনকি তিনি ভালবাসা পাওয়ারও যোগ্য নন। স্পষ্টতই, জিহ্বাকে দমন করা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, কীভাবে তা করা যেতে পারে?

‘জিহ্বাকে বল্‌গা দ্বারা বশে রাখুন’

১০. কেন আমাদের জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ?

১০ যাকোব ৩:৮ পদ বলে, “জিহ্বাকে দমন করিতে কোন মনুষ্যের সাধ্য নাই।” তা সত্ত্বেও, পশুর গতিবিধিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একজন অশ্বারোহী যেমন একটা ঘোড়াকে বল্‌গা বা লাগাম পরান, তেমনই আমাদের জিহ্বাকে বল্‌গা দ্বারা বশে রাখার জন্য যথাসাধ্য করা উচিত। “যে ব্যক্তি আপনাকে ধর্ম্মশীল বলিয়া মনে করে, আর আপন জিহ্বাকে বল্‌গা দ্বারা বশে না রাখে, কিন্তু নিজ হৃদয়কে ভুলায়, তাহার ধর্ম্ম অলীক।” (যাকোব ১:২৬; ৩:২, ৩) এই কথাগুলো দেখায় যে, আপনি যেভাবে আপনার জিহ্বাকে ব্যবহার করেন, তা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা আপনার সাথির সঙ্গে আপনার সম্পর্কের চেয়ে আরও বেশি কিছুকে প্রভাবিত করে; এটা যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।—১ পিতর ৩:৭.

১১. কীভাবে কোনো মতবিরোধকে প্রচণ্ড তর্কবিতর্কে পরিণত করা থেকে রোধ করা সম্ভবপর হতে পারে?

১১ আপনি আপনার সাথির সঙ্গে যেভাবে কথা বলেন, তা লক্ষ করা বিজ্ঞতার কাজ। যদি চাপপূর্ণ পরিস্থিতি দেখা দেয়, তা হলে চাপ কমানোর চেষ্টা করুন। ইস্‌হাক ও তার স্ত্রী রিবিকার জীবনে যে-পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল, তা বিবেচনা করুন, যা আদিপুস্তক ২৭:৪৬–২৮:৪ পদে লিপিবদ্ধ রয়েছে। “রিবিকা ইস্‌হাককে কহিলেন, এই হিত্তীয়দের কন্যাদের বিষয় আমার প্রাণে ঘৃণা হইতেছে; যদি যাকোবও ইহাদের মত কোন হিত্তীয় কন্যাকে, এতদ্দেশীয় কন্যাদের মধ্যে কোন কন্যাকে বিবাহ করে, তবে প্রাণধারণে আমার কি লাভ?” এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে, ইস্‌হাক রূঢ়ভাবে উত্তর দিয়েছিলেন। এর পরিবর্তে, তিনি তাদের ছেলে যাকোবকে এমন এক ঈশ্বরভয়শীল স্ত্রী খোঁজার জন্য পাঠিয়েছিলেন, যে-স্ত্রী হয়তো রিবিকার দুর্দশার উৎস হয়ে উঠবে না। ধরুন, একজন স্বামী ও তার স্ত্রীর মধ্যে কোনো মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। দক্ষতার সঙ্গে “তুমি” শব্দের জায়গায় “আমি” শব্দ ব্যবহার করা, ছোটখাটো মতবিরোধকে ধীরে ধীরে প্রচণ্ড তর্কবিতর্কে পরিণত করা থেকে রোধ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, “তুমি কখনোই আমার সঙ্গে সময় কাটাও না!” এটা বলার পরিবর্তে এই কথা বলুন না কেন, “আমি চিন্তা করছিলাম, আমরা যদি একসঙ্গে সময় কাটাতে পারতাম”? কেবল ব্যক্তির ওপর নয় বরং সমস্যার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন। কে ঠিক আর কে ভুল, তা যাচাই করার প্রবণতাকে প্রতিরোধ করুন। “যে যে বিষয় শান্তিজনক, ও যে যে বিষয়ের দ্বারা পরস্পরকে গাঁথিয়া তুলিতে পারি, আমরা সেই সকলের অনুধাবন করি,” রোমীয় ১৪:১৯ পদ বলে।

“কটুকাটব্য, রোষ, ক্রোধ” ত্যাগ করুন

১২. জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে কোন বিষয়ের জন্য আমাদের প্রার্থনা করা উচিত এবং কেন?

১২ জিহ্বাকে দমন করার সঙ্গে আমরা যা বলি সেই ব্যাপারে লক্ষ রাখার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। বস্তুতপক্ষে, আমাদের কথাবার্তা মুখ থেকে নয় বরং হৃদয় থেকে আসে। যিশু বলেছিলেন: “ভাল মানুষ আপন হৃদয়ের ভাল ভাণ্ডার হইতে ভালই বাহির করে; এবং মন্দ মানুষ মন্দ ভাণ্ডার হইতে মন্দই বাহির করে; যেহেতুক হৃদয়ের উপচয় হইতে তাহার মুখ কথা কহে।” (লূক ৬:৪৫) তাই, আপনার জিহ্বাকে দমন করার জন্য আপনাকে হয়তো দায়ূদের মতো প্রার্থনা করতে হবে: “হে ঈশ্বর, আমাতে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ সৃষ্টি কর, আমার অন্তরে সুস্থির আত্মাকে নূতন করিয়া দেও।”—গীতসংহিতা ৫১:১০.

১৩. কটুকাটব্য, রোষ ও ক্রোধ কীভাবে নিন্দনীয় কথাবার্তার দিকে পরিচালিত করতে পারে?

১৩ পৌল ইফিষীয়দের কেবল আঘাত দেয় এমন কথাবার্তাকেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে এর পিছনে যে-অনুভূতিগুলো রয়েছে, সেগুলোকেও এড়িয়ে চলার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “সর্ব্বপ্রকার কটুকাটব্য, রোষ, ক্রোধ, কলহ, নিন্দা এবং সর্ব্বপ্রকার হিংসেচ্ছা তোমাদের হইতে দূরীকৃত হউক।” (ইফিষীয় ৪:৩১) লক্ষ করুন যে, “কলহ, নিন্দা” বা নিন্দনীয় কথাবার্তা সম্বন্ধে উল্লেখ করার আগে পৌল ‘কটুকাটব্য, রোষ, ক্রোধের’ বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন। ক্রোধই ভিতরে ভিতরে উত্তেজনার সৃষ্টি করে, যা আঘাত দেয় এমন কথাবার্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটার হুমকি দিয়ে থাকে। তাই, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি আমার হৃদয়ে তিক্ততা ও ক্রোধ পুষে রাখি? আমি কি “ক্রোধী ব্যক্তি”?’ (হিতোপদেশ ২৯:২২) আপনার বেলায় যদি তা সত্যি হয়ে থাকে, তা হলে এই প্রবণতাগুলো কাটিয়ে উঠতে এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ দেখিয়ে চলতে সাহায্যের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন, যাতে আপনার রোষ বিস্ফোরিত হওয়াকে আপনি এড়াতে পারেন। গীতসংহিতা ৪:৪ (বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) পদ বলে: “তোমরা উত্তেজিত হয়ে পাপ কোরো না। বিছানায় শুয়ে তোমাদের অন্তর খুঁজে দেখ আর চুপ করে থেকো।” যদি মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার ভয় থাকে এবং এই আশঙ্কা থাকে যে, আপনি আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবেন, তা হলে হিতোপদেশ ১৭:১৪ পদের উপদেশ অনুসরণ করুন: “উচ্চণ্ড হইবার পূর্ব্বে বিবাদ ত্যাগ কর।” বিপদ কেটে না যাওয়া পর্যন্ত ক্ষণিকের জন্য সেই পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকুন।

১৪. কীভাবে বিরক্তি একটা বিয়েতে প্রভাব ফেলতে পারে?

১৪ ক্রোধ ও রোষের সঙ্গে মোকাবিলা করা সহজ নয়, বিশেষ করে যখন তা পৌল যেটাকে “কটুকাটব্য” বলেছেন, সেখান থেকে উৎপন্ন হয়। পৌল যে-গ্রিক শব্দটি ব্যবহার করেছেন, সেটিকে “মীমাংসা করাকে প্রত্যাখ্যান করে এমন ক্ষুব্ধ মনোভাব” এবং ‘ভুলগুলো ধরে রাখে এমন আক্রোশের’ বৈশিষ্ট্য হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। মাঝে মাঝে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিরূপ মনোভাব ঘন কুয়াশার মতো হয়ে থাকে আর সেই অবস্থা হয়তো দীর্ঘসময় ধরে বিদ্যমান থাকে। যখন কোনো কষ্টকে পুরোপুরিভাবে সমাধান করা হয় না, তখন চরম অবজ্ঞা দেখা দিতে পারে। কিন্তু, অতীতের ভুলগুলোর জন্য বিরক্তি পুষে রাখা অর্থহীন। যা ঘটে গিয়েছে, সেটাকে আর আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। যে-ভুল ক্ষমা করা হয়েছে, তা ভুলে যাওয়া উচিত। প্রেম “অপকার গণনা করে না।”—১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫.

১৫. যারা রূঢ় কথাবার্তা বলতে অভ্যস্ত, তাদেরকে কোন বিষয়টা তাদের কথাবার্তার ধরন পালটাতে সাহায্য করবে?

১৫ আপনি যে-পরিবারে মানুষ হয়েছেন, সেখানে যদি রূঢ় কথাবার্তা সাধারণ বিষয় হয়ে থাকে আর তা ব্যবহার করা যদি আপনার স্বভাব হয়ে ওঠে, তা হলে? এই ক্ষেত্রে আপনি পরিবর্তন করতে পারেন। ইতিমধ্যেই আপনি জীবনের বেশ কয়েকটা ক্ষেত্রে সীমা আরোপ করেছেন, যেখানে আপনি কোনো নির্দিষ্ট উপায়ে আচরণ করাকে কোনোভাবেই অনুমোদন করবেন না। আপনার কথাবার্তার ক্ষেত্রে আপনি কোথায় সীমা আরোপ করা বেছে নেবেন? আপনার কথাবার্তা নিন্দনীয় হওয়ার আগেই কি আপনি তা বন্ধ করবেন? আপনি ইফিষীয় ৪:২৯ পদে বর্ণিত সীমা আরোপ করতে চাইবেন: “তোমাদের মুখ হইতে কোন প্রকার কদালাপ বাহির না হউক।” তা করার জন্য ‘পুরাতন মনুষ্যকে তাহার ক্রিয়াশুদ্ধ বস্ত্রবৎ ত্যাগ করুন, এবং সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান করুন, যে আপন সৃষ্টিকর্ত্তার প্রতিমূর্ত্তি অনুসারে তত্ত্বজ্ঞানের নিমিত্ত নূতনীকৃত হইতেছে।’—কলসীয় ৩:৯, ১০.

‘মন্ত্রণা’—আবশ্যক

১৬. কেন কথা বলা বন্ধ করা একটা বিয়ের জন্য ক্ষতিকর?

১৬ স্বামী ও স্ত্রী যখন কথা বলা বন্ধ করে দেয়, তখন কোনোকিছুই সম্পন্ন হয় না—আর এর ফলে ক্ষতি হতে পারে। এটা যে সবসময় নিজের সাথিকে শাস্তি দেওয়ার জন্য করা হয়, তা নয় কারণ এটা হতাশা ও নিরুৎসাহিতা থেকে আসতে পারে। তা সত্ত্বেও, পরস্পরের সঙ্গে কথা বলতে না চাওয়া কেবল চাপকে বাড়িয়ে তোলে আর তা সেই সমস্যার কোনো সমাধানই নিয়ে আসে না। একজন স্ত্রী এভাবে বলেছিলেন, “আবার যখন আমরা কথা বলতে শুরু করি, তখন আমরা আর কখনো সেই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি না।”

১৭. যে-খ্রিস্টানরা বৈবাহিক চাপ ভোগ করে, তাদের কী করা উচিত?

১৭ বৈবাহিক চাপ চলতে থাকলে এর কোনো সহজ সমাধান নেই। হিতোপদেশ ১৫:২২ পদ বলে: “মন্ত্রণার অভাবে সঙ্কল্প সকল ব্যর্থ হয়; কিন্তু মন্ত্রিরাহুল্যে সে সকল সুস্থির হয়।” আপনাকে আপনার স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে বসে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। অবশ্যই, খোলা মন ও হৃদয় নিয়ে আপনার সাথির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তা করা যদি অসম্ভব বলে মনে হয়, তা হলে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে প্রাচীনদের যে-ব্যবস্থা রয়েছে, তার সদ্ব্যবহার করুন না কেন? তাদের শাস্ত্র সম্বন্ধে জ্ঞান রয়েছে এবং তারা বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ। এই ধরনের ব্যক্তিরা “বাত্যা হইতে আচ্ছাদন, ও ঝটিকা হইতে অন্তরাল।”—যিশাইয় ৩২:২.

আপনি লড়াইয়ে জয়ী হতে পারেন

১৮. রোমীয় ৭:১৮-২৩ পদে কোন লড়াইয়ের কথা বর্ণনা করা হয়েছে?

১৮ আমাদের জিহ্বাকে বল্‌গা দ্বারা বশে রাখার জন্য লড়াই করতে হয়। আর আমাদের কাজকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। প্রেরিত পৌল যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেই সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “আমি জানি যে আমাতে, অর্থাৎ আমার মাংসে, উত্তম কিছুই বাস করে না; আমার ইচ্ছা উপস্থিত বটে, কিন্তু উত্তম ক্রিয়া সাধন উপস্থিত নয়। কেননা আমি যাহা ইচ্ছা করি, সেই উত্তম ক্রিয়া করি না; কিন্তু মন্দ, যাহা ইচ্ছা করি না, কাজে তাহাই করি। পরন্তু যাহা আমি ইচ্ছা করি না, তাহা যদি করি, তবে তাহা আর আমি সম্পন্ন করি না, কিন্তু আমাতে বাসকারী পাপ তাহা করে।” “পাপের যে ব্যবস্থা [আমাদের] অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আছে,” সেটার কারণে আমাদের মধ্যে জিহ্বা ও আমাদের দেহের অন্যান্য অংশের অপব্যবহার করার প্রবণতা রয়েছে। (রোমীয় ৭:১৮-২৩) কিন্তু, লড়াই চালিয়ে যেতে হবে—আর ঈশ্বরের সাহায্যে আমরা জয়ী হতে পারি।

১৯, ২০. কীভাবে যিশুর উদাহরণ স্বামী ও স্ত্রীকে তাদের জিহ্বাকে বল্‌গা দ্বারা বশে রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

১৯ যে-সম্পর্ককে প্রেম ও সম্মানের দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করা করা হয়, সেখানে অবিবেচনাপূর্ণ ও রূঢ় কথাবার্তার কোনো স্থান নেই। এই ক্ষেত্রে যিশু খ্রিস্ট যে-উদাহরণ স্থাপন করেছেন, তা চিন্তা করুন। যিশু কখনো তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে অপমানজনক কথাবার্তা ব্যবহার করেননি। এমনকি পৃথিবীতে তাঁর জীবনের শেষরাতে প্রেরিতরা যখন তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, সেটা নিয়ে তর্ক করছিল, তখনও ঈশ্বরের পুত্র তাদেরকে বকাঝকা করেননি। (লূক ২২:২৪-২৭) “স্বামীরা,” বাইবেল উপদেশ দেয়, “তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন।”—ইফিষীয় ৫:২৫.

২০ কিন্তু, একজন স্ত্রী সম্বন্ধে কী বলা যায়? তার উচিত “যেন সে স্বামীকে সম্মান করে।” (ইফিষীয় ৫:৩৩) যে-স্ত্রী তার স্বামীকে সম্মান করেন, তিনি কি তার সঙ্গে কলহ করবেন ও নিন্দনীয় কথাবার্তা ব্যবহার করবেন? “আমার ইচ্ছা এই, যেন তোমরা জান যে, প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট,” পৌল লিখেছিলেন “এবং স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ, আর খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর।” (১ করিন্থীয় ১১:৩) স্ত্রীদেরকে তাদের মস্তকের বশীভূত থাকতে হবে, ঠিক যেমন খ্রিস্ট তাঁর মস্তকের বশীভূত। (কলসীয় ৩:১৮) যদিও কোনো মানুষই নিখুঁতভাবে যিশুকে অনুকরণ করতে পারে না কিন্তু ‘তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন করিবার’ জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা স্বামী ও স্ত্রীকে জিহ্বার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতে সাহায্য করবে।—১ পিতর ২:২১.

আপনি কী শিখেছেন?

• কীভাবে এক অশান্ত জিহ্বা একটা বিয়েকে নষ্ট করে দিতে পারে?

• কেন জিহ্বাকে বল্‌গা দ্বারা বশে রাখা কঠিন?

• কী আমাদের কথাবার্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে?

• বৈবাহিক চাপ ভোগ করলে আপনার কী করা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রাচীনরা বাইবেলভিত্তিক সাহায্য জুগিয়ে থাকে