সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বর যা যোগ করে দিয়েছেন, তা বিয়োগ করবেন না

ঈশ্বর যা যোগ করে দিয়েছেন, তা বিয়োগ করবেন না

ঈশ্বর যা যোগ করে দিয়েছেন, তা বিয়োগ করবেন না

“তাহারা আর দুই নয়, কিন্তু একাঙ্গ। অতএব ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।”—মথি ১৯:৬.

১, ২. কেন এটা শাস্ত্রীয় ও সেইসঙ্গে বাস্তবসম্মত যে, বিবাহিত দম্পতিরা মাঝে মাঝে সমস্যা ভোগ করবেই?

 ক ল্পনা করুন যে, মোটরগাড়িতে করে আপনি এক দীর্ঘযাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন। পথিমধ্যে আপনি কি বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হবেন? এর বিপরীতটা চিন্তা করাই হবে বোকামির কাজ! উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো চরম আবহাওয়ার মুখোমুখি হতে পারেন, যার ফলে আপনার ধীরে চালানোর ও সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কোনো একটা সময় আপনি হয়তো এমন যান্ত্রিক গোলযোগের সম্মুখীন হতে পারেন, যা সমাধান করা আপনার সাধ্যের বাইরে আর এর ফলে আপনাকে রাস্তার পাশে থেমে সাহায্য চাইতে হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতির কারণে আপনার কি এই উপসংহারে আসা উচিত যে, যাত্রা শুরু করাটাই ভুল ছিল এবং আপনার মোটরগাড়ি পরিত্যাগ করা উচিত? না। দূরপাল্লার ভ্রমণ করার সময় আপনি জানেন যে, সমস্যা আসবেই এবং সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য বিজ্ঞতার সঙ্গে বিভিন্ন উপায় খুঁজে থাকেন।

বিয়ের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। সমস্যা আসবেই আর তাই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কথা বিবেচনা করছেন এমন এক দম্পতির পক্ষে পরম সুখের এক জীবন আশা করা হবে বোকামি। ১ করিন্থীয় ৭:২৮ পদে বাইবেল অকপটভাবে বলে যে, স্বামী ও স্ত্রীদের “দৈহিক ক্লেশ” ঘটবে। কেন? সহজভাবে বলতে গেলে এর কারণ হল, স্বামী ও স্ত্রীরা অসিদ্ধ আর আমরা ‘শেষ কালের বিষম সময়ে’ বাস করছি। (২ তীমথিয় ৩:১; রোমীয় ৩:২৩) তাই এমনকি এক সমমনা, আধ্যাত্মিকমনা দম্পতিও মাঝে মাঝে সমস্যার সম্মুখীন হবে।

৩. (ক) জগতের অনেকে বিয়েকে কোন দৃষ্টিতে দেখে থাকে? (খ) কেন খ্রিস্টানরা তাদের বিয়েকে টিকিয়ে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে?

আধুনিক জগতে কিছু দম্পতি যখন সমস্যার মুখোমুখি হয়, তখন তাদের প্রথম প্রতিক্রিয়া হল বিয়েতে ইতি টানা। অনেক দেশে, বিবাহবিচ্ছেদের হার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। কিন্তু, সত্য খ্রিস্টানরা তাড়াহুড়ো করে বিবাহবিচ্ছেদ করার পরিবর্তে সমস্যাগুলোর সমাধান করে থাকে। কেন? কারণ তারা বিয়েকে যিহোবার কাছ থেকে এক পবিত্র উপহার হিসেবে দেখে থাকে। বিবাহিত দম্পতিদের বিষয়ে যিশু বলেছিলেন: “ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।” (মথি ১৯:৬) এটা ঠিক যে, সেই মান অনুযায়ী জীবনযাপন করা সবসময় সহজ নয়। উদাহরণস্বরূপ, আত্মীয়স্বজন এবং অন্যান্যরা—ও সেইসঙ্গে বিবাহ বিষয়ক কিছু উপদেষ্টা—যারা বাইবেলের নীতিগুলোকে মেনে চলে না, তারা অশাস্ত্রীয় ভিত্তির ওপর নির্ভর করে দম্পতিদের পৃথক থাকার বা বিবাহবিচ্ছেদ করার জন্য উৎসাহিত করে। * কিন্তু খ্রিস্টানরা জানে যে, তাড়াহুড়ো করে বিবাহবিচ্ছেদ করার চেয়ে একটা বৈবাহিক সম্পর্ককে উন্নত করা ও টিকিয়ে রাখা আরও উত্তম। বস্তুতপক্ষে, একেবারে শুরুতেই আমাদের যিহোবার পথানুযায়ী—অন্যদের পরামর্শ অনুযায়ী নয়—বিষয়গুলো সমাধান করার সংকল্প নেওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ।—হিতোপদেশ ১৪:১২.

কঠিন সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা

৪, ৫. (ক) বিয়েতে অবশ্যই কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর সম্মুখীন হতে হবে? (খ) কেন ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত নীতিগুলো সত্যিই কার্যকারী, এমনকি সেই সময়েও যখন কোনো বিয়েতে সমস্যা দেখা দেয়?

প্রকৃত বিষয়টা হল যে, প্রতিটা বিয়েতেই মাঝেমধ্যে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল ছোটোখাটো মতভেদগুলো মীমাংসা করা। তবে, কিছু বিয়েতে আরও গুরুতর সমস্যা থাকতে পারে, যেগুলো সম্পর্কের ভিত্তিকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। মাঝে মাঝে, আপনাকে হয়তো একজন অভিজ্ঞ বিবাহিত খ্রিস্টান প্রাচীনের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে হবে। কিন্তু, এই পরিস্থিতিগুলোর অর্থ এই নয় যে, আপনার বিয়ে ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে। এগুলো কেবল সমাধান খোঁজার সময় বাইবেলের নীতিগুলোর সঙ্গে লেগে থাকার গুরুত্ব সম্বন্ধে তুলে ধরে।

মানবজাতির সৃষ্টিকর্তা ও বৈবাহিক ব্যবস্থার উদ্যোক্তা হিসেবে যিহোবা অন্য যেকারো চেয়ে এই বিষয়ে ভাল জানেন যে, সফল বৈবাহিক সম্পর্ক রাখার জন্য আমাদের কীসের প্রয়োজন। প্রশ্ন হল, আমরা কি তাঁর বাক্যে প্রাপ্ত পরামর্শে মনোযোগ দেব ও তা মেনে চলব? আমরা যদি তা করি, তা হলে নিশ্চিতভাবেই আমরা উপকার লাভ করব। যিহোবা তাঁর প্রাচীন লোকেদের বলেছিলেন: “আহা! তুমি কেন আমার আজ্ঞাতে অবধান কর নাই? করিলে তোমার শান্তি নদীর ন্যায়, তোমার ধার্ম্মিকতা সমুদ্র-তরঙ্গের ন্যায় হইত।” (যিশাইয় ৪৮:১৮) বাইবেলে বর্ণিত নির্দেশাবলির প্রতি লেগে থাকা একটা বিয়েকে সফল করতে পারে। আসুন প্রথমে আমরা সেই পরামর্শ বিবেচনা করি, যা বাইবেল স্বামীদের দিয়েছে।

‘তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে প্রেম কর’

৬. স্বামীদের জন্য শাস্ত্রীয় পরামর্শ কী?

ইফিষীয়দের প্রতি লেখা প্রেরিত পৌলের চিঠিতে স্বামীদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। পৌল লিখেছিলেন: “স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন; এইরূপে স্বামীরাও আপন আপন স্ত্রীকে আপন আপন দেহ বলিয়া প্রেম করিতে বাধ্য। আপন স্ত্রীকে যে প্রেম করে, সে আপনাকেই প্রেম করে। কেহ ত কখনও নিজ মাংসের প্রতি দ্বেষ করে নাই, বরং সকলে তাহার ভরণ পোষণ ও লালন পালন করে; যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর প্রতি করিতেছেন; তথাপি তোমরাও প্রত্যেকে আপন আপন স্ত্রীকে তদ্রূপ আপনার মত প্রেম কর।”—ইফিষীয় ৫:২৫, ২৮, ২৯, ৩৩.

৭. (ক) কোনো খ্রিস্টীয় বিয়ের ভিত্তির একটা প্রধান অংশ কী হওয়া উচিত? (খ) কীভাবে স্বামীরা সবসময় তাদের স্ত্রীদের প্রেম করে?

পৌল সম্ভাব্য প্রতিটা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেননি, যেগুলো হয়তো একজন স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে দেখা দিতে পারে। এর পরিবর্তে, প্রত্যেক খ্রিস্টীয় বিয়ের ভিত্তির একটা প্রধান অংশ কী হওয়া উচিত, তা শনাক্ত করার মাধ্যমে তিনি বৈবাহিক সমস্যার মূল সমাধান সম্বন্ধে তুলে ধরেন আর তা হল প্রেম। বস্তুতপক্ষে, ওপরে উল্লেখিত শাস্ত্রপদগুলোতে মোট ছয়বার প্রেম সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া এও লক্ষ করুন যে, পৌল যখন স্বামীদের বলেন ‘তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে প্রেম কর,’ তখন মূল ভাষায় এর অর্থ হল তাদের তা সবসময় করে চলা উচিত। কোনো সন্দেহ নেই, পৌল উপলব্ধি করেছিলেন যে, প্রেমে থাকার চেয়ে প্রেমে পড়া সম্ভবত আরও সহজ। এটা বিশেষভাবে এই “শেষ কালে” সত্য, যখন অনেকে “আত্মপ্রিয়” ও “ক্ষমাহীন [‘ঝগড়া করে আপোস করে না,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন]।” (২ তীমথিয় ৩:১-৩) এই ধরনের নেতিবাচক গুণাবলি আজকে অনেক বিয়েকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দিচ্ছে কিন্তু একজন প্রেমময় স্বামী জগতের স্বার্থপর বৈশিষ্ট্যগুলোকে তার চিন্তাভাবনা ও কাজের ওপর প্রভাব ফেলতে দেবেন না।—রোমীয় ১২:২.

কীভাবে আপনি আপনার স্ত্রীর চাহিদাগুলোর যত্ন নিতে পারেন?

৮, ৯. কোন কোন উপায়ে একজন খ্রিস্টান স্বামী তার স্ত্রীর চাহিদাগুলোর যত্ন নেন?

আপনি যদি একজন খ্রিস্টান স্বামী হয়ে থাকেন, তা হলে কীভাবে আপনি স্বার্থপর প্রবণতাগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারেন এবং আপনার স্ত্রীর প্রতি প্রকৃত প্রেম দেখাতে পারেন? আগে উদ্ধৃত ইফিষীয়দের প্রতি লেখা তার কথাগুলোতে পৌল দুটো বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন, যেগুলো আপনাকে করতে হবে—আপনার স্ত্রীর চাহিদাগুলোর যত্ন নিন এবং তার লালনপালন করুন, ঠিক যেমন আপনি নিজ দেহের প্রতি করে থাকেন। কীভাবে আপনি আপনার সঙ্গীর চাহিদাগুলোর যত্ন নিতে পারেন? একটা উপায় হল বস্তুগতভাবে—আপনার স্ত্রীর দৈহিক চাহিদাগুলোর যত্ন নেওয়া। পৌল তীমথিয়কে লিখেছিলেন: “কিন্তু কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের বিশেষতঃ নিজ পরিজনগণের জন্য চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে।”—১ তীমথিয় ৫:৮.

কিন্তু কেবল খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান জোগানোর চেয়ে আরও বেশি কিছু অন্তর্ভুক্ত। কেন? কারণ একজন স্বামী হয়তো তার স্ত্রীর বস্তুগত চাহিদাগুলো জোগানোর ব্যাপারে অনেক উত্তম হতে পারেন অথচ স্ত্রীর আবেগগত ও আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হন। স্ত্রীর জন্য পরের বিষয়গুলো জোগানো আরও অপরিহার্য। এটা ঠিক যে, অনেক খ্রিস্টান পুরুষ মণ্ডলীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন বিষয়ের যত্ন নেওয়ার জন্য অনেক ব্যস্ত থাকে। কিন্তু, মণ্ডলীর গুরু দায়িত্বগুলো থাকার অর্থ এই নয় যে, একজন স্বামী পরিবারের মস্তক হিসেবে তার ঈশ্বরদত্ত বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করার বিষয়টাকে অবহেলা করবেন। (১ তীমথিয় ৩:৫, ১২) এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে কয়েক বছর আগে এই পত্রিকা পরবর্তী উক্তিটা করেছিল: “বাইবেলের চাহিদাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে বলা যেতে পারে যে, ‘পালকীয় কাজ শুরু হয় ঘরে।’ একজন প্রাচীন যদি তার পরিবারকে অবহেলা করেন, তা হলে তিনি তার নিয়োগকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারেন।” * স্পষ্টতই, আপনার স্ত্রীর চাহিদাগুলোর যত্ন নেওয়া অপরিহার্য—দৈহিক, আবেগগত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিকভাবে।

আপনার স্ত্রীর লালনপালন করা বলতে কী বোঝায়?

১০. কীভাবে একজন স্বামী তার স্ত্রীর লালনপালন করতে পারেন?

১০ আপনি যদি আপনার স্ত্রীর লালনপালন করেন, তা হলে আপনি তার উত্তম যত্ন নেবেন কারণ আপনি তাকে ভালবাসেন। বেশ কয়েকটা উপায়ে আপনি তা করতে পারেন। প্রথমত, আপনার সঙ্গীর সঙ্গে যথেষ্ট সময় ব্যয় করুন। এই ক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার স্ত্রীকে অবহেলা করেন, তা হলে আপনার প্রতি তার প্রেম শীতল হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া এও বিবেচনা করুন যে, যে-পরিমাণ সময় ও মনোযোগ তার প্রয়োজন বলে আপনি মনে করছেন, সেটাকে তিনি হয়তো যথেষ্ট বলে মনে করছেন না। এটা কেবল মুখে বলার মতো কোনো বিষয় নয় যে, আপনি আপনার সঙ্গীর লালনপালন করেন। আপনার স্ত্রীকেও অবশ্যই অনুভব করতে হবে যে, তার লালনপালন করা হচ্ছে। পৌল লিখেছিলেন: “কেহই স্বার্থ চেষ্টা না করুক, বরং প্রত্যেক জন পরের মঙ্গল চেষ্টা করুক।” (১ করিন্থীয় ১০:২৪) একজন প্রেমময় স্বামী হিসেবে আপনি নিশ্চিত হতে চাইবেন যে, আপনি আপনার স্ত্রীর প্রকৃত চাহিদাগুলো বুঝতে পারেন।—ফিলিপীয় ২:৪.

১১. কীভাবে একজন স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেন, সেটার দ্বারা ঈশ্বর ও মণ্ডলীর সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে?

১১ আপনি যে আপনার স্ত্রীর লালনপালন করেন, তা দেখানোর আরেকটা উপায় হল কথায় ও কাজে, উভয় ক্ষেত্রেই আপনার স্ত্রীর সঙ্গে কোমলভাবে আচরণ করা। (হিতোপদেশ ১২:১৮) কলসীয়দের পৌল লিখেছিলেন: “স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে প্রেম কর, তাহাদের প্রতি কটুব্যবহার করিও না।” (কলসীয় ৩:১৯) একটা তথ্যগ্রন্থ অনুসারে, পৌলের বিবৃতির দ্বিতীয় অংশকে এভাবে অনুবাদ করা যেতে পারে “তার সঙ্গে দাসীর মতো ব্যবহার কোরো না” অথবা “তাকে দাসী করে তুলো না।” যে-স্বামী উৎপীড়ক—হোক তা একান্তে অথবা জনসমক্ষে—তিনি নিশ্চিতভাবেই দেখাচ্ছেন না যে, তিনি তার স্ত্রীর লালনপালন করেন। তার স্ত্রীর সঙ্গে কর্কশভাবে আচরণ করে তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে তার সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেন। প্রেরিত পিতর স্বামীদের লিখেছিলেন: “স্ত্রীলোক অপেক্ষাকৃত দুর্ব্বল পাত্র বলিয়া [তোমাদের স্ত্রীদের] সহিত জ্ঞানপূর্ব্বক বাস কর, তাহাদিগকে আপনাদের সহিত জীবনের অনুগ্রহের সহাধিকারিণী জানিয়া সমাদর কর; যেন তোমাদের প্রার্থনা রুদ্ধ না হয়।” *১ পিতর ৩:৭.

১২. খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে যিশু যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তা থেকে একজন খ্রিস্টান স্বামী কী শিখতে পারেন?

১২ আপনার স্ত্রীর ভালবাসাকে কখনোই হালকাভাবে নেবেন না। আপনি যে তাকে সবসময় ভালবাসেন, সেই বিষয়ে তাকে আশ্বাস দিন। খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে যিশু যেভাবে আচরণ করেছিলেন, সেটার দ্বারা তিনি খ্রিস্টান স্বামীদের জন্য এক উদাহরণ স্থাপন করেন। তিনি কোমল, সদয় ও ক্ষমাবান ছিলেন—এমনকি তখনও, যখন তাঁর অনুসারীরা বার বার নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো প্রদর্শন করেছিল। তাই, যিশু অন্যদের বলতে পেরেছিলেন: “আমার নিকটে আইস, . . . কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে।” (মথি ১১:২৮, ২৯) যিশুকে অনুকরণ করে একজন খ্রিস্টান স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে সেইভাবে আচরণ করেন, যেভাবে যিশু মণ্ডলীর সঙ্গে করেছিলেন। যে-পুরুষ সত্যিই তার স্ত্রীর লালনপালন করে থাকেন, তিনি তা কথা ও কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করেন আর এভাবে তিনি স্ত্রীর জন্য প্রকৃত বিশ্রাম বা সতেজতার উৎস হবেন।

যে-স্ত্রীরা বাইবেলের নীতি অনুযায়ী জীবনযাপন করে

১৩. বাইবেলে কোন নীতিগুলো রয়েছে, যেগুলো স্ত্রীদের সাহায্য করতে পারে?

১৩ বাইবেলে সেইসমস্ত নীতিও রয়েছে, যেগুলো স্ত্রীদের সাহায্য করতে পারে। ইফিষীয় ৫:২২-২৪, ৩৩ পদ বলে: “নারীগণ, তোমরা যেমন প্রভুর, তেমনি নিজ নিজ স্বামীর বশীভূতা হও। কেননা স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক; তিনি আবার দেহের ত্রাণকর্ত্তা; কিন্তু মণ্ডলী যেমন খ্রীষ্টের বশীভূত, তেমনি নারীগণ সর্ব্ববিষয়ে আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হউক। . . . স্ত্রীর উচিত যেন সে স্বামীকে ভয় [“সম্মান,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] করে।”

১৪. বশ্যতা সম্বন্ধীয় শাস্ত্রীয় নীতিটা কেন নারীদের ছোট করে না?

১৪ বশ্যতা ও সম্মানের ওপর পৌল যে জোর দিয়েছিলেন, তা লক্ষ করুন। একজন স্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যেন তিনি তার স্বামীর বশীভূত থাকেন। এটা ঈশ্বরের ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। স্বর্গ ও পৃথিবীর সমস্ত জীবিত প্রাণী কারো না কারো বশীভূত। এমনকি যিশুও যিহোবা ঈশ্বরের বশীভূত। (১ করিন্থীয় ১১:৩) অবশ্য, যে-স্বামী সঠিক উপায়ে তার মস্তকপদের ব্যবহার করে থাকেন, তিনি তার স্ত্রীর জন্য বশীভূত থাকাকে আরও সহজ করে দেন।

১৫. স্ত্রীদের জন্য কিছু পরামর্শ কী, যা বাইবেলে পাওয়া যায়?

১৫ পৌল এও বলেছিলেন যে, একজন স্ত্রীর “উচিত যেন সে স্বামীকে সম্মান করে।” একজন খ্রিস্টান স্ত্রীর তার স্বামীর কর্তৃত্ব নিয়ে উদ্ধতভাবে প্রশ্ন না তুলে অথবা স্বাধীনচেতা পথ অবলম্বন না করে ‘মৃদু ও প্রশান্ত আত্মা’ প্রদর্শন করা উচিত। (১ পিতর ৩:৪) ঈশ্বরভয়শীল একজন স্ত্রী পরিবারের মঙ্গলের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন এবং তার মস্তকের জন্য সম্মান নিয়ে আসেন। (তীত ২:৪, ৫) তিনি তার স্বামী সম্বন্ধে ভাল কথা বলার চেষ্টা করবেন আর এভাবে এমন কিছুই করবেন না, যাতে অন্যেরা স্বামীকে অসম্মান করে। এ ছাড়া, স্বামীর সিদ্ধান্তকে সফল করার জন্যও তিনি কঠোর পরিশ্রম করবেন।—হিতোপদেশ ১৪:১.

১৬. সারা ও রিবিকার উদাহরণ থেকে খ্রিস্টান স্ত্রীরা কী শিখতে পারে?

১৬ মৃদু ও প্রশান্ত আত্মা থাকার অর্থ এই নয় যে, একজন খ্রিস্টান স্ত্রীর কোনো মতামত থাকবে না অথবা তার চিন্তাভাবনা গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রাচীনকালের ঈশ্বরভয়শীল নারী, যেমন সারা ও রিবিকা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের চিন্তা প্রকাশ করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং বাইবেলের বিবরণ দেখায় যে, যিহোবা তাদের কাজগুলো অনুমোদন করেছিলেন। (আদিপুস্তক ২১:৮-১২; ২৭:৪৬–২৮:৪) খ্রিস্টান স্ত্রীরাও তাদের অনুভূতি জানাতে পারে। কিন্তু, তাদের সেটা সুবিবেচনার সঙ্গে করা উচিত, অসম্মানের স্বরে নয়। এভাবে তারা সম্ভবত দেখতে পাবে যে, এই ধরনের ভাববিনিময় আরও মনোরম ও কার্যকারী হবে।

প্রতিশ্রুতির ভূমিকা

১৭, ১৮. কিছু উপায় কী, যেগুলোতে স্বামী ও স্ত্রীরা বৈবাহিক একতাকে ধ্বংস করে দেওয়ার ব্যাপারে শয়তানের প্রচেষ্টাকে প্রতিরোধ করতে পারে?

১৭ বিয়ে হল এক চিরজীবনের প্রতিশ্রুতি। তাই, স্বামী ও স্ত্রী উভয়েরই বিয়েকে সফল করার জন্য প্রকৃত আকাঙ্ক্ষা থাকা উচিত। খোলাখুলি ভাববিনিময়ের অভাবে সমস্যাগুলো আরও বেড়ে যেতে পারে এবং গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। প্রায়ই দেখা যায় যে, সমস্যা দেখা দিলে বিবাহিত সঙ্গীরা কথা বলা বন্ধ করে দেয়, যার ফলে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো সঙ্গী এমনকি সম্পর্ককে ছিন্ন করার উপায় খুঁজে থাকে, হতে পারে বিয়ের বাইরে রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। যিশু সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল।”—মথি ৫:২৮.

১৮ প্রেরিত পৌল বিবাহিত খ্রিস্টানসহ সমস্ত খ্রিস্টানকে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “ক্রুদ্ধ হইলে পাপ করিও না; সূর্য্য অস্ত না যাইতে যাইতে তোমাদের কোপাবেশ শান্ত হউক; আর দিয়াবলকে স্থান দিও না।” (ইফিষীয় ৪:২৬, ২৭) আমাদের প্রধান শত্রু শয়তান, খ্রিস্টানদের মধ্যে দেখা দিতে পারে এমন মতবিরোধগুলোর সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করে থাকে। তাকে সফল হতে দেবেন না! যখন সমস্যা দেখা দেয়, তখন বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাদি ব্যবহার করে বিভিন্ন বিষয়ে যিহোবার চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে, তা গবেষণা করুন। মতবিরোধগুলো নিয়ে শান্ত ও অকপটভাবে আলোচনা করুন। যিহোবার মানগুলো সম্বন্ধে আপনি যা জানেন এবং সেগুলো কাজে লাগানোর জন্য আপনি আসলে যতটুকু করে থাকেন, সেই দুটোর মধ্যে কোনো ফাঁক থাকলে তা পূরণ করুন। (যাকোব ১:২২-২৫) আর যখন আপনার বিয়ের বিষয়টা আসে, তখন এক দম্পতি হিসেবে সবসময় ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হোন এবং কাউকে বা কোনোকিছুকেই তা বিয়োগ করতে দেবেন না, যা ঈশ্বর যোগ করেছেন!—মীখা ৬:৮.

[পাদটীকাগুলো]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত ২০০২ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ১০ পৃষ্ঠায় “বিবাহবিচ্ছেদ ও পৃথক থাকা” নামক বাক্সটা দেখুন।

^ ১৯৯০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২২-২৩ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে বিভিন্ন বিশেষ সুযোগের জন্য যোগ্য হতে হলে একজন পুরুষ অবশ্যই “প্রহারক”—অর্থাৎ অন্যদেরকে দৈহিকভাবে আঘাত করেন অথবা তাদেরকে মৌখিকভাবে ভয় দেখান, এমন ব্যক্তি—হবেন না। তাই, ১৯৯১ সালের ১লা মে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে: ‘যদি সেই ব্যক্তি অন্য স্থানে ঐশিকভাবে ব্যবহার করেন কিন্তু ঘরে উৎপীড়ক, তা হলে তিনি যোগ্য নন।’—১ তীমথিয় ৩:২-৫, ১২.

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কেন এমনকি খ্রিস্টীয় বিয়েগুলোও বিভিন্ন সমস্যা ভোগ করতে পারে?

• কীভাবে একজন স্বামী তার স্ত্রীর চাহিদাগুলোর যত্ন নিতে পারেন এবং দেখাতে পারেন যে, তিনি তার স্ত্রীর লালনপালন করেন?

• একজন স্ত্রী যে তার স্বামীকে সম্মান করেন, তা দেখানোর জন্য তিনি কী করতে পারেন?

• কীভাবে একজন স্বামী ও একজন স্ত্রী তাদের প্রতিশ্রুতিকে শক্তিশালী করতে পারেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন স্বামীর এক উত্তম জোগানদাতা হওয়া উচিত আর তা শুধু বস্তুগতভাবেই নয় কিন্তু আধ্যাত্মিকভাবেও

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

যে-পুরুষ তার স্ত্রীর লালনপালন করেন, তিনি স্ত্রীর কাছে সতেজতার এক উৎস

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রিস্টান স্ত্রীরা সম্মানের সঙ্গে তাদের অনুভূতির কথা জানায়