সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা ন্যায়বিচার ভালবাসেন

যিহোবা ন্যায়বিচার ভালবাসেন

যিহোবা ন্যায়বিচার ভালবাসেন

“আমি সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসি।”—যিশাইয় ৬১:৮.

১, ২. (ক) “ন্যায়বিচার” ও “অন্যায়” বা অবিচার শব্দগুলোর অর্থ কী? (খ) যিহোবা ও তাঁর ন্যায়বিচার গুণটি সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?

 ন্যায়বিচারকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, ‘পক্ষপাতহীন ও ন্যায্য হওয়ার গুণ, যা কিছু নৈতিকভাবে ন্যায়নিষ্ঠ ও উত্তম, সেটার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করা।’ অন্যায় বা অবিচারের সঙ্গে অন্যায্য, পক্ষপাতী, মন্দ হওয়া এবং অযথা অন্যদের ক্ষতি করা জড়িত।

প্রায় ৩,৫০০ বছর আগে, নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম যিহোবা সম্বন্ধে মোশি লিখেছিলেন: “তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) সাতশো বছরেরও বেশি সময় পর, ঈশ্বর যিশাইয়কে এই কথাগুলো লিপিবদ্ধ করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন: “আমি সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসি।” (যিশাইয় ৬১:৮) এরপর, প্রথম শতাব্দীতে পৌল বিস্ময়ে বলেছিলেন: “ঈশ্বরে কি অন্যায় আছে? তাহা দূরে থাকুক।” (রোমীয় ৯:১৪) আর সেই একই শতাব্দীতে পিতর ঘোষণা করেছিলেন: “ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” NW] করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।” (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫) হ্যাঁ, “সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসেন।”—গীতসংহিতা ৩৭:২৮; মালাখি ৩:৬.

অবিচার সর্বত্র বিরাজমান

৩. কীভাবে পৃথিবীতে অবিচারের সূত্রপাত হয়েছিল?

ন্যায়বিচার গুণটি বর্তমানে সর্বত্র বিরাজমান নয়। সমাজের সকল স্তরে—আমাদের কর্মক্ষেত্রে, স্কুলে, কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে আমাদের আচরণে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে—এমনকি পারিবারিক বৃত্তের মধ্যেও আমরা অন্যায্য কাজগুলোর শিকার হতে পারি। অবশ্য, এই ধরনের অবিচার নতুন কিছু নয়। এগুলো মানব পরিবারে সেই সময়ে ঘটতে শুরু করেছিল, যখন আমাদের প্রথম পিতামাতা সেই বিদ্রোহী আত্মিক প্রাণীর দ্বারা প্ররোচিত হয়ে বিদ্রোহ করে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিল, যে শয়তান দিয়াবলে পরিণত হয়েছিল। নিশ্চিতভাবেই, সেই স্বাধীন ইচ্ছার অপূর্ব উপহারের অপব্যবহার করা আদম, হবা ও শয়তানের পক্ষে অন্যায্য ছিল, যা যিহোবা তাদেরকে দিয়েছিলেন। তাদের অন্যায় কাজ সমগ্র মানব পরিবারের জন্য প্রচুর দুঃখকষ্ট এবং মৃত্যু নিয়ে এসেছিল।—আদিপুস্তক ৩:১-৬; রোমীয় ৫:১২; ইব্রীয় ২:১৪.

৪. কত সময় ধরে অবিচার মানব ইতিহাসের অংশ হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে?

এদনে বিদ্রোহের সময় থেকে প্রায় ৬,০০০ বছর ধরে অবিচার মানবসমাজের অংশ হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। আর নিশ্চিতভাবেই তা আশা করা যেতে পারে কারণ শয়তান হল এই জগতের দেব। (২ করিন্থীয় ৪:৪) সে মিথ্যাবাদী ও তার পিতা, একজন অপবাদক ও যিহোবার একজন বিপক্ষ। (যোহন ৮:৪৪) সে সবসময়ই চরম অবিচারগুলো ঘটিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নোহের দিনের জলপ্লাবনের আগে আংশিকভাবে শয়তানের প্রভাবের কারণে ঈশ্বর বলেছিলেন যে, “পৃথিবীতে মনুষ্যের দুষ্টতা বড়, এবং তাহার অন্তঃকরণের চিন্তার সমস্ত কল্পনা নিরন্তর কেবল মন্দ।” (আদিপুস্তক ৬:৫) সেই পরিস্থিতি যিশুর দিনেও সর্বত্র বিরাজমান ছিল। তিনি বলেছিলেন: “দিনের কষ্ট” অর্থাৎ দিনের কঠিন সমস্যাগুলো—যেমন অবিচার—“দিনের জন্যই যথেষ্ট।” (মথি ৬:৩৪) বাইবেল একেবারে যথাযথভাবে বলে: “আমরা জানি, সমস্ত সৃষ্টি এখন পর্য্যন্ত একসঙ্গে আর্ত্তস্বর করিতেছে, ও একসঙ্গে ব্যথা খাইতেছে।”—রোমীয় ৮:২২.

৫. কেন আগের চেয়ে বরং আমাদের সময়ে আরও বেশি অবিচার দেখা যায়?

এভাবে, যে-মন্দ বিষয়গুলোর কারণে চরম অবিচারগুলো হয়ে থাকে, সেগুলো মানব ইতিহাস জুড়েই ঘটে চলছে। এখন পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও বেশি খারাপ। কেন? কারণ এই বর্তমান ভক্তিহীন বিধিব্যবস্থা অনেক দশক ধরে এর “শেষ কালে” রয়েছে আর যতই এর শেষ এগিয়ে আসছে, “বিষম সময়” ভোগ করছে। বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, ইতিহাসের এই সময়টাতে লোকেরা “আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, আত্মশ্লাঘী, অভিমানী, ধর্ম্মনিন্দক, . . . অকৃতজ্ঞ, অসাধু, স্নেহরহিত, ক্ষমাহীন, অপবাদক, অজিতেন্দ্রিয়, প্রচণ্ড, সদ্‌বিদ্বেষী, বিশ্বাসঘাতক, দুঃসাহসী, গর্ব্বান্ধ” হবে। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) এই ধরনের মন্দ বৈশিষ্ট্যগুলো সমস্ত ধরনের অবিচারের দিকে পরিচালিত করে।

৬, ৭. আধুনিক সময়ে মানব পরিবার কোন ব্যাপক অবিচারগুলোর দ্বারা জর্জরিত হয়েছে?

বিগত একশো বছরে এত ব্যাপক মাত্রায় অবিচার দেখা গিয়েছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। একটা কারণ হল, এই বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি যুদ্ধবিগ্রহ সংঘটিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু ইতিহাসবেত্তা অনুমান করে দেখেছে যে, শুধুমাত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মৃতদের মোট সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ থেকে ৬ কোটি, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল সাধারণ নাগরিক—নিরীহ পুরুষ, নারী ও শিশু। সেই যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, বিভিন্ন সংঘর্ষে আরও লক্ষ লক্ষ লোক হত হয়েছে এবং আবারও সেই সাধারণ নাগরিকরাই। শয়তান এই ধরনের অবিচার নিয়ে আসে কারণ সে ক্রোধান্বিত, সে জানে যে শীঘ্রই যিহোবা তাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেবেন। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী এভাবে বলে: “দিয়াবল তোমাদের নিকটে নামিয়া গিয়াছে; সে অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।”—প্রকাশিত বাক্য ১২:১২.

বর্তমানে, বিশ্বব্যাপী সামরিক খাতে প্রতি বছর প্রায় এক লক্ষ কোটি ডলার ব্যয় করা হয়। কোটি কোটি লোকের জীবন ধারণের অপরিহার্য বিষয়গুলো নেই, তাই সেই অর্থ যদি শান্তিপূর্ণ বিষয়গুলোর জন্য ব্যয় করা হতো, তা হলে যে-উপকারগুলো আসত, সেই সম্বন্ধে চিন্তা করুন। প্রায় একশো কোটি লোক যথেষ্ট খাবার পায় না, যেখানে কিনা অন্যদের তা প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের একটা উৎস অনুযায়ী, প্রতি বছর ক্ষুধার তাড়নায় প্রায় ৫০ লক্ষ শিশু মারা যায়। কী অবিচার! এরপর, সেই নিরীহ শিশুদের কথাও বিবেচনা করুন, যাদেরকে গর্ভপাতের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৪ থেকে ৬ কোটি গর্ভপাত করানো হয়! কী মারাত্মক অবিচার!

৮. একমাত্র কীভাবে মানবজাতির জন্য প্রকৃত ন্যায়বিচার আসতে পারে?

আজকে যে-ব্যাপক সমস্যাগুলো মানবজাতিকে জর্জরিত করছে, সেগুলোর সমাধান মানব শাসকরা খুঁজে পাচ্ছে না; অথবা মানব প্রচেষ্টাগুলোর কারণে পরিস্থিতির উন্নতিও হবে না। ঈশ্বরের বাক্য ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, আমাদের সময়ে “দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা, পরের ভ্রান্তি জন্মাইয়া ও আপনারা ভ্রান্ত হইয়া, উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর হইবে।” (২ তীমথিয় ৩:১৩) অবিচার রোজকার জীবনের এমন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে যে, মানুষ তা দূর করতে পারে না। একমাত্র ন্যায়বিচারের ঈশ্বরই তা দূর করতে পারেন। একমাত্র তিনিই শয়তান, মন্দদূতদের এবং দুষ্ট মানুষদের দূর করতে পারেন।—যিরমিয় ১০:২৩, ২৪.

যুক্তিসংগত চিন্তা

৯, ১০. কেন আসফ নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন?

অতীতে, এমনকি কিছু বাইবেল লেখকও এই ভেবে অবাক হয়ে গিয়েছিল যে, কেন ঈশ্বর এখনও মানুষের বিভিন্ন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন না এবং প্রকৃত ন্যায়বিচার ও ধার্মিকতা নিয়ে আসেন না। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেলের সময়ের একজন ব্যক্তির কথাই ধরুন। ৭৩ গীতের শীর্ষলিখনের মধ্যে আসফের নাম রয়েছে আর সেটা হয় রাজা দায়ূদের রাজত্বের সময় বিশিষ্ট লেবীয় বাদককে নতুবা সেই কুলের বাদকদের নির্দেশ করে, যার পিতৃকুলপতি ছিলেন আসফ। আসফ ও তার বংশধররা অনেক গীত রচনা করেছিলেন, যেগুলো জনসাধারণের উপাসনায় ব্যবহার করা হতো। তা সত্ত্বেও, তার জীবনের একটা সময়ে এই গীতের লেখক আধ্যাত্মিকভাবে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি দুষ্ট লোকেদের বস্তুগত সমৃদ্ধি দেখতে পেয়েছিলেন এবং লক্ষ করেছিলেন যে, তাদেরকে প্রায়ই তাদের জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট বলে মনে হয় আর তারা কোনো মন্দ পরিণতি ভোগ করে না।

১০ আমরা পড়ি: “যখন দুষ্টদের কল্যাণ দেখিয়াছিলাম, তখন গর্ব্বিতদের প্রতি ঈর্ষা করিয়াছিলাম। কেননা তাহারা মৃত্যুকালে যন্ত্রণা পায় না, বরং তাহাদের কলেবর হৃষ্টপুষ্ট। মর্ত্ত্যের ন্যায় কষ্ট তাহাদের হয় না; মনুষ্যের মত তাহারা আহত হয় না।” (গীতসংহিতা ৭৩:২-৮) কিন্তু, এক সময় সেই বাইবেল লেখক বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই ধরনের এক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ভুল ছিল। (গীতসংহিতা ৭৩:১৫, ১৬) গীতরচক তার চিন্তাভাবনা রদবদল করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তিনি পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারেননি যে, কেন দুষ্টরা অন্যায় কাজ করেও পার পেয়ে যায় বলে মনে হয়, যেখানে কিনা সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন লোকেরা প্রায়ই কষ্ট ভোগ করে থাকে।

১১. গীতরচক আসফ কী বুঝতে পেরেছিলেন?

১১ পরিশেষে, প্রাচীনকালের সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তি এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, দুষ্টদের জন্য কী সঞ্চিত রয়েছে আর তা হল, অবশেষে যিহোবা বিষয়গুলোকে সংশোধন করবেন। (গীতসংহিতা ৭৩:১৭-১৯) দায়ূদ লিখেছিলেন: “সদাপ্রভুর অপেক্ষায় থাক, তাঁহার পথে চল; তাহাতে তিনি তোমাকে দেশের অধিকার ভোগের জন্য উন্নত করিবেন; দুষ্টগণের উচ্ছেদ হইলে তুমি তাহা দেখিতে পাইবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:৯, ১১, ৩৪.

১২. (ক) দুষ্টতা ও অবিচার সম্বন্ধে যিহোবার উদ্দেশ্য কী? (খ) অবিচার সংক্রান্ত সমস্যার এই সমাধান সম্বন্ধে আপনি কেমন বোধ করেন?

১২ নিশ্চিতভাবেই, যিহোবার উদ্দেশ্য হল তাঁর নিরূপিত সময়ে এই পৃথিবী থেকে দুষ্টতা ও এর সঙ্গে যুক্ত অবিচারগুলো নির্মূল করা। এটা এমন একটা বিষয়, যা এমনকি অনুগত খ্রিস্টানদেরও নিয়মিতভাবে স্মরণ করা উচিত। যিহোবা সেই ব্যক্তিদের দূর করতে যাচ্ছেন, যারা তাঁর ইচ্ছার বিপরীত কাজ করে এবং তিনি তাদেরকে পুরস্কৃত করবেন, যারা তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করে। “তাঁহার চক্ষু নিরীক্ষণ করিতেছে, তাঁহার চক্ষুর পাতা মনুষ্য-সন্তানদের পরীক্ষা করিতেছে। সদাপ্রভু ধার্ম্মিকের পরীক্ষা করেন, কিন্তু দুষ্ট ও দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোক তাঁহার প্রাণের ঘৃণাস্পদ। তিনি দুষ্টদের উপরে পাঁশ বর্ষণ করিবেন, অগ্নি, গন্ধক ও উত্তপ্ত বায়ু . . . কেননা সদাপ্রভু ধর্ম্মময়, ধর্ম্মকর্ম্মই ভালবাসেন।”—গীতসংহিতা ১১:৪-৭.

ন্যায়বিচারে পূর্ণ এক নতুন জগৎ

১৩, ১৪. কেন নতুন জগতে সর্বত্র ধার্মিকতা ও ন্যায়বিচার বিরাজ করবে?

১৩ যিহোবা যখন শয়তানের নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকা এই অন্যায্য বিধিব্যবস্থা ধ্বংস করবেন, তখন তিনি গৌরবান্বিত এক নতুন জগৎ নিয়ে আসবেন। এটা ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, যে-রাজ্যের জন্য যিশু তাঁর অনুসারীদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন। দুষ্টতা ও অবিচারের পরিবর্তে আসবে ধার্মিকতা ও ন্যায়বিচার কারণ সেই সময় পূর্ণরূপে এই প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হবে: “তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।”—মথি ৬:১০.

১৪ বাইবেল আমাদের বলে যে, আমরা কোন ধরনের শাসন আশা করতে পারি আর তা হল সেই শাসন, যার জন্য সমস্ত সৎহৃদয়ের ব্যক্তি এখন আকাঙ্ক্ষা করে। তখন গীতসংহিতা ১৪৫:১৬ পদের কথাগুলো পূর্ণরূপে পরিপূর্ণ হবে: “তুমিই [সদাপ্রভু ঈশ্বর] আপন হস্ত মুক্ত করিয়া থাক, সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ করিয়া থাক।” অধিকন্তু, যিশাইয় ৩২:১ পদ বলে: “দেখ, এক রাজা [স্বর্গে খ্রিস্ট যিশু] ধার্ম্মিকতায় রাজত্ব করিবেন, ও শাসনকর্ত্তৃগণ [খ্রিস্টের পার্থিব প্রতিনিধিরা] ন্যায়ে শাসন করিবেন।” রাজা যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে যিশাইয় ৯:৭ পদ ভবিষ্যদ্বাণী করে: “দায়ূদের সিংহাসন ও তাঁহার রাজ্যের উপরে কর্ত্তৃত্ববৃদ্ধির ও শান্তির সীমা থাকিবে না, যেন তাহা সুস্থির ও সুদৃঢ় করা হয়, ন্যায়বিচারে ও ধার্ম্মিকতা সহকারে, এখন অবধি অনন্তকাল পর্য্যন্ত। বাহিনীগণের সদাপ্রভুর উদ্যোগ ইহা সম্পন্ন করিবে।” আপনি কি নিজেকে সেই ন্যায্য শাসনের অধীনে বাস করতে দেখছেন?

১৫. নতুন জগতে যিহোবা মানবজাতির জন্য কী করবেন?

১৫ ঈশ্বরের নতুন জগতে আমাদের উপদেশক ৪:১ পদে পাওয়া এই কথাগুলো বলার আর কোনো কারণ থাকবে না: “আমি ফিরিয়া, সূর্য্যের নীচে যে সকল উপদ্রব হয়, তাহা নিরীক্ষণ করিতে লাগিলাম। আর দেখ, উপদ্রুত লোকদের অশ্রুপাত হইতেছে, কিন্তু তাহাদের সান্ত্বনাকারী কেহ নাই; উপদ্রবী লোকদের হস্তে বল আছে, কিন্তু উপদ্রুত লোকদের সান্ত্বনাকারী কেহ নাই।” এটা ঠিক যে, সেই ধার্মিক নতুন জগৎ কতটা অপূর্ব হবে, তা আমাদের অসিদ্ধ মন দিয়ে কল্পনা করা খুবই কঠিন। মন্দতা আর থাকবে না; বরং প্রতিটা দিন ভাল ভাল বিষয় দ্বারা পূর্ণ হবে। হ্যাঁ, যিহোবা সমস্ত অন্যায় বিষয় সংশোধন করবেন আর তা এমনভাবে করবেন, যা আমাদের প্রত্যাশার ঊর্ধ্বে। এটা কতই না উপযুক্ত যে, যিহোবা ঈশ্বর প্রেরিত পিতরকে এই কথাগুলো লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন: “তাঁহার প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমরা এমন নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর অপেক্ষায় আছি, যাহার মধ্যে ধার্ম্মিকতা বসতি করে”!—২ পিতর ৩:১৩.

১৬. কীভাবে ‘নূতন আকাশমণ্ডল’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং কোন অর্থে ‘নূতন পৃথিবীকে’ আজকে প্রস্তুত করা হচ্ছে?

১৬ বস্তুতপক্ষে, সেই ‘নূতন আকাশমণ্ডল’ অর্থাৎ খ্রিস্টের অধীনে ঈশ্বরের স্বর্গীয় সরকার ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যারা ‘নূতন পৃথিবী’ অর্থাৎ সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন লোকেদের এক নতুন পার্থিব সমাজের কেন্দ্রীয় অংশ গঠন করবে, তাদেরকে এই শেষকালে একত্রিত করা হচ্ছে। তাদের সংখ্যা ইতিমধ্যেই প্রায় ৭০ লক্ষ আর তারা দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে প্রায় ২৩৫টা জায়গায় এবং প্রায় ১,০০,০০০টা মণ্ডলীতে রয়েছে। এই লক্ষ লক্ষ লোক যিহোবার ধার্মিক ও ন্যায্য পথ সম্বন্ধে শিখছে আর এর ফলে তারা বিশ্বব্যাপী এমন এক একতা উপভোগ করছে, যা খ্রিস্টীয় প্রেমের দ্বারা দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত। তাদের একতা জগতের ইতিহাসের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও স্থায়ী, যে-একতা শয়তানের অধীন লোকেরা যা কিছু উপভোগ করে থাকে, সেগুলোর ঊর্ধ্বে। এই ধরনের প্রেম ও একতা ঈশ্বরের নতুন জগতে যে-অপূর্ব সময় আসতে যাচ্ছে, সেটার পূর্বাভাস দেয়, যে-জগৎ ধার্মিকতা ও ন্যায়বিচারের দ্বারা পরিচালিত হবে।—যিশাইয় ২:২-৪; যোহন ১৩:৩৪, ৩৫; কলসীয় ৩:১৪.

শয়তানের আক্রমণ ব্যর্থ হবে

১৭. কেন যিহোবার লোকেদের ওপর শয়তানের চূড়ান্ত আক্রমণ ব্যর্থ হবে?

১৭ শয়তান ও তার অনুসারীরা শীঘ্রই যিহোবার উপাসকদের বিরুদ্ধে আসবে, যাতে তাদেরকে ধ্বংস করে দিতে পারে। (যিহিষ্কেল ৩৮:১৪-২৩) এটা সেই সময়ের অংশ হবে, যেটাকে যিশু “মহাক্লেশ” বলে অভিহিত করেছিলেন, “যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না।” (মথি ২৪:২১) শয়তানের আক্রমণ কি সফল হবে? না। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয়: “সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসেন; তিনি আপন সাধুগণকে পরিত্যাগ করেন না; তাহারা চিরকাল রক্ষিত হয়; কিন্তু দুষ্টদের বংশ উচ্ছিন্ন হইবে। ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:২৮, ২৯.

১৮. (ক) ঈশ্বরের লোকেদের ওপর শয়তানের আসন্ন আক্রমণের প্রতি তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন? (খ) ন্যায়বিচারের বিজয় সম্বন্ধে বাইবেলভিত্তিক তথ্যগুলো পুনরালোচনা করা কেন আপনার জন্য উপকারী হয়েছে?

১৮ যিহোবার দাসদের ওপর শয়তান ও তার দলের এই আক্রমণই হবে চূড়ান্ত অপমান। সখরিয়ের মাধ্যমে যিহোবা বলেছিলেন: “যে ব্যক্তি তোমাদিগকে স্পর্শ করে, সে তাঁহার চক্ষুর তারা স্পর্শ করে।” (সখরিয় ২:৮) এটা এমন যেন কেউ যিহোবার চোখের তারার মধ্যে আঙুল দিয়েছে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন এবং অপরাধীদের সম্পূর্ণরূপে শেষ করে দেবেন। যিহোবার দাসেরা হল পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে প্রেমময়, একতাবদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও আইনমান্যকারী লোক। তাই, তাদের বিরুদ্ধে নিয়ে আসা সেই আক্রমণ হবে সম্পূর্ণরূপে অসংগত এবং অন্যায্য। যিনি প্রচুররূপে “ন্যায়বিচার ভালবাসেন,” তিনি তা সহ্য করবেন না। তাদের পক্ষে যিহোবার নেওয়া পদক্ষেপ তাঁর লোকেদের শত্রুদের জন্য অনন্ত ধ্বংস নিয়ে আসবে, ন্যায়বিচারের বিজয় নিয়ে আসবে এবং যারা একমাত্র সত্য ঈশ্বরকে উপাসনা করে তাদের পরিত্রাণ নিয়ে আসবে। অচিরেই আমাদের সামনে কত বিস্ময়কর ও রোমাঞ্চকর ঘটনাগুলোই না রয়েছে!—হিতোপদেশ ২:২১, ২২.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কেন অবিচার সর্বত্র এতটা ব্যাপক?

• কীভাবে যিহোবা পৃথিবীতে অবিচার সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করবেন?

• ন্যায়বিচারের বিজয় সম্বন্ধীয় এই অধ্যয়নের কোন বিষয়টা আপনাকে প্রভাবিত করেছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

জলপ্লাবনের আগে চারিদিক মন্দতায় ছেয়ে গিয়েছিল আর তা এই “শেষ কালে” ব্যাপক মাত্রায় দেখা যায়

[২৪, ২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের নতুন জগতে দুষ্টতার পরিবর্তে ন্যায়বিচার এবং ধার্মিকতা বিরাজ করবে