সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

দুঃখকষ্ট সহ্য করার মাধ্যমে আমরা উপকার লাভ করতে পারি

দুঃখকষ্ট সহ্য করার মাধ্যমে আমরা উপকার লাভ করতে পারি

দুঃখকষ্ট সহ্য করার মাধ্যমে আমরা উপকার লাভ করতে পারি

“যাহারা স্থির রহিয়াছে, তাহাদিগকে আমরা ধন্য [“সুখী,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] বলি।”—যাকোব ৫:১১.

১, ২. কী দেখায় যে, মানুষ দুঃখকষ্ট ভোগ করুক, এটা যিহোবার উদ্দেশ্য ছিল না?

 সুস্থ-স্বাভাবিক কোনো ব্যক্তিই দুঃখকষ্ট ভোগ করতে চায় না; অথবা আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বরও চান না যে, মানুষ দুঃখকষ্ট ভোগ করুক। আমরা তা জানতে পারি যখন আমরা তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্য পরীক্ষা করি এবং তিনি পুরুষ ও নারীকে সৃষ্টি করার পর যা ঘটেছিল, তা লক্ষ করি। প্রথমে, ঈশ্বর পুরুষকে সৃষ্টি করেছিলেন। “সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকার ধূলিতে আদমকে [অর্থাৎ মনুষ্যকে] নির্ম্মাণ করিলেন, এবং তাহার নাসিকায় ফুঁ দিয়া প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইলেন; তাহাতে মনুষ্য সজীব প্রাণী হইল।” (আদিপুস্তক ২:৭) আদম দেহ ও মনে সিদ্ধ ছিল আর তাই তার অসুস্থ হওয়ার অথবা মারা যাওয়ার কথা ছিল না।

আদমের জীবনযাপনের অবস্থা সম্বন্ধে কী বলা যায়? “সদাপ্রভু ঈশ্বর পূর্ব্বদিকে, এদনে, এক উদ্যান প্রস্তুত করিলেন, এবং সেই স্থানে আপনার নির্ম্মিত ঐ মনুষ্যকে রাখিলেন। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর ভূমি হইতে সর্ব্বজাতীয় সুদৃশ্য ও সুখাদ্য-দায়ক বৃক্ষ . . . উৎপন্ন করিলেন।” (আদিপুস্তক ২:৮, ৯) হ্যাঁ, আদমের এক অপূর্ব বাড়ি ছিল। এদনে কোনো দুঃখকষ্ট ছিল না।

৩. প্রথম মানব দম্পতির কোন প্রত্যাশাগুলো ছিল?

আদিপুস্তক ২:১৮ পদ আমাদের জানায়: “সদাপ্রভু ঈশ্বর কহিলেন, মনুষ্যের একাকী থাকা ভাল নয়, আমি তাহার জন্য তাহার অনুরূপ সহকারিণী নির্ম্মাণ করি।” যিহোবা আদমের জন্য এক সিদ্ধ স্ত্রী সৃষ্টি করেছিলেন আর এভাবে সুখী পারিবারিক জীবনের প্রত্যাশাকে সম্ভবপর করেছিলেন। (আদিপুস্তক ২:২১-২৩) বাইবেল আমাদের আরও জানায়: “ঈশ্বর তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিলেন; ঈশ্বর কহিলেন, তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর।” (আদিপুস্তক ১:২৮) প্রথম মানব দম্পতির সেই সময় পর্যন্ত এদনের পরমদেশকে প্রসারিত করার অপূর্ব সুযোগ ছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা একসময় পৃথিবী পূর্ণ করে, বিশ্বব্যাপী এক পরমদেশ তৈরি করে। আর তারা এমন সুখী বংশধর উৎপন্ন করত, যারা দুঃখকষ্ট থেকে মুক্ত থাকত। কতই না চমৎকার এক শুরু!—আদিপুস্তক ১:৩১.

দুঃখকষ্ট শুরু হয়

৪. ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে মানবজাতি সম্বন্ধে কোন বিষয়টা স্পষ্ট?

কিন্তু, আমরা যখন ইতিহাস জুড়ে মানব পরিবারের অবস্থার দিকে তাকাই, তখন এটা স্পষ্ট হয় যে, অত্যন্ত খারাপ কিছু ঘটেছিল। বিভিন্ন মন্দ বিষয় ঘটেছে আর এর ফলে মানব পরিবার প্রচুররূপে দুঃখকষ্ট ভোগ করছে। শত শত বছর ধরে, আদম ও হবার বংশধররা অসুস্থ হয়ে পড়ছে, বৃদ্ধ হচ্ছে এবং অবশেষে মারা যাচ্ছে। নিশ্চিতভাবেই, এই পৃথিবী সুখী লোকেদের দ্বারা পূর্ণ এক পরমদেশ হয়নি। এই পরিস্থিতি সম্বন্ধে রোমীয় ৮:২২ পদে একেবারে যথাযথভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে: “সমস্ত সৃষ্টি এখন পর্য্যন্ত একসঙ্গে আর্ত্তস্বর করিতেছে, ও একসঙ্গে ব্যথা খাইতেছে।”

৫. কীভাবে আমাদের প্রথম পিতামাতা মানব পরিবারের মধ্যে দুঃখকষ্ট নিয়ে আসার ক্ষেত্রে জড়িত ছিল?

দীর্ঘদিন ধরে যে-প্রচুর দুঃখকষ্ট রয়েছে, তার জন্য যিহোবা দায়ী নন। (২ শমূয়েল ২২:৩১) এর জন্য অবশ্যই মানবজাতি কিছুটা দায়ী। “তাহারা নষ্ট, তাহারা ঘৃণার্হ কর্ম্ম করিয়াছে।” (গীতসংহিতা ১৪:১) আমাদের প্রথম পিতামাতাকে এক উত্তম সূচনা দেওয়া হয়েছিল। আর তা বজায় রাখার জন্য শুধু যে-বিষয়টার প্রয়োজন ছিল, সেটা হল ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা কিন্তু আদম ও হবা যিহোবার কাছ থেকে স্বাধীন হওয়া বেছে নিয়েছিল। যেহেতু আমাদের প্রথম পিতামাতা নিজেদের যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, তাই তাঁর দৃষ্টিতে তারা আর সিদ্ধ ছিল না। মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত তাদের অবস্থার অবনতি হয়েছিল। আর আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে অসিদ্ধতা পেয়েছি।—আদিপুস্তক ৩:১৭-১৯; রোমীয় ৫:১২.

৬. দুঃখকষ্ট সূত্রপাতের ক্ষেত্রে শয়তান কোন ভূমিকা পালন করেছিল?

এ ছাড়া, সমস্ত দুঃখকষ্ট শুরু করার সঙ্গে একজন আত্মিক প্রাণীও জড়িত ছিল, যাকে শয়তান দিয়াবল বলা হয়। তাকে স্বাধীন ইচ্ছা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, সে উপাসনা পাওয়ার চেষ্টা করে সেই স্বাধীন ইচ্ছার অপব্যবহার করেছিল। অথচ, কেবল যিহোবাকেই উপাসনা করা উচিত, তাঁর সষ্টিগুলোকে নয়। এই শয়তানই আদম ও হবাকে যিহোবার কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য প্ররোচিত করেছিল, যেন এভাবে তারা “ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্‌-জ্ঞান প্রাপ্ত” হতে পারে।—আদিপুস্তক ৩:৫.

একমাত্র যিহোবারই শাসন করার অধিকার রয়েছে

৭. যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পরিণতিগুলো কী দেখায়?

বিদ্রোহের মন্দ পরিণতিগুলো দেখায় যে, নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম হিসেবে একমাত্র যিহোবারই শাসন করার অধিকার রয়েছে এবং একমাত্র তাঁর শাসনই ধার্মিক। বিগত হাজার হাজার বছর দেখিয়েছে যে, শয়তান, যে “এ জগতের অধিপতি” হয়ে উঠেছে, সে এমন এক দুষ্ট, অধার্মিক ও দৌরাত্ম্যপূর্ণ শাসন গড়ে তুলেছে, যা সম্পূর্ণরূপে অসন্তোষজনক। (যোহন ১২:৩১) শয়তানের নিয়ন্ত্রণাধীনে দীর্ঘ ও দুর্বিষহ মানব শাসনও দেখিয়েছে যে, তাদের ধার্মিকতা সহকারে শাসন করার ক্ষমতার অভাব রয়েছে। (যিরমিয় ১০:২৩) তাই, যিহোবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন কল্পনাসাধ্য সমস্ত ধরনের শাসনই ব্যর্থ হবে। আর এই বিষয়ে ইতিহাস সন্দেহের কোনো অবকাশই রাখে না।

৮. সমস্ত ধরনের মানব শাসন সম্বন্ধে যিহোবার উদ্দেশ্য কী এবং কীভাবে তিনি সেই উদ্দেশ্য সাধন করবেন?

এখন যিহোবা যেহেতু মানবজাতিকে তাঁর কাছ থেকে স্বাধীন এমন শাসন সম্বন্ধে পরীক্ষা করার জন্য হাজার হাজার বছর সময় দিয়েছেন, তাই তিনি পৃথিবী থেকে এই ধরনের সমস্ত শাসন সরিয়ে দিয়ে সেগুলোর পরিবর্তে তাঁর নিজের সরকার নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ন্যায্য। এই সম্বন্ধে একটা ভবিষ্যদ্বাণী বলে: “সেই রাজগণের [মানব শাসনের] সময়ে স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য [খ্রিস্টের নিয়ন্ত্রণাধীনে তাঁর স্বর্গীয় সরকার] স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, . . . তাহা ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।” (দানিয়েল ২:৪৪) মন্দদূতদের ও সেইসঙ্গে মানুষের শাসন দূর করে দেওয়া হবে এবং একমাত্র ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্য বিদ্যমান থাকবে এবং পৃথিবীর ওপর শাসন করবে। খ্রিস্ট হবেন সেই রাজ্যের রাজা আর তাঁর সঙ্গে সহশাসক হিসেবে থাকবে পৃথিবী থেকে নেওয়া ১,৪৪,০০০ জন বিশ্বস্ত মানুষ।—প্রকাশিত বাক্য ১৪:১.

দুঃখকষ্ট থেকে উপকার লাভ করা

৯, ১০. যিশু যে-বিষয়গুলো ভোগ করেছিলেন, তা থেকে তিনি কীভাবে উপকৃত হয়েছিলেন?

সেই ব্যক্তিদের যোগ্যতাগুলো পরীক্ষা করা আগ্রহজনক, যারা স্বর্গীয় রাজ্যে শাসন করবে। প্রথমে, খ্রিস্ট যিশু দেখিয়েছেন যে, রাজা হিসেবে তাঁর ভূমিকার জন্য তিনি কতটা যোগ্য। তিনি যিহোবার “কার্য্যকারী [‘দক্ষ কর্মী,’ বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন]” হিসেবে তাঁর পিতার পাশে থেকে অগণিত বছর ধরে তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করেছিলেন। (হিতোপদেশ ৮:২২-৩১) যিহোবা যখন তাঁর জন্য পৃথিবীতে আসার ব্যবস্থা করেছিলেন, তখন যিশু স্বেচ্ছায় সম্মত হয়েছিলেন। পৃথিবীতে তিনি অন্যদের কাছে যিহোবার সার্বভৌমত্ব ও রাজ্য সম্বন্ধে বলার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। সম্পূর্ণরূপে সেই সার্বভৌমত্বের বশীভূত হয়ে যিশু আমাদের সকলের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছেন।—মথি ৪:১৭; ৬:৯.

১০ যিশু তাড়না ভোগ করেছিলেন এবং অবশেষে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তাঁর পরিচর্যার সময়ে তিনি তাঁর চারপাশে মানবজাতির করুণ অবস্থা লক্ষ করতে পেরেছিলেন। তা দেখা ও ব্যক্তিগতভাবে দুঃখকষ্ট ভোগ করা কি তাঁর জন্য কোনো উপকার নিয়ে এসেছিল? হ্যাঁ। ইব্রীয় ৫:৮ পদ বলে: “যদিও তিনি [ঈশ্বরের] পুত্ত্র ছিলেন, তথাপি যে সকল দুঃখভোগ করিয়াছিলেন, তদ্দ্বারা আজ্ঞাবহতা শিক্ষা করিলেন।” পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশুর অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও সহমর্মী ও সমবেদনাময় করে তুলেছিল। তিনি মানব পরিবারের অবস্থা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। যারা দুঃখকষ্ট ভোগ করে, তিনি তাদের দুঃখে দুঃখিত হতে পারতেন এবং তাদেরকে উদ্ধার করার বিষয়ে তাঁর ভূমিকা সম্বন্ধে আরও ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারতেন। লক্ষ করুন যে, প্রেরিত পৌল ইব্রীয় বইয়ে কীভাবে তা তুলে ধরেছেন: “সর্ব্ববিষয়ে আপন ভ্রাতৃগণের তুল্য হওয়া তাঁহার উচিত ছিল, যেন তিনি প্রজাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিবার নিমিত্ত ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কার্য্যে দয়ালু ও বিশ্বস্ত মহাযাজক হন। কেননা তিনি আপনি পরীক্ষিত হইয়া দুঃখভোগ করিয়াছেন বলিয়া পরীক্ষিতগণের সাহায্য করিতে পারেন।” “আমরা এমন মহাযাজককে পাই নাই, যিনি আমাদের দুর্ব্বলতাঘটিত দুঃখে দুঃখিত হইতে পারেন না, কিন্তু তিনি সর্ব্ববিষয়ে আমাদের ন্যায় পরীক্ষিত হইয়াছেন, বিনা পাপে। অতএব আইস, আমরা সাহসপূর্ব্বক অনুগ্রহ-সিংহাসনের নিকটে উপস্থিত হই, যেন দয়া লাভ করি, এবং সময়ের উপযোগী উপকারার্থে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হই।”—ইব্রীয় ২:১৭, ১৮; ৪:১৪-১৬; মথি ৯:৩৬; ১১:২৮-৩০.

১১. কীভাবে পৃথিবীতে ভাবী রাজা ও যাজকদের অভিজ্ঞতা শাসক হিসেবে তাদেরকে উপকৃত করবে?

১১ সেই ১,৪৪,০০০ ব্যক্তি সম্বন্ধে প্রায় একই কথা বলা যেতে পারে, যারা স্বর্গীয় রাজ্যে খ্রিস্ট যিশুর সঙ্গে সহশাসক হওয়ার জন্য পৃথিবী থেকে “ক্রীত হইয়াছে।” (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৪) তারা সকলে পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছে, চারপাশে দুঃখকষ্ট রয়েছে এমন একটা জগতে বড় হয়েছে এবং নিজেরা দুঃখকষ্ট ভোগ করেছে। অনেকে তাড়িত হয়েছে আর এমনকি কেউ কেউ যিহোবার প্রতি তাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার ও যিশুকে অনুসরণ করতে ইচ্ছুক হওয়ার কারণে হত হয়েছে। কিন্তু, তারা ‘তাহাদের প্রভুর সাক্ষ্যের বিষয়ে লজ্জিত হয়নি, সুসমাচারের সহিত ক্লেশভোগ স্বীকার করে।’ (২ তীমথিয় ১:৮) পৃথিবীতে তাদের অভিজ্ঞতা তাদেরকে বিশেষভাবে স্বর্গ থেকে মানব পরিবারের ওপর বিচার করার জন্য যোগ্য করে তোলে। তারা আরও বেশি পরদুঃখে দুঃখিত বা সহানুভূতিশীল, দয়ালু ও লোকেদের সাহায্য করতে ইচ্ছুক হতে শিখেছে।—প্রকাশিত বাক্য ৫:১০; ১৪:২-৫; ২০:৬.

পার্থিব আশাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সুখ

১২, ১৩. কীভাবে পার্থিব আশাসম্পন্ন ব্যক্তিরা দুঃখকষ্ট থেকে উপকার পেতে পারে?

১২ বর্তমানে যে-দুঃখকষ্ট রয়েছে, তা কি সেই ব্যক্তিদের জন্য কোনো উপকার নিয়ে আসতে পারে, যারা অসুস্থতা থেকে মুক্ত, দুঃখবিহীন এবং মৃত্যুহীন এক পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রাখে? দুঃখকষ্ট যে-বেদনা ও নিদারুণ যন্ত্রণা নিয়ে আসে, সেগুলো কখনোই কাম্য নয়। কিন্তু, আমরা যখন এই ধরনের দুঃখকষ্ট সহ্য করি, তখন উত্তম ব্যক্তিগত গুণাবলি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তা সুখ নিয়ে আসে।

১৩ ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য এই সম্বন্ধে কী বলে, তা বিবেচনা করুন: “যদিও ধার্ম্মিকতার নিমিত্ত দুঃখভোগ কর, তবু তোমরা ধন্য [“সুখী,” বাংলা জুবিলী বাইবেল]।” “তোমরা যদি খ্রীষ্টের নাম প্রযুক্ত তিরস্কৃত হও, তবে তোমরা ধন্য [“সুখী,” বাংলা জুবিলী বাইবেল]।” (১ পিতর ৩:১৪; ৪:১৪) “ধন্য [“সুখী,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] তোমরা, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদিগকে নিন্দা ও তাড়না করে, এবং মিথ্যা করিয়া তোমাদের বিরুদ্ধে সর্ব্বপ্রকার মন্দ কথা বলে। আনন্দ করিও, উল্লাসিত হইও, কেননা স্বর্গে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর।” (মথি ৫:১১, ১২) “ধন্য [“সুখী,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] সেই ব্যক্তি, যে পরীক্ষা সহ্য করে; কারণ পরীক্ষাসিদ্ধ হইলে পর সে জীবনমুকুট প্রাপ্ত হইবে।”—যাকোব ১:১২.

১৪. কোন অর্থে দুঃখকষ্ট যিহোবার উপাসকদের সুখী করতে পারে?

১৪ নিশ্চিতভাবেই, আমাদের হয়তো যে-দুঃখকষ্টগুলো সহ্য করতে হয়, সেগুলো আমাদেরকে সুখী করে না। সুখ ও পরিতৃপ্তি এই বিষয়টা জানার মাধ্যমে আসে যে, আমরা যিহোবার ইচ্ছা পালন এবং যিশুর আদর্শ অনুসরণ করছি বলে দুঃখকষ্ট ভোগ করছি। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম শতাব্দীতে কিছু প্রেরিতকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এবং এরপর যিহুদি উচ্চ আদালতে নিয়ে এসে তাদেরকে জনসমক্ষে অভিযুক্ত করা হয়েছিল কারণ তারা যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে প্রচার করেছিল। তাদেরকে মারধর করার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তাদের মনোভাব কেমন ছিল? বাইবেলের বিবরণ বলে যে, তারা “মহাসভার সম্মুখ হইতে চলিয়া গেলেন, আনন্দ করিতে করিতে গেলেন, কারণ তাঁহারা সেই নামের জন্য অপমানিত হইবার যোগ্যপাত্র গণিত হইয়াছিলেন।” (প্রেরিত ৫:১৭-৪১) তারা সুখী হয়েছিল, তবে তা মার খেয়েছিল এবং এর ফলে শারীরিক কষ্ট পেয়েছিল বলে নয় বরং এটা বুঝতে পেরে যে, যিহোবার প্রতি তাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার ও যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করার জন্যই এইরকমটা ঘটেছিল।—প্রেরিত ১৬:২৫; ২ করিন্থীয় ১২:১০; ১ পিতর ৪:১৩.

১৫. কীভাবে এখন আমাদের দুঃখকষ্ট সহ্য করা ভবিষ্যতে আমাদের উপকার করতে পারে?

১৫ আমরা যদি সঠিক মনোভাব নিয়ে বিরোধিতা ও তাড়না সহ্য করি, তা হলে সেটা আমাদের মধ্যে ধৈর্য গড়ে তুলতে পারে। এটা আমাদের ভবিষ্যতে দুঃখকষ্ট সহ্য করতে সাহায্য করবে। আমরা পড়ি: “হে আমার ভ্রাতৃগণ, তোমরা যখন নানাবিধ পরীক্ষায় পড়, তখন তাহা সর্ব্বতোভাবে আনন্দের বিষয় জ্ঞান করিও; জানিও, তোমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষাসিদ্ধতা ধৈর্য্য সাধন করে।” (যাকোব ১:২, ৩) একইভাবে রোমীয় ৫:৩-৫ পদ আমাদের জানায়: “নানাবিধ ক্লেশেও শ্লাঘা করিতেছি, কারণ আমরা জানি, ক্লেশ ধৈর্য্যকে, ধৈর্য্য পরীক্ষাসিদ্ধতাকে এবং পরীক্ষাসিদ্ধতা প্রত্যাশাকে উৎপন্ন করে; আর প্রত্যাশা লজ্জাজনক হয় না।” তাই, আমাদের খ্রিস্টীয় জীবনধারার জন্য আমরা এখন যত বেশি পরীক্ষা সহ্য করি, তত বেশি আমরা এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থায় আরও পরীক্ষা সহ্য করার জন্য সুসজ্জিত হব।

যিহোবা ক্ষতি পূরণ করবেন

১৬. ভাবী রাজা ও যাজকদের জন্য যিহোবা এমন কী করবেন, যা তাদের দুঃখকষ্টের ক্ষতি পূরণ করবে?

১৬ এমনকি আমরা যখন খ্রিস্টীয় পথ অনুসরণ করার জন্য বিরোধিতা অথবা তাড়নার কারণে বস্তুগত বিষয়ের ক্ষতি ভোগ করি, তখন এটা জেনে আমরা পরিতৃপ্ত হতে পারি যে, যিহোবা আমাদের পূর্ণরূপে পুরস্কৃত করবেন। উদাহরণস্বরূপ, স্বর্গে যাওয়ার আশা ছিল এমন কিছু ব্যক্তিকে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা . . . আনন্দপূর্ব্বক আপন আপন সম্পত্তির লুট স্বীকার করিয়াছিলে, কারণ তোমরা জানিতে, তোমাদের” ঈশ্বরের রাজ্যের শাসক হিসেবে “আরও উত্তম নিজ সম্পত্তি আছে, আর তাহা নিত্যস্থায়ী।” (ইব্রীয় ১০:৩৪) আর তারা যখন যিহোবা ও খ্রিস্টের নির্দেশাধীনে নতুন জগতে পৃথিবীর অধিবাসীদের ওপর অপূর্ব আশীর্বাদগুলো বর্ষণ করায় অংশ নেবে, তখন তাদের যে-আনন্দ হবে, তা কল্পনা করে দেখুন। বিশ্বস্ত খ্রিস্টানদের প্রতি বলা প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলো কতই না সত্য: “আমার মীমাংসা এই, আমাদের প্রতি যে প্রতাপ প্রকাশিত হইবে, তাহার সঙ্গে এই বর্ত্তমান কালের দুঃখভোগ তুলনার যোগ্য নয়।”—রোমীয় ৮:১৮.

১৭. পার্থিব আশাসম্পন্ন সেই ব্যক্তিদের জন্য যিহোবা কী করবেন, যারা এখন তাঁকে অনুগতভাবে সেবা করে?

১৭ একইভাবে, পার্থিব আশাসম্পন্ন ব্যক্তিরা যিহোবাকে সেবা করার ফলে এখন যে-ক্ষতিই ভোগ করুক না কেন অথবা স্বেচ্ছায় যা কিছুই ত্যাগ করুক না কেন, যিহোবা ভবিষ্যতে যা করবেন, সেটার দ্বারা তিনি তাদেরকে প্রচুররূপে পুরস্কৃত করবেন। তিনি তাদেরকে এক পরমদেশ পৃথিবীতে সিদ্ধ ও অন্তহীন জীবন দান করবেন। সেই নতুন জগতে যিহোবা “তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) কত অপূর্ব এক প্রতিজ্ঞা! বর্তমান এই জগতে যিহোবার জন্য আমরা স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ত্যাগ করি এমন কোনোকিছুই ভবিষ্যতের সেই অপূর্ব জীবনের সমরূপ হতে পারে না, যা তিনি তাঁর সেই বিশ্বস্ত দাসদের দেবেন, যারা দুঃখকষ্ট সহ্য করে।

১৮. যিহোবা তাঁর বাক্যে আমাদের কোন সান্ত্বনামূলক প্রতিজ্ঞা প্রদান করেছেন?

১৮ আমাদেরকে এখনও যে-দুঃখকষ্টই সহ্য করতে হোক না কেন, তা নিশ্চিতভাবেই ঈশ্বরের নতুন জগতে আমাদের অনন্তজীবনকে ব্যাহত করতে পারবে না। নতুন জগতের চমৎকার পরিস্থিতিগুলোর দ্বারা এইসমস্ত দুঃখকষ্টের সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিপূরণ করা হবে। যিশাইয় ৬৫:১৭, ১৮ পদ আমাদের বলে: “পূর্ব্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না। কিন্তু আমি যাহা সৃষ্টি করি, তোমরা তাহাতে চিরকাল আমোদ ও উল্লাস কর।” তাই, যিশুর অর্ধভ্রাতা যাকোবের পক্ষে এটা ঘোষণা করা উপযুক্ত ছিল: “যাহারা স্থির রহিয়াছে, তাহাদিগকে আমরা সুখী বলি।” (যাকোব ৫:১১) হ্যাঁ, আমরা যদি বিশ্বস্তভাবে বর্তমান দুঃখকষ্টের মধ্যে স্থির থাকি বা তা সহ্য করি, তা হলে আমরা এখন ও ভবিষ্যতে উপকার লাভ করতে পারব।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কীভাবে মানুষ দুঃখকষ্ট ভোগ করতে শুরু করেছিল?

• দুঃখকষ্ট পৃথিবীর ভাবী শাসক ও অধিবাসীদের জন্য কোন উপকারগুলো নিয়ে আসতে পারে?

• দুঃখকষ্ট সত্ত্বেও কেন আমরা এখনই সুখী হতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের প্রথম পিতামাতার সামনে এক অপূর্ব ভবিষ্যৎ ছিল

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

দুঃখকষ্ট দেখা যিশুকে একজন উত্তম রাজা ও মহাযাজক হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করেছিল

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রেরিতরা তাদের বিশ্বাসের জন্য ‘অপমানিত হইবার যোগ্যপাত্র গণিত হইয়াছিল বলিয়া আনন্দিত হইয়াছিল’