সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

দানিয়েল বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

দানিয়েল বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

যিহোবার বাক্য জীবন্ত

দানিয়েল বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

“দানিয়েল বইটি বাইবেলের সবচেয়ে আগ্রহজনক বইগুলোর মধ্যে একটি,” হোলম্যান ইলাস্ট্রেটেড বাইবেল ডিকশনারি বলে। “এই বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো চিরন্তন সত্যে পরিপূর্ণ।” দানিয়েলের বিবরণ শুরু হয় সা.কা.পূ. ৬১৮ সালে, যখন বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর যিরূশালেমে আসেন ও সেই নগর অবরোধ করেন এবং ‘ইস্রায়েল-সন্তানদের মধ্যে কয়েক জন যুবককে’ বাবিলে বন্দি করে নিয়ে যান। (দানিয়েল ১:১-৪) তাদের মধ্যে রয়েছেন দানিয়েল, যিনি তখন সম্ভবত একজন কিশোর। দানিয়েল বাবিলে থাকাকালীন বইটি শেষ হয়। প্রায় ১০০ বছর বয়সে দানিয়েল ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞা লাভ করেন: “তুমি . . . বিশ্রাম পাইবে, এবং দিন-সমূহের শেষে আপন অধিকারে দণ্ডায়মান হইবে।”—দানিয়েল ১২:১৩.

দানিয়েল বইয়ের প্রথম অংশ যদিও কালানুক্রমিকভাবে প্রথম পুরুষে উপস্থাপন করা হয়েছে কিন্তু এর শেষ অংশ উত্তম পুরুষে লিখিত। দানিয়েলের দ্বারা লিখিত বইটিতে বিশ্বশক্তিগুলোর উত্থান ও পতন, মশীহের আসার সময় এবং আমাদের দিনে যে-ঘটনাগুলো ঘটছে, সেই সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। * এ ছাড়া, বৃদ্ধ ভাববাদী তার দীর্ঘ জীবনের দিকে ফিরে তাকান এবং সেই ঘটনাগুলোর বর্ণনা করেন, যেগুলো আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রতি নীতিনিষ্ঠ নারী-পুরুষ হতে উৎসাহিত করে। দানিয়েলের বার্তা জীবন্ত ও কার্যসাধক।—ইব্রীয় ৪:১২.

কালানুক্রমিক বিবরণ আমাদের কী শিক্ষা দেয়?

(দানিয়েল ১:১–৬:২৮)

সময়টা হল সা.কা.পূ. ৬১৭ সাল। দানিয়েল এবং তার তিনজন অল্পবয়সি বন্ধু শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌নগো বাবিলের রাজপ্রাসাদে রয়েছে। রাজপ্রাসাদে থাকাকালীন তিন বছরের প্রশিক্ষণের সময়ে এই তরুণরা ঈশ্বরের প্রতি তাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছে। প্রায় আট বছর পর, রাজা নবূখদ্‌নিৎসর একটা রহস্যময় স্বপ্ন দেখেন। দানিয়েল সেই স্বপ্ন প্রকাশ করেন এবং এটার অর্থ ব্যাখ্যা করেন। রাজা স্বীকার করেন যে, যিহোবা হলেন “দেবগণের ঈশ্বর, রাজাদের প্রভু ও নিগূঢ়তত্ত্বপ্রকাশক।” (দানিয়েল ২:৪৭) তবে, শীঘ্রই রাজা এই শিক্ষা ভুলে গিয়েছেন বলে মনে হয়। দানিয়েলের তিন বন্ধু যখন এক বিশালাকার প্রতিমাকে উপাসনা করতে প্রত্যাখ্যান করে, তখন রাজা তাদেরকে একটা জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেন। সত্য ঈশ্বর সেই তিনজনকে উদ্ধার করেন আর নবূখদ্‌নিৎসর এটা স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, “এ প্রকার উদ্ধার করিতে সমর্থ আর কোন দেবতা নাই।”—দানিয়েল ৩:২৯.

নবূখদ্‌নিৎসর আরেকটা তাৎপর্যপূর্ণ স্বপ্ন দেখেন। তিনি একটা বৃহৎ বৃক্ষ দেখেন, যেটাকে কেটে ফেলা হয় এবং যেটার বৃদ্ধি রোধ করা হয়। দানিয়েল সেই স্বপ্নের অর্থ ব্যাখ্যা করেন। সেই স্বপ্ন আংশিকভাবে পরিপূর্ণ হয়, যখন নবূখদ্‌নিৎসর পাগল হয়ে যান ও পরে সুস্থ হন। বেশ কয়েক দশক পর, রাজা বেল্‌শৎসর তার মহল্লোক বা উচ্চপদস্থ লোকেদের জন্য এক মহাভোজ প্রস্তুত করেন এবং যিহোবার মন্দির থেকে নিয়ে আসা পাত্রগুলোকে অসম্মানজনকভাবে ব্যবহার করেন। সেই রাতেই বেল্‌শৎসর নিহত হন এবং মাদীয় দারিয়াবস সেই রাজ্য লাভ করেন। (দানিয়েল ৫:৩০, ৩১) দারিয়াবসের সময়ে যখন দানিয়েলের বয়স ৯০ বছরেরও বেশি, তখন বৃদ্ধ ভাববাদী ঈর্ষাপরায়ণ কর্মকর্তাদের এক মারাত্মক চক্রান্তের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। কিন্তু যিহোবা তাকে “সিংহদের হস্ত হইতে” রক্ষা করেন।—দানিয়েল ৬:২৭.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

১:১১-১৫—নিরামিষ জাতীয় খাদ্যতালিকাই কি চারজন যিহুদি তরুণের আরও উত্তম কান্তি বা মুখশ্রীর কারণ ছিল? না, তা নয়। কোনো খাদ্যতালিকাই মাত্র দশ দিনে এই ধরনের পরিবর্তন করতে পারে না। এই ইব্রীয় তরুণদের মুখশ্রীর পরিবর্তনের কৃতিত্ব যিহোবার, যিনি তাঁর ওপর নির্ভর করার কারণে তাদের আশীর্বাদ করেছিলেন।—হিতোপদেশ ১০:২২.

২:১—কখন নবূখদ্‌নিৎসর বৃহৎ প্রতিমা সম্বন্ধে স্বপ্ন দেখেছিলেন? বিবরণ বলে যে, এটা ছিল “নবূখদ্‌নিৎসরের রাজত্বের দ্বিতীয় বৎসরে।” তিনি সা.কা.পূ. ৬২৪ সালে রাজা হয়েছিলেন। তাই, তার রাজত্বের দ্বিতীয় বছর শুরু হয়েছিল সা.কা.পূ. ৬২৩ সালে—যিহূদা আক্রমণ করার কয়েক বছর আগে। সেই সময়ে, তার স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার জন্য দানিয়েল বাবিলে ছিলেন না। স্পষ্টতই, এই ‘দ্বিতীয় বৎসর’ গণনা করা হয়েছিল সা.কা.পূ. ৬০৭ সাল থেকে, যখন বাবিলীয় রাজা যিরূশালেমকে ধ্বংস করেছিলেন এবং জগতের এক শাসক হয়েছিলেন।

২:৩২, ৩৯—কোন উপায়ে রৌপ্যময় রাজ্য সুবর্ণময় মস্তক অপেক্ষা ক্ষুদ্র ছিল এবং কীভাবে পিত্তলময় রাজ্য রৌপ্যময় রাজ্য অপেক্ষা ক্ষুদ্র ছিল? প্রতিমার রৌপ্যময় অংশ দ্বারা চিত্রিত মাদীয়-পারসীক সাম্রাজ্য, সুবর্ণময় মস্তক দ্বারা চিত্রিত বাবিল অপেক্ষা এই অর্থে ক্ষুদ্র ছিল যে, তার যিহূদাকে পরাজিত করার খ্যাতি ছিল না। এর পরের বিশ্বশক্তি ছিল গ্রিস, যা পিত্তলের দ্বারা চিত্রিত। গ্রিস, মাদীয়-পারসীকের চেয়ে ক্ষুদ্র ছিল, ঠিক যেমন পিত্তল রৌপ্যের চেয়ে নিকৃষ্ট। যদিও গ্রিক সাম্রাজ্য এক বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল কিন্তু এটা ঈশ্বরের লোকেদের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করার বিশেষ সুযোগ লাভ করেনি, যেটা মাদীয়-পারসীক লাভ করেছিল।

৪:৮, ৯—দানিয়েল নিজেই কি মন্ত্রবেত্তাগণের অধ্যক্ষ হয়ে উঠেছিলেন? না। “মন্ত্রবেত্তাগণের অধ্যক্ষ” এই অভিব্যক্তিটি কেবল “বাবিলস্থ সমুদয় বিদ্বান্‌ লোকের প্রধান অধিপতি” হিসেবে দানিয়েলের পদমর্যাদাকে নির্দেশ করে।—দানিয়েল ২:৪৮.

৪:১০, ১১, ২০-২২—নবূখদ্‌নিৎসরের স্বপ্নের বৃহৎ বৃক্ষ দ্বারা কী চিত্রিত করা হয়েছিল? প্রথমে বৃক্ষটা একটা বিশ্বশক্তির শাসক হিসেবে নবূখদ্‌নিৎসরকে চিত্রিত করেছিল। কিন্তু, সেই শাসন যেহেতু “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” সম্প্রসারিত হয়েছিল, তাই সেই বৃক্ষ আরও মহৎ কিছুকে নির্দেশ করে। দানিয়েল ৪:১৭ পদ সেই স্বপ্নকে মানবজাতির ওপর ‘পরাৎপরের’ শাসনের সঙ্গে যুক্ত করে। তা হলে, সেই বৃক্ষ বিশেষ করে পৃথিবীতে যিহোবার সার্বিক সার্বভৌমত্বকেও চিত্রিত করে। তাই, সেই স্বপ্নের দুটো পরিপূর্ণতা রয়েছে—নবূখদ্‌নিৎসরের শাসন এবং যিহোবার সার্বভৌমত্ব।

৪:১৬, ২৩, ২৫, ৩২, ৩৩—“সাত কাল” কত দীর্ঘ ছিল? রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের বাহ্যিক অবস্থার যেসমস্ত পরিবর্তন ঘটেছিল, তার জন্য যে-‘সাত কালের’ প্রয়োজন ছিল, তা আক্ষরিক সাত দিনের চেয়ে আরও দীর্ঘ ছিল। তার ক্ষেত্রে, এই সময়ের অর্থ ছিল প্রতি বছর ৩৬০ দিন করে সাত বছর বা ২,৫২০ দিন। আরও বৃহৎ পরিপূর্ণতায় “সাত কাল” হচ্ছে ২,৫২০ বছর। (যিহিষ্কেল ৪:৬, ৭) সেই সময় শুরু হয়েছিল সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেমের ধ্বংসের সময়ে এবং সা.কা. ১৯১৪ সালে স্বর্গীয় রাজা হিসেবে যিশুর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে তা শেষ হয়েছিল।—লূক ২১:২৪.

৬:৬-১০—যেহেতু যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ভঙ্গিমার প্রয়োজন নেই, তাই ৩০ দিন পর্যন্ত গোপনে প্রার্থনা করা কি দানিয়েলের জন্য আরও বিজ্ঞতার কাজ হতো না? দিনে তিন বার দানিয়েলের প্রার্থনা করার বিষয়টা লোকেরা জানত। সেই কারণেই ষড়যন্ত্রকারীরা প্রার্থনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার ফন্দি এঁটেছিল। প্রার্থনার বিষয়ে দানিয়েলের তালিকায় যেকোনো পরিবর্তন করা হলে তা অন্যদের কাছে তার আপোশ করার শামিল বলে মনে হতো এবং যিহোবার প্রতি একাগ্র ভক্তি প্রদানে তার ব্যর্থতাকে ইঙ্গিত করতে পারত।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

১:৩-৮. যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার জন্য দানিয়েল ও তার তিন সঙ্গীর দৃঢ়সংকল্প, তারা নিশ্চয়ই বাবামার কাছ থেকে যে-প্রশিক্ষণ লাভ করেছিল, সেটার ওপর জোর দেয়। ঈশ্বরভয়শীল বাবামায়েরা যখন তাদের জীবনে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখে এবং তাদের ছেলেমেয়েদেরও একই বিষয় করতে শিক্ষা দেয়, তখন তাদের সন্তানরা স্কুলে বা অন্য কোথাও যেকোনো প্রলোভন ও চাপই আসুক না কেন, খুব সম্ভবত সেগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারে।

১:১০-১২. দানিয়েল বুঝতে পেরেছিলেন যে, কেন “নপুংসকগণের অধ্যক্ষ” রাজাকে ভয় পেয়েছিলেন আর তাই তার অনুরোধ রাখতে তিনি তাকে জোরাজুরি করেননি। কিন্তু, দানিয়েল পরে ‘গৃহাধ্যক্ষের’ কাছে গিয়েছিলেন, যিনি হয়তো আরও বেশি উদারতা দেখানোর মতো অবস্থানে ছিলেন। কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার সময়, আমাদেরও একইরকম অন্তর্দৃষ্টি, বোধগম্যতা ও প্রজ্ঞা সহকারে কাজ করা উচিত।

২:২৯, ৩০. যিহোবার আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলোর সদ্ব্যবহার করার ফলে আমরা হয়তো যেকোনো জ্ঞান, গুণাবলি ও ক্ষমতা অর্জন করি না কেন, দানিয়েলের মতো আমাদেরও সেগুলোর পুরো কৃতিত্ব তাঁকে দেওয়া উচিত।

৩:১৬-১৮. তিনজন ইব্রীয়র পক্ষে এই ধরনের দৃঢ়প্রত্যয়ী প্রতিক্রিয়া দেখানোর কোনো সম্ভাবনাই থাকত না, যদি কিনা তারা আগে তাদের খাদ্যতালিকার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যাপারে আপোশ করার জন্য তৈরি থাকত। আমাদেরও ‘সর্ব্ববিষয়ে বিশ্বস্ত’ হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত।—১ তীমথিয় ৩:১১.

৪:২৪-২৭. ঈশ্বরের প্রতিকূল বিচারসহ রাজ্যের বার্তা ঘোষণা করার জন্য সেই একই ধরনের বিশ্বাস ও সাহসের প্রয়োজন, যা দানিয়েল দেখিয়েছিলেন এই বিষয়টা জানানোর জন্য যে, নবূখদ্‌নিৎসরের ওপর কী আসতে যাচ্ছে এবং রাজার কী করা উচিত, যাতে ‘তাহার শান্তিকাল বৃদ্ধি পায়।’

৫:৩০, ৩১. ‘বাবিল-রাজের বিরুদ্ধে প্রবাদ’ সত্য হয়েছিল। (যিশাইয় ১৪:৩, ৪, ১২-১৫) শয়তান দিয়াবল, যার অহংকার বাবিলীয় রাজবংশের মতো একইরকম, সেও এক অপমানজনক পরিণতি ভোগ করবে।—দানিয়েল ৪:৩০; ৫:২-৪, ২৩.

দানিয়েলের দর্শনগুলো কী প্রকাশ করে?

(দানিয়েল ৭:১–১২:১৩)

সা.কা.পূ. ৫৫৩ সালে দানিয়েল যখন প্রথম স্বপ্নের মাধ্যমে দর্শন লাভ করেন, তখন তার বয়স ৭০ বছরেরও বেশি। দানিয়েল বৃহৎ চারটে জন্তু দেখেন, যেগুলো তার দিন থেকে আমাদের দিন পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বিশ্বশক্তিগুলোকে চিত্রিত করে। স্বর্গের এক দৃশ্যের একটা দর্শনে, তিনি ‘মনুষ্য-পুত্ত্রের ন্যায় এক পুরুষকে’ দেখেন, যাঁকে “অনন্তকালীন কর্ত্তৃত্ব” দেওয়া হয়েছে। (দানিয়েল ৭:১৩, ১৪) দুবছর পর, দানিয়েল একটা দর্শন দেখেন, যার অন্তর্ভুক্ত মাদীয়-পারসীক, গ্রিস এবং এমন এক সত্তা, যা ‘ভীষণবদন এক রাজা’ হয়ে ওঠে।—দানিয়েল ৮:২৩.

তারপর সময়টা হল সা.কা.পূ. ৫৩৯ সাল। বাবিলের পতন হয়েছে এবং মাদীয় দারিয়াবস কল্‌দীয়দের রাজ্যের ওপর শাসক হয়েছেন। দানিয়েল তার নিজের দেশের পুনর্স্থাপনের বিষয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন। যখন তিনি প্রার্থনা করছেন, তখন যিহোবা মশীহের আসার বিষয়ে দানিয়েলকে “বুদ্ধিকৌশল দিতে” গাব্রিয়েল দূতকে পাঠান। (দানিয়েল ৯:২০-২৫) সময় গড়িয়ে সা.কা.পূ. ৫৩৬/৫৩৫ সাল আসে। এক অবশিষ্টাংশ যিরূশালেমে ফিরে এসেছে। কিন্তু, মন্দিরের নির্মাণকাজে বাধা দেওয়া হয়। এটা দানিয়েলের উদ্বিগ্নতার এক কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি এটাকে প্রার্থনার অন্তর্ভুক্ত করেন আর যিহোবা এক উচ্চপদস্থ দূতকে দানিয়েলের কাছে পাঠান। দানিয়েলকে শক্তিশালী ও উৎসাহিত করার পর, সেই দূত একটা ভবিষ্যদ্বাণীর বর্ণনা করেন, যা উত্তর দেশের রাজা ও দক্ষিণ দেশের রাজার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই সম্বন্ধে তুলে ধরে। সেই দুজন রাজার মধ্যে দ্বন্দ্ব, মহান আলেকজান্ডারের রাজ্য তার চারজন সেনাপ্রধানের মধ্যে ভাগ হয়ে যাওয়ার সময় থেকে শুরু করে সেই সময় পর্যন্ত বিস্তৃত, যখন মহান অধ্যক্ষ মীখায়েল “উঠিয়া দাঁড়াইবেন।”—দানিয়েল ১২:১.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

৮:৯—‘দেশরত্ন’ দ্বারা কী চিত্রিত করা হয়? এক্ষেত্রে, ‘দেশরত্ন’ আ্যংলো-আমেরিকান যৌথ বিশ্বশক্তির সময়ে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের পার্থিব অবস্থাকে চিত্রিত করে।

৮:২৫—‘অধিপতিগণের অধিপতি’ কে? ইব্রীয় শব্দ সার, যেটাকে ‘অধিপতি’ বা অধ্যক্ষ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তার অর্থ মূলত “নেতা” বা “প্রধান ব্যক্তি।” ‘অধিপতিগণের অধিপতি’ উপাধিটি কেবলমাত্র যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি প্রযোজ্য, যিনি হলেন সেইসমস্ত স্বর্গদূত অধ্যক্ষদের নেতা, যাদের মধ্যে রয়েছেন “প্রধান অধ্যক্ষদের মধ্যে মীখায়েল নামক এক জন।”—দানিয়েল ১০:১৩.

৯:২১—কেন দানিয়েল গাব্রিয়েল দূতকে ‘ব্যক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করেন? এর কারণ হল গাব্রিয়েল তার কাছে মানুষের রূপ নিয়ে এসেছিলেন, যেভাবে তিনি আগের একটা দর্শনে দানিয়েলের কাছে আবির্ভূত হয়েছিলেন।—দানিয়েল ৮:১৫-১৭.

৯:২৭—বছরের হিসেবে ৭০তম সপ্তাহের শেষ বা সা.কা. ৩৬ সাল পর্যন্ত কোন নিয়ম বা চুক্তি “অনেকের সহিত দৃঢ়” বা কার্যকর ছিল? সা.কা. ৩৩ সালে যখন যিশুকে বিদ্ধ করা হয়েছিল, তখন ব্যবস্থা চুক্তি দূর করা হয়েছিল। কিন্তু, যিহোবা মাংসিক ইস্রায়েলের সঙ্গে করা অব্রাহামের চুক্তি সা.কা. ৩৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর রাখার মাধ্যমে, অব্রাহামের বংশধর হওয়ার কারণে যিহুদিদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ দেখানোর সময়কাল বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। অব্রাহামের চুক্তি ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ প্রতি এখনও কার্যকর রয়েছে।—গালাতীয় ৩:৭-৯, ১৪-১৮, ২৯; ৬:১৬.

আমাদের জন্য শিক্ষা:

৯:১-২৩; ১০:১১. নম্রতা, ঈশ্বরীয় ভক্তি, জ্ঞানার্জনের আগ্রহ ও প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকার কারণে দানিয়েল “অতিশয় প্রীতি-পাত্র” ছিলেন। এ ছাড়া, এই গুণাবলি তাকে তার জীবনের শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছিল। আসুন আমরা দানিয়েলের উদাহরণ অনুসরণ করার জন্য দৃঢ়প্রত্যয়ী হই।

৯:১৭-১৯. এমনকি যখন আমরা ঈশ্বরের সেই নতুন পৃথিবী আসার জন্য প্রার্থনা করি, যার মধ্যে “ধার্ম্মিকতা বসতি করে,” তখনও কি আমাদের ব্যক্তিগত দুঃখকষ্ট ও সমস্যাগুলো শেষ করার পরিবর্তে যিহোবার নামের পবিত্রীকরণ এবং তাঁর সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা প্রতিপাদন করা আমাদের জন্য প্রধান চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত নয়?—২ পিতর ৩:১৩.

১০:৯-১১, ১৮, ১৯. দানিয়েলের কাছে যে-স্বর্গদূত এসেছিলেন, তাকে অনুকরণ করে আমাদেরও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে এবং সান্ত্বনার বাক্য বলার দ্বারা একে অন্যকে উৎসাহিত ও শক্তিশালী করা উচিত।

১২:৩. শেষকালে “যাহারা বুদ্ধিমান্‌”—অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা—তারা ‘জ্যোতির্গণের ন্যায় প্রকাশ পাইতেছে’ এবং “অনেককে ধার্ম্মিকতার প্রতি” ফিরাচ্ছে, যার অন্তর্ভুক্ত ‘আরও মেষের’ “বিস্তর লোক।” (ফিলিপীয় ২:১৫; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; যোহন ১০:১৬) খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের সময়ে অভিষিক্তরা পূর্ণ অর্থে ‘তারাগণের ন্যায় দেদীপ্যমান’ হবে, যখন তারা পৃথিবীর বাধ্য মানবজাতির ওপর মুক্তির মূল্যের পূর্ণ উপকারগুলো প্রয়োগ করায় খ্রিস্টের সঙ্গে অংশ নেবে। অভিষিক্তদের প্রতি ‘আরও মেষের’ অনুগতভাবে লেগে থাকা উচিত, সমস্ত উপায়ে তাদেরকে পূর্ণহৃদয়ে সমর্থন করা উচিত।

যিহোবা ‘তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করেন, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে’

আমরা যে-ঈশ্বরের উপাসনা করি, তাঁর সম্বন্ধে দানিয়েলের বই আমাদের কী শিক্ষা দেয়? এই বইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বিবেচনা করুন—যেগুলো ইতিমধ্যেই পরিপূর্ণ হয়েছে এবং যেগুলো পরিপূর্ণ হওয়া বাকি আছে। এগুলো যিহোবাকে তাঁর বাক্যের পরিপূর্ণতাকারী হিসেবে কত স্পষ্টভাবেই না বর্ণনা করে!—যিশাইয় ৫৫:১১.

দানিয়েল বইয়ের বিবরণ আমাদেরকে ঈশ্বর সম্বন্ধে কী দেখায়? যে-চারজন ইব্রীয় তরুণ বাবিলীয় রাজপ্রাসাদের জীবনে সম্পৃক্ত হওয়া প্রত্যাখ্যান করেছিল, তারা ‘জ্ঞান, পারদর্শিতা ও বিদ্যা’ লাভ করেছিল। (দানিয়েল ১:১৭) সত্য ঈশ্বর তাঁর দূত পাঠিয়েছিলেন এবং শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌নগোকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড থেকে উদ্ধার করেছিলেন। দানিয়েলকে সিংহের গর্ত থেকে রক্ষা করা হয়েছিল। যিহোবা ‘তাহাদের সহায় ও তাহাদের ঢাল, যাহারা তাঁহার ওপর নির্ভর করে,’ এবং ‘তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করেন, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে।’—গীতসংহিতা ১১৫:৯, ১৩.

[পাদটীকা]

^ দানিয়েলের বইয়ের প্রতিটা পদ বিবেচনার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীতে মনোযোগ দিন! (ইংরেজি) বইটি দেখুন।

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

কেন দানিয়েল “অতিশয় প্রীতি-পাত্র” ছিলেন?