সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বাবামারা—আপনাদের সন্তানদের প্রেমের সঙ্গে প্রশিক্ষণ দিন

বাবামারা—আপনাদের সন্তানদের প্রেমের সঙ্গে প্রশিক্ষণ দিন

বাবামারা—আপনাদের সন্তানদের প্রেমের সঙ্গে প্রশিক্ষণ দিন

“তোমাদের সকল কার্য্য প্রেমে হউক।”—১ করিন্থীয় ১৬:১৪.

১. একটা সন্তানের জন্মের ফলে বাবামাদের কোন ধরনের অনুভূতি হয়ে থাকে?

 অধিকাংশ বাবামাই এই বিষয়ে একমত হবে যে, জীবনের সবচেয়ে আনন্দদায়ক ঘটনাগুলোর মধ্যে একটা হতে পারে, সন্তানের জন্মগ্রহণ। “আমি যখন প্রথম আমার নবজাত মেয়ের দিকে তাকিয়েছিলাম, তখন সেটা ছিল এক অপূর্ব অনুভূতি,” আলিয়া নামে একজন মা বলেন। “আমার মনে হয়েছিল যে, সে-ই ছিল আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর শিশু।” কিন্তু, এইরকম এক আনন্দঘন মুহূর্ত বাবামার উদ্বিগ্নতার কারণও হতে পারে। “আমার দুশ্চিন্তা ছিল যে,” আলিয়ার স্বামী বলেন, “আমি আমার মেয়েকে জীবনের পরীক্ষাগুলোর জন্য সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে পারব কি না।” অনেক বাবামার একইরকম দুশ্চিন্তা রয়েছে আর তারা এও বুঝতে পারে যে, তাদের সন্তানদের প্রেমের সঙ্গে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু খ্রিস্টান বাবামারা, যারা এই ধরনের প্রেমময় প্রশিক্ষণ দিতে চায়, তারা বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়। এগুলোর মধ্যে কয়েকটা কী?

২. বাবামারা কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়?

আমরা এখন এই বিধিব্যবস্থার শেষকালের একেবারে শেষ সময়ে বাস করছি। ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী সমাজের সর্বত্র ভালবাসাহীন এক মনোভাব দেখা যায়। এমনকি পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও লোকেরা “স্নেহরহিত” মনোভাব প্রদর্শন করে এবং “অকৃতজ্ঞ, অসাধু, . . . অজিতেন্দ্রিয়, প্রচণ্ড” হয়ে পড়েছে। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) যে-লোকেরা এই ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে, রোজ তাদের সংস্পর্শে আসা, খ্রিস্টান পরিবারগুলো পরস্পরের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করে, তাতে প্রভাব ফেলতে পারে। অধিকন্তু, বাবামারা জিতেন্দ্রিয়তা বা আত্মসংযম হারানো, অজান্তে আঘাত দেওয়ার মতো কিছু বলে ফেলা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিচক্ষণতা ব্যবহার না করার মতো সহজাত প্রবণতাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে।—রোমীয় ৩:২৩; যাকোব ৩:২, ৮, ৯.

৩. কীভাবে বাবামারা সন্তানদের সুখী সন্তান হিসেবে মানুষ করে তুলতে পারে?

এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো সত্ত্বেও, বাবামারা তাদের সন্তানদের সুখী ও আধ্যাত্মিকভাবে সবল সন্তান হিসেবে মানুষ করে তুলতে পারে। কীভাবে? বাইবেলের এই উপদেশ পালন করার মাধ্যমে: “তোমাদের সকল কার্য্য প্রেমে হউক।” (১ করিন্থীয় ১৬:১৪) বস্তুতপক্ষে, প্রেম হল “সিদ্ধির যোগবন্ধন।” (কলসীয় ৩:১৪) আসুন আমরা করিন্থীয়দের প্রতি লেখা তার প্রথম চিঠিতে প্রেরিত পৌলের দ্বারা বর্ণিত প্রেমের তিনটে দিক পরীক্ষা করি এবং নির্দিষ্ট কিছু উপায় আলোচনা করি, যেখানে বাবামারা তাদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় এই গুণটি কাজে লাগাতে পারে।—১ করিন্থীয় ১৩:৪-৮.

দীর্ঘসহিষ্ণু হওয়ার প্রয়োজনীয়তা

৪. কেন বাবামাদের দীর্ঘসহিষ্ণু হতে হবে?

পৌল লিখেছিলেন: “প্রেম চিরসহিষ্ণু।” (১ করিন্থীয় ১৩:৪) যে-গ্রিক অভিব্যক্তিটিকে “চিরসহিষ্ণু” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটি ধৈর্যকে ও ক্রোধে ধীর হওয়াকে নির্দেশ করে। কেন বাবামাদের দীর্ঘসহিষ্ণু হতে হবে? কোনো সন্দেহ নেই যে, অধিকাংশ বাবামাই অনেক কারণ সম্বন্ধে চিন্তা করতে পারে। কিন্তু, মাত্র কয়েকটা কারণ সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। সন্তানরা যে-জিনিসটা চায়, সেটার জন্য সাধারণত বার বার আবদার করতে থাকে। এমনকি বাবা অথবা মা যদি দৃঢ়ভাবে না-ও বলে, তবুও সন্তান হয়তো এই আশা করে বার বার চাইতে পারে যে, বাবামা হয়তো হ্যাঁ বলবে। কিশোর-কিশোরীরা হয়তো কোনোকিছু করার অনুমতি পাওয়ার জন্য অনেক যুক্তি তুলে ধরতে পারে, যেটা করলে বাবামা জানে যে, সেটা অজ্ঞানতার কাজ হবে। (হিতোপদেশ ২২:১৫) আর আমাদের সবার মতো, সন্তানদেরও বার বার একই ভুল করার প্রবণতা রয়েছে।—গীতসংহিতা ১৩০:৩.

৫. কী বাবামাদেরকে দীর্ঘসহিষ্ণু হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে?

কী বাবামাদেরকে তাদের সন্তানদের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু ও ধৈর্যশীল হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে? রাজা শলোমন লিখেছিলেন: “মানুষের বুদ্ধি তাহাকে ক্রোধে ধীর করে।” (হিতোপদেশ ১৯:১১) বাবামারা এই বিষয়টা স্মরণ করার মাধ্যমে তাদের সন্তানদের আচরণ বুঝতে পারে যে, একসময় তারাও ‘শিশুর ন্যায় কথা কহিত, শিশুর ন্যায় চিন্তা করিত, শিশুর ন্যায় বিচার করিত।’ (১ করিন্থীয় ১৩:১১) বাবামারা, আপনারা কি একটা ছেলেমানুষি আবদার পূরণের জন্য আপনার মা অথবা বাবাকে বিরক্ত করার কথা স্মরণ করতে পারেন? একজন কিশোর বা কিশোরী হিসেবে, আপনাদের কি কখনো মনে হয়েছিল যে, আপনাদের বাবামা আপনাদের অনুভূতি অথবা সমস্যাগুলো একেবারেই বোঝে না? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তা হলে সম্ভবত আপনি উপলব্ধি করতে পারেন যে, কেন আপনার সন্তানরা এভাবে আচরণ করে আর কেন তাদের ক্রমাগত, ধৈর্য সহকারে আপনার সিদ্ধান্তগুলো মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। (কলসীয় ৪:৬) এটা উল্লেখযোগ্য যে, যিহোবা ইস্রায়েলীয় বাবামাদের বলেছিলেন যেন তারা তাদের ছোট সন্তানদেরকে তাঁর আইনগুলো ‘যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দেয়।’ (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭) যে-ইব্রীয় শব্দকে ‘যত্নপূর্বক শিক্ষা দেওয়া’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটির অর্থ হল “পুনরাবৃত্তি করা,” “বার বার বলা,” “ছাপ ফেলা।” এটা ইঙ্গিত দেয় যে, একটা সন্তান ঈশ্বরের আইনগুলো কাজে লাগাতে শেখার আগে পর্যন্ত বাবামাকে হয়তো অনেকবার পুনরাবৃত্তি করতে হবে। জীবনে অন্যান্য শিক্ষা সম্বন্ধে শেখানোর জন্য প্রায়ই একইরকম পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন হয়ে থাকে।

৬. কেন একজন দীর্ঘসহিষ্ণু বাবা অথবা মা প্রশ্রয়ী নন?

কিন্তু, একজন দীর্ঘসহিষ্ণু বাবা অথবা মা, প্রশ্রয়ী নন। ঈশ্বরের বাক্য সাবধান করে: “অশাসিত বালক মাতার লজ্জাজনক।” এইরকম পরিণতি রোধ করার জন্য সেই একই প্রবাদ বলে: “দণ্ড ও অনুযোগ প্রজ্ঞা দেয়।” (হিতোপদেশ ২৯:১৫) মাঝে মাঝে, সন্তানরা হয়তো তাদেরকে সংশোধন করার বিষয়ে বাবামার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। কিন্তু, খ্রিস্টীয় পরিবারগুলোকে কোনো গণতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালিত হওয়া উচিত নয়, যেমন নিয়মনীতি কার্যকর করার বিষয়ে বাবামার অধিকার কিছুটা সন্তানদের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করে। এর পরিবর্তে, পরিবারের সর্বোচ্চ মস্তক যিহোবা বাবামাকে তাদের সন্তানদের প্রেমের সঙ্গে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ও শাসন করার কর্তৃত্ব দিয়েছেন। (১ করিন্থীয় ১১:৩; ইফিষীয় ৩:১৪, ১৫; ৬:১-৩, ৪, NW) বস্তুতপক্ষে, শাসন করা পৌলের দ্বারা উল্লেখিত প্রেমের পরবর্তী দিকটার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

যেভাবে প্রেম সহকারে শাসন করা যায়

৭. কেন সদয় বাবামারা তাদের সন্তানদের শাসন করবে আর এই ধরনের শাসনের অন্তর্ভুক্ত কী?

পৌল লিখেছিলেন যে, “প্রেম মধুর” বা সদয়। (১ করিন্থীয় ১৩:৪) যে-বাবামারা প্রকৃতই সদয়, তারা তাদের সন্তানদের সংগতিপূর্ণ উপায়ে শাসন করবে। তা করার মাধ্যমে তারা যিহোবাকে অনুকরণ করে। “প্রভু [“যিহোবা,” NW] যাহাকে প্রেম করেন, তাহাকেই শাসন করেন,” পৌল লিখেছিলেন। দয়া করে লক্ষ করুন যে, বাইবেলে যে-ধরনের শাসনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, তা কেবল শাস্তিকে বোঝায় না। এটা প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা দেওয়াকেও নির্দেশ করে। এই ধরনের শাসনের উদ্দেশ্য কী? পৌল লেখেন, “তদ্দ্বারা যাহাদের অভ্যাস জন্মিয়াছে,” বা যারা প্রশিক্ষিত হয়েছে, “তাহা পরে তাহাদিগকে ধার্ম্মিকতার শান্তিযুক্ত ফল প্রদান করে।” (ইব্রীয় ১২:৬, ১১) বাবামারা যখন ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের সন্তানদের সদয়ভাবে শিক্ষা দেয়, তখন তারা তাদেরকে শান্তিপ্রবণ, ন্যায়নিষ্ঠ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হয়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়। সন্তানরা যদি “সদাপ্রভুর শাসন” গ্রহণ করে, তা হলে তারা প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও বুদ্ধি বা বিচক্ষণতা—রুপো অথবা সোনার চেয়েও মূল্যবান সম্পদ—লাভ করে।—হিতোপদেশ ৩:১১-১৮.

৮. বাবামারা যখন তাদের সন্তানদের শাসন করতে ব্যর্থ হয়, তখন সাধারণত এর ফল কী হয়?

অন্যদিকে, বাবামারা যখন তাদের সন্তানদের শাসন করতে ব্যর্থ হয়, তখন তা দয়া দেখানো হয় না। যিহোবা শলোমনকে এই কথা লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন: “যে দণ্ড না দেয়, সে পুত্ত্রকে দ্বেষ করে; কিন্তু যে তাহাকে প্রেম করে, সে সযত্নে শাস্তি দেয়।” (হিতোপদেশ ১৩:২৪) যে-সন্তানরা সংগতিপূর্ণ শাস্তি বা শাসন ছাড়া মানুষ হয়ে ওঠে, তারা সম্ভবত আত্মকেন্দ্রিক এবং অসুখী হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, যে-বাবামারা সহানুভূতিশীল অথচ দৃঢ় সীমা বজায় রাখে, তাদের সন্তানদেরকে উত্তম ছাত্র-ছাত্রী, আরও বেশি সামাজিক এবং সাধারণত সুখী হতে দেখা গিয়েছে। তা হলে, নিশ্চিতভাবেই যে-বাবামারা তাদের সন্তানদের শাসন করে, তারা সন্তানদের প্রতি সদয় হয়।

৯. খ্রিস্টান বাবামারা তাদের সন্তানদের কী শিক্ষা দেয় এবং এই চাহিদাগুলোকে কীভাবে দেখা উচিত?

সন্তানদের সদয় ও প্রেমপূর্ণ উপায়ে শাসন করার সঙ্গে কী জড়িত? সন্তানদের কাছ থেকে কী চাওয়া হয়, তা বাবামাদের স্পষ্টভাবে আলোচনা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, খ্রিস্টান বাবামার সন্তানদেরকে একেবারে ছোট থাকতেই বাইবেলের মৌলিক নীতিগুলো ও সেইসঙ্গে সত্য উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন দিকে অংশগ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া হয়। (যাত্রাপুস্তক ২০:১২-১৭; মথি ২২:৩৭-৪০; ২৮:১৯; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) সন্তানদের জানতে হবে যে, এই চাহিদাগুলো অপরিবর্তনীয়।

১০, ১১. কেন বাবামারা হয়তো ঘরের নিয়মনীতি তৈরি করার সময় সন্তানদের অনুরোধগুলোর প্রতি বিবেচনা দেখাতে পারে?

১০ তবে, কখনো কখনো বাবামারা হয়তো ঘরের নিয়মনীতি তৈরি করার সময় তাদের সন্তানদেরও আলোচনায় যুক্ত করতে চাইবে। অল্পবয়স্করা যদি সেই নিয়মনীতি সংক্রান্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে সমর্থ হয়, তা হলে তারা হয়তো সেগুলো আরও বেশি মেনে নিতে চাইবে। উদাহরণস্বরূপ, সন্তানদের কোন সময়ের মধ্যে ঘরে ফিরে আসতে হবে, সেই বিষয়ে বাবামাদের যদি সময় নির্ধারণ করতে হয়, তা হলে তারা এমন একটা নির্দিষ্ট সময় বেছে নিতে পারে, যে-সময়টাতে সন্তানরা ঘরে ফিরে আসুক বলে বাবামা চায়। অথবা এর বিকল্প হিসেবে তারা হয়তো তাদের সন্তানদেরকে বলার সুযোগ দিতে পারে যে, তারা কোন সময়টা বেছে নিতে চায় আর এর পিছনে কারণগুলো কী। এরপর বাবামা হয়তো নিজেদের পছন্দের সময় সম্বন্ধে বলতে পারে ও ব্যাখ্যা করতে পারে যে, কেন তারা সেই সময়টাকে উপযুক্ত বলে মনে করে। যদি মতের অমিল দেখা দেয় আর খুব সম্ভবত দেখা দেবেই, তা হলে কী? কিছু কিছু ক্ষেত্রে, বাবামারা হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে, বাইবেলের নীতিগুলো লঙ্ঘন করা না হলে তাদের সন্তানদের ইচ্ছাগুলো মেনে নেওয়া সম্ভবপর হতে পারে। এর অর্থ কি এই যে, বাবামারা তাদের কর্তৃত্ব ত্যাগ করছে অথবা ছেড়ে দিচ্ছে?

১১ সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য, লোট ও তার পরিবারের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে যিহোবা যে-প্রেমপূর্ণ উপায়ে তাঁর কর্তৃত্ব ব্যবহার করেছেন, তা বিবেচনা করুন। লোট, তার স্ত্রী ও তার মেয়েদের সদোম থেকে বের করে নিয়ে আসার পর, স্বর্গদূতেরা তাদেরকে বলেছিল: “পর্ব্বতে পলায়ন কর, পাছে বিনষ্ট হও।” কিন্তু, লোট উত্তর দিয়েছিলেন: “হে আমার প্রভো [সদাপ্রভু], এমন না হউক।” এরপর লোট একটা বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন: “দেখুন, পলায়ন জন্য ঐ নগর নিকটবর্ত্তী, উহা ক্ষুদ্র; ওখানে পলাইবার অনুমতি দিউন, তাহা হইলে আমার প্রাণ বাঁচিবে; উহা কি ক্ষুদ্র নয়?” যিহোবা কী উত্তর দিয়েছিলেন? ‘ভাল, আমি এ বিষয়েও তোমার প্রতি অনুগ্রহ করিব,’ তিনি বলেছিলেন। (আদিপুস্তক ১৯:১৭-২২) যিহোবা কি তাঁর কর্তৃত্ব ত্যাগ করেছিলেন? কখনোই না! কিন্তু, তিনি লোটের অনুরোধের প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন এবং এই বিষয়ে তার প্রতি অতিরিক্ত দয়া দেখানো বেছে নিয়েছিলেন। আপনি যদি একজন বাবা অথবা মা হয়ে থাকেন, তা হলে পারিবারিক নিয়মনীতি স্থাপন করার সময় এমন সুযোগগুলো কি আসে, যখন আপনি আপনার সন্তানদের অনুরোধগুলোর প্রতি বিবেচনা দেখাতে পারেন?

১২. কী একজন সন্তানকে নিরাপদ বোধ করতে সাহায্য করবে?

১২ অবশ্য, সন্তানদের কেবল নিয়মনীতি সম্বন্ধেই নয় বরং সেইসঙ্গে সেগুলো ভঙ্গ করার শাস্তি সম্বন্ধেও জানতে হবে। শাস্তি নিয়ে আলোচনা করার ও তা বোঝার পরই, নিয়মনীতি কার্যকর করতে হবে। বাবামারা যদি সর্বদা তাদের সন্তানদেরকে কোনো একটা উপযুক্ত শাস্তি সম্বন্ধে সতর্ক করেন অথচ তা কার্যকর করতে ব্যর্থ হন, তা হলে তারা সদয় হচ্ছে না। “দুষ্কর্ম্মের দণ্ডাজ্ঞা ত্বরায় সিদ্ধ হয় না, এই কারণ মনুষ্যসন্তানদের অন্তঃকরণ দুষ্কর্ম্ম করিতে সম্পূর্ণরূপে রত হয়,” বাইবেল বলে। (উপদেশক ৮:১১) তবে এটা ঠিক যে, একজন বাবা অথবা মা হয়তো কোনো সন্তানকে জনসমক্ষে বা তার সমবয়সিদের সামনে শাস্তি দেওয়া থেকে বিরত হতে পারেন, যেন সেই অল্পবয়স্ক সন্তান লজ্জায় না পড়ে। কিন্তু, সন্তানরা যখন জানে যে, তাদের বাবা অথবা মায়ের “হাঁ” মানে হ্যাঁ, আর তাদের “না” মানে না—এমনকি এর সঙ্গে শাস্তি জড়িত থাকলেও—তখন তারা আরও বেশি নিরাপদ বোধ করে ও সেইসঙ্গে তাদের বাবামার প্রতি আরও বেশি সম্মান ও ভালবাসা গড়ে তোলে।—মথি ৫:৩৭.

১৩, ১৪. কীভাবে বাবামারা তাদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারে?

১৩ সদয়ভাবে শাস্তি দিতে হলে, শাস্তি ও এর ধরনকে সন্তানের উপযোগী হতে হবে। “শাসনের ক্ষেত্রে আমাদের দুই সন্তানের ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা ছিল,” প্যাম স্মরণ করে বলেন। “একটা সন্তানের জন্য যেটা কার্যকারী ছিল, অন্য সন্তানের জন্য সেটা ছিল না।” তার স্বামী ল্যারি ব্যাখ্যা করেন: “আমাদের বড় মেয়ে একরোখা ছিল এবং তাকে কেবল কড়া শাসন করলেই কাজ হতো। কিন্তু, আমাদের ছোট মেয়েকে বকুনি দিলেই আর এমনকি তার দিকে চোখ গরম করে তাকালেই কাজ হতো।” বস্তুতপক্ষে, সদয় বাবামারা এটা বোঝার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যে, তাদের প্রত্যেক সন্তানের জন্য কোন শাসন সবচেয়ে বেশি কার্যকারী।

১৪ যিহোবা এই অর্থে বাবামার জন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন যে, তিনি তাঁর প্রত্যেক দাসের শক্তি ও দুর্বলতাগুলো জানেন। (ইব্রীয় ৪:১৩) অধিকন্তু, শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে যিহোবা খুব বেশি কড়া অথবা অতিরিক্ত প্রশ্রয়ী নন। বরং, তিনি সবসময় তাঁর লোকেদের “বিচারানুরূপ” শাসন করেন। (যিরমিয় ৩০:১১) বাবামারা, আপনারা কি আপনাদের সন্তানদের শক্তি ও দুর্বলতাগুলো জানেন? তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় আপনারা কি সেই জ্ঞানকে ইতিবাচক ও সদয় উপায়ে ব্যবহার করতে সমর্থ? যদি তা-ই হয়, তা হলে আপনারা প্রমাণ দিচ্ছেন যে, আপনারা আপনাদের সন্তানদের ভালবাসেন।

অকপটভাবে ভাববিনিময় করার জন্য উৎসাহিত করুন

১৫, ১৬. কীভাবে বাবামারা তাদের সন্তানদের অকপটভাবে কথা বলার জন্য উৎসাহিত করতে পারে আর এই ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতিকে খ্রিস্টান বাবামারা কার্যকারী বলে দেখেছে?

১৫ প্রেমের আরেকটা দিক হল, প্রেম “অধার্ম্মিকতায় আনন্দ করে না, কিন্তু সত্যের সহিত আনন্দ করে।” (১ করিন্থীয় ১৩:৬) কীভাবে বাবামারা তাদের সন্তানদেরকে যা সঠিক ও সত্য, তা ভালবাসার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে পারে? একটা অপরিহার্য উপায় হল, তাদের সন্তানদের অনুভূতি অকপটভাবে প্রকাশ করার জন্য তাদেরকে উৎসাহিত করা, এমনকি সন্তানরা যা বলে থাকে সেগুলো মেনে নেওয়া যদি বাবামার পক্ষে কঠিনও হয়ে থাকে। এটা ঠিক যে, সন্তানরা যখন ধার্মিক মান অনুযায়ী তাদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি প্রকাশ করে থাকে, তখন বাবামারা আনন্দিত হয়। কিন্তু, অন্যান্য সময় একটা সন্তানের আন্তরিক মন্তব্য হয়তো অধার্মিকতার প্রতি প্রবণতাকে প্রকাশ করতে পারে। (আদিপুস্তক ৮:২১) বাবামাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? তাদের প্রাথমিক প্রবণতা হতে পারে, এই ধরনের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করার জন্য সন্তানদের সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করা। বাবামারা যদি এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান, তা হলে শীঘ্রই সন্তানরা হয়তো কেবল সেই কথাগুলোই বলতে শিখবে, যেগুলো বাবামারা শুনতে চায় বলে তারা মনে করে। অবশ্য, অসম্মানজনক কথাবার্তা বললে শীঘ্রই তা সংশোধন করে দেওয়া উচিত কিন্তু কীভাবে ভদ্রতার সঙ্গে ভাববিনিময় করতে হয়, সেই বিষয়ে সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তারা কী বলবে, সেই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

১৬ কীভাবে বাবামারা অকপটভাবে ভাববিনিময় করার জন্য উৎসাহিত করতে পারে? আগে উল্লেখিত আলিয়া বলেন: “আমাদের সন্তানরা যখন এমন কিছু বলে, যা শুনে আমরা বিরক্ত হই, তখন অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া না দেখানোর প্রচেষ্টা করে আমরা খোলাখুলি ভাববিনিময়ের এক পরিবেশ তৈরি করেছি।” টম নামে একজন বাবা বলেন: “আমরা আমাদের মেয়েকে তার মনের কথা খুলে বলতে উৎসাহিত করেছি, এমনকি সেই সময়েও যখন সে আমাদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে একমত ছিল না। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমরা যদি সবসময় তার কথার মাঝখানে বাধা দিই এবং নিজেদের খুশিমতো আমাদের ইচ্ছাকে তার ওপর চাপিয়ে দিই, তা হলে সে হতাশ হয়ে পড়বে এবং তার হৃদয়ে আসলে কী আছে, তা না বলতে শিখবে। অন্যদিকে, তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলে সে-ও আমাদের কথা শুনতে উৎসাহিত হয়।” নিশ্চিতভাবেই, সন্তানদের তাদের বাবামার বাধ্য হওয়া উচিত। (হিতোপদেশ ৬:২০) কিন্তু, খোলাখুলি ভাববিনিময় বাবামাদেরকে তাদের সন্তানদের মধ্যে যুক্তি করার ক্ষমতা গড়ে তোলার সুযোগ করে দেয়। চার মেয়ের বাবা ভিনসেন্ট বলেন: “প্রায়ই আমরা একটা পরিস্থিতির ভাল দিক ও খারাপ দিক নিয়ে কথা বলতাম, যাতে আমাদের সন্তানরা নিজেরাই বুঝতে পারে যে, কোনটা সবচেয়ে উত্তম ফল নিয়ে আসতে পারে। এটা তাদেরকে পরিণামদর্শিতা বা চিন্তা করার ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।”—হিতোপদেশ ১:১-৪.

১৭. বাবামারা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারে?

১৭ অবশ্য, কোনো বাবা অথবা মা-ই সন্তান মানুষ করে তোলার ক্ষেত্রে বাইবেলের নীতিগুলো একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কাজে লাগাতে পারে না। তা সত্ত্বেও, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, আপনার সন্তানরা তাদেরকে দীর্ঘসহিষ্ণুতা সহকারে, সদয়ভাবে ও প্রেমময় উপায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে আপনার প্রচেষ্টার জন্য অনেক কৃতজ্ঞ হবে। আর আপনার এই প্রচেষ্টাকে যিহোবা নিশ্চিতভাবে আশীর্বাদ করবেন। (হিতোপদেশ ৩:৩৩) মূলত, সমস্ত খ্রিস্টান বাবামা চায় যেন তাদের সন্তানরা যিহোবাকে ঠিক ততটাই ভালবাসতে শেখে, যতটা তারা নিজেরা ভালবাসে। কীভাবে বাবামারা এই মহৎ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে? পরের প্রবন্ধে নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কীভাবে বিচক্ষণতা দেখানো একজন বাবা অথবা মাকে দীর্ঘসহিষ্ণু হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে?

• কীভাবে দয়া ও শাসন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত?

• কেন বাবামা ও সন্তানদের মধ্যে অকপট ভাববিনিময় অতীব গুরুত্বপূর্ণ?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বাবামারা, আপনারা কি স্মরণ করতে পারেন যে, একটা সন্তান হিসেবে আপনারা কেমন অনুভব করতেন?

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনারা কি আপনাদের সন্তানদের অকপট ও খোলাখুলিভাবে ভাববিনিময় করার জন্য উৎসাহিত করেন?