সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

 যিশু কী বুঝিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন যে, তাঁর বিশ্বস্ত দাস “বুদ্ধিমান্‌” হবে?

যিশু এই প্রশ্নটা উত্থাপন করেছিলেন: “সেই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস কে, যাহাকে তাহার প্রভু নিজ পরিজনের উপরে নিযুক্ত করিয়াছেন, যেন সে তাহাদিগকে উপযুক্ত সময়ে খাদ্য দেয়?” (মথি ২৪:৪৫) আধ্যাত্মিক খাদ্য সরবরাহকারী সেই “দাস” হল আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মণ্ডলী। কেন যিশু তাদেরকে বুদ্ধিমান বলেছিলেন? *

স্বয়ং যিশুর শিক্ষা থেকে আমরা সবচেয়ে ভালভাবে বুঝতে পারি যে, “বুদ্ধিমান্‌” শব্দটির দ্বারা তিনি হয়তো কী বোঝাতে চেয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” সম্বন্ধে বলার সময়, যিশু দশজন কুমারীর নীতিগল্প বলেছিলেন, যারা বরের আগমনের অপেক্ষা করছিল। সেই কুমারীরা আমাদেরকে ১৯১৪ সালের আগে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের কথা মনে করিয়ে দেয়, যারা সাগ্রহে মহান বর, যিশু খ্রিস্টের আগমনের অপেক্ষা করছিল। বর যখন এসে পৌঁছান, সেই সময়ে দশজন কুমারীর মধ্যে পাঁচজনের কাছে যথেষ্ট তেল ছিল না আর তাই তারা বিবাহভোজে যোগ দিতে পারেনি। অন্য পাঁচজন সুবুদ্ধি বলে প্রমাণিত হয়েছিল। তারা যথেষ্ট পরিমাণ তেল সঙ্গে এনেছিল, যার ফলে যখন বর এসেছিলেন তখন তারা ক্রমাগত আলো জ্বালিয়ে রাখতে পেরেছিল আর তাদেরকে বিবাহভোজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।—মথি ২৫:১০-১২.

১৯১৪ সালে যিশু যখন রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছিলেন, তখন অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মধ্যে অনেকে তখনই যিশুর সঙ্গে স্বর্গে যাওয়ার আশা করেছিল। কিন্তু, পৃথিবীতে তাদের করার মতো অনেক কাজ ছিল এবং কেউ কেউ তা করার মতো প্রস্তুত ছিল না। সেই নির্বুদ্ধি কুমারীদের মতো, তারা নিজেদেরকে আগে থেকেই আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করেনি আর তাই তারা জ্যোতির্বাহক হিসেবে কাজ করে চলতে অপ্রস্তুত ছিল। কিন্তু, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই বুদ্ধির সঙ্গে—প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শিতা সহকারে—কাজ করেছিল এবং আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী ছিল। তারা যখন বুঝতে পেরেছিল যে, সামনে আরও অনেক কাজ করার আছে, তখন তারা আনন্দের সঙ্গে তা করতে শুরু করেছিল। তাই, তারা “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” বলে প্রমাণিত হয়েছিল।

এ ছাড়া, মথি ৭:২৪ পদে যিশুর ব্যবহৃত “বুদ্ধিমান্‌” শব্দটির বিষয়ও বিবেচনা করুন। যিশু বলেছিলেন: “যে কেহ আমার এই সকল বাক্য শুনিয়া পালন করে, তাহাকে এমন এক জন বুদ্ধিমান লোকের তুল্য বলিতে হইবে, যে পাষাণের উপরে আপন গৃহ নির্ম্মাণ করিল।” একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি, ঝড়ের সম্ভাবনার কথা মনে রেখে মজবুত গৃহ নির্মাণ করেন। এর বিপরীতে, একজন নির্বোধ ব্যক্তি বালির ওপর গৃহ নির্মাণ করেন ও তা নষ্ট হয়ে যায়। তাই, যিশুর একজন বুদ্ধিমান অনুসারী হলেন তিনি, যিনি মানব প্রজ্ঞা অনুসরণ করার মন্দ পরিণতিগুলোকে আগে থেকে বুঝতে পারেন। তার বিচক্ষণতা এবং উত্তম বিচারবোধ তাকে যিশু যা যা শিখিয়েছিলেন, সেই বিষয়গুলোর ওপর তার বিশ্বাস, কাজকর্ম এবং শিক্ষাগুলোর দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলতে পরিচালিত করে। ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসও’ একইভাবে কাজ করে।

এ ছাড়া, ইব্রীয় শাস্ত্রের অনেক সংস্করণে অনুবাদিত “সুবুদ্ধি” শব্দটির ব্যবহারও লক্ষ করুন। উদাহরণস্বরূপ, ফরৌণ যোষেফকে মিশরে খাদ্য সরবরাহ করার ভার দিয়েছিলেন। তাঁর লোকেদের খাদ্য জোগানোর জন্য এটা ছিল যিহোবার ব্যবস্থা। কেন যোষেফকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল? ফরৌণ তাকে বলেছিলেন: “তোমার তুল্য সুবুদ্ধি ও জ্ঞানবান্‌ কেহই নাই।” (আদিপুস্তক ৪১:৩৩-৩৯; ৪৫:৫) একইভাবে বাইবেল বলে যে, অবীগল “সুবুদ্ধি” ছিলেন। তিনি যিহোবার অভিষিক্ত ব্যক্তি, দায়ূদ ও তার লোকেদের জন্য খাদ্য সরবরাহ করেছিলেন। (১ শমূয়েল ২৫:৩, ১১, ১৮) যোষেফ এবং অবীগলকে সুবুদ্ধি বলা যেতে পারে কারণ তারা ঈশ্বরের ইচ্ছাকে বুঝতে পেরেছিল এবং দূরদর্শিতা ও উত্তম বিচারবোধ অনুযায়ী কাজ করেছিল।

তাই, যিশু যখন বিশ্বস্ত দাসকে বুদ্ধিমান বলে বর্ণনা করেছিলেন, তখন তিনি ইঙ্গিত করেছিলেন যে, সেই দাস যাদেরকে প্রতিনিধিত্ব করবে, তারা বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা ও উত্তম বিচারবোধ প্রদর্শন করবে, কারণ তাদের বিশ্বাস, কাজকর্ম এবং শিক্ষাগুলোর ভিত্তি হচ্ছে ঈশ্বরের সত্যের বাক্য।

[পাদটীকা]

^ “বুদ্ধিমান্‌” শব্দটি হল গ্রিক শব্দ ফ্রোনিমস্‌ এর অনুবাদ। এম. আর. ভিনসেন্ট দ্বারা সম্পাদিত নূতন নিয়মের শব্দ বিশ্লেষণ (ইংরেজি) বইটি মন্তব্য করে যে, এই শব্দটি অধিকাংশ সময় ব্যবহারিক প্রজ্ঞা এবং বিচক্ষণতাকে নির্দেশ করে।