সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যোয়েল ও আমোষ বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

যোয়েল ও আমোষ বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

যিহোবার বাক্য জীবন্ত

যোয়েল ও আমোষ বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো

 নিজের সম্বন্ধে তিনি শুধু এটুকুই বলেন যে, তিনি ‘পথূয়েলের পুত্ত্র যোয়েল।’ (যোয়েল ১:১) তার নামের বইয়ে যোয়েল তার বার্তা ছাড়া অন্যান্য বিষয় সম্বন্ধে এত অল্পই বলেন যে, এমনকি তার ভবিষ্যদ্বাণীর সময় সম্বন্ধেও কেবলমাত্র অনুমান করা যেতে পারে আর তা হল, সা.কা.পূ. প্রায় ৮২০ সালে, উষিয় যিহূদার রাজা হওয়ার নয় বছর পরে। কেন যোয়েল নিজের সম্বন্ধে বলতে এতটা অনিচ্ছুক হন? সম্ভাব্য কারণটা হল যে, তিনি বার্তাবাহকের ওপর নয় বরং বার্তার ওপর জোর দিতে চান।

এ ছাড়া, উষিয়ের দিনে যিহূদার একজন অধিবাসী এবং “গোপালক ও ডুমুরফল সংগ্রাহক” আমোষকে একজন ভাববাদী হওয়ার জন্য নিযুক্ত করা হয়। (আমোষ ৭:১৪) যোয়েল, যিনি যিহূদায় ভবিষ্যদ্বাণী করেন, তার বিপরীতে আমোষকে উত্তরে ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যে পাঠানো হয়। সা.কা.পূ. প্রায় ৮০৪ সালে ভাববাদী যিহূদায় ফিরে আসার পরে সম্পূর্ণ হওয়া আমোষ বইটি এমন ভাষায় লিখিত, যা সরল কিন্তু সুস্পষ্ট।

“হায় হায়, কেমন দিন”—কেন?

(যোয়েল ১:১–৩:২১)

যোয়েল দর্শনে শূককীট, পঙ্গপাল ও ঘুর্ঘুরিয়ার আক্রমণ দেখতে পান। আক্রমণকারীদের “বলবতী এক মহাজাতি” ও ‘বীরগণ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (যোয়েল ১:৪; ২:২-৭) “হায় হায়, কেমন দিন,” যোয়েল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] দিন ত সন্নিকট; উহা সর্ব্বশক্তিমানের নিকট হইতে প্রলয়ের ন্যায় আসিতেছে।” (যোয়েল ১:১৫) যিহোবা সিয়োনের অধিবাসীদের পরামর্শ দেন: ‘তোমরা সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত আমার কাছে ফিরিয়া আইস।’ যদি তারা সেটা করে, তা হলে যিহোবা “আপন প্রজাদের প্রতি দয়া” করবেন এবং “উত্তর দেশীয় [সৈন্য]”—কীটপতঙ্গের আক্রমণ—দূর করবেন। তা সত্ত্বেও, তাঁর মহাদিন আসার আগে যিহোবা ‘মর্ত্ত্যমাত্রের উপরে [তাঁহার] আত্মা সেচন করিবেন’ এবং ‘আকাশে ও পৃথিবীতে অদ্ভুত লক্ষণ দেখাইবেন।’—যোয়েল ২:১২, ১৮-২০, ২৮-৩১.

জাতিগুলোকে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহ্বান করা হয়: “তোমরা আপন আপন লাঙ্গলের ফাল ভাঙ্গিয়া খড়্গ গড়, আপন আপন কাস্ত্যা ভাঙ্গিয়া বড়শা প্রস্তুত কর” আর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। তাদেরকে ‘যিহোশাফট-তলভূমিতে আসিবার’ আদেশ দেওয়া হয়, যেখানে তাদের বিচার ও ধ্বংস করা হবে। “কিন্তু যিহূদা চিরকাল . . . বসতিবিশিষ্ট থাকিবে।”—যোয়েল ৩:১০, ১২, ২০.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

১:১৫; ২:১, NW, ১১, NW, ৩১, NW; ৩:১৪, NW—“যিহোবার দিন” কী? যিহোবার দিন হচ্ছে তাঁর শত্রুদের ওপর যিহোবার বিচার সম্পাদন করার সময়, যা তাদের জন্য ধ্বংস কিন্তু সত্য উপাসকদের জন্য পরিত্রাণ নিয়ে আসবে। উদাহরণস্বরূপ, এই ধরনের একটা দিন বাস্তবিকই সা.কা.পূ. ৫৩৯ সালে প্রাচীন বাবিলের ওপর এসেছিল, যখন এটা মাদীয় ও পারসীকদের দ্বারা পরাজিত হয়েছিল। (যিশাইয় ১৩:১, ৬) “যিহোবার” আরেকটা “দিন” নিকটবর্তী, যখন তিনি ‘মহতী বাবিলের’—মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যের—ওপর ঐশিক বিচার সম্পাদন করবেন।—প্রকাশিত বাক্য ১৮:১-৪, ২১.

২:১-১০, ২৮—কীটপতঙ্গের আক্রমণ সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণী কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে? যোয়েল বইয়ে বর্ণিত যিহূদা দেশে এক ব্যাপক আকারের কীটপতঙ্গের আক্রমণ সম্বন্ধে বাইবেলে কোনো নথি নেই। তাই যোয়েল যে-আক্রমণের বর্ণনা করেন, তা স্পষ্টতই সা.কা. ৩৩ সালের সময় সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী, যখন যিহোবা খ্রিস্টের প্রাথমিক অনুসারীদের ওপর তাঁর আত্মা বর্ষণ করতে শুরু করেছিলেন এবং তারা সেই বার্তা প্রচার করতে শুরু করেছিল, যা মিথ্যা ধর্মীয় নেতাদের বিরক্ত করেছিল। (প্রেরিত ২:১, ১৪-২১; ৫:২৭-৩৩) আজকে একই ধরনের কাজে অংশ নেওয়া আমাদের জন্য এক বিশেষ সুযোগ।

২:৩২—‘সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে ডাকিবার’ অর্থ কী? ঈশ্বরের নামে ডাকার অর্থ হল সেই নাম জানা, সেই নামকে গভীরভাবে সম্মান করা এবং সেই নামের অধিকারীর প্রতি আস্থা রাখা ও নির্ভর করা।—রোমীয় ১০:১৩, NW, ১৪.

৩:১৪—‘দণ্ডাজ্ঞার তলভূমি’ কী? এটা হল ঈশ্বরের বিচার সম্পাদন করার জন্য এক প্রতীকী স্থান। যিহূদার রাজা যিহোশাফট, যার নামের অর্থ “যিহোবা বিচারক,” তার দিনে ঈশ্বর তাদের চারপাশের জাতিগুলোর সেনাবাহিনীকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে যিহূদাকে উদ্ধার করেছিলেন। তাই, এই স্থানকে ‘যিহোশাফট তলভূমিও’ বলা হয়। (যোয়েল ৩:২, ১২) আমাদের দিনে, এটা এক প্রতীকী স্থানকে চিত্রিত করে, যেখানে জাতিগুলোকে মদিরাকুণ্ডে দ্রাক্ষা চূর্ণ করার মতো চূর্ণ করা হবে।—প্রকাশিত বাক্য ১৯:১৫.

আমাদের জন্য শিক্ষা:

১:১৩, ১৪. পরিত্রাণের জন্য অকৃত্রিম অনুতাপ এবং যিহোবাকে সত্য ঈশ্বর হিসেবে স্বীকার করা অপরিহার্য।

২:১২, ১৩. অকৃত্রিম অনুতাপ অন্তর থেকে হতে হবে। এর সঙ্গে বাহ্যিক ‘বস্ত্র ছেঁড়া’ নয় বরং আভ্যন্তরীণ ‘আপন আপন অন্তঃকরণ চেরা’ জড়িত।

২:২৮-৩২. “যিহোবার মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিনে” কেবলমাত্র “সেই রক্ষা পাইবে,” যে “যিহোবার নামে ডাকিবে।” আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি যে, যিহোবা মর্তমাত্রের ওপরে তাঁর আত্মা সেচন করেন এবং যুবক ও বৃদ্ধ, নারী ও পুরুষকে ভবিষ্যদ্বাণী বলার কাজে অর্থাৎ “ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কর্ম্মের কথা” ঘোষণা করায় অংশ নিতে দেন! (প্রেরিত ২:১১) যিহোবার দিন যতই নিকটবর্তী হচ্ছে, ততই আমাদের কি ‘পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তি’ প্রকাশ করায় উপচে পড়া উচিত নয়?—২ পিতর ৩:১০-১২.

৩:৪-৮, ১৯. যোয়েল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, যিহূদার চারপাশের জাতিগুলোকে ঈশ্বরের মনোনীত লোকেদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করার কারণে নিকাশ দেওয়ার জন্য ডাকা হবে। সেই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর সত্যতাস্বরূপ, সোরের মূল ভূখণ্ড বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের দ্বারা ধ্বংস হয়েছিল। পরে দ্বীপটি যখন মহান আলেকজান্ডারের দ্বারা পরাজিত হয়, তখন এর হাজার হাজার সৈন্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছিল এবং ৩০,০০০ অধিবাসীকে দাসত্বে বিক্রি করা হয়েছিল। পলেষ্টীয়রাও আলেকজান্ডার ও তার উত্তরসূরিদের হাতে একইরকম আচরণ ভোগ করেছিল। সা.কা.পূ. চতুর্থ সালের মধ্যে ইদোম ধ্বংসস্থান হয়ে পড়ে ছিল। (মালাখি ১:৩) এই পরিপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণীগুলো, তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতাকারী হিসেবে যিহোবার প্রতি আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে। এ ছাড়া, সেগুলো দেখায় যে, সেই জাতিগুলোর সঙ্গে যিহোবা কীভাবে আচরণ করবেন, যারা আজকে তাঁর উপাসকদের তাড়না করে।

৩:১৬-২১. “আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী কম্পিত হইবে” এবং জাতিগুলো যিহোবার চরম বিচার ভোগ করবে। “কিন্তু সদাপ্রভু আপন প্রজাদের আশ্রয় . . . হইবেন,” তাদেরকে পরমদেশতুল্য পরিস্থিতির অধীনে জীবন দেবেন। এই দুষ্ট জগতের ওপর বিচার সম্পাদন করার জন্য তাঁর দিন যতই এগিয়ে আসছে, ততই কি আমাদের তাঁর নিকটবর্তী থাকতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত নয়?

“তুমি আপন ঈশ্বরের সহিত সাক্ষাৎ করিতে প্রস্তুত হও”

(আমোষ ১:১–৯:১৫)

ইস্রায়েলের চারপাশের শত্রু জাতিগুলোর জন্য এবং যিহূদা ও ইস্রায়েলের জন্য আমোষের কাছে বার্তা রয়েছে। ঈশ্বরের লোকেদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করার কারণে অরাম, পলেষ্টিয়া, সোর, ইদোম ও মোয়াবের জন্য ধ্বংস অপেক্ষা করছে। ‘সদাপ্রভুর ব্যবস্থা অগ্রাহ্য করিবার’ কারণে যিহূদার অধিবাসীরাও ধ্বংসের সারিতে রয়েছে। (আমোষ ২:৪) ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্য সম্বন্ধে কী বলা যায়? তার পাপের মধ্যে রয়েছে দরিদ্রদের প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতন, অনৈতিকতা ও ঈশ্বরের ভাববাদীদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ। আমোষ সতর্ক করেন যে, যিহোবা ‘বৈথেলস্থ যজ্ঞবেদি সকলের প্রতিফল দিবেন’ এবং ‘শীতকালের গৃহকে ও গ্রীষ্মকালের গৃহকে আঘাত করিবেন।’—আমোষ ৩:১৪, ১৫.

যদিও ইতিমধ্যেই বিভিন্ন শাস্তি প্রদান করা হয়েছে কিন্তু প্রতিমাপূজক ইস্রায়েলীয়রা একগুঁয়েই থেকে যায়। আমোষ তাদের বলেন: “তুমি আপন ঈশ্বরের সহিত সাক্ষাৎ করিতে প্রস্তুত হও।” (আমোষ ৪:১২) ইস্রায়েলীয়দের জন্য যিহোবার দিনের অর্থ হবে যে, তারা “নির্ব্বাসনার্থে দম্মেশকের ওদিকে” অর্থাৎ অশূরে ‘গমন করিবে।’ (আমোষ ৫:২৭) আমোষ বৈথেলের একজন যাজকের কাছ থেকে বিরোধিতার মুখোমুখি হন কিন্তু তিনি নির্ভীক থাকেন। “আমার প্রজা ইস্রায়েলের কাছে পরিণাম আসিল,” যিহোবা আমোষকে বলেন। “আমি তাহাদিগকে আর অমনি ছাড়িয়া যাইব না।” (আমোষ ৮:২) পাতাল কিংবা উচ্চ পর্বত তাদেরকে ঈশ্বরের বিচার থেকে রক্ষা করতে পারবে না। (আমোষ ৯:২, ৩) কিন্তু, পুনর্স্থাপনের এক প্রতিজ্ঞা রয়েছে। “আমি আপন প্রজা ইস্রায়েলের বন্দি-দশা ফিরাইব,” যিহোবা বলেন, “তাহারা ধ্বংসিত নগর সকল নির্ম্মাণ করিয়া তথায় বাস করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার দ্রাক্ষারস পান করিবে, এবং উদ্যান প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভোগ করিবে।”—আমোষ ৯:১৪.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

৪:১—“বাশনের গাভী সকল” দ্বারা কাদের চিত্রিত করা হয়েছে? গালীল সমুদ্রের পূর্বাঞ্চলের এক এলাকা বাশনের উচ্চ মালভূমি, গাভীসহ বিভিন্ন প্রাণীর চমৎকার প্রজননের জন্য পরিচিত ছিল। এই এলাকার উর্বর তৃণভূমি এতে অবদান রেখেছে। আমোষ শমরিয়ার বিলাসপ্রিয় নারীদের বাশনের গাভীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। নিঃসন্দেহে, এই নারীরা ধনসম্পদের প্রতি নিজেদের আকাঙ্ক্ষাকে সহজে চরিতার্থ করার জন্য দীনহীন লোকেদের প্রতি উপদ্রব করতে ‘আপনাদের কর্ত্তা’ বা স্বামীদেরকে চাপ দিয়েছিল।

৪:৬—“দন্তাবলির নির্ম্মলতা” অভিব্যক্তিটির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? এই বাক্যাংশটি ‘অন্নাভাবের’ সঙ্গে একইসময়ে ব্যবহৃত হওয়ায় তা দুর্ভিক্ষের এক সময়কে নির্দেশ করতে পারে, যখন খাদ্যাভাবের কারণে দাঁত নির্মল বা পরিষ্কার থাকে।

৫:৫—কীভাবে ইস্রায়েল ‘বৈথেলের অন্বেষণ করে নাই’? যারবিয়াম বৈথেলে বাছুর উপাসনা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই সময় থেকে নগরটি মিথ্যা উপাসনার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছিল। গিল্‌গল ও বের্‌শেবাও নিশ্চয়ই ধর্মভ্রষ্ট উপাসনার স্থান হয়েছে। ভবিষ্যদ্বাণীকৃত বিপর্যয় এড়ানোর জন্য ইস্রায়েলকে এইসমস্ত জায়গায় তীর্থযাত্রা বন্ধ করতে এবং যিহোবার অন্বেষণ শুরু করতে হতো।

৭:১—‘রাজার তৃণ কাটা’ কী ইঙ্গিত করে? এটা সম্ভবত রাজার অশ্বারোহী ও জীবজন্তুর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তার আরোপিত করকে ইঙ্গিত করে। এই কর “পশ্চাজ্জাত তৃণের অঙ্কুরারম্ভে” পরিশোধ করতে হতো। এরপর, লোকেরা তাদের শস্যচ্ছেদন করতে পারত। কিন্তু, তা করার আগে পঙ্গপালের এক ঝাঁক গঠিত হয়েছিল এবং অন্যান্য শাকসবজিসহ তাদের শস্য খেয়ে ফেলেছিল।

৮:১, ২—“এক চুপড়ী গ্রীষ্মের ফল” কী নির্দেশ করেছিল? এটা নির্দেশ করেছিল যে, যিহোবার দিন নিকটবর্তী। ফল সংগ্রহের মরশুমের শেষে অর্থাৎ কৃষি বছরের শেষে গ্রীষ্মের ফল তোলা হয়ে থাকে। যিহোবা যখন আমোষকে “এক চুপড়ী গ্রীষ্মের ফল” দেখিয়েছিলেন, তখন এর অর্থ ছিল যে, ইস্রায়েলের ধ্বংস নিকটবর্তী। তাই, ঈশ্বর আমোষকে বলেছিলেন: “আমার প্রজা ইস্রায়েলের কাছে পরিণাম আসিল। আমি তাহাদিগকে আর অমনি ছাড়িয়া যাইব না।”

আমাদের জন্য শিক্ষা:

১:৩, ৬, ৯, ১১, ১৩; ২:১, ৪, ৬. ইস্রায়েল, যিহূদা ও তাদের চারপাশের ছয়টা জাতির প্রতি তাঁর ক্রোধের কারণে যিহোবা বলেন যে: “আমি তাহার দণ্ড নিবারণ করিব না।” যিহোবার বিচার থেকে রেহাই পাওয়া যায় না।—আমোষ ৯:২-৫.

২:১২. কঠোর পরিশ্রমী অগ্রগামী, ভ্রমণ অধ্যক্ষ, মিশনারি অথবা বেথেল পরিবারের সদস্যদেরকে তথাকথিত স্বাভাবিক জীবনযাপন করার জন্য পূর্ণসময়ের সেবা ছেড়ে দিতে পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের তাদেরকে নিরুৎসাহিত করা উচিত নয়। এর পরিবর্তে, আমাদের তাদেরকে উৎসাহিত করা উচিত, যাতে তারা তাদের উত্তম কাজ চালিয়ে যায়।

৩:৮. ঠিক যেমন একজন ব্যক্তি একটা সিংহের গর্জন শুনে ভয় পায়, তেমনই আমোষ যিহোবাকে এই কথা বলতে শুনে প্রচার করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: ‘যাও, আমার প্রজার কাছে ভাববাণী বল।’ (আমোষ ৭:১৫) ঈশ্বরীয় ভয়ের দ্বারা আমাদের রাজ্যের বার্তার উদ্যোগী প্রচারক হওয়ার জন্য পরিচালিত হওয়া উচিত।

৩:১৩-১৫; ৫:১১. যিহোবার সাহায্যে সামান্য গোপালক আমোষ সেই লোকেদের কাছে ‘সাক্ষ্য দিতে’ সক্ষম হয়েছিলেন, যারা বিত্তশালী আর এই কারণে আত্মতুষ্ট ছিল। একইভাবে, একটা ক্ষেত্র যত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলকই হোক না কেন, যিহোবা রাজ্যের বার্তা ঘোষণা করার জন্য আমাদেরকে সজ্জিত করতে পারেন।

৪:৬-১১; ৫:৪, ৬, ১৪. ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার কাছে ‘ফিরিয়া আসিতে’ বার বার ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও, তাদেরকে ‘সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিয়া তাহাতে বাঁচিতে’ জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। যতদিন পর্যন্ত যিহোবা ধৈর্য সহকারে এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থা থাকতে দেন, ততদিন পর্যন্ত এই বিধিব্যবস্থার মধ্যে থাকা লোকেদেরকে ঈশ্বরের প্রতি ফিরতে আমাদের উৎসাহিত করা উচিত।

৫:১৮, ১৯. প্রকৃতপক্ষে প্রস্তুত না হয়ে ‘সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] দিনের আকাঙ্ক্ষা করা’ বোকামি। যে-ব্যক্তি এমনটা করে তার পরিস্থিতি অনেকটা এমন ব্যক্তির মতো, যে সিংহের কাছ থেকে পালিয়ে একটা ভাল্লুকের সামনে গিয়ে পড়ে আর তারপর ভাল্লুকের কাছ থেকে পালিয়ে গিয়ে সাপের দ্বারা দংশিত হয়। আধ্যাত্মিকভাবে ‘জাগিয়া থাকা’ ও সবসময় প্রস্তুত থাকা আমাদের জন্য বিজ্ঞতার কাজ হবে।—লূক ২১:৩৬.

৭:১২-১৭. ঈশ্বরের বার্তা ঘোষণা করার বিষয়ে আমাদের নির্ভীক ও সাহসী হওয়া উচিত।

৯:৭-১০. বিশ্বস্ত কুলপতিদের এবং ঈশ্বরের মনোনীত লোক হিসেবে মিশর থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত লোকেদের বংশধর হওয়া সত্ত্বেও, অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়রা কূশীয়দের মতো ঈশ্বরের সামনে এক প্রতিকূল অবস্থানকে প্রতিরোধ করতে পারেনি। পক্ষপাতহীন ঈশ্বরের সামনে এক অনুমোদিত অবস্থান লাভ করা, নির্দিষ্ট কোনো বংশধারার ওপর নয় বরং ‘তাঁহাকে ভয় করিবার ও ধর্ম্মাচরণ করিবার’ ওপর নির্ভর করে।—প্রেরিত ১০:৩৪, NW, ৩৫.

আমাদের যা করা উচিত

শয়তানের জগতের ওপর ঐশিক বিচার সম্পাদন করার দিন নিকটবর্তী। ঈশ্বর তাঁর উপাসকদের ওপর তাঁর পবিত্র আত্মা বর্ষণ করেছেন, তাঁর আসন্ন দিন সম্বন্ধে মানবজাতিকে সতর্ক করতে তাদেরকে সজ্জিত করেছেন। আমাদের কি যিহোবাকে জানতে ও ‘তাঁহার নামে ডাকিতে’ অন্যদেরকে সাহায্য করায় পূর্ণরূপে অংশগ্রহণ করা উচিত নয়?—যোয়েল ২:৩১, ৩২.

“মন্দকে ঘৃণা কর,” আমোষ পরামর্শ দেন, “ও উত্তমকে ভালবাস, এবং নগর-দ্বারে ন্যায়বিচার স্থাপন কর।” (আমোষ ৫:১৫) যেহেতু যিহোবার দিন এগিয়ে আসছে, তাই ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া এবং নিজেদেরকে দুষ্ট জগৎ ও এর কলুষিত সাহচর্য থেকে পৃথক রাখাই বিজ্ঞতার কাজ। সেই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য বাইবেলের যোয়েল ও আমোষ বই থেকে আমরা কত সময়োপযোগী শিক্ষাই না লাভ করতে পারি!—ইব্রীয় ৪:১২.

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

যোয়েল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “যিহোবার দিন ত সন্নিকট!”

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আমোষের মতো আমাদেরও ঈশ্বরের বার্তার নির্ভীক ও সাহসী ঘোষণাকারী হওয়া উচিত