সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যে-দুঃখী বোনেরা “ইস্রায়েলের কুল নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন”

যে-দুঃখী বোনেরা “ইস্রায়েলের কুল নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন”

যে-দুঃখী বোনেরা “ইস্রায়েলের কুল নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন”

 যেহেতু ভোরের আলো ফুটে ওঠার সময় হচ্ছিল, তাই লেয়া জানতেন যে, শীঘ্রই তিনি ধরা পড়ে যাবেন। যাকোব—যার বাহুতে তিনি শুয়ে আছেন—কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখতে পাবেন যে, তিনি তার ছোট বোন রাহেল নন। তার বাবার আদেশে লেয়া আগের রাতে, খুব সম্ভবত বড় ঘোমটায় আচ্ছাদিত হয়ে, যাকোব ও রাহেলের জন্য প্রস্তুতকৃত বিবাহশয্যায় শুয়ে ছিলেন।

ভোরের আলোয় যখন সত্য প্রকাশ হয়ে গিয়েছিল, তখন যাকোবের কেমন লেগেছিল, তা একটু কল্পনা করুন! ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি লেয়ার বাবা লাবনের সঙ্গে তর্ক করেছিলেন। ইতিমধ্যে, লেয়াও নিশ্চয়ই সেই প্রতারণাপূর্ণ কাজে তার নিজের ভূমিকা এবং এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব কী হতে পারে, সেই সম্বন্ধে চিন্তা করেছিলেন। লেয়া ও রাহেলের কাহিনি বাইবেলের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ ছাড়া, এটি একবিবাহ ও বৈবাহিক বিশ্বস্ততার প্রজ্ঞা সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।

কুয়োর ধারে এক অপরিচিত ব্যক্তি

ওই ঘটনার সাত বছর আগে, রাহেল তার বাবাকে এই কথা বলার জন্য দৌড়ে গিয়েছিলেন যে, কুয়োর ধারে তার সঙ্গে এক অপরিচিত ব্যক্তির দেখা হয়েছে, যিনি নিজেকে তাদের একজন আত্মীয় বলে দাবি করেছেন। পরিচয় পেয়ে জানা গিয়েছিল যে, তিনি ছিলেন তার পিসতুতো দাদা অর্থাৎ তার বাবার বোনের ছেলে এবং যিহোবার একজন উপাসক। এক মাস পর, রাহেলকে বিয়ে করার বিনিময়ে যাকোব নিজেই সাত বছর লাবনের জন্য দাস্যকর্ম করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার ভাগনে কত অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজ করেন, তা দেখে এবং তার লোকেদের মধ্যে আত্মীয়র সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রথা ছিল, তা জানা থাকায় লাবন সেই প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন।—আদিপুস্তক ২৯:১-১৯.

রাহেলের প্রতি যাকোবের ভালবাসা কেবল এক মোহ ছিল না। তাদের সাত বছরের বাগ্‌দান “রাহেলের প্রতি তাঁহার অনুরাগ প্রযুক্ত এক এক বৎসর . . . এক এক দিন মনে হইল।” (আদিপুস্তক ২৯:২০) রাহেলের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত যাকোব যে তাকে ভালবেসেছিলেন, তা ইঙ্গিত দেয় যে, রাহেলের নিশ্চয়ই চমৎকার গুণাবলি ছিল।

লেয়াও কি যিহোবার একজন বিশ্বস্ত উপাসককে বিয়ে করার আশা করেছিলেন? বাইবেল এই বিষয়ে কিছু জানায় না। এর পরিবর্তে, লেয়ার বিয়ে নিয়ে লাবনের চিন্তাভাবনাই বিবরণে আরও স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। রাহেলের বাগ্‌দানের শেষে, লাবন এক বিবাহভোজ প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যাবেলা, বাইবেলের বিবরণ বলে, তিনি লেয়াকে যাকোবের কাছে নিয়ে এসেছিলেন, যাতে ‘তিনি তাঁহার কাছে গমন করেন।’—আদিপুস্তক ২৯:২৩.

লেয়া কি যাকোবের সঙ্গে প্রতারণা করার চক্রান্ত করেছিলেন? নাকি তিনি কেবলমাত্র তার বাবার বাধ্য হয়েছিলেন? আর রাহেলই বা তখন কোথায় ছিলেন? কী ঘটছে, তা কি তিনি জানতেন? যদি জেনে থাকেন, তা হলে তার কেমন লেগেছিল? তিনি কি তার কর্তৃত্বপরায়ণ বাবার ইচ্ছাকে অমান্য করতে পারতেন? বাইবেল এই প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর দেয় না। বিষয়টা নিয়ে রাহেল ও লেয়া যা-ই ভাবুক না কেন, পরে সেই চক্রান্তটা যাকোবকে বিরক্ত করেছিল। আর মেয়েদের সঙ্গে নয় বরং তাদের বাবা লাবনের সঙ্গেই যাকোব এই যুক্তি করেছিলেন: “আমি কি রাহেলের জন্য আপনার দাস্যকর্ম্ম করি নাই? তবে কেন আমাকে প্রবঞ্চনা করিলেন?” লাবন কী উত্তর দিয়েছিলেন? “জ্যেষ্ঠার অগ্রে কনিষ্ঠাকে দান করা . . . অকর্ত্তব্য। তুমি ইহার সপ্তাহ পূর্ণ কর; পরে আরও সাত বৎসর আমার দাস্যকর্ম্ম স্বীকার করিবে, সেজন্য আমরা উহাকেও তোমাকে দান করিব।” (আদিপুস্তক ২৯:২৫-২৭) এভাবে স্বীয় উদ্দেশ্যসাধনে যাকোবকে বহুগামী বিবাহের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল, যা তিক্ত ঈর্ষার উদ্রেক করেছিল।

এক অসুখী পরিবার

যাকোব রাহেলকে ভালবাসতেন। ঈশ্বর যখন দেখেছিলেন যে, লেয়া তুলনামূলকভাবে “অবজ্ঞাতা” বা ঘৃণিত হচ্ছেন, তখন তিনি তার গর্ভ মুক্ত করে দিয়েছিলেন কিন্তু রাহেল বন্ধ্যা ছিলেন। তবে লেয়া একটা সন্তানের চেয়ে আরও বেশি কিছু পেতে চেয়েছিলেন; তিনি যাকোবের ভালবাসা পেতে চেয়েছিলেন। যেহেতু তিনি কেবল রাহেলকেই ভালবাসা পেতে দেখেছিলেন, তাই তিনি দুঃখ পেয়েছিলেন। তারপরও, লেয়া যাকোবের ভালবাসা লাভের প্রত্যাশা করেছিলেন কারণ তিনি যাকোবের প্রথম ছেলে রূবেণের জন্ম দিয়েছিলেন, যার অর্থ “পুত্ত্রকে দেখ।” তার সন্তানের এই নাম রাখার পিছনে লেয়ার যুক্তি ছিল: “কেননা . . . সদাপ্রভু আমার দুঃখ দেখিয়াছেন; এখন আমার স্বামী আমাকে ভাল বাসিবেন।” কিন্তু যাকোব তা করেননি; আরেক ছেলের জন্মের পরও তিনি লেয়াকে ভালবাসেননি। লেয়া সেই ছেলের নাম দিয়েছিলেন শিমিয়োন, যার অর্থ “শ্রবণ।” তিনি যুক্তি করেছিলেন: “সদাপ্রভু শুনিয়াছেন যে, আমি ঘৃণার পাত্রী, তাই আমাকে এই পুত্ত্রও দিলেন।”—আদিপুস্তক ২৯:৩০-৩৩.

ঈশ্বর শুনেছেন, এই কথা ইঙ্গিত করে যে, লেয়া তার পরিস্থিতি সম্বন্ধে প্রার্থনা করেছিলেন। তাই, তিনি একজন বিশ্বস্ত নারী ছিলেন বলে মনে হয়। কিন্তু, এমনকি তৃতীয় ছেলে লেবির জন্ম দেওয়ার পরও তার কষ্ট রয়েই গিয়েছিল। লেবি নামের অর্থ “আসক্ত,” যেটাকে লেয়া এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন: “এ বার আমার স্বামী আমাতে আসক্ত হইবেন, কেননা আমি তাঁহার জন্য তিন পুত্ত্র প্রসব করিয়াছি।” তা সত্ত্বেও, স্পষ্টতই যাকোব তার প্রতি কোনো অন্তরঙ্গতাই অনুভব করেননি। সম্ভবত লেয়া এই বিষয়টা বিনা প্রতিবাদে মেনে নিয়েছিলেন কারণ তার চতুর্থ ছেলের নামের মধ্যে, যাকোবের সঙ্গে তার আরও ভাল সম্পর্কের প্রত্যাশার বিষয়ে কোনো উল্লেখই নেই। এর পরিবর্তে, যিহূদার নাম যিহোবার প্রতি তার কৃতজ্ঞতাকে প্রকাশ করেছিল। যিহূদা নামের অর্থ “স্তব।” লেয়া শুধু বলেছিলেন: “এ বার আমি সদাপ্রভুর স্তব গান করি।”—আদিপুস্তক ২৯:৩৪, ৩৫.

এটা স্পষ্ট যে, লেয়া খুবই দুঃখ পেয়েছিলেন কিন্তু রাহেলও খুব একটা ভাল ছিলেন না। তিনি যাকোবের কাছে বিনতি করেছিলেন: “আমাকে সন্তান দেও, নতুবা আমি মরিব।” (আদিপুস্তক ৩০:১) রাহেল যাকোবের ভালবাসা পেয়েছিলেন কিন্তু তিনি মা হওয়ার জন্য আকুল ছিলেন। লেয়া সন্তান পেয়েছিলেন অথচ তিনি ভালবাসা পাওয়ার জন্য আকুল ছিলেন। উভয়েই সেই বিষয়টা পেতে চেয়েছিল, যা অন্যজনের ছিল আর তাই কেউই সুখী ছিল না। দুজনেই যাকোবকে ভালবেসেছিল আর তার সন্তান ধারণ করতে চেয়েছিল। প্রত্যেকেই অন্যজনের প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিলেন। সেই পরিবারের জন্য কতই না দুঃখজনক এক পরিস্থিতি!

রাহেলের সন্তানরা

সেই সময়ে, বন্ধ্যাত্বকে এক দুর্দশা হিসেবে দেখা হতো। অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের কাছে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তাদের পরিবার সেই “বংশ” উৎপন্ন করবে, যে-বংশের মাধ্যমে সমস্ত পরিবার আশীর্বাদ প্রাপ্ত হবে। (আদিপুস্তক ২৬:৪; ২৮:১৪) কিন্তু, রাহেল নিঃসন্তান ছিলেন। যাকোব যুক্তি করেছিলেন যে, একমাত্র ঈশ্বরই রাহেলকে সন্তান দিতে পারেন, এই ধরনের আশীর্বাদে অবদান রাখার জন্য রাহেলকে সক্ষম করতে পারেন। তারপরও, রাহেল অধৈর্য হয়ে পড়েছিলেন। “দেখ, আমার দাসী বিল্‌হা আছে,” তিনি বলেছিলেন। “উহার কাছে গমন কর; যেন ও পুত্ত্র প্রসব করিয়া আমার কোলে দেয়, এবং উহার দ্বারা আমিও পুত্ত্রবতী হই।”—আদিপুস্তক ৩০:২, ৩.

রাহেলের মনোভাব বোঝা আমাদের পক্ষে কঠিন হতে পারে। কিন্তু, নিকট প্রাচ্য জুড়ে আবিষ্কৃত প্রাচীন বিবাহ চুক্তিগুলো ইঙ্গিত করে যে, একজন বন্ধ্যা নারীর জন্য তার স্বামীকে নিজের একজন দাসী দিয়ে দেওয়া একটা গ্রহণযোগ্য প্রথা ছিল, যাতে সেই দাসী এক উত্তরাধিকারীর জন্ম দিতে পারেন। * (আদিপুস্তক ১৬:১-৩) কিছু কিছু ক্ষেত্রে, দাসীর সন্তানকে পরে সেই স্ত্রীর সন্তান হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

যখন বিল্‌হার এক ছেলে হয়, তখন আনন্দিত রাহেল বলেছিলেন: “ঈশ্বর আমার বিচার করিলেন, এবং আমার রবও শুনিয়া আমাকে পুত্ত্র দিলেন।” তিনি তার নাম রেখেছিলেন দান, যার অর্থ “বিচার।” তিনিও তার কষ্টের বিষয়ে প্রার্থনা করেছিলেন। বিল্‌হার দ্বিতীয় ছেলে নপ্তালি, যার নামের অর্থ “মল্লযুদ্ধ,” তার জন্মের পর রাহেল বলেছিলেন: “আমি ভগিনীর সহিত ঈশ্বরসম্বন্ধীয় মল্লযুদ্ধ করিয়া জয়লাভ করিলাম।” এই নামগুলো প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে বিবাদকে ইঙ্গিত করে।—আদিপুস্তক ৩০:৫-৮.

রাহেল যখন বিল্‌হাকে যাকোবের কাছে দিয়েছিলেন, তখন তিনি হয়তো মনে করেছিলেন যে, তিনি তার প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করছেন কিন্তু তাকে সন্তান প্রদান করার জন্য এটা ঈশ্বরের উপায় ছিল না। এর মধ্যে একটা শিক্ষা রয়েছে। আমরা যখন যিহোবার কাছে কিছু যাচ্ঞা করি, তখন আমাদের অধৈর্য হয়ে পড়া উচিত নয়। তিনি আমাদের প্রার্থনার উত্তর অপ্রত্যাশিত উপায়ে এবং এমন সময়ে দিতে পারেন, যখন আমরা তা একেবারেই আশা করি না।

রাহেলের কাজের পালটা জবাবে, লেয়াও তার দাসী সিল্পাকে যাকোবের কাছে দিয়েছিলেন। তিনি প্রথমে গাদ ও পরে আশেরের জন্ম দিয়েছিলেন।—আদিপুস্তক ৩০:৯-১৩.

যে-ঘটনাটা রাহেল ও লেয়ার মধ্যে সুস্পষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে তুলে ধরেছিল, সেটার সঙ্গে লেয়ার ছেলে রূবেণের পাওয়া কিছু দূদাফল জড়িত ছিল। এই ফলকে গর্ভধারণের জন্য সহায়ক বলে মনে করা হতো। যখন রাহেল কিছু ফল চেয়েছিলেন, তখন লেয়া বিরক্ত হয়ে উত্তর দিয়েছিলেন: “তুমি আমার স্বামীকে হরণ করিয়াছ, এ কি ক্ষুদ্র বিষয়? আমার পুত্ত্রের দূদাফলও কি হরণ করিবে?” কেউ কেউ তার কথার অর্থকে এভাবে বুঝে থাকে যে, যাকোব লেয়ার চেয়ে রাহেলের সঙ্গেই বেশি থাকতেন। রাহেল হয়তো লেয়ার অভিযোগের যথার্থ কারণটা বুঝতে পেরেছিলেন আর তাই তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: “তবে তোমার পুত্ত্রের দূদাফলের পরিবর্ত্তে তিনি অদ্য রাত্রিতে তোমার সহিত শয়ন করিবেন।” তাই, সন্ধ্যাবেলা যাকোব যখন বাড়িতে এসেছিলেন, লেয়া তাকে জানিয়েছিলেন: “আমার কাছে আসিতে হইবে, কেননা আমি আপন পুত্ত্রের দূদাফল দিয়া তোমাকে ভাড়া করিয়াছি।”—আদিপুস্তক ৩০:১৫, ১৬.

লেয়া পঞ্চম ও ষষ্ঠ ছেলে, ইষাখর ও সবূলূনের জন্ম দিয়েছিলেন। এরপর, তিনি বলেছিলেন: “এখন আমার স্বামী আমার সহিত বাস করিবেন, কেননা আমি তাঁহার জন্য ছয় পুত্ত্র প্রসব করিয়াছি।” *আদিপুস্তক ৩০:১৭-২০.

দূদাফল কোনো কাজেই আসেনি। বিয়ের ছয় বছর পর অবশেষে রাহেল যখন গর্ভধারণ করেন ও যোষেফের জন্ম দেন, তখন এর কারণ ছিল যিহোবা তাকে ‘স্মরণ করিয়াছিলেন’ এবং তার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন। কেবলমাত্র তখনই রাহেল বলতে পেরেছিলেন: “ঈশ্বর আমার অপযশ হরণ করিয়াছেন।”—আদিপুস্তক ৩০:২২-২৪.

মৃত্যু এবং উত্তরাধিকার

তার দ্বিতীয় ছেলে বিন্যামীনের জন্মের সময়ে রাহেল মারা যান। যাকোব সত্যিই রাহেলকে ভালবাসতেন আর রাহেলের দুই ছেলে তার কাছে প্রিয় ছিল। বেশ কয়েক বছর পর, যখন তার নিজের মৃত্যু ঘনিয়ে আসছিল, তখন তিনি তার প্রিয়তমা রাহেলের অকালমৃত্যুর কথা স্মরণ না করে পারেননি। (আদিপুস্তক ৩০:১; ৩৫:১৬-১৯; ৪৮:৭) আর লেয়ার মৃত্যু সম্বন্ধে আমরা কেবল এইটুকুই জানি যে, যাকোব তাকে সেই গুহায় কবর দিয়েছিলেন, যেখানে তিনিও কবরপ্রাপ্ত হতে চেয়েছিলেন।—আদিপুস্তক ৪৯:২৯-৩২.

বৃদ্ধ বয়সে যাকোব স্বীকার করেছিলেন যে, পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়সহ তার জীবন কষ্টকর ছিল। (আদিপুস্তক ৪৭:৯) নিঃসন্দেহে, লেয়া ও রাহেলের জন্যও জীবন কষ্টকর ছিল। তাদের অভিজ্ঞতাগুলো বহুগামিতার দুঃখজনক পরিণতি সম্বন্ধে তুলে ধরে এবং স্পষ্টভাবে দেখায়, কেন যিহোবা এই বিষয়টা প্রতিষ্ঠা করেছেন যে, একজন পুরুষের একজন স্ত্রীই থাকা উচিত। (মথি ১৯:৪-৮; ১ তীমথিয় ৩:২, ১২) যখন একজন স্বামী অথবা স্ত্রীর রোমান্টিক বা যৌন কামনা কেবল একজন ব্যক্তির—তার সাথির—প্রতি সীমাবদ্ধ থাকে না, তখন ঈর্ষার উৎপত্তি হয়। এটা হচ্ছে একটা কারণ যে, কেন ঈশ্বর ব্যভিচার ও পারদারিকতাকে নিষেধ করেন।—১ করিন্থীয় ৬:১৮; ইব্রীয় ১৩:৪.

যা-ই হোক না কেন, অসিদ্ধ কিন্তু বিশ্বস্ত নারী-পুরুষদের ব্যবহার করে ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদন করেছেন আর এখনও করে যাচ্ছেন। এই দুই বোনেরই বিভিন্ন দুর্বলতা ছিল, যেমনটা আমাদেরও রয়েছে। কিন্তু, এই নারীদের মাধ্যমে যিহোবা অব্রাহামের কাছে করা তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করতে শুরু করেছিলেন। তাই, উপযুক্তভাবেই বলা হয়েছে যে, রাহেল ও লেয়া “ইস্রায়েলের কুল নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন।”—রূতের বিবরণ ৪:১১.

[পাদটীকাগুলো]

^ ইরাকের নোজি থেকে প্রাপ্ত এই ধরনের একটা চুক্তি বলে: “শেনিমার সঙ্গে কেলিম-নিনোর বিয়ে হয়েছে। . . . যদি কেলিম-নিনোর [সন্তান] না হয়, তা হলে শেনিমার স্ত্রী হওয়ার জন্য কেলিম-নিনো লুলু থেকে একজন নারীকে [একজন দাসীকে] গ্রহণ করবেন।”

^ লেয়ার সন্তানদের মধ্যে আরেকজন হলেন দীণা, যাকোবের মেয়েদের মধ্যে একমাত্র যার নাম আমরা জানি।—আদিপুস্তক ৩০:২১; ৪৬:৭.

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

লেয়া ও রাহেল উভয়েই সেই বিষয়টা পেতে চেয়েছিল, যা অন্যজনের ছিল আর তাই কেউই সুখী ছিল না

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

যাকোবের ১২ ছেলে থেকেই ইস্রায়েল জাতি উৎপন্ন হয়েছিল