সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জীবনে এক অর্থপূর্ণ উদ্দেশ্য খোঁজা

জীবনে এক অর্থপূর্ণ উদ্দেশ্য খোঁজা

জীবনে এক অর্থপূর্ণ উদ্দেশ্য খোঁজা

“শ্বাসবিশিষ্ট সকলেই সদাপ্রভুর প্রশংসা করুক।”—গীতসংহিতা ১৫০:৬.

১. একজন যুবকের জীবনে এক উদ্দেশ্য খোঁজার বিষয়ে বর্ণনা করুন।

 “আমি চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলাম কারণ আমি আমার জীবন মানুষকে সাহায্য করার জন্য বিলিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। আমি এও মনে করেছিলাম যে, একজন ডাক্তার হওয়ায় আমি যে-খ্যাতি ও অর্থ লাভ করতে পারব, তা আমাকে সুখী করে তুলবে,” সুং জিন স্মরণ করে বলে, যে কোরিয়াতে বড় হয়ে উঠেছে। * “যখন আমি বুঝতে পারি যে, একজন ডাক্তার লোকেদের খুব কমই সাহায্য করতে পারে, তখন আমি হতাশ হয়ে পড়ি। এরপর, আমি চিত্রকলা নিয়ে অধ্যয়ন করতে শুরু করি কিন্তু আমার শৈল্পিক সৃষ্টিগুলো অন্যদের জন্য তেমন কোনো উপকার নিয়ে আসেনি আর নিজেকে আমার স্বার্থপর বলে মনে হয়েছে। আমি এরপর শিক্ষকতা শুরু করি এবং শীঘ্রই বুঝতে পারি যে, আমি কেবল বিভিন্ন তথ্যই জানাতে পারি কিন্তু কোনো নির্দেশনা দিতে পারি না, যা প্রকৃত সুখের দিকে পরিচালিত করতে পারে।” অনেকের মতো সুং জিনও জীবনে এক অর্থপূর্ণ উদ্দেশ্যের খোঁজ করছিল।

২. (ক) জীবনে উদ্দেশ্য থাকার অর্থ কী? (খ) কীভাবে আমরা জানি যে, আমাদের এখানে রাখার পিছনে সৃষ্টিকর্তার এক উদ্দেশ্য ছিল?

জীবনে প্রকৃত উদ্দেশ্য থাকার অর্থ হল বেঁচে থাকার জন্য একটা কারণ থাকা, জীবনে এক স্পষ্ট লক্ষ্য থাকা এবং আমাদের প্রচেষ্টাগুলোর এক কেন্দ্রবিন্দু থাকা। মানুষের জীবনে কি আসলেই এই ধরনের এক উদ্দেশ্য থাকতে পারে? হ্যাঁ! আমাদেরকে যে বুদ্ধিমত্তা, বিবেক ও যুক্তি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা ইঙ্গিত দেয় যে, আমাদের এখানে রাখার পিছনে সৃষ্টিকর্তার এক উত্তম উদ্দেশ্য ছিল। তাই, যুক্তিযুক্তভাবেই কেবলমাত্র সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার মাধ্যমে, আমরা আমাদের জীবনে প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে ও তা পরিপূর্ণ করতে পারি।

৩. মানুষের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে কী জড়িত?

বাইবেল প্রকাশ করে যে, আমাদের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যে-অপূর্ব উপায়ে আমরা নির্মিত হয়েছি, তা সত্যিই ঈশ্বরের পক্ষে নিঃস্বার্থ প্রেমের এক অভিব্যক্তি। (গীতসংহিতা ৪০:৫; ১৩৯:১৪) তাই, ঈশ্বরের উদ্দেশ্য অনুযায়ী জীবনযাপন করার অর্থ হল, অন্যদেরকে ঈশ্বরের মতো করে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসা। (১ যোহন ৪:৭-১১) এ ছাড়া, এর অর্থ ঈশ্বরের নির্দেশনাগুলো পালন করা, যেগুলো আমাদেরকে তাঁর প্রেমময় উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে সাহায্য করে।—উপদেশক ১২:১৩; ১ যোহন ৫:৩.

৪. (ক) জীবনে প্রকৃত উদ্দেশ্য থাকার জন্য কীসের প্রয়োজন? (খ) জীবনের সর্বোত্তম উদ্দেশ্য কী, যা একজন ব্যক্তি খুঁজে পেতে পারেন?

এ ছাড়া, ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল মানুষ পরস্পরের সঙ্গে এবং বাকি সমস্ত সৃষ্টির সঙ্গে সুখে ও শান্তিতে বাস করবে। (আদিপুস্তক ১:২৬; ২:১৫) কিন্তু সুখ, নিরাপত্তা ও শান্তি লাভ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে? একটা সন্তানের যেমন সুখ ও নিরাপত্তা বোধ করার জন্য তার বাবামার উপস্থিতি উপলব্ধি করা প্রয়োজন, তেমনই আমাদের জীবনে প্রকৃত অর্থ এবং উদ্দেশ্য খোঁজার জন্য আমাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে আমাদের এক উত্তম সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। (ইব্রীয় ১২:৯) আমাদেরকে তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ দিয়ে এবং আমাদের প্রার্থনা শোনার মাধ্যমে ঈশ্বর এই ধরনের এক সম্পর্ক সম্ভবপর করেছেন। (যাকোব ৪:৮; ১ যোহন ৫:১৪, ১৫) আমরা যদি বিশ্বাসের সঙ্গে ‘ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করি’ এবং তাঁর বন্ধু হই, তা হলে আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে আনন্দিত করতে ও তাঁর প্রশংসা নিয়ে আসতে পারব। (আদিপুস্তক ৬:৯; হিতোপদেশ ২৩:১৫, ১৬; যাকোব ২:২৩) এটাই হল জীবনের সর্বোত্তম উদ্দেশ্য, যা একজন ব্যক্তি খুঁজে পেতে পারেন। গীতরচক লিখেছিলেন: “শ্বাসবিশিষ্ট সকলেই সদাপ্রভুর প্রশংসা করুক।”—গীতসংহিতা ১৫০:৬.

আপনার জীবনের উদ্দেশ্য কী?

৫. কেন বস্তুগত বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখা অবাস্তব?

আমাদের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের একটা অংশ হল, আমরা যেন নিজেদের ও আমাদের পরিবারের উত্তম যত্ন নিই। এর অন্তর্ভুক্ত দৈহিক ও আধ্যাত্মিক উভয় চাহিদার যত্ন নেওয়া। কিন্তু, তা করার ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন যাতে জাগতিক বিষয়গুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে ম্লান করে না দেয়। (মথি ৪:৪; ৬:৩৩) দুঃখজনক যে, অনেক লোক বলতে গেলে কেবল বস্তুগত বিষয়গুলো অর্জনের ওপরই তাদের জীবনকে কেন্দ্রীভূত রাখে। অথচ, কেবল বস্তুগত বিষয়গুলো দিয়ে আমাদের সমস্ত চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করা অবাস্তব। এশিয়ায় কোটিপতিদের ওপর করা একটা সাম্প্রতিক সমীক্ষা প্রকাশ করে যে, তাদের মধ্যে অনেকে “নিরাপত্তাহীনতায় ও সমস্যায় ভোগে এমনকি যদিও তাদের সামাজিক পদমর্যাদা এবং তাদের ধনসম্পদের দ্বারা অর্জিত সাফল্যবোধ রয়েছে।”—উপদেশক ৫:১১.

৬. ধনসম্পদের পিছনে ছোটার বিষয়ে যিশু কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন?

যিশু “ধনের মায়া” বা ধনসম্পদের প্রতি ভালবাসাকে নিন্দা করেছিলেন (মার্ক ৪:১৯) কেন ধনসম্পদকে ভালবাসা বিপদজনক? সেগুলো একজন ব্যক্তিকে সুখী করে তোলে বলে মনে হয় কিন্তু আসলে তা করে না। “যে লোক টাকা-পয়সা ভালবাসে তার কখনও যথেষ্ট হয়েছে বলে মনে হয় না,” বিজ্ঞ রাজা শলোমন উল্লেখ করেছিলেন। (উপদেশক ৫:১০, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) কিন্তু, বস্তুগত লক্ষ্যগুলোর পিছনে ছোটা এবং একইসঙ্গে সমস্ত প্রাণ দিয়ে ঈশ্বরকে সেবা করা কি সম্ভব? না, সম্ভব নয়। যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন: “কেহই দুই কর্ত্তার দাসত্ব করিতে পারে না; কেননা সে হয় ত এক জনকে দ্বেষ করিবে, আর এক জনকে প্রেম করিবে, নয় ত এক জনের প্রতি অনুরক্ত হইবে, আর এক জনকে তুচ্ছ করিবে; তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না।” যিশু তাঁর অনুসারীদের পৃথিবীতে ধন সঞ্চয় করতে নয় বরং ‘স্বর্গে ধন’ সঞ্চয় করার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন অর্থাৎ সেই ঈশ্বরের কাছে সুনাম অর্জন করতে বলেছিলেন, যিনি “তোমাদের কি কি প্রয়োজন, তাহা যাচ্ঞা করিবার পূর্ব্বে . . . জানেন।”—মথি ৬:৮, ১৯-২৫.

৭. কীভাবে আমরা ‘প্রকৃতরূপে জীবন ধরিয়া রাখিতে’ পারি?

তার সহকর্মী তীমথিয়কে লেখার সময় প্রেরিত পৌল এই বিষয়ে কিছু জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি তীমথিয়কে বলেছিলেন: “যাহারা এই যুগে ধনবান্‌, তাহাদিগকে এই আজ্ঞা দেও, . . . ধনের অস্থিরতার উপরে নয়, কিন্তু যিনি ধনবানের ন্যায় সকলই আমাদের ভোগার্থে যোগাইয়া দেন, সেই ঈশ্বরেরই উপরে প্রত্যাশা রাখে; . . . দানশীল হয়, সহভাগীকরণে তৎপর হয়; এইরূপে তাহারা আপনাদের নিমিত্ত ভাবীকালের জন্য উত্তম ভিত্তিমূলস্বরূপ নিধি প্রস্তুত করুক, যেন, যাহা প্রকৃতরূপে জীবন, তাহাই ধরিয়া রাখিতে পারে।”—১ তীমথিয় ৬:১৭-১৯.

“প্রকৃতরূপে জীবন” কী?

৮. (ক) কেন অনেকে ধনসম্পদ ও পদমর্যাদার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে? (খ) এই ধরনের লোকেরা কী উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়?

অধিকাংশ লোকের কাছে “প্রকৃতরূপে জীবন” অভিব্যক্তিটি তাদের মনে বিলাসবহুল ও আমোদে ভরা এক জীবনের চিত্র তুলে ধরে। এশিয়ার একটা সংবাদ পত্রিকা মন্তব্য করে: “যে-লোকেরা চলচ্চিত্র অথবা টিভি দেখে, তারা যা দেখে তা পেতে চায় এবং তারা কী পেতে পারে, সেগুলোর স্বপ্ন দেখে।” অনেক লোক ধনসম্পদ ও পদমর্যাদা অর্জন করাকেই তাদের জীবনের উদ্দেশ্য করে তোলে। এই বিষয়গুলোর পিছনে ছুটতে গিয়ে অনেকে তাদের যৌবন, স্বাস্থ্য, পারিবারিক জীবন এবং আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলোকে বিসর্জন দেয়। খুব কম লোকই এইরকম চিন্তা করে যে, গণমাধ্যমের এই চিত্রগুলো ‘জগতের আত্মার’ অর্থাৎ সেই প্রভাবশালী চিন্তাধারার প্রতিফলন ছাড়া আর কিছুই নয়, যা পৃথিবীর কোটি কোটি লোকের মধ্যে অধিকাংশকেই প্রভাবিত করে এবং তাদেরকে আমাদের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের বিপরীতে কাজ করতে পরিচালিত করে। (১ করিন্থীয় ২:১২; ইফিষীয় ২:২) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আজকে কত লোকই না অসুখী!—হিতোপদেশ ১৮:১১; ২৩:৪, ৫.

৯. কী মানুষ কখনো সম্পাদন করতে পারবে না এবং কেন?

সেই লোকেদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যারা অন্যদের মঙ্গলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে, ক্ষুধা, অসুস্থতা ও অবিচার দূর করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে? তাদের প্রশংসাযোগ্য ও আত্মত্যাগমূলক প্রচেষ্টা প্রায়ই অনেক উপকার নিয়ে আসে। কিন্তু, তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তারা কখনোই এই বিধিব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে এটাকে ন্যায্য ও ধার্মিক করতে পারবে না। কেন? কারণ বাস্তবিকপক্ষে “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার”—শয়তানের—“মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে” আর সে চায় না যে, এটা পরিবর্তন হোক।—১ যোহন ৫:১৯.

১০. কখন বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা “প্রকৃতরূপে জীবন” উপভোগ করবে?

১০ একজন ব্যক্তির যদি বর্তমান জগতে এই জীবন ছাড়া আর কোনোকিছুরই প্রত্যাশা না থাকে, তা হলে সেটা কতই না দুঃখজনক! “শুধু এই জীবনে যদি খ্রীষ্টে প্রত্যাশা করিয়া থাকি, তবে আমরা সকল মনুষ্যের মধ্যে অধিক দুর্ভাগা,” পৌল লিখেছিলেন। “আইস, আমরা ভোজন পান করি, কেননা কল্য মরিব,” এটাই হল সেই ব্যক্তিদের মনোভাব, যারা মনে করে যে এই জীবনই হল সবকিছু। (১ করিন্থীয় ১৫:১৯, ৩২) কিন্তু, একটা ভবিষ্যৎ রয়েছে অর্থাৎ “[ঈশ্বরের] প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমরা এমন নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর অপেক্ষায় আছি, যাহার মধ্যে ধার্ম্মিকতা বসতি করে।” (২ পিতর ৩:১৩) সেই সময় খ্রিস্টানরা “প্রকৃতরূপে জীবন” অর্থাৎ সিদ্ধ হয়ে “অনন্ত জীবন” উপভোগ করতে পারবে আর তা হয় স্বর্গে নতুবা ঈশ্বরের রাজ্য সরকারের প্রেমময় শাসনাধীনে!—১ তীমথিয় ৬:১২.

১১. কেন ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়গুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করা উদ্দেশ্যপূর্ণ?

১১ একমাত্র ঈশ্বরের রাজ্যই মানবজাতির সমস্যাগুলো সমাধান করার ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে সফল হবে। তাই, ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়গুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করাই হল উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম, যা একজন ব্যক্তি করতে পারে। (যোহন ৪:৩৪) আমরা যখন সেই কাজে রত থাকি, তখন আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে এক মূল্যবান সম্পর্ক উপভোগ করি। এ ছাড়া, আমাদের সেই লক্ষ লক্ষ আধ্যাত্মিক ভাই ও বোনের সঙ্গে সেবা করার আনন্দ রয়েছে, যাদের জীবনেও একই উদ্দেশ্য রয়েছে।

সঠিক ত্যাগস্বীকার করা

১২. বর্তমান বিধিব্যবস্থায় জীবনের সঙ্গে ‘প্রকৃতরূপে জীবনের’ পার্থক্য তুলে ধরুন।

১২ বর্তমান জগৎ “ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে,” বাইবেল বলে। শয়তানের জগতের খ্যাতি ও ধনসম্পদসহ এর কোনো অংশই ধ্বংস থেকে রেহাই পাবে না “কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী” হবে। (১ যোহন ২:১৫-১৭) বর্তমান বিধিব্যবস্থার অনিশ্চিত ধনসম্পদ, ক্ষণস্থায়ী গৌরব ও সেইসঙ্গে অসার আমোদপ্রমোদের বিপরীতে, “প্রকৃতরূপে জীবন”—ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে অনন্তজীবন—হল স্থায়ী ও এর জন্য আমাদের বিভিন্ন ত্যাগস্বীকার করা উপযুক্ত, যদি আমরা সঠিক ত্যাগস্বীকারগুলো করে থাকি।

১৩. কীভাবে এক দম্পতি সঠিক ত্যাগস্বীকারগুলো করেছে?

১৩ হেনরি ও সুজ্যানের কথা বিবেচনা করুন। ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞার ওপর তাদের পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে, যারা তাদের জীবনে রাজ্যকে প্রথমে রাখে, তারা সকলে ঈশ্বরের সাহায্য লাভ করবে। (মথি ৬:৩৩) তাই, তারা কম ভাড়ার এক বাড়িতে বাস করা বেছে নেয়, যাতে দুজনেই বাইরে কাজ করার পরিবর্তে বরং তাদের দুই মেয়ের সঙ্গে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোতে আরও বেশি সময় দিতে পারে। (ইব্রীয় ১৩:১৫, ১৬) একজন শুভাকাঙ্ক্ষী বান্ধবী তাদের এই বাছাই সম্বন্ধে বুঝতে পারেননি। তিনি সুজ্যানকে বলেছিলেন: “সুজ্যান, তুমি যদি কখনো আরও ভাল জায়গায় থাকতে চাও, তা হলে তোমাকে কিছু ত্যাগস্বীকার করতেই হবে।” তবে, হেনরি ও সুজ্যান জানত যে, যিহোবাকে প্রথমে রাখা “বর্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের প্রতিজ্ঞাযুক্ত।” (১ তীমথিয় ৪:৮; তীত ২:১২) তাদের মেয়েরা বড় হয়ে পূর্ণসময়ের উদ্যোগী সুসমাচার প্রচারক হয়ে উঠেছে। একটা পরিবার হিসেবে তারা মনে করে যে, তারা কোনোকিছু থেকেই বঞ্চিত হয়নি; বরং “প্রকৃতরূপে জীবন” অনুধাবন করাকে তাদের জীবনের উদ্দেশ্য করার মাধ্যমে তারা প্রচুর উপকৃত হয়েছে।—ফিলিপীয় ৩:৮; ১ তীমথিয় ৬:৬-৮.

‘সংসার পূর্ণমাত্রায় ভোগ’ করবেন না

১৪. আমাদের জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে দৃষ্টি হারিয়ে ফেলা কোন দুঃখজনক পরিণতির দিকে পরিচালিত করতে পারে?

১৪ কিন্তু, আমরা যদি আমাদের জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ভুলে যাই এবং “প্রকৃতরূপে জীবন” ধরে রাখার ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে পড়ি, তা হলে প্রকৃতই বিপদ রয়েছে। আমরা “চলিতে চলিতে জীবনের চিন্তা ও ধন ও সুখভোগের দ্বারা চাপা পড়িবার” ঝুঁকির মুখে রয়েছি। (লূক ৮:১৪) অনিয়ন্ত্রিত আকাঙ্ক্ষা এবং ‘জীবিকার চিন্তা’ এই বিধিব্যবস্থার সঙ্গে অতিরিক্ত জড়িত হয়ে পড়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে। (লূক ২১:৩৪) দুঃখজনক যে, কেউ কেউ আজকের ধনী হওয়ার বিদ্যমান আকাঙ্ক্ষায় জড়িত হয়ে পড়েছে আর “বিশ্বাস হইতে বিপথগামী হইয়াছে, এবং অনেক যাতনারূপ কন্টকে আপনারা আপনাদিগকে বিদ্ধ করিয়াছে,” এমনকি যিহোবার সঙ্গে তাদের মূল্যবান সম্পর্কও হারিয়ে ফেলছে। ‘অনন্তজীবন ধরিয়া রাখিতে’ না পারার জন্য কত চরম মূল্যই না দিতে হয়!—১ তীমথিয় ৬:৯, ১০, ১২; হিতোপদেশ ২৮:২০.

১৫. কীভাবে একটা পরিবার ‘সংসার পূর্ণমাত্রায় ভোগ না করিবার’ দ্বারা উপকার লাভ করেছে?

১৫ পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, ‘যাহারা সংসার ভোগ করিতেছে, যেন পূর্ণমাত্রায় না করে।’ (১ করিন্থীয় ৭:৩১) কিথ ও বনি এই পরামর্শে মনোযোগ দিয়েছিল। “ডেন্টাল স্কুল শেষ করার পর পরই আমি একজন যিহোবার সাক্ষি হই,” কিথ বলেন। “আমাকে একটা বিষয় বাছাই করতে হয়েছিল। আমি অনেক রোগী দেখে প্রচুর টাকাপয়সা অর্জন করতে পারতাম কিন্তু তা করলে আমাদের আধ্যাত্মিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতো। আমি আমার কাজকে সীমিত করা বেছে নিই, যাতে আমাদের পরিবারের আধ্যাত্মিক ও আবেগগত মঙ্গলের জন্য হাতে আরও বেশি সময় থাকে, যে-পরিবারে শেষপর্যন্ত আমার পাঁচ মেয়েও অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। যদিও আমাদের অতিরিক্ত টাকাপয়সা ছিল না, তবে আমরা খরচ কমাতে শিখেছিলাম এবং আমাদের কখনোই প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তুর অভাব হয়নি। পারিবারিক জীবন ছিল ঘনিষ্ঠ, উষ্ণ ও আনন্দপূর্ণ। অবশেষে, আমরা সকলে পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করেছিলাম। এখন আমাদের মেয়েরা বিয়ে করে সুখে আছে আর তাদের মধ্যে তিনজনের সন্তান রয়েছে। তারা যিহোবার উদ্দেশ্যকে জীবনে প্রথমে রেখেছে বলে তাদের পরিবারও সুখী।”

আপনার জীবনে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে প্রথমে রাখা

১৬, ১৭. দক্ষ লোকেদের কোন উদাহরণগুলো বাইবেল তুলে ধরে আর তাদেরকে কীভাবে স্মরণ করা হয়ে থাকে?

১৬ বাইবেলে সেইসমস্ত ব্যক্তির উদাহরণ রয়েছে, যারা ঈশ্বরের উদ্দেশ্য অনুযায়ী জীবনযাপন করেছে এবং যারা করেনি। এই উদাহরণগুলো থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা সমস্ত যুগের, সংস্কৃতির এবং পরিস্থিতির লোকেদের জন্য প্রযোজ্য। (রোমীয় ১৫:৪; ১ করিন্থীয় ১০:৬, ১১) নিম্রোদ মহানগর নির্মাণ করেছিলেন কিন্তু তিনি তা যিহোবার বিরুদ্ধাচারণ করে করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১০:৮-১২) তবে, অন্যান্য অনেকে উত্তম উদাহরণ ছিল। উদাহরণস্বরূপ, মোশি মিশরীয় সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি হিসেবে তার পদমর্যাদাকে জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে নেননি। এর পরিবর্তে, তিনি তার আধ্যাত্মিক বিশেষ সুযোগগুলোকে “মিসরের সমস্ত ধন অপেক্ষা . . . মহাধন” বলে গণ্য করেছিলেন। (ইব্রীয় ১১:২৬) চিকিৎসক লূক সম্ভবত পৌল ও অন্যদেরকে তাদের বিভিন্ন অসুস্থতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু, লূক একজন সুসমাচার প্রচারক ও বাইবেল লেখক হিসেবেই সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছিলেন। আর পৌল, একজন ব্যবস্থাবেত্তা হিসেবে নয় বরং একজন মিশনারি, “পরজাতীয়দের জন্য প্রেরিত” হিসেবে পরিচিত ছিলেন।—রোমীয় ১১:১৩.

১৭ দায়ূদকে মূলত একজন সেনাপতি অথবা বাদক ও রচয়িতা হিসেবে নয় বরং ‘সদাপ্রভুর আপন মনের মত এক জন’ হিসেবে স্মরণ করা হয়। (১ শমূয়েল ১৩:১৪) দানিয়েলকে আমরা একজন বাবিলীয় সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তার কাজের জন্য নয় বরং যিহোবার অনুগত ভাববাদী হিসেবে তার সেবার জন্য তাকে জানি; ইষ্টেরকে পারস্যের রানি হিসেবে নয় বরং সাহস ও বিশ্বাসের এক উদাহরণ হিসেবে জানি; পিতর, আন্দ্রিয়, যাকোব ও যোহনকে সফল জেলে হিসেবে নয় কিন্তু যিশুর প্রেরিত হিসেবে জানি। আর সর্বোত্তম উদাহরণ যিশুকে আমরা “সূত্রধর” হিসেবে নয় কিন্তু “খ্রীষ্ট” হিসেবে স্মরণ করে থাকি। (মার্ক ৬:৩; মথি ১৬:১৬) এরা সকলেই স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিল যে, তারা যে-দক্ষতা, ধনসম্পদ অথবা পদমর্যাদাই উপভোগ করুক না কেন, তাদের জীবন জাগতিক বৃত্তিকে ঘিরে নয় বরং ঈশ্বরের প্রতি তাদের সেবাকে ঘিরে কেন্দ্রীভূত হতে হবে। তারা জানত যে, জীবনে সবচেয়ে মহৎ ও পুরস্কারদায়ক যে-উদ্দেশ্য তারা রাখতে পারে, তা হল ঈশ্বরভয়শীল নারী অথবা পুরুষ হওয়া।

১৮. কীভাবে একজন খ্রিস্টান যুবক তার জীবনকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আর সে কী বুঝতে পেরেছিল?

১৮ শুরুতেই উল্লেখিত সুং জিনও তা বুঝতে পেরেছিল। “চিকিৎসাবিদ্যা, চিত্রকলা অথবা জাগতিক শিক্ষার ওপর আমার সমস্ত শক্তি ব্যয় করার পরিবর্তে আমি ঈশ্বরের কাছে আমার উৎসর্গীকরণের সঙ্গে মিল রেখে জীবনকে ব্যবহার করার সংকল্প নিয়েছিলাম,” সে ব্যাখ্যা করে। “আমি এখন যেখানে বাইবেল শিক্ষকের অনেক প্রয়োজন, সেখানে সেবা করছি এবং লোকেদেরকে অনন্তজীবনের পথে আসতে সাহায্য করছি। আমি মনে করতাম যে, পূর্ণসময়ের একজন পরিচারক হওয়া খুব বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে না। কিন্তু, এখন আমার জীবন আগের চেয়ে আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, যেহেতু আমি আমার ব্যক্তিত্বকে ও ভিন্ন সংস্কৃতির লোকেদের সঙ্গে কাজ করার ক্ষমতাকে উন্নত করার চেষ্টা করছি। আমি দেখেছি যে, যিহোবার উদ্দেশ্যকে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য করে তোলাই হল একমাত্র অর্থপূর্ণ জীবনের পথ।”

১৯. কীভাবে আমরা জীবনে প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে পারি?

১৯ খ্রিস্টান হিসেবে আমাদেরকে জীবনরক্ষাকারী জ্ঞান ও পরিত্রাণের আশা দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়েছে। (যোহন ১৭:৩) তাই, আসুন আমরা ‘ঈশ্বরের অনুগ্রহ বৃথা গ্রহণ না করি।’ (২ করিন্থীয় ৬:১) এর পরিবর্তে, আমাদের জীবনের মূল্যবান দিন ও বছরগুলোকে ঈশ্বরের প্রশংসা করার জন্য ব্যয় করি। আসুন আমরা সেই জ্ঞানকে ছড়িয়ে দিই, যা এখনই প্রকৃত সুখ নিয়ে আসে ও অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করে। তা করলে আমরা যিশুর এই কথাগুলোর সত্যতা সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারব: “পাওয়ার চেয়ে দেওয়ারই মধ্যে বেশি সুখ।” (প্রেরিত [শিষ্যচরিত] ২০:৩৫, বাংলা জুবিলী বাইবেল) আর আমরা জীবনে প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজে পাব।

[পাদটীকা]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• সবচেয়ে চমৎকার উদ্দেশ্য কী, যা আমরা জীবনে পেতে পারি?

• কেন বস্তুগত বিষয়গুলোর জন্য জীবনধারণ করা অবাস্তব?

• “প্রকৃতরূপে জীবন” কী, যা ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন?

• কীভাবে আমরা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের জন্য আমাদের জীবনকে ব্যবহার করতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

খ্রিস্টানদের সঠিক ত্যাগস্বীকারগুলো করতে হবে