সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ব্যাধের ফাঁদ থেকে রক্ষা

ব্যাধের ফাঁদ থেকে রক্ষা

ব্যাধের ফাঁদ থেকে রক্ষা

“[সদাপ্রভুই] তোমাকে ব্যাধের ফাঁদ হইতে . . . রক্ষা করিবেন।”—গীতসংহিতা ৯১:৩.

১. ‘ব্যাধ’ কে এবং কেন সে বিপদজনক?

 সমস্ত সত্য খ্রিস্টানই একজন শিকারির সম্মুখীন হয়, যে অতিমানবীয় বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ও ধূর্ত। গীতসংহিতা ৯১:৩ পদে তাকে ‘ব্যাধ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই শত্রু কে? সেই ১৮৮৩ সালের ১লা জুন সংখ্যা থেকে এই পত্রিকা তাকে শনাক্ত করেছে যে, সে শয়তান দিয়াবল ছাড়া আর কেউই নয়। এই অদম্য শত্রু যিহোবার লোকেদের ধূর্ততার সঙ্গে বিপথে চালিত করার ও ফাঁদে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করে, ঠিক যেমন একজন ব্যাধ একটা পাখিকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেন।

২. কেন শয়তানকে একজন ব্যাধের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?

প্রাচীনকালে, বিভিন্ন পাখিকে তাদের অপূর্ব গান, রংবেরঙের পালক এবং সেইসঙ্গে খাদ্য ও উৎসর্গের জন্য ধরা হতো। কিন্তু, পাখিরা সাধারণত সতর্ক, হুঁশিয়ার প্রকৃতির প্রাণী, যাদেরকে ফাঁদে ফেলা কঠিন। তাই, বাইবেলের সময়ের একজন ব্যাধ যেসমস্ত পাখিকে ফাঁদে ফেলতে চাইতেন, প্রথমে সেগুলোর বৈশিষ্ট্য ও স্বভাব নিয়ে মনোযোগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতেন। এরপর, তিনি তাদেরকে ফাঁদে ফেলার জন্য বিভিন্ন ধূর্ত পদ্ধতির পরিকল্পনা করতেন। শয়তানকে একজন ব্যাধের সঙ্গে তুলনা করে, বাইবেল আমাদেরকে তার পদ্ধতিগুলো বুঝতে সাহায্য করে। দিয়াবল আমাদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করে। সে আমাদের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ করে এবং আমাদের জীবন্ত ধরার প্রচেষ্টায় বিভিন্ন গোপন ফাঁদ পেতে রাখে। (২ তীমথিয় ২:২৬) তার হাতে ধরা পড়ার অর্থ হবে, আমাদের আধ্যাত্মিক ক্ষতি আর তা আমাদেরকে চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করতে পারে। তাই, সুরক্ষার জন্য আমাদেরকে “ব্যাধের” বিভিন্ন পদ্ধতি শনাক্ত করতে হবে।

৩, ৪. কখন শয়তানের কৌশলগুলোকে এই প্রাণীদের সঙ্গে তুলনা করা যায় যেমন, সিংহ? সাপ?

বিভিন্ন জীবন্ত চিত্র ব্যবহার করার মাধ্যমে গীতরচকও শয়তানের কলাকৌশলকে যুবসিংহ ও সাপের কলাকৌশলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। (গীতসংহিতা ৯১:১৩) সিংহের মতো, শয়তানও মাঝে মাঝে যিহোবার লোকেদের বিরুদ্ধে তাড়না অথবা আইনসংক্রান্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে সরাসরি, সম্মুখাসম্মুখী আক্রমণ করে থাকে। (গীতসংহিতা ৯৪:২০) এই ধরনের সিংহতুল্য আক্রমণের কারণে হয়তো কিছু লোক যিহোবাকে ত্যাগ করতে পারে। কিন্তু, বেশির ভাগ সময়ই এই প্রত্যক্ষ আক্রমণগুলো উলটো ফল নিয়ে আসে আর ফলস্বরূপ ঈশ্বরের লোকেরা আরও বেশি একতাবদ্ধ হয়। তা হলে, শয়তানের আরও সূক্ষ্ম, সাপতুল্য আক্রমণগুলো কী?

দিয়াবল তার অতিমানবীয় বুদ্ধিমত্তাকে প্রতারণাপূর্ণ ও মারাত্মক আক্রমণগুলো করার জন্য ব্যবহার করে থাকে, ঠিক যেমন একটা বিষাক্ত সাপ গোপন স্থান থেকে ছোবল মারে। এই উপায়ে সে ঈশ্বরের কিছু লোকের মনকে বিষাক্ত করে তুলতে সফল হয়েছে, তাদেরকে যিহোবার ইচ্ছা পালন করার পরিবর্তে তার নিজের ইচ্ছা পালন করতে প্ররোচিত করেছে, যা দুঃখজনক ফল নিয়ে এসেছে। আনন্দের বিষয় যে, আমরা শয়তানের কল্পনা বা পরিকল্পনাগুলো সম্বন্ধে অজ্ঞাত নই। (২ করিন্থীয় ২:১১) আসুন আমরা এখন চারটে মারাত্মক ফাঁদ সম্বন্ধে বিবেচনা করি, যেগুলো সেই ‘ব্যাধ’ ব্যবহার করে থাকে।

লোকভয়

৫. কেন ‘লোক-ভয়ের’ ফাঁদ এতটা কার্যকারী?

সেই ‘ব্যাধ’ বুঝতে পারে যে, মানুষের মধ্যে অন্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার ও তাদের অনুমোদন লাভ করার সাধারণ আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। খ্রিস্টানরা তাদের আশেপাশের লোকেদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিগুলোর প্রতি উদাসীন নয়। দিয়াবল এই বিষয়টা জানায়, লোকেরা তাদের সম্বন্ধে কী মনে করে, সেই বিষয়ে খ্রিস্টানদের চিন্তাকে স্বীয়স্বার্থে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরূপ, ‘লোক-ভয়ের’ ফাঁদ ব্যবহার করার মাধ্যমে ঈশ্বরের কিছু লোককে সে বিপর্যস্ত করে। (হিতোপদেশ ২৯:২৫) লোকভয়ের কারণে ঈশ্বরের দাসেরা যদি যিহোবা যা নিষেধ করেছেন, তা করায় অন্যদের সঙ্গে যোগ দিয়ে থাকে অথবা ঈশ্বরের বাক্য যা করতে তাদেরকে আজ্ঞা দিয়েছে, তা করা থেকে বিরত থাকে, তা হলে তারা “ব্যাধের” ফাঁদে আটকা পড়েছে।—যিহিষ্কেল ৩৩:৮; যাকোব ৪:১৭.

৬. একজন তরুণ যেভাবে “ব্যাধের” ফাঁদে পড়তে পারে, তা কোন উদাহরণ তুলে ধরে?

উদাহরণস্বরূপ, একজন তরুণ হয়তো সহছাত্র-ছাত্রীদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে একটা সিগারেট খেতে পারে। সেই দিন স্কুলে যাওয়ার সময় সে হয়তো সিগারেট খাওয়ার কথা কল্পনাও করেনি। কিন্তু, শীঘ্রই সে এমন একটা বিষয় করতে যাচ্ছে, যা তার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর এবং একইসঙ্গে ঈশ্বরকেও অখুশি করে। (২ করিন্থীয় ৭:১) কীভাবে সে প্রলুব্ধ হয়েছিল? সে হয়তো ভুল সঙ্গীসাথিদের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছিল এবং তাদের অনুমোদন হারাবে বলে ভয় পেয়েছিল। তরুণ-তরুণীরা, তোমাদেরকে প্রলুব্ধ করার এবং ফাঁদে ফেলার সুযোগ ‘ব্যাধকে’ দিও না! জীবন্ত ধরা পড়া এড়ানোর জন্য এমনকি ছোটখাটো বিষয়েও আপোশ করার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কুসংসর্গ এড়িয়ে চলার বিষয়ে বাইবেলের সতর্কবাণীতে কান দাও।—১ করিন্থীয় ১৫:৩৩.

৭. কীভাবে শয়তান হয়তো কিছু বাবামাকে তাদের আধ্যাত্মিক ভারসাম্য হারানোর দিকে পরিচালিত করতে পারে?

সচেতন খ্রিস্টান বাবামারা তাদের পরিবারের বস্তুগত বিষয়গুলো জোগানোর ব্যাপারে শাস্ত্রীয় দায়িত্বকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকে। (১ তীমথিয় ৫:৮) কিন্তু, শয়তানের লক্ষ্য হল খ্রিস্টানরা যেন এই বিষয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। অতিরিক্ত কাজ করার বিষয়ে তাদের নিয়োগকর্তার কাছ থেকে আসা চাপের কাছে নতি স্বীকার করার কারণে সভা বাদ দেওয়া হয়তো তাদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা হয়তো তাদের ভাইবোনদের সঙ্গে যিহোবাকে উপাসনা করতে একটা জেলা সম্মেলনের প্রতিটা অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য ছুটি চাইতে ভয় পায়। এই ফাঁদের বিরুদ্ধে সুরক্ষা হল, “সদাপ্রভুতে বিশ্বাস” বা নির্ভর করা। (হিতোপদেশ ৩:৫, ৬) অধিকন্তু, আমরা সবাই যিহোবার পরিবারের সদস্য এবং আমাদের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি দায়িত্ব বোধ করেন, এই বিষয়গুলো মনে রাখা আমাদেরকে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। বাবামারা, আপনাদের কি এই বিশ্বাস রয়েছে যে, আপনারা যখন যিহোবার ইচ্ছা পালন করেন, তখন তিনি কোনো না কোনো উপায়ে আপনাদের ও আপনাদের পরিবারের যত্ন নেবেন? নাকি দিয়াবল আপনাদের জীবন্ত ধরবে এবং লোকভয়ের কারণে আপনাদের দিয়ে তার ইচ্ছা পালন করবে? আমরা এই প্রশ্নগুলো আপনাদেরকে প্রার্থনাপূর্বক বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করছি।

বস্তুবাদিতার ফাঁদ

৮. কোন উপায়ে শয়তান বস্তুবাদিতার প্রলোভন ব্যবহার করে থাকে?

এ ছাড়া, শয়তান আমাদেরকে ফাঁদে ফেলার জন্য বস্তুবাদিতার প্রলোভনও ব্যবহার করে থাকে। এই জগতের বাণিজ্যিক ব্যবস্থা প্রায়ই দ্রুত ধনী হওয়ার প্রকল্পগুলো তুলে ধরে, যেগুলো এমনকি ঈশ্বরের কিছু লোককেও প্রতারিত করতে পারে। মাঝে মাঝে কাউকে কাউকে হয়তো চাপ দেওয়া হয়: “কঠোর পরিশ্রম করুন। আপনি যখন এক নিশ্চিত অবস্থানে চলে আসবেন, তখন কঠোর পরিশ্রম করতে হবে না আর আপনি জীবন উপভোগ করতে পারবেন। আপনি এমনকি অগ্রগামীর কাজও করতে পারবেন।” এই ধরনের কথাবার্তা হয়তো সেই ব্যক্তিদের ভারসাম্যহীন যুক্তি হতে পারে, যারা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে তাদের ভাইবোনদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকে। এই প্ররোচনা সম্বন্ধে মনোযোগের সঙ্গে চিন্তা করুন। এটা কি যিশুর নীতিগল্পে বলা “নির্ব্বোধ” ধনী ব্যক্তির চিন্তার প্রতিফলন নয়?—লূক ১২:১৬-২১.

৯. কেন কিছু খ্রিস্টান হয়তো বিষয়বস্তুর আকাঙ্ক্ষা করার দ্বারা ফাঁদে পড়তে পারে?

শয়তান তার দুষ্ট বিধিব্যবস্থাকে এমন উপায়ে পরিচালিত করে থাকে যে, এটা লোকদের বিষয়বস্তুর আকাঙ্ক্ষা করতে প্ররোচিত করে। এই আকাঙ্ক্ষা অবশেষে খ্রিস্টীয় জীবনযাপনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, বাক্য চেপে রাখে এবং সেটিকে “ফলহীন” করে তোলে। (মার্ক ৪:১৯) বাইবেল আমাদেরকে গ্রাসাচ্ছাদন পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে উৎসাহিত করে। (১ তীমথিয় ৬:৮) কিন্তু, অনেকে “ব্যাধের” ফাঁদে পড়ে যায় কারণ সেই পরামর্শ তারা নিজেদের বেলায় কাজে লাগায় না। এটা কি হতে পারে, গর্ব তাদেরকে এইরকম মনে করতে পরিচালিত করে যে, তাদেরকে একটা নির্দিষ্ট জীবনধারা অনুযায়ী চলতে হবে? ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? বিষয়বস্তুর অধিকারী হওয়ার ব্যাপারে আমাদের আকাঙ্ক্ষা কি সত্য উপাসনার বিষয়গুলোকে দ্বিতীয় স্থানে রাখতে পরিচালিত করে? (হগয় ১:২-৮) দুঃখজনক যে, অর্থনৈতিক মন্দার সময় কেউ কেউ সেই জীবনযাপনের মান বজায় রাখতে গিয়ে তাদের আধ্যাত্মিকতাকে বিসর্জন দিয়েছে, যেটাতে তারা অভ্যস্ত। এই ধরনের বস্তুবাদী মনোভাব ‘ব্যাধকে’ আনন্দিত করে!

ক্ষতিকর আমোদপ্রমোদের ফাঁদ

১০. প্রত্যেক খ্রিস্টানের কোন আত্মপরীক্ষা করা উচিত?

১০ “ব্যাধের” আরেকটা কৌশল হল, কোনটা ভাল ও কোনটা মন্দ, সেই বিষয়ে লোকেদের স্বাভাবিক বোধশক্তিকে দুর্বল করে দেওয়া। সদোম ও ঘমোরায় যেমন দেখা গিয়েছিল সেই একই মানসিকতা বেশির ভাগ বিনোদন জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এমনকি টেলিভিশনের সংবাদ ও সাময়িক পত্রিকাগুলোতে দৌরাত্ম্য তুলে ধরা হয় এবং যৌনতার প্রতি উত্তেজনাপূর্ণ আগ্রহ জাগিয়ে তোলে। প্রচারমাধ্যম প্রায়ই যে-বিষয়গুলোকে আমোদপ্রমোদ হিসেবে তুলে ধরে, সেগুলো “সদসৎ বিষয়ের বিচারণে” বা সঠিক ও ভুলকে পৃথক করার ব্যাপারে লোকেদের ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। (ইব্রীয় ৫:১৪) কিন্তু, ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে বলা যিহোবার কথাগুলো স্মরণ করে দেখুন: “ধিক্‌ তাহাদিগকে, যাহারা মন্দকে ভাল, আর ভালকে মন্দ বলে!” (যিশাইয় ৫:২০) এই ধরনের ক্ষতিকর আমোদপ্রমোদের মাধ্যমে সেই ‘ব্যাধ’ কি সূক্ষ্মভাবে আপনার চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করছে? আত্মপরীক্ষা করা অপরিহার্য।—২ করিন্থীয় ১৩:৫.

১১. টিভি সিরিয়ালগুলো সম্বন্ধে এই পত্রিকায় কোন সাবধানবাণী দেওয়া হয়েছিল?

১১ প্রায় ২৫ বছর আগে, প্রহরীদুর্গ পত্রিকা প্রেমের সঙ্গে ঈশ্বরের সত্য উপাসকদের টিভি সিরিয়াল সম্বন্ধে সাবধান করে দিয়েছে। * জনপ্রিয় টিভি সিরিয়ালগুলোর সূক্ষ্ম প্রভাব সম্বন্ধে এই মন্তব্য করা হয়েছিল: “ভালবাসা পাওয়ার জন্য যেকোনো আচরণকেই গ্রহণযোগ্য অজুহাত হিসেবে তুলে ধরা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন অবিবাহিত গর্ভবতী অল্পবয়স্ক মেয়ে তার বান্ধবীকে বলে: ‘কিন্তু আমি ভিক্টরকে ভালবাসি। তাই, আমি কোনোকিছুর পরোয়া করি না . . . তার সন্তান ধারণ করা আমার কাছে যেকোনোকিছুর চেয়ে মূল্যবান!’ মৃদু নেপথ্য সংগীত তার এই কাজকে অত্যন্ত খারাপ বলে বিবেচনা করা কঠিন করে তোলে। আপনিও ভিক্টরকে পছন্দ করতে শুরু করেন। সেই মেয়ের জন্য সহানুভূতি অনুভব করে থাকেন। আপনি ‘তা মেনে নেন।’ ‘আপনি যেভাবে সেই চিন্তাধারার সঙ্গে একমত হন, তা আশ্চর্যের বিষয়,’ একজন দর্শক বলেন, যিনি পরে চেতনা ফিরে পান। ‘আমরা জানি যে, অনৈতিকতা খারাপ। . . . কিন্তু আমি বুঝতে পারি যে, মনের দিক দিয়ে আমি তাতে জড়িয়ে পড়েছিলাম।’”

১২. কোন বাস্তব বিষয়গুলো ইঙ্গিত দেয় যে, নির্দিষ্ট টিভি অনুষ্ঠান সম্বন্ধে সাবধানবাণী দেওয়া বর্তমানে উপযুক্ত?

১২ সেই প্রবন্ধগুলো প্রকাশিত হওয়ার সময় থেকে, এই ধরনের কলুষিত অনুষ্ঠানগুলো দিনের পর দিন আরও ছেয়ে গিয়েছে। অনেক জায়গায় এই ধরনের অনুষ্ঠান দিনরাত ২৪ ঘন্টাই দেখানো হয়। নারী-পুরুষ ও অনেক কিশোর-কিশোরী সবসময় এই ধরনের আমোদপ্রমোদ দিয়েই তাদের মন ও হৃদয় পূর্ণ করছে। যাই হোক, আমরা অবশ্যই মিথ্যা যুক্তি দ্বারা নিজেদের প্রতারিত করব না। এইরকম যুক্তি দেখানো ভুল হবে যে, বাস্তব জগতে যা দেখা যায়, সেগুলোর চেয়ে নোংরা আমোদপ্রমোদ কম ক্ষতিকর। একজন খ্রিস্টান কি এমন লোকেদের দ্বারা আনন্দ লাভ করাকে বেছে নেওয়া যুক্তিযুক্ত বলে মনে করতে পারেন, যাদেরকে তিনি তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানোর কথা স্বপ্নেও কখনো ভাবেননি?

১৩, ১৪. কেউ কেউ টিভি সম্বন্ধে সাবধানবাণী থেকে যেভাবে উপকৃত হয়েছে, সেই সম্বন্ধে কীভাবে প্রকাশ করেছে?

১৩ অনেকে যখন ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ দ্বারা জোগানো সাবধানবাণীতে মনোযোগ দিয়েছে, তখন উপকৃত হয়েছে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) স্পষ্ট বাইবেলভিত্তিক পরামর্শ পড়ার পর, কেউ কেউ এটা জানানোর জন্য লিখেছিল যে, কীভাবে প্রবন্ধগুলো ব্যক্তিগতভাবে তাদেরকে প্রভাবিত করেছে। * একজন স্বীকার করেছিলেন: “১৩ বছর ধরে আমি টিভি সিরিয়ালগুলোর প্রতি আসক্ত ছিলাম। আমি মনে করেছিলাম যে, কেবল খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিয়ে এবং মাঝেমধ্যে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় গিয়ে আমি নিরাপদ রয়েছি। কিন্তু, আমি জাগতিক টিভি সিরিয়ালগুলোর মতো এইরকম মনোভাব গড়ে তুলেছিলাম যে, আপনার স্বামী যদি আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে অথবা আপনি যদি মনে করেন যে, ভালবাসা পাচ্ছেন না, তা হলে পারদারিকতা করা সঠিক—এর জন্য স্বামীই দায়ী। আর তাই যখন ‘সঠিক’ বলে মনে করেছিলাম, তখন আমি এই খারাপ কাজ করি এবং যিহোবা ও আমার সাথির বিরুদ্ধে পাপ করি।” এই মহিলাকে সমাজচ্যুত করা হয়েছিল। অবশেষে তিনি তার চেতনা ফিরে পেয়েছিলেন, অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং তাকে পুনর্বহাল করা হয়েছিল। যে-প্রবন্ধগুলো টিভি সিরিয়াল সম্বন্ধে সাবধান করে, সেগুলো যিহোবা ঘৃণা করেন এমন বিষয়গুলোর দ্বারা আনন্দ লাভ করা প্রত্যাখ্যান করতে তাকে শক্তি জুগিয়েছিল।—আমোষ ৫:১৪, ১৫.

১৪ আরেকজন পাঠক, যার জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন: “প্রবন্ধগুলো পড়ার পর আমি কেঁদে দিয়েছিলাম কারণ আমি আবিষ্কার করেছিলাম যে, আমার হৃদয় আর যিহোবাতে একাগ্র নেই। আমি আমার ঈশ্বরের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে, আমি আর এই সিরিয়ালগুলোর দাস থাকব না।” প্রবন্ধগুলোর জন্য উপলব্ধি প্রকাশ করার পর, একজন খ্রিস্টান মহিলা তার আসক্তির কথা স্বীকার করেছিলেন এবং লিখেছিলেন: “আমি ভেবেছিলাম . . . যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রভাবিত হতে পারে কি না। কীভাবে আমি ‘তাদেরকে’ বন্ধু হিসেবে নিতে পারি আবার একইসঙ্গে যিহোবারও বন্ধু হতে পারি?” এই ধরনের টিভি অনুষ্ঠান যদি ২৫ বছর আগে হৃদয়কে কলুষিত করে থাকে, তা হলে আজকে সেগুলোর কোন প্রভাব রয়েছে? (২ তীমথিয় ৩:১৩) শয়তানের যেকোনো ধরনের ক্ষতিকর আমোদপ্রমোদের ফাঁদ সম্বন্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, হোক তা টিভি সিরিয়াল, দৌরাত্ম্যপূর্ণ ভিডিও গেমস্‌ অথবা অনৈতিক মিউজিক ভিডিও।

ব্যক্তিগত মতভেদের ফাঁদ

১৫. কীভাবে কেউ কেউ দিয়াবলের দ্বারা জীবন্ত ধরা পড়েছে?

১৫ যিহোবার লোকেদের মধ্যে অনৈক্য নিয়ে আসার জন্য শয়তান ব্যক্তিগত মতভেদকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। আমাদের সেবা করার যে-বিশেষ সুযোগই থাকুক না কেন, আমরা এর দ্বারা ফাঁদে পড়তে পারি। কেউ কেউ দিয়াবলের দ্বারা জীবন্ত ধরা পড়েছে কারণ তারা ব্যক্তিগত মতভেদের দ্বারা শান্তি ও একতাকে এবং সেই অপূর্ব আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধিকে নষ্ট হতে দিয়েছে, যা যিহোবা অস্তিত্বে নিয়ে এসেছেন।—গীতসংহিতা ১৩৩:১-৩.

১৬. কীভাবে শয়তান ধূর্ততার সঙ্গে আমাদের একতাকে নষ্ট করার চেষ্টা করে?

১৬ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, শয়তান সরাসরি আক্রমণ নিয়ে আসার মাধ্যমে যিহোবার সংগঠনের পার্থিব অংশকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সে ব্যর্থ হয়েছিল। (প্রকাশিত বাক্য ১১:৭-১৩) তখন থেকে সে আমাদের একতাকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য ধূর্ততার সঙ্গে কাজ করছে। আমরা যখন ব্যক্তিগত মতভেদগুলোকে অনৈক্য সৃষ্টি করার সুযোগ দিই, তখন ‘ব্যাধকে’ আমাদের মাঝে দৃঢ় অবস্থান করে দিই। এভাবে আমরা পবিত্র আত্মাকে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে ও সেইসঙ্গে মণ্ডলীতে স্বচ্ছন্দে কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারি। যদি এইরকমটা হয়ে থাকে, তা হলে শয়তান খুশি হবে কারণ যেকোনোভাবে মণ্ডলীর শান্তি ও একতা নষ্ট হলে, তা প্রচার কাজকে ব্যাহত করে থাকে।—ইফিষীয় ৪:২৭, ৩০-৩২.

১৭. যাদের মধ্যে ব্যক্তিগত মতভেদ রয়েছে, তাদের তা মীমাংসা করার জন্য কী সাহায্য করতে পারে?

১৭ কোনো সহখ্রিস্টানের সঙ্গে যদি আপনার ব্যক্তিগত মতভেদ থাকে, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? এটা ঠিক যে, প্রতিটা পরিস্থিতিই ভিন্ন। তবে, সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার যদিও অনেক কারণ থাকতে পারে কিন্তু ব্যক্তিগত মতভেদ অমীমাংসিত রাখার কোনো কারণ নেই। (মথি ৫:২৩, ২৪; ১৮:১৫-১৭) ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত পরামর্শ অনুপ্রাণিত এবং নিখুঁত। প্রয়োগ করা হলে, বাইবেলের নীতিগুলো কখনো ব্যর্থ হয় না। সেগুলো সবসময়ই উত্তম ফল নিয়ে আসে!

১৮. কেন যিহোবাকে অনুকরণ করা আমাদেরকে ব্যক্তিগত মতভেদগুলো সমাধান করতে সাহায্য করবে?

১৮ যিহোবা প্রকৃতই “ক্ষমাবান্‌” বা ক্ষমা করার জন্য তৈরি আছেন। (গীতসংহিতা ৮৬:৫; ১৩০:৪) আমরা যখন যিহোবাকে অনুকরণ করি, তখন আমরা দেখাই যে আমরা তাঁর প্রিয় বৎস। (ইফিষীয় ৫:১) আমরা সকলেই পাপী আর যিহোবার ক্ষমা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। তাই, আমরা যদি কাউকে ক্ষমা না করার প্রবণতা বোধ করি, তা হলে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। আমরা যিশুর নীতিগল্পে বলা দাসের মতো হয়ে যেতে পারি, যিনি তার সহদাসের সেই ঋণ ক্ষমা করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যা তার প্রভু তাকে ইতিমধ্যেই যে-ঋণ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, সেটার তুলনায় কিছুই ছিল না। প্রভুকে যখন এই কথা বলা হয়েছিল, তখন তিনি সেই ক্ষমাহীন দাসকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছিলেন। যিশু এই বলে তাঁর নীতিগল্প শেষ করেছিলেন: “আমার স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের প্রতি এইরূপ করিবেন, যদি তোমরা প্রতিজন অন্তঃকরণের সহিত আপন আপন ভ্রাতাকে ক্ষমা না কর।” (মথি ১৮:২১-৩৫) সেই দৃষ্টান্ত নিয়ে ধ্যান করা এবং কত বার যিহোবা আমাদের অবাধে ক্ষমা করেছেন, তা নিয়ে চিন্তা করা নিশ্চিতভাবে সেই সময়ে আমাদের সাহায্য করবে, যখন আমরা আমাদের ভাইদের সঙ্গে ব্যক্তিগত মতভেদ সমাধান করার চেষ্টা করি!—গীতসংহিতা ১৯:১৪.

“পরাৎপরের অন্তরালে” নিরাপদ থাকা

১৯, ২০. এই বিপদজনক সময়ে যিহোবার “অন্তরাল” ও ‘ছায়াকে’ আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

১৯ আমরা বিপদজনক সময়ে বাস করছি। আমরা যদি যিহোবার প্রেমময় সুরক্ষার অধীনে না থাকতাম, তা হলে শয়তান নিশ্চিতভাবেই আমাদের সবাইকে ধ্বংস করে দিত। তাই, “ব্যাধের” ফাঁদে পড়া এড়ানোর জন্য আমাদেরকে সুরক্ষার রূপক স্থানে থাকতে হবে, ‘পরাৎপরের অন্তরালে থাকিতে’ হবে, “সর্ব্বশক্তিমানের ছায়াতে বসতি” করতে হবে।—গীতসংহিতা ৯১:১.

২০ আমরা যেন যিহোবার অনুস্মারক এবং নির্দেশনাগুলোকে কখনো কড়া নয় বরং সবসময় সুরক্ষা হিসেবে দেখি। আমরা সকলেই সেই শিকারির সম্মুখীন হয়ে থাকি, যার অতিমানবীয় বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। যিহোবার প্রেমময় সাহায্য ছাড়া কেউই ফাঁদে পড়া থেকে রক্ষা পাবে না। (গীতসংহিতা ১২৪:৭, ৮) তাই, আসুন আমরা প্রার্থনা করি যেন যিহোবা আমাদেরকে “ব্যাধের” ফাঁদ থেকে রক্ষা করেন!—মথি ৬:১৩.

[পাদটীকাগুলো]

^ ১৯৮২ সালের ১লা ডিসেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ৩-৭ পৃষ্ঠা।

^ ১৯৮৩ সালের ১লা ডিসেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ২৩ পৃষ্ঠা।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কেন “লোক-ভয়” এক মারাত্মক ফাঁদ?

• কীভাবে দিয়াবল বস্তুবাদিতার প্রলোভন ব্যবহার করে থাকে?

• কীভাবে শয়তান কাউকে কাউকে ক্ষতিকর আমোদপ্রমোদের ফাঁদে ফেলেছে?

• আমাদের একতাকে নষ্ট করার জন্য দিয়াবল কোন ফাঁদ ব্যবহার করে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

কেউ কেউ ‘লোক-ভয়ের’ দ্বারা ফাঁদে পড়েছে

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবা যা ঘৃণা করেন, সেটার দ্বারা কি আপনি আনন্দ লাভ করছেন?

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার যদি একজন সহখ্রিস্টানের সঙ্গে ব্যক্তিগত মতভেদ থাকে, তা হলে আপনি কী করতে পারেন?